তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -১১+১২

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১১
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

মিষ্টির চোখ টলমল করছে।ঈশাপু আমার ঘা ড় থেকে দুহাত সরিয়ে নেমে গেলো।আমি হতভম্ব হয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলাম।মিষ্টি চোখের জল মুছে দৌড়ে নিচে নামলো।দুবার ডাকলাম,কিন্তু মিষ্টি শুনলো না।বুঝতে পারলাম এইটুকুতেই অনেককিছু হয়ে গেছে।মিষ্টি এখন আমায় খারাপ চরিত্রের ছেলে ভাবছে।

________________

” কিরে মিষ্টি এভাবে দৌঁড়ে কোথায় যাচ্ছিস? আর একটু হলেই তো দু’জনে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতাম ”

নীলুর কথার কোনো উত্তর না দিয়েই নীলুুর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম।বারবার চোখের সামনে পই দৃশ্যটা ভেসে আসছে কেন? কেন আমার এতো কষ্ট হচ্ছে? এই কষ্টের কারনটা কি?

চোখের সামনে সবকিছু কেমন যেন ঘোলা হয়ে আসছে।দরজার নিচেই বসে রইলাম।চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে।কিছুতেই কেন জানি কান্না আটকাতে পারছি না।বু কের ভেতরটা কেমন যেন ফাঁ কা হয়ে যাচ্ছে,দম বন্ধ লাগছে।মনে হচ্ছে এখন আমার কাছে বাঁ চা ম রা দুটোই সমান।তবে কি বিষন্ন এতোদিন যে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দিচ্ছিলো সেইসব মিথ্যে নাটক ছিলো?।

হাতের পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছলাম।আয়নার সামনে দারালাম।নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম ” আমি কেন কান্না করছি? আমি তো বিষন্নকে ভালোবাসি না,ওর যাকে ইচ্ছে তার সাথে ছাঁদে একান্ত সময় কাটাতেই পারে,তা দেখে আমি মন খারাপ কেন করবো? বিষন্ন আমার কি হয়? কিচ্ছু না।মিষ্টি তুই নিজেকে সামলা “।

হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো।কেউ একজন বলে উঠলো

” কে রে ঘরে ঢুকেছে রে,এই দরজা খোল ”

দরজা খুলতেই দুইজন বুড়ি ঢুকলো।তাদের হাতে একটা প্লেটে পান সাজিয়ে রাখা।ওদের থেকে একজন বললো

” ওই মাইয়া,তুই কেডা? তোরে তো চিনবার পাইতাছি না ”

” দাদি আমি মিষ্টি,নীলুর বান্ধবী, আপনারা ভালো আছেন? ”

” অহন কতা কমুনা,ঘুম আইতাছে,এই বয়সে ছাঁদে উইঠা নাচ গান শুনতে হইলো,কি যুগ আইলো রে বাপ।সোয়ামি বউ দু’জন একসাথে গান কইলো,কি বেসরম, ছিঃ।ওই ছেমড়ি সর এইহান থাইকা,এইহানে কাউরে আসতে দিবি না ”

” আচ্ছা দাদি আপনি ঘুমান ”

দুই বুড়ি বিছানায় উঠে বসলো।বসার সাথে সাথে গায়ের সব কাপড় খুলতে লাগলো।এখানে আর থাকা যাবে না,দ্রুত ঘর থেকে বেড় হয়ে দরজা বন্ধ করতেই নীলু আসলো।নীলু ভ্রু কুচকে বললো

” কিরে দরজা বন্ধ করছিস কেন? ”

” ভেতরে দুই বুড়ি গেছে,ওরা নাকি এই ঘরেই থাকবে ”

” থাকবে মানে কি? আমার ঘরে আমি ওই দুই বুড়িরে রাখবো না,”

বলেই নীলু দরজা খুলতেই দুই বুড়ির মধ্যে থেকে একজন বললো ” মর হা রাম জাদি,দরজা কেন খুলচোস,”

নীলু ঠাস করে দরজা বন্ধ করলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

” আজকে এদের আর বেড় করা সম্ভব না,এই বুড়ি দুইটা যে কেন আসে এই বাড়িতে,এদের দেখলেই রাগে গা জ্বলে যায় ”

” এনারা তোর কে হন? ”

” আমার দাদিমা,আর আরেকজন হলো তার বোন।দাদিমার মাথা খারাপ সবসময় আবোল তাবোল প্যাচাল পারে।”

” ও আচ্ছা ”

” এখন কোথায় থাকবো আমরা? অন্য ঘর গুলিও তো খালি নেই,আত্মীয়স্বজন দিয়ে প্রতিটা ঘর বন্ধ হয়ে গেছে।”

” কি বলিস? এখন উপায়? ”

নীলু চিন্তিত ভঙ্গিতে কি যেন ভাবতে লাগলো।আমি নীলুর দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ চোখ পড়লো সামনের রেলিঙের দিকে।বিষন্ন হাতে একটা বালিশ নিয়ে দারিয়ে আছে।নীলু বিষন্নকে দেখতে পেয়ে বললো

” কিরে বিলু,তুই বালিশ নিয়ে দারিয়ে আছিস কেন? ”

বিষন্ন গম্ভীর হয়ে বললো ” আমার ঘরে আন্ডা বাচ্চা দিয়ে ভর্তি।পুরো ঘর এলোমেলো করে ফেলেছে ”

” আর বলিস না,তোর ঘরে আন্ডা বাচ্চা আর আমার ঘরে দাদিমা আর ওনার বোন।বাড়িতে কেউ আসলে আমাদেরই আর থাকার যায়গা থাকে না ”

তখনি আন্টি নিচ তলা থেকে উঠে এসে নীলু,বিষন্ন আর আমায় দেখে বললো

” কিরে তোরা ঘুমাবি না? কতো রাত হয়েছে,”

নীলু রে গে রে গে বললো ” আমার ঘরে দাদি, আর ভাইয়ের ঘরে বাচ্চারা,আমরা থাকবো কোথায়?”

আন্টি বললো ” মেঝেতে একটু কষ্ট করে থাক রে মা,একটা রাতের ব্যাপার তো ”

নীলু বিরক্তির স্বরে বললো ” আমি ওখানে থাকতে পারবো না।দাদি সব কা পড় খু লে ঘুমায়,”

বিষন্ন বললো ” মা তুমি যাও ঘুমাও,আমি ব্যাবস্থা করছি ”

আন্টি সস্তির নিশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে চলে গেলেন।নিচ থেকে তিশা আর ঈশাও উঠে এলো।ঈশা বললো

” আরে তোরা সবাই এখানে,কি নিয়ে কথা হচ্ছে? ”

নীলু বললো ” ঘুমানোর যায়গা নেই,সব ব্লোক ”

ঈশা একটু নাক ছিঁচকে বললো ” কি বললি? আমি কিন্তু রাতে না ঘুমিয়ে থাকতে পারিনা,”

তিশা বললো ” ছাঁদে গিয়ে ঘুমা তাহলে ”

বিষন্ন ফোন বেড় করে সময় দেখে বললো ” এখন বাজে রাত তিনটা,আর কিছুক্ষণ পরেই তো সকাল হবে।চলো আমরা সবাই মিলে ছাঁদে আড্ডা দিবো,”

ঈশা বিষন্নের কাছে গিয়ে পর গান টে নে বললো ” একদম ঠিক বলেছো বিষন্ন, চলো আমরা গানের কলি খেলবো ”

বলেই বিষন্নের হাত ধরে টে নে ছাঁদে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাগে আমার র ক্ত টগবগ করছে।ইচ্ছে করছে ঈশার গা লে ইচ্ছে মতো চ ড় বসিয়ে দিই।বিষন্ন একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।এই হাসির অর্থ কি বুঝতে পারলাম না।

ছাঁদে পাঁচটা চেয়ার গোল করে বসানো।আমার একদিকে নীলু,আরেকদিকে তিশা।তিশার সাথেই ঈশা বসেছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেই সেজেছে। ঠোঁ টে গাঢ় লি পস্টিক দিয়েছে।বিষন্ন নিচে গেছে গিটার আনতে।একটু পর গিটার নিয়ে আসতেই ঈশা বিষন্নের হাত ধরে টেনে ওর পাশের চেয়ারটায় বসালো।ঈশার এমন কর্মকান্ডে বিষন্নকে তেমন অবাক হচ্ছে না।বিষন্ন বসে আমার দিকে তাকালো।আমি তাকালাম অন্যদিকে।

বিষন্ন গিটার প্লে করে গান গাইলো,

তুমি বললে আজ দু’জনে
নীল রঙা বৃষ্টিতে ভিজবো
রোদেলা দুপুরে একসাথে
নতুন সুরে গান গাইবো
শেষ বিকেলের ছায়ায় নীল
আকাশের বুকে আমি
লাল রঙা স্বপ্ন আঁকবো।

এইটুকু শুনেই আমি উঠে দারালাম।কেন জানি খুব রাগ হচ্ছে। রাগ হওয়ার দুটি কারন আছে।প্রথম কারন হলো ঈশা বিষন্নের কাধে দুই হাত রেখেছে,আর দ্বিতীয়ত হলো বিষন্ন এইটুকু গান গাওয়ার পুরো সময়টা ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।প্রথমটা মেনে নিলেও দ্বিতীয় কারনটা কিছুতেই এক্সেপ্ট করে নিতে পারলাম না।উঠে দারাতেই নীলু বললো

” কিরে কি হলো? ”

” তোরাই শোন, এই বাদরের মতো স্বরের গান আমার শোনার ইচ্ছে নেই ”

বলেই ছাদের কোনে এসে দারালাম।বিষন্ন একবারও আমার দিকে তাকালো না।এমন দূরত্বে দারালাম যেন বিষন্নের গান শোনা যায়।বিষন্ন গান গাইছে।এতো সুন্দর করে কিভাবে গায় ও? যেকোনো মেয়ে এতো সুন্দর কন্ঠের টানা টানা সুরে গান শুনলে বিষন্নের প্রেমে হাবুডুবু খাবে।পাশের টবে রাখা গোলাপ ফুলটায় হাত বুলাচ্ছি আর বিষন্নের গান শুনছি।গান শেষ।সবাই হাত তালি দিলো।ওদের আড্ডার দিকে তাকাতেই দেখলাম ঈশা বিষন্নকে জ রিয়ে ধরলো।এবার আর কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারলাম না।কাছে গিয়ে ঈশার গালে ঠা স করে একটা চ ড় বসিয়ে দিলাম।নীলু, তিশা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিষন্নের মুখে ধূর্ত হাসি।ইচ্ছে করছে এই বাদরটার গা লেও একটা চ ড় বসিয়ে দিই।

ছাঁদ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামছি।এই বাড়িতে আর এক মূহুর্ত নয়।বিষন্নের পাশে কোনো মেয়েকেই আমি সহ্য করতে পারবো না।ওদের বাড়ি থেকে বেড় হয়ে রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম।বার বার মনে একটা কথা ভসে উঠছে ” বিষন্নর সাথে ঈশার কি কোনো সম্পর্ক তৈরী হয়েছে ? যদি না’ই থাকে তাহলে ঈশার এমন আচরনে বিষন্ন কেনো কিছু বলছে না? আর যদি কিছু থেকেও থাকে,তাহলে আমি কি পারবে সেটা মেনে নিতে?

বিষন্ন আমার পেছন পেছন আসবে সেটা আমি জানি।আমায় যেন খুজে না পায় তাই হোস্টেল যাওয়ার বিপরীত রাস্তায় হাটা ধরলাম।হঠাৎ মনে হলো কেউ যেনো আমায় ফলো করছে।কয়েকবার পেছন ফিরলাম,কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না।আবারো হাঁটছি, তখনি কয়েকটা ছায়া আমার সামনে এসে পড়লো।পেছন ফিরতেই দেখি পাঁচ,ছয় জন দারিয়ে আছে।তাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে ম দের বো তল।তারা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।আমি আবারো হাটছি,আমার পেছন পেছন ওরাও হাটতে শুরু করলো।ভয়ে আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে।জোড়ে দৌড় দিবো তখনি ওদের মধ্যে থেকে কেউ একজন আমার ও ড়না টে নে ধরলো।গ লায় ও ড়না চাপ পড়ে রাস্তায় তাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় প ড়ে গেলাম।ওরা গোল হয়ে আমার সামনে দারিয়ে আছে।ওদের মধ্যে থেকে দু’জন নিজের শা র্ট খু লতে লাগলো….

চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১২
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

মিষ্টি যে আমায় একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করেছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি।এটা যে এতো তারাতাড়ি বুঝতে পারবো সেটা কখনো ভাবতেই পারিনি।ঈশার কারনে মিষ্টির চেপে রাখা ভালোবাসা আজ বুঝতে পারলাম।মিষ্টি,আজ তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা বের করিয়েই ছারবো।

গিটারটা রেখে নিচে আসলাম।কিন্তু মিষ্টিকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।সামনে তাকাতেই দেখলাম সদর দরজা খোলা।মানে কি? মিষ্টি কি কোথাও চলে গেছে নাকি? এতো রাতে একা বেড় হয়ে গেলো,?

রাস্তায় বেড় হলাম,কিন্তু মিষ্টিকে দেখতে পাচ্ছি না।রাস্তার দুইদিক জন মানব শূন্য। মিষ্টি যদি যায় তাহলে তো হোস্টেলের দিকেই যাবে।বাইক স্টার্ট দিলাম।রওনা হলাম মিষ্টির হোস্টেলের দিকের রাস্তাটায়।বেশ কিছুদূর যেতেই মনে মনে একটা আশঙ্কা হলো,মিষ্টি তো এতো তারাতাড়ি এতদূর কখনোই আসতে পারবে না,দৌড়ে আসলেও তো এতো কম সময়ে এতদূর রাস্তা আসা সম্ভব না। তাহলে কোথায় মিষ্টি? ও কি কেনো খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়েছে? এসব ভাবতেই সারা শরীর হির হির করে উঠলো।মিষ্টি, মিষ্টি বলে কয়েকবার ডাকলাম,কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না।বাধ্য হয়ে আশেপাশের গলি গুলোতে দেখতে লাগলাম।যদি খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়েও যায় তাহলে এসব গলিতেই থাকবে। মিষ্টিকে নিয়ে এসব ঘটনাও কল্পনা করতে হচ্ছে! আরেকটু তারাতাড়ি বেড়িয়ে এলে হয়তো মিষ্টিকে হারিয়ে ফেলতাম না।

_________

মিষ্টি দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে দিয়ে বু ক ঢেকে প্রাণ পনে ছুটছে একটা অন্ধকার গকির মধ্যে দিয়ে।তার পেছন পেছন ছুটছে মা তা ল কয়েকটা ন রপশু।তাদের চোখে লা ল সা। রাতে একা একটা মেয়েকে পাওয়ার লা ল সা তাদের চোখে।মিষ্টির ওপর যখন দুইটা ছে লে একসাথে ঝা পি য়ে পড়ে তখন মিষ্টি কোনোভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,একজনের হাত লেগে মিষ্টির ব্লাউজের বু কে র দিকটা অনেকাংশে ছিঁ ড়ে যায়।সেই অংশে হাত রেখেই মিষ্টি ছুটছে।শাড়িতে বারবার পা পেঁচিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকার গলি হওয়ায় সামনের একটা ল্যাম্পপোস্টের সাথে মিষ্টি প্রচন্ড জোড়ে একটা ধাক্কা খেলো।মিষ্টি লু টিয়ে পড়লো মাটিতে।হাত দিয়ে কপালে স্পর্শ করতেই হাত র ক্তে ভি জে উঠলো।মিষ্টি ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলো।তার আর কিচ্ছু করার নেই।সে জ্ঞান হারিয়েছে।

_____________

সবকয়টা গলিতে খুজেও কোথাও মিষ্টিকে দেখতে পেলাম না।আচ্ছা মিষ্টি বিপরীত রাস্তায় যায়নি তো? ও তো ভালো করেই জানে যে আমি ওর পেছন পেছন আসবো,।আমি যেন ওকে খুজে না পাই এজন্য কি উল্টো রাস্তায় চলে গেছে? ওহহ শিট।

বাইকে স্টার্ট দিয়ে বিপরীত রাস্তার দিকে গেলাম।একটু দূর যেতেই একটা রাস্তার মাঝে এক টুকরো কাপর নজরে আসলো।বাইক থেকে নেমে কাপড়টা হাতে নিতেই দেখলাম এইটা সাদা রঙ্গের ব্লা উ জে র হাতা। মুহূর্তেই খেয়াল হলো,মিষ্টিও তো সাদা রঙ্গের ব্লা উজ আর কালো শাড়ি পড়েছিলো।তার মানে কি এটা মিষ্টির?। সামনে একটা গলি নজরে পড়লো।গলির একটু ভেতরে যেতেই কয়েকজনকে ফিসফিস করে কথা বলতে শুনলাম।বুঝতে বাকি রইলো না এখানে কি হচ্ছে।

______________

চোখ মেলে আশেপাশে তাকালাম।আবছা আলো চারদিকে। একটু উঠতেই মাথা যেন ছি ড়ে পড়বে এমন অসহ্য যন্ত্রণা হলো।মনে করার চেষ্টা করলাম আমি কোথায়।তখনি মনে পড়লো সেই ভয়ঙ্কর মুহুর্তের কথা,যখন কয়েকটা নরপশু আমার পেছন নিয়েছিলো।হাত কো ম ড় বেয়ে নিচে নামালাম। বুঝালম আমার পড়নে শুধু ব্লাউজ আর পেডিকোট।বু কটা কেমন যেন ছ্যাত করে উঠলো।আমি কি আমার সতিত্ব হারিয়ে ফেলেছি?। তখনি কোত্থেকে যেন একটা হাত এসে পড়লো আমার সামনে।এটা একটা মানুষের হাত।শুধু একটা হাত দেখে ভয়ে চিৎকার দিলাম।একটা কথা কানে ভেসে এলো,কথাটা হলো ” এই হাত দিয়ে ওকে টার্চ করেছিস তাই না?। তারপর একটা প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে উঠলো কেউ।তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে নেই।

_____________

ভাঙ্গা ম*দের বোতল হাতে দারিয়ে আছি।সেই ভাঙ্গা বোতল দিয়ে টপটপ করে র ক্ত পড়ছে।সামনে পড়ে আছে তিনটা লা শ।আমার রাগ এখনো কমছে না,সারা শ রী র রাগে থরথর করে কাঁপছে। বোতলটা ফেলে দিয়ে মিষ্টির কাছে গেলাম।আমার শার্টটা খুলে মিষ্টির শ রীরে পেচিয়ে দিলাম।মিষ্টির মাথা দিয়ে র ক্ত পড়ছে।ঠোঁ ট টাও অনেকটা কে টে গেছে। ” মিষ্টি,মিষ্টি চোখ খোলো,কিচ্ছু হবে না তোমার,চোখ খোলো মিষ্টি, ” মিষ্টিকে ডাকতেই কেউ একজন আমার দিকে একটা বোতল এগিয়ে দিলো।তাকিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে।মেয়েটা নরম স্বরে বললো

” এমনে ডাকলে হবে না সাহেব,এই নেন জলের বোতল,মুখে জলের ছিঁটা দেন,”

বোতলটা হাতে নিয়ে মিষ্টির মুখে জলের ছিঁটে দিলাম।কিন্তু মিষ্টি চোখ মেলছে না।মেয়েটা বললো

” এক কাজ করেন সাহেব,সামনে আমার বাড়ি,বাড়িতে চলেন,ওনার চিকিৎসা হওয়া দরকার ”

মেয়েটার কথায় মিষ্টিকে কোলে নিলাম।মেয়েটা আগে আগে যাচ্ছে, পেছন পেছন মিষ্টিকে কোলে নিয়ে যাচ্ছি।

মিষ্টিকে বিছানায় শুয়ে দিলাম।মেয়েটা একটা কাপড়ে করে ভায়োডিন নিয়ে মিষ্টির কে টে যাওয়া অংশে দিচ্ছে।ওদের বাড়িটা টিনের। ভাঙ্গা একটা বাড়ি।ঘরে দুইটা চেয়ার আর বিছানা।বিছানায় কাঠের ওপর একটা চাঁদর বিছানো।মেয়েটা বললো

” আপনে চিন্তা করবেন না,জ্ঞান ফিরছে।এখন ঘুমাচ্ছে।মেয়েটার শরীর ক্লান্ত ”

আমি মুগ্ধ হয়ে বললাম ” তুমি কি ডাক্তারি জানো? ”

” হ,, একটু আধতু জানি।বাইরে চলেন।এনার ঘুম প্রয়োজন ”

আমি আঙ্গিনায় একটা বেতের চেয়ারে বসে আছি।আমার সামনে বসে আছে মেয়েটা।বয়স খুব কম,দেখে মনে হচ্ছে পনেরো,কি ষোলো।মেয়েটির মুখ গোল,মায়াবী চেহারা,পাতলা শরীর।মেয়েটিকে বললাম

” নাম কি তোমার? ”

” পদ্ম ”

” এতো রাতে ওই গলিতে তুমি কি করছিলে? ”

” সাহেব মনে হয় আমারে চেনেন নাই, একটু ভালো করে দেহেন তাহলেই চিনবেন কেন ওই গলিতে আমি ছিলাম ”

মেয়েটির দিকে তাকালাম।এইসব মেয়েরা বেড় হয় আঁধারে। কি আশ্চর্য এতোটুকু মেয়ে এই লাইনে?। মেয়েটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো

” সাহেব চিনতে পারছেন? ”

” হ্যা। তোমার বয়স কত? ”

” আঠারো ”

” আশ্চর্য, এতো কম বয়সে তুমি এই লাইনে কেন? ”

” কি করবো কন সাহেব,ছোট থাকায় বাপ মা ছাইড়া চইলা গেলো।বড় হইলাম একটা অনাথ আশ্রমে।বয়স যখন পনেরো,তখন অনাথ আশ্রমের মালিকের ছোট ছেলে আমারে ডাইকা নিয়া গেলো একটা ঘরে।আমি ছোট,তখন এসবের কিছুই বুঝি নাই।তারপর থেকে ওনার ছোট ছেলে প্রায় আসতো,আমার শ রী রে হাত দিতো।আবার কখনো কখনো বন্ধুদেরও নিয়ে আসতো”

” চুপ করো পদ্ম ”

” আইচ্ছা,”

মনে মনে খুব খারাপ লাগছে।এই পৃথিবীতে কত দূখী মানুষ আছে।মনে মনে ঠিক করলাম এই মেয়েকে একটা কাজের সন্ধান দিবো।মেয়েটা বললো

” সাহেব,কি এতো ভাবেন? আপনে চাইলে আমার সাথে রা ত কা টাইতে পারেন।আজ একটা কাস্টমার ও পাইনাই ”

মেয়েটার কথা শুনপ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।এইটুকু মেয়ে অবলীলায় কিসব বলছে।স্বাভাবিক স্বরে বললাম

” আমি ওরকম না পদ্ম ”

” ভুল বললেন সব ছেলেরাই একই,মেয়েদের শ রীর দেখলে তারা ঠিক থাকতে পারে না।আপনি যদি আমার শ রী র দেখেন আপনিও ঠিক থাকতে পারবেন না। শা ড়ি খুলবো? ”

” পদ্ম তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো ”

” আচ্ছা আর বলবো না ”

এইটুকু মেয়ে দুনিয়ার নিষ্ঠুরতা কতো কাছ থেকেই না দেখছে।মেয়েটাকে বললাম

” পদ্ম, তুমি আমার সাথে যাবে? ”

” দেখলেন আপনেও সবার মতো হয়ে গেলেন।”

” আমি সেভাবে বলিনি,আমি তোমায় আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই।আগে তুমি পড়ালেখা শিখবে,তারপর চাকরি।তুমি নাহয় আমাদের বাড়িতে কেয়ার টেকার হয়ে থাকলে? ”

” আপনে সত্যি কইতাচেন? ”

” হ্যা সত্যি বলছি ”

” ভাইজান,আমারে ক্ষমা কইরা দেন।খারাপ মানুষের সাথে থাকি তো,তাই সবাইরে খারাপ মনে হয়।আপনি অনেক বড় মনের মানুষ ”

” তুমি পড়ালেখা করতে চাও তো? ”

” আমার খুব ইচ্ছা পড়ালেখা করার ”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

” ভাইজান আপনে কি ওই আপারে ভালোবাসেন? ”

” হ্যা ”

” আপনের নাম কি বিষন্ন? ”

” আশ্চর্য তো,তুমি কিভাবে জানলে? ”

” ওই আপার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বিরবির কইরা আপনার নাম বলতেছিলো,”

” তুমি তো বেশ বুদ্ধিমতী ”

_______________

চোখ মেলতেই দেখলাম আমার সামনে কয়েকজন দারিয়ে আছে।আবছা আবছা তাদের দেখতে পাচ্ছি।দৃষ্টি একটু স্পষ্ট হতেই দেখলাম আমার বেডের কাছেই বিষন্ন ঘুমঘুম চোখে বসে আছে।সাইডে নীলু আর তিশা দারিয়ে আছে।আমার চোখ মেলা দেখে নীলু বিষন্নকে বললো

” এই বিলু, দেখ মিষ্টির জ্ঞান ফিরেছে ”

বিষন্ন চমকে উঠে আমার কাছে এসে দারালো।আমার কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো ” তুমি ঠিক আছো তো মিষ্টি? কষ্ট হচ্ছে? ”

আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম।মাথায় চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।বাম সাইডে একটা মেয়ে।মেয়েটা বেশ সুন্দরী।সে হাসিহাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।নীলু বললো

” তোর পাশে বিলু সারারাত বসে ছিলো,দেখ বেচারা ঘুমে চোখ লাল হয়ে গেছে ”

বিষন্নকে ধীর স্বরে বললাম ” বিষন্ন, তুই ঘুমাতে যা,আমি ঠিক আছি।”

বিষন্ন কিছি বলতে যাবে তার আগেই বললাম ” আমি ভালো আছি বিষন্ন, সত্যিই ভালো আছি,তোর চোখ লাল হয়ে গেছে,যা ঘুমা ”

বিষন্ন কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।চলে যাওয়াতে বুঝলাম এতোক্ষণ ও আমার হাত ধরে বসে ছিলো। অথচ আমি সেটা টেরই পাইনি।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here