মাতাল অবস্থায় একটি মেয়েকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো সামরান। সামরানের বাহুডোরে থাকা মেয়েটি ছটফট করছে ছোটার জন্য কিন্তু একজন পুরুষের শক্তির কাছে হার মানলো মেয়েটি। ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমে সামরান নিজের শক্ত হাত দিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে রেখেছে। সামরান নিজের মাথা বালিশে ঠেকিয়ে রেখেছে।মেয়েটি সামরানের দিকে ফিরে মাথা উঁচু করে সামরানের মুখের দিকে তাকালো।অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মেয়েটি পাশ ফিরে সামরান কে জড়িয়ে ধরতেই সামরান মেয়েটির কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো।তারপর মেয়েটির দু হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
–হেইই তুমি আমার বউ না।জড়িয়ে ধরার সাহস করবেনা।যে কাজে এসেছো সেটা করো আর যাও এখান থেকে।
মেয়েটি মুখে হালকা হাসিত রেখে টেনে বললো,
–যদি জড়িয়ে না ধরি তৃপ্তি পাবেন না সাহেব।
সামরান এবার রেগে গেলো।মেয়েটির দুহাত এক হাতে ধরে অপর হাতে মেয়েটির গাল চেপে ধরে বললো,
–আমায় তুমি তৃপ্ত করতেও পারবে না। আমার তৃপ্তি অন্যকিছুতে। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড!!
মেয়েটি হাসলো। মেয়েটির হাসি যেনো সামরানের রাগ আরো বাড়িয়ে দিলো।রেগে গিয়ে মেয়েটির গলায় মুখ ডোবালো সামরান। আবারো ডুব দিলো এক অজানা নারীতে। সামরান নিজের সমস্ত রাগ আর সমস্ত উত্তেজনা মেয়েটির উপর ঝেড়ে দিলো।মেয়েটির গায়ে বসিয়ে দিলো অজস্র দাগ আর আঁচড়। একটি ক্লাবে মেয়েটি সামরানের দিকে তাকিয়ে শুধু একবার হেসেছিলো।তাতেই সামরানের মেজাজ বিগড়ে গেলো।সামরান ক্লাবের রেস্ট রুমে আসতেই মেয়েটি ওখানে এসে সামরান কে নিজের পছন্দের কথা বলে। এক দেখায় সামরান কে ভালো লেগেছে মেয়েটির। নিজ হতে এসে প্রস্তাব দেওয়ার ফল সামরান হাতে নাতে দিয়ে দিলো। সামরান এক রাতের কথা বলতেই মেয়েটি রাজি হয়ে গেলো।এই মুহুর্তে সে শুধু সামরান কে চায়।এক বার হলেও সামরানের বাহুডোরে নিজেকে রাখতে চায়।যার কারণে মেয়েটি সায় দিলো।মেয়েটি নিজের ইচ্ছা, চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও সামরানের যেনো নেশা থেকেই গেলো।সামরান সত্যিই বলেছিলো সামরান কে তৃপ্ত কেউ করতে পারবেনা।না কখনো পেরেছে। সামরানের তৃপ্তি অন্য কিছুতে।
লাগেজ ভর্তি টাকা সামাদ মালিকের সামনে রাখতেই সামাদ মালিক গগন কাপানো হাসি দিলেন। ড্রিংক এর গ্লাস তুলে চুমুক দিয়ে সামনে বসে থাকা লোকটিকে বললেন,
–টাকার কাছে আমি হার মানলেও সামরান মালিক হার মানবে না।আমার ছেলে তো চিনি আমি। সে কিছুতেই রাজি হবেনা।
–করণীয় কি?কিছুতো আছে যা সামরান কে রাজি করাতে পারবে?উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করলেন সামনের ব্যাক্তি।
সামাদ মালিক বাকা হাসলেন।
–সামরান সুন্দরের পূজারী। এর বাহিরে আর কিছুই জানিনা। তবে হ্যা টাকার ব্যাপার তার সামনে মুখেও নেবে না।কারণ তুমি মরলে কান্নার জন্য কেউ থাকবেনা। বলেই উঠে গেলেন সামাদ মালিক।লোকটি দাঁড়িয়ে পিছু ডাকলো,
–ওই মেয়েকে এনে দিতেই হবে।ওই মেয়ের দাম বাজারে কোটির উপরে হবে।আপনিই দেখুন আপনার ছেলে নিজেও সুন্দরের পূজারী। সেখানে বাকিরা তো বলার বাহিরে। মেয়েটি ভয়ানক সুন্দরী। এই মেয়েটির ছবিতেই সবাই এত হাসফাস করছে ভাবুন সামনে পেলে কি হবে।কোটি টাকার বর্ষণ হবে।
সামাদ মালিক পিছু ফিরে তাকালেন,
–সামরান কে রাজি করাও। এসব ব্যাপারে তাকে আগে দেখিনি।বরাবরের মতোই সে এসবের বিরুদ্ধে।তাই আমি চাই না তোমার একটা কাজের জন্য আমার রেপুটেশন এ আঘাত আসুক।সো বি কেয়ারফুল। কথা শেষ করেই সামাদ মালিক চলে গেলেন।লোকটি সোফায় বসে পরলো।
সামরানের সামনে যাওয়া মানেই সিংহের সামনে বসে কথা বলা।আর এই প্রস্তাব রাখা মানেই দুঃসাহসিকতার প্রমাণ।কিভাবে সামরান কে বলবে।লোকটি মাথায় গভীর চিন্তা ভর করলো।
ঘুম ভাঙতেই সামরান উঠে বসে। পাশে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই মেয়েটি সামরানের দিকে তাকিয়ে হাসলো।সামরানের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।সামরান শার্ট পরতে পরতে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।নিজের গলার দিকে তাকাতেই সামরান থমকে গেলো। গলায় বাইট এর দাগ।লাল হয়ে আছে।দাতেঁদাতঁ চেপে দাগ দমানোর চেষ্টা করলো।মেয়েটি এসে সামরান কে পেছনে জড়িয়ে ধরে।সামনার পেছনে ফিরে মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে ডিভানে ফেলে দেয়। ডিভানের সাথে মেয়েটিকে চেপে ধরে। চোখ গুলো ক্রমশ লাল হয়ে আসছে।মেয়েটি হালকা হেসে বললো,
–আবার?
সামরান এর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।দাতেঁদাতঁ চেপে বলে,
–আমার গায়ে দাগ বসলো কি করে?
–তোমার ছোয়া পেয়ে নিজেকে আটকাতে পারিনি।তারই চিহ্ন।লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে মেয়েটি।
সামরান আরো জোরে মেয়েটিকে চেপে ধরে। মেয়েটি ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।গম্ভীর কন্ঠে সামরান বলল,
–আমার গায়ে দাগ বসানোর সাহস তোমাকে কে দিলো?হু দ্যা হেল আর ইউ?
মেয়েটি সামরান কে সরানোর চেষ্টা করে।
–সামরান আমার লাগছে।ছাড়ো আমাকে।
–লাগুককক!!আমার গায়ে দাগ বসানোর আগে মনে ছিলো না।
–ইটস নরমাল সামরান। এই ছোট বিষয়ে কেন এত রিয়েক্ট করছো?
আর কোনো কথা বলেনা সামরান মেয়েটিকে ছুড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।সোফার হাতল থেকে কোট তুলে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।মেয়েটি সামরানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। উঠে আয়নার সামনে দাড়ালো মেয়েটি। নিজের গায়ে থাকা দাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে হাসলো,
–তুমি যতই আমার দেওয়া বাইটে রাগ করো আমি রাগ করিনি সামরান।আমি কাল রাতে এইটুকু বুঝেছি যে তোমাকে আজীবন নিজের করে রাখতে পারবো না।তবে মাঝে মাঝে তোমাতে বিলীন হলে খুব একটা মন্দ হবেনা বলো। তুমি না হয় আমার না পাওয়ার মাঝেও পাওয়া হয়ে থাকবে।এই হিয়া তোমাকে কখনো ছাড়বে না সামরান।এটা আমার প্রমিস।বলেই হাসলো হিয়া।
ম্যাট্রিক এর ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে আজ। স্টুডেন্টদের ভিড়ের কারণে মায়া কিছুতেই নিজের ফলাফল জানতে পারছে না।এমন সময় পেছনে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো।মায়ার মুখে হাসি ফুটে উঠলো,
–রাহাদ তুমি এখানে?
–এইদিকে যাচ্ছিলাম ভাবলাম দেখা করে যাই।কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?
–আরে দেখোই না আমি এখনো আমার রেজাল্ট জানতে পারিনি।এত ভীড় কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না।
–ওহহ,ওয়েট আমি দেখাচ্ছি। বলেই রাহাদ ফোন বের করলো ইন্টারনেটে সার্চ করে মায়ার রেজাল্ট জেনে নিলো।হাসি মুখে মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
–জিপিএ ফাইভ ম্যাডাম।আপনি জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন।
–কই দেখি দেখি?মায়া রাহাদের ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সত্যি মায়া জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।মায়া প্রচন্ড খুশিতে লাফিয়ে দুহাতে তালি দিলো।তালি দিতে গিয়ে রাহাদের ফোন পড়ে গেলো হাত থেকে।সেদিকে মায়ার খেয়াল নেই।রাহাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল,
—ইয়াহুউউউউউ!!আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি। বাহ বাহ ওয়েলডান মায়া।
–সেটা বুঝলাম কিন্তু আমার ফোন!!বলেই মাটির দিকে তাকালো রাহাদ।
রাহাদের কথায় মাটির দিকে তাকিয়ে জিহ্বা কামড়ে ধরলো মায়া।
–সরি সরি আমি খেয়াল করিনি।বলেই ফোন তুলে ওড়না দিয়ে মুছে রাহাদের হাতে দিলো মায়া।
তারপর বললো,
–আমি বাড়ি যাই চাচ্চুকে বলে আসি।বলেই দৌড় দিলো মায়া।রাহাদ অনেক বার পিছু ডাকলো কিন্তু মায়া শুনলোই না।মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো রাহাদ,,
–পাগলী মেয়ে একটা!!
মায়া বাড়িতে ঢুকেই চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,
–ছোট আব্বুউউউ!!ছোট মা!!কোথায় তোমরা?
মায়ার আওয়াজ শুনে শেহনাজ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
–কি হলো এমন চেচাঁচ্ছিস কেন?আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলে শেহনাজ।
মায়া ছুটে গিয়ে শেহনাজ কে জড়িয়ে ধরে।
–ছোট আম্মুউউউউ!আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি।
–আরে বাহহ এটাতো খুশির খবর।দাড়া আমি তোর ছোট আব্বু কে ফোন করি।আসার সময় মিষ্টি নিয়ে আসবে।
–তুমি ফোন করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি…
মায়ার খুশি দেখে শেহনাজ নিজেও হেসে দেয়। ফোন হাতে নিয়ে ফোন করে আমীর মির্জা কে।
সামাদ মালিক ড্রয়িংরুমে বসে আছে।সামরান কে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে আগে হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো।এই অসময়ে সামরান বাসায়।
উঠে দাঁড়িয়ে সামরান কে ডাক দিলো,
–সামরাননন!!!
বাবার ডাক কানে আসতেই সামরান দাঁড়িয়ে গেলো।সামাদ মালিকের দিকে ফিরে চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো,কি??
সামাদ মালিক এগিয়ে এলেন।
–তুমি ঠিক আছো?এই অসময়ে বাসায় যে?
–বাড়িতে আসতেও এখন পারমিশন নিতে হবে?
–নাহ তুমিতো এই সময় অফিসে থাকো।তাই…
–জরুরী না যে সবসময় এক হবে..বলেই লম্বা পা ফেলে উপরে চলে গেলো সামরান।
সামাদ মালিক সামরানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখল সোফায় সামরানের মা সেলিনা বসে আছে।মা কে দেখে সামরান যেন শান্ত হয়ে গেলো। হাতের টাওয়াল সোফায় রেখে সেলিনা মালিকের পায়ের কাছে বসে পড়লো।হাটুতে মাথা রাখে সামরান।
সেলিনা মালিক সামরানের মাথায় হাত রাখে।
–এখানে কেন বসলি?উপরে আয়?
–নাহ আমার এখানেই ভালো লাগে।বাধা দিও না।
–খেয়েছিস কিছু সকাল থেকে?
–নাহ!!
–চল খাবি..
–ইচ্ছে করছেনা মা..
–তোর নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছেনা! তাতে কি?আমি খাইয়ে দেবো।আয়..
সামরান মাথা তুলে সেলিনা মালিকের দিকে তাকালো।হালকা হেসে বললো,
–নট ব্যাড!!চলো।
সেলিনা মালিক হাসলেন ছেলের কথায়।
এই এক জায়গায় সামরান বরফের চাইতেও শান্ত। খোদার পর এই মা সামরানের কাছে সব। পৃথিবীতে কারো সামনে যদি সামরান মাথা নত করে তবে সেটা তার মা। মায়ের আদেশ সামরানের কাছে সবার উর্ধ্বে।
#প্রেমের_খেয়া
#লেখিকা_জান্নাতুল_মীর
#পর্ব_১
বিঃদ্রঃ প্রথম পর্ব দিলাম।সবার মতামত আশা করছি।সবার ভালো মতামত পেলে পরবর্তী পর্ব লিখবো। এক পর্ব পড়েই হুড়োহুড়ি করবেন না যেন।
চলবে……