তুমি আমার প্রাণ পর্ব -০৫+৬

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ০৫
#Mitu-মিতু

শীতের দুপুর আর গ্রীষ্মের দুপুরের তাপমাত্রায় ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। শীতকালে থাকে মিষ্টি রোদের হাতছানি। আনন্দপুরের সবুজ ক্ষেতের মধ্য দিয়ে বের হওয়া সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে রসুলপুর গ্রামের চেয়ারম্যান এর ছেলে তাসরিফ। কোলে তার ফুপির পুতুল আর সাথে জুই। রিশার হাতে প্লাস্টার করা হয়েছে। ডাক্তার যখন বললো হাতের কবজিতে ব্যথা খুব গভীর প্লাস্টার করতে হবে তখন তারসিফের চোখ মুখ রাগে শক্ত হয়ে গেছিলো।মানুষ কতটা অমানবিক হলে ছোট বাচ্চাকে এভাবে মারতে পারে। তাসরিফ লুকিয়ে রিশাকে নিয়ে যেতে চাইলে রিশা কাঁদতে শুরু করে। তাসরিফ যখন বলেছিলো

“পিচ্চি চলো আমার সাথে আমার কাছে তোমার মা আছে ”

তখন রিশা বলেছিলো”আমার মা নাই তো মা আমাকে রেখে চলে গেছে।বাবা বলেছে আমার মা ভালো ছিলো না।আমি ঐ খারাপ মায়ের কাছে যাবো না”

“চুপ করো,,তোমার বাবা ভালো না। তোমার মাকে কষ্ট দিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করেছে। ”

“আমি বাড়ি যাবো। তুমি ভালো না। চল জুই।”রিশা তাসরিফকে কথাটা বলে জুইয়ের সাথে চলে আসার জন্য যখন ডাক্তার ঘর থেকে বের হলো তখন ওর কাছে পুরো জায়গাটা অচেনা। রিশা পেছনে তাসরিফকে দেখে বললো

” আমাকে বাড়ি দিয়ে আসো আমি বাড়ি যাবো।আমি বাবার কাছে যাবো।”

“তুই একা যা আমি চিনি না তোর বাড়ি। ” তাসরিফের রাগান্বিত স্বরে কথা বলা দেখে রিশা ভয় পেলো।

“আমাকে নিয়ে চলো না বাড়ি…ছোট মা আমাকে আজকেও মারবে তাড়াতাড়ি বাড়ি না গেলে”

তাসরিফের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। যে বয়সে বাচ্চারা হেসে খেলে বড় হয় সেই বয়সে রিশা ভয়ে সিটিয়ে থাকে। তাসরিফ ভাবলো বাড়িতে গিয়ে বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে।

“চল,,আমি তোরে বাড়ি চিনি না,,ভ্যানে যাই”

ভ্যান যেখানে থামে সেখান থেকে একটু দূরে মজিদ মিঞার বাড়ি। তাসরিফ রিশাকে কোলে নিলে রিশা বলে

“আমি হাটতে পারি,,হেঁটে যাই”

“চুপ থাক”

“তুমি রেগে আছো কেনো ভাইয়া…”

“আমি তোর ভাইয়া এটা তোকে কে বলেছে…? ”

“তোমাকে চিনি না তাই আমি নিজে থেকে ভাইয়া ডাকলাম,,আচ্ছা তুমি আমার সাথে এমনভাবে কথা বলছো কেনো…?”

“কেমন করে বলছি” রিশার দিকে তাকিয়ে বললো তাসরিফ

“তুই করে ডাকছো আবার ধমক দিচ্ছো”

“আমার হাটুর বয়সী মেয়েকে আমি তুই বলবো না তো কি আপনি বলবো”

“এইতো বাড়ি ”

জুইয়ের কথায় তাসরিফ আর কথা না বাড়িয়ে কোল থেকে নামিয়ে দিলো রিশাকে। সরু রাস্তার পাশেই মজিদ মিঞার বাড়ি।বাড়ির সামনে সেলিনা রিয়াদকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো রিশাকে দেখে বললো

“তোর স্কুল ছুটি হয়েছে সেই কখন তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি। বসে থেকে তো শুধু আমার সংসারের টাকা নষ্ট করছিস। রিয়াদকে নিয়ে বসে থাক আমি রান্না করবো। ”

রিয়াদকে রিশার কাছে রেখে চলে গেলো সেলিনা বাড়ির ভেতরে। এতক্ষণ সেলিনা বেগমের কথা শুনছিল তাসরিফ আর রাগে ফুলছিলো।এবার রিশাকে বললো

“থাক তুই তোর ভালো বাবার কাছে,,, গেলাম আমি। ”

তাসরিফ একটুখানি রাস্তা হেটে যাওয়ার পর আবার ফিরে এসে রিশাকে বললো

“চল পুতুল আমার সাথে যাই,,তোর মা আমার কাছে আছে। ”

“আমি যাবো না,, তুমি যাও,,আমি বুজেছি তুমি মেয়ে ধরা,,আমাকে নিয়ে যেতে চাইছো বেচে দেওয়ার জন্য ”

রিশা রিয়াদকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।সেলিনা বেগম রিশাকে ভালো না বাসলেও রিশা রিয়াদকে ছোট ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে।তাসরিফ আর কিছু না বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে পথ ধরলো ভাবছে শেষে কিনা হাটুর বয়সী বাচ্চা তাকে মেয়ে ধরা বললো। সব ভাবনা বাদ দিয়ে এখন সে ভাবতে লাগলো রিশাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। স্কুল থেকে সাইকেল নিয়ে চলে গেলো বাড়ি।

_______________

মতিন সাহেবের বাড়িতে একটা ঘরে মতিন সাহেব আর ছেলে তাসরিফ কথা বলছে রিশার বিষয় নিয়ে।

“আব্বু তুমি যেভাবে পারো ওকে এখানে নিয়ে এসো আব্বু প্লিজ।ও ছোট মেয়ে সবাই ওকে খুব কষ্ট দেয়,,মারে।এভাবে থাকলে ও মরে যাবে আব্বু। ”

তাসরিফের কথায় মতিন সাহেব চোখ মুছলেন। রাতে খাওয়ার পর বাবার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে তাসরিফ রিশার বিষয়ে সবকিছু বললো।মতিন সাহেব শুনে কষ্ট পেলেন। একমাত্র আদরের ভাগ্নী কষ্টে আছে মানতে পারছেন না।

“কিন্তু তাসরিফ মজিদ তো মেয়েকে খুব ভালোবাসে এমন তো হওয়ার কথা না ”

“ভালোবাসলে ওর হাতের ঐ অবস্থা হতো না আব্বু। ”

“কাল সকালেই আমি যাবো আনন্দপুর। তুমি এখন যাও ঘুমাও। ” বলে মতিন সাহেব নিজের ঘরে চলে গেলেন। তাসরিফ ও চলে গেলো নিজের ঘরে।

___________

হিম শীতল রাত পেরিয়ে সকালের মিষ্টি রোদ জানালার ছিদ্র দিয়ে উকি দিচ্ছে রিশার ঘরে। ঘরে বিছানার ওপর পড়ে আছে অবচেতন একটা ছোট শরীর। শীত নিবারণের জন্য শরীরের ওপর নেই কোনো গরম কাপড়। গতকাল সকালে খাওয়ার পর আর খাবার পায়নি রিশা।রিয়াদ খেলার সময় পরে যাওয়ায় হাঁটুতে একটু লেগেছিলো বিধায় কাঁদতে শুরু করেছিলো।ওকে কাঁদতে দেখে সেলিনা বেগম রিশাকে একটা চড় মেরে বলেছিলো

“আজ তোর রাতে খাবার বন্ধ ”

সন্ধ্যা থেকে ক্ষুধায় ছটফট করার পর শরীর অতিরিক্ত দূর্বল হওয়ায় নিজের ঘরেই অবচেতন হয়ে পড়েছিলো রিশা। মজিদ খেতে বসে রিশার কথা জিজ্ঞেস করলে সেলিনা বলে দেয় সে খেয়েছে। মা হীন বাবার আদর কেমন সেই কথা সবারই জানা। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাবার স্নেহ বঞ্চিত হয় সন্তানরা।

সকাল ৯ টা বেজে যাওয়ার পরেও যখন রিশা ঘর থেকে বের হলো না তখন সেলিনা বেগম একটু ভয় পেয়ে গেলো।যদি কিছু হয়ে যাও।এরমধ্যেই মজিদ মিঞা রিশার ঘরে প্রবেশ করলো।মেয়েকে শুয়ে থাকতে দেখে ডেকে উঠলে রিশার কোনো শব্দ না পেয়ে রিশার শরীরে হাত দিয়ে দেখে পুরো শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে। খেয়াল করে দেখলো গায়ের ওপর কোনো কাঁথা বা লেপ কিছুই নেই। মেয়ের অবস্থা দেখে কিছু সময়ের জন্য মজিদ স্তব্ধ হয়ে গেলো। নিজের রক্তের মেয়েকে যে তিনি অবহেলা অনাদরে রেখেছিলো সেই হুঁশ ফিরলো।রক্তের টানের কাছে হয়তো সকল যাদু টোনাও ফিকে হয়ে যায়। মজিদ মিঞা রিশাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হলো।রাস্তায় ভ্যান না থাকায় ওভাবেই ডাক্তারের দোকানে পৌঁছালো।

“স্যার আমার আম্মা কথা বলছে না,,,দেখুন কেমন চুপ করে আছে। আমার আম্মাকে ঠিক করে দেন স্যার। ”

“আরে কালকেই তো আমি এই মেয়ের হাত প্লাস্টার করে দিলাম। একটা ছেলে সাথে নিয়ে এসেছিলো”

ডাক্তারের কথায় মজিদ এতক্ষণে মেয়ের হাতের দিকে তাকালো।আদরের আম্মার এই অবস্থা হয়েছে তার অবহেলায় ভেবে ভেতর টা মুচড়ে উঠলো মজিদের।

চলবে……#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ০৬
#Mitu-মিতু

দুপুর ১২ টার দিকে মতিন সাহেব আর তাসরিফ আনন্দপুর মজিদ মিঞার বাড়ি আসলো সাথে আনন্দপুর গ্রামের মাতব্বরকে এনেছে।

“মজিদ বাড়ি আছো..”

আকবর মাতব্বর এর ডাকে সেলিনা ঘর থেকে বের হয়ে আসলো।মাতব্বরের সাথে মতিন সাহেবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভড়কে গেলো সেলিনা।

“উনি বাড়িতে নাই…কাজে গেছে”

“তোমার মেয়ে কোথায়..?”

“ও স্কুলে গেছে ”

“শুনলাম তুমি নাকি কালকে ছোট মেয়েটারে মারছো,,,এটা কেমন কাজ…মারার জন্য তো ওকে এখানে রাখার কথা বলিনি”

মাতব্বরের কথা শুনে সেলিনা একটু থেমে বাজখাঁই গলায় বললো

“আমি ওরে মারবো কোন দরকারে…? কে বলছে এই কথা। কেউ দেখছে নাকি মারতে ”

সেলিনার জোরে কথা বলা দেখে তাসরিফ বললো

“আস্তে ভদ্রভাবে কথা বলুন আর আপনি মিথ্যা কথা বলছেন কেনো,,,আমি কালকে দেখেছি ওর হাত ফুলে গেছে। আমি শুনেছি আপনি ওর হাতে বারি মেরেছেন চামচ দিয়ে। আপনি কিভাবে পারলেন অমানুষের মতো ওভাবে মারতে। ”

রিশার হাতের কথা ভাবতেই তাসরিফ রেগে গেলো।ছেলের রাগান্বিত স্বরের কথা শুনে মতিন সাহেব বললো

“আহ!তাসরিফ তুমি চুপ করো।আমরা আছি কথা বলার জন্য। ”

তাসরিফের গা রাগে রি রি করছে। এমন সময় মজিদ মিঞা রিশাকে কোলে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো।নেতিয়ে যাওয়া রিশাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো তাসরিফ। এর আবার কি হয়েছে আবার মারেনি তো ভাবতেই চিল্লিয়ে উঠলো তাসরিফ।

“আব্বু,, ঐ দেখো পুতুল….ওকে ওমন লাগছে কেনো দেখতে। ঐ বেয়াদব মহিলা আবার মেরেছে নিশ্চিত। তুমি আজকেই নিয়ে চলো পুতুল কে এখান থেকে। আর একমুহূর্ত ওকে এখানে রাখা যাবে না। এরা সবাই ওকে মেরে ফেলবে”উত্তেজিত হয়ে বললো তাসরিফ।

ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না হওয়ার কারণে রিশা অপুষ্টিতে ভুগছে সাথে শরীরে রক্তশূন্যতা ধরা পরেছে। আছে আরো সমস্যা। ডাক্তার মজিদ মিঞাকে যখন বললো

“মেয়ের শরীরে পুষ্টির অভাব….ঠিকমতো না খাওয়ার কারনে এমন হয়েছে। এমন চলতে থাকলে মেয়েকে বাঁচানো যাবে না। মেয়ের দিকে খেয়াল রাখুন।ছোট বাচ্চা ও।হাতের আঘাত ও গভীর। একটা বাচ্চার বিষয়ে কোনো বাবা-মা এমন উদাসীন হয় নাকি। ”

মজিদ উত্তর দেওয়ার মতো কোনো কথা খুজে পায় নি।মজিদের তখন মনে হয়েছে সেলিনা তাহলে মিথ্যা বলতো রিশার খাওয়ার বিষয়ে। ডাক্তারের ঘর থেকে বের হয়ে ঔষধ নিয়ে মেয়ের জন্য কিছু ফল কিনে মজিদ বাড়ি ফিরেছে। বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই তাসরিফ এর চিৎকার শুনে ওর দিকে তাকালো।তাসরিফ কে চিনতে না পারলেও উঠানে চেয়ার পেতে বসা মতিন সাহেবকে দেখে মজিদ ঘাবড়ে গেলো।

“কি ব্যাপার মজিদ..? মেয়ের এমন অবস্থা কেনো…?”

“রাত থেকে আম্মা অসুস্থ। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছিলো তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম।!”

মজিদের কথা শুনে মাতব্বর,, মতিন সাহেব আর সেলিনার দিকে তাকালো। মাতব্বর মজিদকে বললো

“কিন্তু তোমার বউ যে বললো তুমি মাঠে গেছো আর রিশা স্কুলে। ”

সেলিনা ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে কাচুমাচু করতে লাগলো। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে মজিদ সেলিনা বেগমের ওপর এমনিতেই রেগে আছে এখন মিথ্যা কথা বলা শুনে আরো রেগে গেলো।আকবর মাতব্বর বললো

“মেয়ের হাতে কি হয়েছে। এই ছোট বাচ্চাকে কষ্ট দিতে তোমাদের কষ্ট লাগে না। বাচ্চা রাখতে না পারলে ওর মা আছে সেখানে দিলেই তো হয়। এর আগেই বলেছিলাম তোমায় বাচ্চা ওর মায়ের কাছে কিছুদিন থেকে আসুক।তুমি তাও দেওনি।বিচার সভায় এমন তো কোনো কথা হয়নি মজিদ।”

“আমার ভুল হয়ে গেছে হুজুর।আমার আম্মা আমার কাছেই থাকবে।আমি আমার আম্মাকে কোথাও যেতে দেবো না।”

“এবার এমন কথা আমরা মানবো না মজিদ মিঞা। একমাত্র ভাগ্নীর এমন অবস্থা আমি চুপচাপ বসে দেখতে পারবো না।আমার বোনের অংশ আর এখানে থাকবে না।আমি নিয়ে যাবো।”

মতিন সাহেব এতক্ষণ কিছু না বললেও এবার বললো কথাটা। মতিন সাহেবের কথা শুনে মজিদ মিঞার কলিজা শুকিয়ে গেলো।এতদিন অবহেলায় রাখলেও মেয়ের এই অবস্থা মজিদ ও মানতে পারছে না।তাই বলে মেয়ে তিনি অন্য কোথাও দেবে না।

“আপনি চলে যান ভাই। আমার আম্মা আমার কাছেই থাকবে।আমি আমার আম্মাকে অন্য কোথাও যেতে দেবো না।”

বলেই মজিদ মিঞা রিশাকে বুকের সাথে চেপে ধরলো।মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনেই তার বুকে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।এতক্ষণ সবকিছু দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিলো সেলিনা।মেয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে খুশিতে মন বাক-বাকুম হলেও মজিদ মিঞার কথা শুনে সেলিনা মনে মনে বললো

“আহ মরি!মেয়ের জন্য দরদ উতলে উঠছে। আমি ভাবছি আপদ দূর করার কথা আর উনি অভিনয় শুরু করেছে।”

সেলিনা বেগম এবার জোরেই বললো

“মেয়ে নিয়ে যেতে চাইছে দিয়ে দিলেই তো হয়। আপনি মাঝে মাঝে আবার ওকে বেড়াতে নিয়ে আসবেন তাহলেই তো সমাধান হয়ে গেলো। ”

“তুই চুপ থাক!তুই আমার আম্মার বিষয়ে আর একটা কথাও বলবিনা।আমার আম্মা আমার কাছেই থাকবে। আর এটাই শেষ কথা। ”

মজিদ মিঞা আকবর মাতব্বরের দিকে তাকিয়ে বললো

“মাফ করবেন হুজুর আমি আমার আম্মাকে আমার কাছেই রাখবো।উনাদেরকে নিয়ে আপনি চলে যান।”

আকবর মাতব্বর মতিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো

“কি করবো চেয়ারম্যান সাহেব। ”

“ওদের কোনো কথা শুনবো না মাতব্বর আজকে আমি ভাগ্নীকে নিয়ে তবেই যাবো বাড়ি।”

মজিদ মিঞা মতিন সাহেবের কথা শুনে রিশাকে নিয়ে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে চিল্লিয়ে বললো

“আমি আমার আম্মাকে কোথাও যেতে দেবো না। ” শেষে মজিদ মিঞা কেঁদেই ফেললো।

এতক্ষণ বাবার কথায় তাসরিফ চুপ থাকলেও এবার তাকে বিচলিত দেখালো।

“বাবা পুতুলকে এখান থেকে নিয়ে চলো।আমি ওকে এই নরকে রেখে বাড়ি যাবো না”

ছেলের কথায় কি করবেন ভেবে পেলেন না মতিন সাহেব। এই বিষয়ে আকবর মাতব্বরের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলার পর মজিদের ঘরের সামনে দাড়িয়ে মতিন সাহেব বললো

“মজিদ তাহলে এ যাত্রায় তোমার কথায় থাকলো।রিশা তোমার কাছে থাকুক।তবে তুমি সাবধান। এবার থেকে আমি আমার ভাগ্নীর সব খবর রাখবো। যদি আর কোনোদিন এমন হয় তাহলে তোমার ঘর ভেঙ্গে হলেও আমি আমার ভাগ্নীে নিয়ে তবেই যাবো।”

মতিন সাহেবের কথায় মজিদ মিঞা বললো

“আর ওমন হবে না। তবুও আমার আম্মা আমার কাছেই থাকুক।”

ভাগ্নীকে নিয়ে যাওয়ার উপায় না পেয়ে মতিন সাহেব তাসরিফ কে নিয়ে মজিদ মিঞার বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন।তাসরিফ একা বাড়ি যেতে না চাইলেও তাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করলেন।

“এটা ঠিক করলে না আব্বু। পুতুল এখানে ভালো নেই। ফুপি যদি পুতুলের এই অবস্থার কথা জানে তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো।একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এমন কিভাবে করতে পারে ঐ মহিলা। আমার তো খুন করতে ইচ্ছে করছে।

” তাসরিফ!অনেক কথা বলেছো আর না।এ কেমন কথা। ”

তাসরিফ রেগে থাকলেও বাবার ধমকে চুপ হয়ে গেলো।আর কোনো কথা বাড়ালো না।

“রিশার এই কথা যেনো তোমার ফুপি না জানতে পারে। বাড়ি গিয়ে এ নিয়ে আর কোনো কথা হবে না। বুজতে পেরেছে। ”

_____________________

শীতের সময় একটু তাড়াতাড়িই দিন পেরিয়ে রাত চলে আসে। সন্ধ্যার পর গ্রামের অনেক বাড়িতে দেখা যায় বয়স্ক মানুষ রান্নাঘরে চুলার পাড়ে বসে আগুনে হাত পোহায় আর ছোট ছোট নাতি-নাতনিদের নিয়ে গল্পের আসর বসায়। রিশার ঘরে জানালা দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করা দেখে মজিদ রিশার পাশ থেকে উঠে জানালা বন্ধ করে দিলো।সেই দুপুরের পর থেকে মজিদ বাড়ি থেকে একটু সময়ের জন্যও বের হয়নি।সারাটা সময় রিশার সাথে থেকে রিশার যত্ন নিয়েছে। এগুলো দেখে সেলিনা বেগমের রাগ তর তর করে বেড়েই চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here