চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৬০

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৬০

🍂🍂🍂

পড়ন্ত বিকেল। চারদিকে শীতল বাতাস বইছে। বাগানের এক পাশে বেলী গাছের সমারোহ। সারাগাছে সাদা বেলী ফুটে আছে। ঘ্রাণে মো মো করছে চারপাশ। বাগানের মাঝ বরাবর একটা ছোট টেবিল। তাকে ঘিরে চারটি চেয়ার সাজানো। গত পনেরো মিনিট যাবৎ একটা চেয়ার জুড়ে বসে আছে শুভ্রতা। তার ঠিক সামনের চেয়ারে বসে এক মহিলা। সে সম্পর্কে চন্দ্রের ফুফু। আর শুভ্রতার ফুফু শাশুড়ি। গত পনেরো মিনিট যাবৎ তিনি ওকে এখানে বসিয়ে রেখেছে। কিছু বলার জন্য কাঁচু মাচু করছে তবে বলে উঠতে পারছেন না। শুভ্রতা বসে নিজের নখ খুটাখুটি করছে। এতক্ষণ যাবৎ নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকার পরও সে বিরক্ত হচ্ছে না। এই নীরবতা যেনো তার বেশ ভালোই লাগছে। শুভ্রতা গুনগুন করে গান ধরলো। আজকের আকাশটা সুন্দর। বেলী ফুলের ঘ্রাণে তার মনটা আরো চাঙ্গা করে তুলছে। শুভ্রতা গুনগুন থামালো। টেবিল থেকে কফির মগটা হাতে নিয়ে তাতে এক চুমুক বসালো। কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঠান্ডা হওয়ায় তেতো স্বাদ টা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। শুভ্রতা ভাবলো কফিটা আর খাবে না। সে এবার ফাতিমা বেগমের দিকে তাকালো।

~অর্ণবকে আপনার কেমন লাগে ফুফু?
~হ্যা?

হকচকালেন ফাতিমা। শুভ্রতার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। মানুষ একটু গম্ভীর তবে মন ভালো। তরীর মতো চঞ্চল মেয়ে তার সন্তান তা মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তার। তবে চেহারার মিল জানিয়ে দেয় তারা সত্যি মা মেয়ে। শুভ্রতা ঠান্ডা কফিতে আরেক চুমুক দিলো। এইবার কফিটা একটু ভালো লাগলো।

~তরীর সাথে অর্ণব এর সম্পর্কের কথা বলতেই তো ডেকেছেন তাই না?
~তুমি জানতে?

অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলেন ফাতিমা। শুভ্রতা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।

~অর্ণব আর তরী দুজনই একে অপরকে পছন্দ করে…. ভালোবাসে। তবে….
~তবে?
~অর্ণব চাইছে সম্পর্কটা হালাল করতে।
~কিন্তু তরী তো খুব ছোট। সবে ১৮।

শুভ্রতা একটু ভাবলো।

~কাবিন করিয়ে রাখি?
~এই মেয়ে তবে মাথায় চড়ে বসবে। অনুষ্ঠানের অপেক্ষা করবে কিনা সন্দেহ। দেখা যাবে আমাদের না জানিয়েই স্বামীর বাড়ি চলে গেছে।

শুভ্রতা হেসে উঠলো। শত হলেও চন্দ্রের বোন সে।
~এনগেজমেন্ট করাতে চাইছেন?

প্রশ্ন করলো শুভ্রতা। ইতস্তত বোধ করলেন ফাতিমা বেগম। তিনি মাথা দোলালেন।
_______________________________

~চিত্রা মা, রাত আটটা বাজে। চন্দ্র এখনও বাড়ি আসেনি। উনি দূরে থাক, অরণ্য ভাইয়াও ফোন ধরছে না। মাহতাব ভাইও বাসায় নেই। তুমি একটু কাউকে হাসপাতালে পাঠিয়ে খোঁজ লাগাও দেখি।

চিন্তিত মুখে বললো শুভ্রতা। টিভির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকালেন তিনি। শান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন,
~হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছে। চিন্তা করিস না।

শুভ্রতা নিজের ঘরে ফিরে গেলো। সে যেতেই টিভি বন্ধ করলেন চিত্রা। অদ্ভুত কারণে তারও মন বেশ উশখুশ করছে। যেনো কিছু একটা হারানোর আভাস। তিনি কিছুক্ষণ ড্রয়িং রুমে পায়চারি করলেন। এরপর কল লাগালেন আশহাবকে।

~তুমি একটু আহনাফ এর হাসপাতালে কাউকে পাঠাও তো! ছেলেটা ফোন ধরছে না। আমার চিন্তা হচ্ছে।

এক নাগাড়ে কথা শেষ করে ফোন রাখলেন চিত্রা। মিনিট দশেক পরেই দৌড়ে তার কাছে এলো শুভ্রতা। সে তিরতির করে ঘামছে। চোখ বড় বড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। চিত্রা অবাক হলেন। বিচলিত গলায় জানতে চাইলেন,
~কি হয়েছে?
~মা! মা চন্দ্র…
~চন্দ্র? কি হয়েছে আমার ছেলের?
~অনু দি বলল… চন্দ্র স্ট্রোক করেছে।

ধুপ করে পাশের সোফায় বসে পড়লেন চিত্রা। শুভ্রতার ডাকে বাইরে ছুটে এলো রাত্রি।
_______________________________

~মিনি স্ট্রোক ছিল। কিছু নিয়ে হয়তো ভীষণ চিন্তা করে সে। বিপি খুব লো। এভাবে চলতে থাকলে বড়সড় স্ট্রোক এর ঝুঁকি বেশি। মিনি স্ট্রোক ছিলো বলে এই যাত্রায় বেঁচে গেছে।

বেশ প্রফেশনাল ভাবেই নিজের কথা শেষ করলো অরণ্য। শুভ্রতা চুপ করে চেয়ারে বসে আছে।

~বিয়ের পর থেকে দেখছি সে রাতে ঘুমায় না। জিজ্ঞেস করলেই বলে ঘুমাচ্ছি। সকালে ঠিক মতো খায় না। বলে হাসপাতালে গিয়ে অরণ্যের সাথে খাবো। রাতে বাসায় ফিরে আমার সাথে ডিনার করে রোজ। সে যে হাসপাতালে থেকে ঠিকঠাক খায় না তা আমার জানা ছিল না। কি নিয়ে এতো চিন্তা তার? কি এমন ভাবনায় মত্ত থাকে সে?

কান্নারত গলায় প্রশ্ন করলো শুভ্রতা। অরণ্য শুভ্রতার মাথায় হাত রাখলো।

~সে কথা তুই বেশ ভালো করেই জানিস শুভ্রতা।

~আমি তো ইচ্ছা করে তাকে ছেড়ে যাচ্ছি না ভাইয়া। ভাগ্য আমার সঙ্গী না। আমার এতে কি দোষ?

ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো শুভ্রতা। চোখে মুখে অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট। শুভ্রতা উঠে চন্দ্রের কেবিনে প্রবেশ করলো। চন্দ্রের ঠিক পাশে চিত্রা বসে। শুভ্রতা অস্তিত্ব টের পেতেই চিত্রা বলে উঠলেন,

~আমার ছেলেটা তোর ভালোবাসায় শেষ হয়ে যাচ্ছে শুভ্রতা। আমার বাবাটার ভাগ্যটা এমন হলো কেনো?

শুভ্রতার হাত চেপে কেঁদে উঠলেন চিত্রা। শুভ্রতা পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে রইলো। শান্তনা দিলো না। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো চন্দ্রের ঘুমন্ত মুখের দিকে। সে মনে মনে আওড়ালো,
~পৃথিবীতে প্রায় আটশো কোটি মানুষ। আপনি কেনো আমাকে ভালোবাসলেন চন্দ্র? কেনো নিজের দুর্ভাগ্যকে স্বাদরে গ্রহণ করলেন। নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কি অন্য উপায় ছিল না?
~~~
চলবে~
(গল্পে সব থেকে ভালো লাগে কার চরিত্র? কার চরিত্র দেখলে মনে হয় “এই চরিত্রটা আরেকটু সুন্দর হলে ভালো হতো”? কমেন্টে জানাবেন। আর এইযে জলদি পোস্ট করলাম। আশা করছি আজ দেরি করে গল্প দেওয়ার জন্য বকা খাবো না🥹 হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here