তুমিময় অনুভূতি পর্ব -০৯+১০

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ৯+১০

দুপুর থেকেই ছাদে গান বাজনা হচ্ছে।সবাই কাজ করছে।সাথে আমিও টুকটাক কাজ করছি।বিকেলের দিকে রিয়াদ ভাইয়ার বাড়ির লোকজন আসবেন আপুকে হলুদ দিতে।আপু এখন অবশ্য পার্লারে গেছে সাজতে।২ টা বাজতেই সবার তাড়া শুরু হয়ে গেলো রেডি হওয়ার জন্যে।সব মেয়েরা কাজ গুটিয়ে আমার রুমে রেডি হতে চলে এলো।এদিকে আমি এই কাটা হাত নিয়ে শাড়ি পড়া তো দূরে থাক শাড়ির ভাজটাও খুলতে পারছি না।তাই বসে বসে সবার রেডি হওয়া দেখছি।আপুর ফ্রেন্ড প্রমি আপু রেডি হয়ে আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আমার কাছে এগিয়ে এলো।

“মেঘা এভাবে বসে আছো কেনো। রেডি হবে কখন তুমি?”

আমি অসহায় ভাবে আপুর দিকে তাকাতেই আপু আমাকে বললেন

“ওহ তোমার তো হাত কেটে গেছে।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।আচ্ছা এসো আমি তোমাকে রেডি করিয়ে দেই।”

প্রমি আপুর সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো।প্রমি আপু আমাকে খুব আদর করে নিজের বোনের মতো।আপু আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।সাজগোজ কোনো কালেই আমার পছন্দ ছিলো না।আমার কাছে ন্যাচারাল থাকাটাই ভালো লাগে।প্রমি আপু সাজিয়ে দিতে চাইলে আমি না করে দিলাম।এরপর নিজে নিজেই ধীরে ধীরে চোখে হালকা কাজল দিলাম।আর ঠোটে লিপস্টিক দিলাম ব্যস আমার সাজ কমপ্লিট।রেডি হয়ে বেরোতে নিলেই নিরা আপু আমাকে থামিয়ে দিলেন।আমি আপুর দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালে আপু আমাকে বললেন চুল না বেধে কোথায় যাস গাধী দাড়া আমি চুলটা বেধে দিচ্ছি।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে চুল বাধা হয় নি।নিরা আপু আমাকে একপাশে সিথি করে খোপা করে দিলেন।এরপর খোপায় একটা তাজা ফুলের গাজরা লাগিয়ে দিলেন।আমি একদম রেডি।সবাই রেডি হয়ে বেরিয়ে গেছে। আমি আর নিরা আপু শুধু বাকি ছিলাম।আমাকে রেডি করে দিয়ে নিরা আপু বেড়িয়ে গেলেন।আমি ফোন নিয়ে কয়েকটা সেলফি তুললাম।বাহ বেশ লাগছে আমাকে।একদম পারফেক্ট।যেমন টা আমার পছন্দ।রুমের ফ্যান লাইট বন্ধ করে দরজা আটকে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।বাসা প্রায় ফাঁকা গেটের সামনে শোরগোল শোনা যাচ্ছে তার মানে সবাই সেখানে আছে।আমাকে দেখে শুভ্র ভাই দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে বললেন,

“বোন মানুষের হার্ট অ্যাটাক করার ধান্দায় আছিস নাকি?অনন্যা না থাকলে আজই তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকালাম।আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে উনি হা হা করে হেসে উঠলেন।অনন্যা আপু শুভ্র ভাইয়ার বাচপান কা পেয়ার।মানে সেই হাই স্কুল থেকে তাদের প্রেম।এই বাচপান কা পেয়ার গান বের হওয়ার পর থেকেই ওদের দুজনকে একসাথে দেখলে অভ্র ভাই আর আকাশ ভাইয়া চিল্লিয়ে উঠেন,

“জানে মেরি জানেমান
বাচপান কা পেয়ার মেরা ভুল নেহি জানা রে”

শুভ্র ভাইয়ের এসব ফাজলামো দেখে হাসতে হাসতে আমি সেখান থেকে সরে এলাম।রিয়াদ ভাইয়াদের বাড়ির লোকজন চলে এসেছেন একটা মাইক্রো গাড়ি করে।বাকিরা তাদের ফুল দিয়ে বরন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।আমি আর সেদিকে যাই নি।একদম ছাদে চলে গেলাম।এখানে আপুর কয়েকজন বন্ধু আর অভ্র ভাই আছে।সাথে নিয়ন আর আফরান ও আছে।নিয়ন নিরা আপুর ছোট ভাই। ও এখানে থাকে না।ঢাকা থাকে।ওখানে কলেজে পড়ে এইবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আর আফরান শামীমা আপুর ছেলে।বয়স দেড় বছর।আমি ছাদের অপর পাশে রেলিং ধরে দাড়ালাম।অভ্র ভাই আমার দিকে, তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমার তাতে যায় আসে না।আমি ওনার দিকে তাকাবো না।কিন্তু পাঞ্জবিতে ওনাকে দেখতে যে বরাবরই স্নিগ্ধ লাগে।তাই লোভ সামলাতে পারছি না ওনাকে দেখার।আড় চোখে বেশ কয়েকবার তাকালাম।

রিয়াদ ভাইয়ার ভাই রিয়ান আমার দিকে একটা লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“এই যে মিস মায়াবতী। এটা আপনার জন্যে।জানেন তো আপনাকে আমি কতটা পছন্দ করি।”

রিয়ানের কথায় আমি হুহা করে হেসে উঠলাম। রিয়ান আর আমি ফ্রেন্ড।আমরা কলেজে একসাথে পড়তাম। বেচারা খুব ফাজিল।আর আমাকে নিয়ে মজা করা ওর একটা অভ্যাস।কলেজে থাকাকালীন আমাকে নিয়ে যে কত মজা করেছিলো তার হিসাব নেই।অবশ্য আমিও ওকে ছেড়ে দেই নি।সব গুলোর সুদে আসলে হিসাব নিয়েছি।

“তুই ঠিক হবি না?”

“না রে চেঞ্জ হয়ে কি হবে?একদিন তো মরেই যাবো।তাই ভাবলাম চেঞ্জ হবো না।কিন্তু তুই ফুলটা নিবি কিনা? না নিলে বল আমি অন্য কাউকে পটানোর ট্রাই করি।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে আমি ফুলটা নিয়ে নিলাম।এরপর ওকে বললাম,

“ফুল নিলাম ঠিক আছে কিন্তু কারো সাথে লাইন করিয়ে দিতে পারবো না।এখন যা আরেকটা ফুল নিয়ে অন্য কাউকে পটানোর ট্রাই কর।”

“হুম তো তোর কি মনে হয় তোর মতো পেত্নিকে পটাবো?তোকে হাত করার জন্য ফুল দিলাম।এখন আমাকে খোজ দে তোর কোন কোন বোন ফ্রি আছে।”

ওর কথা শুনে দুজনে হাসলাম।আমাকে হাসতে দেখে ও আমার মাথায় আস্তে টোকা দিয়ে বললো,

“হাসিস না বইন।তোর হাসি দেখলে আজ এখানে বহু ছেলের মন ভেঙে যাবে।আর আমি একটা ছেলে হয়ে এতোগুলো ছেলের মন কিভাবে ভাঙতে দেই বল।জানিস তোকে এখিন যে সুন্দর লাগতেছে।হাসলে তার থেকে দশগুন পেত্নী লাগতিছে।

রিয়ানের কথ শুনে ওর পিঠে দুমদাম কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলাম।

“আমি পেত্নী ইডিয়টজতুই পেত্নী সাথে তোর শ্রেয়সী না প্রেয়সী সে ও পেত্নী।দাড়া ওরে জানাচ্ছি যে তুই এখানে এসে অন্য মেয়েকে লাইন মারার ট্রাই করে।”

“তা তোর হাতে কি হইছে?”

“কেটে গিয়েছে কাজ কাচ দিয়ে।”

দুজনে মিলে বেশ কিছুক্ষন এভাবে কথা বলছি হঠাৎ খেয়াল করলাম অভ্র ভাই আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন।মনে হচ্ছে এখনি আমাজে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন।কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি রিয়ানের সাথে কথা বলেই যাচ্ছি।

কাজিনরা আর আপুর বন্ধুরা রিয়াদ ভাইয়াদের বাসায় গিয়েছে।আমি যাই নি হাতের জন্যে।তাই নিশা আর আমি বসে গল্পে মেতে উঠেছি।গল্প বলা ভুল নিশা আমাকে সন্দীহান চোখে আমার আর অভ্র ভাইয়ের কি হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করছে।আমিও সেগুলোর উত্তর দিচ্ছি।কথার মাঝেই দেখলাম অভ্র ভাইরা সবাই রিয়াদ ভাইদের বাসা থেকে চলে এসেছে।এখন আমরা আপুকে হলুদ লাগাবো।এটা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম।আপু নিচে ছিলো শামীমা আপুরা বৃষ্টি আপুকে নিয়ে ছাদে এলো।রাত ৯টা বাজে সবাই মিলে মজা করতে করতে আপুকে হলুদ লাগালাম।এরপর আমি নিচে যাওয়ার জন্যে সিড়ির দিকে গেলাম।সিড়ি বেয়ে অর্ধেক নামতেই কারেন্ট চলে গেলো।আমি ফোনের ফ্লাশ অন করতে যাবো তার আগেই কেউ আমাকে টেনে নিয়ে গেলো সাইডে।এদিকে আমার অবস্থা ভয়ে কাচুমাচু আমি চিৎকার করার ও উপায় নেই।কারন আমার সামনের ব্যাক্তিটা একহাতে আমার মুখ চেপে ধরে আছে।আরেক হাত দিয়ে আমার কোমড় ধরে আছে। আমি উম উম করেই যাচ্ছি কিন্তু আমার আওয়াজ মনে হয় না।দুইগজ পর্যন্ত গেছে।কোমড়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব হলে চমকে উঠলাম আমি।আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।আমি একদম পাথর হয়ে গেলাম।এরপর অপরিচিত ব্যাক্তিটি আমার কোমড়ে একটা খামচি দিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।তবে আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি স্তব্ধ হয়ে রইলাম।কে ছিলো সেটা বুঝতে পারলাম না।কারেন্ট আসতেই চোখে আলো লাগতেই আমি চমকে উঠলাম আমি।

ছাদে সবাই মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছি।কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ করলাম অভ্র ভাই আমার দিকে রেগেই তাকিয়ে আছেন। আমি সেদিকে একদম দৃষ্টিপাত না করে আড্ডায় মেতে উঠলাম।হঠাৎ নিরা আপু বললেন মেঘা একটা গান ধর তো।ব্যাস আপুর সাথে সাথে সবাই শুরু করলো আমাকে গান বলতে বলছে।অবশেষে তাদের হাত থেকে ছাড়া না পেয়ে আমি গান বলতে শুরু করলাম

আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে
আর কিছু নাহি চায় গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়।

গান বলতেই সবাই হাততালি দিতে শুরু করলো।এদিকে আমি লজ্জায় অবস্থা শেষ।কিন্তু অভ্র ভাইয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।উনি ফোনে কিছু করছেন।এরপর উঠে চলে গেলেন।হঠাৎ আমার ফোন বাজতেই সেদিকে তাকিয়ে দেখি অভ্র ভাইয়ের মেসেজ।

“শাড়ি সামলায়ে না পারলে পড়িস কেনো মেঘ।সবাইকে পেট দেখাতে খুব ভালো লাগে তোর তাই না।কেউ যে তোর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে খেয়াল কি নেই।কতবার কথা বলার চেষ্টা করলাম ইগনোর করে চলে গেলি।তোকে এটাই বলতে চেয়েছিলাম।ফাউল মেয়ে একটা।”

অভ্র ভাইয়ের মেসেজ দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।কি বললেন উনি এসব আমার পেট দেখা যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি সেখান থেকে উঠে আমি নেমে গেলাম ছাদ থেকে।অভ্র ভাইয়ের রাগ করাটা স্বাভাবিক ছিলো।না আমি আর এই শাড়ি পড়ে থাকবো না।শাড়ি চেঞ্জ করতে হবে আমাকে।

(চলবে)

(কি বাজে লিখছি বুঝতে পারছি আমি।তার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিলে আমার সুবিধা হবে।মানুষ ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়।হ্যাপি রিডিং।)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১০

কোমড়ে হলুদের লাগলো কই থেকে সেটা বুঝতে পারছি না।অভ্র ভাই না বললে আমি তো খেয়ালই করতাম না।সিড়ি দিয়ে নামতেই দেখি অভ্র ভাই সিড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছেন।আমাকে নামতে দেখে আমাকে ডাক দিলেন।আমি ওনার সামনে যেতেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাসার বাহিরে নিয়ে এলেন।কোমড়ে হাত দিয়ে হলুদ গুলো নিয়ে কর্কশ গলায় বললেন,

” তোর কোমড়ে হলুদ এলো কোথা থেকে মেঘ?আবার সেটা পেট বের করে সবাইকে দেখিয়ে বেরোচ্ছিস।”

আমি ওনার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম।হলুদ আমার কোমড়ে লেগে আছে তা আমি জানতাম না।হঠাৎ অন্ধকারে কেউ হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা মাথায় আসতেই আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,

“অভ্র ভাই জানেন তখন না কে যেনো আমাকে…”

বলে আমি থেমে গেলাম।অভ্র ভাই আমার খুব কাছে থাকায় উনার পারফিউম আমার নাকে আসছে।আর এই পারফিউম টাই তো তখনের লোকটার থেকে পেয়েছিলাম।আমি সন্দেহী চোখে উনার দিকে তাকলাম।এদিকে উনি আমাকে কি হয়েছে বলে যাচ্ছে।কিন্তু হঠাৎ আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে উনি একটু ভড়কে গেলেন,

“আপনি হ্যা আপনি তখন আমাকে অন্ধকারে টেনে নিয়ে গিয়ে এই হলুদ লাগিয়ে দিয়েছেন।আপনার জন্যে আমার শাড়ি সরে পেট বের হয়ে ছিলো।আবার খামচিও দিয়েছেন।এখন আবার সাধু সাজতে চেষ্টা করছেন।নিজে দোষ করে আমকে বকে যাচ্ছে।হাউ ডেয়ার ইউ অভ্র ভাই?”

আমার কথা শুনে উনি তো একদম শকড।আমতা আমতা শুরু করে দিয়েছেন উনি।উনার চোরের মতো দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে যে উনিই এই কাজ করেছেন।

“কেনো এমন করেন হ্যা?আসি না তো আর আপনার সামনে। করি না তো বেহায়াপনা আপনাকে পাওয়ার।তাহলে কেনো আপনি এমন করছেন?অভ্র ভাই আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।তাহলে কেনো এমন করেন?প্লিজ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।আর আমাকে আপনার প্রতি দুর্বল করে দিয়েন না প্লিজ।”

“তোকে কে বললো এটা আমি করেছি।কি প্রমান আছে তোর কাছে? ”

“আপনিই বলেছেন আমাকে।আপনার শরীরের পারফিউম বলেছে এটা আপনি।আপনার চোখ বলেছে এটা আপনি ছিলেন। এতোগুলো প্রমানই কি যথেষ্ট নয় অভ্র ভাই।”

আমার কথার বিপরীতে উনি কোনো কথা না বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে দাড়ালেন।এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“রিয়াদ ভাইয়ার ভাইয়ের সাথে তোর এতো কিসের কথা মেঘ।তোকে ওই ছেলের সাথে দেখে রাগ লাগছিলো আমার।কোনো ছেলের সাথে তোকে দেখতে পারছি না আমি।প্লিজ কোনো ছেলের আশে পাশে যাস না তুই।”

উনি শুধু এটূকু বলে হনহন করে চলে গেলেন ওখান থেকে।কিন্তু আমি ওদিকেই তাকিয়ে আছি।কি বলে গেলেন অভ্র ভাই।আমাকে কারো সাথে সহ্য করতে পারেন না উনি।আমি কি তাহলে উনার বুকের বা পাশে জায়গা করে নিতে।কথাটা ভাবতেই আমার মনে আনন্দের জোয়াড় ভেসে গেলো।ই মুহুর্তে আ।আর নাচতে ইচ্ছে করছে।সত্যি আমি আজ খুব খুশি।
.
.
.
কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছাতেই শামীমা আপু আমার কাছে আফরানের দ্বায়িত্ব দিলো।আফরান নাকি আমার কাছে যাবে যাবে করে আপুকে অতিষ্ট করে তুলছিলো।তাই আর কি আমি আফরানকে নিয়ে বসে আছি।কিন্তু সে বসে থাকতে দিবে না আমাকে।তাজে কোলে নিয়ে আমাকে এখন হেটে বেরোতে হবে।কিন্তু এই ভারি লেহেঙ্গা নিয়ে আমি নিজেই হাটতে পারছি না।ওকে নিয়ে হটবো কিভাবে।ইচ্ছে করছে এখন কান্না করি জোড়ে জোড়ে।হঠাৎ চোখ গেলো অভ্র ভাইয়ের উপরে।আকাশী শার্টে উনাকে দেখতে বেশ লাগছে।আমাকে এভাবে দেখে এগিয়ে এলেন।উনাকে দেখেই আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে।আমার সামনে এসে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“কি হয়েছে মেঘ?এভাবে বসে আছিস কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“দেখেন না অভ্র ভাই।আপু আফরানকে আমার কাছে দিয়ে গেলো।কিন্তু আফরান সে বসে থাকবে না।তাকে নিয়ে হাটতে হবে।আমি এই ভারি কাপড়চোপড় পড়ে আবার ওকে নিয়ে হাটতে পারি?”

আমার কথা শুনে উনি আফরানকে আমার থেকে নিয়ে নিলেন।এরপর বললেন তুই থাক আমি ওকে নিয়ে হাটছি।আমি সম্মতি জানালাম।কিন্তু আফরান আমাকে রেখে যাবে না।ওদের সাথে আমাকেও হাটাহাটি করতে হবে।অগত্যা আমকেও বাধ্য হয়ে ওনার সাথে যেতে হলো।কমিউনিটি সেন্টারের বারান্দায় হাটছি আমি আর অভ্র ভাই।আর অভ্র ভাইয়ের কোলে আফরান।হঠাৎ একটা মহিলা আমাদের সামিনে এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“মা অনেক্ষন দেখছি তোমার স্বামী বাচ্চাটাকে নিয়ে হাটছে।বাচ্চা আছে তো এতো ভারি কাপড় পড়ার কি দরকার জানোই তো বাচ্চাকে কোলে নিতে হয়।”

মহিলার কথা শুনে আমি এবং অভ্র ভাই দুজনেই বেশ অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম।একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি।

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই অভ্র ভাই বললেন,

“সমস্যা নেই আন্টি।অবুঝ বউ হলে হাসবেন্ড কেই সব দিকে সামাল দিতে হয়।”

“খুব ভালোবাসো বুঝি বউকে তাই না?”

উনি মুচকি হেসে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে হ্যা বললেন।এরপর,

“আসছি আন্টি দোয়া করবেন আমাদের জন্যে।”

বলে আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন মহিলার সামনে থেকে।এদিকে অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি চরম অবাক।কি বলে এই অসভ্য লোকটা?আমাকে বলেন যে আমাকে ভালোবাসেন না।এদিকে অন্য লোকের সামনে বউ বলে পরিচয় দিচ্ছেন।আবার বলেন কিনা ভালোবাসে।আমি রেগে অভ্র ভাইকে বললাম,

“অভ্র ভাই আপনি ওই মহিলার সামনে আমাকে বউ বলে পরিচয় কেনো দিলেন?হতেও তো পারে উনি নিজের ছেলের জন্যে আমাকে পছন্দ করে ছিলেন।ইশ আন্টিটা কি সুন্দর।না জানি ওনার ছেলে আরো কত সুন্দর।”

বলে আমি একটু ভাবুক হওয়ার অভিনয় করলাম।কিন্তু অভ্র ভাই রেগে গেলেন আমার এমন কান্ডে।উনি রেগে গিয়ে আফরান কে আমার কোলে দিয়ে বললেন,

” বস্তা পড়ে এখন আরেক বস্তা কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়া। বদ মেয়ে একটা।আর যদি তোকে আমি সামনে দেখি তো হাড় গুড়ো করে ফেলবো তোর আমি।”

বলে হনহন করে উনি ওখান থেকে চলে গেলেন।আর আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম ওনার দিকে তাকিয়ে।কি প্রয়োজন ছিলো অভ্র ভাইকে রাগানোর।একেই বলে নিজের পায়ে কুড়াল মারা।

________

বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়েছে আরো দুই দিন আগেই।কিন্তু বিয়ে বাড়িতে কাজ কর্ম শেষে শরীর এতো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো যে সকাল সকাল ঘুম থেকেই উঠতে পারি না এই দুই দিন।তবে আজ ফজরের আজান কানে আসতেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামায আদায় করলাম।ছাদে যাওয়ার জন্যে মনস্থির করলাম।সাথে কফি হলে মন্দ হয় না।যেই ভাবা সেই কাজ।চলে গেলাম রান্নাঘরে। এরপর কফি বানিয়ে ফোন হাতে নিয়ে চলে গেলাম ছাদে। কফি খেতে খেতে সকালের এই সতেজ হাওয়ায় মন মেজাজ একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।দীর্ঘক্ষণ প্রকৃতির সাথে নিরবে আলাপন করলাম।এরপর আশেপাশে তাকিয়ে পাশের বাসার পাশের ছাদের ফুল গাছ গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো।পুরো ছাদে নানা রংয়ের ফুল ফুটে আছে।আমার ও খুব শখ ছিলো ফুলের গাছ লাগানোর।কিন্তু অলসতায় নিজের শখ পূরন করা আমার দ্বারা সম্ভব হয়ে উঠে নি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির কাপে চুমুক দিলাম।কিন্তু একি কফি শেষ হয়ে গিয়েছে কখন তা খেয়ালই নেই আমার।নিজের বোকামিতে হাসলাম।ফোনের রিংটোন বাজতেই ফোনের স্ক্রিনে তাকালাম।সেখানে” নিশাচর প্রাণী” নামটা জ্বলজ্বল করে উঠেছে।নিশা ফোন করেছে।হয়তো এই ২ দিন কলেজে যাই নি বলে ভেবেছে আজও কলেজে যাবো না।তাই ও ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে সালাম দিলাম।এরপর কেমন আছিস জিজ্ঞেস করতেই নিশার যত রাগ ছিলো তা বেরিয়ে আসতে শুরু করলো,

“হারামি এই ২ দিন কলেজ আসিস নাই কেন?আর কারো বাসায় বিয়ে হয় না?তোর একার বোনের বিয়ে হইছে।আরে মানুষ তো নিজের বিয়ে হলেও বিয়ের দ্বিতীয় দিনেই কলেজ আসে আর আজ ২ দিন পেরিয়ে গেছে তোর কোনো খোজ নেই জানিস না কলেজে একা আসতে আমার ভালো লাগে না। আমি পারলে এই মুহুর্তে গিয়ে তোর ঘাড় ধরে কলেজে নিয়ে আসতাম।”

নিশার এমন চিৎকার দিয়ে কথা বলা শুনে ফোন কান থেকে নামিয়ে রাখলাম আমি।কারন কান থেকে নামার পরও আমি ওর কথাগুলো শুনতে পারছিলা।কানে রাখলে কি যে হতো আল্লাহ মালুম।হতে পারে কানের পর্দাটাই ফেটে যেতো।

“হইছে তোর বলা শেষ?”

“না আরো আছে।কিন্তু গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তোর সাথে চিল্লাইতে যেয়ে।”

“হ মাইক্রোফোন ছাড়া ভাষণ দিলে গলা কাঠ হবে না তো কি হবে?সে যাক গে।যা বলার আছে কলেজ যাওয়ার পর বলিস।এখন রাখি।”

“আরে শুন না তোমে যা বলার জন্যে ফোন দিয়েছি।আজ থেকে আমাদের কলেজে নিউ টিচার আসবেন তাই তাড়াতাড়ি চলে আসিস।”

ওর প্রতি উত্তরে আমি আচ্ছা বলে ফোন কেটে দিলাম।আরো কিছুক্ষন প্রকৃতির সতেজ হাওয়ায় মন ঠান্ডা করে কাপ হাতে ছাদ থেকে নেমে এলাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here