নিঃশ্বাসে তুই পর্ব -২০+২১

#নিঃশ্বাসে_তুই |২০|

নিস্তব্ধ কক্ষ জুড়ে গুমোট নিরবতা। দুজন মানুষের উপস্থিতির পরেও কক্ষটি কেমন নির্জীব। কারো মুখে কোনো কথা নেই। অনেক কথা দুজনের মনে কিন্তু কেউ পারছে না বলে উঠতে। ব্যর্থ হয়ে পুষ্প মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্য দিক। কিন্তু আরেকজন! সে তো আজ বলবেই। তাকে যে আজ বলতেই হবে। নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। ফলস্বরূপ এর থেকেও বেশি খারাপ কিছু ঘটতেও হয়তো সময় লাগবে না। শুরুটা বিভোরই করল৷ গলা ঝেড়ে নিল বারকয়েক। দীর্ঘ সময় প্রস্তুতির পর ভেঙে ভেঙে বলল,

“পুষ্প… আশা করি তুমি আমার প্রতিটি কথা বোঝার চেষ্টা করবে। দেখো পুষ্প তোমার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যে কিঞ্চিৎ হলেও আমি দায়ী তা আমি স্বীকার করছি। একপাক্ষিক ভাবে তোমার মনে যেটা চলছে তা থেকেই এসব ঘটেছে তা আমার কাছে সুস্পষ্ট। কিন্তু কী করব বল সবকিছু জেনে, বুঝেও আমি নিরুপায়। অহমি আর তোমাকে যখন আমি টিউটর হিসেবে গার্ড দিতাম ঠিক সেসময় আমার পাঠ্যবইয়ের মধ্যে তোমার রাখা চিরকুট টা পেয়ে আমার কিন্তু বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি যে ওটা তুমি রেখেছ৷ শত হলেও তখন তোমরা আমার একপ্রকার স্টুডেন্ট ছিলে। তোমাদের দুজনের হাতের লেখা থেকে শুরু করে সবকিছুই আমি গার্ড করতাম গভীর মনোযোগে। সেখানে এই সামান্য বিষয় ধরতে পাড়াটা আমার কাছে কঠিনসাধ্য কিছু নয়। কিশোরী মনের আবেগে ভেসে তুমি যে ভুল রাস্তায় পা বাড়িয়েছ সেটা বোঝাতেই তারপর থেকে
এই অব্দি তোমাকে আমি ইগনোর করে চলেছি। কারণ তার আগেই আমার জীবনে প্রমির আগমন ঘটেছে। বিশ্বাস করো তবু যদি আমি তখন একা হতাম তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না কিন্তু কী করব বলো আমার হৃদয়ের সকল অনূভুতি যে তার আগে থেকেই তোমার বোনকে ঘিরে। অজান্তে হলেও এসবই সত্যি। এমতাবস্থায় আমার পক্ষে তো কখনোই প্রমিকে ঠকানো সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রমি বিহীন আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। তুমি একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে। আশা করি আর কোনো ভুল তোমার দ্বারা হবে না। জীবন টা অনেক বড়। এসব পিছুটান ভুলে লাইফে মুভ অন করো। জীবনের পথে এগিয়ে চলো। আর একটা কথা, এসব কিছু কোনো ভাবেই প্রমিকে জানতে দিও না প্লিজ। মেয়েটা তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসে। তোমার জন্য এইটুকু সময়ে পাগল প্রায়। খুব কষ্ট পাবে। তুমি আমার ছোট বোনের মতো। অহমির থেকে তোমাকে কখনো আলাদা চোখে দেখিনি আমি। আশা রাখছি বড় ভাই মনে করে আমার উপদেশ গুলো মেনে চলবে।”

কথা শেষ হতেই সটান হয়ে উঠে দাড়াল বিভোর। এক মুহূর্ত সময় ব্যয় না করে বড় বড় কদম ফেলে বেড়িয়ে গেল কেবিন থেকে। শার্টের হাতায় ভেজা চোখের পাতা মুছে নিল। এমনটা তো সে চায়নি কিন্তু সে নিরুপায়। বোন সম হবু শালিকার তার প্রতি এমন অনুভূতি একেবারেই কাম্য নয়। তবুও পিচ্চি টার জন্য ব্যাপক খারাপ লাগছে তার। সে মন প্রাণ উজার করে চাইল পুষ্পর জীবনে যেন উপযুক্ত কেউ আসে। যে ওকে সঠিক ভালবাসা দিতে পারবে।

এদিকে এতক্ষণের নিঃশব্দে বয়ে চলা অশ্রুকণারা এবার যেন বাঁধ ভাঙল। বিভোর বেড়তেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল পুষ্প। কিশোরী বয়সের আবেগ এতো সহজ বিষয় নয়। এ বয়সে একবার মন ভাঙলে তা জোড়া লাগানো সহজ সাধ্য নয়। বিভোর যখন কেবিনে এসেছিল তখন অব্দিও পুষ্পর মনে একটা সূক্ষ্ম আশা জুড়ে ছিল সবকিছু পাল্টে যাওয়ার। কিন্তু না তা আর হলো না। সবকিছু শেষ হয়ে গেল। ভেঙে গেল পুষ্প নামক সতেজ কিশোরীটির ছোট্ট হৃদয়। সেখানে শুধু এখন কালো মেঘের ঘনঘটা।

.

নিজের ঘরে পায়চারি করছে অহমি। বাড়িতে ফিরেছে দশ মিনিট হলো। আসার আগ পর্যন্ত ধ্রুবর সঙ্গে তার আর দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। সেই থেকে মনটা ছটফট করছে। বারংবার ভাবছে, ‘লোকটা কী রেগে আছে তবে?’ ফোন হাতে নিয়ে নাড়ছে-চাড়ছে অথচ ফোন করার সাহস পাচ্ছে না। ভীষণ নার্ভাস হয়ে আছে। বাড়িতে এসেই সর্বপ্রথম সে মাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে অনেকটা সময় তারপর শক্ত একটা চুমু খেয়ে রুমে চলে গেছে। তাহমিনা বেগম মেয়ের কান্ডে মোটেও অবাক হননি। বরং সে জানে তার মেয়েটা এমনই। বাড়ির বাহিরে এক রাত কোথাও থাকলেই বাড়িতে এসে আহ্লাদী হয়ে ওঠে। প্রতিবার ব্যাপারটা সে রকম হলেও এবারে যে ব্যাপারটা পুরোপুরি ভিন্ন তা তো আর তিনি জানেন না। তার দৃষ্টির অগোচরে ঘটে গেছে কতকিছু। যা তারজন্য একেবারেই কাম্য নয়।

ফোন নিয়ে পায়চারি করতে করতে যখন সে পুরোপুরি উদ্দ্যত হলো যে এবারে ফোনটা করেই ফেলবে তখনই তার ফোনটা নিজে থেকেই বেজে উঠল। অকস্মাৎ ঘটনায় অহমি চমকে উঠল। ভীত মনটা এবার দুরুদুরু কাঁপছে। ফোনের স্কিনে তাকাতেই তার নার্ভাসনেস যেন দ্বিগুণ হলো। কম্পিত হস্তে ফোন রিসিভ করে কানে তুলল। ওপাশ থেকে ভেসে এলো সূক্ষ্ম ধমক।

“এতো সময় লাগে? এতো স্লো হলে চলবে কীভাবে? আই ডোন্ট লাইক ইট।”

অহমি আমতা আমতা করল। কিছু বলতে পারল না। ধ্রুবর বিরক্তি বাড়ল তবুও কন্ঠ শিথিল রেখে বলল,

“পৌঁছে ফোন করা উচিত ছিল।”

অহমি একবারেও আমতা আমতা করছে কিছু বলতে পারছে না। ধ্রুবর রাগ এবার আকাশ ছুলো। বড়সড় ধমক দিয়ে বলল,

“এই মেয়ে তোতলাচ্ছ কেন? প্র’তি’ব’ন্ধী নাকি? স্ট্রেইট ফর কথা বলবে। এমন নেকামি আমার পছন্দ নয়। মনে থাকবে?”

অহমি তোতলাতে গিয়েও অনেক কষ্টে বলল, “থাকবে।”

উত্তর পেয়ে ধ্রুব কিছু টা শান্ত হলো। নিরেট কন্ঠে বলল,

“ওকে! সময় মতো সব খেয়ে নিও। খাবারে অনিহা করবে না। কে’ঙ্গা’রু বউতে আমার পোষাবে না। খেয়ে-দেয়ে শরীর ফিট রাখবে। অলওয়েজ বি স্ট্রং থাকতে হবে। ওকে?”

“ও ও ওকে।”

“বাই।”

বাই বলতে দেড়ি তো ধ্রুবর কল কাটতে দেড়ি নেই। এদিকে অহমি হাঁপাচ্ছে। শুরু হয়ে গেছে লোকটার ধমকাধমকি। ভাল্লাগে ধ্যাত। মনে মনে ধ্রুবকে ইচ্ছে মতো বকতে বকতে সহসা অহমির মনে পড়ল পুষ্পর কথা। ততক্ষণাৎ কল লাগাল পুষ্পর নম্বরে। এবারেও কল বাজতে বাজতে কেটে গেল। অহমি বিরক্ত হলো ভীষণ। কী এমন হয়েছে মেয়েটার ফোন কেন তুলছে না? আজ বিকেলে ও বাড়িতে যাবে বলে ঠিক করল অহমি। এখনই বেড়িয়ে পড়ত কিন্তু গতকাল বাহিরে কাটিয়েছে এখনই তাহমিনা বেগম কিছুতেই পুনরায় বেড়াতে দেবেন না। তাছাড়া ধ্রুব তো আছেই অদৃশ্যের মতো সবসময় নজরদারি চালিয়ে যায় অহমির ওপর।

.

ফ্রেশ হয়ে পুনরায় হসপিটালে চলে এসেছে প্রমি। পুস্পকে বিকেলে রিলিজ দেওয়া হবে। স্যালাইন টা শেষ হলেই মুক্তি। এখানে পুষ্পর একদমই ইচ্ছে করছে না। এই মুহুর্তে তার নিজের ঘরটা বড্ড প্রয়োজন। কিছু একাকিত্ব সময় কাটানো প্রয়োজন। মনকে শান্ত তো করতে হবে। যেটা কোলাহলে সম্ভব নয়। প্রমি এসে বিভোরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। গতরাত ধরে সে ও তো একই অবস্থায় এখানে পড়ে আছে। বিভোর বলেছে বিকেলে রিলিজ টাইম হওয়ার আগেই সে চলে আসবে। ততক্ষণ প্রমিকে সবটা সামলে নিতে। তারপরও কোনো প্রয়োজন হলে অবশ্যই ফোন করতে। সে চলে আসবে। প্রমি তাতে সম্মত হয়েছে। বিভোর নিশ্চিন্তে বাড়িতে চলে গেছে। তার এখন একটা লম্বা শাওয়ারের প্রয়োজন।

.
চলবে,#নিঃশ্বাসে_তুই |২১|

তাড়াহুড়ো করে বেড়তে গিয়ে ধাক্কা লেগে যায় অহমির সঙ্গে বিভোরের। হাত ঘড়িটা ছিটকে পড়ে অদূরে। বিভোর বিরক্তি ভঙ্গিতে তাকায়। ‘চ’ এর মতো শব্দ উচ্চারণ করে বলে,

“দেখে চলতে পারিস না?”

অহমি অপরাধীর ন্যায় গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলল,

“সরি ভাইয়া ব্যস্ততায় খেয়াল করিনি।”

বোনের অসহায় মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে ক্রোধ, বিরক্তি নিমেষেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল বিভোরের। মেঝে থেকে ঘড়িটা তুলে নিয়ে এগিয়ে গেল অহমির কাছে। পুনরায় ঘড়িটি পড়তে পড়তে বলল,

“এতো ব্যস্ততা কীসের?”

“পুষ্পকে খুঁজতে যাচ্ছি। দুদিন যাবৎ তার কোনো খবর নেই। ফোন তুলে না, নিজেও দেয় না। টোটালি লাপাত্তা।”

বিভোরের ঘড়ি পড়া শেষ। সে বোনের দিকে অবিশ্বাস্য নয়নে তাকাল। যার মানে দাড়ায়, ‘অহমি এখনো কিছুই জানে না?” বিভোর ততক্ষণাৎ বলতে চাইল পুষ্পর অবনতির কথা কিন্তু কী মনে করে আবার চুপ করে গেল। শুধু বলল,

“আচ্ছা চল আমার সঙ্গে।”

অহমি সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ভাইয়ের দিকে। খানিক রসিকতার ছলে বলল,

“ব্যাপার কী হ্যাঁ তুমি আমাকে নিয়ে যেতে চাইছ? এর পেছনে কোথাও আবার প্রমি আপু লুকিয়ে নেই তো?”

বিভোর অহমির দিকটা বিবেচনা করে চুপ রইল। মেয়েটা তো এখনো কিছুই জানে না। তার দ্বারা এমন রসিকতা মানানসই। এই ভেবে বিভোর অহমিকে শুধু ইশারায় চুপ থাকতে বলল। আরও বলল তার সঙ্গে বেড়তে।

রিকশা এসে থামল হসপিটালের সম্মুখে। অহমির ফুরফুরে
স্থির মনটা সহসা খচখচ করতে শুরু করল। সে বারংবার বিভোরকে প্রশ্ন করতে লাগল, তারা এখানে কেন এসেছে? বিভোর কিছু বলল না। রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে অহমির দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘ ফেলে অহমির এক হাত টেনে ধরে ভেতরে চলতে লাগল। অহমির কৌতুহলী, শঙ্কিত মনটা তখন একটা কথাই ভেবে চলেছে, পুষ্পর কোনো বি’প’দ হয়নি তো?

পুষ্পর কেবিনের সম্মুখে এসে থামল বিভোর অহমিকে নিয়ে। অহমি রীতিমতো কাঁপছে। বিভোর এক পল তার দিকে তাকিয়ে ভেতরে ঢুকতে আদেশ করে। কম্পিত পায়ে ধীরুজ গতিতে কেবিনে ঢোকে অহমি৷ মুহুর্তেই আঁতকে ওঠে। পুষ্প ক্যানেলার হাতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। স্যালাইন চলছে তার। অহমি এক ছুটে চলে যায় পুষ্পর কাছে। একপ্রকার ঝাপিয়েই পড়ে পুষ্পর ওপর। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। নাক টানতে টানতে বলে,

“তোর কী হয়েছে পুসি? তোর এ অবস্থা কী করে হলো? এজন্যই ফোন তুলছিস না কাল থেকে। কীভাবে হলো বল আমায়। আমি কতটা চিন্তা করেছি জানিস? অনেক কিছু ঘটে গেছে রে পুসি তোকে আমি কিছুই জানাতে পারি নি।”

অকস্মাৎ আ’ক্র’ম’ণে চমকে ওঠে পুষ্প। মুহুর্তেই আবার বুঝে যায় অহমি এসেছে। তবে অহমির বলা শেষোক্ত কথা টি কর্ণপাত হতেই সে ও নিম্ন কন্ঠে বলে ওঠে, “সত্যিই অনেক কিছু ঘটে গেছে রে! অনেক কিছু।”

পুষ্পকে নিয়ে বাড়িতে ফেরার সময়েই অহমির ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে ‘অদ্ভুত মানব’ নামটি দেখেই পিলে চমকে ওঠে তার। মুহুর্তের জন্য সে তো ভুলেই গিয়েছিল এই মানবের কথা। এতক্ষণ কতশত অভিযোগ মন খুলে পুষ্পকে জানাচ্ছিল। ক্ষণে ক্ষণে বিভোর,প্রমির ওপরেও অভিমান দেখাচ্ছিল। কেউ তাকে কিছু কেন জানায়নি এটাই তার দুঃখের কারণ। এমন সময় এই অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন কলে একেবারে শান্ত হয়ে যায় অহমি। পুষ্প লক্ষ্য করে ব্যাপারটা। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কয়েক পল দেখে নেয় প্রিয় বান্ধবীকে কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলে না। সে শক্তি আপাততঃ তার নেই। এদিকে অহমি খুব সন্তপর্ণে এক সাইডে সরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ধ্রুব বলে ওঠে,

“হসপিটালে কেন?”

“পুষ্প ছিল তাই।”

“কী হয়েছে ওর?”

“গতকাল থেকে নাকি অ’চে’তন ছিল। ঠান্ডা লেগে এমন হয়েছে। এখন আপাতত ঠিক আছে। বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।”

“ওকে! বাই।”

ধ্রুব কল কেটে দিল। অহমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ওদের দিকে এগিয়ে গেল। বিভোর এতক্ষণ লক্ষ্য করল বোনের কান্ড। বোন বড় হচ্ছে তার দিকে খেয়াল রাখাটা ভাই হিসেবে তার দ্বায়িত্ব। বিভোরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নজরে পরতেই অপ্রস্তুত হয়ে উঠল অহমি। আমতা আমতা করে বলল, “ফ্রেন্ডের কল ছিল। ইট’স আর্জেন্ট।”

বিভোর বিগ্ন ভঙ্গিতে শুধু বলল,”হু।”

পুষ্প, প্রমি দুজনেই তাকিয়ে দেখছে ওদের। অহমি ওদের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসতে চেষ্টা করে চোখ সরিয়ে নিল। পরপর সকলেই আগের ন্যায় চলতে লাগল।

কেটে গেল কয়েকটা দিন অহমি, পুষ্প দুজনেই আগের ন্যায় একসঙ্গে চলে। কিন্তু পুষ্প কেমন জানি নিস্তেজ থাকে সর্বক্ষণ। আগের মতো প্রাণোচ্ছল নেই সে এখন আর। এটা নিয়ে অহমির তীব্র প্রতিবাদ থাকা সত্ত্বেও তার কোনো পরিবর্তন নেই। ভেতরে ভেতরে চাপা অভিমান চাপিয়ে এখন অহমিও আর কিছু বলে না। সে ও চুপ থাকে বেশিরভাগ। প্রিয় বান্ধবীর কাছে শেয়ার করতে চাওয়া তার জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টিও চাপা পড়ে রয় এই মান – অভিমান, দুঃখ-কষ্টের লুকোচুরি খেলায়। দুই চঞ্চল প্রাণ কেমন নিভে থাকে সবসময়।

তবে এর মাঝে ধ্রুবর সঙ্গে অহমির লুকোচুরি বর-বউ খেলাটাও জমে উঠেছে বেশ। প্রিয় বান্ধবী থেকে দূরত্ব বাড়তেই মনের মানুষটির সঙ্গে যেন দূরত্ব ঘুচে আসছে। ইদানীং কালে সে নিজে থেকেও প্রায়শই ধ্রুবকে কল করে বসে। তাদের মধ্যে কথপোকথন চলে দীর্ঘক্ষণ। কথার ফাঁকে ধ্রুবর দু একটা বেহায়াপনা কথাবার্তা নির্বিঘ্নে হজম করে নেয় অহমি। লজ্জায় রক্ত রঙা হয়ে ওঠে তার মুখশ্রীর গড়ন। সেই আভাস পেয়ে যায় ঠিকই ধ্রুব। তাকে দ্বিগুণ লজ্জা দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে বলে ওঠে আরও অনেক লজ্জাজনক কথামালা। এতই আজই যখন কলেজ থেকে ফিরছিল ঠিক তখনই ফোন আসে ধ্রুবর। অহমি ফোন রিসিভ করতেই বলে,

“মাই সুইট, কিউট বউটা কেমন আছে?”

অহমি তখন লজ্জা রাঙা মুখশ্রীতে স্বাভাবিকতা আনার চেষ্টা চালিয়ে বলে,

“মতলব কী? আজ এতো মধুবাক্য কই থেকে উৎপন্ন হচ্ছে শুনি?”

ধ্রুবর সাবলীল উত্তর,

“বউকে কাছে পেতে মন চাইছে যে।”

অহমি ওড়নার আঁচল খামচে ধরে। বলে,

“ইস্ শখ কত।”

“শখ না ইচ্ছা বা আকাঙ্খা যেটা বলবে সেটাই। পেছনেরটা না হয় বাদই দিলাম।”

অহমি ভ্রু কুঁচকে ফেলল। সন্দিহান কন্ঠে বলল,

“পেছনেরটা মানে?”

“পেছনের টা মিন’স লাভ। অর্থাৎ ভালবাসা।”

অহমির কর্ণ তৃপ্ত হলো। এটা শোনার অপেক্ষাতেই ছিল। তৃপ্তি ভরে শ্বাস টানল। কিন্তু বুঝতে দিল না ধ্রুবকে। ধ্রুবর সম্মুখে কঠিন গলা উপস্থাপন করে বলল,

” সে তো হচ্ছে না। সে সুযোগ আর মিলবে না জনাব যদি পূর্ণ রুপে সকলের অনুমতি নিয়ে আপনার ঘরে পা না রাখি। সে অব্দি থাকল না হয় এমন দূরত্ব। সয়ে নেব।”

ধ্রুব দৃঢ় কন্ঠে বলল,

“খুব শীঘ্রই সেই দিন আসবে বিবি সাহেবা। পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলব আপনাকে। দেখব তখন কীভাবে পালান আমার থেকে।”

অহমি হাসল। ধ্রুবর এ সকল কথায় যে কী আছে তা সে নিজেও জানে না। এক একটি বাক্য যে তার হৃদয়ে সুখতীর জ্ঞাপন করে তা কী সে জানে? হয়তো না! জানলে কখনোই লোকটা এভাবে বলত না। নিজের প্রিয়তমাকে নিজ হাতে ম’র’ণ বা’ণ কেউ ছুড়ে বুঝি?

কথা বার্তার এক পর্যায়ে বাড়ির সম্মুখে পৌঁছে গেল অহমি। ধ্রুবকে বিদায় জানিয়ে কল কেটে পা রাখল বাড়ির মধ্যে।

.
চলবে,

অহমিকা মুনতাহাজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here