তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব -০১+২

সিলেট ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে স্পর্শ করলো ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের চাকা। মাটি স্পর্শ করেই ছুটতে শুরু করলো বিমানটি সামনের দিকে।

এতক্ষণ সিটবেল্ট বাধা অবস্থায় সিটে বসে বিমানের গোল জানালাটির দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্যটা দেখছিলো সৌরভ।প্লেন থামতেই হুঁশ ফিরলো তার।প্লেনের ভেতর সব যাত্রীদের কোলাহল ছাপিয়ে স্পিকারে শোনা গেল একজন স্টুয়ার্ডেসের গলা।সবাইকে শৃঙ্খলা বজায় রেখে লাইন ধরে নামতে অনুরোধ করছে।

স্টুয়ার্ডেসের কথা শুনে সৌরভ সিটবেল্ট খুললো। চাপা উত্তেজনায় ধুরুধুরু কাঁপছে তার বুক।আজ দীর্ঘ ৬ টা বছর পর কানাডা থেকে দেশে ফিরলো সৌরভ।কতটা দিন সে তার মা-বাবা,ভাই-বোনকে দেখে নি সামনাসামনি।মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না ভীষণ মিস করে সে।

আজ তার এতদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটলো। অবশেষে সে তার সেই চিরচেনা মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছে।আর কয়েক মুহূর্ত পর সে তার পরিচিত মুখগুলো দেখতে পাবে,সেই খুশিতে মনে মনে টগবগ করে ফুটছে সৌরভ।সৌরভের পাশে বসা মেয়েটির নাম জেসিয়া!সিটবেল্ট খুলতে খুলতে সৌরভকে লক্ষ করে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললো ;

জেসিয়া:-খুব Excited মনে হচ্ছে তোমায় দেখে?

মেয়েটির দিকে একবার তাকালো সৌরভ প্রশ্নটা শুনে।মেয়েটির কথা শুনতেও এখন সৌরভের বিরক্ত লাগছে।লাগারই কথা!সেই সুদূর কানাডা থেকে এখন পর্যন্ত মেয়েটি শুধু বাচালের মতো ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই আছে।শুনতে শুনতে কান একদম ঝালাপালা হয়ে গেছে সৌরভের।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে শরীরের জড়তা কাটিয়ে ভদ্রতার খাতিরে দায়সারা একটা জবাব দিলো সৌরভ।স্বপ্নীল হয়ে আছে তার চোখদ্বয়।

সৌরভঃ-Yes,i’m excited for this moment,যখন আমি আমার আব্বু, আম্মু, ভাইবোন সবাইকে দেখতে পাবো!

কথাটা শুনে জেসিয়া সৌরভের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।এটা যে সৌরভকে Impress করার চেষ্টামাত্র তা সৌরভ অনেক আগেই বুঝে গেছে।
মেয়েটাকে সুন্দরী বলা চলে,কিন্তু ন্যাচারাল বিউটি যেটাকে বলে সেটা নয়,ময়দা সুন্দরী!সৌরভের মতে,মেয়েটা মুখে এত পরিমাণ আটা-ময়দা লাগিয়েছে যে ওর আসল ফেস টা কীরকম সেটা বুঝার কোনো কুদরতই নেই।এমনকি চোখেও নীলরঙা লেন্স লাগিয়েছে।চুল তো নয় যেন পাটের সোনালি আঁশ।একটা জিন্স আর সাদা গেঞ্জি পরনে ওর।এই মোটা শরীরে এমন ড্রেসআপে মেয়েটাকে বিদঘুটে দেখাচ্ছে।কিন্তু জেসিয়া নামক মেয়েটা নিজেকে বিশ্বসুন্দরী ভাবে।চেহারায় কেমন একটা দাম্ভিক ভাব বিদ্যমান।

যাইহোক,মেয়েটা প্লেনে ওঠার পর থেকে সৌরভের পিছনে পড়ে আছে।সৌরভকে Impress করার জন্য নানা চেষ্টা চালাচ্ছে সে।অবশ্য তাকে দোষ দিয়েও লাভ নেই।সৌরভ সত্যিই খুব সুদর্শন একটা ছেলে।এতটাই সুদর্শন যে,যেকোনো মেয়েই তাকে দেখে ফিদা হতে বাধ্য।তার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের।সাধারণত বেশিরভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রে চোখ হরিণী চোখের মতো টানা টানা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সৌরভের আঁখিদ্বয় টানা টানা হরিণী চক্ষুর মতো৷চোখের পাপড়ি ঘন ও কুচকুচে কালো আর লম্বা লম্বা,দেখলে মনে হয় মাশকারা লাগিয়েছে।এই চোখদ্বয়ের জন্য আরও বেশি এট্রাকটিভ লাগে তাকে দেখতে।সেই সাথে আছে জোড় ভ্রু যোগল।

ঘন চাপদাড়িতে তাকে অসম্ভব সুন্দর দেখায়।মাথায় ঘন কালো ঝাঁকড়া চুল, উহুম কোঁকড়ানো নয়,একদম স্ট্রেইট স্পাইক করা।তার ঠোঁট জোড়া এত গোলাপি ও নয় আবার এত লাল ও নয় অন্যান্য সাধারণ ছেলেদের মতো দেখতে৷সৌরভ মোটেই জিম করে না তবে রেগুলার ব্যায়াম করে আর এজন্যই ওর বডি একদম ফিটফাট টাইপের।শুকনোও নয় আবার মোটাও নয়।৮০ কেজি ওজন ও ৬ ফুট উচ্চতা তার।ওর মুখের গড়ন ভীষণ মায়াবি।সে যখন কারো দিকে তাকায় তখন যে কেউ দেখলেই বলবে,কী ইনোসেন্ট একটা ছেলে আর কী ইনোসেন্ট তার ভাবভঙ্গি!
বেচারি জেসিয়াও ক্রাশ খেয়েছে তার ইনোসেন্ট লুক এ।

সৌরভ সিটের উপরের তাক থেকে নিজের ব্যাকপ্যাকটা পেড়ে নিলো।তার দেখাদেখি জেসিয়াও নিজের ব্যাকপ্যাক হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো৷লাইন ধরে বেরিয়ে এলো প্লেনের দরজার কাছে।তারপর গ্যাংওয়ে বেয়ে তরতর করে টারমাকে নেমে এলো বাকি যাত্রীদের সাথে।

সৌরভের কাছে নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গ মনে হচ্ছে।কতদিন পর সিলেটের মাটিতে পা রাখলো সে। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে স্কলারশিপ পেয়ে কানাডার টরেন্টো তে স্টাডি করতে গিয়েছিল সে আজ থেকে ৬ বছর আগে।আর আজ সে ফিরে এসেছে নেটওয়ার্ক ইন্জিনিয়ার হয়ে।মাঝখানে আর দেশে আসা হয় নি।তার কারণ সে ঐ দেশের লিগ্যালিটি পায় নি।আর দুয়েক বছর থাকলে হয়তো অনুমোদন পেয়ে যেত কিন্তু সে তো লিগ্যাল হতে চায় না।তার কারণ সে নিজ দেশে থাকতে চায়।বিয়েশাদি করে সিলেটেই স্যাটেল হতে চায়।অন্য কোনো খানে থাকার কোনো ইচ্ছাই নেই তার।

এই মাসে তার চাচাতো ভাই আবিরের বিয়ে।আবির তারই সমবয়সী।আবিরের পর সে নিজে বিয়ে করবে।আর এজন্য সে তার আম্মুকে আগে থেকেই বলে রেখেছে যে তার জন্য কনে দেখতে।তেমন ভালো মেয়ে পেলে ২ মাসের মধ্যেই বিয়ে কনফার্ম। সৌরভ প্রেম ভালোবাসায় মোটেই আগ্রহী নয়।এখনের যুগের এসব ন্যাকা মেয়েদের তার মোটেই সহ্য হয় না।আর তেমন কাউকে তার ভালোই লাগে নি।এজন্য বিষয়টা সে তার মায়ের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে৷যা হয় হোকগে,যে কপালে আছে সে এমনিতেই আসবে!এমনই মনোভাব সৌরভের।

একটা বাস এসে ওদেরকে তুলে নিয়ে এয়ারপোর্টের বড় ভবনটিতে নামিয়ে দিলো।প্রায় আধাঘন্টা পর সব নিয়মকানুন শেষে ইমিগ্রেশন থেকে সমস্ত লাগেজ ব্যাগেজ চেক করার পর সেগুলো বিরাট লাগেজ রাখার ট্রলিতে রেখে ট্রলি ঠেলে ইমিগ্রেশন সেন্টার থেকে বেরিয়ে এলো ওরা।জেসিয়া একটা ট্রলি ঠেলে সৌরভের পাশে হাঁটতে হাঁটতে তাকে জিজ্ঞেস করলো;

জেসিয়া:-আমার কথা কী মনে থাকবে তোমার?

সৌরভ:- Obviously, আমি এত সহজে কাউকে ভুলি না।~নির্বিকারভাবে

জেসিয়া:-না ভুললেই ভালো,!

আচমকা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো;

জেসিয়া:-ওইততো আবার পাপা মাম্মাকে দেখা যাচ্ছে।Okay সৌরভ,ভালো থাকো,সিলেটেই যখন আছো তখন অবশ্যই দেখা হবে।তোমার সাথে অনেক সুন্দর সময় কাটলো৷Bye,and take care yourself.

হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো সে সৌরভের দিকে।ভদ্রতার খাতিরে সৌরভ জেসিয়ার হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললো;

সৌরভ:-Same to you, and bye!

জেসিয়া আবারও Bye জানিয়ে চলে গেলো ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ওর গন্তব্যের দিকে।এয়ারপোর্টে প্রচুর মানুষের ভীর।কেউ এসেছে প্রিয়জনকে বিদায় দিতে আর কেউবা এসেছে প্রিয় মানুষটাকে রিসিভ করার জন্য।সৌরভকেও রিসিভ করার জন্য অনেকে এসেছে সেটা ভাবতেই তার খুব ভালো লাগছে।হাতঘড়ির দিকে তাকালো সৌরভ।দুপুর ২ টা বাজে৷মনে মনে বললো;

সৌরভ:-হুম এজন্যই এত খিদে পেয়েছে।

ট্রলি ঠেলে সামনে এগোতে লাগলো সে ভীর এড়িয়ে।হঠাৎ কে যেন সৌরভ বলে জোরে ডেকে উঠলো৷সামনে তাকাতেই দেখতে পেল তার সমবয়সী চাচাতো ভাই আবিরকে।খুশিতে সাদা ঝকঝকে দাঁত সবকয়টি বেরিয়ে পড়লো সৌরভের।ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে আবিরের দিকে এগোলো সে।আবিরের কাছে গিয়ে ট্রলি একপাশে রেখে ছুটে এসে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো সে শক্ত করে।আবিরও তাকে জড়িয়ে ধরলো হাসিমুখে। আবির খুশি গলায় বলে উঠলো;

আবির:-কেমন আছিস ব্রো?কতবছর পর তোকে সামনাসামনি দেখলাম!

সৌরভ আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে হাসিমুখে জবাব দিলো;

সৌরভ:-তোর বিয়ে খাব শুনে পুরোপুরি চিল মুডে আছি আমি।তুই কেমন আছিস?

দাঁত বের করে হেসে জবাব দিলো;

আবির:-আমিও খুব ভালো আছি।

আবিরের পিছন থেকে আবিরের ছোট ভাই আকিল ভ্রু নাচিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো;

আকিল:-কীরে ভাইয়া!আমাকে ভুলে গেলি নাকি?

সৌরভ আবিরকে সরিয়ে আকিলকে জড়িয়ে ধরলো।খুশিগলায় বললো;

সৌরভ:-কেমন আছিস রামছাগল?তোকে খুব মিস করেছি আমি এতদিন জানিস!আহা,আমার আদরের রামছাগলটা।

আকিল মুখ বাকিয়ে বললো;

আকিল:-দুর্গন্ধ ভাইয়া,আমি কিন্তু মোটেই রামছাগল নই।

সৌরভ:-তাহলে আমিও দুর্গন্ধ নই।

আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে দুই ভাই হেসে ফেললো।তারপর নজর দিলো অন্যদিকে৷বাসার সব ছেলেরা এসেছে সৌরভকে রিসিভ করতে।মেয়ে কাউকে আনা হয়নি।সৌরভের বাবা মি.শফিক, ছোটচাচা মি.সালাম,সৌরভের আপন বড়ভাই হৃদয়, চাচাতো মেঝোভাই আবিদ,আবির আর আকিল।মোট ৬ জনই এসেছেন।সৌরভ একে একে সবাইকে হাগ করলো।আবির আর আকিল ট্রলি থেকে লাগেজ গুলো সব নামিয়ে একে একে গাড়ির পেছনে তুলে রাখছে৷মি.শফিক স্নেহভরা কণ্ঠে সৌরভকে জিজ্ঞেস করলেন;

মি.শফিক:-তোর আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো বাবা?

সৌরভ:-না আব্বু,কোনো অসুবিধে হয়নি।

মি.সালাম:-সৌরভের জন্য ভাবী -“সৌরভের আম্মু”- কত পদের তরকারি যে রান্না করেছেন তা হিসাবের বাইরে।তোর খিদে পায় নি বাবা?

সৌরভ:-পায়নি মানে?পেটের ভেতর মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেছে।তুমি এই কথা বলে তো খিদেটাকে আরও চাগিয়ে দিয়েছো।~হেসে হেসে~

হৃদয়:-তাহলে উঠে পড় গাড়িতে।জলদি বাসায় যাওয়া দরকার।আম্মু তোর জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছেন।

আবিদ:-হ্যা,হ্যা।আমারও জোরসে খিদে লেগেছে।আজকে তোকে নিয়ে আমরা একসাথে ফুর্তি করে খাবার খাবো।

সৌরভ খুশিমনে মাথা ঝাঁকিয়ে কালো বড় টয়োটা হাইয়েস গাড়িটাতে উঠে পড়লো।বাকি সবাই একে একে গাড়িতে ওঠে পড়লে আবির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।গাড়ির ভেতর প্রচুর খোশগল্প চললো বাসায় যাওয়ার আগপর্যন্ত।

প্রায় ২০ মিনিটের মাথায় হাউজিং এস্টেট এরিয়ায় ঢুকে পড়লো গাড়িটি।কয়েকটা লেন পেরিয়ে অবশেষে লেন ৫ এ বিশাল বড় এক ডুপ্লেক্স বাসার সামনে থামলো গাড়ি।গাড়ির হর্ন বাজাতেই সিকিউরিটি গার্ড এসে গেট খুলে দিলো।গাড়ি নিয়ে গেটের ভেতর ঢুকে পড়লো আবির।গাড়িবারান্দার সামনে এসে গাড়ি থামালো।

গাড়ির শব্দ শুনেই সৌরভের ছোটবোন ডলি ও আবিরের ছোটবোন তানিয়া দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে এলো।গাড়ি থামতেই সবাই গাড়ি থেকে নেমে এলো।আকিল আর আবির মিলে সব লাগেজ গাড়ি থেকে সিরিয়ালি নামাচ্ছে।সৌরভ গাড়ি থেকে নামতেই ডলি আর তানিয়া দৌড়ে এসে সৌরভকে জড়িয়ে ধরলো।সৌরভও পরম যত্নে জড়িয়ে ধরলো দুই আদরের ছোট বোনকে।স্নেহময় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল;

সৌরভ:-কেমন আছে আমার ছোট্ট সোনা বোনেরা হুম?

ডলি:-আমরা ভালো আছি।তুই কেমন আছিস ভাইয়া?

সৌরভ:-আমিও খুব ভালো আছি।

তানিয়া:-জানো,আমরা তোমায় খুব মিস করতাম ভাইয়া!

দুই বোনের মাথায় চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বললো;

সৌরভ:-আর মিস করতে হবে না।ভাইয়া এসে গেছি তো।এখন থেকে তোদের সাথেই থাকবো। আর দুরে কোথাও যাবো না প্রমিজ।

আবিদ:-আচ্ছা ঠিক আছে।ভেতরে চলো এখন সবাই।~তাড়া দিয়ে~

ডলি আর তানিয়া সৌরভ দুই হাতে ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।বাসার পরিবেশ পুরোপুরি রূপে পাল্টে গেছে।এই ৬ বছরে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। সারা এলাকাটাই চেঞ্জ হয়ে গেছে।সৌরভের চিনতে কষ্ট হচ্ছিলো যে এটাই তার সেই চিরপরিচিত এলাকা।

যাইহোক,ভেতরে ঢুকে বিশাল বড় ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো সবাই।মিসেস মিনা ড্রয়িং রুমেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।সাথে বাকিরাও ছিলো।সৌরভকে দেখে মিসেস মিনা কেঁদে ফেললেন।আজ কতবছর পর ওনি তার ছেলেকে কাছে পেয়েছেন। সৌরভকে জড়িয়ে ধরে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলেন।কেউ কিছু বলছে না।সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।মা তো মা-ই হয়।সন্তান দুরে থাকলে কোনো মা কী ভালো থাকতে পারে?অবশ্যই না। সৌরভ ও তার মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কতদিন পর সে তার মাকে দেখতে পেল৷মিসেস মিনা কান্নারত কন্ঠে সৌরভের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন;

মিসেস মিনা:-কেমন আছিস বাবা?আমার ছেলেটাকে কতদিন আমি সামনে থেকে দেখি নি। এতদিন কী খেয়েছে না খেয়েছে আমার বাচ্চাটা, মা হয়ে আমি কিছুই দেখি নি।কেমন শুকিয়ে গেছে আমার সোনা বাচ্চাটা,ইশশ!~আফসোস করে আবার কেঁদে দিয়ে~

এমনভাবে বললেন তিনি কথাগুলো যেন সৌরভ মাত্র ১-২ বছরের শিশু।মি.শফিক এবং মি.সালাম মিটিমিটি হাসছেন।বাকিরাও দাঁত কেলিয়ে হাসছে।লজ্জায় সৌরভ লাল হয়ে গেল।মিসেস মিনাকে স্বান্তনা দিয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো;

সৌরভ:-আম্মু,এভাবে কেঁদো না প্লিজ!তুমি তো জানো যে তুমি কান্না করলে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি তো এসে গেছি আম্মু দেখাে!তোমার ছেলে তোমার কাছেই ফিরে এসেছে।আর কোথাও আমি যাচ্ছি না আমার আম্মুকে ছেড়ে আই সোয়্যার।এবার একটু হাসো আম্মু প্লিজ।

মিসেস মিনা:-তোকে আমি আর কোথাও যেতে দিবোই না।আমার বাচ্চাদের আমি আমার থেকে দূরে কোথাও যেতে দিবো না।কখনোই না।আমার বাচ্চারা আমার কাছেই থাকবে।

এবার মি.শফিক বলে উঠলেন;

মি.শফিক:-আচ্ছা মিনা।তুমি তোমার বাচ্চাদের রুমে তালা দিয়ে রেখে দিয়ো আর নাহয় ছোটবেলায় যেমন সাথে সাথে রাখতে সেভাবে রেখো।কেউ তোমার বাচ্চাদের নিতে আসবে না। ~রসিকতা করে~

মিসেস মিনা কড়া চোখে তাকালেন মি.শফিকের দিকে।মি.শফিক কুঁকড়ে গেলেন বউয়ের চোখ রাঙানিতে।উপস্থিত দর্শক সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।সহজ হয়ে গেল পরিবেশ।সৌরভ পেটে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো;

সৌরভ:-আম্মু আমার ভীষণ খিদে লেগেছে।খিদের জ্বালায় মনে হচ্ছে আস্ত একটা গরু সাবাড় করে ফেলতে পারবো।এতোটা খিদে পেয়েছে।

মিসেস মিনা:-পাবে না!কত দূর জার্নি করে এসেছে ছেলেটা।কই কানাডার টরেন্টো আর কই আর কই বাংলাদেশের সিলেট।আয় বাবা ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং রুমে আয়।সব রেডি করাই আছে।শুধু হাত ধুবি আর খেতে বসবি।আয় বাবা।

সৌরভ ডলি আর হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে মশকরা করে বললো;

সৌরভ:-কী?হিংসে হয়?হিংসে করেও লাভ নেই। আমি এই ৬ বছরের সব আদর সুদে আসলে উসুল করে নিবো।বুঝলে?তোমরা দেখবে আর জ্বলবে লুচির মতো ফুলবে।

ডলি:-আমরা তোর মতো এত হিংসুটে নই বুঝলি?আমাদের আম্মু আমাদেরকে সবসময় ভালোবাসে।তাই না গো আম্মু?

মায়ের দিকে তাকিয়ে বললে মিসেস মিনা হাসলেন শুধু কিছু বললেন না।বাকিরাও হাসছে তাদের খোঁচাখুঁচি দেখে।এতদিন পর বাসার মধ্যে খুশি আনন্দ কানায় কানায় পূর্ণ হলো।

সৌরভ তার চাচী মিসেস শিলা, বড়ভাবী অর্থাৎ হৃদয়ের বউ ইশা আর মেঝোভাবী অর্থাৎ আবিদের বউ এশার সাথে কুশল বিনিময় করলো।হৃদয়ের মেয়ে সিমি আর আবিদের ছেলে জিহানকে কোলে নিয়ে আদর করে ডাইনিং রুমের পাশে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এলো।খিদের জ্বালায় আর নিজের রুমে যাওয়ার ইচ্ছে হয় নি তার।

ডাইনিং রুমে এসে চেয়ার টেনে সবাই বসে পড়লো।হরেক রকমের খাবারের বহর দেখে সবার জিভেই পানি চলে এলো।খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো সবাই।গ্রোগাসে গিলতে লাগলো সুস্বাদু সব খাবার।আকিল তার আম্মু মিসেস শিলাকে জিজ্ঞেস করল;

আকিল:-আম্মু,ঝিঁঝি পোকা কই গো?কতক্ষণ থেকে দেখছি না তাকে।এতক্ষণে তো তার সারা বাড়ি মাথায় তোলার কথা!

মিসেস শিলা:-আর বলিস না ওর কথা!জ্বর বাঁধিয়ে রুমে শুয়ে আছে।আর পারি না ওকে নিয়ে।দিনে দিনে মারাত্মক দুষ্টা হয়ে ওঠছে সে।মোটেই কথা শুনে না।~বিরক্তি প্রকাশ করে~

সৌরভ তাদের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না।কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;

সৌরভ:-এই ঝিঁঝি পোকাটা আবার কে?কার কথা বলছো তোমরা?

সৌরভের আম্মু মিসেস মিনা সৌরভের পাতে ভাত তরকারি বেড়ে দিয়ে বললেন;

মিসেস মিনা:-তোর সামাদ আঙ্কেলের মেয়ে প্রিয়তার কথা বলছে আরকি।

সৌরভ:-ওহহো,,বুঝেছি।তা ওকে প্রিয়ু না ডেকে ঝিঁঝি পোকা ডাকিস কেন আকিল?

আকিল:-আর বলিস না ভাইয়া,সারাদিন ওর মুখে খই ফুটে।পুরোই ঝিঁঝি পোকার স্বভাব।সারাদিন ঘ্যানর ঘ্যানর করে।তাই এই নামে ডাকি।

ওর কথা শুনে হেসে ফেললো সৌরভ।তানিয়া হুঁশিয়ার করে বললো;

তানিয়া:-খবরদার।ওর সামনে এরকম করে বলিস না ছোট ভাইয়া।তোর মুখের নকশা পাল্টে ফেলবে।ও সামনে নেই বলেই আজ তুই বেঁচে গেলি।নইলে তোর কপালে দুঃখ লেখা ছিলো।

সৌরভ:-তোদের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ও খুব ডেঞ্জারাস।প্রিয়ু যখন ছোট ছিলো তখন তো ওকে কতবার কোলে নিয়ে দোকানে গিয়ে চকোলেট কিনে দিয়েছি।আমার এখনও মনে আছে।আমাকে খুব পছন্দ করতো সে।এখন কতবড় হয়েছে প্রিয়ু?হুম?

ভাত খেতে খেতে জবাব দিলো ডলি;

ডলি:-ও এখন আর সেই ছোট্ট খুকিটি রয় নি ভাইয়া।অনেক বড় হয়ে গেছে।বয়সে আমাদের থেকে ছোট হলেও গায়েগতরে,লম্বায় চওড়ায় আমার আর তানিয়ার থেকেও বড়।ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে এবার।১৭ বছর বয়স।

সৌরভ:-বাহ,তাহলে তো অনেক বড় হয়ে গেছে।এখানে এসেছে নাকি?

মিসেস শিলা:-হ্যা।আবিরের বিয়ের জন্য তাকে আগেই নিয়ে এসেছি।সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতে সে একাই যথেষ্ট।ভীষণ চঞ্চল টাইপের আমার ভাইঝিটা।কালকে বিকেলে বৃষ্টি হয়েছিলো।সে চুপিচুপি ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছে কাউকে না বলে।তারপর আর কী বলবো!দেখোগে,জ্বর ওঠে তানিয়ার রুমে শুয়ে আছে।সামাদ আমাকে বারবার করে বলেছিলো তার মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখতে।আমি তো মানুষ,শয়তানও তাকে মনে হয় ওয়াসওয়াসা দিতে পারবে না,সেই বরং শয়তানকে ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিতে পারবে।এতই দুরন্ত স্বভাবের মেয়েটা।

মি.সালাম:-খাইয়েছো কিছু মেয়েটাকে?জ্বর কমেছে ওর?

মিসেস শিলা:-নাহ,এইতো এখন খাবার নিয়ে যাবো।আচ্ছা আমি বরং এখন যাই।

মিসেস মিনা:-হ্যা,তুই যা।এখনে আমি আছি।প্রিয়ুকে খাবার খাইয়ে ঔষধটা খাইয়ে দিয়ে আসিস মনে করে।

মিসেস শিলা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে একটা ট্রেতে করে খাবার এবং পানি নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠে তানিয়ার রুমে চলে গেলেন।সৌরভের খুব কৌতুহল হলো মেয়েটিকে দেখার।তবে কিছুক্ষণ পর অটোমেটিক্যালি তার মন থেকে মুছে গেল প্রিয়তার কথা।অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে মেতে উঠলো সবাই।

চলবে…

বি.দ্র.:-নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম আবারও।এটা একটা সামাজিক ও রোমান্টিক গল্প।আশা করি আপনাদের সবারই ভালো লাগবে এটি।ইনশাআল্লাহ রেগুলার ও বড় করে গল্পটা দেয়ার চেষ্টা করবো।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।প্রথম পর্ব পড়ে কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।হ্যাপি রিডিং গাইজ❤️
#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০২

তানিয়ার রুমে ট্রে হাতে প্রবেশ করলেন মিসেস শিলা।বিছানায় নিথর হয়ে শুয়ে থাকা মেয়েটির দিকে এগোলেন তিনি।মেয়েটি আর কেউ নয়,ডাইনিং রুমে বহুল আলোচিত ব্যক্তি এবং আকিলের মতে সেই ঝিঁঝিঁ পোকা প্রিয়তা খান।মোমের মতো ফ্যাকাশে হয়ে আছে তার মুখটা।যেন মুখে এক ছটাকও রক্ত নেই।জ্বরের কারণেই মূলত এমনটা হয়েছে।মিসেস শিলা ট্রে টা সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে পাশে বসলেন।

প্রিয়তা খুব মায়াময়ী ও চঞ্চলতায় ভরপুর একটি মেয়ে।আহামরি ফর্সা ও সুন্দরী না হলেও ওর মুখের আদলটা ভীষণ মায়াবি এবং গায়ের রঙ হলুদ ফর্সা।নজরকাঁড়ার মতো গড়ন তার।তার চোখ জোড়া হরিণীর মতো টানা টানা না হলেও বড় বড় এবং গোল গোল।মিশমিশে ঘন কালো চোখের পাপড়ি।ভ্রু যোগল জোড় নয় তবে ধনুকের মতো বাঁকানো ও ঘন।পুরু হালকা গোলাপি ও খয়েরি মিশ্রণের ঠোঁট জোড়া মুখের সাথে মানিয়েছে বেশ।ঠিক থুতনি বরাবর কালো একটা তিল যেন ওর সৌন্দর্য্যটা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।চুল গুলো বেশ লম্বা তার।একদম কোমড় ছাড়িয়ে গেছে।ঘন কালো তবে একদম স্ট্রেইট নয়।প্রাকৃতিক ভাবে কিছুটা ঢেউ খেলানো।তাতে তাকে অনেক কিউট লাগে দেখতে।

মিসেস শিলা আস্তে করে প্রিয়তার গালে,মাথায়,কপালে হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে ডাকতে লাগলেন;

মিসেস শিলা:-প্রিয়ু,ও প্রিয়ু!মা আমার,ওঠ মা,দুপুরের খাবার খাবি।প্রিয়ু!

হালকা ভাবে নড়ে ওঠে প্রিয়তা।পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় মিসেস শিলার দিকে।ম্লান হাসি উপহার দিলো ফুপ্পির দিকে তাকিয়ে।ওঠার চেষ্টা করলো সে কিন্তু পারলো না।মিসেস শিলা তাকে ধরে তোলে বসালেন।চুল এলোমেলো হয়ে আছে তার।একদম বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে তাকে দেখে।মিসেস শিলা প্রিয়তার এলোমেলো চুলগুলো প্যাঁচিয়ে নিয়ে হাত খোঁপা বেঁধে দিলেন।কপালে আর গলায় হাত দিয়ে দেখলেন গরম হয়ে আছে।মিসেস শিলা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠেন;

মিসেস শিলা:-কেন তুই এসব অকাজ করে বেড়াস বল দেখি?খালি আমার জন্য টেনশন বাড়াস।কী দরকার ছিলো কালকে বৃষ্টিতে ভেজার?আর এই জ্বর বাঁধানোর হে?তুই কী এখনো বাচ্চা রয়েছিস নাকি যে নিজের ভালোমন্দ বুঝিস না।এখন তোর বাপকে আমি কী জবাব দিবো?এসব শুনলেই তো কাজটাজ সব ফেলে দৌড়ে আসবে।এই কিছুক্ষণ আগে তোর ভাই মুসকান ফোন দিয়েছে।ফোন দিয়েই আগে তোর কথা জানতে চাইলো।কি আর বলবো,,বলেছি তুই তানিয়াদের সাথে লেনে হাঁটতে গিয়েছিস।জ্বরের কথা শুনলে সে তোকে আর আস্ত রাখবে না।তাও তোর কোনো শিক্ষা হয় না।কেন এত দুষ্টামি করিস বল?আর কখন বুঝবি তুই?বয়স তো কম হলো না!

এতক্ষণ ধরে মিসেস শিলার লম্বা বয়ান শুনলো প্রিয়তা।চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই তার।মিসেস শিলার কথা শেষ হওয়ার পর সে বললো;

প্রিয়তা:-এত টেনশন করো না তো ফুপ্পি।জানোই তো আমার জ্বর ওই ভালুকের জ্বরের মতো।এই আসে এই যায়।কালকে জ্বর ওঠেছে তারমানে আজকেই ভ্যানিশ হয়ে যাবে।শুধু একটুখানি দুর্বল লাগছে শরীর এই যা!তাও ঠিক হয়ে যাবে ডিম আর দুধ খেলে।এখন তুমি আমায় খাবার আর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে যাবে,খাওয়া শেষে আমি শাওয়ার নিবো।তারপর জম্পেশ একটা ঘুম দিয়ে উঠবো আর সন্ধ্যা পর।ব্যস,জ্বর বাবাজী হাওয়া হয়ে যাবে।এরপর তোমাদের সবাইকে জ্বালাতে চলে আসবে ইট’স মি ইয়োইয়ো প্রিয়ু।ওকে?

জ্বর নিয়েও ফাইজলামি করতে ছাড়লো না প্রিয়তা।মিসেস শিলা হেসে ফেললেন ওর কথা শুনে।ট্রে থেকে ভাতের প্লেটটা নিয়ে তরকারি দিয়ে মাখিয়ে একনলা ভাত প্রিয়তার মুখে পুরে দিয়ে বললেন;

মিসেস শিলা:-তোকে নিয়ে আর পারি না।যাকগে,এখন এইসব খাবার খেয়ে শেষ করবি।মুখটা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে মেয়েটার একদিনেই।মনে থাকে যেন আজকে যদি জ্বর না সাড়ে,তাহলে তোর একদিন কী আমার যতদিন লাগে!আজকে সবার সাথে ডিনারে উপস্থিত থাকবি।বুঝেছিস?

প্রিয়তা কোৎ করে মুখের খাবার টুকু গিলে নিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-খুব বুঝেছি।শুধু ডিনার কেন,সন্ধ্যার নাশতার সময়ও উপস্থিত থাকবো।

একটু থেমে জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো সে;

প্রিয়তা:-আজকে না তোমাদের বাসায় কোন মেহমান আসার কথা?

মিসেস শিলা প্রিয়তার মুখে আরেক নলা ভাত পুরে দিয়ে জবাব দিলেন;

মিসেস শিলা:-মেহমান কাকে বলছিস?ও তো এবাড়িরই ছেলে।তোর বড় আন্টির ছেলে সৌরভ।

মিসেস শিলার কথা শুনে মনে পড়তেই জিভে কামড় দিয়ে বললো সে;

প্রিয়তা:-উপস সরি,মনেই ছিলো না আমার।সৌরভ ভাইয়া, তাই না!আমার তো ভাইয়া ডাকা উচিৎ কী বলো ফুপ্পি?

মিসেস শিলা:-মাঝেমধ্যে অদ্ভুত কথা বলিস তুই।তোর ডলি আর তানিয়া আপ্পির ভাইয়া হয়,তাহলে তোর হবে না আজব?আবিরের সমবয়সী হলো সৌরভ।জানিসই তো!

প্রিয়তা:-হ্যা জানি তো।তারপরও জিজ্ঞেস করে শিওর হয়ে নিলাম।তানু আপ্পি বললো আবির ভাইয়ার বিয়ের পর পরই নাকি ওনি বিয়ে করবেন।শুনেছি দেশে আসার আগে জব কনফার্ম করে এসেছেন।সামনের মাসের একতারিখ থেকে জয়েনিং।এখন শুধু বিয়ে করার বাকি।

মিসেস শিলা:-হ্যা।ভালো মেয়ে পেয়ে গেলে এ মাসেই বিয়ে হয়ে যাবে।একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে তোর বড় আন্টির।আজকে বোধহয় মেয়েটার ছবি দেখাবেন তিনি সৌরভকে।আমিও দেখেছি মেয়েটার ছবি।সুন্দরী আছে মেয়েটা।নাম লিপি না কী যেন মনে নেই।তোর বড় আঙ্কেলের বন্ধুর মেয়ে হলো সে।এখন দেখা যাক সৌরভের পছন্দ হয় কী না!

প্রিয়তা:-পছন্দ হবে নে।আহ পরপর দুই দুইটা বিয়ে খাবো ভাবতেই আমার খুশিতে লাফাতে ইচ্ছা করছে।উফফ কী যে মজা হবে।খাবো আর ছবি তুলবো।বিয়েতে অনেক সুন্দর করে সাজবো আমি।আমাকে দেখে কেউ চোখ ফেরাতেই পারবে না।

খুশিতে চোখের তারা নেচে উঠে প্রিয়তার।তবে প্রিয়তার খুশিতে পানি ঢেলে মিসেস শিলা বলে উঠেন;

মিসেস শিলা:-এত খুশি হয়ে লাভ নেই।আনন্দ ফুর্তি শুধু আবিরের বিয়েতেই করতে পারবে তাও লিমিট অনুযায়ী।সৌরভের বিয়েতে তো তাও হবে না।সে একদম সাদামাটা ভাবে বিয়ে করবে।এককথায় ঘরোয়াভাবে।যেখানে কোনো গেট ধরাধরি হবে না,জুতা চুরি হবে না,কোনো ফটোগ্রাফার ভাড়া করে আনা হবে না।ফটোগ্রাফার আকিল আর আবির হবে।বাইরের কোনো মানুষ তার বউকে দেখুক তা সে পছন্দ করে না।বউ পর্দানশীল এবং ধার্মিক হতে হবে।এতদিন তোর বোনেরা নায়িকার মতো চলাফেরা করেছে।এখন থেকে দেখে নিস বোরকা ছাড়া ঘর থেকেই বের হবে না।তার কারণ সৌরভ এসব মোটেই পছন্দ করে না।তোকেও সাবধান করছি,ওর সামনে মোটেও বেয়াদবের মতো আচরণ করবি না আর সবসময় মাথায় ওড়না দিয়ে রাখবি।মনে থাকবে?

মিসেস শিলার হুশিয়ার বানী শুনে প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-আচ্ছা ফুপ্পি,ঠিক আছে।মনে থাকবে।

প্রিয়তাকে খাওয়ানো শেষ করে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে মিসেস শিলা বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বললেন;

মিসেস শিলা:-এখন আমি যাই রে।তোর ফুফা আমাকে খুঁজবে।তোর কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তানিয়াকে বলিস কেমন?আর তুই গোসল করতে পারবি তো মা?যদি তোর মাথা ঘুরে?

মিসেস শিলার উদ্বেগ দেখে প্রিয়তা ওনাকে আশ্বস্ত করে বললো;

প্রিয়তা:-তুমি মোটেও চিন্তা করো না ফুপ্পি।আমার শরীর এখন ঠিক আছে।বেশি সময় লাগবে না গোসল করতে।বড়জোর ১০ মিনিট।গোসল করার পর শরীর আরও ঝরঝরে হয়ে যাবে।তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবো।

মিসেস শিলা:-তারপরও।তুই কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা মোটেও লক করবি না বলে দিলাম।আমি তানিয়াকে কিছু সময়ের জন্য রুমে পাঠাচ্ছি।তুই গোসল না করা পর্যন্ত রুমে থাকবে সে।তাহলে এখন আমি যাই।ওকে পাঠিয়ে দিই গিয়ে।ততোসময় পর্যন্ত তুই অপেক্ষা কর।

এই বলে মিসেস শিলা এঁটো থালাবাসন গুলো ট্রেতে তুলে রেখে হাতে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।প্রিয়তা একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেললো।সে বললেও এখন তিনি কিছুই শুনবেন না।একমাত্র ছোট ভাইয়ের একটামাত্র মেয়ে ওনার আদরের ভাইঝি বলে তাকে তিনি অত্যাধিক ভালোবাসেন।নিজের মেয়ের থেকেও বেশি আদরের ও চোখের মণি সে।ছোট বলে আরও বেশি ভালোবাসে সবাই।সবার আদরে আদরে একদম বাঁদর হয়ে গেছে সে।

মিনিট পাঁচেক পর তানিয়া রুমে এলে প্রিয়তা ওয়াশরুমে গেল শাওয়ার নিতে।প্রায় ১০ মিনিট পর গোসল সেড়ে রুমে এলো সে।চুল টুল ঝেড়ে মুছে তানিয়ার সাথে কিছু টুকটাক কথা বলে বিছানায় শুয়ে পড়লো।তারপর তানিয়া চলে গেলে সেও ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।

খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুসময় গল্প গুজব করে সৌরভ নিজের রুমে চলে এলো রেস্ট নিতে।রুমে এসে দেখলো বাংলাদেশে আসার আগে কার্গো করে পাঠানো দশটা লাগেজ রুমের এককোণে সিরিয়ালি রাখা হয়েছে।কানাডা থেকে আসার সময় সাথে করে আরও ১২ টা ছোটবড় অনেকগুলো লাগেজ নিয়ে এসেছে সে।কার্গো করে যেগুলো পাঠিয়েছে সেগুলো একান্তই তার।এই লাগেজগুলোতে আছে তার হবু বউয়ের যাবতীয় সব জিনিস।বিয়ের লেহেঙ্গা,শাড়ি,থ্রি পিস,জুতা,অর্নামেন্টস,মেকআপ,আর মেয়েদের প্রয়োজনীয় সব জিনিসে ঠাঁসা ৮ টা লাগেজ।আর বাকি ২ টায় নিজের জন্য কাপড় চোপড়।সাথে করে যেগুলো নিয়ে এসেছে সেগুলো পরিবারের সবার জন্য।

সৌরভের রুমটা পুরোপুরি আধুনিক স্টাইলের।বিশাল বড় রাউন্ড বেড তার দুপাশে ২ টা সেন্টার টেবিল রাখা।একটা স্টাইলিশ ড্রেসিং টেবিল ও তার সামনে একটি টুল।দুইটা বিশাল বড় আলমারি,একটা ওয়্যারড্রোব,বসে পড়ার জন্য একটা টেবিল দুটো চেয়ার,বই রাখার একটা ছোটখাটো শৌখিন বুকশেলফ,শো-পিস ও ফুলদানি সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালের সাথে লাগোয়া শেলফে।বসার জন্য আছে সোফা এবং বিনব্যাগ।মোটকথা সব আধুনিক আসবাবপত্র দিয়ে সৌরভের রুমটা আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে।যা বিগত ৬ বছর আগে ছিলো না।সে কানাডা যাওয়ার পর একতলা বাড়ি থেকে ডুপ্লেক্স বাসা তৈরী করা হয়েছে।সবকিছু বলতে গেলে নতুন সংযোজন করা হয়েছে।

মুগ্ধ হয়ে সারা রুম ঘুরে দেখলো সৌরভ।রুমটা তার অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে।যাইহোক,এটলিস্ট তার হনে ওয়ালা বিবি খুব খুশি হবে এত সুন্দর রুম দেখে আর রুমের ডেকোরেশন দেখে।মনে মনে ভাবতে লাগলো সৌরভ যে কেমন মেয়ে তার বউ হবে!ঠিক কোন টাইপের মেয়ে তার লাগবে!সুন্দর হোক বা কালো হোক,শর্ত একটাই মুখের গড়ন মায়াবী হতে হবে,যেন তৃষ্ণার্থের মতো বারবার দেখতে মন চাইবে,অবশ্যই পর্দানশীন ও মার্জিত হতে হবে!চঞ্চল প্রকৃতির,হ্যা একটু চঞ্চল টাইপের হতে হবে তবে বেয়াদব হলে চলবে না!এত বেশি স্টাইলিশ হবে না সবসময় নর্মাল লুকে থাকবে!পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে!

আর হ্যা সাংসারি হতে হবে,রান্না বান্না সব কাজ জানা থাকতে হবে এবং অবশ্যই স্বামী পরায়না হতে হবে।স্বামীর কথা মতো চলতে হবে,স্বামীর সব আদেশ নিষেধ মানতে হবে,মুখে মুখে তর্ক করা চলবে না,স্বামীকে সদা হাসিখুশি ও সন্তুষ্ট রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।ব্যস এটাই সৌরভের চাওয়া।কিন্তু এমন মেয়ে কই পাবে সে?যে সর্বগুনে গুণান্বিত?কল্পনাতেই একমাত্র এরকম মেয়ে পাওয়া যায়।বাস্তবে নয় এটা সৌরভ জানে।তারপরও মনে একটা আশা তার,সে খুব ভালো একটা মেয়েকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে পাবে।

সৌরভকে তার আম্মু বলেছেন অবশ্য একটা মেয়ের কথা।এখন দেখা যাক ওকে সৌরভের পছন্দ হয় কি না।পছন্দ হলে কথাবার্তা আগাবে নয়তো এখানেই স্টপ।মন থেকে পছন্দ না হলে তো সে জোর করে ভালো লাগাতে পারবে না।আর ভালো লাগার মতো কোনো মেয়ে আজতক সৌরভের চোখেই পড়ে নি।পড়বে কী না তাও সন্দেহ।এসব ভাবতে ভাবতেই সৌরভ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টে রুমে এসে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতে চাইছে তার।শেষমেশ ঘুমিয়েই পড়লো।লং জার্নিতে বেচারা একদম হাঁপিয়ে গেছে।

প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় সৌরভের ঘুম ভাঙলো।তারপর হাতমুখ ধুয়ে নিচে চলে আসে সে।ড্রয়িং রুম জুড়ে যেন মেলা বসেছে আজকে।মেলার আসর যেন তুঙ্গে উঠলো সৌরভ ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করায়।টি টেবিলের ওপর হরেক রকমের নাশতা সাজিয়ে রাখা।সৌরভ একবাটি নুডুলস নিয়ে আবির আর আকিলের মাঝখানে গিয়ে বসলো।ওরাও নাশতা খাচ্ছে।

তখনই মিসেস মিনা হাতে করে কয়েকটা ফটোগ্রাফ নিয়ে এলেন।লিপি নামক মেয়েটার ছবি।ছবিগুলো সৌরভের হাতে দিলেন তিনি।সৌরভ নুডুলস খেতে খেতে ছবিগুলো সব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলো।সৌরভের মতে,মোটামুটি সুন্দরী বলা চলে মেয়েটাকে।তবে নাকটা মোটা আর চ্যাপ্টা যেন কেউ ঘুষি মেরে নাকটা বোচা করে দিয়েছে।ভ্রু প্লাক করা চিকন করে।এই একটা জিনিস সৌরভ মোটেই পছন্দ করে না,ভ্রু প্লাক করা।মেয়েরা কেন যে এই হারাম কাজটা করে এবং কী যে মজা পায় ভেবে পায় না সৌরভ।জাস্ট বিরক্ত লাগে তার।এবং মেয়েটার চেহারা দেখে কেন জানি মনে হলো তার যে মেয়েটা একটু অহংকারী টাইপের।যার কারণে মেয়েটাকে ভালো লেগেও লাগেনি তার।

দেখা শেষে মিসেস মিনার হাতে ছবিগুলো তুলে দিলো সৌরভ।মিসেস মিনা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলেন;

মিসেস মিনা:-মেয়েটাকে দেখে কেমন লাগলো তোর বাবা?

সৌরভ কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনই চোখ গেল তার সামনের দিকে।এবং চোখ জোড়া ওখানটাতেই আটকে গেল।মুখ দিয়ে আর টু শব্দও বেরোলো না।মনের মধ্যে একঝলক ঝোড়ো হাওয়া মাতামাতি করে গেল।এরকম ফিলিং লাইফের ফার্স্ট টাইম হলো তার।সৌরভের কাছে মনে হলো কোনো এক অপ্সরা এসে দাঁড়িয়েছে ড্রয়িং রুমের দোরগোড়ায়।ঐ কাজলে আঁকা চোখ চোখ দুটো যে মারাত্মক সর্বনাশ করে ফেললো তার।মেয়েটির ঠোঁটের কোণে লেপ্টে থাকা মুচকি হাসি দেখে সৌরভের মনে হলো তার ক্ষেত্রেও হয়তো লাভ এট ফার্স্ট সাইট জিনিসটা আজ ঘটেছে।

প্রিয়তা আজ একটা কালো লং ফ্রক ও কালো প্লাজু পড়েছে।সাথে মাথার ওপর কালো জর্জেট ওড়না আলতো ভাবে প্যাচিয়ে রাখা।চোখে গাঢ় করে কাজল এঁকেছে সে সাথে ঠোঁটে লিপবাম।ব্যস এতেই সৌরভ ক্রাশ খেয়ে গেছে।প্রিয়তা হাসিমুখে ড্রয়িং রুমের ভেতরে ঢুকে তানিয়ার পাশে গিয়ে বসলো।আকিল প্রিয়তাকে দেখে ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো;

আকিল:-এই রে,আমাদের ঝিঁঝি পোকা চলে এসেছে সবার কানের পর্দা ফুটো করতে।

জ্বলন্ত চোখে আকিলের দিকে তাকালো প্রিয়তা।কিন্তু কিছু বললো না।প্রিয়তাকে চিনতে সৌরভের একটু বেগ পেতে হয়েছে।অনেকদিন পর দেখেছে তো তাই।মিসেস শিলা প্রিয়তার কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর নেই।হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি।তারপর রান্নাঘরে ছুটলেন প্রিয়তার জন্য দুধ আর ডিম আনতে।মিসেস মিনা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস মিনা:-কীরে মা তোর জ্বর কমেছে?

প্রিয়তা হাসিমুখে মাথা ঝাকিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-হ্যা বড়আন্টি, কমেছে।

মিসেস মিনা:-যাক আমি তো দুশ্চিন্তায় ছিলাম তোর জন্য।ও হ্যা ওই যে তোর সৌরভ ভাইয়া।আর সৌরভ এ হলো আমাদের প্রিয়ু মনি।

মিসেস মিনা হাসিমুখে দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলেন।সৌরভ তখনও তাকিয়ে আছে প্রিয়তার পানে।প্রিয়তা সৌরভের দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে বিনীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;

প্রিয়তা:-কেমন আছেন ভাইয়া?

সৌরভ সালামের জবাব দিয়ে হাসিমুখে উত্তর দিলো;

সৌরভ:-আলহামদুলিল্লাহ,ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?শুনেছি তোমার নাকি জ্বর এসেছে?

প্রিয়তা:-জি আমিও ভালো আছি।আর জ্বর এসেছিলো ঠিকই কিন্তু ঠিকতে পারে নি।জ্বরও আমাকে ভয় পায়।

সৌরভ তার কিউট দাঁত বের করে হাসলো প্রিয়তার কথা শুনে।মিসেস শিলা ছোট একটা ট্রে তে করে দুধ আর ডিম সেদ্ধ নিয়ে এলেন।প্রিয়তা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে একঢোকে অর্ধেক সাবাড় করে ফেললো।প্রিয়তার কথার বিপরীতে আকিল জবাব দিলো;

আকিল:-তোকে শুধু জ্বর কেন,যমদূতও ভয় পায়।তোর যা রাক্ষুসী চেহারা,শাঁকচুন্নি মার্কা চোখ,পেত্নী মার্কা চুল আর জ্বিন মার্কা চলাফেরা।বাপরে,সত্যিকারের ভুতেরাও তোকে দেখলে ভয়ে পালাবে।

আকিলের কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে প্রিয়তা।রাগে ফুসফুস করছে সে।এখন যদি সৌরভ না থাকতো তাহলে নির্ঘাত আকিলের চুল আর একটাও মাথায় থাকতো না।সৌরভকে দেখিয়ে আকিলকে হুমকির স্বরে বললো সে;

প্রিয়তা:-শুধু ওনি বেয়াদবি পছন্দ করেন না বলে আজকে তুই বেঁচে গেলি।নয়তো আজকে তোর হাড্ডি গুড়ো গুড়ো করতাম আমি।

প্রিয়তার হুমকি দেয়া দেখে হেসে উঠলো সবাই।সৌরভ মুচকি হাসলো শুধু।

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_১+২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here