‘নিশীথচিত্র’ (৪)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে
_____________
দিহান কপট রাগ নিয়ে রিনির দিকে তাকায়।ঘুম মিশ্রিত রাগী গলায় বলে
–“এই মেয়ে এতো সকালে আমার ঘরের সামনে কি?”
রিনি অকপটে উত্তর দেয়
— “পড়তে এসেছি।”
দিহান চিন্তিত মুখ করে বলে,
— ” কই আংকেল তো আমাকে কিছু বলে নি।মানে ফাইনাল কিছু বলেনি।”
— “আমাকে বলেছে।”
— “আচ্ছা কিন্তু এতো সকালে?”
–” সকাল কই সাড়ে সাত টা বাজতে চললো। আমার আবার সকাল সকাল ওঠার অভ্যাস”
— “আমি ঘুমিয়েছি কয়টায় জানিস?”
— “জানতেও চাই না।”
কথাটা বলতে বলতেই রিনি ঘরের ভিতরে ঢুকে পরে।
— “বাহ ঘরটা বেশ গোছগাছ করে রেখেছিস দেখছি।”
রিনি ঘরে হাটছিলো আর দেখছিলো। আবার তুই করে বলছে দেখে দিহানের বেশ রাগ হয়। সেকেন্ডের মধ্যে রিনির হাতটা মুচড়ে ধরে পিছনের দিকে আনে।
রিনি হঠাৎ আক্রমনে নির্বাক। খেয়াল আসতেই বলে
— “এই করছিস কি তুই?ছাড় বলছি ছাড়।”
— “আবার তুই করে বললি? আবার?তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি।” হাতটা আর একটু জোরে চেপে ধরে বললো “আর তুই করে আর বলবি?”
দিহানের চোখে রিনি প্রচুর রাগ দেখতে পেলো।ভয়ে ভয়ে হ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বললো
— “নাহ আপনি আমার গুরুজন। বাপ সমতুল্য। আপনাকে তুই কেন বলবো? তওবা তওবা।”
–“ওভার অ্যাক্টিং বন্ধ করে বল কথাগুলো ভুলে যাবি না তো একটু পরে?”
— “না না তা কেন? ভুলে যাবো না।আপনি হচ্ছেন আব্বু সমতুল্য ভাই।” কথাটা বলেই আবার এক ভ্যালকা হাসি দিল রিনি।থেমে আবার বললো
–“না মানে ভাইয়া একটা কথা বলি?”
দিহান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো
— “বল।”
— “না মানে বলছিলাম আপনার মুখ আমার এতো কাছে।দেখছেন?”
— “হ্যা তো?”
— “আপনি তো ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করেন নি। ” এর নাক ছিটকিয়ে বলে,”খুব গন্ধ আসছে ভাইয়া বিশ্বাস করেন।আমাকে ছেড়ে দ্যান নয়তো মুখ টা দূরে সরান প্লিজ।আমার ওয়াক আসছে ভাইয়া প্লিজ।”
রিনি মুখ দিয়ে দুইবার ওয়াক ওয়াক বমি টাইপ শব্দ করলো।
দিহান কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলো।রিনিকে ছেড়ে দিয়ে ঝড়ের বেগে দূরে সরে দাঁড়ালো। মুখের সামনে হাত নিয়ে দুই বার হা হা করে বাতাস ছাড়লো।বোঝার চেষ্টা করলো সত্যিই খুব গন্ধ আসছে কিনা।চেক করে দেখলো না তেমন গন্ধ না।তবে ঘুম থেকে ওঠায় একটু অন্যরকম।কিন্তু বমি হয়ে যাবে এমন না।আর ঘুমানোর সময় ব্রাশ করেই ঘুমিয়েছে।মেয়েটা তাহলে আবার বোকা বানিয়েছে।ভাবতেই দিহান গজগজ করতে করতে ওয়াসরুম চলে গেলো। দশ মিনিট পরে এসে দেখে রিনি তার চেয়ার টেবিলে বেশ ভদ্র ভাবে বসে আছে।দিহান লুঙ্গি পাল্টে ট্রাউজার পরে এসেছে আর ব্লাক টি-শার্ট।
দিহান তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো।”রিনি বাসা থেকে আজ একটা চেয়ার রেখে যাবি আমার এখানে৷ ।এখানে তো আমার একটা চেয়ার টেবিল দুইজনের একটায় বসা সম্ভব না।আজকে বরং বিছানায় বস প্রথম দিন তো তেমন পড়া হবে না।”
— “ওকে ওকে।”কন্ঠে আজ্ঞা পালনের সুর।
রিনি বিছানায় এসে বসলো।দিহানও বিছানায় এসে বসলো।রিনি প্রথমেই বললো
— “তুই আমাকে কি পড়াবি?”
রিনির কথাটা বলার সাথে সাথে গালে একটা থাপ্পড় পরলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় রিনি গালে হাত দিয়ে দিহানের দিকে তাকালো।রক্তচক্ষু দিহানকে দেখে ভয়ে চুপসে গেলো। থাপ্পড় মারার কারণে দুই চার কথা শুনানোর আর সাহস খুজে পেলো না।খুব কষ্ট লাগছে রিনির। এমনটা হবে ভাবে নি।দিহান যে এতো সিরিয়াস বুঝতেই পারে নি। সে তো মজা করছিলো। অপমানবোধ হচ্ছে খুব। টলটলে চোখের পানি নিয়ে দিহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
দিহানের ধমকে কেপে উঠলো
— “তোকে বলেছি আপনি করে বলতে???? বলেছি???? এতক্ষণ গায়ে হাত দেই নি এবার দিলাম।নাউ আম ইউর টিচার। কোন সাহসে তুই করে বলছিস আমাকে? কোন সাহসে? টিচারদের গায়ে হাত দেয়ার পারমিশন আছে তাই গায় হাত দিয়েই বুঝালাম। অনেক বার নিষেধ করেছি ।বেশ…. “দিহান কিছু একটা বলতে নিয়েও বললো না।
রিনির এতক্ষণে হিচকি উঠে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।সেই ক্লাস সিক্স এর ফাইনাল এক্সামে ম্যাথে খারাপ হওয়ায় বাবা তাকে মেরেছিলো। রাতে ১০৪°জ্বর ওঠায় আর কেউ তার গায়ে হাত দেয় নি।এতো দিন পরে কিনা একটা ছেলের রাম চড় খেলো?রিনির মনে বিভিন্ন ধরনের কষ্টরা উঁকি দিচ্ছে,অনেক যুক্তিরা তর্ক করছে । আসলেই তার ভুল হয়েছে।
রিনির কাদতে কাদতে লাল হয়ে যাওয়া চেহারা দেখে খারাপ লাগলো দিহানের।কিন্তু এই মুহুর্তে রাগ ঝেড়ে ফেলা মানে রিনি এই কাজটা আবার করবে।এই কয়দিনে রিনি সম্পর্কে এই ধারণা সে পেয়েছে।দিহান সব সহ্য করতে পারে বড় দের অসম্মান একদম সহ্য করতে পারে না।দিহান আবার রিনিকে ধমক দিলো
— “এই মেয়ে যেদিন আমাকে সম্মান দিয়ে আপনি করে বলতে পারবি সেদিন আমার কাছে পড়তে আসবি তার আগে না। এখন এখান থেকে যা।”
রিনির আর সহ্য হলো না।কাদতে কাদতেই স্থান ত্যাগ করলো।
দিহানের খারাপ লাগলো। কান্না মুখ টায় অসম্ভব মায়া ছিলো। এমন মায়াবী কান্না সে কোথাও দেখেনি।কি সুন্দর ভরাট চোখ। একটু পাগলাটে স্বভাবের তবে অসভ্য নয় আহান এটুক বুঝতে পেরেছে।
দিহান দুপুরে খেতে যেয়ে দেখে রিনি খাবার টেবিলে নেই। রাতেও পেলো নি।কিছুক্ষণ পরে দিহান রেহানাকে জিজ্ঞেস করলো
— যআন্টি রিনি কই? প্রতি দিন সবার সাথে খায়। দুপুরেও খায় নি।এখনও দেখছি না যে!!”
— “ও খেয়ে নিয়েছে দিহান। আজ বললো মা খুদা লেগেছে বলে একা একাই খেয়ে নিয়েছে।এতোক্ষনে হয়তো ঘুমিয়েও গেছে।শরীর খারাপ লাগছে নাকি বলেছিলো একবার।”
রাতে দিহানের কেমন যেনো লাগছে।বেশ খারাপ লাগছে।রিনির কান্নারত মুখটা বার বার চোখে ভেসে উঠছে।কেমন যেনো অসস্তি লাগছে।অস্থিরতায় ছেয়ে যাচ্ছে মন।ভালো লাগছে না একদম ভালো লাগছে না। মেয়েটার কথা কেন ভাবছে সে? অপরাধ করেছে শাস্তি দিয়েছে।গ্রামেও বেশ কিছু ছেলে মেয়েদের পড়াতো। বেয়াদবির জন্য মারতো, শাসন করতো।কিন্তু এতো খারাপ লাগে নি তার কখনই।আজ কেন লাগছে। রিনিকে মনের অজান্তেই মায়াবতী বলতে ইচ্ছা হলো দিহানের।মায়াবতী!কার মায়াবতী? প্রশ্ন টা মাথায় আসতেই বেশ খটকা লাগলো দিহানের।
চলবে,
✔