চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৪০

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৪০

🍂🍂🍂

~আজ এতদিন পর বাড়িতে যাবি। কেমন লাগছে?

তিলোত্তমার প্রশ্নে জবাব দিলো না শুভ্রতা। জানালার সামনে স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে।

~কিরে? কথা বলিস না কেনো?
~ঠিক মত বাড়ি যাস না আজ কতদিন?
~এ আবার কেমন প্রশ্ন?
~বাড়িতে রাগারাগি করে এসেছিস শুনলাম। কারণ কি?
~আমি তোকে একা ছাড়তে চাইছি না। আর বাড়ির মানুষ আমাকে একা ছাড়তে চাইছে না। আমি মেয়ে বলে।
~খারাপ কি বলেছে এতে?

তিলোত্তমা উত্তপ্ত কণ্ঠে বললো,

~খারাপ কিছু বলেনি মানে? আমি তোর সাথে থাকতে চাইছি আর তারা বাঁধা দিচ্ছেন।

শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বেডে বসে তিলোত্তমাকেও বসালো।

~কে বলেছে আমি একা? আমার সাথে সবাই আছে। রেনু আপা, অর্ণব, অরণ্য ভাইয়া, মামী, মামা, রাত্রি আপু, চিত্রা আন্টি, আর তোর পাগল প্রেমিক মাহতাব ভাইয়া।

বলেই ফিক করে হেসে উঠলো শুভ্রতা। তিলোত্তমার চোখে জল টলমল করছে দেখে শুভ্রতা তিলোত্তমার মাথায় হাত রাখলো। বললো,

~তোর মত বান্ধবী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার তিলো। আমি ভাগ্যবান যে আমার জীবনে তোরা আছিস। আমি মোটেও একা নই।

~তুই বাড়িতে গেলে আবার আগের মত একা থাকবি। আবার আমাদের ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করবি। আমি জানি।

~কসম তিলো। আর এমন থাকবো না। আমার ওই বাড়িতে দম বন্ধ লাগছিল। তাই বাইরে যেতে চাইছিলাম। দিপার কথা মনে আছে? ওর ওখানেই যেতাম। রাঙামাটি, ওদের ওখানে কিছুদিন প্রকৃতিতে একা থেকে ফের তোদের কাছেই চলে আসতাম।

একটু থেমে আবারো বললো,

~আমার সাথে তো তোর রোজই দেখা হবে। প্রয়োজনে রোজ আমার সাথে দেখা করে যাস। তবে বাড়ি আর বাড়ির মানুষ ছেড়ে আমার কাছে চলে আসাটা আমি মানছি না। এমনিও বিয়ের পর আমরা এক বাড়িতেই থাকবো। বিয়ের আগে মা বাবার কাছেই থাক।

বান্ধবীর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

~কাঁদিস না।
~এই মেয়ে কাঁদতে হলে তোমার বাপের বাড়ি গিয়ে কাঁদো। আমার ভাইয়ের হাসপাতাল ভাসাচ্ছো কেনো? ভাবি! আমি বলে রাখছি এইটা বিপক্ষ দলের চক্রান্ত। এই মেয়ে সত্যি করে বলো তো তুমি আমার বিপক্ষ দলের কারো মেয়ে না তো? একে তো আমাকে চোখের চাহনি দিয়ে হাফ মার্ডার* করে রেখেছো, আবার এখন আমার ভাইয়ের হাসপাতাল ভাসাচ্ছো। (মাহতাব)

~শুভি! তুই কিছু বলবি নাকি আমি এই লোকের মাথা ফাটাবো? (তিলোত্তমা)
~আরে বাবা শান্ত হ। (শুভ্রতা)
~তোকে পাঠালাম দেখতে সব ঠিকঠাক হয়েছে কিনা আর তুই এদিকে বসে আড্ডা দিচ্ছিস। (চন্দ্র)
~আমরা মোটেও আড্ডা দিচ্ছি না। (শুভ্রতা)
~দেখেছিস! নিজে তো বাঁদর হয়েছিস সাথে এই পিচ্চি দুটোকেও বাঁদর বানাচ্ছিস। মুখে মুখে কথা বলে। ধ্যাত! চলো তো!

বলেই শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো চন্দ্র। শুভ্রতা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। কিছুক্ষণ পর অবাকতা কাটিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।

~আপনার কি লজ্জা শরম নেই? ছি! ছি! নামান আমাকে চন্দ্র। মানুষ দেখছে।

শুভ্রতার কথায় চন্দ্র কোনোরূপ পাত্তা দিলো না। সে নিজের মতো শুভ্রতাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো।
_______________________________________

চরম বিরক্তি নিয়ে বসে আছে শুভ্রতা। সামনেই অর্ণব এক থালা ভাত মেখে বসে আছে।

~ঠিক মত না খেলে সুস্থ হবি কি করে শুনি! ঠিক মত খাওয়া দাওয়া কর।

অর্ণব জোরপূর্বক হাসলো। শুভ্রতার মুখে খাবার পুরে দিয়ে বললো,

~সুস্থ হয়ে আমার বাড়িতে চলিস। আমার বাড়ি তো আর দেখলি না।
~তোর আবার বাড়ি এলো কোথা থেকে?
~নতুন কিনেছি। ভেবেছিলাম দেশে এসে তোদের সারপ্রাইজ দিবো। আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো। ছোট মাকে তো দেখাতে পারলাম না। তুই চলিস।
~আর খাবো না অর্ণব। রেখে দে।
~সে কি? মাত্র একটু খেলি। সম্পূর্ণ খাবার শেষ কর।
~না খেতে চাইলে জোর করবেন না ভাইয়া। ছেড়ে দিন। কিছুক্ষণ পর আবার ফল কেটে দিবো নে। (তিলোত্তমা)

ঘরে ঢুকেই অর্ণবকে শুভ্রতার পাশে দেখে ভ্রু কুঁচকালো চন্দ্র। তার মনে হলো তার মনটা বেশ পুড়ছে। দূরে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো,

~শালা! সারাক্ষণ আমার বউ এর সাথে চিপকে থাকে। সর! ওর কাছ থেকে সর!
~এভাবে বললে অর্ণব দূরে থাক! তোর পায়ের কাছে থাকা পিপঁড়াও শুনতে পাবে না।

চন্দ্র কপালে ভাঁজ ফেলে ডান পাশ ফিরে অরণ্যের দিকে তাকালো।

~ও আসলেই তোর শালা লাগে। শুভ্রতার এক মাত্র ছেলে বন্ধু যাকে সে আপন ভাইয়ের মতো মানে। এমনকি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে ওকে। তাই নিশ্চিন্ত থাক।
~ভাইয়ের শালা লাগে বুঝলাম। শালায় আমার বউ এর সাথে কি এত হেসে হেসে কথা বলে! কেমন ভেটকাইতেছে দেখো দেখো! শালা লুচ্চা! অন্যের বউ এর দিকে নজর দেয়!

চন্দ্র আর অরণ্য এবার চন্দ্রের বাম পাশে তাকালো। চোখ মুখ কুচকে মাহতাব দাড়িয়ে।

~কবুল তো এখনও বলা হয়নি তোদের। নিয়ে গেলেও যেতে পারে। বলা তো আর যায় না।
~তোমাকে আমি পরে দেখছি অরণ্য ভাই। আগে বউ নিয়ে আসি।

বলেই তিলোত্তমার কাছে গিয়ে গা ঘেসে দাড়ালো। ভ্রু উচিয়ে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করলো “কি?”। এবার মাহতাবের মত অর্ণবও প্রশ্ন করলো “কি?”। অর্ণব চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই মাহতাব তিলোত্তমার দিকে আঙুল তাক করে বললো,

~এই যে এই বাঁদরটা! এটা আমার হবু বউ। আগামী এক বছরের মধ্যেই এর কোলে আমার একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে থাকবে। আর এই যে এই মেয়ে! এটা আমার ভাবি।

শুভ্রতার দিকে তাক করতেই শুভ্রতাও নিজের দিকে আঙুল তাক করে মুখ বাঁকিয়ে বললো,

~আমি?
~হ্যাঁ। উনি হচ্ছে আমার ভাইয়ের বউ। খুব শীঘ্রই ওনার কোলেও আমার ভাইয়ের বাচ্চা থাকবে। ভাইয়া শর্ত দিয়েছে ভাবির পরীক্ষার পর পরই বিয়ে করবে তাকে। সে এর থেকে বেশি দেরি করতে চায় না। দুই বা আড়াই মাসের মধ্যেই তাকে আমার ভাই বিয়ে করবে। আজই করতো। কিন্তু উমা আন্টির মৃত্যুর বেশি সময় হয়নি তাই মা ভাইয়াকে অনেক বুঝিয়ে তারপর বিয়েটা পোস্টপন করেছে।

মাহতাবের কথায় অর্ণব ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। শুভ্রতার রাগী দৃষ্টি নিজের ওপর অনুভব করতেই চন্দ্র সিলিংয়ের দিকে মনোযোগ স্থির করলো। অন্যদিকে তিলোত্তমা রেগে কিছু বলার আগেই জান বাঁচান ফরজ বলে মাহতাব বড় বড় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
~~~
চলবে~

(ইদানিং গল্প লিখতে ইচ্ছে করে না। প্রথমত, আমার পরিবারের খুব কাছের একজন মৃত্যুবরণ* করেছেন। দ্বিতীয়ত আপনারা খুব একটা কমেন্টস করেন না যার জন্য আগ্রহ থাকে না। গল্পটা ভালো লাগছে না খারাপ লাগছে কিছুই বুঝতে পারছি না। কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। এখন থেকে দ্রুত পরের পর্ব দিবো। হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here