তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -১৩+১৪

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

বিষন্ন কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।চলে যাওয়াতে বুঝলাম এতোক্ষণ ও আমার হাত ধরে বসে ছিলো। অথচ আমি সেটা টেরই পাইনি।

বিষন্ন চলে যাওয়ার পর নীলুকে বললাম বিছানার বসিয়ে দিতে।নীলু আমায় ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।নীলুর সাথে সাথে একটা মেয়েও আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলো।মেয়েটার দিকে একপলক তাকালাম।কে এই মেয়ে? এতো মিষ্টি চেহারা,মায়াবী মুখ।মেয়েটিকে জিগ্যেস করলাম

” তোমার নাম কি? ”

” পরি ”

” বাহ্ খুব সুন্দর নাম,তোমার সাথে একদম মিলে গেছে।”

” হু ”

নীলুর দিকে তাকিয়ে বললাম ” কিরে নীলু,এই মেয়েটি কে? আগে তো কখনো দেখিনি ”

নীলু বললো ” আমিও জানিনা।বিলু নিয়ে এসছে,”

” বিষন্ন নিয়ে এসছে? ”

” হ্যা, তোকে যখন গাড়িতে করে নিয়ে আসলো তখন এই মেয়েটিও ছিলো,বিষন্নের কাছে এখনো জানতে চাইনি কে এই মেয়ে ”

নীলুর কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেলো কাল রাতের ঘটনা।কয়েকটা নরপশুদের কথা।মেয়েটিকে চলে যেতে বলে নীলুকে কাছে বসতে বললাম,নীলু কাছে বসে বললো

” কিরে কি হয়েছিলো? কপাল এভাবে কে টে গেছে কিভাবে? আর তুই কাল ঈশাকে হঠাৎ চ ড় মারলিই বা কেন? ”

” নীলু,আমি কাল রাতে কিছু খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়েছিলাম।ওরা সবাই মাতাল অবস্থায় ছিলো”

” মানে কি? সত্যি বলছিস তুই?ওরা কি তোর কোনো…. ”

” না তেমন কিছুই করতে পারেনি,তবে বিষন্ন যদি আরেকটু দেরি করতো তাহলে হয়তো আমার অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো রে,আমার দেহ এতোক্ষণে হয়তো নর্দমার পাশে পড়ে থাকতো ”

কথাটা বলেই চোখের জল আটকাতে পারছিলাম না কোনো ভাবেই। নীলু আমায় জরিয়ে ধরে শান্তনা দিলো।

___________

আমি আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছি।শরীরটা এখন বেশ ভালো,শুধু মাথায় সামান্য চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।নিচে সবার হৈ হুল্লোড় শোনা যাচ্ছে। বাইরে এতো লোলজনের সমাগম জন্যই ঘরে বসে আছি।এতোলোক আমার একদম অপছন্দ।ছোট থেকেই একা একা বড় হওয়ার এই এক সমস্যা,লোকজন পছন্দ হয় না। নীলু হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো

” মিষ্টি চল,নিচে চল ”

আমি বিরক্তি স্বরে বললাম ” আমি যেতে পারবো না রে,”

” কেন পারবি না? মাথায় ব্যাথা হচ্ছে নাকি? ডাক্তার ডাকবো? ”

নীলুকে মিথ্যে না বললে ও নিচে না যাওয়া পর্যন্ত ছারবে না।মাথায় হাত রেখে বললাম ” ডাক্তার ডাকা লাগবে না,একটু ব্যাথা করছে,আমি যেতে পারবো না এখন দোস্ত ”

” তোর শাড়িটা তাহলে এখানে নিয়ে আসছি দারা,”

” আমার শাড়ি মানে? ”

” সবার জন্য শপিং করা হ’য়েছে!বিলু আমি আর বাবা গিয়েছিলাম ”

” এইটুকু সময়ের মধ্যে কখন করলি এসব? ”

” মিষ্টি! এখন সন্ধা হয়ে গেছে,তুই টেরই পাসনি নাকি? একবার তোর ঘরে আসলাম দেখলাম ঘুমাচ্ছিস ”

” সন্ধা হয়ে গেছে? ঘুমিয়ে ছিলাম রে,,টের ই পাইনি,”

” আচ্ছা আমি শাড়ি নিয়ে আসছি ”

” আমার জন্যে কেন কিনতে গেলি দোস্ত, তোদের এতো এতো ভালোবাসার প্রতিদান যে আমি কখনোই দিতে পারবো না রে ”

” মা র খাবি বলে দিলাম।ভালোবাসার যদি প্রতিদান’ই দিতে হয়,তাহলে সেটা ভালোবাসা নাকি?, তুই ওঠ তো,ফ্রেশ হয়ে নে,শুয়ে থাকবি না আর,,ওঠ ”

আমায় তুলে দিয়ে নীলু নিচে চলে গেলো।আমি ফ্রেশ হয়ে বেলকনির দোলনায় গিয়ে বসলাম। নীলুর ঘরের বেলকনির এই দোলনাটা অসম্ভব সুন্দর।আশেপাশে লতানো গাছ দোলনায় পেচিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে গাছের লতার ওপর বসে আছি।

__________

নীলু বিষন্নের ঘরে ডুকে বিষন্নকে দেখে বিস্মিত হয়ে বললো

” আরেহ বিলু ! কি যে লাগছে তোকে,উফফফ আমি তোর বোন না হলে এক্ষুনি তোকে বিয়ে করে ফেলতাম ”

” হাহাহা,,”

” সত্যি বলছি,,আচ্ছা আমায় কেমন লাগছে? ”

” পেত্নীর মতো লাগছে।শেওড়া গাছে থাকে না? ওইরকম লাগছে ”

” কিহ? আমায় পেত্নির মতো লাগে? দারা আজ তোর একদিন কি আমার একদিন ”

বলেই নীলু বিষন্নের দিকে তেড়ে যায় ওকে মা*রতে।বিষন্নও ঘরের এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে নীলুর মা রের হাত থেকে বাঁচতে।দুই ভাই-বোন মেতে উঠেছে মিষ্টি খুনসুটি তে।এক পর্যায়ে নীলু ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে পড়ে।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো

” তোর জন্য আমার মেকাপটাই নষ্ট হয়ে যেতো ”

বিষন্নও নীলুর পাশে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ” তুই কি আমায় ধরতে পারছিস কোনোদিন? হাহাহাহা পারবিও না ”

নীলু বিষন্নের কা ন ধরে বললো ” এইতো এইবার পেরেছি,এখন কই পালাবি ”

” ইস লাগছে আপু,,ছাড় না, ”

” আগে বল আমায় কেমন লাগছে,নইলে তোর কান লাল করে ছাড়বো ”

” আচ্ছা আচ্ছা বলছি,তোকে খুব সুন্দর লাগছে ”

” ধন্যবাদ মেরে ভাই,যুগ যুগ জিও ”

বিষন্ন ভেংচি কেটে আয়নায় সামনে গিয়ে পাঞ্জাবির হাতাটা ওপরে তুলতে লাগলো।নীলু বিষন্নের কাঁধে ভর করে দারিয়ে বললো

” বিলু,আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি,আজকে সব মেয়েরা তোর ওপর ক্রাশ খাবেই খাবে ”

” মেয়ে কোথায় পেলি? ”

” বাবার অফিসের এমপ্লয়িরা এসছে না, ওদের মেয়েদের ও নিয়ে এসছে ”

” বলিস কি, সত্যি? ”

” হু সত্যি।আমি দেখে এলাম,একটা মেয়েকে দেখেছি,আমার খুব পছন্দ হয়েছে,তোর সাথে খুব মানাবে ”

” সত্যি মানাবে? তাহলে ওইটার ফাইনাল।তুই একটু ব্যাবস্থা করে দিস আপু,”

” আমার দিতে হবে না।তোকে কালো পাঞ্জাবিতে যা লাগছে, মেয়েরা এমনিতেই তোর পাশে ঘুরঘুর করবে দেখে নিস।আচ্ছা তুই নিচে আয়,আমি নিচে যাচ্ছি,মায়ের নাকি খুব লজ্জা লাগছে,মায়ের সাথে থাকতে হবে আমায় ”

” আচ্ছা যা, আমি আসছি ”

নীলু আপু চলে গেলো।ঘড়িটা পড়তে পড়তে ঘর থেকে বেড় হতেই দেখলাম নীলুপুর ঘর থেকে মিষ্টি বেড় হয়ে আসছে।মাথা নিচু করে শাড়ির কুচি ঠিক করছে।মিষ্টিকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছি না।সাদা শাড়ির নীল পাড়ের এই শাড়িটাতে মিষ্টিকে সুন্দর লাগবে জানতাম।কিন্তু এতো সুন্দর লাগবে সেটা ভাবিনি।মিষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।সাদা শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সাদা চুড়ি,কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ,টিপের একটু ওপরে ওয়ান টাইম একটা টেপ লাগানো।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,চোখে কাজল,চুল খোলা,সেই খোলা চুলে কয়েকটা ছোট ছোট লাল ফুল।ব্যাস ! এতেই একটা মেয়েকে এতো মায়াবী লাগে?। আমার তাকানো দেখে মিষ্টি একটু খুকখুক করে কেশে বললো

” ওমন ড্যাবড্যাব করে কি দেখিছিস”

” তোমায় খুব সুন্দর লাগছে ”

” আমি জানি আমায় সুন্দর লাগছে।তারপরেও তোকে ধন্যবাদ সুন্দর বলার জন্য ”

” তুমি নিজের বিষয়ে কিছুই জানো না,যতোটা আমি জানি ”

” এহহহ,সব জান্তা এসে গেছে রে ”

” আচ্ছা আমায় কেমন লাগছে দেখে বলোতো ”

” ভালো,ঈশা চোখ ফেরাতেই পারবে না ”

এইতো কাজ হয়েছে। মিষ্টি ধীরে ধীরে ঈশাপুর ওপর জেলাসি হচ্ছে। এটাই তো চেয়েছি আমি।সবটা এতো সহজেই হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।আনন্দিত হওয়ার ভঙ্গিতে বললাম

” সত্যি বলছো? ”

” হু সত্যি ”

” ঈশা মেয়েটা কিন্তু খুব ভালো,তাই না মিষ্টি? ”

” আমি তোর বড়, এমন ভাবে মিষ্টি বলছিস যেম মনে হচ্ছে তুই বড় আর আমিই ছোট ”

মিষ্টিকে আরেকটু রেগে যাওয়ার জন্য বললাম

” ঈশাপু কি বলেছে জানো? বলেছে ওকে শুধু ঈশা ডাকতে,মেয়েটা একটা পাগলি তাই না বলো? ”

” হ্যা,তুই দেখ তোর পাগলি কোথায় গেলো,আমি নিচে যাচ্ছি ”

বলেই মিষ্টি পাশ ফিরে চলে গেলো।মানেটা ঠিক বুঝলাম না।মিষ্টিকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে না যে ও জেলাসি ফিল করছে।এমন ভাব করলো যেন এটা ওর জন্য স্বাভাবিক কিছু।ঈশার সাথে আমার সম্পর্কে কি মিষ্টির সত্যির কোনো জেলাসি ফিল হচ্ছে না? আমি কি আবার অন্য ভাবে ফেসে গেলাম নাকি? মিষ্টি ভেবে নিয়েছে আমি ওর সাথে নাটক করছি,আর সত্যি সত্যিই ঈশার সাথে আমার সম্পর্ক।এমন কিছু হলে তো বিরাট মুশকিলে পড়ে যাবো।মেয়েরা নিজেরা যা একবার ভেবে বসে সেটা পাল্টানো খুব দুষ্কর ব্যাপার।জানিনা মিষ্টির মনে কি চলছে।আচ্ছা, মিষ্টির সাথে কি ভার্সিটির ওই জুনায়েদ নামের ছেলেটার সত্যিই কোনো যোগসূত্র আছে? সেজন্যই কি আমাকে এড়িয়ে চলছে?

নিচে নামতেই নীলুপু আমায় ডাকলো।নীলুপুর সাথেই মিষ্টি দারিয়ে আছে।আমি কাছে গেলাম।নীলুপু আমার দিকে একটু ঝুকে এসে বললো

” ওই যে মেয়েটা দেখতে পাচ্ছিস? লাল টি-শার্ট আর জিন্স পড়ে আছে, ”

আমি আশেপাশে তাকালাম। মেয়েটাকে দেখতে পেলাম।দেখেই মনে হচ্ছে আধুনিকের ছোঁয়া পেয়েছে।নীলুপু বললাম

” হু দেখতে পেয়েছি ”

” মেয়েটা কেমন? ”

” ভালোই তো।দেখতে সুন্দরী, আধুনিকতার ছোঁয়াও আছে ”

” পছন্দ হয়েছে তোর? আচ্ছা দারা আমি গিয়ে কথা বলছি ”

নীলুপুর কথা শুনে আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে মিষ্টি।নীলুপু আমার দিকে ঝুকে এসে কথাগুকি বললেও মিষ্টি যেন শুনতে পায় সেভাবেই বলছিলো।মিষ্টি কথাটা শুনে তড়িৎগতিতে বলে উঠলো

” এসবের মানে কি নীলু? জানা নেই শোনা নেই হুদাই একটা মেয়েকে গিয়ে বলবি ,আমার ভাইয়ের তোমাকে খিব পছন্দ,তুমি কি ওর গালফ্রেন্ড হবা? ”

নীলুপু ভ্রু কুচকে বললো ” হ্যা বলবো,তাতে সমস্যা কি? ”

মিষ্টি অন্যদিকে মুখ করে বললো ” সমস্যা আছে,এভাবে হুট করে তুই এসব বলতে পারিস না,”

নীলুপু বিস্মিত হয়ে বললো ” মিষ্টি কি হয়েছে তোর,এমন কেন করছিস ? এটা বলায় সমস্যা কি? তাছাড়া আমি ডিরেক্ট বলবোনা তো,আগে নাম্বার নিবো তারপর সব ধীরে ধীরে হয়ে যাবে ”

” নীলু তুই ভুলে যাচ্ছিস ওরা তোর বাবার অফিসে চাকরি করে,তুই যেচে ছোট হবি কেন? ”

” আজব তো, ছোট হওয়ার কি আছে,,আচ্ছা পরিচিত হয়ে নিই,তাতে তো দোষের কিছু নেই! ”

” তোর যা ইচ্ছে তাই কর,আমি রুমে গেলাম,আমার মাথা ব্যাথা করছে।”

বলেই মিষ্টি ওপরের দিকে চলে যেতেই ওর হাত ধরে আটকালাম।আকষ্মিক হাত ধরায় মিষ্টি মনে হলো কারেন্ট শকের মতো অবস্থা হয়েছে।ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে। আমি মৃদু স্বরে বললাম

” ভয় পেয়ো না,কেউ দেখতে পায় নি।নীলুপু ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে গেছে ”

মিষ্টির মনে হচ্ছে আমার কথা বিশ্বাস হলো না।নীলুপুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যি সত্যিই নীলুপু ওই মেয়েটার কাছে যাচ্ছে। মিষ্টি ভ্রু কুচকে বললো

” এতোলোকের মাঝে হা ত কেন ধরছিস,কেউ দেখে ফেললে কি হতো ”

” এতো ভয় পাও কেন,,কেউ দেখবে না বলছি তো ”

” আমার মাথা ব্যাথা করছে,গেলাম ”

” পালিয়ে যাচ্ছো? ”

” পালাবো কেন? ”

” কারন ওই মেয়েটা কিছুক্ষণ পর আমার সাথে কথা বলবে,হাসাহাসি করবে, আর সেটা তুমি সহ্য করতে পারবে না তাই ”

” আমার সহ্য হবে না কেন? আর হাসাহাসি কেন,তার থেকে গভীর মুহূর্ততেও তো দেখেছি তাই না? তাই আশা করি এটা বুঝতে পারছিস যে আমার এসবে ইন্টারেস্ট একদম নাই ”

বলেই মিষ্টি ওপরের ঘরে চলে গেলো।আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।মনে হচ্ছে উল্টো নিজের প্যাচে নিজেই পড়ে গেলাম।

চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৪
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

মিঃ বিষন্ন,কি ভেবেছিস? আমি কিচ্ছু বুঝি না? আমায় জেলাস ফিস করাতে যে এসব করছিস সেটা আমি ভালো করেই জানি।আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে মেয়েদের সাথে লুতুর পুতুর করছিস যেন আমি বুঝতে পারি যে আমি তোর ওপর দূর্বল তাই তো? হাহাহাহা,বিষন্ন বাবু,তুমি ছোট তো ছোটোই রয়ে গেছে।এইবার দেখো এই মিষ্টি কি করে,তোমার রাস্তায় এবার তোমাকেই হাটাবো।

তখনি দরজায় টোকা পড়লো। দরজা খুলতেই দেখলাম তিশা এসেছে।তিশা বললো

” কিরে দোস্ত, তুই ঘরে কি করছিস?”

” কিছু না রে,মাথা ব্যাথা করছিলো,তাই শুয়ে ছিলাম। কি বলবি বল ”

” তোকে ডাকতে এসেছি।নীলু বললো তুই নাকি ওর ওপর রাগ করে চলে এসেছিস? ”

” আমি কারো ওপর রাগ করিনা।তুই যা,আমি এখন যাবো না ”

” দোস্ত প্লিজ চল না।আমার না একটা ছেলেকে খুব পছন্দ হয়েছে,তুই ছাড়া কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না,দোস্ত প্লিজ না করিস না ”

” তিশা দেখ আমায় এসবে প্লিজ জরাস না।মনে আছে কলেজে কি কান্ড বেঁধেছিলু,,নীলুকে বল ও হেল্প করবে,এসবে তো ওর খুব ইন্টারেস্ট ”

” দোস্ত তুই তো জানিস নীলু ছেলেদের সাথে কথাই বলতে পারে না।ও শুধু মেয়েদের সাথে কথা বলে সেটিং করিয়ে দিতে পারে,ছেলেদের সাথে কথা বলতে নাকি লজ্জা করে ওর ”

” সে যাই হোক,আমি পারবো না ”

” তোর পায়ে পড়ি দোস্ত,প্লিজ চল,ওই ছেলেকে আমার লাগবেই দোস্ত ”

” তোর না কয়দিন আগেই ব্রেকআপ হলো? ”

” ধূর ওইটা তো একটা ছা*গল ছিলো।তুই চল তো,প্লিজ প্লিজ প্লিজ ”

আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিশা হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই একটা ছেলের সাথে প্রচন্ড ভাবে একটা ধাক্কা খেলাম।ভাগ্যিস ছেলেটা ধরেছিলো,নইলে সিঁড়ি থেকে সোজা নিচে পড়ে যেতাম।ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।চোখ মেলতেই দেখলাম ধূসর রঙের একটা শার্ট পরিহিত ছেলে।চাপা ধরা চাপ দাড়ি। ছেলেটা বেশ সুদর্শন।আমার কো মড় জরিয়ে ধরে আছে।আমি নিজেকে সামলে দারালাম।জি লজ্জার ব্যাপার,ছেলেটা না জানি কি না কি ভাবছে।সরি বলবো তার আগেই ছেলেটা বললো

” আপনার লাগেনি তো? সরি আমি দেখতে পাইনি ”

বাহ্ ছেলেটা তো বেশ বিনয়ী। কেননা আমি নিজেই ছেলেটাকে দেখিনি,আমিই ধাক্কা দিলাম অথচ ছেলেটা কত সহজে সব দোষ নিজের করে নিচ্ছে। বিষয়টা সত্যিই খুব সুন্দর। আমি লজ্জার ভঙ্গিতে বললাম

” সবটা দোষ নিজের করে নিবেন না। তিশা এমন ভাবে নিয়ে যাচ্ছিলো যে আমিই আপনাকে দেখতে পাইনি,দোষটা আমার,আপনার না।সরি ”

ছেলেটা একটু লজ্জা পেলো মনে হলো, বললো ” না ঠিক আছে,সমস্যা নাই ”

আর কিছু বললাম না।একটা সিঁড়ি নামতেই ছেলেটা বললো ” সাবধানে যাবেন,তাড়াহুড়োর কিছু নেই ”

আমি আর তেমন কিছু বললাম না।ধরেই নিলাম অতি বিনয়ীভাব থেকেই কথাটা বলেছে।তিশা কাছে এসে বললো

” দোস্ত ছেলেটা কেমন? ”

” এটাই সেই ছেলে? যাকে পছন্দ করেছিস? ”

তিশা লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো ” হুম ”

” লজ্জা পাচ্ছিস কেন? ”

” না এমনিই,,আচ্ছা ও তোকে কি বললো? ”

” কেন শুনতে পাসনি? ”

” না, এতো সাউন্ডে গান বাজলে কিছু শোনা যায় নাকি? ”

” বলেছে আপনার বান্ধবীকে বলবেন সিড়ি দিয়ে কাউকে নিয়ে নামতে হলে আস্তে আস্তে নামতে ”

তিশা মন খারাপ করে বললো ” এটাই বলেছে? ”

” হুম ”

” এহহ,খুব জ্ঞানদাতা হয়েছে নাকি? সিঁড়ি দিয়ে কি আমি দৌড়াচ্ছিলাম নাকি? ”

” তোকে খেয়াল করেছে হয়তো,তাই বলেছে,তুই তো সবসময় এখানে ওখাবে যাচ্ছিস আসছিস তাই বলেছে। ছেলেটা তোকে ফলো করছে মনে হয় ”

” সত্যি বলছিস দোস্ত? ও সত্যিই আমায় ফলো করছে? ”

” হ্যা, অবশ্যই করছে,বিশ্বাস না হলে কাগজ আন,আমি লিখে দিচ্ছি ”

” আইলাবিউ বান্ধবী, আজকে তোকে এত্তোগুলা চকলেট কিনে দিবো ”

মিথ্যা কথাটা কেন বললাম নিজেই বুঝতে পারছি না।কেন জানি খুব মিথ্যা বলতে ইচ্ছে করছে।

______________

মিষ্টির সাথে ছেলেটার ধাক্কা খাওয়া,ছেলেটার সাথে মিষ্টির কথা বলা এইসব নিচ থেকে বিষন্ন একদৃষ্টিতে দেখছে।প্রচন্ড রা গি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিষ্টির পানে।হাত মুষ্টি করে নিজের রাগকে কন্ট্রোলে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।তখনি নীলু কাছে এসে বললো

” এই বিলু,মেয়েটা তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে ”

নীলু লক্ষ্য করলো ওর কথায় বিষন্নর কোনো রিয়েকশন নেই।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিঁড়ির দিকে।নীলুও সিঁড়ির দিকে তাকালো।দেখলো সেখানে মিষ্টি আর তিশা কথা বলছে।নীলু বিষন্নের হাত ঝাঁকিয়ে বললো

” কিরে কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না? ”

বিষন্ন নীলুর দিকে রাগি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ” আপু ডিস্টার্ব করিস না এখন,আমার মাথা ঠিক নেই ”

নীলু বিষন্নের এই রাগ সম্পর্কে জানে।তাই আর কিছু না বলে চলে গেলো।বিষন্ন একবার ছেলেটার দিকে তাকালো।ছেলেটা ওপরের তলা থেকে রেলিংয়ে হাত রেখে মিষ্টির দিকে চেয়ে আছে ।ছেলেটাকে বিষন্ন চেনে।তার বাবার অফিসের যিনি সহকারী ম্যানেজার, তার ছেলে।বিষন্ন নিজেকে আর সামলাতে পারছে না।ইচ্ছে করছে যে হাত দিয়ে মিষ্টিকে স্প র্শ করেছে সেই হাত ভে ঙ্গে গুড়িয়ে দিতে।

_____________

” হ্যালো জুনায়েদ ভাই, আমি ঈশা বলছি ”

” কোন ঈশা ”

” ভাইয়া আমি মিষ্টির বান্ধবী।খুব ক্লেজ ফ্রেন্ড আমরা ”

” ও আচ্ছা,কি বলার জন্য ফোন দিয়েছো বলো ”

” ভাইয়া আমি জানি আপনি মিষ্টিকে পছন্দ করেন,আপনি চাইলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি ”

” তুমি আমায় সাহায্য করবে? ”

” হ্যা করবো।আমি জানি আপনি দীপার সাথে যে কাজটা করেছেন সেটা মিষ্টির সাথেও করতে চান।”

” মা..মানে?কোন দীপা? কি কাজের কথা বলছো? ”

” কি বলেন ভাইয়া,সত্যিই মনে নেই? দীপাকে ডেকে নিয়ে গেলেন,ডিপার্টমেন্টের শেষের ক্লাস ঘরে জোড় করে ঢুকালেন।আবার ভিডিও করে ভাইরালও করে দিলেন,,ভুলে গেছেন? ”

” তু..তুমি এসব কিভাবে জানো সেটা আমি ? ”

” দীপা আমার রুমমেট ছিলো ভাইয়া।ও সব কিছু আমায় বলতো,এমন কি এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর যখন আ ত্নহ ত্যা করলো তার আগের রাতে ও সবকিছু আমায় বলেছে।এখন যদি আমি চাই আপনাকে ফাঁ সির দড়িতে ঝোলাতে পারবো,বুঝলেন ভাইয়া? ”

” ক..কি চাও তুমি? ”

” কিচ্ছু না,আপনি যা চান,আমিও তাই চাই ”

” মানে? ”

” আমি চাই দীপার সাথে যা হয়েছে সেটা মিষ্টির সাথেও হোক ”

” কি বলছো তুমি,মাথা ঠিক আছে তোমার? ”

” আমার কাছে পীর ফকির সেজে লাভ হবে না ভাইয়া।মিষ্টিকে বি*ছানায় নিয়ে যেতেই তো ওর পেছনে পড়েছেন,সেটা বুঝিনা ভেবেছেন?তবে ভাইয়া,আমি আপনাকে সাহায্য করবো,এখন আপনিই ভেবে দেখেন কি করবেন ”

” তুমি আমার সাথে ভার্সিটিতে দেখা করো,তারপর কথা হবে ”

” আচ্ছা ভাইয়া,ভালো থাকবেন ”

ব্যাস ! সব কাজ ওকে।এইবার তুই বুঝবি মিষ্টি এই ঈশাকে চ ড় মারার পরিণাম কতো ভয়ঙ্কর। তোকে তিলে তিলে শেষ করে দিবো আমি,একদম শেষ।

______________

আঙ্কেল আন্টি একসাথে কেক কা টছেন।তাকে ঘিড়ে ধিরে ধরে সবাই দারিয়ে আছেন।কেন জানিনা বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে,তারা বেঁচে থাকলে হয়তো এইভাবে বিবাহবার্ষিকী পালন করতো।এসব ভাবতেই চোখে জল চলে আসছে। তখনি হঠাৎ কেউ একজন আমার মুখ চে পে ধরলো।আচমকা ঘটনায় আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।মুখ চেপে ধরায় চিৎকার ও করতে পারছি না।যে শব্দটুকু হচ্ছে সেটা কারো কানে পৌছার কথাও না।লোকটা আমায় কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে।আমি প্রাণ পনে চেষ্টা করলাম ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু পারছি না।লোকটা একটা অন্ধকার রুমে আমায় নিয়ে গেলো।অন্ধকার রুমে ঢুকেই সেই লোকটা তার বলিষ্ঠ হাত আমার কো*মরের ওপর রাখলো।এতো জোরে কো*মর চেপে ধরলো যে ব্যাথায় আমার চোখের কয়েকফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।একটু চোখ মেলতেই সামনে যাকে দেখলাম সে……..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here