চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা বোনাস পর্ব

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
বোনাস পর্ব

🍂🍂🍂

উপমার বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই চোখ মেলে তাকালো শুভ্রতা। গাড়ি থেকে নামার আগে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বাহিরটা পরখ করে নিলো একবার। তিলোত্তমা শুভ্রতার দরজার পাশে এসে দাঁড়ালো।

~নামছিস না কেনো?

তিলোত্তমার ডাকে শুভ্রতা কিঞ্চিৎ চমকে উঠলো। মনে হলো গভীর ভাবনায় বিভোর সে। শুকনো কেশে জবাব দিলো,
~হ্যা নামছি।

তিলোত্তমা সরু চোখে তাকাতেই তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকালো শুভ্রতা। সন্ধ্যা ৬ বেজে ৮ মিনিট। শুভ্রতা উকি দিয়ে গাড়ির সামনের দিকে তাকালো। চন্দ্র এক ধ্যানে তার দিকেই চেয়ে আছে। সে কিছু একটা ভেবে শুভ্রতার কাছে এলো। চিন্তিত গলায় জানতে চাইলো,
~শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে? বাসায় যাবে?

শুভ্রতা মাথা নাড়ালো। চন্দ্র অবুঝ চোখে তাকালে শুভ্রতা গাড়ির জানালায় হাত রাখলো। চন্দ্র তার হাতের ওপর হাত রাখলো। হাত একদম বরফের মতো ঠান্ডা।

~তুমি কি নুর আর অরণ্যের বিষয় নিয়ে নার্ভাস?

শুভ্রতা ঠোঁট কামড়ে মাথা ঝাঁকালো। দৃষ্টি নত করতেই চন্দ্র তার মাথায় হাত রাখলো।
~বেশি চিন্তা করো না। যা হবে ভালো হবে। খারাপ হলে আমরা ভালো করে নিবো। ওকে?

শুভ্রতা মাথা তুলে তাকালো। সামনে দন্ডায়মান মানবটির চোখে দেখতে পেলো এক আকাশ ভরসা। আনমনেই শুভ্রতা মুচকি হাসলো। হুট করেই অশান্ত মনটা কেমন শান্ত হয়ে এলো। শুভ্রতা হাত বাড়িয়ে চন্দ্রের গাল ছুঁয়ে দিতেই চন্দ্র চোখ বন্ধ করে আলতো হাসলো। গাড়ির দরজা খুলে দিতেই শুভ্রতা নেমে দাড়ালো। শুভ্রতাকে নামতে দেখতেই তার কাছে ছুটে এলো রিদিতা আর রুপা। রিদিতা বেশ উৎফুল্ল গলায় বলে উঠলো,
~এতো দেরি?
~নুর এসেছে।

রিদিতা কিঞ্চিৎ বিরক্তিতে মুখ বাকালো।

~ওর কথা ছাড়, উপকে দেখবি চল। আজকে অনেক অনেক অনেক সুন্দর লাগছে ওকে। জানিস! দুলাভাইকেও দেখেছি। হেব্বি মানিয়েছে ওদের।

শুভ্রতার হাত টেনে ধরতেই সে মৃদু হাসলো। বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখতে পেলো নুর আর উপমা একসাথে দাড়িয়ে আছে। শুভ্রতা খুশি হলো বেশ। ভেবে খুশি হলো আজই নুর আর অরণ্যের মধ্যে সব সমস্যা মিটে যাবে। তবে সেই হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। শুভ্রতাকে দেখতেই নুর উপমাকে রেখে অন্য দিকে চলে গেলো। শুভ্রতা অসহায় চোখে সে দিকে একবার চেয়ে পেছন ফিরে অরণ্যের দিকে তাকালো। অরণ্য নিজেও হতাশ চোখে তার দিকেই চেয়ে। শুভ্রতাকে দেখতেই উপমা তার কাছে ছুটে এসে তাকে আর তিলোত্তমাকে একে একে জড়িয়ে ধরলো।

~ফাইনালি এসেছিস! দেরি করার অভ্যাসটা তোর আর গেলো না।

শুভ্রতা জোরপূর্বক হাসলো। উপমার দু হাত ধরে বললো,
~তোকে মাশাহ’আল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে।
~দেখেছিস বলেছিলাম না আমি! (রিদিতা)

শুভ্রতা কুটিল হেসে রিদিতার কাঁধে হাত রাখলো। রিদিতার এক কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

~এত গুরুত্বপূর্ণ খবর জানানোর জন্য আই থিঙ্ক ইউ ডিজার্ভ আ প্রাইজ।
~প্রাইজ?

ভ্রু কুঁচকালো রিদিতা। শুভ্রতার তার কাছে ঠিক ঠেকলো না। মেয়েটা কখনোই এতো আহ্লাদ করে তার সাথে কথা বলে না। যদি না কোনো শয়তানি বুদ্ধি মাথায় থাকে। শুভ্রতার শয়তানি বুদ্ধির কথা মাথায় আসতেই শুকনো ঢোক গিললো রিদিতা। কাঁধ থেকে শুভ্রতার হাত সরিয়ে দিতে দিতে বললো,
~প্রথমত, তুই সচরাচর এমন করে কখনোই হাসিস না। দ্বিতীয়ত, তোর মাথায় কোনো শয়তানি বুদ্ধি ঘুরপাক খেলেই তুই এমন করে কাঁধে থুতনি ঠেকাস। তুই বহুত ডেঙ্গারাস, তুই আমার থেকে দশ হাত দূরে গিয়ে দাড়া।

রিদিতার কথায় ঠোঁট চেপে হাসলো সকলে। শুভ্রতা কপট রাগ দেখিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,

~অপমান করলি তো! আর আসিস আমাকে দোস্ত বলে জড়িয়ে ধরতে। আর জীবনেও তোকে জড়িয়ে ধরবো না আমি। তুই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিলেও না।

হঠাৎই রিদিতার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই গম্ভীর হয়ে গেলো। সে শুধু দুষ্টামি করে শুভ্রতাকে এই কথা বলেছে। সে তেমন ভাবে কিছুই বলেনি। তাই বলে শুভ্রতা তাকে এভাবে বলবে? সে কি সত্যিই আর তাকে কখনো জড়িয়ে ধরবে না? মুহূর্তেই তার মনটা অমাবশ্যার কালো মেঘে ঢেকে গেলো। চোখের কোণে চিকচিক করে উঠলো মুক্তার ন্যায় অশ্রু। বয়স তার ২৪ না হলে এখনি নির্ঘাত এখানে গড়াগড়ি করে কান্না শুরু করে দিতো। আফসোস! লোক লজ্জায় তা হয়ে উঠলো না। ছলছল চোখে শুভ্রতার দিকে চেয়ে ধরা গলায় বললো,

~শুভি, আমি দুষ্টামি করেছি। স..সরি, তুই আমার প্রতি রা..রাগ করিস না প্লীজ।

রিদিতাকে হটাৎ এভাবে কান্না করতে দেখে সকলেই কিছুটা থমাকালো, হকচকালো, অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। শুভ্রতা হা করে চেয়ে রইলো রিদিতার দিকে। মেয়েটার কান্নার কারণ বুঝতে একটু সময় লাগলো তার। এইটুকু কথায় সে কেঁদে দিবে তা তার ভাবনায়ও ছিলো না। আজকাল বন্ধুত্ব নিয়ে তার বান্ধবীরা একটু বেশিই সেনসিটিভ। শুভ্রতা খিল খিল করে হেসে উঠলো। দু হাত ছড়িয়ে রিদিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অ! আমার বাচ্চা! থাক, থাক কান্না করে না। আরে আমিও তো দুষ্টামি করেছি।

আহ্লাদে রিদিতার কান্না না থেমে আরো বাড়লো। ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে উঠে কি বললো কিছুই বুঝলো না সে। শুধু বুঝলো সে অভিযোগ করছে তার এমন দুষ্টামি নিয়ে। শুভ্রতারও এবার মন কিছুটা খারাপ হলো। সে রিদিতার মাথায় এক চাটি মেরে বললো,
~পাগল নাকি তুই? তোকে জড়িয়ে ধরবো না তো কাকে ধরবো? আমি তো মাত্র দুষ্টামি করেছি।

রিদিতা কথা বললো না। চুপচাপ মাথা নিচু করে নাক টানতে লাগলো। উপমা কোনো মতে হাসি আটকে বললো,
~রিদি বেবি, তোর প্রাইজ নিবি না?
~কই প্রাইজ?
~পেছনে দেখ।

তিলোত্তমা বলতেই পেছনে ফিরতে চাইলো রিদিতা। তার আগেই তরী এসে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুরতে লাগলো।

~রিদি আপু!!!!

ঘুরতে ঘুরতে হুট করে ছেড়ে দিতেই রিদিতা টাল সামলাতে না পেরে পেছন দিকে পড়ে যেতে লাগলো। তখনই কারো বলিষ্ঠ হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। রিদিতা চমকে চোখ বড় বড় করে পেছন ফিরে তাকাতেই এক চিৎকার দিয়ে উঠলো,
~আম্মু!!!!! ভূত!!!!

আকস্মিক এমন চিৎকারে মাহাদের কানের পর্দা যেনো ফেটে যাওয়ার উপক্রম। সে দ্রুত রিদিতার মুখ চেপে ধরে চোখ মুখ কুচকে ধমকে উঠলো,
~আর ইউ ম্যাড রিদি? হোয়াই আর ইউ শাউটিং?

রিদিতা চোখ পিটপিট করে মাহাদের দিকে তাকালো। পর মুহূর্তেই ছোটাছুটির জন্য মোচড়ামুচড়ি আরম্ভ করলো। রিদিতা সাহায্যের জন্যে শুভ্রতাদের দিকে তাকালে দেখলো ওরা কেউই ওদের দিকে চেয়ে নেই। তরী আর চন্দ্রের দাদা, দাদী, ফুপা, ফুপুর সাথে কথা বলছে। রিদিতা ছাড়াতে চাইলেও ছাড়লো না মাহাদ।
~সমস্যা কি? মোচড়ামুচড়ি করছো কেনো? ঠিক মত দাড়াও!
~আপনি আমাকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেনো? ছাড়ুন বলছি! মানুষ দেখলে কি বলবে!
~কি বলবে?

মাহাদ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই চোখ গরম করে তাকালো রিদিতা।

~আপনি বুঝতে পারছেন না?
~না।
~না বুঝাই স্বাভাবিক। আপনি বড়লোক মানুষ। আপনার কাছে হয়তো যেকোনো মেয়েকে এভাবে জড়িয়ে ধরা তেমন কোনো বিষয় না। তবে আমি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। আমাদের কাছে এসব মোটেও স্বাভাবিক বিষয় না। আর আমি চাইও না স্বাভাবিক করতে। আপনি আমাকে এভাবে ধরে আছেন, কেউ দেখলে আমাকেই বাজে বলবে। আমার চরিত্রে আঙ্গুল তুলবে।

মাহাদ এক দৃষ্টিতে মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনলো। এমন ভাবলেশহীন ভাবে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে রিদিতার রাগ যেনো তিরতির করে বেড়ে উঠলো।

~বুঝেননি আমি কি বলেছি?

মাহাদ মাথা ঝাঁকালো।

~বুঝেছি।
~বুঝেছেন যখন তবে ছাড়ছেন না কেনো? কি বুঝলেন আপনি?

মাহাদ রিদিতাকে ছাড়লো। ছাড়া পেতেই রিদিতা চাইলো এক ছুটে দূরে চলে যেতে। তবে মাহাদ হাত ধরে আটকালো। রিদিতার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
~বুঝেছি, আমি ভুল কাউকে পছন্দ করিনি। একদম পারফেক্ট। ইউ নো হোয়াট! আই হ্যাভ ফলেন ফর ইউ রিয়েলি হার্ড। অ্যান্ড নাউ, আই নিড ইউ ব্যাডলি ইন মাই লাইফ।
~পাগল হয়ে গেছেন আপনি?

মাহাদ লাজুক হাসলো। আগের থেকেও আরো ধীর গলায় বললো,
~তোমার লজ্জায় লাল হয়ে ওঠা গাল দুটো দেখে কি মনে হচ্ছে জানো? তোমাকে জড়িয়ে ধরে কষে এক চুমু খাই। বাট ইউ হ্যাভ টু ওয়েট টিল আওয়ার ওয়েডিং।

বিস্ময়ে রিদিতার চোখ দ্বিগুণ আকার ধারন করলো। সে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না মাহাদ তাকে এসব বলছে। যে মানুষটা সবার সামনে এতো গম্ভীর, এতো শান্ত, চুপচাপ হয়ে ঘুরে সেই মানুষটা তাকে এসব বলছে। মাহাদ মৃদু হেসে রিদিতার গাল টেনে দিয়ে বললো,
~আমার কিউট প্রেয়সী।
~~~
চলবে~

(আচ্ছা আপনারা গল্প পড়ে এমন চলে যান কেনো?😒 গল্পটা ভালো লাগছে কি না তা একটু কমেন্ট করে জানালে কি হয়? এমন তো না যে কমেন্ট করলেই আমি আপনার *কিডনি* নিয়ে দৌড় দিব😒 রাতের ২ টা বাজে এখন। গল্প লিখছি। গল্পটা কেমন হচ্ছে না বললে কি করে বুঝবো? এই জন্যেই গল্প দেরিতে দেই। লেখার আগ্রহ কমে যাচ্ছে দিন দিন💔 হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here