#প্রাক্তন
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৯
এমন সময় মনে হলো মাথাটা প্রচন্ড রকম ঘুরছে। চোখগুলো ঘোলা হতে শুরু করল। শরীরটা নিস্তেজ অসাড় হয়ে যাচ্ছে। অরন্যের দিকে তাকালাম। অরন্যের মুখ অবয়বটা ঝাঁপসা হয়ে আছে। বুঝতে পারছিলাম সে হালকা হাসছে। তবে আমার কেন এমন লাগছে। কখন যে কী হয়ে গেল টের পেলাম না। যখন টের পেলাম তখন আমি অন্য কোথাও। আমার সারা শরীর উলঙ্গ অবস্থায় পড়ে আছে বিছানায়। শরীরে কোনো কাপড় নেই। গা, হাত, পা নাড়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। সাদা শরীরে লাল লাল দাগ প্রতীয়মান হলো। কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিলাম আমার সাথে কী হয়েছে। আশে পাশে কাপড় খুঁজতেই লক্ষ্য করলাম অরন্য বিছানার পাশেই শুয়ে আছে। সে ও অর্ধ উলঙ্গ হয়ে আছে। আন্দাজটা পুরোপুরি নিশ্চিত হলো। অরন্যের কুৎসিত মনোভাবের সাথে পরিচিত হলাম। এখান থেকে আমাকে বের হতে হবে। আমার সাথে যাই হোক সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। তবে অরন্য ভেবেছিল সে এভাবে আমাকে পেয়ে ছাড়বে। তবে সে এটা ভাবে নি এভাবে সে আমাকে আরও হারিয়ে ফেলবে। আমি জানি না আমার কী হয়েছিল কেন এভাবে মাথাটা হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠেছিল তখন। তবে আমাকে যে অজ্ঞান করা হয়েছিল সেটা আমি বুঝতে পারলাম এখন। অরন্য ঘুমুচ্ছে। যা করতে হবে খুব সাবধানে। আশেপাশে আমার মোবাইলটা খুঁজতে লাগলাম। টেবিলের ঠিক কর্ণারে মোবাইলটা পড়ে আছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম বিকেল ৪ টা বাজে। মা কল দিয়েছে অনেক বার। সাথে সোহানও কল দিয়েছে। অবশ্য মাকে অরন্য মেসেজ দিয়েছে আমি একটা কাজে আটকে আছি পরে কল দিব৷ এখন যেন কল না দেই। কিন্তু এখন আমি কাকে আগে কল দিব ভাবতে লাগলাম। মাকে কল দিলে মা বিষয়টা সহজে বুঝবে না। এ মুহূর্তে আমি ঠিক কোথায় আছি জানি না। তাই মাকে কল না দিয়ে সোহানকে মেসেজ দিয়ে বললাম
– তোর কী ওয়াট’স এপ আছে?
রিপ্লাইয়ে আসলো
-আছে, কেন?
– আমি তোকে ওয়াট’স এপে একটা লুকেশন দিচ্ছি সে ঠিকানায় তাড়াতাড়ি চলে আয়। আর কোনো প্রশ্ন করিস না।
– আসতেছি। তুই লুকেশন পাঠা।
আমি তাড়াতাড়ি ওয়াট’স এপে ঢুকে লুকেশনটা শেয়ার করলাম সোহানকে। তারপর কাপড়টা পরে বের হতে নিলেই অরন্য আমার হাতটা ধরে বলল
– কোথায় যাচ্ছ।
আমি অরন্যের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম
– বেহায়া নির্লজ্জ একটা মেয়ের সাথে এত জঘন্য কাজ করতে তোমার বিবেকে বাঁধে নি?
আমার কথায় অরন্যের কোনো ভ্রূক্ষেপ হলো না। সে কিছুটা কটু কন্ঠে বলল
– আমার স্ত্রী তুমি। তোমাকে পাবার যথেষ্ট অধিকার আমার আছে। আর তোমার এত অহংকার কেন বেড়েছে অপ্সরা? আমি যা করেছি তোমাকে ভালোবেসে। হ্যা আমি ভুল করেছিলাম। তার জন্য তো তিন বছর আমি প্রায়শ্চিত্ত কম করে নি। মানুষ ভুল করলে ক্ষমা করতে হয় তুমি তো তাও করছো না। আর তোমার পেটে আমার সন্তান ছিল সেটা আমি জানতাম না। জানলে অবশ্যই নিজের সন্তান কে শেষ করে দিতে বলতাম না। আমি এত পাপ করেছি বলেই শাস্তি পেয়েছি। প্লিজ অপ্সরা আমাকে মেনে নাও।
অরন্যের কথা শুনে আমার গা টা আরও জ্বলে গেল। আমি তীব্র গলায় উত্তর দিলাম
– যদি তোমার মধ্যে অনুশোচনা থাকত তাহলে আমার সাথে আবার নাটক করতে না। যদি তুমি আমাকে নূন্যতম সম্মান করতে তাহলে ঠিকেই আমাকে আমার মতো থাকতে দিয়ে মন জয় করে নিতে। আবির কে নিয়ে নাটক করে যে মানসিক যন্ত্রণা তুমি আমাকে দিয়েছো সেটার ক্ষমা আমি কী করে করি তোমায়?
– আমি যা করেছি তোমাকে পাবার জন্য।
– এ কথাটা বলে সব দোষ নির্দোষ হয়ে যাবে না। শুনো অরন্য তুমি যদি নিজে থেকে আমার কাছে এসে সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইতে আমাকে ভালো করে বুঝাতে আমাকে সময় দিতে আমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গা দিতে তাহলে আমি তোমাকে মেনে নিতাম। কিন্তু তুমি যা করেছো আর করতেছো তারপর তোমাকে আমি মেনে নিতে কোনোভাবেই পারব না। একটা ভুল শুধরে নিতে গিয়ে তুমি আরও হাজারটা ভুল করেছো। আমার মন নিয়ে আবার খেলেছো। আমাকে হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছো। আর আজকে যা করেছো তারপর তোমার কোনো ক্ষমা নেই। তোমার কী মনে হয় জোর করে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তুললেই একটা মেয়ে তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবে। সবকিছু এত সস্তা। আজকের পর থেকে তোমার প্রতি যতটুকু টান,মায়া, সম্মান ছিল সেটাও চলে গেছে। আমি শুধু তোমাকে ঘৃনা করি। মন থকে ঘৃনা করি। এর বাইরে কিছু না। একদম পথ আটকাবে না। আমাকে ছাড়ো। আমি তোমার এ নোংরা কাজের শাস্তি দিব। তোমার আর আবিরের নামে অভিযোগ করব। প্রতিটা পদক্ষেপে যে যন্ত্রণা তুমি আর আবির দিয়েছো সেটা আমি ফিরিয়ে দিব।
অরন্য আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল
– আমি আমার চাকুরির চিন্তা করি না। এ চাকুরি চলে গেলেও আমার কিছু যায় আসে না। মনে শান্তি যার নেই তার প্রফেশন নিয়ে কোনো চিন্তাও নেই। আমি শুধু তোমাকে চাই। আর এজন্য যা করা লাগে করব। প্লিজ অপ্সরা আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
– কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ঘৃনা করি। মন থেকে অনেক ঘৃনা করি। তোমার স্ত্রী নাফিসা এসেছে তাকে নিয়ে সুখী হও।
অরন্য আমার কথায় হালকা হাসলো। তারপর বলল
– গতকালকে নাফিসাকে তার সমস্ত টাকা পরিশোধ করে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছি। ইতোমধ্যে তার হাতে হয়তো সব পৌঁছে গেছে। সে এখন আমার স্ত্রী না। সে আমার শুধুই প্রাক্তন। আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ যদি কেউ হয় সেটা শুধু তুমি। কারণ একমাত্র তুমিই আমার স্ত্রী। তোমার সাথে আমার ডিভোর্স হয়নি।
– হয়নি, হতে কতক্ষণ? আমি সব কাগজপত্র তৈরী করে রেখেছি। এ সপ্তাহের মধ্যে তুমিও ডিভোর্সের কাগজ পেয়ে যাবে। আমি তোমাকে আমার জীবনে চাই না। তোমার মতো নোংরা,পাগল,সাইকো মানুষ আমার জীবনে চাই না।৷ তোমার জীবনে কালো অধ্যায়ের সূত্র হয়েছে। একদিন তুমি আমাকে পাগল না হওয়া সত্ত্বেও পাগল সাইকো উপাধি দিয়েছিল। আজ এতবছর পর তুমি নিজেই সে তালিকায় চলে গিয়েছ। তোমারটা ছিল সাজানো নাটক তবে এখনের এটা পুরো বাস্তব। তুমি দয়াকরে আমার পিছু ছাড়ো। আমি তোমাকে আর চাই না। আর সবচেয়ে বড় কথা এ সম্পর্কে সম্মান জিনিসটা নষ্ট হয়ে গেছে। চাইলেও এ সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না।
বলেই যেতে নিলাম। অরন্য আমাকে আটকে দিল। আমি বের হতে নিলে সে আরও জোরে ধরল। আমি অরন্যকে একটা ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে।। দরজাটা বাহির থেকে লাগয়ি দিয়ে বের হলাম। সোহানকে কল দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম
– তুই কোথায়?
– আমি প্রায় চলে এসেছি। আর ১০ মিনিট লাগবে তুই কোথায়?
আমি আশপাশ তাকিয়ে ওকে বললাম
– আমি রিকশা নিয়ে মোড়ের মাথায় এগুচ্ছি তুই তাড়াতাড়ি আয়।
বলেই কলটা কাটলাম। রিকশা নিয়ে মোড়ের মাথায় এগুতে লাগলাম। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।।তবে চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। শুধু হাহাকার হচ্ছে। মোড়ের মাথায় যেতেই সোহান চলে আসলো। আমি সোহানের গাড়িতে উঠেই বললাম
– তাড়াতাড়ি থানায় চল। কাজ আছে।
– কী কাজ। আর তোর এ অবস্থা কেন? সারা শরীরে কিসের দাগ এগুলা? আমাকে একটু বল। ব্যপার টা কী?
– ধর্ষিত হয়েছি।
আমার উত্তর শুনে সোহান চুপ। মিনেট পাঁচেক সে চুপ রইল। নিজের গতিতে গাড়ি চালাতে লাগল। তার হয়তো বোধগম্য হচ্ছে না আমি কী বলছি। গাড়িটা চালিয়ে থানার ঠিক কাছে এনে বলল
– আমাকে কী বলা যায় কী হয়েছে?
আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললাম
– আগে মামলা করে আসি তারপর সব বলছি।
সোহান গাড়িটা থানার কাছে নিয়ে বলল
– যা এবার যা করার করে আয়।
আমি গাড়ি থেকে নেমে থানায় গিয়ে অরন্যের নামে নারী নির্যাতনের মামলা করলাম।।সাথে আবিরের নামেও অভিযোগ দিলাম। তারপর থানা থেকে বের হয়ে আবির আর অরন্যের অফিসে অভিযোগ দিলাম। এর মধ্যে অবশ্য মাকে কল দিয়ে বললাম আমি ঠিক আছি। যদিও মাকে সবটা বলে নি। তবে বাসায় গিয়ে বলব। পুরোটা সময় সোহান সাথে ছিল। মাথাটা অনেক ঘুরছে। সারাদিনের না খাওয়া। সোহান আমার দিকে তাকিয়ে একটা কেকের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল
– রাত হয়ে যাচ্ছে।।তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুই কিছু খাস নি। খেয়ে নে আগে।
আমি কেকটা সোহানের হাত থেকে নিয়ে খেয়ে নিলাম। এত সহজ ভাবে আমি সব মানতে শিখে গেছি এটা ভেবে যেন নিজেকে আজ বেশ অচেনা মনে হচ্ছে। কেকটা খাওয়ার পর শরীরটায় একটু বল আসলো। আমি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সোহান আমার সামনে এসে বলল
– এবার বল কী হয়েছে। এতক্ষণ তুই যা বলেছিস সব করেছি। কোনো প্রশ্ন করেনি। এবার সব বল কী হয়েছে। কে তোর এ অবস্থা করেছে। অরন্যের বিষয়টা ও খুলে বল।
আমি হালকা গলায় সোহানকে সবটা বললাম। সোহান সমস্ত ঘটনা শোনার পর চুপ হয়ে গেল। তার চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে। রাগে গিজগিজ করে বলল
– আমি এখনেই অরন্যকে খুন করে আসব। তোর সাথে এমন করেছে। আমাকে আগে কেন বলিস নি। বলেই গাড়িতে হাত মুষ্টি করে জোরে ঘুষি দিল।
আমি সোহানকে হালকা ধমক দিয়ে বললাম
– তুই শান্ত হ। এ লড়াই আমার। আমাকে আমার লড়াই করতে দে।।আমি চাই না আমার এ লড়াইয়ে অন্য কেউ আসুক। আমার এ লড়াইটা শুধু আমি করতে চাই। বন্ধু হিসেবে যতটুকু পাশে থাকা দরকার ততটুকু থাকিস। এর বাইরে কিছুই লাগবে না। আর কালকে মেডিকেলে যাব, তারা বডি টেস্ট করবে। তুই কী আমাকে নিয়ে আসতে পারবি বাসা থেকে। একা বের হতে যথেষ্ট ভয় হচ্ছে। আর মাকে নিয়ে বের হওয়াও ঝুঁকি পূর্ণ। বাসার অন্য কেউ ব্যপারটা জানেও না। অন্যদের বললেও তারা মানসম্মানের অজুহাত দিয়ে আর সামনে এগুতে দিবে না। আমি চাই না এ লড়াইটা থেমে যাক এর শেষ আমি দেখে ছাড়ব।
– তুই যা বলিস তাই করব। আগের অপ্সরা আর এ অপ্সরার মধ্যে কত তফাত। আগে তুই একটুতে কান্না করে দিতি, স্থির থাকতে পারতি না। অল্পতেই তোর রাগ উঠে যেত। আর আজকে এত কিছু হওয়ার পর তুই কত স্থির কত শান্ত। মানুষ যে রঙ বদলায় পাল্টায় সেটার প্রমাণ তুই।
আমি দীর্ঘ দীর্ঘ কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম
– মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়। আর বেঁচে থাকলে রঙ বদলায় করণে অকারণে রঙ বদলায়। কথাটা যেন কোন ক্লাসে পড়েছিলাম। ধরে নে ঐরকম কিছুই। আমাকে বাসায় পৌঁছে দে এবার। কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছি কল দিয়ে। আর কালকে সকালে চলে আসিস।
-হুম আসবো। গাড়তে উঠ।
আমি গাড়িতে উঠলাম। গাড়িটা চলছে। আমি খুব শান্ত হয়ে বসে আছি। শরীরে, মনে হাজারটা ক্ষত নিয়েও আমি শান্ত। গাড়িটা বাসার সামনে আসলো। আমি কাপড় দিয়ে গা ঢেকে সোহানের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসলাম। রুমে আসতেই মা আমার রুমে আসলো। আমি শরীরের কাপড়া সরাতেই মা আমাকে ধরে বলল
– কিসের দাগ এগুলা। কী করেছিস তুই।
মাকে জড়িয়ে ধরলাম। অনেক কাঁদতে ইচ্ছা করছে তবে পারছি না। তবে ভঙ্গা গলায় মাকে সব বললাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– যা হয়েছে বাদ দে। এসব থানা পুলিশ করলে লোক জানাজানি হবে আর মান সম্মান যাবে। মা রে জীবনে অনেক কিছু চেপে যেতে হয়। এসব জানার পর তোর আর বিয়ে হবে না। কোনো ভালো ঘরের ছেলে তোকে বিয়ে করবে না। আর আমারাও মুখ দেখাতে পারব না।
মায়ের কথা শুনে আমি রাগ হলাম না। কারণ মা মায়ের দিক ভেবে বলেছে। কারণ এ সমাজে ধর্ষকের ছবি ভইরাল হওয়ার আগে ধর্ষিতার ছবি ভাইরাল হয়। এ সমাজে মান সম্মানের ভয়ে এমন হাজারও অপরাধ মাটি চাপা থাকে। যারা অপরাধ করে তারা বুক ফুলিয়ে হাঁটে আর যারা অপরাধের শিকার হয় তারা মাথা নীচু করে চলে। এটাই আজকের সমাজ। চাইলে সমাজ পাল্টে দেওয়া গেলেও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো সম্ভব না। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
– তুমি যেমন বলবে তেমন হবে। আপাতত স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে বাইরে যেতে হবে। তাই সোহান আমার পাশে থাকবে। সোহানকে তো চিনই। আর আমি এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করব না।
মা কিছু না বলেই চলে গেল। তবে আমি হাল ছাড়ব না। যত বাঁধাই আসুক এর শেষ আমি দেখে ছাড়ব। দোষ আমার না যে আমি শাস্তি পাব,কষ্ট ভোগ করব। খারাপ লাগছে মায়ের কথা শুনে। আর এটা ভেবেও খারাপ লাগছে এ সমাজে মেয়েরা কত অসহায়। এর মধ্যেই গোসল করতে গেলাম। লাল দাগগুলো নীল হয়ে আছে। কষ্ট তো অনেক হচ্ছে তবে চাপিয়ে রাখছি। গোসল থেকে বের হতেই মা খাবার নিয়ে আসলো। আরও অনেক বুঝাল এসব নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না করি। কারণ মানুষ অনেক কিছু বলবে। আমি শুধু খাবার গিলছিলাম আর চুপ হয়ে শুনছিলাম। এখন বুঝতেছি অনেকে আত্মহত্যা কেন করে। কারণ তারা সব দিক থেকে সাপোর্ট না পেয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়। আমারও ইচ্ছা হচ্ছে তবে আমি দমে যাওয়ার মেয়ে না। আমি কেন আত্মহত্যা করব। আমি তো দোষ করে নি। মা চলে গেল।
আমি গা টা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। কষ্টের আগুনে পুড়ছি তবে সেটা প্রকাশ করতে পারছি না। চোখটা বন্ধ করে শুয়ে আছি। কখন যে চোখটা লেগে আসলো বুঝে নি। চোখটা হালকা লেগে আসতেই মনে হলো কেউ একজন আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকাতেই…
#প্রাক্তন
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২০
আমি তাকাতেই লক্ষ্য করলাম বাবা দাঁড়িয়ে আছে। আমি আধ শুয়া থেকে উঠে বাবাকে দেখে লাইট জ্বালিয়ে বললাম
– বাবা তুমি। কী হয়েছে? কিছু বলবে?
বাবার মুখ গম্ভীর। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো ব্যপারে রেগে আছে। বাবা আমার কথার জবাব যখন দিচ্ছিল না তখন আবারও জিজ্ঞেস করলাম
– বাবা কিছু বলবে?
বাবা কন্ঠটা গম্ভীর করে জবাব দিল
– তোমার মায়ের মুখে যা শুনেছি সেটা কী ঠিক?
আমার হাত, পা কাঁপতে লাগল। বাবাকে অনেক ভয় পাই আমি। কী জবাব দিব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শরীরটা বেশ ঝিমুচ্ছে। স্তব্ধ অসাড় লাগছে। বাবা কন্ঠটাকে জোরালো করে পুনরায় বলল
– কী হলো জবাব নেই কেন? এত চুপ হয়েই বা আছো কেন? প্রশ্নের উত্তরটা দাও।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম
– মা তোমাকে কী বলেছে?
– এসব জিজ্ঞেস করতে তোমার লজ্জা হচ্ছে না? এগুলো তো মুখে আনতেও আমার বাঁধতেছে। তোমার এত অধঃপতন হয়েছে। স্বাধীনতা দিয়ে তোমাকে আমরা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। ঘটনা সত্যি কী না জানতে চাই।
আমি মাথা নীচু করে বললাম
– হ্যাঁ বাবা সত্যি।
বাবার মুখটা রাগে লাল হয়ে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে কন্ঠটা তীব্র করে বলল
– থানায় নাকি মামলা করে এসেছো?
– জ্বি বাবা।
– কালকে তোমার বড় ভাইকে সাথে নিয়ে গিয়ে মামলাটা তুলে আসবে। এসব নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করে সবার হাসির পাত্র হতে পারব না। তোমাকে নিয়ে এমনিতেই অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তোমার জীবনে তুমি কষ্ট পেয়েছো সেটা আমরা বুঝি। সে জন্য যথেষ্ট স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছিলাম। তুমি সেটার মূল্য দিতে পারো নি। তোমার কী মনে হয় মামলা যে করেছো সেটা কী চাপা থাকবে? কেউ জানবে না? সবাই জানবে। সবাই বলবে মেয়ের বয়স হয়েছে ঠিক সময় বিয়ে দেয়নি তাই বেপরোয়া চলাফেরা করেছে বলেই আজকে মেয়েটার এ হাল। তুমি বাইরে বের হলে কেউ অরন্যকে খারাপ বলবে না। বরং তোমাকে দেখে মুখ টিপে টিপে হাসবে আর হাজারটা কথা বলবে। চায়ের দোকানের গল্পের মূখ্যম চরিত্র হয়ে উঠবে তুমি। আমি এমনিতেই অসুস্থ আমি এসব নিতে পারব না। আমি চাচ্ছি না বিষয়টা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি হোক। বিষয়টা এখানেই শেষ করো। আমরা পাত্র দেখতেছি ১৫ দিনের মধ্যেই আমাদের পছন্দের পাত্রের সাথেই তোমার বিয়ে হবে৷ তুমি চাকুরী করো বলে আমাদের মাথা কিনে নাও নি। চাকুরীর থেকে মানসম্মান আগে। ভুলে যেও না তুমি সমাজে একা চলো না। তোমার সাথে আমরাও জড়িত। তোমাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আমাদের তুলেও গালি দিবে।
আমি বাবার কথাগুলো শুধু মাথা নীচু করে শুনছিলাম। হালকা সুরে বাবাকে বললাম
– আমার কী দোষ বাবা। অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরবে আর আমি গুটি মেরে বসে থাকব? বাবা মানুষ তো না জেনেই হাজার কথা বলবে তাই বলে তাদের ছেড়ে দিব। আমি তো জানি আমার সাথে যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে আমি কী তাদের শাস্তি দিব না? আজকে আমার সাথে যা হয়েছে কাল তো অন্য মেয়ের সাথে হবে। এভাবে সুযোগ দিতে থাকলে তো সবাই পেয়ে বসবে। তুমি কেন বাবা তোমার মেয়ের আর্তনাদ শুনতে পারছো না। আমাকে দয়াকরে সাপোর্ট দাও। তোমাদের সাপোর্ট আমার দরকার। আজকে ওদের ছেড়ে দিলে ওরা যে আমার ক্ষতি করবে না তার কী গ্যারান্টি আছে বলো তো। আমার বিয়ের পরও তো তারা আমার ক্ষতি করতে পারে। তাহলে কেন ওদের ছাড় দিব আমি। আমি তো দোষ করেনি।
বাবা আমার কথায় আরও চটে গেলেন
– তুমি একটু বেশিই কথা বলছো। দু কলম শিখেছো বলে বিদ্বান হয়ে যাও নি। বিয়ের পর কিছু করলে আমরা দেখে নিব। আপাতত যা করতে বলছি তাই করো। বিষয়টা চেপে যাও। সমাজে মুখ দেখানোর পরিস্থিতিতে রেখো। আর কথার নড়চড় যেন নাহয়। এ বাসায় থাকলে এসব করতে পারবে না। আর যদি কিছু করো তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যাও। তোমার মুখ ও যেন কোনোদিন দেখতে না হয়। আমি ধরে নিব আমাদের মেয়ে মারা গেছে। তোমার জন্য মানুষের কটু কথা আর শুনতে পারব না। তোমার বড় ভাইকে নিয়ে কেউ কোনো কথা আজও বলতে পারে নি অথচ তোমাকে নিয়ে আমি বহুবার ছোট হয়েছি। আর হতে পারব না। এমনিতেই শরীর ও এসব নিতে পারছে না।
– বাবা আমি জানি আমার জন্য তোমাদের অনেক সমস্যা হয়েছে তবে এখানে আমার দোষটা কতটুকু ছিল। আমি তো দোষ না করেও একটার পর একটা কষ্ট পাচ্ছি, যন্ত্রণা পাচ্ছি। আমার হাহাকার টা কেন বুঝতেছ না। আমার সাথে হয়েছে আমি বুঝতেছি আমার কেমন লাগছে৷ আর তুমি কী না বলছো সবাইকে ছেড়ে দিতে৷ বাবা তুমি যদি বলো বাসা ছেড়ে যেতে তবে তাই করব। তবুও আমি অরন্যকে ছাড়ব না। ওদের ছাড়লে আমি মরেও শান্তি পাব না।
কথা বলতেই বাবা কষিয়ে আমার গালে চড় দিল। আমি চড়টা খেয়ে অনুভূতি শূন্য হয়ে গেলাম। বাবা চড়টা দিয়ে চেঁচিয়ে বলল
– তুমি দিনকে দিন বেয়াদব বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছ।
বাবার চেঁচানো শুনে পাশের রুম থেকে বড় ভাই এসে কিছু না বুঝেই আমাকে আরও কয়েকটা চড় কষিয়ে দিল। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। বাবা, ভাইয়ের হাতে চড়গুলো দীর্ঘ চার বছর পর খাচ্ছি। এর আগে এরকম মেরেছিল অরন্যের জন্য, যাতে অরন্যকে ভুলে যাই অরন্যের আশা বাদ দিই। আর আজকে মার খাচ্ছি যাতে অরন্যকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিই। কারণ তথাকথিত সমাজের লোক নানান কথা বলবে। বড় ভাই চড় গুলো দিয়েই বলে উঠল
– তোর জন্য বাবা এর আগে স্ট্রোক করেছে। আর তুই একটার পর একটা আকাম করে যাচ্ছিস। যা ইচ্ছা করে বেড়াচ্ছিস। সমাজে মুখ তো দেখাতে হবে। আর কত ছোট করবি। আর কত এভাবে সবার কথা শুনাবি। চাকুরী করছিস বলে কী মাথা কিনে নিয়েছিস। তোর এ বাসায় থাকা বন্ধ। সকালে দু চোখ যেদিকে যায় চলে যা। তোকে বোন বলে পরিচয় দিতেও আমার লজ্জা হয়।
বলেই বড় ভাই বাবাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি নীরব হয়ে খাটের কোণে বসেই আছি। এর মধ্যে ভাবী কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে বলল
– তোমাকে আমি কত ভালো মনে করতাম। কত আদর করতাম। আর তুমিই কী না যা তা করে বেড়াচ্ছ। মেয়েদের এত জিদ ভালো না। আজকে যা হয়েছে তোমার জেদের জন্য। তোমার বয়সী মেয়েরা একটা সম্পর্ক থেকে বের হয়ে দিব্যি সংসার করছে। আর তুমি অতীত আঁকড়ে ধরে পড়াশোনা করেছো। একের পর এক বিয়ে ভেঙ্গেছো। তার ফলে অবশ্য বিসিএস ক্যাডার হয়েছো। তবে এতে কী তুমি পূর্ণাঙ্গ হতে পেরেছো। একটা মেয়ের পূর্ণতা তখনই আসে যখন মেয়েটার সংসার হয়। তোমার জেদ তোমাকে আজকে এত নীচে নামায়ছে। ছেলেদের ভোগের পন্য বানিয়ে ছাড়ছে।
ভাবীর শেষ কথাটা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম
– ভবী আজেবাজে কথা বলবে না একদম। এসবের পেছনে আমার হাত ছিল না। আর এসবের জন্য আমি দায়ী না। তাহলে এ দায় কেন আমাকে দিচ্ছেন। যারা করেছে তাদের দেন।
– তোমার মতো মেয়ের মুখে এসব মানায় না। অতি বিদ্যা যে মেয়েদের নষ্ট করে তোমাকে দেখে বুঝতেছি।
– আপনি একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এসব কী বলছেন ভবী। আপনি না ভলো ভর্সিটি থেকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন। তবুও এসব বলতে কীভাবে পারছেন। অশিক্ষিত হলে বুঝতাম এসব বলতে পারবেন। তবে আপনার মুখে এসব কথা মানতে পারছি না।
– শুনো শিক্ষিত হই আর যাই হই সমাজ নিয়ে চলতে হবে। আল্লাহ না করুক আমার একটা মেয়ে হলে তাকে শুনতে হবে তার ফুফু ধর্ষিতা। তার ফুফুকে নিয়ে মানুষ মাতামাতি করেছিল। আমার মেয়ের ভবিষ্যত টা তখন কতটা অন্ধকারে চলে যাবে সেটা কী ভেবে দেখেছো? আমি বর্তমান নিয়ে চিন্তা করি না। আমি অন্তস্বত্ত্বা। তিন মাস চলতেছে। এখনও কাউকে বলে নি। তোমার জন্য আমার পেটের বাচ্চাও কথা থেকে রেহাই পাবে না। আমি মা হয়ে তো এটা করতে পারব না। অপ্সরা যা হয়েছে তো হয়েছেই আর এমন করে নিজেকে ছোট করো না সাথে আমাদেরকেও না। বাবা আর তোমার ভাই যেখানে বিয়ে ঠিক করে সেখানে বিয়ে করে সুখে থাকো।
– ভাবী কথাগুলো বলা অনেক সহজ। আজকে অরন্য আমার এত ক্ষতি করেছে। কাল তো বিয়ের পর আরও করবে। এমনও হতে পারে আবার বিয়ে ভাঙবে। সে তো বিয়ের দিন এসেও ঝামেলা করতে পারে। ঘুরে ফিরে তো সেই পুলিশ আদালতের কাছে যেতে হবে। একই কথা। তাহলে কেন বারবার আমাকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এর চেয়ে এটা ভালো হয় না, আমি সব শিকড় থেকে শেষ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। সমাজ কথা বলবে সেটা আমিও জানি। তবে সেটা সাময়িকের জন্য। পরবর্তী আমার ভালো হলে সে সমাজেই আমাকে নিয়ে প্রশংসা করবে। ভাবী আমি জানি আপনাদের সমস্যা হচ্ছে। চিন্তা করবেন না আমি বাসা ছেড়ে কালকেই চলে যাব। তবুও আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকব। আমাকে কেউ দমাতে বা নড়াতে পারবে না। আফসোস একটায় আমার পরিবার আমার সাথে নেই। আজ বুঝতে পারছি মানুষ কেন আত্মহত্যা করে। কারণ তার উপায় থাকে না।
ভাবী আমার কথা শুনে আর কোনো জবাব না দিয়েই চলে গেল। আমি বসেই রইলাম হাঁটু মুড়ি দিয়ে। কতটা অসহায় লাগছে আমি জানি। কতটা কষ্ট পেলে মনটা এমন অশান্ত হয় এখন বুঝতে পারতেছি। এ কষ্ট সহ্য করতেও পারতেছি না আবার সেখান থেকে বের হয়ে আসতেও পারতেছি না। কী করব আমি পরিবার দেখব নাকি নিজের শান্তি। অশান্ত লাগছে অনেক। মাথাটা হাঁটুর মাঝখানে দিয়ে এসবেই ভাবছিলাম। ফোনটা ভাইব্রেট শুরু করল। সোহান কল দিয়েছে। কলটা ধরে বললাম
– হ্যাঁ বল কী বলবি?
– খাওয়া দাওয়া করেছিস?
– হুম।
– কী করতেছিস মন খারাপ?
– নাহ।
– তাহলে এত চুপ কেন?
– তাহলে কী বকবক করা উচিত?
– তা না, তবে মনে হচ্ছে তুই কিছু নিয়ে ভবছিস।
– একদিকে পরিবার একদিকে আমি৷ জানি না কী করব।
– শুন আমি জানি তোর মধ্যে কী চলছে। তবে পরিবার এখন যতই বলুক তোর পাশে নাই। বিপদে পড়লে ঠিকেই তোর পাশে পাবি। পরিবার হয়তো সাময়িক চিন্তা করছে। তোর ভবিষ্যত ভাবছে। তোর মতো গভীর করে ভাবতে পারছে না। তবে মিলিয়ে নিস আজকে বিপদে পড়লে আমাকে নাও পেতে পারিস তবে তোর পরিবার ঠিকেই তোকে আগলে রাখবে। পরিবার নিয়ে চিন্তা করিস না। ওরা যা বলে তুই শুনে যা। আর এদিকে তুই তোর মতো এগিয়ে যা। অপ্সরা জীবনের জয় তো হুট করে আসে না। ছিনিয়ে আনতে হয়। নিজেকে সময় দে৷ অবশ্যই ভালো কিছু পারবি৷ বিয়ে আল্লাহর হাতে যেখানে হওয়ার হবে। তুই নিজেকে সামলা। বাবা,মা, যা বলুক বলতে দে। ওরা তোর ভালো চায়। তবে পরিবার মাঝে মাঝে ভালো চাইতে গিয়েও খারাপ করে ফেলে। তাই তুই একটু সাবধানে পা ফেল৷ আজকে পরিবার কথা বলছে কালকে বাইরের লোক বলবে। হজম করে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন কর। আর তুই কলেজে চাকুরি করিস। তোর স্টুডেন্টরা যখন এসব জানবে তখন তারাও দেখবি আড়ালে তোকে নিয়ে কথা বলছে৷ এসবকিছু তোকে মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে সামনের পথ গুলো আরও কঠিন। একবার এ পথ পার হয়ে আসতে পারলে তখন সবাই তোকেই ইন্সপিরেশন হিসেবে নিবে। তুই নিজেকে সামলা। সময় দে। আবির আর অরন্যকে তার যোগ্য শাস্তি দে। আমি জানি তুই পারবি।
সোহানের প্রতিটা কথায় বাস্তববাদী। সত্যিই তো এত অপ্লতে ভেঙ্গে গেলে তো হবে না৷ আমাকে অবশ্যই আরও শক্ত হতে হবে। আমি সোহানকে বললাম
– সকালে চলে আসিস। মেডিকেলে যাব।
– হুম,কয়টায় আসব?
– এগারটায় চলে আসিস।
– আচ্ছা ঘুমা।
ফোনটা রেখে দিলাম। তবে মনে হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনোভাবেই ঘুমাতে পারছিলাম না৷ চোখ বন্ধ করলেই যেন এগুলো চোখে ভাসছিল। মনটা কেমন জানি অস্থির লাগছিল। একটু শান্তি যে কত বড় নেয়ামত সেটা অশান্তিতে না থাকলে টের পাওয়া যায় না। টাকা আছে পয়সা আছে সমাজে পরিচিতি আছে তবে শান্তি নাই। এ থেকে কষ্ট আর কী হতে পারে। ভাত সামনে নিয়ে গিলতে না পারার কষ্ট কী হতে পারে আমি জানি। তুলতুলে বিছানা পেয়েও ঘুমাতে পারছি না। অথচ ফুটপাতে কত মানুষ শক্ত ইটে মাথা দিয়ে শান্তিতে ঘুমুচ্ছে। সারা রাত তেমন ঘুম হলো না। মাথাটা তো ঝিমঝিম করছিল। সকালে উঠে জানতে পারি আবির আর অরন্যকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে আর আমার বিষয়টা তদন্ত করছে৷ সকালে এমন একটা সংবাদ আমার মনটাকে একটু শীতল করল। নিজের মধ্যে শান্তি পাচ্ছিলাম। তবে বাসার কেউ স্বাভাবিক না। সবাই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। বাবা মা কেউ কথা বলছে না। তবুও নিজেকে স্থির রাখলাম। এগারটায় সোহান আসলো। সোহান কে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা দিলাম। সোহান গাড়ি চালাতে চালাতে বলে উঠল
– আজকে মেডিকেলের কাজটা শেষ করে ডিভোর্সের কাজটাও শেষ করবি।
– কিন্তু সে টা তো বলেছিল সময় লাগবে দুই একদিন।
– আমি সেটা আজকে ব্যবস্থা করেছি। বন্ধু হয়ে এটুকু তো করতেই পারি৷ আর আবিরকে পুলিশ ধরেছে তবে অরন্য লাপাত্তা। এর কী হুট হাট লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কাজ করে নাকি
– কেন পুলিশ তাকে ঐ বাসায় পায়নি?
– নাহ৷ কোথায় জানি লুকিয়েছে।
অরন্যের এ লুকানোর বিষয়টা বরাবরেই একটা বিপদ ডেকে আনে। মনে হালকা ভয় লাগছিল তবুও সেটা প্রকাশ করলাম না।
– ওহ আচ্ছা বাদ দে। আজকে ডিভোর্সটা দিতে পারলে শান্তি।
তারপর মেডিকেলে গিয়ে সব কাজ শেষ করলাম। অরন্যকে ডিভোর্স দিলাম। ডিভোর্সের কাগজে যখন স্বাক্ষর করছিলাম মনে হচ্ছিল বন্দি একটা জীবন থেকে মুক্তি পাচ্ছি। ডিভোর্স দেওয়ার পর মনে হলো বুক থেকে শক্ত পাথর নেমে গেল। শান্তি আর প্রশান্তময় লাগছিল। সোহান ও আমার মুখের সজীবতা দেখে বুঝতে পারছিল আমি প্রশান্তি পাচ্ছি। সে হালকা হেসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
– আস্তে আস্তে তোর সব কষ্টগুলো এভাবে মুছে যাবে। তুই মুক্ত হয়ে যাবি সকল শিকলে বাঁধা সম্পর্ক থেকে। জীবনটা সুন্দর হবে রঙিন হবে।
আমি হালকা গলায় বললাম
– রঙিন হওয়ার স্বপ্ন দেখি না তবে জীবনটা সুন্দর ভাবে এগিয়ে চলুক এটাই চাই। চল থানায় যেতে হবে।
– হুম চল।
তারপর থানায় গেলাম। থানায় যাওয়ার পর শুরু হলো নতুন নাটক।
(কপি করা নিষেধ)
(কপি করা নিষেধ)