তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব -০৩+৪

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৩

প্রিয়তার কথা শুনে আকিল আবারও জিহ্বা দিয়ে চুকচুক শব্দে ব্যঙ্গ করে বলে উঠে;

আকিল:-আহারে,এতো ভুতের মুখে রাম নাম।সৌরভ ভাইয়ার ভয়ে কেঁচো হয়ে গেছে বেচারি প্রিয়ু।

আকিলের কথা প্রিয়তা গায়েই মাখলো না।বরং শয়তানী হাসি হেসে রসিয়ে রসিয়ে আকিলকে ব্ল্যাকমেইল করতে লাগলো সে;

প্রিয়তা:-ফুফা জানো তোমার ছেলে কী করেছে?কী রে বলদ,বলে দেই বাকিটুকু?

আতঙ্কিত দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকালো আকিল।শয়তান মেয়েটা যদি এখন তার সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয় তার বাবার কাছে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।কেলো হয়ে যাবে তবে।এদিকে মি.সালাম কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন;

মি.সালাম:-বলো মামণি,কী করেছে আমার ছেলে?

প্রিয়তা কিছু বলার পূর্বে আকিল তড়িঘড়ি করে বলে উঠে;

আকিল:-কিচ্ছু হয় নি আব্বু।কিচ্ছু করি নি আমি।ও হুদাই এসব বলছে,আমাকে বকা খাওয়ানোর জন্য।প্রিয়ুর বাচ্চা,তোকে কাল ক্যাটবেরি চকোলেট এনে দিই নি আমি হে?~রেগে গিয়ে~

প্রিয়তাও পাল্টা তেজ দেখিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-বিশ টাকা দামের মাত্র কয়েক ২টা চকোলেট দিয়ে খোঁটা দিচ্ছিস তাই না?তোকে বলেছিলাম আমার জন্য তেঁতুলের আচার আনতে।এনেছিলি তুই?

আকিল:-বললাম না খুঁজে পাই নি।এজন্য আনি নি।আচ্ছা যা কালকে নিয়ে আসবো।

প্রিয়তা:-আগে প্রমিজ কর।

আকিল:-ওকে প্রমিজ।

প্রিয়তা:-ঠিক আছে যা,এবারের মতো মাফ করে দিলাম।আশা করি আরেকবার আমার সাথে লাগতে আসলে দশবার চিন্তা করবি।হ্যা ফুফা যা বলছিলাম,আমাদের আকিল অনেক ভালো একটা ছেলে,সে কিছুই করে নি আমি এমনিতেই এসব বলছিলাম।

ওদের দুজনের খুনসুটি দেখে হেসে উঠলো সবাই।আকিল বেচারা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।একটুর জন্য তার গার্লফ্রেন্ডের খবর লিক করে নি প্রিয়তা।নয়তো সে যেই পাঁজি ও বিপজ্জনক মেয়ে,সারা এলাকার লোকজনকে বলে বেড়াতো যে আকিলের গার্লফ্রেন্ড আছে।

এদিকে সৌরভ বারবার আরচোখে প্রিয়তাকে লক্ষ্য করছে।সে তাকাতে চাইছে না তারপরও বেহায়া চোখ দুটো শুধু ওদিকেই যাচ্ছে।সৌরভ নিজের মনকে বারবার বুঝ দিচ্ছে যে এভাবে বেগানা কোনো মেয়ের চেহারা দেখাটাও পাপ।এটা ঠিক নয়।তাও মনটা যে কেন কথা শুনছে না জানে না সৌরভ।সে এর আগে কখনো কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকায় নি।এই চব্বিশ বছর জীবনে কোনো মেয়েকেই তার প্রিয়তার মতো এত ভালো লাগে নি।প্রিয়তা তো আহামরি সুন্দরী নয় তারপরও মনে হচ্ছে প্রিয়তার থেকে সুন্দরী কোনো মেয়ে যেন সে এর আগে কখনো দেখে নি।মনের মধ্যে একটা গান বাজছে শুধু তার।

“মায়াবি চোখে
চোখে চোখে চোখ পড়েছে।”

উফফ,অসহ্য অনুভূতি।

মিসেস মিনার কথা শুনে সৌরভ বাস্তবে ফিরে এলো।সৌরভকে লক্ষ্য করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস মিনা:-তা বাবা,লিপির ছবি তো দেখলি।কেমন লাগলো মেয়েটাকে?তোর কী ওকে পছন্দ হয়েছে বাবা?

সৌরভ প্রিয়তার দিকে একপলক তাকিয়ে মিসেস মিনাকে সোজাসাপটা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে দিলো;

সৌরভ:-না আম্মু,আমার পছন্দ হয় নি।

মিসেস মিনার চেহারা ফ্যাঁকাশে হয়ে গেল সৌরভের নাকোচ করা দেখে।মেয়েটাকে ওনার কাছে ভালো লেগেছিলো।মি.সালাম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন;

মি.সালাম:-সেকি রে!এত সুন্দর মেয়েকে তোর পছন্দ হয়নি?মেয়েটা দেখতে শুনতে তো বেশ ভালোই।

সৌরভ শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো;

সৌরভ:-তারপরও চাচ্চু।আমার মোটেও পছন্দ হয় নি।এত আল্ট্রা মডার্ন মেয়ে আমার কোনোকালেই পছন্দ না।এমন হলে আমি কানাডা থেকেই মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসতাম।

হৃদয়:-আচ্ছা ঠিক আছে।তোর পছন্দ যখন হয় নি তাহলে অন্য কোনো মেয়ে দেখা যাক।মেয়েদের তো আর আকাল পড়ে নি দুনিয়ায়।

মি.শফিক:-ঠিকই বলেছো।আমার ছেলের যখন পছন্দ হয় নি তখন এই টপিক বাদ।আর হ্যা বাবা,তোর কোনো পছন্দ থাকলে দ্বিধা করিস না।ঝটপট বলে দিস।বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তোর আব্বুর।

সৌরভ কিছু বললো না শুধু মৃদু হাসলো।

কিছুক্ষণ পর সৌরভের কথায় আবির আর আকিল একটা একটা করে সবগুলো লাগেজ নিয়ে এলো।এই মুহূর্তটা আসার সাথে সাথে প্রিয়তা উঠে দাঁড়ালো চলে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তানিয়া হাতে ধরে আটকে ফেললো তাকে,যেতে দিলো না।জোর করে আবার বসিয়ে দিলো। প্রিয়তা ভাবছে সে যতই তাদের আত্মীয় হোক না কেন,এই মোমেন্টটা একান্তই তাদের পরিবারের।এই মুহূর্তে প্রিয়তা তাদের জন্য বাইরের মানুষ।

প্রিয়তা অস্বস্তি বোধ করছে খুব।কারোদিকে তাকাচ্ছে না সে।ফোন হাতে করে নিয়ে আসায় ভালোই হলো,প্রিয়তা মনযোগ সব মোবাইলের ওপর ঢেলে দিলো।সৌরভ বহুকষ্টে প্রিয়তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে মন দিলো।

ট্যাগ দেখে নিয়ে আবিরের হাতে দুই টা লাগেজ ধরিয়ে দিলো সৌরভ।একটা আবিরের জন্য একটা তার হবু বউ সারার জন্য।আকিলকে একটা,তানিয়া এবং ডলির জন্য বড় একটা,বড়ভাই হৃদয় এবং তার স্ত্রীর জন্য একটা,মেঝোভাই আবিদ ও তার স্ত্রীকে একটা,বাবা মায়ের একটা,চাচা চাচীর একটা ও ভাতিজা ভাতিজি দুজনের জন্য মাঝারি আকারের একটা লাগেজ না খুলেই বিতরণ করলো সৌরভ।দেশে আসার আগে প্রচুর কেনাকাটা করেছে সে।কোনোকিছু কিনতে বাদ যায় নি।এক্সট্রা যে দুইটা লাগেজ ছিলো একমাত্র সেগুলো খুললো সে।

পিচ্চি দুইটার জন্য দুটো আইপ্যাড,আকিল,ডলি ও তানিয়ার জন্য তিনটা আইফোনও এনেছে সৌরভ।তাদেরকে সেগুলো দিলো।গিফট পেয়ে সবাই খুশি।সবাইকে একবক্স করে চকোলেট দিলো সৌরভ।প্রিয়তাও বাদ গেলো না।সবাইকে একটা করে ফেস টাওয়েল,শাওয়ার জেল,সাবান ও শ্যাম্পু একটা করে দেয়া হলো।আত্মীয় স্বজনদের জন্যও এখান থেকে বেশ কিছু জিনিস রাখা হয়েছে।

সবাইকে সবকিছু দেয়া হলেও শুধুমাত্র প্রিয়তাকে একটা চকোলেট বক্স,টাওয়েল,শ্যাম্পু,শাওয়ার জেল ও সাবান ছাড়া আর কিছুই দেয়া হয় নি।তাই সৌরভ বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।ফিরে এলো মিনিট দশেক পরই,হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে।সোজা প্রিয়তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাগটা তার কোলের উপর রাখলো।প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনিতে সৌরভের দিকে তাকালো।সৌরভ প্রাণখোলা চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললো;

সৌরভ:-এখানে কিছু কাপড় চোপড়,বোরকা,হিজাব ও মেকআপ বক্স এবং জুতা আছে তোমার জন্য।

প্রিয়তা অবাক হলো ভীষণ সৌরভের কাজ দেখে।মনে মনে খুশিও হলো খুব।তার কথা তো এটলিস্ট মনে আছে সৌরভের।ঝলমলে একটা হাসি উপহার দিলো প্রিয়তা সৌরভের দিকে তাকিয়ে।প্রিয়তার হাসির ওপর চোখ আটকে রইলো তার।এতসুন্দর হাসির জন্য যেন জীবনটাও দিয়ে দেয়া যায়।সাংঘাতিক হাসি মেয়েটার।একদম মন কেঁড়ে নেয়ার মতো ক্ষমতা আছে এই হাসিতে।যা গভীর ভাবে দাগ কেটে গেল সৌরভের হৃদয়ে।

প্রিয়তা:-থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।আমার কথা যে আপনার মনে ছিলো এটাই অনেক।

সৌরভ:-মেনশন নট।~মুচকি হেসে~

প্রিয়তার জন্য সৌরভ কিছুই আনে নি কানাডা থেকে।প্রিয়তা নামের যে কেউ ছিলো তা সে ভুলতে বসেছিলো।প্রিয়তা যে এত বড় হয়ে গেছে তাও সে জানতো না।দেখেছে তো সেই পিচ্চিকালে।প্রিয়তাকে দেয়া জিনিসগুলো সব সৌরভের হবু বউয়ের জন্য আনা ছিলো।কিন্তু প্রিয়তার জন্য কিছু আনে নি দেখে সেখান থেকে এগুলো দিয়ে দিলো প্রিয়তাকে।শুধুমাত্র প্রিয়তার হাসিমুখটা দেখবে বলে।কেন এমন করলো তা সে নিজেও জানে না।পুরোপুরি সম্মোহিত হয়ে গেছে সে প্রিয়তার প্রতি।

সবাই খুশি হলো সৌরভের কাজ দেখে।সবাই আবার আড্ডায় মশগুল হয়ে গেল।এবার প্রিয়তা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে।মানুষের সকল কিছুতে খুঁত ধরা প্রিয়তার একটা বাজে অভ্যাস।কিন্তু আজ সৌরভের খুঁত ধরতে সে ব্যর্থ।ছেলেটা যেমন সুদর্শন সুপুরুষ,তেমনি ভালো ও খোলা মনের অধিকারী।পৌরুষদীপ্ত উজ্জ্বল চেহারায় কেমন একটা আলাদা মায়া জড়িয়ে আছে।চোখেমুখে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার ছাপ স্পষ্ট।তাকে দেখলেই আলাদা একটা শ্রদ্ধা জাগে মনে।দেহের গড়ন বলিষ্ঠ এবং লম্বা চওড়ায় ফিটফাট।চেহারায় সম্ভ্রান্ত ও গাম্ভীর্যতার ভাব।দেখলেই বোঝা যায় যে চ্যাংড়া পোলাপাইন নয়,সত্যিকার অর্থে পুরুষ।কেন জানি প্রিয়তারও ভীষণ ভালো লেগে গেল সৌরভকে একলহমায়।

সবাই মিলে আনন্দ ফুর্তির সহিত রাতের ডিনার সেড়ে নিলো।তারপর আরও কিছুক্ষণ গল্প গুজব শেষে যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে।

প্রিয়তার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে আছে।তাই সে বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে গেল।শুধু ঘুমাতে পারলো না সৌরভ।প্রিয়তার হাসি,তার কাজল মাখা চোখ জোড়া সৌরভের রাতের ঘুম হারাম করে নিয়েছে।বারবার প্রিয়তার হাসিখুশি চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠছে তার।ওই কাজল রাঙা চোখ দুটি কী যে জাদু করেছে সৌরভকে তা সে বুঝতে পারছে না।

সৌরভ বিয়ে বহির্ভূত প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী নয়।সে বিয়ের পরবর্তী প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করে।সে হয়তো পুরোপুরি রূপে একজন খাঁটি ইমানদার হয়ে ওঠে নি তারপরও ইসলামের সব আদেশ নিষেধ মানার চেষ্টা করে।তেমনি সে বুঝতে পারে যে বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা হারাম কাজ।এসব করা ঠিক নয়।তাই তো প্রেম করা হয়ে ওঠে নি এত বছরেও।তার ইচ্ছা যাকে ভালো লাগবে তাকেই ডিরেক্ট বিয়ে করে নিবে।এখন ভালো তো একজনকেই লেগেছে।তবে কী তাকেই বিয়ে করে নিবে?

এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সৌরভ।মাথা ধরেছে তার।সারাদিনের ক্লান্তি এখন জেঁকে ধরেছে তাকে।তাই ফোনে ফজরের ওয়াক্তের জন্য এলার্ম সেট করে ঘুমিয়ে গেল সে।প্রিয়তাকে নিয়ে রাতে স্বপ্নও দেখলো সে।সে এক মধুর স্বপ্ন।যা শুধু স্বপ্নতেই সুন্দর।

প্রায় সাড়ে চারটায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো সৌরভের।চারিদিকে ফজরের আযানের মধুর ধ্বনি ভেসে আসছে।সৌরভ ঘুম থেকে ওঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলো।তারপর আবারও বিছানায় গিয়ে ঠাস করে ঘুমিয়ে পড়লো।ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটে নি তার।

সৌরভ অনেক ভালো একটা ছেলে।তার মধ্যে অনেক ভালো গুণ নিহিত।সে অনেক সুন্দর কোরআন তেলাওয়াত করতে পারে।ছোটবেলার সেই ভালো অভ্যাসগুলো এখনও রয়ে গেছে তার মধ্যে।কানাডায় গিয়েও নামাজ কালাম ছাড়ে নি।মদ খাওয়া ও পার্টি থেকে নিজেকে দূরে রাখতো সবসময়।সেখানে দুয়েকজন ইসলামিক স্কলারের সাথে তার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো।মাঝেমধ্যে সেখানকার মসজিদে শখের বশে ও ইমামের অনুপস্থিতিতে নিজেও ইমামতি করেছে।অনেক ভালো ভালো রেকর্ড আছে তার।আজ পর্যন্ত একটাও খারাপ বা বাজে স্বভাবের ধারেকাছেও যেতে দেখে নি কেউ তাকে।সে ছোটবেলা থেকেই ও এরকম।তাই তো পরিবারের ও আত্মীয় স্বজন সবার মধ্যে তার কদর অনেক বেশি।এলাকায়ও একজন ভালো ও আদর্শ ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলো।আরও অনেক গুণ রয়েছে তার মধ্যে তা আস্তে আস্তে প্রকাশ পাবে।

প্রায় সকাল সাড়ে দশটায় সৌরভের ঘুম ভেঙে গেল।শরীরের আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে লাগেজ থেকে নতুন কাপড় চোপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল সে।একদম শাওয়ার নিয়ে তবে বেরিয়ে এলো।টাওয়েল দিয়ে চুল ভালো করে মুছে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে চুলে জেল লাগালো সে।হাতে পায়ে লোশন ও মুখে জেন্টস ক্রিম মেখে শরীরে পারফিউম লাগিয়ে জুতা পড়ে হাতে ঘড়ি লাগিয়ে একদম ফিটফাট হয়ে নিচে নেমে এলো সে।

নাশতা করা শেষে সৌরভ আবিরের সাথে বাইরে যাবে বাইক,সিম ও টুকটাক প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে।

ডাইনিং টেবিলে শুধু আবির,আকিল ও ডলি বসে নাস্তা করছে।মহিলারা রান্নাঘরে ও বাকিরা যে যার কাজে চলে গেছে।তানিয়া আর প্রিয়তা সাতসকালে নাশতা করে লেনে হাঁটতে গিয়েছিলো,এই ঘন্টাখানেক আগে বাসায় এসে নিজেদের রুমে গেছে।

সৌরভ ওদের সাথে বসে খোশগল্প করে করে নাশতা করতে লাগলো।আহ,নিজেদের বাড়ির খাবার এবং মায়ের হাতের রান্নার স্বাদই আলাদা।তৃপ্তিসহকারে খাবার খাচ্ছে সে।আলুর পরোটা ও কষা গরুর মাংস।সাথে আছে আলুভাজি।গরম গরম ধোঁয়া ওঠা দুধ চা।উফফ,,ভীষণ সুস্বাদু।

আজকে বিকেলের দিকে তাদের বাসায় মেহমান আসবে।সৌরভের ছোট ফুফু ও ওনার পরিবারের লোকেরা।সৌরভ দেশে এসেছে বিধায় সেই উপলক্ষেই উনাদের আসা।

সৌরভ নাশতা করা শেষে আবারও নিজের রুমে ফিরে এলো।ফোন নিতে ভুলে গেছে তাই।রুম থেকে ফোন নিয়ে তানিয়ার রুমে গেল সে।তানিয়ার রুমের কাছে আসতেই স্পিকারে গানের সাউন্ড পেল।দরজা হাট করে খোলা।রুমের দরজায় প্রথমে নক করলো সৌরভ।কিন্তু স্পিকারের সাউন্ডের ফলে তানিয়া বা প্রিয়তা দুজনের কেউই শুনলো না।তাই সৌরভ তাদের সারা না পেয়ে রুমে ঢুকে গেল।এমন সময় প্রিয়তা তিড়িং বিড়িং করে গানের তালে তালে লাফাতে লাফাতে পড়বি তো পড় গিয়ে সৌরভের গায়ের ওপর।

সৌরভ যদি এখন না ধরতো তাহলে টেবিলের কোণার সাথে লেগে মাটিতে পড়ে নির্ঘাত কোমড় ভেঙে হাড্ডি দু টুকরো হতো প্রিয়তার।ডান্স এর ড ও চেনে না,হুদাই লাফালাফি করে।ওর এমন ডান্স করা দেখলে লোকে ওকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাববে না।তানিয়া তো ওর নাচ দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি করছিলো।কিন্তু এমনসময় সৌরভকে দেখতে পেয়ে তানিয়া জলদি করে স্পিকার বক্স অফ করে দিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো।

সৌরভ প্রিয়তাকে আগলে ধরে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তা পড়ে যাচ্ছিলো ভেবে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।কয়েক মুহূর্ত পরে যখন বুঝতে পারলো যে সে পড়ে নি,কেউ তাকে ধরে রেখেছে তখন সে ঠাস করে চোখ খুললো।সৌরভের চেহারা নজরে আসতেই প্রিয়তার আত্মরাম খাঁচা ছাড়া হয়ে গেল যেন ভয়ে আর লজ্জায়।এই একটু আগে গায়ের থেকে ওড়না খুলে ঢিল মেরে তানিয়ার ওপর ছুঁড়ে ফেলেছে প্রিয়তা।ওর শরীরে ওড়না নেই কথাটা মাথায় আসতেই ঝট করে সৌরভের হাত থেকে নিজেকে ছুটিয়ে দ্রুত তানিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওড়না নিয়ে নিজেকে ভালো করে আবৃত করে নিলো প্রিয়তা।

সৌরভ এতক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো।যতই মেয়েটাকে ভালো লাগুক না কেন,তাই বলে এভাবে একজন পরনারীর দিকে সে বেহায়ার দৃষ্টিতে তাকাতে পারে না।তাও মেয়েটা ওড়না ছাড়া ছিলো।সৌরভ খুবই ইতস্তত বোধ করছিলো।সে এভাবে ঢুকে পড়ায় যে প্রিয়তা অস্বস্তি বোধ করছে তাও বুঝতে পারলো সে।প্রিয়তার দিকে একপলক তাকিয়ে তানিয়ার দিকে তাকালো সৌরভ।তানিয়া গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল;

তানিয়া:-ইয়ে ভাইয়া কিছু বলতে চাও তুমি?মানে কোনো দরকার?

সৌরভ আমতা আমতা করে জবাব দিলো;

সৌরভ:-একচুয়ালি,,আ’ম সরি!নক করেছিলাম বাট তোমরা কেউ শুনো নি।

তানিয়া:-আরে নাহ ভাইয়া,সরি বলছো কেন?ইট’স ওকে।

প্রিয়তা লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সৌরভের দিকে।দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো সে লজ্জায় নত হয়ে।
#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৪

প্রিয়তাকে আরচোখে একবার লক্ষ্য করে সৌরভ তানিয়াকে বললো;

সৌরভ:-আমি কাজে বাহিরে যাচ্ছি।আসার সময় তোমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসবো কীনা সেটাই জানতে এসেছিলাম।

তানিয়া:-উম,আমার জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে নাচোস আর ফালুদা নিয়ে এসো ভাইয়া।তাহলেই হবে।

সৌরভ:-আচ্ছা।আর প্রিয়,তোমার জন্য কী আনবো?

সৌরভের মিষ্টি কন্ঠে প্রিয় ডাক শুনে প্রিয়তার শরীরের লোম খাঁড়া হয়ে গেছে।এত সুন্দর ভাবে কেউ নাম ধরে ডাকতে পারে তা কল্পনাতীত ছিলো তার কাছে।মনে এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেল যেন প্রিয়তার শরীর জুড়ে।আজ মনে হচ্ছে তার এই নামটা ভীষণ সুন্দর।নইলে এত আদুরে ডাকটা কখনো শুনতে পারতো না সে।প্রিয়তা কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে নিচু স্বরে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-নাহ ভাইয়া আমার কিছু লাগবে না।

সৌরভ প্রিয়তাকে অভয় দিলেও প্রিয়তা লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না।সৌরভও আর তাকে বিব্রত না করে চলে গেল।

সৌরভ চলে যেতেই প্রিয়তা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো সে।এই শীতের সময়ই সে ঘেমে গেছে একদম।সৌরভকে দেখলে মনে অজানা এক অনুভূতি জেঁকে ধরে যেন।যেটা আগে কখনো হয় নি।এ অনুভূতির নাম কী জানা নেই প্রিয়তার।

প্রিয়তার পাশে তানিয়া বসে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল;

তানিয়া:-তোর হয়েছেটা কী রে?হঠাৎ এরকম আজব আচরণ করছিস কেন?

প্রিয়তা সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে পানির বোতল নিয়ে ছিপি খুলে ঢকঢক করে কয়েক ঢোক পানি পান করলো।তারপর শান্ত হয়ে বসে বললো;

প্রিয়তা:-আমি জানি না আপু।

তানিয়া:-তুই জানিসটাই বা কী?তুই তো এক চিজ,দুনিয়াতে একপিসই আছিস!তোর কখন কী হয় তা বলা দুষ্কর।

প্রিয়তা নিজেকে সামলে নিয়ে আগের রূপে ফিরে এলো।তারপর তানিয়ার টেবিলের ওপর রাখা চকোলেট গুলো ঝাপটা মেরে নিয়ে ভোঁ দৌড় দিলো।তানিয়া হতবিহ্বল হয়ে তাকালো প্রিয়তার দৌড় দেয়ার পানে।যখন বুঝতে পারলো যে তার চকোলেট সব গায়েব তখনই চিৎকার করে বলে ওঠলো সে;

তানিয়া:-প্রিয়ুর বাচ্চাআআআ,আমার চকোলেট দিয়ে দে,আজকে তোকে একবার ধরতে পারলে কিলিয়ে ভর্তা করবো আমি।

প্রিয়তাকে আর পায় কে!সে তো এই মুহুর্তে এই এরিয়া থেকেই ভেগে গেছে।তার টিকিটির নাগাল পাওয়াও বর্তমানে দুষ্কর।

প্রিয়তা উঠোনের দোলনায় বসে বসে আরামসে চকোলেট খাচ্ছে।সৌরভ তাকে যে চকোলেটের বক্স দিয়েছে সেটা সে লুকিয়ে রেখেছে পরে খাবে বলে।এমনসময় সামনের বাসার দুতলার বারান্দা থেকে একটা ইয়াং ছেলে প্রিয়তার উদ্দেশ্যে সিটি বাজাতে শুরু করলো।প্রিয়তা ভ্রু কুচকে সামনে তাকাতেই হ্যাংলা মার্কা ছেলেটাকে দেখতে পেল।প্রিয়তা তাকাতেই ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠে।প্রিয়তার কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়।ছেলেটা হাই দিলো এবার।প্রিয়তা জোরে বলে উঠলো;

প্রিয়তা:-ওহে বালক,বানরের মতো এভাবে দাঁত কেলিয়ে কাকে ইমপ্রেস করার ট্রাই করছো?

প্রিয়তার কথা শুনে ছেলেটার মুখের হাসি মুছে গেল।সে ভাবে নি প্রিয়তা তাকে এমন কিছু বলবে!তারপরও ছেলেটা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে ইশারা করে কানে হাত ঠেকিয়ে ফোন নাম্বার চাওয়ার অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করলো।প্রিয়তা সব বুঝেও না বোঝার ভান করে জোরে জোরে বলে উঠে;

প্রিয়তা:-ওহহো,তুমি কানে কালা,অর্থাৎ বয়রা,কিছু শুনো না?আহারে,বেচারা!সো সেড!~জিহ্বা দিয়ে চুকচুক আওয়াজ করে~

প্রিয়তার বলা এমন কথা শুনে এবার ছেলেটা মারাত্মক লজ্জা পেল।ছেলেটার পাশে আরও একটা ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে এবার।অপর ছেলেটা ওই হাবার ইশারা আর প্রিয়তার বলা কথা দুটোই প্রত্যক্ষ করলো।সে এসব দেখে হাসতে হাসতে ফ্লোরে পড়ে গেছে।ছেলেটা জোরে কথাও বলতে পারছে না পাছে যদি তার মা শুনে ফেলে এজন্য।সে এবার প্রিয়তাকে ফোন নাম্বার চাওয়ার জন্য দুই আঙ্গুল দিয়ে কান দেখিয়ে ইশারায় হাতে লেখার অঙ্গভঙ্গি করলো।প্রিয়তা এবারও বুঝতে পারলো কিন্তু না বোঝার ভান করে ছেলেটাকে হেনস্তা করার জন্য বললো;

প্রিয়তা:-কী?তুমি ডাক্তারের কাছে যাবে কানের ডাক্তার দেখাতে!টাকা নেই?আচ্ছা ঠিক আছে।আমি ফুফাকে বলে দেবো তোমাকে টাকা দেয়ার কথা,আমি আবার দান খয়রাত করতে পছন্দ করি।ধন্যবাদ দিতে হবে না।আমি এমনিতেই টাকা দান করবো।

ছেলেটা এবার হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে পড়লো মাথায় হাত দিয়ে।অন্য ছেলেটা ওকে হেনস্তা হতে দেখে হাসতে হাসতে পেশাব করে দেয়ার মতো অবস্থা।ওরা দুজনেই বেশ বুঝতে পারলো যে মেয়েটি ফাজিলের একসের।কথায় কথায় কীভাবে বেইজ্জতি করে ধুয়ে দিলো বেচারাকে।

প্রিয়তা নিজেই হাসতে হাসতে বাসার ভেতরে চলে গেল।এই ছেলেটা সে আসার পর থেকে খালি তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে,বেহায়ার ন্যায় চেয়ে থাকে।তাই আজকে সুযোগ বুঝে একবারে টাইট দিয়ে দিলো।শরম থাকলে আর কখনো বান্দরের মতো দাঁত কেলাবে না।

সৌরভ ও আবির প্রায় দুপুর ও বিকেলের মধ্যভাগে বাসায় এলো।সৌরভ নতুন বাইক কিনেছে একটা।আর ওয়ান ফাইভ।ফুল ব্ল্যাক কালারের।ভীষণ সুন্দর দেখতে।ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনও করে এসেছে।বাসায় ঢুকে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলো সে।একটু টায়ার্ড লাগছে তার।মিসেস মিনা আমের জুস দুই গ্লাস একটা ট্রে তে করে নিয়ে এলেন।আবির বাইকটা গ্যারেজে রেখে অতঃপর বাসায় ঢুকে সৌরভের পাশে এসে বসলো।ট্রে থেকে দুই ভাই দুই গ্লাস নিয়ে জুস খেতে লাগে।মিসেস মিনা জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস মিনা:-বাবা,দুপুরের খাবার খেয়েছিস তোরা?

সৌরভ গ্লাসের জুস টুকু শেষ করে জবাব দিলো;

সৌরভ:-না আম্মু।কাজটাজ সব সেড়ে সোজা বাসায় এসেছি।রেস্টুরেন্টে আবির গিয়ে ডলি ও তানিয়ার জন্য নাচোস,বার্গার আর ফালুদা নিয়ে এসেছে।আর প্রিয়র জন্য কয়েক প্যাকেট আচার।আমি তোমার হাতের রান্না খাবো বলে ইচ্ছে করেই বাইরে খাইনি।

মিসেস মিনা:-আহারে,তাহলে যা বাবা গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আয়।আমি তোদের জন্য খাবার বাড়ি।

আবির:-ওকে চাচি,তুমি সব রেডি করো।আমরা আসছি।তানিয়া আর ডলির জন্য আনা খাবার গুলো আমি দিয়ে আসি।আর তুই প্রিয়তার আচারগুলো দিয়ে আয়।

সৌরভ মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে বললো;

সৌরভ:-ওকে।

এই বলে দুই ভাই ওঠে দাঁড়ালো বসা থেকে।ডাইনিং পেরিয়ে তারপর রুমে যেতে হয়।সৌরভ ডাইনিং রুমে ঢুকেই দেখতে পেল একটা মেয়ে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানি পান করছে।মেয়েটা আর কেউ নয় প্রিয়তাই এবং সৌরভ তাকে চিনতে পারলো।

প্রিয়তা সদ্য গোসল করে নিচে এসেছে।তাই চুল ছেড়ে রাখা।সৌরভের চলার গতি শ্লথ হওয়ায় পেছন থেকে আবির আগে আগে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেল।মিসেস মিনাও রান্নাঘরে চলে গেলেন।নিচে আপাতত এই তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই।সৌরভ প্রিয়তার লম্বা চুল কয়েক মুহূর্ত মুগ্ধ হয়ে দেখে তারপর সম্বিৎ ফিরে পেতেই নিজের দৃষ্টি সংযত করে নিলো।গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের উপস্থিতির জানান দিলো যেন।প্রিয়তা চমকে পিছন ফিরে তাকালো।সৌরভকে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে মাথায় ওড়না দিলো সে।সৌরভ মৃদু হেসে বললো;

সৌরভ:-দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নেই।আমাদের মহানবী (সাঃ) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।তাই সবসময় একটা জায়গায় বসে পানি পান করা উচিৎ।

সৌরভের কথা শুনে প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে গেল।আসলে এই হাদিস সেও জানে কিন্তু পালন করতে মনে থাকে না তার।পানির তৃষ্ণা পেলে দাঁড়িয়েই খেয়ে নেয়,খাওয়ার পর তার মনে পড়ে যে এই কাজটা করা ঠিক নয়।

সৌরভের কথার প্রতিত্তোরে প্রিয়তা আমতা আমতা করে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-ইয়ে,মানে,আসলে আমার এই কথাটা কেন জানি মনে থাকে না।

সৌরভ একটু এগিয়ে এসে বললো;

সৌরভ:-মনে রাখতে হবে।এত মনভোলা হলে চলবে না কিন্তু।নবীর সুন্নাত অনুসরণ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ।বুঝতে পেরেছো?

প্রিয়তা:-জী বুঝতে পেরেছি।(নতমুখে)

সৌরভ এবার আরও এগিয়ে এসে একটা মাঝারি আকারের প্যাকেট প্রিয়তার সামনে রাখে।প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালে সৌরভ সহাস্যে জবাব দেয়;

সৌরভ:-কয়েক রকমের আচার নিয়েছিলাম তোমার জন্য।আমি তো জানি না তুমি কোন আচার গুলো খাও তাই আবির যেগুলো বললো সেগুলো নিয়ে এসেছি।

আচার পেয়ে প্রিয়তা যারপরনাই বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছে।আনন্দের ঠেলায় মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না তার।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোনোমতে উচ্চারণ করলো সে;

প্রিয়তা:-থ্যাংকিউ ভাইয়া,থ্যাংকিউ সো মাচ।

এই বলে প্রিয়তা একদৌড়ে তানিয়ার রুমে চলে গেল।সৌরভ হা হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে।তারপর আনমনে হেসে উঠলো।মেয়েটা আসলেই বাচ্চা গোছের।

প্রিয়তা আচার দেখলেই খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়।একবার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে।সেখানে এক প্রেগন্যান্ট মহিলা ছিল।তো মহিলাটির জন্য অনেক আচার বানিয়ে ও কিনে রাখা হয়েছিলো।কিন্তু প্রিয়তা সেখানে বেড়াতে গিয়ে আচার দেখতে পেয়ে তার আর হুশ ছিলো না।মাত্র দুই দিন থেকে তাদের অর্ধেক আচার সাবাড় করে বাসায় এসেছে সে।বেশি আচার খায় দেখে মায়ের বকুনি,ভাইয়ের হাতে কেলানিও অনেক খেতে হয়েছে।কিন্তু তাও আচার খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে পারে নি আজতক।আর না কখনো ছাড়তে পারবে।এই তো এখন যে আচার গুলো পেয়েছে সেগুলো কালকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।ডেঞ্জারাস আচারখোর।

সন্ধ্যার একটু আগে সৌরভদের ফুপ্পি ওনার ফ্যামিলি সমেত এসে হাজির।সারা ড্রয়িং রুম জুড়ে মেহমানরা গিজগিজ করছে।মিসেস মিনা,মিসেস শিলা ওনাদের পুত্রবধূদের নিয়ে সমানতালে খাতিরযত্নে ব্যস্ত।

সবার মধ্যমণি হয়ে বসে আছে সৌরভ।সৌরভের ফুপ্পি মিসেস জেসমিন সৌরভের পাশ থেকে ওঠছেনই না।সৌরভকে ওনি অনেক আদর করেন সকল ভাতিজা ভাতিজিদের মধ্যে।সৌরভও হাসিমুখে তাদের সাথে আলাপ করছে।প্রিয়তা দূর থেকে শুধু সৌরভকেই লক্ষ্য করছে।একদম আড়ালে থেকে।কেন জানি এই ছেলেটাকে প্রচুর ভালো লেগে গেছে তার।দেখতে যেমন কিউট,আচার আচরণও তেমন কিউট।

প্রিয়তার সব থেকে বেশি ভালো লাগছে এটা দেখে যে সৌরভ তার ফুপাতো বোন জুইকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না।জুই বারবার এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে,অকারণে ইমপ্রেস করার জন্য হাসছে,কালার করা চুলগুলো অকারণে নাড়ছে।এসব মোটেও দেখছে না সৌরভ।সে তারমতো ফুপাতো ভাইয়ের সাথে কী একটা প্রসঙ্গে কথা বলছে।সৌরভের কাছ থেকে তেমন একটা পাত্তা না পেয়ে জুই একটু হতাশ হলো।

আজকে থেকে বিয়ে ও ওয়ালিমা পর্যন্ত ওনারা সবাই এখানেই থাকবেন।একদম আটঘাট বেঁধে এসেছে সবাই।কালকে কনে পক্ষের বাড়িতে সবাই যাবে দাওয়াত খেতে।দাওয়াতটা মূলত সৌরভ দেশে আসার উপলক্ষেই।আবিরের সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে মূলত মিসেস মিনার মামাতো ভাইয়ের মেয়ে।সেই সূত্রে ওরা সৌরভের অতি পরিচিত।

সারারাত কাজিন সমাবেশের মধ্যে চললো সমানতালে আড্ডা ফুর্তি।প্রিয়তাও ছিল তাদের সাথে।প্রিয়তা সাধারণ হলেও একটু আধুনিক টাইপের মেয়ে।যেমন মাথায় তেমন ওড়না থাকে না।বোরকা হিজাব মাঝেমধ্যে পড়ে,কিন্তু সবসময় পড়ে না।এরকম টাইপ।কিন্তু সৌরভকে দেখার পর থেকে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনার চেষ্টায় ব্যস্ত সে।যেমন সবসময় মাথায় কাপড় রাখার চেষ্টা করছে অনবরত।কিন্তু ভুল হয়ে যায় মাঝেমধ্যে।এখন আড্ডার মধ্যেও ওর মাথায় কাপড় আছে।শুধু সে না,ডলি আর তানিয়াও ভদ্র মেয়ের মতো মাথা ঢেকে রেখেছে ওড়না দ্বারা।

সৌরভের ফুপাতো ভাই তুর্য সৌরভেরই সমবয়সী প্রায়।একবছরের ছোট।সে সৌরভকে জিজ্ঞেস করল;

তুর্য:-কী রে ভাই!বিদেশ গিয়ে তো পুরাই চেঞ্জ হয়ে গেছিস?তোর গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি রে?

সৌরভ আরচোখে একবার প্রিয়তাকে দেখে নিয়ে সহাস্য বদনে জবাব দিলো;

সৌরভ:-গার্লফ্রেন্ড নেই আমার।আমি ওসব হারাম রিলেশন পছন্দ করি না।তবে একজনকে বেশ পছন্দ হয়েছে।তাকে পুরোপুরি ভাবে টেস্ট করে যদি দেখি আমার মনমতো সে তবে বিয়ে কনফার্ম।এবং এই মাসেই বিয়ে হবে।

সৌরভের কথা শুনে সবার চক্ষু চড়কগাছ।কেউ কল্পনাও করে নি যে সৌরভের কোনো পছন্দ থাকতে পারে।জুইয়ের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এই কথা শুনে।প্রিয়তারও হালকা একটু মন খারাপ হয়েছে।তবে অত সিরিয়াস নয় সে।ভালো লাগা আর ভালোবাসায় আকাশ পাতাল তফাৎ।

আবির:-আরে বাহ,তলে তলে এতদূর আর আমরা কিছু জানিই না।কে সেই ভাগ্যবতী মেয়ে?যার ভাগ্যে আমাদের পরিবারের আদর্শ ছেলেটা লেখা আছে?

সৌরভ:-সময় হোক,আমি নিজেই সবাইকে জানাবো।

এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে সবাই এবার অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল।বিয়েতে কী কেনাকাটা করবে,কোন মার্কেটে কাপড় ভালো হবে,বিয়ের তথ্য কী কী কিনতে হবে সেসব নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা চললো।অতঃপর সাড়ে এগারোটায় রাতের খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে।আকিলের রুমে তুর্য,ডলির রুমে জুই ও জুইয়ের ছোটবোন পান্না এবং নিচের একটা গেস্টরুমে ওদের মা-বাবা থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সৌরভ আজকেও প্রিয়তার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েছে।এবং প্রিয়তাও আজকে সৌরভের কথা চিন্তা করেছে ঘুমানোর পূর্বে।দুই প্রান্তে দুইজন মানুষ একে অপরের কথা মনে করে করে রাতটা পার করতে ব্যস্ত।অথচ কেউ জানে না কারও মনের খবর।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here