প্রণয়স্পর্শী পর্ব ১৪+১৫

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#চতুর্দশ_পর্ব

শরৎের মাঝামাঝি সময় চলছে, শরৎের আগমনে বাংলার প্রকৃতি হয়ে উঠেছে নির্মল স্নিগ্ধ। দিনের আকাশে ভেজা তুলার মতো সাদা মেঘমালা ওড়ে যে মেঘমালা দেখে, যে কোনো প্রেমিক মন প্রেমে পরে যাবে৷ এই নির্মল নীলাভো আর সাদা মেঘ গুচ্ছ জমে থাকা আকাশের প্রেমে পরবে যে কেউ। কি সুন্দর ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘগুলো ঘুরঘুর করে ভাসতে থাকে সারাদিন, সারা বেলা।
শরৎের রাতের আকাশের মতো আকাশ আর কোন ঋতুতে দেখা যায় না। শরৎ কালের রাতে জ্যোৎস্নাররূপ অপরূপ। মেঘ মুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে।
প্রেমিক জুটিদের জন্য এমন জ্যোৎস্না মাখা রাত কতই না শোভনীয়?
এমন মায়াময় আকাশ দেখে যে কোনো প্রেমিক মন কঠিন ভাবে জাগ্রত হবে৷
মেঘলার মনের গহীনে প্রকৃতির সৌন্দর্যের বিচরন সারারাত আজ আকাশ দেখেই কাটিয়ে দিলো৷
কাল হসপিটালে গিয়ে কাজের প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনি শোভনের সাথে মেঘলা, শোভনও কথা বলেনি কাল সারাদিন-ই কিছু না কিছু নিয়ে সবার উপর রাগ দেখিয়েছে শোভন৷ এতো খারাপ ব্যাবহার করেও একবার সরি বলেনি, আর মেঘলাও বড্ড বোকা ওর মতো মিডল ক্লাস মেয়েকে কি সরি বলবে শোভন?
কখনই না, তাই নিজেও এক্সপেকটেশন রাখে নি জানে এই ছেলে কেমন৷ নিজেকে এ মরিচিকার অনুভুতি থেকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার জন্য পাঁচ-দিন এর ছুটি নিয়েছে হসপিটাল থেকে৷ ওর কাজের এক মাস আরো দু এক দিন আগেই শেষ হয়েছিলো কাল প্রথম মাসের স্যালারি পেয়েছে তাই কালই ছুটি নিয়েছে৷ নিজেকে শান্ত এবং এ ভালোবাসা নামক তাচ্ছিল্য অনুভূতি থেকে দূরে রাখতে হবে আর শোভন এর সামনে থাকলে কিছুতেই পারতো না তাই বিশেষ করে ছুটিটা নিয়েছে৷ মেঘলা জানে না এই পাঁচদিনে নিজেকে কতটা সামলে রাখতে পারবে তবুও চেষ্টা করবে৷
আচ্ছা সত্যি কাউকে ভালোবাসলে কি ভুলে যাওয়া যায়? বা ভুলে যাওয়ার কথা মাথায় আনা যায়?
তবে কি শোভন এর প্রতি আবেগ ছিল?
মেঘলা ভাবলো ভালোবাসাটাকে নাহয় আবেগ ভেবেই মন থেকে দূর করলো? হুম এটাই করতে হবে যে মানুষটা ওকে মূল্য দেয় না সে মানুষটাকে কেন ও ভালোবাসবে? ওর ভালোবাসা কি এতোই ফেলনা নাকি? ও অসহায় বলে এতোয় ফেলনা নাকি? যে তাকে পছন্দ করে না সুযোগ পেলে কটু কথা বলতে ছারে না সে আর যাই হোক ওর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না৷
এসব ভাবতে ভাবতে বারান্দা ছেড়ে রুমে প্রবেশ করলো মেঘলা, কাল সারা রাত বারান্দা-তে ই ছিলো জ্যোৎস্না বিলাশ করেছে৷ সবদিকে সবকিছুর সময় দেওয়া হয় কাল নিজের কাছেই মত্ত ছিলো সারা রাত জেগে থাকলে ও এক বার ও শোভনের কথা ভাবেনি, মনে বা মাথায় আসেনি শোভনের কথা তা নয় অনেকবারই মেঘলার শোভনের কথা মনে এসেছিলো কিন্তু তা মস্তিষ্ক থেকে ঝেড়ে ফেলেছে৷ আর ভাববে না ওর কথা, মরিচিকার পিছন ছুটতে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না কেন ওই হৃদয়হীন মানুষটার কথা ভেবে কষ্ট পাবে? বিয়ে যখন হয়েছে এটা তো আর না মানা যায় না? শোভন না মানুক ও তো মানে তাই ছুটি শেষ হলে শোভনকে নিজ থেকেই ডিভোর্স পেপার পাঠাবে৷ এটা কোনো খেলনা নয় যে “হয়ে গেছে বিয়ে পছন্দ হয় নি থাক এভাবেই থাক ” ইসলামিক নিয়মে হয়েছে যখন বিচ্ছেদ তো হতেই হবে অন্তত মনকে শান্ত করার জন্য হলেও৷
দূরের মসজিদে প্রথম আজান পরতেই নামাজ পরতে বসে পরে মেঘলা৷ নামাজ শেষ করে বের হলো ঘর থেকে আলো ফুটতে আরো ঘন্টা খানেক লাগবে এখনো আজান দিচ্ছে সবে ঘড়িতে চারটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট তাও বের হলো আজ একটু বের হবে সকালটা উপভোগ৷ মেঘলা ড্রইং রুমে আসতেই আহানাও নিজের ঘর ছেরে বেরিয়ে আসে নামাজ পরে উঠলো সবে৷
মেঘলাকে বের হতে দেখে বলে,
— ” এতো ভোরে কোথায় যাচ্ছিস? হসপিটাল থেকে না ছুটি নিলি?”

মেঘলা মুচকি হেসে বলে,
— ” একটু বের হবো আপু আজ ঘুরবো মন খুলে ঘুরবো৷ ”

এ মেয়ে কি পাগল হলো নাকি? ঘুরবে বলে এতো সকালে বের হবে নাকি? আহানা ব্রু কুচকে বলে,
— ” ঘুরবি ঠিকাছে , কিন্তু এতো ভোরে? দেখ আলোও ফুটেনি৷ ”

মেঘলা মুচকি হেসে বলে,
— ” হুম আপু শরৎের সকাল উপভোগ করবো, সকালের দূষণ মুক্ত হাওয়া উপভোগ করবো চলো না যাই তুমিও যাবে৷ ”
হাসলো আহানা, এই মেয়ের বাচ্চামো দেখে৷ তাই গাড়ির চাবি নিয়ে বের হলো৷
ঘড়িতে এখন কাটায় কাটায় পাচঁটা বাজে, প্রায় পঁচিশ মিনিট ড্রাইভিং করে একটা ঝিলের সামনে আসলো আহানা মেঘলা৷
ঝিলের সামনে বসে আছে আহানা এর কিছুটা দূর হাটছে মেঘলা৷ প্রকৃতি অনুভব করছে৷ বাতাস হয়ে আছে দূষণহীন। চিত্তে বাজে আলাদা গন্ধ, ছন্দ ও রং। আজ প্রকৃতির প্রেমে ব্যাকুল হয়ে আছে মেঘলার মন। স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে রবিঠাকুরের সেই কবিতা,

শরৎ এসেছে-

আজি কি তোমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে,
হে মতবঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে।
পারে না বহিতে নদী জলধার
মাঠে মাঠে ধান ধরে না কো আর
ডাকিছে দোয়েল, গাহিছে কোয়েল
তোমার কানন শোভাতে।

প্রভাতের শিশিরভেজা শিউলি, ঝিরিঝিরি বাতাসে দোল খাওয়া ধবধবে কাশবন, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি ইস কি সুন্দর প্রকৃতির রূপ, ধব ধবে সাদা কাশ-ফুল গুলো প্রভাতের হিমেল হাওয়ার তালে তালে ধুলছে আর তুলোর ন্যায় কিছুটা উরে উরে যাচ্ছে । ঝিলের সামনে বড় খালি জায়গাটার মাঝ বরাবর একটা শিউলি গাছ সেখান গাছের নিচে পাকা জায়গাটায় পরে বিছিয়ে আছে শিউলি ফুল গুলো৷ সকাল সকাল এমন ফুলের মধুগন্ধে বিলিন হচ্ছে মেঘলা৷ আল্লাহর সৃষ্টি অতুলনীয়৷
এরশাদ হয়েছে, দয়াময় স্রষ্টার সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না। তোমার দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? আবার দেখ; আবারও। তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে আমারই দিকে ফিরে আসবে (সূরা মুলক ৩-৪)।

হঠাৎ-ই গাড়ির শব্দ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় আহানা ঝিলের সামনের ইটের কাউচ থেকে এগিয়ে গাড়িটার সামনে গিয়ে বলে,
— ” বাহ আজ কোন দিকে সূর্য উঠলো বলতো ভাই? আমি বললাম আর চলে এলি তাও ভোরের আলো ফুটতেই? ”
শোভন গাড়ি থেকে নামলো, কালো টাউজার আর কালো টি-শার্ট পরনে চুলগুলো এলো মেলো হাত ঘড়িটা পকেট থেকে বের করে পরছে সবে ঘুম থেকে উঠেই মনে হচ্ছে এখানে চলে এসেছে?
মেঘলা চোখ ফেরালো, দেখতে চায় না এ লোককে যে মানুষকে সম্মান দিতে জানে না তাদের মেঘলা কখনই পছন্দ করে না৷
মেঘলা আহানার দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে,
— ” উনি এখানে? ”
আহানা ইতস্ত বোধ করলো, আহানা ইচ্ছে করেই শোভনকে এখানে ডেকেছে৷ কাল রাতে আহানা শোভনের সাথে কথা বলেছে৷ শোভনকে বলেছে যেন মেঘলার থেকে ক্ষমা চায়৷
আহানা আমতা আমতা করে কিছু বলবে এর আগেই শোভন বলে,
— ” আমার তোমার সাথে কথা আছে৷ ”
শোভনের কন্ঠ শীতল, চোখে-র চাওনিও আজ বড্ড শান্ত৷ নেই কোনো রাগ যেমন কোনো অপরাধবোধ এ ভুগছে৷ ইসস ভিতরটা নড়ে উঠলো মেঘলার দূর্বল মন যেন ছুটে যাবে এখনি চোখ নামিয়ে নিল মেঘলা ওই চোখে তাকানোর সাধ্যি কোথায়? আজ আর এই চোখের দিকে ভুল করেও তাকাবে না পন করলো মেঘলা৷ তাকালে যে অনর্থ করে ফেলবে বেহায়া মন৷ কই ভেবেছিলো নিজেকে ওর থেকে এ কদিন দূরে রেখে ঠিক করবে আজ কি সব ভাবনা জলে যাবে নাকি? না না এ হতে পারে না আর দূর্বল হলে চলবে না মানুষ দূর্বল মানুষকেই বেশি আঘাত করে৷ কালকের ঘটনা মনে করলো তারপর জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে মাটির দিকে তাকিয়েই শক্ত কন্ঠে বললো,
— ” আমি আননোন কারো সাথে কথা বলি না, হসপিটালে অন্য ব্যাপার সেখানে আপনি আমার স্যার আপনার সহকারী নার্স মাত্র আমি৷ মাফ করবেন আমার কারো সাথে উহুম আননোন কারো সাথে কথা নেই৷ ”
বলে গট গট পায়ে হেটে ঝিলের সিড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালো৷
শোভনের রাগ হচ্ছে বললেই হলো নাকি? ওর সাথে কথা বলবে না কেন? বলতেই হবে ও একবার আহানার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে মেঘলার দিকে এগিয়ে গেল৷
আহানা এখানে দাঁড়িয়ে শুকনো ঢোক গিলে বিরবির করে বলে, ” এ ছেলে আবার না জানি রাগের বসে কি করে দেয়৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tasfia_Meghla
#পঞ্চদশ_পর্ব

ঝিলের শেষ সিড়িতে এসে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা হাত দুটো বুকে ভাজ করা, ও বুঝে পায় না এ আহানা রাগী ডাক্তারটাকে এখানে ডেকেছে কেন? কালকের ভরা রাস্তায় ঘটনা গুলো ভুলে গেলো আহানা? ওর ভাই ও একান্ত ভাবে দেখা করুক এখানে আনার মানে কি? আর শোভনই বা কি? কি কথা মেঘলার সাথে? আবার নিশ্চয়ই কিছু নিয়ে অপমান করবে? হুহহ অপমান ছাড়া পারে কি এই ছেলে?
হঠাৎ-ই পেছন থেকে কেউ এসে হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে সামনে ঘুরায়৷ সামনে থাকা ব্যক্তিটি শোভন৷
মেঘলা রেগে কটমট করতে করতে বলে,
— ” সমস্যা কি আপনার? আর আমার হাত ধরে এমন করার পার্মিশন কে দিলো আপনাকে? ”
একটানে কথা গুলো বলে জোরে ফস করে শ্বাস ছাড়লো৷
শোভন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মেঘলার দিকে,মেয়েটা-র সাহস বেরেছে যে মেয়েটা দু-দিন আগেও ওর সাথে কথা বলতে গেলে কাঁপতো, যে মেয়েটা যদি মুখ ফসকে কিছু বলেও ফেলতো তবুও ওর বকুনি থেকে বাঁচার জন্য ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে দিতো সে মেয়ে আজ এতো গুলো কথা শুনাচ্ছে? তাও এমন রাগী কন্ঠে৷
এখান থেকে আসার পর ভেবে ছিলো দু একটা কথা শুনাবে কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখলো শোভন শান্ত হয়ে বলে,
— ” এই মেয়ে বললাম না তোমার সাথে আমার কথা আছে? এমন করছো কেন আমি সে দিন,,,,৷ ”

শোভনকে মাঝ কথায় থামিয়ে রাগী কন্ঠে আবার বলে,
— ” বললাম না আমি আননোন কারো সাথে কথা বলি না, কথা কানে যায় না আপনার? আমার এখানে কেন এসেছেন? আপুর সাথে কথা বলুন না প্লিজ৷ ”
শোভনের এবার রাগ উঠে গেলো মেয়েটা আজ এক রুখে ব্যবহার করছে৷ শোভন রেগে মেঘলার বাহুচেপে ধরে কিছু বলবে এর আগেই আহানা এসে বলে,
— ” আরে ভাই কি করছিস? এমন করছিস কেন ওর সাথে? ছাড় পরে যাবে ও৷ ”

মেঘলা রাগে শোভনের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু শোভন আরো শক্ত করে ধরে রেখেছে শোভনের সাথে ধস্তা ধস্তি করতে গিয়ে পা পিছলে ঝিলের পানিতে ধপ করে পরে যায় মেঘলা৷
শোভন আহানা দু জনেই বিস্ময় চোখে সে দিকে তাকায়৷ মেঘলা পানিতে পরে শ্বাস নিতে পারছে না সাতার ও জানে না কোনো রকম ফিচলে কন্ঠে বলে,
— ” আপু আমি সাতার জানি না প্লিজ আমাকে সাহায্য করো৷ ”
হুস আসে দু’জনেরই৷
শোভন পকেট থেকে ফোনটা বের করে কোনো মতে পাশে ফেলে ঝিলের মাঝে ঝাপ দেয়৷
এতোক্ষনে মেঘলা নিজের হাল ছেড়ে দিয়েছে চোখ নিভু নিভু হয়ে আসছে তখনই গিয়ে শোভন ঝাপটে ধরে৷

চোখ খুলে নিজেকে নিজের ঘরে পেলো, অবস্থা নাজেহাল শরীর অনেক দূর্বল লাগছে গ্রামের মেয়ে হলেও সাতার পারে না৷ তখন এর কথা ভাবতেই কাপুনি দিয়ে উঠছে মেঘলার শরীর , সব হয়েছে ওই শোভনের জন্য৷
বিছানার মাঝে বসে হাটুতে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মেঘলা অনেক বেশি ভয় পেয়ে গেছিলো যে৷ হঠাৎ কাধে কারো ছোয়া পেতেই অশ্রুসিক্ত চোখেই সে দিকে তাকালো৷ শোভন দাঁড়িয়ে আছে শোভনকে দেখে রাগ হলো৷
কেন যেন আজ ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে না, দু দিন আগ পর্যন্ত যে ছেলেকে চোখে হারাতো মেঘলা আজ ওই ছেলেকে দেখে অসহ্য লাগছে৷ ভুল মানুষকে ভালোবেসে শুধু শুধু এখন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে, মন তো আর বুঝে না যে সে ভুল হৃদয়হীন মানুষকে ভালোবাসছে কি করবে? মন কি সব বিচার করে নাকি? সে তো বেপরোয়া ৷
আহানাও আসলো মাত্র শোভন ঠিক হয়ে দাঁড়ালো৷
আহানা মেঘলার সামনে এসে স্মিত কন্ঠে বলে,
— ” ভালো লাগছে একটু? নাকি খারাপ লাগছে কোথাও? ”
মেঘলা ফিচলে হাসে তারপর মৃদু স্বরে বলে,
— ” ঠিক আছি শুধু একটু দুর্বল লাগছে৷ আমার জন্য এতো চিন্তা করতে হবে না আপু, আমি কে? কেন এতো চিন্তা করছো? আমার মতো মিডল ক্লাস মেয়ের জন্য চিন্তা করা তোমাদের মানায় না৷ ”
বলে আড়ষ্ঠ হয়ে একবার শোভন এর দিকে তাকালো, বুক চিড়ে বেড়িয়ে এলো তীব্র দীর্ঘশ্বাস, যে দীর্ঘশ্বাস জানান দিচ্ছে মেয়েটা ভালো নেই কষ্টে আছে৷ তীব্র কষ্ট, নতুন গড়ে উঠা অনুভূতি জড়ানো মন ভাঙার তীব্র কষ্ট৷
মেঘলার কন্ঠে ছিল এক রাশ অভিমান আর অভিযোগ৷ খারাপ লাগলো আহানার মেয়েটা এমনি আগের দিনের ব্যাপার নিয়ে পেনিক ছিল আবার আজ সকালে শোভনকে ডেকে ভুলটা করলো আজ যদি শোভন না আসতো তাহলে এমন হতো না৷
আহানা ইতস্ত হয়ে বলে,
— ” রাগ করে আছিস জানি, আমার জন্যই এমনটা হলো সরি রে৷ ”
মেঘলা কিছু বললো না দূর্বল হাসলো, শোভন তাকালো মেঘলার দিকে৷ এমনি তো ওর হাসিতে একটা মোহময় ভাব থাকে যে কেউ এ হাসিতে পাগল হয়ে যাবে প্রায় কিন্তু আজ মেয়েটার মুখে হাসিটা যেন মিথ্যে৷
আগের দিনের করা নিজের অপমানের কথা মনে পরলো শোভনের৷ ইসস রাস্তার মধ্যে এতো লোকের সামনে ওইরকম অপমান না করলেও পারতো সে দিন কিন্তু ওর রাগ উঠলে যে কিছু খেয়াল থাকে না কি করবে এতে ও?
মেঘলার উত্তর না পেয়ে আহানা মেঘলার পাশে বসে বলে,
— ” খুব অভিমান করে আছিস তাই না? আমার জন্য কি ভয়াবহ কান্ড ঘটে গেলো ইসস আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম, ভাগ্যিস শোভন তারাতারি উঠিয়ে নিয়ে এসেছে৷ অনেক কষ্ট হয়েছে তখন নারে? ইসস সরি,,৷ ”
আহানাকে থামিয়ে মেঘলা স্মিত কন্ঠে বলে,
— ” শুধু শুধু এতো কিছু ভাবছো কেন? আমি তোমার উপর রেগে নেই আপু৷ কেন রেগে থাকবো? আর এসব নিয়ে ভেবো না যা হওয়ার হয়েছে৷ ”
আহানা মুচকি হাসলো৷ তারপর হাত ঘড়ি পরখ করে বলে,
— ” তুই তো কিছুই খাস নি এগারোটা বেজে গেছে আমি কিছু নিয়ে আসি খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে তো? আর এখন একটু দূর্বল লাগবেই৷ মেডিসন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে৷ ”
বলে উঠে বাইরে গেলো আহানা৷ মেঘলা অন্য দিকে মুখ করে ফিরে রইলো৷ শোভন আবারো মেঘলার সামনে বসে কিছু বলবে এর আগেই
মেঘলা শোভনের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাগ সামলে মিহি কন্ঠে বলে,
— ” আমি একা থাকতে চাই স্যার৷ ”
মেঘলার এমন কথায় অবাক হলো শোভন, মেঘলা তো ওকে স্যার বলে না সব সময় ডাক্তার সাহেব বলে হঠাৎ কি হলো মেয়েটার? স্যার বলছে যে আজ?
শোভন কিছু বলবে এর আগে আবার মেঘলা বলে,
— ” প্লিজ স্যার৷ ”
বেরিয়ে গেলো শোভন কিছু বললো না রাগে ক্ষোভে কিছু বলতে পারলো না৷ আরেকটু হলে হয়তো বেশি রেগেই কিছু বলে দিতো তাই আগে আগেই বেরিয়ে গেলো নয়তো আবার উলটো পালটা কি বলে দিতো আবার কষ্ট পেতো মেয়েটা৷
কি করবে ও নিজের রাগকে সামলাতেই পারে না৷
মেঘলা শোভনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
— ” যে প্রণয়ে আসক্ত আমি, একদিন সে প্রণয়ে আপনিও আসক্ত হবেন৷ তবে তা হবে ভয়ংকর প্রণয়৷ সে প্রণয়ে আসক্ত হয়ে আমাকে না পাওয়ার যন্ত্রনায় ধুকে ধুকে ভস্ম হবেন আপনি ডাক্তার সাহেব৷ ”

চলবে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here