তুমি আমার প্রাণ পর্ব -০৩+৪

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ০৩
#Mitu-মিতু

“বাবা আমি মায়ের হাতে মাংস ভাত খাবো”

“আম্মা আমি এখনই মাংস আনতে যাচ্ছি বাজারে।তুমি বাড়িতে থাকো তোমার ছোট মায়ের সাথে। চুপচাপ লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবে”

“আমি তোমার সাথে যাই বাবা..?”

রিশার কথায় মজিদ মিঞার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তিনি বুঝে ফেলেছেন রিশা সেলিনাকে ভয় পায়। ছোট মেয়ের সাথে সেলিনার ব্যবহারের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি অনুভব করলেন সৎ মা কখনো নিজের মা হয় না হয়ে উঠার চেষ্টাও করে না।

বিকালে মেয়ের আবদার পূরন করতে বাবা-মেয়ে দুজনে সোজা পথ ধরে হাঁটা ধরলেন।গ্রামের বাজারে এখন গরুর মাংস পাওয়া যাবেনা বিধায় শহরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো মজিদ মিঞা। রিশা বাবার হাত ধরে হাটছিলো আর টুকটুক করে কথা বলছিলো সাথে মজিদ ও হেসে উত্তর দিচ্ছিলো।গ্রামের বাজারে এসে রিকশায় উঠলো শহরের উদ্দেশ্যে।

এদিকে,,,,সেলিনা এতক্ষণ এই সুযোগটাই খুজছিলো। রিশা আর মজিদ মিঞা বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই রান্নাঘরে বসলেন কবিরাজের দেওয়া গাছের শিকর বাটার জন্য।

রাতে রিশা বাবার হাতে তৃপ্তি নিয়ে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে বাবার সাথে ঘুমিয়ে গেলো। সেলিনা বেগম মনে মনে খুব খুশী। মজিদ মিঞার রাতের খাবারে সে ওষুধি গাছ দিয়ে রেখেছিলো। সেলিনা বেগম নিজের সব কাজ শেষ করে ঘরে আসলো। কবিরাজের কথা অনুযায়ী আজকে মজিদকে কাছে আনার জন্য ইতিউতি করছে। শেষে মজিদ মিঞার পাশে এসে বসে মজিদের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।মজিদ জেগেই ছিলো।হাতের স্পর্শ মাথায় পেয়ে চোখ খুললো। সেলিনা কাচুমাচু করতে লাগলো।

“বলছিলাম যে আজকে রিশাকে পাশের ঘরে রাখলে হয় না…? কালকে আবার এখানে রাখলেই হবি।”

জৈবিক চাহিদা সবার শরীরেই আছে। এইক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে নেই। মজিদ মিঞা সেলিনার কথার অর্থ বুঝেছে।অনেক দিন হলো মজিদ সেলিনার থেকে দূরে ছিলো।বিছানা থেকে নেমে রিশাকে কোলে নিয়ে পাশের ঘরে রেখে আসলো মজিদ। এটা দেখে সেলিনা মনে মনে পৈচাশিক আনন্দ পেলো।রাতটা কাটলো তাদের দুজনের মিলনের মধ্য দিয়েই। সকালে উঠে সেলিনা গোসল শেষে কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলো আর গুনগুন করছিলো।কামালের মা সকালবেলা মজিদের বাড়ি এসেছে সেলিনার খবর নিতে।

“কি গো ছেড়ি মনে রং লাগছেনি…মনে হচ্ছে খুব খুশী।”

“বুবু তুমি না থাকলে খুশি হতে পারতাম না।তুমি খুব ভালো বুবু।”

সেলিনা রান্নাঘরে চলে গেলে কামালের মা চলে যায় তার বাড়ি।

রিশার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন চোখ মেলে দেখে মজিদ মিঞা ওর পাশে বসে আছে। রিশা উঠে বাবার কোলে বসে পরলো।

“আমার আম্মার ঘুম শেষ হয়েছে। ”

“হ্যা বাবা। ”

“তাহলে এখন চলো আম্মা হাত মুখ ধুয়ে ভাত খেতে হবে।”

মজিদ মিঞা খাওয়া দাওয়া শেষে রিশাকে সেলিনার কাছে রেখে মাঠে গেলো গরু নিয়ে। রিশা সেলিনাকে ভয় পায় প্রচুর। এখন মজিদ না থাকলে রিশা কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে।রিশা কি করলো না করলো এটা নিয়ে সেলিনার কিছু যায় আসে না।সেলিনা খুশি এটা ভেবেই যে রাতে মজিদ তার কথা শুনেছে।

২ বছর পর………

অন্ধকার এক ঘরে ৬ বছরের একটা মেয়ে ঘরের কোনে বসে থেকে ডান হাত ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। সন্ধ্যায় ঘরে নেই কোনো আলোর হাতছানি। শীতের সন্ধ্যায় সেলিনা বেগম রান্নাঘরে ভাপা পিঠা বানাচ্ছে। পাশে বসে আছে তার ১ বছরের ছেলে রিয়াদ। মজিদ মিঞাকে ওষুধ খাওয়ানোর পর পার হয়ে গেছে দুটো বছর। মজিদের মধ্যে এসেছে পরিবর্তন। মজিদ এখন ছেলের জন্য পাগল। রিশার ব্যাপারে সে আর বেশি ঝামেলা করে না। তবে বেশি অবহেলাও করেন না।

মজিদ মিঞা বাজার থেকে বাড়ি আসার সময় দোকান থেকে জিলাপি নিয়ে এসেছে ছেলে মেয়ের জন্য। রিশাকে দেখতে না পেয়ে রিশার ঘরের দিকে গেলো।

“আম্মা অন্ধকার ঘরে কি করো।বাইরে আসো দেখো জিনিস নিয়ে এসেছে বাবা।”

রিশা বাবাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। অন্ধকারের মধ্যে চোখ মুখ মুছে নিলো হাত দিয়ে। সে জানে এখন ওকে কাঁদতে দেখলে ওর বাবা সেলিনার সাথে রাগ দেখাবেন তখন সেলিনা ওর ওপর আরো রেগে যাবে।

“আম্মা তোমার মুখটা ওমন লাগছে কেনো।ফুলে আছে।”

“বাবা এমনি।”

“ওহ!এসো আম্মা।”

মজিদ রিশার হাতে বাজার থেকে আনা জিলাপি দেওয়ার সময় দেখলো হাতের তালুতে ফোস্কা পরে পুরো হাত লাল হয়ে আছে।

“আম্মা তোমার হাত এমন হলো কি করে।”

ছোট রিশা পিঠা বানানো দেখে সেলিনার থেকে পিঠা চাইছিলো খাওয়ার জন্য। সেলিনা বেগম রিশাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে না পেরে ওর ওপর রাগ আরো দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পিঠা চাওয়ায় কিছু বুঝতে না দিয়েই রিশার ছোট হাত টেনে গরম পাতিলের সাথে চেপে ধরেছিলো। যখন রিশা চিৎকার করে উঠলো তখন ওর মুখ অন্য হাত দিয়ে চেপে রেখেছিলো।একটু পর ছেড়ে দেওয়ার পর গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছিলো রিশা।
স্বার্থপর মানুষ হয়তো এমনই হয়।অন্যকে কষ্ট দিতে পিছু পা হয় না। মানুষটা বড় হোক বা ছোট।

“আমি আমার ছেলের জন্য পিঠা বানাচ্ছি তোর জন্য না।খবরদার পিঠার দিকে চোখ দিবিনা। তোর মায়ের কাছে না যেয়ে তুই আমার সংসার গিলে খাচ্ছিস। ”

রিশা ঠান্ডা পানিতে হাত চুবিয়ে রেখে সেলিনা বেগমের কথা শুনছিলো।একটু আরাম পেয়ে ওর জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে দৌড়ে চলে গেছিলো। রিশা এখন একা ঘরেই থাকে।মাঝে মধ্যে রাতে যখন ভয় পেয়ে কেঁদে উঠে তখন কেউ আশে না পাশে।বাবার ভালোবাসা কমে গেছে এটা রিশা উপলব্ধি করতে পেরেছে।বাস্তবতা সামনে আসলে অনেকের মধ্যে অল্প বয়সেই ম্যাচিউরিটি চলে আসে। রিশার সাথেও তেমনটাই হচ্ছে।

“আম্মা হাত দেও বাবার কাছে ওষুধ লাগিয়ে দিই”

বাবার আদুরে কথায় রিশার চোখ দিয়ে আবার পানি পড়া শুরু করলো। ওষুধ লাগানোর পর মজিদ রিশাকে নিজ হাতে জিলাপি খাওয়াই দিলো। সেলিনা সবকিছু শুনছিলো আর দেখছিলো রান্নাঘর থেকে। সেখান থেকে এসে রিয়াদকে মজিদের কোলে দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বললো

“হয়েছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না।এবার ছেলেকে নেও”
#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ০৪
#Mitu-মিতু

“হয়েছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না।এবার ছেলেকে নেও”

মজিদ মিঞা রিয়াদকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।সোনার টুকরা ছেলে বলে কথা। ছেলেকে নিয়ে বাড়ির উঠানে ঘুরতে লাগলো। রিশা বাবার আদুরে পরশে খুশি হলেও আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রাত হয়ে যাওয়ায় খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলো রিশা।একা ঘরে মন খারাপ চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে ছোট রিশাকে।

_________________

চেয়ারম্যান বাড়িতে আজ আনন্দের ফোয়ারা বইছে। সাহেরা বানু আর মুর্শিদা রান্নাঘরে রান্না করতে ব্যস্ত। মেয়ে রেখে আসার পর একবছর সাহেরা বানু অস্বাভাবিক ভাবে থাকলেও পরবর্তীতে ভাইয়ের ছেলে মেয়েকে বুকে টেনে নিয়েছিলো আদার ভালোবাসা দিয়ে। অনেক চেষ্টা করেছিলো রিশার সাথে একবার হলেও দেখা করার। কিন্তু মজিদ যে মেয়েকে বাড়ির বাইরে আনে না।

“শুনো ভাবি আমি এবার পায়েসটা রান্না করে ফেলি বুজলে। সব রান্না তো প্রায় শেষ।”

“আচ্ছা… তাহলে তুমি চুলায় পাতিল বসাও সাহেরা।আমি খাবার গুলো গুছিয়ে রেখে আসি টেবিলে।কতদিন পর আমার ছেলেটা বাড়ি আসছে। ”

কথাটা বলে মুর্শিদা খাবার গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। সাহেরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়ির আঁচলে চোখের কোণ মুছে নিলো।তারও যে মেয়েটার জন্য মন পুরে।কলিজার টুকরাটা যে কেমন আছে। ঐ বাড়ি থেকে চলে আসার পর দ্বিতীয় বার আর দেখা হয়নি মেয়ের সাথে। ভাইকে একবার আনন্দপুরের মাতব্বরের কাছে পাঠিয়েছিলো কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।মজিদ মেয়ে দূরে দিবে না। সাহেরা বানু ভাইয়ের ছেলে মেয়েকে নিয়েই নিজের অশান্ত মন শান্ত করে। তাতেও কি শান্তি মিলে। মেয়ের কথা মন হলেই বুক পুরে কান্না উপচে আসে। সাহেরা বানু চোখ মুছে পায়েস রান্নার প্রস্তুতি নিলো।তাসরিফ যে তার হাতের পায়েস খুব ভালোবাসে।

“কই গো মুর্শিদা তোমার রান্না হলো?”

“এই তো শেষ ”

“আজকে কতদিন পর আবার ছেলেকে দেখতে পাবো” খুশি মনে বললো চেয়ারম্যান মতিন সাহেব

মুর্শিদা বললো “আপনার জন্যই ছেলেকে দেখার জন্য আমার পথ চেয়ে বসে থাকা লাগে। ছেলেকে এখানে পড়ালে কি হতো এতদূর না পাঠিয়ে ”

“আমি আমার ছেলের সকল স্বপ্ন পূরন করতে চাই। ছেলে আমার আর্মি অফিসার হবে এতে আমার কোনো মন খারাপ নাই। এখন একটু কষ্ট হবে তাতে সমস্যা নাই আমার ছেলে তার স্বপ্ন পূরন করুক। আমি ঢাল হয়ে তার পাশে আছি”

মতিন সাহেবের কথায় আর কিছু বললো না মুর্শিদা। রান্নাঘরে চলে গেলো কাজে।

তাসরিফ Jsc পরিক্ষা শেষে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল &কলেজ-এ অ্যাডমিশন নিয়ে সেখানে চলে যায় । বাবার একটা মাত্র ছেলে বলে ছেলের স্বপ্ন পূরনে কোনো বাধা দেয়নি চেয়ারম্যান মতিন সাহেব। মুর্শিদার বাবার বাড়ি সাভার হওয়ায় তাসরিফ বর্তমানে নানার বাসায় থেকেই পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ৩ মাস কখনো বা ৬ মাস পর রসুলপুর গ্রামে আসে কিছুদিনের জন্য। এবার বাড়ি আসছে ৬ মাস পর।

________________

শীতের দিনে গ্রামের সকাল অপরুপ সৌন্দর্যে ঢেকে থাকে।ঘাড়ে রসের হাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে যায় কতজন। দেখা যায় কত কর্মজীবী মানুষ শীতকে পিছনে ফেলে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। মকতব থেকে একদল বাচ্চারা হইচই করতে করতে বাড়ি আসে। সজীবতায় ভরে ওঠে গ্রাম।

“ঐ রিশা স্কুলে যাবি না…? তাড়াতাড়ি আয়”

সকালবেলা কামালের মেয়ে জুই রিশাকে ডাকতে এসেছে স্কুলে যাওয়ার জন্য। এইবছরে মজিদ মিঞা রিশাকে স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়েছে। এটা নিয়ে সেলিনা মজিদের সাথে কয়েকবার অশান্তি করেছিলো। রিশা যখন বলেছিলো বাবা আমি স্কুলে যাবো তখন মজিদ না করেনি। জুই রিশার স্কুলে যাওয়ার সাথী।

“তুই একটু দাঁড়া জুই,,আমি আসছি”

রিশা আর জুই গল্প করতে করতে চলে গেলো স্কুলে। মাঝে মাঝে রিশা যখন স্কুলের জন্য খাতা কিনে চায় তখন সেলিনা বলে

“এই তো আমার সংসার গিলতে শুরু করছিস। তুই তোর মায়ের কাছে যা,, বসে বসে আমার সংসার ধ্বংস করিস না। আপদ দূর হবি কবে”

একদিন রিশা তার বাবাকে বলেছিলো “বাবা আমি মায়ের কাছে যাবো।”

কথা শুনে সেলিনা বেগম খুশী হলেও মজিদ মিঞা যখন বলেছিলো না আম্মা তুমি আমার সাথেই থাকো তখন তার মুখটা আবার পেঁচার মতো হয়ে গেছিলো

৬ বছরের হাসি খুশি একটা মেয়ে রিশা কিন্তু স্নেহ বঞ্চিত হয়ে সকল খুশি ডুবে যাচ্ছে দুঃখের অতলে। ছোট মা যখন ভাই রিয়াদকে ভালো ভালো খাবার দেয় তখন তারও খেতে মন চায়। কিন্তু মুখ ফুটে খাওয়ার কথা আর বলে না যদি ছোট মা মারে। সকালের পর যখন দুপুরে ভাত পায় না তখন ছটফটানি শুরু হয়ে যায়। সেই কবে বাবার হাতে খেয়েছে তা এখন অতীত। ছেলে প্রিয় মজিদ আর খেয়াল রাখেনা তার আম্মার। দুপুরে খেতে বসে মজিদ সেলিনাকে যদি জিজ্ঞেস করে

“আমার আম্মা খাইছে..”

সেলিনা বেগম তখন বলে

“মেয়ে নিয়ে আর দরদ দেখাতে হবে না,, ছেলে খেয়েছে নাকি তা না দেখে মেয়ের কথা। আপনার মেয়ে আগেই খেতে বসেছিলো।রিয়াদের জন্য রাখা মাছটা সে খেয়েছে। ”

সেলিনার কথায় আর কথা বাড়ায় না মজিদ। ছোট রিশা ঘরের মধ্যে ক্ষুধায় ছটফট করে তার খেয়াল আর কে রাখে। যেখানে একটা বাচ্চার সুস্থ দেহের জন্য পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন সেখানে রিশার দৈনন্দিন খাবার তালিকায় এখন শুধু সকালে আর রাতে ভাত থাকে। থাকেনা কোনো মাছের টুকরা।

______________

কয়েকদিন পর……

আজকে সকালে তাসরিফ তার সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছে। রসুলপুরে আসা ১০ দিন পার হয়েছে। আর দুইদিন পর চলে যাবে সাভার শুরু হবে ব্যাস্ততায় ভরপুর জীবন।রসুলপুর আর আনন্দপুর গ্রামের মাঝখানে আনন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়।পরিচিত কয়েকজন বন্ধুদের সাথে দেখা করে তাসরিফ আনন্দপুর গ্রামের কাছে চলে এসেছিলো। চারিদিকে সবুজ মাঠে ঘেরা আনন্দপুর স্কুল। তাসরিফ বাড়ি থেকে সকাল সকাল বের হলেও এখন বাজে ১০ টা। বাড়ি ফেরার জন্য যখন স্কুলের পাশ দিয়ে রসুলপুর যাবে তখন রাস্তার পাশে একটা স্কুল ড্রেস পরে বসে থাকা ছোট মেয়েকে দেখতে পায়। একটু পর পর চোখ মুছা দেখে ভাবে মেয়েটা কাঁদছে নাকি। ষোল বছর বয়সেই চুপচাপ,, গম্ভীর স্বভাবের ছেলে তাসরিফ। চলে যেতে চেয়েও কি ভেবে যেনো সাইকেল স্ট্যান্ড করে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ালো।

“এই যে তুমি কাঁদছো কেনো এখানে বসে”

অপরিচিত কাউকে দেখে রিশা কথার উত্তর দিলো না। আজকেও সেলিনা বেগম রিশাকে মেরেছে। চামচ দিয়ে হাতের ওপর বারি মারার সময় কবজিতে লেগেছিলো। তখন ব্যথা অনুভব না হলেও স্কুলে আসার একটু পর থেকেই ব্যথা করেছে খুব। রিশা কথার উত্তর না দেওয়ায় তাসরিফ বললো

“ভারি বেয়াদপ তো তুমি,, আমি কিছু জিজ্ঞেস করলাম তুমি উত্তর দিচ্ছো না কেনো।”

তাসরিফ দেখলো চুলে অগোছালো ভাবে দুটো ঝুটি বাঁধা মেয়েটার ছোট মুখটা লাল হয়ে গেছে কান্নায়।কেনো যেনো মনে হলো মেয়েটাকে চিনে সে।ভাবলো হয়েছে টা কি মেয়েটার,, এভাবে কাঁদছে কেনো।

রিশা কথা না বলায় একটু রাগ হলো তাসরিফের। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখলো আরেকটা ছোট মেয়ে দৌড়ে এদিকেই আসছে।

“কি রে রিশা তুই এখানে আর আমি তোকে কখন থেকে খুঁজছি। চল স্কুলে”বলেই জুই রিশার ব্যথা পাওয়া হাত ধরে টানতে লাগলো।

রিশা ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মা বলে চিৎকার করে এবার জোরেই কেঁদে ফেললো।

তাসরিফ এতক্ষণ ওখানেই দাড়িয়ে ছিলো।যখন রিশা চিৎকার দিয়ে উঠলো তখন রিশার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো চিকন হাতটা ফুলে লাল হয়ে আছে।

” এই মেয়ে তোমার হাতে কি হয়েছে.. ”

“আসলে ভাইয়া ওর মা মেরেছে,, আমার মনেই ছিলো না ওর হাতে লাগার কথা ” মন খারাপ করে জুই উত্তর দিলো।

“এইটুকু মেয়েকে কোনো মা এভাবে মারে নাকি… আজব!”

“ওর নিজের মা নাই… ওর ছোট মা ওকে ভালোবাসে না। সকালে মাছ খেতে চেয়েছিলো দেখে হাতে বারি মেরেছে চামচ দিয়ে ”

জুইয়ের কথায় তাসরিফের ওর ফুপির মেয়ে কথা মনে পরে গেলো। ফুপির কথায় মনে পড়তেই রিশার দিকে তাকালো বললো

“তোমার বাবার নাম কি..”

রিশা কান্না করছিলো কথা না বলায় জুই বললো

“ওর বাবার নাম মজিদ ”

নাম শুনে তাসরিফের বুকটা ধক করে উঠলো।তার ফুপার নাম ছিলো মজিদ এটা নিশ্চয়ই ওর ফুপির পুতুল মেয়ে।তাসরিফ আর কোনো কথা না বলে সাইকেলটা স্কুলের বারান্দায় রেখে রিশাকে কোলে তুলে নিলো। গ্রামের বাজারে একটা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো জুই সাথেই আছে। তাসরিফ ভাবলো ফুপি যদি তার পুতুলের এই অবস্থা দেখে তাহলে নিশ্চিত আবার পাগলামি শুরু করবে।

চলবে…….
চলবে………🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here