তুমিময় বসন্ত পর্ব -২১+২২

#তুমিময়_বসন্ত
২১.
#writer_Mousumi_Akter

আরহীর গাল চেপে ভীষণ হাসির কারণ বোঝার জন্য আরহীর হাত চেপে ধরলাম আর বললাম,

” কি করছিস তুই আমার দেবরের সাথে।”

আরহী এবার হো হো করে হেসে উঠে বললো,

“আরে শোন না কি মজা হয়েছে।তোর দেবর আস্ত একটা বুদ্ধু।আমি হাসতে হাসতে শে*ষ মুগ্ধ।আমি বাস থেকে নেমেই দেখি অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটা এসি রুমে বসে বারবার অয়ন কে মেসেজ দিচ্ছি কই আপনি খুজে পাইনা তো?
আয়ন বার বার বলতেছে সে সাদা শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি অয়ন কে বলেছি আমি হারিয়ে গিয়েছি আপনাকে খুজেই পাচ্ছিনা অয়ন ভাইয়া।আমি এখন হারিয়ে গেলে আমার কি হবে অয়ন ভাইয়া।
ছেলেটা রোদে দাঁড়িয়ে আমাকে খুজতে হয়রান।একবার এদিক একবার সেদিক।ছেলেটা যখন ভীষণ ক্লান্ত তখন তার কাছে গিয়ে বললাম,

“এইযে এক্সকিউজ মি!”

“হুম।”

“গরম নাকি খুব আজ। ”

“হুম।”

“কাউকে খুজছেন।”

“হুম।”

“পাচ্ছেন না। ”

“না।”

“না আর হুম বলছেন কেনো?”

সে বেশ বিরক্ত কন্ঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কে আপনি? আর কি বলবো আপনাকে।”

“আপনার বউ আমি।আমার সাথে যাবেন।”

“আপনার সাথে যাবো মানে কে আপনি?আশ্চর্যজনক মেয়ে তো আপনি?”

“রেগে যাচ্ছেন কেনো?”

“তো রাগবো না।”

“এখানে কেনো এসছেন আপনি?”

“আমার এক আত্মীয়কে পিক করতে।”

“গাড়ি থেকে তো সবাই নেমে গিয়েছে তো আপনি কাকে পিক করতে এসছেন।”

“উনি আসলে আমার কাছে আসবেন,আর জানেন আমি অপেক্ষা করছি।”

“তাকে দেখলে চিনবেন।”

“চিনবো?”

“আমার দিকে ভালোভাবে দেখুন।”

“মেয়েমানুষ এর দিকে তাকাই না।

“কেনো?বউ এর নিষেধ। ”

“কি সমস্যা আপনার?আজে বাজে প্রশ্ন করছেন কেনো?”

“লুক এট মি!এইযে আমি আরহী।আমাকে দেখেও চেনা যায় না।”

“আপনি সিরিয়াসলি আপনি।”

“হ্যাঁ সিরিয়াসলি আমি।ওই এসি রুমে তখন থেকে বসে আপনাকে দেখছি।কিভাবে খুজছেন আমাকে।আবার চোখের সামনে দেখেও চিনছেন না।”

“মানে বসে থেকে আমাকে এই রোদে হয়রান করেছেন।”

“তো কি করবো।আপনি নাকি আমাকে দেখলে চিনবেন।এই হলো তার নমুনা।”

“আজকাল মেয়েরা যেভাবে সেল্ফি তোলে বাস্তব আর ছবির অবস্থা দেখে বোঝার কি কোনো উপায় আছে।চলুন এবার।”

“আমার ব্যাগ টা ধরুন।”

“এত ভারী কি আছে এতে।”

“খুব একটা ভারী না চলুন।”

“আরহীকে বললাম,আমার দেবর এমনিতেই অনেক শান্তশিষ্ট ছেলে।সে মেয়েদের সাথে বেশী কথা বলেনা।শান্তশিষ্ট ছেলেটার এই হাল করেছিস।”

“করবোই তো বিয়াইসাব বলে কথা।”

“চল,ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবি।”

আম্মু আর খালামনি দুই বস্তা ভরে জিনিসপত্র পাঠিয়েছে আমাদের জন্য।

অয়ন,আরহী দুজনেই ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং এ এলো।খাবার দিতে দিতে বললাম,

“অয়ন আরহী কি অনেক ঘুরিয়েছে তোমাকে।”

“আগে জানলে আমি যেতাম না ভাবি।”

“বিয়াইসাহেব খুব কষ্ট দিয়েছি বুঝি।”

“না। ”

“আপনার কিন্তু বউ টিকবে না।”

“কেনো?”

“কথা এত কম বললে বউ বোবা ভাববে।”

“বিয়ে কে করছে যে বউ টিকবে না।”

“বিয়েই করবেন না ওমা।”

“হুম।”

“হুম কি আপনার জাতীয় ভাষা।”

“হুম।”

“আপনার একটা কিউট নেইম দিয়ে দিলাম আমি সে হলো হুম সাহেব।এখন থেকে হুম সাহেব ই আপনার নাম।”

“এত কথা বলেন গরম লাগেনা।”

“টাকা তো লাগেনা।টাকা লাগলে বাধ্য হয়েই কম কথা বলতাম মিষ্টার হুম সাহেব।”

খাওয়া শেষ করে আরহী বললো,

“দুলাভাই কোথায় মুগ্ধ।”

“উনি অফিসে?”

“অনেক্ষণ দেখিস না পরাণ পুড়ছে না।”

“অনেক্ষণ কোথায় সে তো অফিসে গিয়ে সারাক্ষণ ভিডিওকল দিয়ে রাখে।মানে আমি বুঝিনা তার কি একটুও বিরক্ত লাগেনা আমার মুখ দেখতে। সারাক্ষণ কি দেখেন উনি।”

“মুগ্ধ হয়ে মুগ্ধতার রূপ দেখেন উনি?কি দারুণ না।”

“আমার নাম নিয়ে সবাই প্রাঙ্ক করো তাইনা।”

“সন্ধ্যার পরপর ই আয়াস ভিডিও কল দিলো।আরহী বললো,মুগ্ধ তোর জানেমান ফোন দিয়েছে আমার অফিসার দুলাভাই।”

“আরহীর কথা শুনে মৃদু হাসলাম আর বললাম,তোর দুলাভাই এর জব কবে চলে যাবে শুধুমাত্র এই ফোন করার জন্য।সারাক্ষণ তার এই একটায় কাজ পাঁচ মিনিট পর পর ফোন করা।”

“নে ফোনটা রিসিভ কর।”

ফোনটা রিসিভ করে বেলকনির দিকে গেলাম।কেননা আয়াস যে ফাজিল আরহীর সামনে কি না কি বলে ফেলবে তার ঠিক নেই।আরহী আমাকে ক্ষেপাবে।

ফাঁকা বেলকনিতে লাইট অন করে ফোনের দিকে তাকালাম।আয়াস চেয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে।শার্টের বোতাম দুইটা খোলা রাখা।হাতা গোটানো, মনে হচ্ছে প্রচন্ড গরম লাগছে তার।আমার দিকে তাকিয়ে জিভ দিয়ে ভেঙাচ্ছে আয়াস আর মৃদু মৃদু হাসছে।সে ফোন করলে আমার ভীষণ ভালো লাগে কিন্তু তার সামনে এমন ভাব করি যেনো সে ফোন করাতে আমি ভীষণ বিরক্ত আমি।বেশ ভাব নিয়ে বলি বারবার ফোন করার কি প্রয়োজন।কিন্তু আমি সারাক্ষণ তার ই ফোনের অপেক্ষা করি।আজ ও তাই করলাম।তাকে বললাম,

“কি হয়েছে মাত্র ই ফোন কাটলাম। আবার ফোন দিয়েছেন কেনো?”

আমার এমন বিরক্তিমাখা কথার তোয়াক্কা না করে মুগ্ধ আর আকৃষ্ট করা সুরে আমায় ডাকলেন,

“মুগ্ধতা।”

তার কন্ঠে কিছু তো আছে।বিশেষ কিছু আছে।তার কন্ঠে আমার নাম উচ্চারণ টা আমাকে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করে তার দিকে।আমার ভেতরে তাকে নিয়ে অন্য রকম এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়।আমি মিহি কন্ঠে বললাম,

“বলুন।”

সে আবার আমাকে সেই একই সুরে ডাকলো,

“এই মুগ্ধতা এই।”

“শুধু ডাকছেন কিছুই তো বলেন না।”

“এই মুগ্ধ শোনো না।”

“বলুন না।”

“মুগ্ধতা মেরি জান,আই লাভ ইউ।”

সে কি এইভাবে ডেকে ডেকে আমাকে তার প্রেমের জোয়ারে ভাষাতে চাইছে।এত আকৃষ্ট করা কন্ঠে ডাকার কি প্রয়োজন।আমি সিওর শুধু আমি নয় যে কোনো নারী ই এমন ভাবে ডাকলে প্রেমে পড়ে যাবে।ধীরে ধীরে দিনে দিনে সময়ের সাথে সাথে আমি কখন কিভাবে তাকে ভালবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।আর এমন চমৎকার ভাবে যে মানুষ টা কারণে অকারণে প্রেম নিবেদন করতে থাকে।তাকে ভাল না বেসে থাকা যায়।অভির সাথে আমার ভালবাসা ছিলো কিনা জানিনা।কিন্তু সেদিনের মুগ্ধতা অভির জন্য পা* গল ছিলো।কিন্তু আজকের মুগ্ধতার বেঁচে থাকার কারণ আয়াস।আজ আমি বুঝি স্বামি নামক মানুষের থেকে প্রিয় আর কেউ হতে পারেনা।তার সাথে ভালবাসা উপর থেকেই জুড়ে দেওয়া হয়।দুই ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি নিয়ে আয়াসের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।আয়াস শিষ বাজিয়ে গানের সুর তুললো,

“চোখের স্বপন তুমি
বুকের কাঁপণ তুমি
কত আপণ তুমি জানা নাই।
তোমাকে চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই।”

একটা মানুষের শিষ দিয়ে তোলা গানের সুর ও এতটা সুন্দর হতে পারে।নিজের অনুভূতি আড়াল করতে বললাম,

“বিরক্ত হচ্ছি আমি।”

“আমি তাহলে সাকসেস।আমি তো সে চেষ্টায় করছি বেবিডল।বিরক্ত হয়ে বাসা ছুটে আমার অফিসে চলে এসো।ক্লান্ত শরীরে প্রিয়তমার মুখ দেখলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে ফুল এনার্জি ফিরে পাবো।”

“খেয়ে আমার কাজ নেই।আমি ছুটে যাবো উনার অফিসে।”

“আসতে হবে না বাট তাকাও আমার দিকে।”

“তার দিকে তাকিয়ে বললাম কি?”

ভীষণ লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরে তাকালাম আমি।আয়াস দুই ঠোঁট এক জায়গা করে উচ্চারণ করলো,

“উম্মম্মম্মম্মম্মম্মমাহ।”

ঠোঁটে শব্দ করে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলো।মনে হচ্ছে লজ্জায় এক্ষুণি ফোনটা পড়ে যাবে আমার হাত থেকে।মাথা নিচু করে বললাম,

“ছিঃআশে পাশে যদি কেউ থাকতো।”

“আবার দেই তাহলে।”

লজ্জায় দ্রুত ফোন কেটে দিলাম
ইস উনার কি একটুও লজ্জা নেই।হুট হাট এসব করেন।

এরই মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো।দরজা খুলে দেখি একটা ছেলে।আমার হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললো,
আয়াস স্যার দিয়েছেন।আয়াসের ফোন এক্ষুনি কাটলাম।তাহলে কার্ড কিসের।কার্ড টা খুলে দেখি লেখা আছে।

“বেবিডল,

না আজ তোমার জন্মদিন,না ভ্যালেন্টাইন্স ডে,না কোনো স্পেশাল ডে।এটা জাস্ট একটা লাভ কার্ড আমার পক্ষ থেকে আমার লাভের জন্য।হঠাত এটা হাতে পেয়ে তোমার মুখে যে হাসি ফুটবে সেটা দেখার জন্য আমার এটা পাঠানো।এই কার্ডের একটায় মানে এটা আমার ভালবাসার বার্তা তোমার জন্য।আমি জানি তুমি এটা পড়ার সময় মৃদু হাসবে।এক লাইন বারবার পড়বে।ভীষণ ভাল অনুভূতি হবে আমার জন্য। আই লাভ ইউ মুগ্ধপরী,আই রিয়েলি লাভ ইউ।এখনো তোমার মুখে ভালবাসি কথাটা আমি শুনতে পাইনি।তবে আমি জানি তুমি বলবে,খুব শিঘ্রই বলবে।তোমার মনের কথা আমি বুঝে গিয়েছি।”
#তুমিময়_বসন্ত
২২.
#writer_Mousumi_Akter

–আজ কি মন খারাপের রাত নাকি তীব্র বিষাদের রাত।নাকি আজ ভয়ানক একাকিত্বের রাত।ভরা জোৎসনায় সব মনে হচ্ছে কেনো?মনের কোনে কষ্ট জমেছে কেনো রাশি রাশি।কেনো কারো অপেক্ষায় তোলপাড় করছে হৃদয়।কেনো অস্হিরতায় পুড়ছে হৃদয়।কেনো দহন হচ্ছে কাউকে কাছে না পাওয়ার। মন খারাপ আর একাকিত্বের রাত গাড় আর গভীর হয় কেনো?এসব মন খারাপের কত গুলো প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজের ভেতরে।ঘড়িতে রাত এগারোটা কিন্তু আয়াস এখনো বাসায় ফেরেনি।সেই সন্ধ্যার পরে আর একটা বার ও ফোন দেয় নি আমাকে।কয়েক লক্ষ বার ঘড়ি দেখেছি আমি কিন্তু সময় যাচ্ছেনা।রাত যত বাড়ছে তত আমার মন খারাপ বাড়ছে।রাত যত গভীর হচ্ছে একাকিত্ব যেনো আমাকে তত বেশী ঘিরে ধরছে।আজ আয়াস নেই বাসায় তার অনুপস্হিতি আমাকে বড্ড যন্ত্রণা দিচ্ছে।নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে।একদিন ও আয়াস আমাকে ছেড়ে রাতে কোথায় থাকে নি।তাই ওর অভাব টা একটুও বুঝতে পারিনি।ভীষণ মিস করছি তাকে।মিস করছি তার আমাকে বিরক্ত করাটা।সে আসুক এসে বলুক আমায় মিস করছো তাইনা?তুমি আমায় ভালবেসে ফেলেছো তাইনা মুগ্ধতা।এসব বিরক্তিকর কথায় সে বলুক বারবার।বার বার ঘড়ি দেখতে দেখতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।মনে হচ্ছে কয়েক ঘন্টা কেটে গিয়েছে অথচ ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি মাত্র পাঁচ মিনিট ও হচ্ছেনা।এমন হচ্ছে কেনো সব কিছু।আজ টিভি দেখতে মন চাচ্ছে না, ফোন দেখতে মন চাচ্ছে না।সব কিছু বিষন্ন লাগছে।শুধু ভালো লাগছে আয়াস কে।সব কিছু থেকে বিরতি নিয়ে তাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করছে।অন্য দিন আয়াস এসেই এই সেই বাহানায় আমাকে জড়িয়ে ধরে আমি ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বলুন সরুন নির্লজ্জ কোথাকার। খাওয়ার সময় হুট করেই তার প্লেটের মাছের পেটির অংশ নিয়ে আমার মুখে পুরে দিয়ে বলবে ফেলে দিওনা কিন্তু বরের হাতের খাবার খেলে মহব্বত বাড়ে।হুট হাট আমাকে না বলে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে এই তোমার মাঝে কি যাদু আছে বলবে প্লিজ তোমাকে দেখলে আমার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে।তুমি রাগ করো বলে জড়িয়ে ধরে থাকতে পারিনা।নাহলে ট্রাস্ট মি মুগ্ধপরী সারাক্ষণ নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে নিদ্রাহীন ভাবে তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতাম।তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকার মতো ভালো অনুভূতি কি আর কিছুতে আছে।রাতে ঘুমোনোর সময় কোল বালিশ মাঝে দিয়ে বলি এটা যেনো না সরে সকালে উঠে দেখি বালিশ নেই তার বাহুডোরে আমি আবদ্ধ।সে ক্রিকেট দেখার সময় রিমোট টা কেড়ে বিয়ে বলি আমি সিরিয়াল দেখবো। আয়াস বাধ্য হয়ে ফোনে লাইভ দেখে।হঠাত করেই আজ সেসব মিস করছি আমি।আমাকে একটা বার ও ফোন করেনি কেনো সে।ভেবে ভেবে অস্হির হয়ে তাকে ফোন করলাম।সে প্রথমবার রিসিভ করলো না আর পরেরবার কেটে দিলো।মনের মাঝে ভয়ানক ব্যাথা শুরু হলো।কাল বৈশাখির তুফানের মতো লন্ড ভন্ড ঝড়ে সব এলোমেলো শুরু হতে লাগলো।আমি জানি আয়াস আসবে।হয়তো বিজি তবুও এমন হচ্ছে কেনো আমার।কেনো এই যন্ত্রণাদায়ক অস্হিরতা আমার।অকারণেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আমার।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে আমার।কাঁদতে কাঁদতে একাকার অবস্থা আমার।কয়েক লক্ষ বার ঘড়ির টাইম দেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত একটা বাজে।ঠিক তখন ই একটা মেসেজের সাউন্ডে ওয়াশরুম থেকে ছুটে আসতে গিয়ে হুবড়ি খেয়ে পড়লাম। নিজেকে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে ডায়নিং টেবিলের কাগজ টেনে ধরতে খাবারের পাত্র গুলা নিচে পড়ে গেলো।মেসেজের সাউন্ডে কোনো কিছুর হুঁশ ছিলো না আমার।আমার বিপদ হোক,হাত ভেঙে যাক,পা ভেঙে যাক কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছিলাম না আমি।আমাকে শুধু ফোনে আসা মেসেজ টা দেখতে হবে।যদি আয়াসের মেসেজ হয়।পড়ে গিয়ে পা কাত হয়ে পায়ের পাতায় ভীষণ যন্ত্রণা করছে।সে যন্ত্রণা উপেক্ষা করে আমি ফোনটা হাতে নিলাম।ফোন টা ডায়নিং এর চেয়ারে রেখে ওয়াশ রুমে গিয়েছিলাম।ফোন টা হাতে নিয়েই মুখ ফুটলো প্রশান্তির হাসি।আয়াসের ই মেসেজ ছিলো।

সাথে সাথে মেসেঞ্জার ওপেন করে দেখলাম আয়াস লিখেছে,

“জেগে আছো বেবিডল এখনো?”

সব মন খারাপ উধাও হয়ে গেলো নিমিষেই ।যেনো আমার মন খারাপ ই ছিলো না কোনদিন।কিছুক্ষণ আগের মুগ্ধতা আর এই মুগ্ধতকে দেখে কে বলবে যে আমি কিছুক্ষণ আগে ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছিলাম।আয়াস আবার মেসেজ লিখলো,

“মুগ্ধতা।”

“আমি মন খারাপের ইমুজি দিলাম।”

সে আবার মেসেজ করলো,

“খেয়েছো রাতে?”

“আমি চুপ রইলাম তার প্রশ্ন টা এড়িয়ে গেলাম।”

সে আবার মেসেজ করলো,

“আজ রাতে তোমার কোলবালিস যেখানে রাখবে সেখানেই থাকবে।কেউ ডিস্টার্ব করবেনা।”

আমিতো এমন টা চাইনা।তার ডিস্টার্ব ভীষণ ভাবে চাইছি আমি।মন খারাপেএ ইমুজি দিয়ে লিখলাম,

“কেনো?”

“আজ আমি বাসায় ফিরতে পারবো না।”

“কেনো ফিরতে পারবেন না?”

“আজ অফিসে নাইট ডিউটি আছে।অনেক ইমপর্টেন্ট কাজ।আজ কেনো কয়েকদিন ই থাকতে পারবোনা।”

চোখের পানিতে ফোন ঝাপসা হয়ে এলো।সে কয়েকদিন বাসায় আসবেনা।তাকে না দেখে কিভাবে থাকবো আমি।যন্ত্রণা আবার ও তীব্র আকারে বাড়তে শুরু করলো।তার মেসেজের উত্তর লিখলাম,

“কেনো?”

“তোমার স্বামি একজন অফিসার মুগ্ধতা।তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে।”

“হুম বুঝতে পারছি।খেয়েছেন।”

“খাওয়ার সময় পায় নি।বললে নাতো তুমি খেয়েছো কিনা?”

“হুম।”

“হুম মানে কি।”

“কিছুনা।”

আয়াস আবার মেসেজ করলো কিন্তু আমি উত্তর দিলাম না।কত গুলো মেসেজ করেছে সিন করে রেখে দিয়েছি।কিছুই ভালো লাগছেনা।এই মুহুর্তেই কি তার সব কাজ থাকতে হলো।পনেরো মিনিট পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো।এত রাতে কলিং বেল বাজাতে বেশ চমকে গেলাম আমি।দরজা খোলাটাও তো ঠিক হবেনা।বেশ ভয় করছে আমার।কে আসতে পারে এত রাতে।আমার ফোন আবার বেজে উঠলো।আয়াসের ই ফোন এসছে।ফোনটা রিসিভ করতেই বললো,

“দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি বেবিডল।প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।”

সে সত্যি এসেছে।মাত্র ই না বললো সে আসবে না।দরজা খুলে দেখি আয়াস একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়াস কে দেখেই সমুদ্রে তেড়ে আসা তুফানের মতো আমি আয়াস কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।বেসামাল কাঁন্না জুড়ে দিলাম।যেনো ছেড়ে দিলে আয়াস আবার পালিয়ে যাবে।আয়াস কিছুই বললো না।সে বেশ খানিক টা অবাকের মতো।আমি এর আগে কখনো তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁন্নায় ভেঙে পড়িনি।আয়াস আমাকে নিজের সাথে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো।আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“কি হয়েছে মুগ্ধপরী।এভাবে কাঁদছো কেনো?”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।আয়াস অনেক্ক্ষণ জিজ্ঞেস করার পর অভিমানি সুরে বললাম,

“কিছু না।”

আয়াস আমাকে আরেক টু শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,

“তুমি কাঁদলে কিন্তু আমিও কেঁদে দিবো।”

“আপনি আসেন নি কেনো এত দেরী করেছেন কেনো?”

“কাজ ছিলো।”

“কাজ থাকুক তবুও আপনি চলে আসবেন।আমার ভয় করছিলো খুব।”

“আজ তো আরহী ছিলো।”

“কে ছিলো কে ছিলো না আমি কিছুই জানিনা।শুধু জানি আপনি ছিলেন না।আজ আমার কিছুই ভালো লাগছিলো না।জানেন কত হাজার বার ঘড়ি দেখেছি।আপনার জন্য সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছি আমি।”

“আমি তো এসেছি,তাকিয়ে দেখবে না তুমি।”

“না দেখবো না।আপনি আবার চলে যাবেন।”

“কে বললো চলে যাবো।”

“আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছেন কয়েকদিন বাসায় ফিরতে পারবেন না।”

“আমি প্রাঙ্ক করছিলাম।সো সরি জানপাখিটা।আমি কখনোই আর এমন প্রাঙ্ক করবোনা।যে কারণে তোমার চোখে পানি আসে সে কাজ আয়াস আর কখনোই করবেনা।এই দেখো আমি কান ধরছি।আমি জাস্ট দেখছিলাম আমি না থাকলে তোমার খারাপ লাগে কিনা।”

“কেনো আপনার আমাকে এত পরীক্ষা করার দরকার।”

“কেনোর উত্তর টা পেয়ে গিয়েছি।এবার শুধু মুখে শুনতে চাই।”

এরই মাঝে আয়াস খেয়াল করলো ডায়নিং টেবিলের সব খাবার ফ্লোরে পড়ে আছে।আয়াস আমাকে বললো,

“এ কি এসব কিভাবে পড়েছে।”

“আমার জন্য পড়েছে।
আমি হোচট খেয়েছিলাম।”

এবার আয়াস খুব উত্তেজিত হয়ে বললো,

“তুমি হোচটা খেয়েছো।দেখি কোথায় লেগেছে।”

“লাগেনি।”

“লেগেছে দেখাও কোথায়।”

“লাগে নি সত্যি।খাবার গুলো পড়ে গিয়েছে।আমি এগুলো পরিষ্কার করে দ্রুত রান্না করে দিচ্ছি এখন আবার।”

“উফফ এত্ত লক্ষি বউ চাইনা আমার।আমার চাই ঝগড়ুটে বউ।যে বলবে এইযে শুনছো আজ একটু রান্না করে খাওয়াবে।রোজ তো বউ এর হাতের রান্না খাও।”

আয়াসের কথা শুনে হেসে দিলাম আমি।পা বাড়াতে গেলেই ব্যাথায় আতকে উঠতেই আয়াস আমাকে ধরে বললো,

“কি হয়েছে মুগ্ধতা?”

“মনে হয় পায়ে ব্যাথা পেয়েছি।”

“ইস,খুব ব্যাথা লাগছে তোমার?”

“না,বাট হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে।একটু হেল্প করবেন আমায়।”

“হেল্প আবার কি।সোজা বলতে পারো না আমায় একটু কোলে তুলে নাও।”

“আপনি তো ক্লান্ত।”

“আমরা ক্লান্ত হইনা মুগ্ধতা।যারা ভালবাসে তারা ক্লান্ত হয়না।বরং প্রিয়তমার হাসি মুখ দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।”

আয়াস আমাকে কোলে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ব্যাথা পাওয়া জায়গা ভালোভাবে মালিস করে দিয়ে বললো,কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।আমার সামান্য কষ্টে তার কত কেয়ার।তাকে ভাল না বাসার কোনো অপশন নেই।আয়াস ফ্লোর পরিষ্কার করে ফ্রিজের রাখা অবশিষ্ট কিছু খাবার গরম করে এনে নিজে সহ আমাকে খাইয়ে দিলো। ভীষণ ফ্রেশ লাগছে এখন মনের মাঝে।আমি বিছানায় বসে আছি।আয়াস রেগুলার রাতে ঘুমোনোর আগে একবার গোসল করে।আজ ও তাই করলো।গোসল শেষ করে থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট পরে রুমে প্রবেশ করলো।তার দিকে খানিক সময় তাকিয়ে থেকে লজ্জা পেলাম।বাবা সত্যি অনেক হ্যান্ডসাম একজন ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন।আয়াস যে এত সুন্দর আর এতটা হ্যান্ডসাম আগে খেয়াল ই করিনি।আর্মি পারসন এমনিতেই ফিট থাকে।তার উপর আয়াস একটু বেশী ই কিউট।ভেবে শান্তি লাগছে কত্ত হ্যান্ডসাম স্বামি পেয়েছি।

পরের দিন রাতের ডিনার শেষ করে আরহী আর আমি সুয়ে আছি আরহীর জন্য ঠিক করা বেড রুমে।দুজনে গল্প করতে করতে আরহীকে দেখলাম হঠাত অন্য মনস্ক।অনেকদিন ধরে মনের মাঝে পুষে রাখা একটা কথা জিজ্ঞেস করলাম আরহীকে।

“আরহীকে বললাম, একটা সত্য কথা বলবি।”

“আরহী বললো,আমি কি তোকে মিথ্যা বলি মুগ্ধ।”

“তুই কি কারো সাথে রিলেশন এ জড়িয়েছিলি আরহী আমার অজান্তে।প্লিজ মিথ্যা বলবিনা।”

“হ্যাঁ মুগ্ধ কাউকে ভালবেসেছিলাম।ভীষণ ভালবেসেছিলাম।নিজের থেকেও যেনো বেশী ভালবেসেছিলাম।আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে সে ছিলো।আমার একমাত্র বিশ্বাসের মানুষ সে ছিলো।আমার জীবনের প্রথম অনুভূতি, প্রথম ভালবাসা।মনে হতো আমি কত লাকি মুগ্ধ।”

“তারপর কি হলো।”

“তারপর যা হলো ভাবলে আজ ও শরীর শিউরে ওঠে আমার।আমি আর বলতে চাইনা মুগ্ধ।”

“না বলনা প্লিজ।”

“আমার মুখের উপর এসে বললো,সে আমি না এখন অন্য কাউকে ভালবাসে।অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়।আমার জন্য কোনো ফিলিংস নেই তার।”

“কে সে।”

“থাক না মুগ্ধ। যায় তোর দেবর কে একটু চেতিয়ে আসি।”

আরহীকে কি বলে শান্তনা দিবো জানিনা।তবে আরহীর এই রিলেশন আর আয়াস এর মাঝে কোনো একটা কানেকশন আছে।আমি জড়িত কিছু ঘটনা আছে।বাট কি সেটা।আরহীর সেদিনের ফোন কল আর আজকের কথা অনেক কিছু ভাবাচ্ছে আমাকে।কি লুকাচ্ছে আরহী আর আয়াস।অভির মতো আয়াস কে ভালবেসে ও কি আমাকে ঠকতে হবে।না ন আয়াস আমাকে ঠকাবে না।আয়াসের চোখে আমার জন্য অনেক ভালবাসা দেখেছি।

চলবে???..
(খুব কি অগোছালো হয়েছে।মাঝে মাঝে হয়ে যায় অগোছালো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here