পবিত্রতার_ছোঁয়া পর্ব ৩

#গল্পের নাম :#পবিএতার_ছোঁয়া (সিজন২)
#পর্ব :৩
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

গভীর ঘুমে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল।

মনে হচ্ছে কেউ আমার মুখে স্লাইড করছে। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। পিটপিট করে চোখ খুললাম।চোখ খুলার সাথে সাথে আমার মাথা কাজ করা বাদ দিয়ে দিল। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।

চোখ খুলে একটা বাচ্চাকে দেখে আমি শুয়া থেকে উঠে পড়লাম। বাচ্চাটাকে আমি চিনতে পারছি না। ছেলেটা আমাকে দেখে হেঁসে দিল। বাচ্চাটা আমার কোলে বসে আছে।বাচ্চাটা আমাকে মামি বলে খিলখিল করে হেসে উঠল।

আমি : তোমার নাম কি ভাইয়া?

আরাফ:মামি আমাল নাম হলু আলাফ,,

হঠাৎ স্যার আর একটা মেয়ের কন্ঠে হাসির শব্দ পেয়ে আমি ছেলেটার থেকে চোখ সরিয়ে তাদের দিকে তাকালাম। মেয়েটা হেঁসেই যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না হাঁসছে কেন। মেয়েটি আমার চেয়ে অনেক বড়ো মনে হচ্ছে।ভালো করে খেয়াল করলাম তার চেহারার সাথে স্যারের চেহারার অনেক মিল আছে। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না মেয়েটি স্যারের বোন মাইশা আপু।

মাইশা: কেমন আছো ভাবি?

আমি: ভালো। আপনি কেমন আছেন?

মাইশা: ভালো। আরাফকে তুমি ভাইয়া বললে কেন?

আমি : না মানে আপু আরাফের মতো আমার ছোট্ট চাচাতো ভাই আছে। তাই ভূলে বের হয়ে গিয়েছে।

মাইশা: তাই। সমস্যা নেই আরাফ তোমার ছেলের মতো। আর ভাইয়া বলবে না।

আমি: সরি।

মাইশা:ভাবি তুমি তো দেখি অনেক ছোটো। কোন ক্লাসে পড়ো?

আমি: ক্লাস টেন এ পড়ি।

মাইশা:ভাবি তুমি দেখতে যেমন সুন্দর তেমন তোমার ভয়েসও অনেক মিষ্টি।

আমি: আপনিও অনেক সুন্দর দেখতে?

মাইশা: তোমার নাম কি ভাবি?

আমি: মিহু। আপনি আমাকে ভাবি বলছেন কেন? আমি তো আপনার থেকে অনেক ছোট।

মাইশা: আরে ভাবি তুমি ছোট তো কি হয়েছে। তোমার বর তাহসিন আমার বড়ো। তাই তোমাকে তো ভাবি বলতেই হবে।

আমি : ওনি আপনার চেয়ে বড়ো? [অবাক হয়ে]

মাইশা: হ্যাঁ ।আমার চেয়ে তিন বছরের বড়ো।

মাইশা আপুর সাথে কথা বলছি এমন সময় ওড়নায় টান লাগতেই আমি আরাফের দিকে তাকালাম। ছেলেটা গাল ফুলিয়ে বলছে,

আরাফ: মামি তুমি অনেক পতা। আমাল সাথে কথা বলতো না কেন?

আমি : ওহহহ সরি ভাইয়া থুক্কু বাবা।

আরাফ:মামি আমাকে এখন একটা গপ্পো শুনাও,,

মাইশা: আরাফ এখন না পড়ে মামির সাথে গল্প করবে।

আরাফ: না আমি মামিল কাছে গল্প শুনবো।

তাহসিন : ঠিক আছে বাবা।তুমি এখন তোমার মামির কাছে গল্প শুনবে।

আরাফ: মামি বলো।

তাহসিন : আচ্ছা তোরা গল্প কর। আমি বাইরে গেলাম।

বলেই স্যার চলে গেলেন। আমার এখন অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে।কারন তার সামনে ভেবে চিন্তে কথা বলতে হয়।
জীবনের প্রথম কোন বাচ্চাকে বাবা বলছি। অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছে। এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করছে। অনেকক্ষণ আরাফের সাথে গল্প করলাম। ছেলেটা অনেক কিউট।মাইশা আপুও অনেক ভালো।

কিছুটা সময় পর আরাফ মামা বলে উঠতেই আমি ঠিক হয়ে বসলাম। তারমানে স্যার চলে এসেছে।

আরাফ:মামা,, আমি ঘুলতে যাবো। নিয়ে তলো,,

তাহসিন :ঠিক আছে চলো।

আরাফ:মামি লেডি হও।

তাহসিন : তোমার মামি যাবে না। তুমি চলো।

আরাফ: না মামি যাবে,,

মাইশা: ভাইয়া মিহুকে নিয়ে যা। বাচ্চা মেয়ে ভালো লাগবে।

তাহসিন : ওকে।আরাফ তোমার মামিকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হতে বলো।

আমি প্রথমে ভেবেছিলাম স্যার হয়তো আমাকে নিয়ে যাবে না। কিন্তু এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে আমি ভাবতে পারি নি।

আমি তারাতারি করে রেডি হয়ে নিলাম।আপুকে আমাদের সাথে আসতে বললাম কিন্তু সে আসল না। আরাফ তো অনেক খুশি হয়েছে। আমি আরাফকে নিয়ে গাড়িতে বসলাম।

স্যার ড্রাইভ করা শুরু করলেন।আরাফ একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছে। আর আমি শুনছি। স্যার কোন কথা বলছে না।

কিছুক্ষণ পর একটা পার্কের সামনে গাড়ি থামালেন। আমি আরাফকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। ছেলেটা আমার হাতের আঙুল ধরে আছে।স্যার আরাফকে কোলে নিতে চেয়েছিল কিন্তু আরাফ যায়নি। স্যারের পিছু পিছু হাঁটছি। পার্কটা অনেক সুন্দর। চারপাশে নানা রকমের ফুলের গাছ।অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু চারপাশে কাপলরা বসে আছে। কেউ একা আসে নি। তাদেরকে দেখে আমার প্রচুর লজ্জা লাগছে। আশেপাশে না তাকিয়ে নিচের দিকে চোখ রেখে হাঁটছি।হঠাৎ কারো কন্ঠে মিহু ডাক শুনে আমি থেমে গেলাম। চোখ তুলে তার দিকে তাকালাম।দেখলাম বাবার বন্ধুর ছেলে রিহাত ভাইয়া। আমাকে দেখে সামনে এসে দাঁড়ালো।

আমি : ভাইয়া কেমন আছেন?

রিহাত: ভালো। তুমি কেমন আছো?

আমি :ভালো।

রিহাত: কার সাথে এসেছ?

আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। স্যারের দিকে একপল তাকালাম। সে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।

রিহাত: বলো?

স্যারের দিকে ইশারা করে বললাম কাজিনের সাথে এসেছি। কিছুক্ষণ রিহাত ভাইয়ার সাথে কথা বললাম। স্যার চুপ করে ছিল। রিহাত ভাইয়া চলে যাবার পর আমি স্যারের দিকে তাকালাম। আল্লাহ তার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে সে প্রচন্ড রেগে আছে। আমি কি ভূল করেছি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু আজকে যে আমার কপালে কষ্ট আছে তা বুঝতে বাকি রইল না।আমার ভয়ে হাত পা কাঁপছে,,,
(#চলবে)

[দেরি করার জন্য দুঃখিত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here