প্রণয়স্পর্শী পর্ব ১৬+১৭

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#ষোড়শ_পর্ব

সময় কেটে যায় চোখের পলকেও এর মধ্যে পাঁচদিন কেটে গেছে৷ বাড়িতে থেকে যেমন সময়টা চোখের পলকেই কেটে গেছে মেঘলার৷ এ পাঁচদিনে শোভনের সাথে দেখা হয়নি, নিজেকে দৃঢ়ে দৃঢ়ে সামলে নিচ্ছে মেঘলা৷
আহানা কে বলিয়ে আরো দু-দিনের ছুটি নিয়েছে শোভনের থেকে, হসপিটালটা শোভনদের বলেই এতোদিন ছুটি কাটাতে পারছে নয়তো একজন নার্স এর কোনো হসপিটালেই দু-এক দিনের বেশি ছুটি দেয় না৷
আজ কাল অনুভূতি গুলোকে দাম দেয় না মেঘলা ভালোবাসা, অনুভূতি এসব এর প্রতি দাম দিলেই কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না৷
চন্দ্রালােকিত রাতের অপরূপ শােভা দেখা ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা৷ শুভ্র মেঘরাশি চাঁদের জোছনায় কেমন দুধেলা হয়ে আছে নির্মল আকাশটা৷ রাতের রুপালি চাঁদের আলোয় কেমন উজ্জ্বল হয়ে আছে পৃথিবী। চাঁদের সাথে পাল্লা দিয়ে ঝলঝল করে ঝলছে চাঁদের সাথী তারা৷
মেঘ মুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরছে। আকাশে চাঁদ তারার আলো ছড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে যেন৷ চাঁদের আর তারার আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্প কথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসছে পৃথিবীতে ৷ এমন আকাশ দেখলে বিষাদ মাখা মন ও আনন্দে দোল খেয়ে যায় । চাঁদ যেন তার অপূর্ব শুভ্র আলাে ঢেলে দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে। সমস্ত নিসর্গ যেন জ্যোৎস্নার শুভ্রতায় আত্মলীন হয়ে গেছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলােয় প্রকৃতির এই শােভা দেখে মেঘলা অভিভূত৷ প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য দেখে মোহিত না হয়ে পারেনা মেঘলা৷ তবে ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলে এমন মোহিত চাঁদ এর আলোকিত চারপাশটা আরো মোহিত লাগে হয়তো? কিন্তু সব কিছু তো আর সবার পাওয়া হয় না৷ চাঁদের আলোর মায়াবি রাত দেখেই হয়তো কবি বলেছিলেন,
❝ এমন চাঁদের আলো মরি যদি তাও ভালো ❞
❝ সে মরন সর্গ সমান ❞

ছাদের শেষ প্রান্তে রেলিং ঘেষে ডিভানে বসে আছে মেঘলা৷ চাঁদ তারার আলোর বিচরন দেখছিলো৷ মাত্রই গিয়ে নিচ থেকে কফি আর বই নিয়ে এলো৷
একা একা ছাদে বসে জোৎস্না বিলাস আর বই পড়ার মজাই ভিন্ন রকম অন্তত নিজেকে সব বাজে ভাবনা থেকে দূরে রাখার জন্য বই থেকে ভালো কিছু আর নেই৷
বেশ আয়াশ করে ডিভানের উপর পা গুজে বসে ধোয়া উঠা কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর হুমায়ুন আহমেদ এর
” অপেক্ষা” উপন্যাস টি বেশ মনযোগ সহকারে পরছে মেঘলা পড়নে চকচকে গোল গোল নীল ফ্রেমের নতুন চশমা৷ আগের চশমাটা সে দিন ঝিলেই পরে গিয়েছিলো তাই আহানা এটা এনে দিয়েছে ৷
চশমা ছাড়া মেয়ে টা দু -দন্ড দেখতেই পারে না৷ আহানা ওর পাশে নেই আজকে আসতে বেশ রাত হবে তাই একাই ছাদে বসে আছে, আজ কাল বইতে বেশ মত্ত থাকে মেঘলা আহানার সাথেও খুব বেশি কথা বলে না চুপচাপ হয়ে গেছে মেয়েটা, যা আহানার একদম ভালো লাগছে না৷
এতোদিন একসাথে থেকে মেয়েটা-র বাচ্চামোর মায়ার পরে গেছে আহানা শোভনকে যে এতোটা ভালোবাসে তবুও শোভনকে এতো চোখে হারায় না৷ একাকিত্বের জীবনে শোভন এর মত ভাই আর মেঘলার মতো বোন পেয়ে খুশি আহানা৷ আজ কাল আহানাও শোভনের সাথে যেচে কথা বলতে যায় না, মেয়েটার এমন চুপ হয়ে যাওয়ার কারন শোভনই৷
রাত দেরটা নাগাত বাড়ি ফিরলো আহানা মেঘলা তখন সোফায় শুইয়ে-ই ঘুমে বিভর হয়ে আছে৷ আসার সময় রাজ এর সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু দেখে খুব ব্যাস্ত মনে হলো কেমন যেন রহস্য মানব রহস্য মানব লাগে রাজকে৷ শুধু শুধুই ওর কথা ভাবছে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আহানা৷
রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে মেঘলার মাথার সামনে হাটু মুরে বসে মেঘলার মাথায় হাত দিয়ে মৃদু সরে বলে,
— ” এই মেঘলা এখানে ঘুমিয়ে আছিস যে?”
চোখ খুললো মেঘলা৷
এমনিতে গভীর ঘুমে থাকলে হাজার ডাকা-ডাকির পরেও এ মেয়ে উঠে না আজ একবার ডাক দিতেই উঠে পরলো৷
মেঘলার মুখটা ফ্যাকাসে লাগছে, মেয়েটাকে এমন দেখতে আহানার মোটেও ভালো লাগছে না৷ আহানা এটা বুঝতে পারছে না শোভন না হয় রাস্তায় অপমান করে বেশ খারাপ করেছে তাই বলে মেয়েটা এমন হয়ে যাবে? শোভনের কথা তো ও আগে ধরতো ও না তবে কয়েকদিন ধরে এমন হয়ে গেল কেন? আহানার মাথায় হঠাৎ-ই একটা প্রশ্ন এলো৷ আচ্ছা মেঘলা কি শোভন কে ভালোবাসে? তাই এতো কষ্ট পাচ্ছে?
পরক্ষনে ভাবলো না না এটা হতে পারে না এ মেয়ে যে বাচ্চা সুলভ এ মেয়ে প্রেম ভালোবাসা হলে বলেই দিতো ওকে৷ আর এরা দু জন যা সাপে নেওলের মতো লেগে থাকে ও কখনোই শোভনকে ভালোবাসতে পারে না, কিন্তু এমনটা হলে মন্দ হতো না শোভন আর মেঘলাকে এক সাথে মানাবেও বেশ আর শোভনের জন্য মেঘলাই পার্ফেক্ট ভাবলো আহানা৷
কিন্তু ও ভাবলেই কি এরা দু জন তো কখনোই হয়তো এসব ভাববেও না৷ তাও মেঘলাকে দেখে খটকা লাগছেই আহানার৷
মেঘলা চোখ খুলে আহানাকে দেখে মৃদু হেসে বলে,
— ” এসেছো? বই পরতে পরতে কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়ালই নেই৷ ”
আহানা মুচকি হেসে বলে,
— ” এসেছি, আচ্ছা তোকে এমন বিষন্ন লাগছে কেন বলতো? কিছু হয়েছে কি? কয়েকদিন যাবৎই দেখছি আগের মত হাসিস না, আগের মত কথা বলিস না কিছু নিয়ে একটা ভাবিস৷ কি হয়েছে বল তো তোর? ”
আহানার এমন প্রশ্নে আহানার আড়ালে তাচ্ছিল্য হাসলো, আহানার প্রশ্নটা হাস্যকর লাগলো মেঘলার, ওর জীবনটাই তো এমন বিষাদ মাখা সব-সময় মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখতো তাই বুঝতো না আজ কাল মনটা বেশি বিষন্ন তাই রসিকতা আর ভালো লাগে না৷ তবে আগে যেমন ছিল তেমনই হতে হবে নয়তো আহানা আরো সন্দেহ করবে৷
মেঘলা অধর যুগলে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
— ” আরে আপু কি যে বলো না আমার আবার কি হবে?
আহানা ব্রু কুচকে কিছু বলবে এর আগেই ফোনটা বেজে উঠে৷ স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে শোভনের নাম টা ভেসে আসছে৷ আহানা ফোন তুলে অন্য একটা সোফায় বসে পরে৷
আহানা বলে,
— ” এতো রাতে ফোন করলি যে? ”
ওপাশ থেকে শোভন বলে,
— ” বিকেলে তো বললি বাসায় ফিরতে একটা দুটো বাজতে পারে, ঠিক ঠাক পৌছেছিস বাড়িতে?”
আহানা গম্ভীরমুখে উত্তর দেয়,
— ” এসেছি, আচ্ছা রাখছি কাল কথা বলি৷ ”
শোভন তরিৎগতিতে বলে,
— ” না না৷ ”
আহানা ব্রু কুচকে বলে,
— ‘ কিছু বলবি? ”
শোভন আমতা আমতা করে বলে,
— ” না মানে ইয়ে ওই মেয়েটা কি ঘুমিয়েছে? একা একা থেকেছে ভিতুটা? ”
আহানা তাচ্ছিল্য কন্ঠে উত্তর দেয়,
— ” এতো সব তুই জেনে কি করবি? রাখছি কাল কথা বলি৷ ”
বলেই রেখে দিলো আহানা, শোভন ওদিকে বোকার মত থম মেরে বসে রইলো৷ আজ কাল ওর কি হয়েছে ও নিজেও জানে না৷ মাঝে মাঝে ভাবে আচ্ছা ও কি ওই ছিচকাদুনে মেয়েটা কে মিস করছে?
শোভন শুকনো ঢোক গিলে বলে,
— ” ইম্পসিবল৷৷ ”
এদিকে আহানা শোভনের এমন কান্ডে বিরক্ত প্রায়, একটা সরি বলতে পারছে না মেয়েটাকে অথচ হালচাল জিগ্যেস করে ইউসলেস ছেলে একটা৷
হ্যাঁ শোভন আহানা থেকে এই পাঁচ দিনে ছলে বলে মেঘলার কথা জেনে নিতো ওর কি হচ্ছে ও নিজেও বুঝতে পারে না৷
আহানা মেঘলার সামনে এসে বলে,
— ” তখন বলেছিলি তোর আবার কি হবে তাই না? শুন মেঘলা আমার চোখকে ফাকি দিতে পারবি না তুই৷ আচ্ছা একটা কথা বল তো? তুই কি আমার বদ রাগী ভাইটার প্রেমে পরে গেলি?”
আহানার প্রশ্নে বিস্ময় চোখে তাকায় মেঘলা৷ কিছুক্ষন চুপ থেকে শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
— ” কি যে বলো তুমি এসব৷ ”
আহানা মেঘলার উত্তরে কিছুক্ষন মেঘলার দিকে তাকায় পরক্ষনে ভাবে সত্যি একটু এসব নিয়ে বেশি ভেবে ফেলছে ও৷
কিছুক্ষন এখানে থেকে আহানা আর মেঘলা ঘুমানোর জন্য নিজেদের রুমের দিকে হাটা দেয়৷
মেঘলা বিছানায় গা এলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
— ” প্রেম? নাহ আমি তো কঠিন প্রণয়স্পর্শী হয়ে আছি৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#সপ্তদশ_পর্ব

ঢাকার বিখ্যাতো জ্যামে দু-ঘন্টা যাবৎ বিরক্ত নিয়ে বসে আছে মেঘলা৷ জ্যামটা যতো না বিরক্ত লাগছে সামনে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে এর চেয়ে বেশি বিরক্ত লাগছে আজ কাল শোভনকে দেখলেই ওর কথা মনে পড়লেই হাজার রাগ আর বিরক্ত এসে জমা হয় মাথায়৷
শুক্রবারের দিন আজই বাড়িতে আছে কাল থেকে আবার হসপিটালে যেতে হবে তাই আহানাকে নিয়ে বের হয়েছিলো একটু শপিং করতে ভেবেছিলো আজ সারা বিকেল ঘুরবে আর শপিং করে নিজের মনকে ভালো রাখার চেষ্টা করবে কিন্তু তা আর হলো কই? এ শোভন সব ইচ্ছাতে এক বাল্টি পানি ঢেলে দিয়েছে৷ যখন ওরা বাড়ি থেকে বের হলো তখন ও নিজেই চলে এলো তবে এবার আহানা জানায় ও নি হসপিটালে আজ রোগীর এতো চাপ নেই আর শুক্রবার চেম্বার ও অফ থাকে তাই নাকি আড্ডা দিতে এসেছিলো ওরা বেরিয়েছে দেখে ও নিজেও ওদের সাথে বের হলো সাথে অচেনা একটা ছেলেও আছে৷
ছেলেটাকে মেঘলা চিনে না তবে আহানা আর শোভন দু-জনেরই ফ্রেন্ড৷ আহানা শোভন আর সাথের রনি নামের নামের ছেলেটা খোশ গল্পে মেতে আছে, মেঘলা জানতে পারলো রনি নামের ছেলেটা হসপিটালে প্যাথলজিস্ট ডক্টর হিসেবে জয়েন করেছে৷ রনি নামের ছেলেটা ফ্রন্ট সিটে বসলেও আয়না দিয়ে কয়েকবার পলকহীন ভাবে তাকিয়ে ছিল তা সবার চোখের আড়ালে হলেও শোভনের চোখ এড়ায় নি৷ হঠাৎ-ই শোভনের রাগ উঠে গেলো তীব্র রাগ৷ কেন এমন হলো বুঝলো না তাও রনির এভাবে তাকানো সহ্য হচ্ছে না৷
মেঘলা আহানার সাথে হেসে কথা বলছে রনি মেঘলার চেহারার দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে৷
শোভন একবার রাগী রাগী ভাবে রনির দিকে তাকিয়ে আড়ষ্ঠ চাওনি মেঘলার দিকে তাকায় তারপর স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে ঝাঝালো কন্ঠে মেঘলা আর আহানা কে বলে,
— ” গাড়িতে বসে এতো হাসা হাসির কি আছে? চুপ করে বসতে পারিস না তোরা?”
এমন ঝাঝালো কন্ঠ শুনে দুজনেই চুপ হয়ে যায়, রনি চোখ নামায়৷ মেঘলা এবার রেগে যায়৷ এ ছেলের জন্য কি কথাও বলতে পারবে না? ওর যখন ওদের কথা ভালোই লাগে না তাহলে ওদের সাথে এলো কেন? ওরা কি বলেছিলো আসতে?
মেঘলা মুখ ফুলিয়ে জানলার বাইরে তাকিয়ে রইলো আহানাও চুপ চাপ বসে রইলো৷ হঠাৎ-ই রনি গাড়ি থামাতে বলে শোভনের উদ্দেশ্যে বলে,
— ” ব্রো আমার একটু এখানেই নামতে হবে কাজ আছে আমার৷ ”
রনির এমন কথায় যেন শোভন পৈচাশিক আনন্দ পেলো এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠলো ঠোঁটে, নিজেকে সামলে নিলো শোভন৷ কি করছে ও? এই ষ্টুপিড মেয়েটাকে নিয়ে এতো ভাবছে কেন? না না ওকে নিয়ে এতো ভাবলে চলবে না৷
রনি তার নির্দিষ্ট জায়গায় নেমে মেঘলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— ” আসছি, কাল দেখা হচ্ছে হসপিটালে৷ ”
বিনিময়ে মেঘলা মুচকি হাসলো৷ শোভনের তাতে বিরক্ত লাগলো, রনি নামার পর গাড়ি পিছনের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” তোদের কি আমাকে ড্রাইভার মনে হয়?”
শোভনের এহেন প্রশ্নে অবাক আর মেঘলা বোকা বোকা চাওনি দিয়ে তাকায় শোভনের দিকে৷ শোভন আবার শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” সামনে আয় একজন নয়তো আমি ড্রাইভ করবো না৷ ”
আহানা গেলো না৷ আহানা একবার শোভনের দিকে তাকিয়ে আর এক বার মেঘলার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে ইতস্ত ভঙ্গিতে বলে,
— ” মেঘু একটু সামনে যা না প্লিজ, আমার আর উঠে ওখানে যেতে ইচ্ছে করছে না৷ ”
মেঘলা আহানার কথা শুনে ফস করে উঠে মুখ ফসকে বলেই দেয়,
— ” আমি এই বদ রাগী এনাকন্ডার সাথে বসবো না, তুমি গিয়ে বসো৷ ”
বলে চুপ করে যায়, পরক্ষনে নিজের মুখ ফসকে ভয়ংকর কথাটা ভেবে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে, আহানা শুকনো ঢোক গিলে একবার শোভন আর একবার মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” তোকে আজ কেও রক্ষা করতে পারবে না৷ ”
এই বুঝি রাম ধমক দিবে তাই ভেবে কান চেপে ধরলো আহানা, এই ছেলে যা রাগী নিজেকে ” এনাকন্ডার” সাথে তুলনা করতে দেখে না জানি সে দিন এর মতো থাপ্পড়-ই না বসিয়ে দেয় মেঘলার গালে৷
কিন্তু না দু-জনকেই ভুল প্রমান করে শান্ত কন্ঠে বলে,
— ” হয়েছে বকবক? হয়ে থাকলে সামনে এসে বসো৷ ”
আহানা মেঘলা দুজনই অবাক৷ কিছু বললো না যে? অদ্ভুত তো৷
অতঃপর আহানার জোরাজুরিতে মেঘলা এসেই সামনে বসলো৷ ইচ্ছে একদম নেই এই বদ রাগী পাষাণ লোকের সাথে বসতে তবুও আহানার কথায় বসলো৷ কিন্তু এটা বোধগম্য হলো না আজ কি হলো এই ছেলের? ধমক দিলো না কথাও শুনালো না?
আজ কাল লোকটাকে অচেনা লাগে কেমন যেন হয়ে গেছে শোভনকে নিয়ে নিজের ভাবনা দেখে তাচ্ছিল্য হাসলো, কেন ভাবছে ওকে নিয়ে? আর ভাবতে চায় না আর দূর্বলও হতে চায় না৷

বড় শপিং-মল এর সামনে এসে গাড়িটা থামলো মেঘলা আহানা দুজন নামতেই শোভন গাড়ি পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি রেখে শার্টের কলারে ঝুলিয়ে রাখা কালো সানগ্লাসটা চোখে পড়লো৷ অতী ফর্সা না হলেও গায়ের উজ্জ্বল শ্যামবর্নের সাথে অফ-হোয়াইট কালার শার্টটা বেশ মানিয়েছে শার্টের উপর হাল্কা বাদামি রঙের স্লিভলেস মেনস কুটি৷ শোভনের দিক থেকে চোখ সরালো মেঘলা, নিজেকে আর বেহায়া করতে চায় না অনুভুতি গুলোকে দাম দিলেই সে মাথায় উঠতে চাইবে তাই তাকে মরিচিকা ভেবে দূরে ঠেলে দিলো৷
শোভন ওদের দুজনের সামনে এসে মৃদু হেসে বলে,
— ” আজ তোদের সব শপিংসহ খাওয়া দাওয়া আমার পক্ষ থেকে৷ ”

তা শুনে মেঘলা চট জলদি বলে,
— ” নো থ্যাংকস আমি আননোন কারো ট্রিট নেই না৷ ”
বলে সামনে হাটা দিলো৷ কেন করবে ও শোভনের টাকায় শপিং? দয়া দেখাচ্ছে নাকি? কেন নিবে ওর দয়া? কোন অধিকারে ওর টাকায় শপিং করবে?
শোভন তরিৎ বেগে গিয়ে মেঘলার হাত চেপে ধরে থামায় মলের ভিতরেই, মেঘলা একবার ওর হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর চারপাশটা নজর বুলায়৷ না সবাই সবার মতই আছে ওদের দিকে কারো ধ্যান নেই৷
মেঘলা হাত ছারানোর চেষ্টা করে শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” এসব কেমন অসভ্যতামো? ছারুন বলছি, একটা মিডল ক্লাস মেয়ের হাত ধরতে লজ্জা করলো না স্যার?”
মেঘলার এমন কথাটা শোভনের বুকে লাগলো, শোভন ওই দিন রাগে মেঘলাকে মিডল ক্লাস বলেছিলো৷
আহানা শোভনকে এখানে আসতে দেখে অন্য দিকে চলে গিয়েছে ভাবলো ওদের একটু একা কথা বলতে দেওয়া উচিৎ৷ শোভন মেঘলার হাত ছারলো না ধরে একটু দোকানের সাইডে নিয়ে দাড় করিয়ে বলে,
— ” এমন করে কথা বলছো কেন? সরি ওই দিন আমি অনেক রেগে ছিলাম তাই,,,৷ ”
শোভনকে থামিয়ে মেঘলা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
— ” ইতস ওকে স্যার, অভ্যাস আছে৷ আর প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকুন৷ ”
বলে হাত ছাড়িয়ে আহানাকে খুজতে লাগে৷ শোভন ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, ও আজ কাল নিজেকেই চিনে না কি হচ্ছে ওর? ” আমার থেকে দূরে থাকুন” মেঘলা বলা এ কথাটা ওর কাছে বিষাক্ত লাগছে কেন? কেন এমন হচ্ছে? কেন মেঘলার ইগনোর গুলো সহ্য হচ্ছে না? কেন?

চলবে,,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here