#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#অষ্টাদশ_পর্ব
এক কাপ কফি দিয়ে শুরু হলো দিনটা৷ কাল রাত দশটা অব্দি বাইরেই ছিলো ওরা বাইরে থেকেই খেয়ে এসেছিলো সবই ঠিক ছিলো কিন্তু শোভন পাশে থাকায় সব কিছুই কেমন বিরক্ত লাগছিলো৷
আচ্ছা মানুষ তো কাউকে ভালোবাসলে তার উপর কখনো বিরক্ত লাগে না শত বিরক্ত কারন থাকা শর্তেও বিরক্ত হবেনা কেউ তাহলে মেঘলার শোভনকে এতোটা বিরক্ত লাগছিলো কেন?
নিজেই বুঝে পায় না এমন হওয়ার কারন কি?
কফি খেতে খেতে হাজার কথা ভাবছে মেঘলা তখনই আহানা এসে বলে,
— ” এমন আনমনে কি ভাবছিস?”
আহানার প্রশ্নে মেঘলা আগের ন্যায় বসেই আনমনে উত্তর দেয়,
— ” তোমার ভাই এর কথা৷ ”
মেঘলার উত্তরে বিস্ময় চোখে তাকায় আহানা৷ হঠাৎ-ই কাশি উঠে যায় আহানার, আহানার কাশির শব্দ শুনে হুস ফিরে মেঘলার পরক্ষনে নিজের বলা কথা ভেবে নিজেই বিস্ময় খায় মেঘলা৷
ইসস কি বলে ফেললো এটা?
আহানা কি ভাবছে ?
মেঘলা নিজেকে সামলে আমতা আমতা করে বলে,
— ” ইয়ে মানে তেমন কিছু না,
আমি তার রাগ দেখানোর কথা ভাবছিলাম এই আর কি৷ ”
বলে এক ঢোকে গরম কফিটা খেয়ে
” দেরি হয়ে যাচ্ছে, আসছি রেডি হয়ে৷ ”
বলে নিজের রুমে ছুটে চলে যায়৷ আহানা নিশ্চয়ই উল্টা পাল্টা ভাবছে? ইসস ওর মুখটা আজ কাল বেশি বেহায়া বেশরম হয়ে গেছে কিছু আটকায় না যা খুশি ফস করে বেরিয়ে যায়৷
একবার ঘড়ির দিকে নজর বুলিয়ে রেডি হয়ে বের হয় রুম থেকে, ইতস্ত ভঙ্গিতে একবার আহানার দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” আপু যাচ্ছি আমি৷ ”
বলেই দরজার সামনে গিয়ে জুতা পড়ে বের হবে তখনই আহানা বলে,
— ” তুই কি ভাই কে ভালোবাসিস মেঘু?? ”
আহানার এমন কথায় বেশ লজ্জায় পড়ে যায়৷ পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কৃত্রিম হেসে বলে,
— ” ভালোবাসা? তা আমার জন্য নয় আপু৷ ”
বলে বেরিয়ে পড়লো মেঘলা৷ আহানা এক ধ্যানে মেঘলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে কি বললো মেঘলা? ওর মতো করে উত্তরটা দিলো? হঠাৎ কি হয়ে গেলো ওর?
হসপিটালে এসে নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে মেঘলা, আর সময় আসার পর শোভনের চেম্বারে কিছুক্ষন বসে থাকে, কাজ সেরে শোভন না আসা পর্যন্ত শোভনের চেম্বারেই থাকে কিন্তু আজ একবারও শোভনের চেম্বারে যায় নি৷ আজ ওদের হসপিটালেই একটা ডক্টর্স মিটিং আছে শোভন তাই সকাল সকালই হসপিটালে চলে আসে৷ বারোটায় মিটিং এখন এগারোটা চল্লিশ বাজে এ পর্যন্ত মেঘলা একবার এসেছিলো তাও শোভন ডাকার পর, ব্যাপারটা শোভনের কাছে একদম ভালো লাগছে না৷ কিন্তু কেন ভালো লাগছে না এটা শোভনের অজানা৷
শোভন উসখুস করতে করতে আবার ডাকে মেঘলাকে কিন্তু এখন পর্যন্ত আসার নামই নেই টাইম দেখে রাগে ফুসতে ফুসতে মিটিং রুমের দিকে এগিয়ে যায়৷
এগারোটা পঞ্চাশ বাজতেই হসপিটালে প্রবেশ করে রনি এসেই নিজের চেম্বারে যায় চেম্বার থেকে বেরিয়ে মিটিং রুমের দিকে এগোবে তখনই একটা কেবিনে চোখ পরে মেঘলার দিকে৷
ঝুকে রোগী কে চেক করছে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলানো সামনে থাকা কাটা কাটা চুল গুলো অধর ছুয়ে দিচ্ছে, রনি গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সেদিকে মেয়েটাকে দেখতে ওর ভালো লাগে৷ চেয়ে থাকলে চেয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে কথা গুলোও বেশ মন কাড়া আর হাসিটাও৷
অধর জুগল সরু নাড়িয়ে কিছু একটা বলছে রোগীকে বলে পাশে থাকা ছোট টেবিল থেকে ফাইল গুলো নিয়ে বেরিয়ে আসতেই রনি- র সাথে চোখাচোখি হয়৷
বিনিময়ে মিষ্টি হেসে বলে,
— ” আসসালামু আলাইকুম স্যার, কেমন আছেন?”
রনি মুচকি হেসে বলে,
— ” ওয়ালাইকুম আসসালাম, এইতো আছি৷ তো মিস মেঘলা সব ঠিকঠাক তো?”
মেঘলা মুচকি হেসে বলে,
— ” হুস এস ইউজুয়াল৷ ”
বিনিময়ে রনি হাসলো, মেঘলাও হেসে সামনে হাটা দেয়৷ তখনি রনি পিছন থেকে আবার ডাকে,
— ” মিস মেঘলা? ”
মেঘলা থেমে গিয়ে ঘাড় গুড়িয়ে পিছনে প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে তাকায়
রনি বলে,
— ” স্যার বলতে হবে না আমাকে আপনি রনি বলেই নাহয় ডাকবেন৷ ”
উত্তরে মেঘলা সম্মতি জানিয়ে বলে,
— ” আসছি৷ ”
বলে আবার সামনে হাটা দিবে তখন আবার রনি ডাকে, মেঘলা এবার বেশ বিরক্ত হয়৷ কি ছেলেটা বার বার সময় নষ্ট করে এমন ডাকে কেন? কাজ নেই নাকি?
তবুও বিরক্ত ভাবটা মুখ থেকে সরিয়ে ঘাড় ঘুড়াতেই বলে,
— ” বাড়ি আঁখি পল্লব নাড়িয়ে এমন তাকাবেন না মিস মেঘলা তাতে মানুষের হৃদয় অবাধ্য হয়ে যায়৷ আর এভাবে অধর নাড়িয়ে হাসবেন না মিস মেঘলা৷ ”
রনির এমন কথায় বোকা বনে গেলো মেঘলা, রনির কোনো কথাই বোধগম্য হলো না৷ অদ্ভুত লোক একটা আর ওনার মতো ওনার কথা গুলোও আরো বেশি অদ্ভুত৷
— ” এখানে দাঁড়িয়ে বাজে বকা হয়েছে তোর? হয়ে থাকলে চল এখান থেকে৷ ”
কারো শক্ত কন্ঠ পেয়ে দুজনই সামনে তাকায়৷ শোভন দাঁড়িয়ে আছে দু পকেটে দু হাত গুজে গম্ভীর ভাব নিয়ে৷
এমন রাগী রাগী ভাবে বললো কেন? রাগ করে আছে কি কারো উপর? পরক্ষনে মেঘলা ভাবলো এ বদ রাগী ডাক্তার তো কারনে অকারনে রেগে থেকে এখনো হয়তো কিছু নিয়ে কারো উপর রেগে আছে৷
রনি শোভনকে বলে,
— ” উফফফ দেখ না মনেই ছিলো না বারোটায় যে মিটিং আছে৷ বড্ড দেরি করে ফেললাম নারে?”
শোভন রেগে বিরবির করে বলে,
— ” মনে থাকবে কি করে? মেয়ে দেখেছিস না৷ ”
রনি শুনতে পেলো না তাই বলে,
— ” কিছু বললি?”
শোভন এক হাত প্যান্ট এর পকেট থেকে নামিয়ে চোখের কালোফ্রেমের চশমা টা একটু ঠেলে মেঘলার সামনে এসে রেগে বলে,
— ” মিটিং শেষ এ আমি যেন আপনাকে আমার চেম্বারে পাই মিস মেঘলা৷ ”
বলে চলে যেতে নিলেই মেঘলা বলে,
— ” কিন্তু৷ ”
মেঘলার কথা থামিয়ে ঘাড় বাকিয়ে শোভন বলে,
— ” আমি পার্মিশন নেই নি, কিন্তু ফিন্তু বাদ দাও এটা আমার ওর্ডার৷ আমি যেন মিটিং শেষ এ আমার চেম্বারেই তোমাকে পাই৷ ”
বলে বড় বড় পায়ে এখান থেকে প্রস্থান করলো৷ রনি একবার মেঘলার দিকে তাকিয়ে সে ও শোভনের পিছু পিছু হাটা দেয়৷
আকাশে মেঘ করেছে চারোপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে, তীব্র বেগে বাতাস৷ ঠান্ডা মসৃন বাতাস শরীরকে হিমেল করে তুলছে৷ তীব্র বাতাসের ফলে কাশ-ফুলের তুলোর ন্যায় পাপড়ি কোথা থেকে উরে এসে মেঘলার নাকের ডগায় বসলো৷ মেঘলা রেস্ট রুম এর জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই কাশফুলের তুলোর মতো পাপড়িটা কোথা থেকে যেন উরে এলো৷
ঘড়িতে সারে তিনটা বাজে লাঞ্চ ব্রেকে আছে তাই এখানে রেস্ট নিচ্ছে শোভনের মিটিং শেষ হয়েছে আড়াইটা বাজেই কিন্তু এখন পর্যন্ত মেঘলা শোভনের সামনে যায়নি৷
হঠাৎ-ই রেস্ট রুমের দরজায় বিকট শব্দ হলো, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে শোভন এসেছে৷ রেগে আছে মনে হচ্ছে কপালের রগ গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে৷
মেঘলা শুকনো ঢোক গিললো না জানি এখন কি শাস্তি ভোগ করতে হবে৷ শোভন মেঘলার সামনে এসে হাত চেপে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই নিজের চেম্বারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷
মেঘলা আমতা আমতা করে বলে,
— ” স্যার ছারুন আমার লাগছে৷ ”
ছাড়লো না শোভন, কিছু বললো ও না৷ নিজের চেম্বারে এনে ওর চেয়ারে ছিটকে বসায় মেঘলাকে তারপর দরজা লক করে মেঘলার সামনে গিয়ে চেয়ারের সামনের দুই হ্যান্ডেল ধরে একটু ঝুকে পরে৷ মেঘলা এতে ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
শোভন শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
— ” আমি বলেছিলাম আমি যেন মিটিং এর পর আমার চেম্বারে তোমাকে পাই, কোথায় ছিলে তুমি? আজ তো বেশি রোগীও নেই তবে?”
শোভনের স্পষ্ট ফোটে উঠা রাগী রাগী চেহারা নিয়ে শান্ত প্রশ্ন শুনে ভয়ে ঢোক গিলে৷
শোভন আবার বলে,
— ” উত্তর দিচ্ছো না কেন?”
মেঘলা নিজেকে সামলে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে,
— ” সব কাজ তো বুঝিয়ে ছিলেন আগেই, তখন কোনো প্রয়োজন ছিলো না তাই আসিনি৷ আর আসিনি তো এমন রিয়েক্ট এর কি আছে? এমন অস্বাভাবিক আচরনের মানে কি স্যার? ”
মেঘলার কাঠ কাঠ কন্ঠ শুনে শোভন রেগে চেচিয়ে বলে,
— ” কি বললে? অস্বাভাবিক আচরন? হ্যাঁ যদি তা মনে হয় তাহলে তাই, আমি যখন বললো আমার সামনেই থাকতে হবে৷ ”
মেঘলা একই ভাবে বলে,
— ” আমি বাধ্য নই থাকতে৷ ”
শোভন তা শুনে আরো রেগে গিয়ে বলে,
— ” তুমি থাকতে বাধ্য৷ হুম আমি বাধ্য করবো দরকার পরলে সব কাজ ফেলে সারাদিন আমার সামনেই বসিয়ে রাখবো৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#ঊনবিংশ_পর্ব
— ” তুমি থাকতে বাধ্য৷ হুম আমি বাধ্য করবো দরকার পরলে সব কাজ ফেলে সারাদিন আমার সামনেই বসিয়ে রাখবো৷ ”
শোভনের এমন কথা শুনে বেশ অবাক হয় মেঘলা, সাথে রাগ ও হয়৷ শোভন যা বলবে তাই হবে নাকি? হসপিটালটা ওদের বলে ওর কথায় চলতে হবে নাকি? আর এসব কথার মানে কি? হঠাৎ কেন এসব বলছে?
কেন ওর সামনে বসে থাকতে যাবে? আর এইটুকু কারণে এতো রেগে যাওয়ার মানেটা একদমই বোধগম্য হচ্ছে না মেঘলার৷
কি চায় ছেলেটা? এতো রাগ দেখিয়ে কি পায়? সবকিছুর জন্য রাগ না দেখালে কি হয় না? আর সব রাগ কি ওর উপরই দেখাতে হয়? মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না নাকি? সবাইকে নিজের মতো গন্ডারই ভাবে হয়তো ভাবলো মেঘলা৷
মেঘলা রেগে বলে,
— ” আপনার কথায় সব হবে নাকি? কে আপনি? কেন আপনার কথা আমি শুনবো? দরকার পরে আমি এ জব ছেড়ে দিবো তাও আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই আমি৷ ”
মেঘলার কথা শুনে শোভনের মাথায় রক্ত উঠে যায় মেঘলার ডান হাতের বাহু চেপে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— ” এই মেয়ে খুব বেড়েছো না? আমার সাথে এমন করে কথা বলার সাহস পাও কোথা থেকে? আর কি বললে জব ছেড়ে দিবে? তুমি বোধহয় ভুলে গেছো একটা পেপারে সাইন করেছিলে, আমাদের হসপিটাল এর নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর এর আগে কেউ নিজ থেকে রিজাইন করতে পারবে না৷ ”
মেঘলা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
— ” এভাবে চেপে ধরা কোন ধরনের ভদ্রতামো স্যার? ছাড়ুন আমায়৷ আপনাকে বলেছিলাম আমার দূরে থাকবেন৷ ”
ছিটকে ছেড়ে দেয় শোভন,কেন মেঘলার মুখের ” স্যার ” সম্বধোনটা ওর পছন্দ হচ্ছে না? এ “স্যার” শব্দটা শুনলে রাগ হচ্ছে কিন্তু কেন ও নিজেও জানে না৷ এই স্টুপিড মেয়েটা হয়তো জাদু জানে জাদু টোনা করে ওর মাথাটা বিগ্রে দিচ্ছে৷
মেঘলা রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলেই পেছন থেকে শোভন শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” ওই রনি থেকে দূরে থাকবে, কথা তো দূরে থাক আমি যেন তোমায় ওর আশে পাশেও না দেখি৷ ”
বলে নিজের কাজে মন দেয় শোভন৷
শোভনের এমন গা জ্বলানো কথা শুনে মেঘলার শরীর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে৷ ও রনির সাথে কথা বলবে তাতে শোভনের কি? মেঘলা রেগে শোভনের সামনে গিয়ে বলে,
— ” আমি কার সামনে যাবো আর কার সামনে যাবো না এটা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবে না? আমার যার সাথে ইচ্ছে হয় কথা বলবো৷ আর হ্যাঁ আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই৷ ”
শোভন রেগে যায় কেন মেয়েটা এমন অবাধ্য হচ্ছে?
শোভন রেগে তেরে এসে বলে,
— ” ভালো করে বলছি যদি না শুনো অন্য ব্যাবস্থা করবো, আমাকে রাগাতে বাধ্য করো না মিস মেঘলা নয়তো ফল ভালো হবে না গো যাও৷ ”
কিছু বললো না মেঘলা রেগে বেড়িয়ে গেলো৷ শোভন ধপ করে চেয়ারে বসে পরলো ও নিজের কান্ডে নিজেই বেশ অবাক হচ্ছে৷ মেয়েটা সত্যি ওকে পুরো পুরি বশ করে নিচ্ছে কিন্তু এ শাস্তি যে মেঘলাকে পেতেই হবে৷
সময় প্রবহমান সে তার মতো ছুটে যায়৷ জীবন থেকে এক সেকেন্ড চলে যাওয়া মানে সময় পাতা থেকে কিছু মূহুর্ত চলে যাওয়া, আর সময়টা আর কখনোই ফিরে পাওয়ার নয়৷ একদিন কেটে যাওয়া মানে জীবনের পাতা থেকে একটা দিন কেটে গিয়ে মৃত্যুর দুয়ারে এক ধাপ এগিয়ে আসা৷
সময়ের মূল্য অপরিসীম তা হয়তো হেলায় ছেড়ে দিলে জীবন থেকে কয়েকটা মূল্যবান মূহুর্ত হেলায় ফেলে দেওয়া হয়৷ এর মধ্যে কেটে গেছে পনেরো দিন এ পনেরো দিনে মেঘলা আরো পালটে গেছে কাজ ছাড়া শোভন এর সামনে যায়ই না এবার চোখে লাগার মতো ইগনোর করছে শোভনকে৷
গুধূলি পরেছে বাইরে আবছা আলো আবছা আধারের হাতছানি এর মাঝে লালচে হয়ে আছে আকাশ তীব্র হাওয়া বইছে হাওয়ার তালে কাশফুলগুলো একেবারে হেলে যাচ্ছে৷ ঢেউ হীন নদীর পানিগুলো হাওয়ার বেগে শব্দ তৈরি কি সুন্দর শব্দ, রুন ঝুন করে চুড়ির আওয়াজ এর সাথে পানি আর তীব্র হিমেল বাতাসের শব্দ সংমিশ্রিত হয়ে মধুময় সুরেলা শব্দ তৈরি করছে৷
আহানা আর মেঘলা বিকেল হয়ে আসতেই বেরিয়েছে, আজ তিনটা বাজেই মেঘলা বাড়ি চলে এসেছিলো কাজের খুব একটা চাপ নেই৷ নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে আহানা মেঘলা৷
শাড়ি পরেছে মেঘলা আর আহানা আকাশি রং এর জর্জেট শাড়ি আর সাদা রঙ এর ব্লাউজ চুল গুলো ছেড়ে রাখা কারো মুখেই কৃত্রিম সাজগোজ নেই আর হাত ভর্তি সাদা রঙ এর চুড়ি, বেশ কিছুক্ষন হাটা-হাটি করার পর আহানা ব্যাস্ত হয়ে পড়লো ছবি তোলার জন্য,মেঘলার ছবি তুলতে ভালো লাগে না তাই সিড়িতে বসলো, প্রকৃতি অনুভব করতে এসেছে সময়টা উপভোগ করতে এসেছে ছবি তুলে সময় নষ্ট করবে নাকি? হঠাৎ-ই নিজের সাথে কারো উপস্থিত টের পেয়ে পাশ ফিরে তাকালো মেঘলা৷
পাশে থাকা মানুষটিকে দেখে অবাকও হলো বিরক্তও হলো৷ শোভন এসেছে পড়নে সাদা শার্ট চোখে কালো সানগ্লাস৷ এ লোকটা এখানে কি করে এলো? মেঘলা তো বলেছিলো আহানা যেন শোভনকে না বলে৷ আর ওর জানা মতে আহানা বলেওনি তবে ও এলো কি করে?
মেঘলা রাগী শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” আপনি? এখানে কি করে এলেন?”
শোভন একটু মেঘলার দিকে চেপে এসে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
— ” কি করে আবার? গাড়ি দিয়েই এসেছি৷ ”
বিরক্ত হলো মেঘলা শোভনের এমন হেয়ালি কথায়৷ শোভন নামের বদ লোকটাকে আজ-কাল মেঘলার একদম সহ্য হয় না, দেখলেই রাগে গা জ্বলে যায়৷ যে মানুষকে দাম দেয়না সব সময় মানুষের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে আর মানুষকে ছোট করে দেখে সে সব মানুষকে মেঘলা কখনোই পছন্দ করে না তাও কিছুদিন বেহায়া মন এর সায় পেয়ে কি ভয়ংকর অনুভূতিতেই না জড়িয়েছিলো কিন্তু একদম বুঝতে পারছে যা ছিলো সবই আবেগ৷
মেঘলা এক রাশ বিরক্ত নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— ” আমরা এখানে এসেছি জানলেন কি করে? আপু তো বলেনি? আর আমার সাথে এসে বসলেন কেন? সরুন এখান থেকে আবার সেদিনের মতো ফেলে দেওয়ার ধান্দা আছে নাকি?”
মেঘলার এতো গুলো প্রশ্ন শুনে শোভন কিঞ্চিত বিরক্ত হয়৷ মেয়েটা আজ-কাল মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্ন করে এতো প্রশ্ন এক সাথে কেউ কাউকে করে?
শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” আরে এতো প্রশ্ন একসাথে? আচ্ছা আচ্ছা বলছি, প্রথমত আমি তোমাকে সে দিন ফেলিনি তুমি নিজেই পরেছো আর তোমারা এখানে কিভাবে এসেছো তা তোমার আপু বলেনি ঠিকি তা জানা আমার জন্য মোটেও টাফ নয় তা তুমি বুঝবে না৷৷ ”
এইটুকু বলে থামে আরেকটু মেঘলার কাছে চেপে সানগ্লাস টা হাতে নিয়ে বলে,
— ” কি বললে জানি আর? ও হ্যাঁ তোমার পাশে এসে বসলাম কেন?”
এইটুকু বলে ব্রু নাচি এক হাত পিছন দিয়ে হাল্কা ভাবে মেঘলার কোমর চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বাকা হেসে ফিসফিস করে বলে,
— ” আমার বউ যেখানে বসবে আমিও তো সেখানেই বসবো তাই না মিস না না মিস নয় মিসেস মেঘলা এহসান
চলবে,
চলবে,,,