তুমিময় বসন্ত পর্ব -১৭+১৮

#তুমিময়_বসন্ত
১৭.
#writer_Mousumi_Akter

–আমি অয়নের দিকে একবার তাকাচ্ছি আরেকবার বোরকা পরা মহিলার দিকে তাকাচ্ছি কে হতে পারে।অয়ন আবার কাউকে পালিয়ে টালিয়ে নিয়ে আসলো নাতো।মাত্র ই বলতে যাবো কিছু একটা তখন ই মহিলাটি বোরকার নেকাপ তুললেন।সাথে সাথে টাসকি খেলাম আমি।বয়স অনুমান ৫০ এর বেশী হবে।
আয়ন আমাকে বললো,

‘ভাবি উনি আমাদের দাদী হয় সম্পর্কে। উনার মেয়ের বাসা যশোরেই একা একা আসতে পারেনা।তাই আমি সাথে করে নিয়ে এসছি।এখান থেকে উনার মেয়ে নিয়ে যাবে।’

মহিলাটি বেশ রসিক প্রকৃতির আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আয়াস এর সাথে প্রেম করার চান্স পেলাম না তাই এবার ছোট টারে ধরছি।আমরা পালায় এসছি দুজনে।মানিয়েছে না ভালো।’

মহিলার দুই ঠোঁট পানের রঙে লাল টুকটুকে হয়ে আছে।আমি হেসে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে ভেতরে নিয়ে এলাম।মহিলাটি ভেতরে এসে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।উনার দৃষ্টি সারাক্ষণ আমার দিকে।কেমন যেনো অদ্ভুত কোনো কিছু দেখছেন।বেশ কয়েকবার উনার চোখে চোখ পড়েছে আমার।কিন্তু উনি ওইভাবে কি দেখছেন আমার দিকে তাকিয়ে।ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে আমার।এ মহিলার সমস্যা কী বুঝলাম না। অয়ন ওয়াশ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে এসে ডায়নিং রুমে বসলো আর আমার কাছে তোয়ালে চাইলো।আমি অয়ন কে তোয়ালে দিয়ে নাস্তা আনতে গেলাম।আমি নাস্তা নিয়ে আসতেই আয়াস বাজার থেকে ফিরে এলো।আয়াস এসেই দরজার বাইরে থাকে ডাকছে মুগ্ধতা দ্রুত এসো সব চেক করে দেখো ঠিক না থাকলে আমি এই হাতেই আবার যাবো।আমি আয়াসের ডাকে দ্রুত দরজার কাছে গিয়ে আয়াসের হাত থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে বললাম,

‘সব ঠিক না থাকলেও আর যেতে হবেনা আপনাকে।গরমে কি অবস্থা আপনার ঘেমে দেখেছেন।দ্রুত ভেতরে এসে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিন।’

আয়াস প্রচন্ড গরমেও যেনো শীতলতা অনুভব করলো।আমি কি অন্যরকম কিছু বলেছি।সে অন্যরকম চাহনি তে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি আর একরাশ শুভ্রতা।আমি আবার চোখের ইশারা করলাম ভেতরে আসতে।আয়াস আসতেই মহিলাটি বললো,

‘তোমার বউ কিন্তু ভীষণ সুন্দর হয়েছে। ‘

‘আয়াস হেসে বললো তাইনা ডারলিং।দেখতে হবে বউটা কার।’

‘এইজন্য তুমি আমারে চান্স দিলে না।’

‘তুমি থেকে যাও।নতুন করে আর কি চান্স দিবো।এইভাবে দাদাকে পটাইতে তাইনা বুড়ি।’

‘উনি কয়েক বছর ঘুরে ঘুরে আমাকে পটাইছিলো।’

তাদের আড্ডার মাঝে আমি বিভিন্ন প্রকার ফল,মিষ্টি,নুডুলস, জুস,এনে দিয়ে কিচেনে প্রবেশ করলাম।

এরই মাঝে অয়ন কিচেনে গিয়ে বললো,

‘ভাবি তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা গিফট আছে।বড়লোক হলে বেশী কিছু দিবো।’

‘আমি হেসে বললাম, কি গিফট এনেছো দাও। ‘

‘অয়ন আমার হাতে একটা ফোন দিয়ে বললো ভাবি আমার ইচ্ছা ছিলো একটা গোল্ডের কিছু দিবো কিন্তু ভাইয়া বললো তোর ভাবির অনেক গহনা আছে পরতে দেখিনা তবে তোর ভাবি গহনার থেকে ফোন পেলে বেশী খুশী হবে।আমার টিউশনির টাকা জমিয়ে জমিয়ে কেনা জাস্ট ফর ইউ।’

আমি ফোনটা হাতে নিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছি বেশ অবাক হয়ে।
তাদের দুই ভাই এর মুখে ভীষণ সুন্দর হাসি।তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।দুই ভাই ই হাসছে।মানুষের মন এত ভালো হয় কিভাবে।এতটুক একটা ছেলে তার জমানো টাকা দিয়ে তো আড্ডা ও দিতে পারতো।অনেক কাজে খরচ করতে পারতো।তা না করে ভাই এর বউ এর জন্য ফোন কিনে এনেছে।আসলে আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা।তবে আয়াসের সম্মতিতে ফোন দিয়েছে এ জন্য আমি বেশী খুশী হয়েছি।কারণ আয়াস আর রাগারাগি করবে না তাহলে।আয়াসের রাগারাগির পরোয়া যেনো আমি একটু বেশী করছি।সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার প্রতি অজানা এক অনুভূতি বেড়েই চলেছে।অয়ন বললো ভাইয়া ভাবির পাশে দাঁড়াও প্লিজ ছবি তুলি দুজনের। আয়াস আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।অয়ন বললো এভাবে না ভাবির ঘাড়ে হাত রাখো।আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,হাত রাখবো।আয়াসের এই প্রশ্নে মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো আমার।অনুমতি নেওয়ার কি প্রয়োজন।এখন যদি বলি হ্যাঁ রাখুন তাহলে তো ভাববে আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।কেনো জিজ্ঞেস না করেই হাত রাখা যাচ্ছেনা।আয়াস আবার ও ভ্রু নাচিয়ে বললো,রাখবো।আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম না।অয়ন বললো আমার সামনে ভাবি লজ্জা পাচ্ছে।ছবি এডিট করতাম দুজনের।এবার আয়াস অনুমতি না নিয়েই আমার কাঁধে হাত রেখে বেশ ক্লোজলি দাঁড়ালো।অয়ন কতগুলো ছবি তুলে নিলো।আমার হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো।অয়ন বললো,রিসিভ করো আম্মু ফোন দিয়েছে।আমি ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাস থেকে শ্বাশুড়ির দীর্ঘনিঃশ্বাস।ভীষণ কাঁদছেন শ্বাশুড়ি আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে মা।আমার শ্বাশুড়ি কিছুই বললো না।শুধু বললো,তুমি সাবধানে থেকো মুগ্ধতা মা।শ্বাশুড়ির বিহেভিয়ার মাঝে মাঝেই অবাক লাগে।অজানা কারনে আমাকে একটু বেশী ভালবাসে।মাঝে মাঝে আমার খুব সন্দেহ হয়।এত ভালবাসার কারণ কী?

ফোন কেটে দিয়ে আবার রান্নায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।আয়াস আমার পাশে দাঁড়িয়েই হেল্প করছে।

‘আয়াস কে বললাম,আপনার অনুমতি ছাড়া দুজনকে ইনভাইট দিয়েছি আপনি কি রাগ করবেন সেজন্য?’

‘কোন দুজন।’

‘কুসুম ভাবি আর সারফারাজ ভাইয়াকে।’

‘আমি নিজেই তো দাওয়াত দিয়ে এলাম সারফারাজ ভাই কে।তোমার সংসার তোমার যাকে ইচ্ছা তাকে রান্না করে খাওয়াবে আমি রাগ করার কে। ‘

‘যদি রাগ করতেন তাই শুনলাম।’

‘যদি রাগ করতাম তাহলে কি করতে?’

‘এমন ভুল আর করতাম না।’

‘যাক তুমি তাহলে আর অবাধ্য হবেনা আমার নিশ্চিন্ত হলাম।’

এরই মাঝে আয়াস এর ফোন বেজে উঠলো।আমি উঁকি মেরে দেখি সারিকা নামে সেভ করা।আয়াস ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।পাঁচ মিনিট পর ফিরে এলে বললাম,

‘আড়ালে গিয়ে কি বললেন।’

‘অফিসিয়াল কথা।’

‘অফিসিয়াল কথা কি শুধু সারিকা ই বলে আর কেউ নেই।’

‘হুম আছে তো বাহারুল ভাই,নাহিদ ভাই অনেকেই আছে।’

‘তো অফিসিয়াল কথা কি ছিলো হ্যালো জান কি করছো?’

‘আমাকে বলছো?’

‘তো’কাকে?অন্য কাউকে বলবো।’

‘ওহ হ্যালো!কলিগ আমার।জান টান বলবো ক্যানো?’

‘না বললে আড়ালে গেলেন কি জন্য।’

‘সন্দেহ করছো?’

‘হুম করছি।’

‘কেনো?ভালোবাসো আমায়?’

‘না বাসিনা।’

‘মিথ্যা বলছো কেনো?’

‘সত্যি কে জোর করে মিথ্যা বানালে আমার কি।’

‘তাহলে সন্দেহের কি আছে।’

‘সারিকার টপিক্স ঘুরিয়ে অন্য জায়গা চলে যাচ্ছেন কিন্তু।’

‘সত্যি অফিসের কাজ ছিলো,আর হ্যাঁ রাতে ডিনারে দাওয়াত দিয়েছি।’

‘দুনিয়াতে এত মানুষ রেখে একটা মহিলাকে দাওয়াত দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো।’

‘কলিগ তো।’

‘পুরুষ ছিলো না।একজন মহিলাকেই দাওয়াত দিতে হলো।’

‘আচ্ছা সারিকার চোখ কেমন?’

‘ভালো।’

‘কেমন ভালো।’

‘তাতো জানিনা তবে ভালো।’

‘সারিকার চোখ কি অনেক ভালো দেখতে।না মানে আপনার কাছে অনেক ভালো দেখা যায়।’

‘হঠাত সারিকার চোখ নিয়ে পড়লে কেনো?’

‘না মানে আগের দিন বললেন তোমার চোখের মনি আরেক টু কালো হলে ভালো হতো।তাই জিজ্ঞেস করলাম।’

‘আরে ওইটা তো এমনি বলেছিলাম।তুমি দেখছি সব কিছুই ফলো করেছো।’

‘না এমনি বললাম আরকি।’

রাতে ডিনারে কুসুম ভাবি আর সারফারাজ ভাইয়া ইয়া বড় একটা গিফট বক্স নিয়ে হাজির হয়েছে।সারিকা ও এসেছে।ডায়নিং এ সবাইকে খাবার দিচ্ছি।সারফারাজ ভাইয়া দেখতে কোনো নায়কের থেকে কম নয়।কিন্তু তবুও নিজের শ্যামবর্নের ওয়াইফ কে কত ভালবাসেন।মাঝে মাঝেই ভাবির কপালের ঘাম মুছে দিচ্ছেন।দুজনে পাশাপাশি বসেছেন উনারা নাকি পাশাপাশি ছাড়া বসেন না।আমার চোখ সারিকার দিকে।সারিকা সুযোগ পেলেই আয়াসের সাথে গল্প করছে।কোনো একটা কারণ পেলেই সে সবাই কে ইগনোর করে আয়াসের সাথে কথা বলছে।এসব দেখলে আমার রাগ হচ্ছে।খাওয়া শেষে সারিকা আমার হাতে একটা গিফট বক্স দিয়ে বললো,খুব ভালো রান্না করো তুমি আমি৷ রেগুলার এসে খেয়ে যাবো।অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিহি হেসে উত্তর দিলাম ওকে আসবেন।অনেক গল্প আর আড্ডা শেষে সবাই বিদায় হলো।তারপর ই অয়নের সাথে থাকা মহিলাটির মেয়ে চলে এলো।মহিলা টি সম্ভবত এখন বিদায় নিবে।উনার মেয়ে এসে ফিসফিস করে বললেন আয়াস কোথায় বিয়ে করেছে।মহিলাটি বললো,

‘আরে আয়াস বিয়ে করছে তুই চিনবি ওর মা বাবার বিয়ের আগেই ওই মেয়ের জন্ম হইছিলো মনে নেই তোর সে কাহিনী।ওর বাবাকে আমি চিনি।আমার বাবার বাড়ির পাশের বাড়ি।মেয়েসহ বিয়ে করে এনেছিলো।তাই নিয়ে এলাকায় অনেক গুজব ছড়িয়েছিলো।কেউ বলেছিলো অবৈধ মেয়ে।’

তাদের এসব কথা শুনে আমার মাথা যেনো ঘুরতে শুরু করলো।এসব কি আজেবাজে কথা বলছে তারা।আমার মা বাবার বিয়ের আগে আমার জন্ম।তারা বিদায় নেওয়ার পরে আমার ভেতর থেকে অস্হিরতা কমলোনা।মানুষ এত বাজে কথা কিভাবে বলতে পারে।রাগে শরীর রি রি করে জ্বলে যাচ্ছে।এই অসভ্য মহিলা এমন জঘন্য কথা কিভাবে বলতে পারলো।অহনা এক অজানা কৌতুহল মনের ভেতর দিয়ে আমার ঘুন কেড়ে নিয়েছে আর এই আরেক মহিলা আরেক অশান্তি দিয়ে গেলো।আসলে কি হচ্ছে চারপাশে।
#তুমিময়_বসন্ত
১৮.
#writer_Mousumi_Akter

আমি আমার মা-বাবার বিয়ের আগে হয়েছি কথাটা আমি সহজ ভাবে নিতে পারলাম না।চরম অপমানে লাগলো আমার কথাটা।এটা কোনো ছোট মোট কথা নয় যে আমি কেয়ার করবো না।আমার জন্ম নিয়ে কথা উঠেছে।দুই ফ্ল্যাটের মাঝের গলি গিয়ে একভাবে পায়চারী করে যাচ্ছি আমি।হাতের মুঠোয় ওড়না নিয়ে কচলাতে কচলাতে এক মুড়ো থেকে আরেক মুড়ো পর্যন্ত হাঁটছি আমি।অস্হির লাগছে ভীষন যে কেনো ওই মহিলা কে ডেকে তখন জিজ্ঞেস করলাম না।উনাকে আমার দুই চার টা কথা শুনিয়ে দেওয়ায় উচিত ছিলো।এর ই মাঝে আরহীর কথা মনে পড়লো।অয়নের এনে দেওয়া ফোন থেকে আরহীকে কল করলাম।আরহী ফোন রিসিভ করতেই আমার কন্ঠ শুনে স্পষ্ট ডাকলো,

‘মুগ্ধতা।’

আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,

‘যাক তাহলে চেনা গেলো।’

‘এইভাবে বলছিস কেনো মুগ্ধ। ‘

‘অভিনেত্রী দের সাথে অভিনয় এর সুরেই বলতে হয়।তাহলে তাদের বুঝতে ভীষণ সুবিধা হয়।’

‘এখনো রেগে আছিস।’

‘কেনো রাগ মেটার মতো কিছু হয়েছে।’

‘মুগ্ধ প্লিজ রাগ করিস না।
আয়াসের সাথে কেমন চলছে।’

‘আয়াসের ব্যাপারে পরে কথা বলছি।আগে তোর আর আমার ব্যাপারের কথা শেষ হওয়া প্রয়োজন।আচ্ছা আরহী কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে বল আমায় প্লিজ।কেনো মানে কেনো এত প্লান প্রগ্রাম করে আয়াসের সাথে আমার বিয়ে টা দিলি প্লিজ বল আমায় আরহী।নয়তো চিন্তায় চিন্তায় পা★/ গ*/ ল হয়ে যাবো আমি।আমার ঘুম হয়না রাতে চিন্তায়। কি কারণ আরহী?কিসের রিভেঞ্জ।’

‘কেনো এত কিছু জানতে চাস মুগ্ধ।তোর কিসের এত রাগ আমার উপর।অভির জন্য?অভিকে নিজের জীবনে পাস নি বলে।’

‘আগে হয়তো এটাই কারণ ছিলো।কিন্তু এখন এটা কোনো কারণ নয়।এখন জাস্ট কিওরিসিটি থেকে জানতে চাইছি।’

‘আগে কারণ ছিলো এখন কি হলো মুগ্ধ।’

‘তুই জানিস না আরহী অভি কত বড় প্রতারক। অভি বিবাহিত হয়েও আমার সাথে অভিনয় করেছে।ছিঃভাবলেও ঘৃনা করে আমার।এমন একটা ছেলেকে ভালবাসতাম আমি।আমি ভীষণ ঘৃনা করি অভিকে।’

‘আয়াসের থেকেও বেশী ঘৃনা করিস।’

‘আয়াস এর প্রতি যে ঘৃনা ছিলো সেটা অভির উপর চলে গিয়েছে আর অভির…’

‘কি মুগ্ধ আর অভির প্রতি যে ভালবাসা ছিলো সেটা আয়াসের প্রতি চলে গিয়েছে তাইনা?’

‘না না তেমন ব্যাপার না।’

‘তাহলে ব্যাপার টা।’

‘ওই রকম ফাজিল লোক আমি জীবনে দেখিনি আরহী।’

‘কেনো?খুব ফাইজলামি করে বুঝি আমার জিজাজি।’

‘আরে ধ্যাত। ‘

‘না না তোকে বলতেই হবে।চুমু টুমু দিয়েছে তো।দিনে কয়টা দেয় আর রাতে কয়টা দেয়।’

‘আরহী আমি ফোন রাখছি।কিসব অসভ্য কথা বলছিস তুই।উনি আমায় চুমু দিবেন কেনো?’

‘উনি ছাড়া আর কে দিবেন শুনি।যায় বলিস আয়াস কিন্তু অভির থেকে অনেক ভালো।’

‘আরহী আমি রিকুয়েষ্ট করছি আয়াসের সাথে অভির তুলনা করবি না কখনো।অভির সে যোগ্যতা নেই যে আয়াসের সাথে তুলনায় আসবে।আমার সাময়িক রাগ ছিলো এটা ঠিক আমি ভুল বুঝেছিলাম।তবে আয়াসের সাথে মাত্র কদিন থেকেই আমি বুঝেছি অভির মাঝে সেসব কোনো গুন ই ছিলো না যা আয়াসের মাঝে আছে।আয়াস মুখে একটু ফাজিল আছে আমাকে রাগানোর জন্য সেটা করে তবে আসলে ও অমন নয়।আয়াসের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই।’

‘আর আমার প্রতি আছে।’

‘হুম আছে কি লুকিয়েছিস আমাকে বল।’

আরহী এবার ভীষণ জোরে কেঁদে দিয়ে বললো,

‘আই লাভ ইউ মুগ্ধতা।আমি আর আয়াস বা পরিবার যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি।বসন্ত উৎসব এ আয়াস তোকে দেখেছিলো সেখান থেকে তোকে ভাল লেগেছিলো।আয়াসের এক পলকেই ভালবাসা হয়ে গেছিলো।এইদিকে তুই অভির সাথে পালিয়ে যাবি আমি কিভাবে মেনে নিতাম অভির মতো একটা খারাপ ছেলের সাথে তোর বিয়ে হোক।পরিবারের কেউ ই তোর ক্ষতি হোক সেটা মেনে নিতে পারেনি।তাই তো সবাই প্লান করেই তোর বিয়েটা আয়াসের সাথেই দিলাম।’

আরহীর কাঁন্না দেখে আমিও কেঁদে দিয়ে বললাম,

‘কিসের রিভেঞ্জ এর কথা বলছিলি তুই বল আমাকে।আমি ফোনে কথা বলতে শুনেছিলাম।’

‘ওইযে অভি মিথ্যা বলতো তোকে।ওইটায় ছিলো রিভেঞ্জ।’

আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে অন্য কারণ আছে।আরহী কিছু লুকাচ্ছে।আমি আর প্রেসার দিলাম না।যেহেতু বলতে চাইছেনা প্রেসার না দেওয়াটায় ভালো হবে।

‘কোনো কারণ নেই মুগ্ধ।এবার বল মাফ করেছিস তো আমায়।’

‘মাফ করবো কিন্তু তোকে কাল ই যশোর আসতে হবে।আমার একা একা বোরিং লাগে।বল আসবি।’

‘আচ্ছা আসবো বাট চিনিনা।’

‘আয়াস তোকে এগিয়ে নিয়ে আসবে আয়াস না গেলেও অয়ন যাবে।আমার হ্যান্ডসাম দেবর আছে দেখলে ক্রাশ খেয়ে ফেলবি কিন্তু।’

‘তাহলে তোর দেবর কেই পাঠাস।’

ফোনে কথা শেষ করে ফোন কাটতেই দেখি আয়াস দুষ্টুদের মতো হাসছে।আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম সে হাসছে কেনো এইভাবে।কাহিনী কি?আয়াস ধীরে ধীরে আমার কাছে চলে এলো।এবার আয়াস আমার পুরোপুরি কাছে এসে বললো,

‘শুনলাম কিসব চুমুটুমু দেওয়ার কথা হচ্ছিলো ফোনে।কেউ কি আমায় চুমু দিবে।’

কেউ কি আমায় চুমু দিবে তারা কথার মাঝে ভীষন কিউটনেস ছিলো।তবে মারাত্মক ফাজিল এই আয়াস।
কি ফাজিল এই লোকটা ভাবা যায় মুখে কি কিছুই বাঁধেনা।বেশ লজ্জা ও পেলাম তার কথায়।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।

উনি ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললেন,

‘কেউ চুমু দিতে চাইলে দিক। চুমু দেওয়ার ফিলিংস হচ্ছে অথচ চুমু দিবে না কেনো?ব্যাপার টা বড়ই কষ্টকর।’

এবার আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,

‘কে আপনাকে চুমু দিতে চাইছে যতসব বাজে কথা।কিভাবে পারেন মনগড়া কথা বলতে।’

‘তার মানে তুমি হচ্ছো সেই লোক চুমু দেওয়ার ফিলিংস হচ্ছে হোক তবুও চুমু দিবানা।’

হাতের আঙুল উঁচু করে উনার দিকে চোখ রাঙাতেই উনি আমার হাত ধরে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে ডান গালে ওষ্ট ডুবালেন, তারপর বাম গালে ওষ্ট ডুবিয়ে ছেড়ে দিলেন।সময় টা ছিলো মাত্র কয়েক সেকেন্ড।কিন্তু আমার কাছে মনে হলো কয়েক ঘন্টার তুফান বয়ে গেলো।অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠলাম।দ্বীতীয়বারের মতো উনি এমন করলেন।আমি হাত দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললাম,

‘এটা কি হলো।’

‘যেটায় হলো জানি তোমার ভালো লেগেছে।তুমি স্বীকার করছোনা লজ্জায়।’

‘কচু ভালো লেগেছে।একটুও লজ্জা নেই আপনার।’

‘তোমাকে দেখলে লজ্জা নামক কোনো অনুভূতি যে আছে সেটায় ভুলে যায়।’

‘নাম্বার ওয়ান নির্লজ্জ।’

‘নিজের বোন কে শুনলাম ফোন দিয়ে বলছো উনি আমায় চুমু টুমু দেন না তাই দিলাম।তোমার ফ্যামিলি যদি জানে তাদের মেয়েকে না খাইয়ে রেখেছি ব্যাপার টা খুউউউউউউউব ই বাজে দেখাবে।আমি তাদের কথা দিয়েছিলাম তাদের মেয়েকে কখনো না খাইয়ে রাখবো না।’

আয়াসের কথা শুনে সিরিয়াসলি প্রচন্ড হাসি পেয়েছে আমার।হাসিতে পেট ফেটে যাবার উপক্রম।হাসি আটকে রাখতে না পেরে দ্রুত আয়াসের সামনে থেকে চলে এলাম।রুমে এসে খানিক্ষন হেসে নিলাম।মানে উনি পারেন ও বটে।এরই মাঝে আয়াস রুমে প্রবেশ করলো।আয়াস কে দেখে বেশ স্বাভাবিক ভাবে বসলাম মুড অফ করে।

‘আয়াস আমাকে দেখে বললো মুড অফ কেনো?’

‘আপনাদের ওই ডারলিং যাকে আদর করে ডারলিং ডাকছিলেন।উনি আমাকে বলেছে আমি নাকি আমার মা বাবার বিয়ের আগে হয়েছি।আমি যদি কিছু বলতাম তাহলে রটিয়ে বেড়াতো আয়াসের নতুন বউ ঝগড়ুটে।’

‘উনি এটা বলেছেন,নিজ কানে শুনেছো।’

‘না শুনলে কি আর বলছি।’

‘চলো আমার সাথে।’

‘কোথায়?’

‘আহা চলোতো।’

চলবে?…..
চলবে..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here