তুমিময় বসন্ত পর্ব -১৯+২০

#তুমিময়_বসন্ত
১৯.
#writer_Mousumi_Akter

আমার সামনে বরাবর শান্তশিষ্ট মেজাজে থাকা ছেলেটা হঠাত ই বদলে গেলো।আমার মুখের কথা বের হতে হতে তার মুখের রং বদলে গেলো।আমি ঠিক বুঝতেছি না সে কি করতে চাইছে।ঘাড়ের শিরা ভেষে উঠেছে তার।তার রেগে যাওয়া দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম।ভীত চোখে আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,

‘এত রাতে কোথায় যাবো আমরা।’

আয়াস দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘না গেলে আমার ঘুম হবেনা মুগ্ধতা।প্লিজ চলো আমার সাথে।’

‘যাবো বাট জায়গার নাম নেই।’

আমার মুখের কথা মুখে থাকতেই আয়াস আমায় পাজা কোলে তুলেই নিচে নামলো।আমি যেনো হঠাত কোনো হোচট খেলাম।অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলাম আমি।তার কোলে উঠে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আমি।তার চোখে মুখে ভীষণ রাগ।চোখ সামনে রেখে সোজা হাঁটছে।পড়ে যাবার ভয়ে গলা জড়িয়ে ধরে রাখলাম শক্তভাবে।মানুষ টা এই আমায় চুমু খাচ্ছে এই আমায় কোলে তুলছে সব কিছু হুট হাট করেই করছে।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার পরে আমাকে নামিয়ে দিয়ে অয়ন কে ফোন দিয়ে বললো দরজা লাগিয়ে দিতে।

আয়াস কে বললাম,

‘ কি হলো আপনার কি করছেন কি?এত রেগেই বা গেলেন কেনো?’

‘দেখো মুগ্ধতা আজ আমি বুঝতে পারছি মানুষের উপকার করতে নেই।ওই মহিলার উপকার যদি অয়ন না করতো তাহলে কি তোমাকে এত খারাপ কথা শোনাতে পার‍তো।উনার বাসায় আমি তোমাকে নিয়ে যাবো আর এটার কইফত চাইবো কেনো তোমাকে এত মারাত্মক একটা কথা বলেছে।’

‘আচ্ছা শুনুন না থাক না যা হবার হয়েছে।’

‘না থাকবে না।কেউ তোমাকে অপমান করবে কষ্ট দিবে আমি বেঁ*চে থাকতে তো কখনোই না।’

‘এইভাবে কারো বাসায় যাওয়া ঠিক হবেনা।’

‘মুগ্ধতা উনি তোমায় কষ্ট দিয়েছেন।তোমার মন খারাপ হয়েছে।তোমার মন খারাপ আমি সহ্য করতে পারবোনা।তোমার মনের উপর ডিপেন্ড করে আমার মনের ভালো থাকা।’

‘উনি উনার জামাই এর বাসায় গিয়েছেন।সেখানে গিয়ে উনাকে কিছু বলাটা কি ঠিক হবে।উনার মেয়ের জামাই আছেন।উনার মেয়েকে কথা শোনাবেন।তিল থেকে তাল হতে পারে বুঝতে পারছেন না।’

‘উনার কি হলো আই ডোন্ট কেয়ার মুগ্ধতা। তুমি কষ্ট পেয়েছো এটা আমি মানতে পারবোনা।’

‘এখন কোনো কষ্ট নেই আমার।’

‘তুমি মিথ্যা বলছো।’

‘সত্যি না,কোনো মিথ্যা বলছিনা।’

‘প্রুভ করতে পারবে?’

‘কি।’

‘মিথ্যা বলছো না।যদি প্রুভ করতে পারো তাহলে এখন উনার জামাই এর বাসায় যাবোনা ঠিক তবে আমি উনাকে কিছুই বলবো না এই কথা দিতে পারছিনা।’

‘হুম পারবো।’

‘না পারলে কিন্তু ওই মহিলার বাসায় যাবো।অপশন দুইটা হয় তোমার মন খারাপ নয় সেটা প্রুভ করো না হয় ওই মহিলার বাসায় চলো।৫ সেকেন্ডের মাঝে ডিসিশন নাও। ‘

‘পারবো বললাম তো।’

‘এক্ষুনি মানে এক্ষুনি আমাকে জড়িয়ে ধরবে।আমি যেনো ফিল করতে পারি তুমি আমার মাঝে মিশে গিয়েছো।জড়িয়ে ধরে কিস দিতে হবে পারবে?’

–আমি ডান গালে হাত দিয়ে মাথা কাত করে তার দিকে তাকালাম করুণ দৃষ্টিতে। আমাকে এইভাবে মাইনকার চিপায় ফাঁসায় দিলেন।তার প্রস্তাব শুনে আমি এখন মহাশূন্য অবস্থান করছি।দুনিয়াতে কি প্রুভ করার মতো আর কিছুই নেই।জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়েই প্রুভ করতে হবে।মুগ্ধতা জামাই একটা পেয়েছিস ঠু মাছ রোমান্টিক।যার শর্ত হিসাবেও থাকে রোমাঞ্চকর প্রস্তাব।

আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,

‘বুঝেছি তুমি পারবেনা।চলো উনাদের বাসায়।আজ সিরিয়াসলি কি করবো আমি জানিনা আর কি বলবো।গো ফার্স্ট কুইক।’

অন্যকে হেনস্হা করার থেকে নিজের স্বামির সাথে রোমাঞ্চ করাটায় বোধহয় বেটার।লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম,

‘এখানেই?’

‘না রাস্তা দিয়ে লোকজন যাচ্ছে এখানেই না।বাসার পেছনে বিশাল বড় দুইটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে।অনেক জায়গা জুড়ে ছায়া হয় সে গাছের।গাছের নিচে দেখলে মনে হয় পুষ্পসজ্জা।সেখানে সচরাচর কেউ যায় না।জায়গা টা ভীষণ নিরিবিলি। চলো পুষ্পবিছানায় সুয়ে দুজনে চাঁদ দেখবো ভীষণ ভালো লাগবে।’

‘মৌন ভাবে সম্মতি জানালাম।’

পাঁচ মিনিটের মাঝে আয়াসের সাথে সেই বিশাল বড় দুইটা গাছের নিচে দাঁড়ালাম।পূর্ণ পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো চিকচিক করছে।গাছের তলায় যেনো ফুলের বৃষ্টি। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।

আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ভালো লাগছে তোমার।’

মাটিতে পড়ে থাকা ফুলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললাম,

‘ভীষণ সুন্দর লাগছে।এখান থেকে আর কখনো যাবোনা।’

‘গাছ থেকে পড়া এই ফুল দেখে যদি তুমি এতটা মুগ্ধ হও তাহলে বোঝো আমি কতটা মুগ্ধ তোমাকে দেখে।আমার চোখে এই ফুলের থেকেও অনেক বেশী সুন্দর দেখতে তুমি।তোমার দিকেও আমি ঠিক এইভাবেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।তোমাকে দেখাটাও যেনো নেশা হয়ে গিয়েছে।যখন প্রথমবার তোমায় দেখেছিলাম বসন্ত উৎসবে তারপর আর আমাদের নিয়ম করে দেখা হয়নি দুজনে একসাথে হয়তো স্বপ্ন বুনিনি।তবে রোজ তোমায় দেখতাম আমার কল্পনায়।একটা কথা কি জানো যে যাকে ভালবাসে তাকে বাস্তবে না দেখলেও কল্পনাতে অজস্র বার দেখে।কল্পনার তুমিটার সাথে সারাক্ষণ কথা বলে।বাস্তবে মানুষটার সাথে অনেক কিছুই ভেবে রেখেও লজ্জায় বলা হয়ে ওঠে না কিন্তু কল্পনায় আসা মানুষ টার কাছে সম্পূর্ণ ভালবাসা প্রকাশ করা যায়। লজ্জা কাজ করে না মোটেও।এইযে তোমার সাথে কল্পনায় কতকিছু বলেছি কিন্তু তুমি আমার সামনে থেকেও বলতে পারিনি আমি।কিন্তু আমি বাস্তবেই বলতে চাই কল্পনায় বলা সেসব অনুভূতির কথা গুলো।’

ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।তার কথা শুনলে এখন আর আমার রাগ হয়না।তার কথাগুলো ম্যাজিকের মতো আকৃষ্ট করে তার দিকে।তার মুখ দিয়ে যায় বের হয় তাই মধুর লাগে শুনতে।আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়াস বললো,

‘শর্ত পূরণ করো।’

নিচে দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘লজ্জা লাগছে আমার।আমি পারবো না।’

‘শিখিয়ে দিবো আমি।’

‘না।’

আমি গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর তাকে দেখছি।মানুষ বলে ভালবাসার জন্য নাকি একটা মুহুর্ত যথেষ্ট।আজ সেটা সত্য বলে মনে হচ্ছে।গতকাল মনে হয়েছিলো অভি ছাড়া কাউকে মেনে নিতে পারবো না।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে অভির সাথে কেনো জড়িয়েছিলাম আমি।কেনো এই মানুষ টা আমার জীবনে আগেই আসেনি।একটা মুহুর্তের মাঝে মনে হচ্ছে আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি।আমি তার মায়ায় আটকে গিয়েছি।কি হয়েছে জানিনা আমার,অদ্ভুত এক টানে আয়াসের কাছে চলে গেলাম।তাকে জড়িয়ে ধরলাম।নিজের সব টা দিয়ে তাকে আপন করে নিলাম।তার বুকে মাথা রেখে হার্টবিট এর স্পন্দন শুনছি।সে আমাকে তার দুই হাতের বাঁধনে জড়িয়ে নিলো।ভালবাসার অনুভূতি আমার ভেতরে জেগে উঠলো। তাকে জড়িয়ে ধরে যেনো মানসিক শান্তি পেলাম।চোখ বন্ধ করে তার বুকে মাথা দিয়ে অন্যরকম কিছু অনুভব করছি।দুজন দুজনকে আলিঙ্গন এর পর মুহুর্তে আয়াস নিজেই তার ওষ্ট আমার ওষ্টের সাথে মেলালো।দু’মিনিট পরে ভীষণ লজ্জা পেয়ে তাকে ধাক্কা মারলাম।তার চোখে মুখে ভীষণ দুষ্টমি আমি লজ্জায় দুইহাতে মুখ ঢাকলাম।আয়াস আবার আমার কাছে এসে পুনঃরায় ওষ্টের সাথে ওষ্ট মেলালো।আকাশের চাঁদ আর দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছ সাক্ষী হলো দুজন মানব-মানবীর কাছে আসার।

আয়াসের হাতের উপর মাথা রেখে ফুলে বিছানো মাটিতে দুজন সুয়ে রইলাম।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি দুজন।সময় টা ভীষণ সুন্দর। কিছুটা লজ্জা,কিছুটা জড়তা, কিছুটা ভালো লাগা।

আয়াস আকাশের দিকে তাকিয়েই আমাকে ডাকলো,

‘মুগ্ধতা।’

‘হুম।’

‘তুমি এত সুন্দর কেনো?’

‘কই সুন্দর। ‘

‘এত সুন্দর মেয়ে আমি আগে দেখিনি।’

‘এটা মিথ্যা কথা।আমার থেকে অনেক সুন্দর মেয়ে আছে।আমি অতটাও সুন্দরী না।’

‘তুমি কত সুন্দর আইডিয়া নেই তোমার।একজন স্ট্রং আর্মি অফিসার কে দূর্বল করে ফেলেছো।’

‘আমি কি দূর্বল হতে বলেছি।তুমি বলোনি তবুও হয়েছি।কিছু জিনিস কি বলা লাগে বালিকা।এই যে ধরো তোমাকে কেউ কিছু বললে আমার ভেতরে আগুন হয়ে যায়।’

‘আজ তো দেখলাম।’

‘ট্রাস্ট মি!আমি তোমায় জোর করে বিয়ে করলেও ভালবেসে বিয়ে করেছি।তোমায় ভালো রাখতে।’

আমি এবার হাসলাম।সে আমার হাসি দেখে বললো,

‘এইভাবে হেসোনা প্লিজ তাহলে অনর্থ হয়ে যাবে।’

‘কি অনর্থ।’

‘বুঝোনি না বুঝলে বুঝায়।’

‘বুঝেছি আপনি এত অসভ্য কেনো?’

‘মাঝে মাঝে অসভ্য হলে ক্ষতি কি।’

‘মুগ্ধতা।’

‘হুম।’

‘আমায় চুমু দেওয়ার কথা ছিলো দাও নি কিন্তু।আমরা কি আরেকবার চুমু খেতে পারি।’

‘না,মোটেও না।আমি চুমু দেই নি মানে।
কিছুক্ষণ আগে কি হলো।’

‘সে তো আমি করেছিলাম।এবার তোমার পালা।’

‘আপনি বাসায় চলুন তো!’

‘বাসায় গেলে কি পাবো।’

‘আজ আর না।’

‘তুমি কি ওষুধের মতো চুমু দিতে চাও নাকি।আজ আর না।’

‘এটাও তো ওষুধ অফিসার।’

আর কিছুক্ষণ সেখানে থেকে বাসায় ফিরে এলাম।

পরের দিন আমার রেজাল্ট দিলো।রেজাল্ট খুব একটা ভালো না।এ গ্রেড হয়েছে।আয়াস তাতেই ভীষণ খুশি। সবাই কে মিষ্টি খাওয়ালো।যেনো তার বউ ভয়ানক রেজাল্ট করেছে।আরহী আসতে চেয়েও আসেনি।কেটে গেলো পনেরো দিন।ধীরে ধীরে একটু একটু করে আয়াস আর আমি কাছাকাছি আসছি।অয়ন আর আমার রিলেশন টা সব থেকে সুন্দর। দেবর হলেও ভাই এর মতো।এতদিন পরে আগামিকাল আরহী আসছে।কাল আয়াস এর অফিস আছে।অয়ন ই তাকে পিক করতে যাবে।
#তুমিময়_বসন্ত
২০.
#writer_Mousumi_Akter

–ভোর পাঁচটায় এলার্ম বাজতেই আয়াস উঠে পড়লো।এলার্ম এর শব্দে আমার ও ঘুম ভেঙে গেলো।রেগুলার ই ঘুম থেকে উঠে দেখি আমাদের মাঝের কোলবালিস নেই।হয় আমি তার সাথে মিশে আছি না হয় সে আমাকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে আছে।আগে অস্বস্তি হলেও এখন যেনো ধীরে ধীরে তার সব কিছুই আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।আজ ও ঘুম থেকে উঠে দেখি আয়াসের হাতের উপর মাথা রেখে সুয়ে আছি। আয়াস রেগুলার ই ভোর পাঁচটায় ওঠে, ওর সাথে আমিও উঠি।আর দুজনে এক সাথেই ফজরের নামাজ পড়ি।এটাও একটা রোজকার রুটিনে পরিণত হয়েছে আমাদের।আজ ও তাই হলো আমিও উঠে পড়লাম।ওজু করে দুজনেই নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ শেষ করেই আয়াস গ্যাসে পানি দিয়ে বললো,

‘মুগ্ধতা আজ তোমায় আয়াস স্পেশাল কফি খাওয়াবো।যে কফি খেয়ে ঘুম চলে যাবে আর মন দিয়ে বই পড়তে পারবে।’

‘তার দিকে তাকিয়ে বললাম,আয়াস স্পেশাল কফি টা কি।’

‘ভয় পেওনা কফিতে চিনি মেশাবো চুমু নয়।’

‘এই আপনি এত ফাজিল কেনো বলুন তো।কফিতে যে চুমু মেশানো যায়না সেটা আমিও ভালো করে জানি।’

‘আমার রোমান্টিকতা কে ফাজিল বলছো।শোনো আমি কোনো ফাজিল টাজিল না।আমি হলাম প্রচুর রোমান্টিক হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।তুমি কিন্তু ভীষণ লাকি আমার মতো রোমান্টিক একটা জামাই পেয়েছো।আমার প্রেম কখনোই ফুরাবে না। ‘

‘আপনি রোমান্স নিয়ে গবেষনা করুণ আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমোবো।’

‘ঘুমোবে যখন আমাকেও সাথে নাও।এক সাথেই ঘুমোয়।’

‘বিছানা তো আছেই যান না গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।’

‘তুমি আগে যাও বিছানায় একটা রোমাঞ্চকর সকাল হয়ে যাক।শোনো আমি কিন্তু হাগ টাগ করার আগে প্রচুর চুমু খাবো।তোমাকে চুমু খেতে প্রচুর ভাল লাগে আমার।’

‘আয়াসের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললাম,অয়ন আছে কিন্তু শুনে ফেললে কি ভাববে বলুন তো।একেবারেই যা তা মার্কা লোক কিন্তু আপনি।’

‘শুনলেও খেয়াল করবে না।আমার ভাই আমার মতোই ট্যালেন্ট বুঝতে পারবে ব্যাপার টা।’

আয়াসের কথা শুনে সোফায় কাত হয়ে আবার চোখ বুজলাম আমি।ভয়ানক ঘুম চোখে জড় সড় হয়ে এসছে।সকালে ভোরের দিকে আমার সব থেকে বেশী ঘুম আসে।কিন্তু আয়াস বলে রেগুলার নাকি সূর্যদ্বয় দেখা ভালো।সকালের মৃদু হাওয়া গায়ে লাগানো ভালো।সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখা ভালো।এইসব ভালোর মাঝে আমার কাছে ঘুমকেই বেশী ভালো মনে হয়।সোফায় কাত হয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।আয়াস এসে কফিতে চুমুক দিয়ে আমায় ডেকে বললো,

‘রোমাঞ্চ না হয় আপাতত হরতালে থাক কিন্তু কয়েকদিন পরে এডমিশন তোমার এখন অন্তত ফাঁকি দিও না লেখাপড়ায়।আমি তোমাকে কিছুতেই ঘুমোতে দিবোনা।একটু পরেই অয়নের সাথে গল্প জুড়ে দিবা, তারপর টিভি দেখবা তারপর শ্বাশুড়ির সাথে ফোনে গল্প করবা তারপর কুসুম ভাবির কাছে গিয়ে আড্ডা দিবা ব্যাস হয়ে গেলো।’

আমি আয়াসের দিকে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললাম,

‘প্রমিজ কাল থেকে ভোরেই পড়া শুরু করবো এখন আমাকে ঘুমোতেই হবে।কোনো আয়াস স্পেশাল কফি আমি খাবোনা।’

‘তারমানে তুমি ঘুমোবেই তাইতো মুগ্ধতা।’

‘হু,গুড নাইট এগেইন।’

‘ওকে ফাইন তুমি ঘুমোও অনেকদিন হলো মর্ণিং ওয়াক এ যায় না।সারিকা ও ফোন দিচ্ছে। যায় দুজনে মর্নিং ওয়ার্ক করতে পারবো গল্প ও করতে পারবো।বলেই আয়াস আলমারি থেকে কালো ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি বের করে পরে বেরিয়ে গেলো।’

সারিকার সাথে হাঁটাহাঁটি করতে যাবে শুনেই আমার ঘুম উধাও হয়ে গেলো।আমি এক লাফে সোফা থেকে নেমে দৌড়ে নিচে গেলাম।

আয়াস আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,

‘মুগ্ধতা তুমি?’

আমি তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,

‘আমিও যাবো।’

‘কোথায় যাবা ডারলিং।’

‘মর্ণিং ওয়াক এ।’

‘সিরিয়াসলি।’

‘হুম।’

‘ঘুম কোথায় গেলো?’

‘ঘুম টুম নেই চলুন।’

‘যাও বেবি ঘুমোও তুমি।তোমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।’

‘না পাচ্ছেনা।’

‘তাই বেবি ঘুম নেই।’

‘না নেই।’

‘তোমার হঠাত ঘুম উধাও কাহিনী কি?’

‘কাহিনী ফাহিনী কিছুই না।আপনার বান্ধবী সারিকা কোথায়?’

‘আসছে?’

এরই মাঝে দেখলাম সারিকা আসছে।সারিকা কে দেখে বললাম,

‘এই নির্লজ্জ মেয়ের সাথে আপনি ইচ্ছা করেই হাঁটাহাটি করতে বেরোন তাইনা?’

‘নির্লজ্জ? ‘আয়াস অশ্চর্যজনক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

‘তো তাই ছাড়া কি।দেখুন গায়ে ওড়না নেই।গেঞ্জি আর প্যান্ট পরে কেউ পর পুরুষদের সাথে বের হয়।’

‘কেনো খারাপ কি ভীষণ হট লাগছে।আমার কাছে তো হট মেয়ে ওয়াও লাগে।’

‘আয়াসের দিকে ভয়ানক রাগি চোখ তাকিয়ে বললাম কি বললেন।’

‘না মানে ওই আরকি।’

‘আপনি বাসায় চলুন,কোনো মর্নিং ওয়াক করা লাগবে না।আয়াসের গেঞ্জি টেনে ধরে টানতে টানতে বাসার ভেতরে নিয়ে এলাম।আয়াস নিজে তো ভীষণ অবাক সাথে সারিকা ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।বাসার ভেতরে এনে বললাম,এই সারিকা যদি এসে দরজা নক করে আমি কিন্তু দরজা খুলবো না সোজা কথা।’

আয়াস কপাল টানটান করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আহ!জেলাসি চারদিকে জেলাসি প্রচুর জেলাসি।’

‘কার জেলাসি।’

‘বললাম জিলাপি,খাবে তুমি।’

‘জিলেপি খাওয়াচ্ছি আপনাকে।’

এরই মাঝে অয়ন ঘুম থেকে উঠে এলো।অয়ন কে দেখে থেমে গেলাম দুজন।দুপুরে অয়ন বাসায় খেয়ে আরহীকে পিক করতে চলে গেলো।আরহীর নাম্বার দিয়ে দিয়েছি অয়নের কাছে।অয়ন বেরিয়ে গেলে মনে মনে ভাবলাম আয়াসের তাহলে গেঞ্জি পরা মেয়ে ভালো লাগে।প্লাজুর উপর আয়াসের একটা গেঞ্জি পরলাম।গেঞ্জিটা বেশ বড়।নিজের ও ভীষণ লজ্জা লাগছে তবে লজ্জা করলে হবেনা মুগ্ধতা।নিজের জামাই কন্ট্রোল করতে এসব লজ্জা ফজ্জা ধুয়ে মুছে দিতে হবে।আয়াস অফিসে যাবে মাত্রই বেরোবে।এরই মাঝে আমাকে এমন রুপে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।যেনো পৃথিবীর বুকে প্রথম কোনো আশ্চর্যজনক জিনিস দেখলো।আয়াস কে বললাম এটা পরেই নিচে যাচ্ছি আমি। আমার একটু কাজ আছে।

আয়াস এবার চটজলদী বলে উঠলো,

‘এই না না মুগ্ধতা প্লিজ না।’

‘না আমি যাবোই।মানুষ আমাকেও হট বলবে না।’

“ওহ নো!মানুষ আমার বউ কে এইভাবে দেখুক আমি বেঁচে থাকতে না।’

‘আপনি অন্য মেয়েদের হট বলেন কেনো?সে বেলায় কিচ্ছু না তাইনা।আপনার তো গেঞ্জি পরা মেয়ে পছন্দ। ”

‘তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছিলাম সত্যি বলছি।এই কান ধরলাম আর বলবো না জীবনেও না।সারিকা কি পরে থাকে আমি সত্যি খেয়াল দেই না।আমার মন পড়ে থাকে তোমার কাছে মুগ্ধপরী।আর আমার মোটেও গেঞ্জি পরা মেয়ে পছন্দ নয়।আমার তো সারাক্ষণ অগোছালো শাড়ি পরে থাকা মুগ্ধতাকে পছন্দ বুঝোনা তুমি।’

আমি আয়াসের কথায় মৌন রইলাম।এবার আয়াস বললো,

‘বাই দ্যা ওয়ে এত জেলাস কেনো তুমি।আমায় তো আর ভালো টালো বাসোনা তাইনা?’

মনে মনে বললাম,সব যেনো বলা লাগে।সব বোঝে আর এটুক বোঝে না। অসহ্য মানুষ একটা।আমি কেনো বলতে যাবো ভালবাসি।নিজের দাম আমি কমাবো না।আয়াস কে বললাম অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যান আপনি।

বিকালে সব রান্না শেষ করে অপেক্ষা করছি আরহীর জন্য।কতদিন দেখিনা আরহীকে।কিন্তু এত লেট হচ্ছে কেনো?আরো দু’ঘন্টা আগে আসার কথা ছিলো।বারবার বারান্দায় যাচ্ছি আর রুমে আসছি।এরই মাঝে দেখি অয়ন আর আরহী গেট দিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো।আরহী আমাকে দেখেই এসে জোরে জড়িয়ে ধরলো।অয়ন বাঁকা চোখে তাকালো আরহীর দিকে তারপর অয়ন তার হাতের ব্যাগ টা জোরে ফেলে বললো,

“মেয়ে মানুষ এত ফাজিল হয় ভাবি আগে জানতাম না।শুধু একটা লেজ ই নেই তোমার বোনের।লেজ থাকলে আজ ষ্টেশনে সবাই বা* দর দেখতে পেতো’

‘আমি বিস্মিত হয়ে বললাম কাহিনী কী অয়ন?’

‘ভাবি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো।গরমে মুখের কি অবস্থা। সব তোমার বোনের জন্য।কি মহিলা যে তোমার বোন আমার আড়াই ঘুল্লি দিয়ে ছেড়েছে।’

“অয়নের শার্ট ঘামে ভিজে গিয়েছে।মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।আমি অয়ন কে বললাম দ্রুত যাও গোসল করে ফ্যানের নিচে বসো।তোমার ভাইয়া এত কিপটা কেনো এত এসি তো কিনতে পারে।’

‘ভাবি তুমি বলতে পারোনা।’

আরহীর দিকে তাকিয়ে দেখি হেসে যচ্ছে।সিওর আমার সাদাসিধা দেবরের সাথে কিছু না কিছু করেছে।

চলবে..?

(সবাই রেসপন্স করবেন।)
চলবে?…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here