প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:৮
#নিহীন_রুবাইয়াত
–নিহীন শোন…..
আমি ওনার দিকে তাকালাম।
–কিছু বলবেন??
–না মানে তুমি তো আমাকে থ্যাঙ্কস বলতে আসছিলে তাই না?
–হ্যা তো
–দেন ডু মি ফেভার।ধরে নাও তোমার ওয়েলকাম গিফট।(কথাটা শেষ করেই উনি এক চোখ টিপ মারে আমি একটু বিষম খাই)
–কিকি কি করতে হবে?
–চলো বলছি
–…………
–কি হলো?ফলো মি…..
কই যে নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহই জানে!এই লোক তো আবার একটু উল্টা।আজ আবার অপমান না করে।
ওনার পিছু পিছু হাটছি উনি আমাকে লাইব্রেরিতে নিয়ে এলেন,লাইব্রেরিতে ২/৩ জন ছাড়া কেউ নেই।
–এখানে কেন নিয়ে এলেন?
–রোমান্স করতে..
–কি?
–ওহ হ্যালো আমার এতোটাও খারাপ দিন আসিনি তোমার মতো পিচ্চির সাথে……যাই হোক বসো এখানে আসছি আমি।
উনি বুক সেল্ফের দিকে গেলো।আর আমি ভাবছি ওনার লাস্ট কথা।আমি নাকি পিচ্চি?হাহ!!আমি ২০+,আমাকে কি দেখে পিচ্চি বলে।
–কি ভাবছো এতো?
–কিছু না।
–আচ্ছা,এই নাও আমার এই প্রেজেন্টেশনটা করে দাও এটাই হবে তোমার থ্যাঙ্কস রিটান গিফট।
–কি?আমি প্রেজেন্টেশন করে দেবো?
–হুম তুমি
–আপনি কি মজা করছেন?আমি পড়ি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার আর আপনি মাস্টার্সে তাও আবার আলাদা ফ্যাকাল্টি।
–আলাদা ফ্যাকাল্টি নাকি তুমি?
–হুম জানেন না বুঝি?
উনি ভ্রু কুচকে তাকান আমার দিকে।আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম এভাবে তাকিয়ে আছে কেন..
–তুমি কি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট?
–মানে?
–আরে বলোতো
–না।আমি প্রেসিডেন্ট হব কেন?
–তাহলে কি কোন সেলিব্রেটি?
–কি সব বলছেন?
–ওহ তাও না।তাহলে বাংলাদেশের শীর্ষধনীর মেয়ে?
–পাগল হয়ে গেলেন কি যা তা বলছেন
–এসব কোনটাই যখন না তখন আমি কিভাবে জানবো তুমি কোন ফ্যাকাল্টির।মানুষ তো এনাদেরি খোজ রাখে।যতসব আজাইরা কথা।তুমি কে হ্যা যে তুমি কোন ফ্যাকাল্টির তা মানুষের জানা লাগবে?
ওনার কথাগুলো শুনে খুব রাগ হলো।কিন্তু ঝামেলা বাধাতে চাই না বলে চুপ থাকলাম।
–আমি পারবো না প্রেজেন্টশন করে দিতে।
–তুমি পারবা তোমার ঘাড় পারবে।এই নাও নোটস দেখে দেখে কপি করো।এক ঘন্টাই শেষ করবা কাল আমাকে এটা জমা দিতে হবে।
আমি রাগ হলেও,রাগে রাগে নোটস গুলো নিয়ে কপি করা শুরু করলাম।আমি বিবিএ পড়ি আর আমাকে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রেজেন্টেশন করাচ্ছে।শয়তান ব্যাটা।আমি লিখেই যাচ্ছি আর উনি একটা চেয়ারে বসে আরেক্টার ওপর পা তুলে পা নাচাচ্ছে আর মোবাইন টিপছে।
–আচ্ছা একটা কথা বলবো?যদি কিছু মনে না করেন তো।
উনি মোবাইলের থেকে চোখটা একবার আমার দিকে দিলেন তারপর আবার মোবাইলে চোখ দিয়ে বললেন,
–বলো
–না মানে আপনি নাকি ভার্সিটির টপার,আপনার সিজিপিএ নাকি অনেক বেশি তা আপনি নিজের প্রেজেন্টশন অন্যকে দিয়ে করাচ্ছেন কেন?আপনি নিজের কাজ এভাবেই মানুষকে দিয়ে করিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছেন?
উনি আবারো ভ্রু কুচকে তাকান।আমি তো নিজেকেই গালি দিচ্ছি কি বলে ফেললাম এটা।এবার উনি আবার আমাকে মারবে।কথাটা ভেবেই আমি গালে হাত দিয়ে বসে থাকলাম।
–গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেন?নিজের কাজ করো
–জি জি…..
আমি লেখাই মন দিলাম বলেছিলো এক ঘন্টাই শেষ করতে কিন্তু যে লেখা টানা ২ ঘন্টা টাইম লাগলো আমার।এর মাঝে ওনার সাথে দুএকবার চোখাচোখি হয়েছে।
–লেখা শেষ।
আমি হাসি মুখে ওনার দিকে খাতাটা দিই।উনি খাতা টা চেক করে কোন কথা না বলেই চলে যাই।
–আজব মানুষ একটা থ্যাঙ্কস ও দিলো না।অসভ্য কোথাকার।
আমি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে মীরাকে খুজছি।আজ তার সাথে আমার দেখাই হয়নি।মীরাকে পেলাম না শাওনকে পেলাম।শাওন বললো মীরা নাকি আমাকে খুজছিলো কল ও দেছে কয়েকবার।কিন্তু আমার ফোনে তো কোন কল আসিনি।আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখি ২৬ টা মিসডকল।ইশ ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো তাই বুঝিইনি।ধুর….আমি মীরাকে কল ব্যাক করে সরি বললাম।শাওন থাকাই সৌভিকের কথাটা আর বললাম।বাসায় চলে আসলাম।
রাতে শাওন নক দিলো…
–কি করো?
–সুয়ে আছি।
–খাইছো?
–হুম
–মন খারাপ।
–না তো
–তাহলে এতো চুপচাপ কেন?
–এমনিই।
–আচ্ছা যদি কোনদিন জানতে পারো আমি আমি না তখন কি করবে?
–মানে?
–এই ধরো তুমি যারে ভেবে কথা বলছো আমি সে না অন্য কেউউ
–কি যা তা বলছো?তুমি অন্য কেউ হতে যাবে কেন?
–হতেও তো পারি।
–ইয়ারকি মেরো না তো এখন
–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।রাত হয়েছে ঘুমাও।
শাওন কল কেটে দেই।আমি এই ছেলেটারে একদম বুঝি না।সামনে তো খুব ফ্রেন্ডলি কথা বলে কিন্তু ম্যাসেজিং এর সময় এমন করে কেন?ভয়েস কলেও কথা বলে না।ধুর ছেলেরা এতো কনফিউজিং কেন?একদিকে শাওন আর একদিকে ওই অসভ্যটা।কোল বালিশ নিয়ে ঘুরে সুয়ে থাকলাম।
সকালে ভার্সিটির জন্য একেবারে রেডি হয়ে বের হচ্ছি,মা ডাক দিলো
–নিহীন আজ তোর ভার্সিটিতে যেতে হবে না।
–কেন?
–আজ বাড়িতে মেহমান আসবে।
–মেহমান!!কারা?আর মেহমানের সাথে আমার ভার্সিটি না যাওয়ার কি সম্পর্ক মা?
–আরে যে সে মেহমান না রে নিহী তোর বোনের হবু শশুরবাড়ির লোক আসবে বিয়ার কথা কইতে। বলতে(দাদী খুশিতে বলে ওঠে)
–হুয়াট?রিয়েলি দাদি?ওয়াওওওওও ম্যান,ফাইনালি সৌরভ ভাইর ফ্যামিলি আসছে তাহলে।
–হ্যা পোলা চাকরি পাইছে বিয়া তো করবোই আর নিলুর ও তো বয়স হচ্ছে।যা যা তুই ঘরে ব্যাগ রেখে আই আমাদের সাহায্য কর।আর শোন মীরাকেও বল চলে আইতে।
–ওক্কে দাদি।
আমি আনন্দে ঘরে চলে আসি।মীরাকে কল দিয়ে সব বলি ওউ তো অনেক খুশি।ওউ আর ভার্সিটিতে যাই না আমার বাড়ি আসার জন্য রওনা দেই।আমি আপুর রুমে যায়।ভিতরে না ঢুকেই দরজাই দাড়িয়ে ওর কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসছি।আয়নার সামনে দাড়িয়ে একের পর এক শাড়ি গায়ে ধরে দেখছে আর ছুড়ে ফ্লোরে ফেলছে।এক এক করে সব শাড়ি ফেলে দিলো তারপর মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে পাইচারি করছে।আমি এবার জোরেই হেসে দিলাম আমার হাসির আওয়াজে ও আমার দিকে তাকালো।
–এই তুই হাসছিস কেন?
–তোর কান্ড দেখে যে কেউই হাসবে।
–কেন আমি কি জোকার যে হাসবে?
–আরে তা কখন বললাম তুই যেভাবে নার্ভাস হয়ে ঘুরছিস দেখতে অনেক ফানি লাগছে।হাহাহাহহাহা
–ওখানে দাড়িয়ে না কেলিয়ে আমার হেল্প কর।আমি সেই কখন থেকে শাড়ি সিলেক্ট করছি একটাও পাচ্ছি না ভালো।
–আরে আপু তোর সব শাড়িই তো অনেক সুন্দর।যেটাই পরিস না কেন তোকে একদম ঝাক্কাস লাগবে।
আমি মেঝে থেকে একটা নেভি ব্লু শাড়ি তুলে নিলাম,ওর হাতে দিয়ে বললাম,
–এটা পর তোকে অনেক মানাবে।
–ওর বাড়ির লোকের যদি পছন্দ না হয় এটা।আচ্ছা নিহীন ওনারা আমাকে আমাকে কি জিজ্ঞেস করবে বল তো?ওনাদের যদি আমাকে ভালো না লাগে তাহলে?
–আরে আপু তুই থাম তো।এমনভাব করছিস যেন ওনারা তোকে আগে থেকে চেনে না।ভাই এটা তো।লাভ মেরেজ তোদের।ভাইয়ার মা বাবা তোকে আগে দেখেছে তাই কুল সিস্টার।
আমাদের দুই বোনের কথার মাঝেই ভাইয়া আসলো।ভাইয়াকে দেখেই আমরা দুই বোন ভাইয়া বলে ছুটে গেলাম আর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।ভাইয়া চাকরির সূত্রে বাইরে থাকে।আপুকে দেখতে আসবে বলেই বাবা ভাইয়াকে আসতে বলেছে।আমরা তিন ভাই বোন গল্প করছি এরি মাঝে মীরা চলে এলো।
বিকালে আমি আর মীরা আপুকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম।আপু বেচারি তো অনেক ভয় পেয়ে আছে।সৌরভ ভাইয়া মানে আপুর বিএফ এর ফ্যামিলি এসে আপুকে দেখে গেলো।আপু তো লজ্জাই লাল হয়ে ছিলো ওদের সামনে।রাতে শুয়ে আছি শাওন নক দিলো।
–জানো আমি আজ অনেক অনেক হ্যাপি।
–হটাত এতো হ্যাপি কেন?
–আজকে সৌরভ ভাইয়ার ফ্যমিলি আইছিলো আপুকে দেখতে..
–সৌরভ ভাইয়া কে?
–আরে আপুর বি এফ।জানো ওদের ৭ বছরের রিলেশন।
–অনেক দিন তো।
–হ্যা
–তা ওদের পরিচয়টা কিভাবে?
–সেটাও অনেক মজার।আমি সেবার নাইনে পড়ি আর আপু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।ঈদ করতে দাদু বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আমার খুব জ্বর আসছিলো তাই আমি যেতে পারিনি।বাবা,আপু আর ভাইয়া গিছিলো।আমাদের দাদু বাড়ির গ্রামেই আবার সৌরভ ভাইয়ার নানা বাড়ি।ওরাও সেবার গিছিলো।আমার ভাইয়া আর সৌরভ ভাইয়া এক ব্যাচের হওয়ায় গ্রামে ক্রিকেট খেলার সময় ওদের ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যাই।ঈদের দিন ভাইয়া সৌরভ ভাইয়াকে দাওয়াত দেই,সৌরভ ভাইয়া আমদের বাড়িতে আসে।আপু তখন সেমাই খাচ্ছিলো,দাদি ওরে বলে ভাইয়াকে সেমাই দিতে।বাসায় যে মেহমান এসেছে ও বা দাদি কেউ জানতো না।সৌরভ ভাইয়া আমার ভাইয়ার রুমে পিছন ঘুরে তাকিয়ে ছিলো,,ভাইয়ার আর ওনা হাইট,ফিগার প্রায় সেম হওয়ায় আপু বুঝতে না পেরেই ভাইয়া বলে ডাক দেই সৌরভ ভাইয়া তাড়াহুড়া করে তাকাতেই আপুর সাথে ধাক্কা খায় আর আপুর হাতে থাকা সেমাইয়ের বাটি ভাইয়ার গায়ে পড়ে।ব্যাস ভাইয়া তখন আপুর ওই ভীত চেহারা দেখেই প্রেমে পড়ে যাই।এভাবেই ওদের লাভ স্টোরি শুরু।আমার ভাইয়া প্রথম থেকেই জানতো কিন্তু আপুকে কিছুই বলিনি।ধীরে ধীরে আমরাও জানি।
–বাহ!চমতকার…তাহলে এতোদিনের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে।তা কে কে এসেছিলো আজ?
–সৌরভ ভাইয়ার মা বাবা আর মামা আসছিলো।
–ওনার কোন ভাই বোন আসিনি?
–ওনার কোন বোন নেই শুনেছি একটা ভাই আছে তবে আমি তাকে চিনি না।
–বোনের দেবর আর তুমি তাকে চেনো না?এইটা কোন কথা?
–আরে আমি কোনদিন ওনার শুনিনি আপুর মুখে আর নিজে থেকেও জানতে চাইনি।
–কেন?
–এমনিই ইচ্ছা হয়নি।ভালো কথা তুমি কেমনে জানলে দেবর?ভাসুর ও তো হতে পারতো।
–আরে আমি কিভাবে জানবো?আন্দাজে বললাম।
–সত্যি?
–মিথ্যা বলার কি আছে?আচ্ছা আমার ঘুম পাচ্ছে বাই
–এখনি ঘুম পাচ্ছে?
–হুম।
–ওকে বাই।
কেন জানি না মনে হলো ও আমাকে এড়িয়ে গেলো।অন্যদিন আমার ঘুম পাই ও জোর করে ম্যাসিজিং করে আর আজ নিজেই এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলো।ধুর এরে একটুও বুঝিনা সামনে এক চোখের আড়ালে আর এক।আমি কিছুতেই শাওনের এই দুই রুপ কে মিলাতে পারি না।
চলবে…….#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৯
আজ ক্লাস এক্টু দেরিতে শুরু হবে তাই ঘুম থেকেও দেরী করে উঠেছি।সবার সাথে সকালের করে রুমে এসে রেডি হয়ে নিলাম।কিন্তু কেন জানি না আজ হিজাব পরতে ইচ্ছা করছিলো না।হিজাব বাদেই ভার্সিটি তে গেলাম।ভার্সিটিতে যেয়ে শুনি আজ নাকি ক্লাসটা আর হবে না।মেজাজ পুরো বিগড়ে গেলো।রাগ কমানোর জন্য মীরাকে বললাম চল ফুচকা খাই।ওউ রাজি হয়ে গেলো।দুজন হাটছি তখনি শিবলি ভাই এল,
–এই পুচকি মেয়ে তোমার ফ্রেন্ড নিহীন কই?
(ওনার কথাই মীরা অবাক হলো।আমি তো ওর পাশেই দাড়িয়ে তাও আমার খোজ করছে)
–ভাই আপনার চোখে কি কোন সমস্যা আছে?
–না তো
–তাহলে নিহু আমার পাশে থাকা স্বত্তেও ওরে খুজতেছেন কেন?
উনি বেশ জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পপর্যবেক্ষণ করলেন।
–তুমি নিহীন!!??
–হুম আমি নিহীন।
–ও মাই গড!আমি তোমাকে চিনতেই পারিনি।তুমি আজ স্কার্ফ বাদে এসেছো চেনায় যাচ্ছে না।ওয়েট ওয়েট।
উনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাউকে আসতে বললেন।কথা শেষ করে আমার দিকে তাকাচ্ছেন আর হাসছেন আর আমি,মীরা বিরক্তি নিয়ে ওনার হাসি দেখছি।দুই এক মিনিটের মাথায় ওই অসভ্যটাও চলে এসেছে।এখন বুঝলাম শিবলি ভাইয়া ওনাকে আসতে বললেন
–ভাই দেখ এটা নাকি নিহীন।হাহাহাহাহাহহহ….আমি তো চিনতেই পারিনি হাহাহাহাহাহাহহহহহহহহহহহহহহহহহ………
শিবলি ভাইয়া মজা করে বললেও সৌভিক ভাইরে অনেক রাগি লাগছে,উনি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যে কাচাই খেয়ে ফেলবে।উনি কিছু বলার জন্য আমার দিকে তেড়ে আসলেন ওনাকে দেখে আমি দু পা পিছিয়ে গেলাম।উনি হাতের মুঠো আরো শক্ত করেন,আমি ভয় পেয়ে যায়।শিবলি ভাইয়ার দিকে রাগি লুক দিয়ে চলে গেলেন।শিবলি ভাই ও হয়তো বুঝলেন না ব্যাপারটা।
–ভাইয়া আপনি কি কিছু বলতে এসেছিলেন?
–হ্যা।আই ওয়ান্ট টু সে থ্যাঙ্কস।
–থ্যাঙ্কস কেন?
–ওই যে আমার প্রেজেন্টেশন করে দিলে তাই..
প্রেজেন্টেশন কথাটা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।
–আমি কখন…
–কেন পরশুদিন সৌভিক তোমাকে দিয়ে করিয়ে নিলো না?
–ওটা আপনার ছিলো?
–হ্যা আমারই তো।
–আমি তো ভেবেছিলাম
–ওয়েট ওয়েট তুমি এটা ভাবোনি তো ওটা সৌভিকের?(আমার মুখের রিয়াকশন দেখে উনি বুঝে গেলেন আমি এমনটাই ভেবেছি।উনি হোহহোহোহহহ করে হেসে দিলেন)তুমি পারোও বটে।ও ক্লাস টপার ব্রো,ও কোনদিন নিজের প্রেজেন্টেশন কাউরে দিয়ে করাবে এটা ভাবলে কিভাবে তুমি?ও পড়াশুনা,রাজনীতি সব কিছুতে এক নম্বর।আমি একটু বিজি ছিলাম তাই ও বললো তোমার দিয়ে করিয়ে নেবে.।ও কোথায় আছে তুমি এটা জানতে চাইলে যখন তারপর আমি ওরে কল দিই তখনি ও আইডিয়াটা দেই।
আমি কিভাবে রিয়াক্ট করবো বুঝতে পারছি না।ওনার মোবাইলে কল আসলো উনি চলে গেলেন।আমার খুব রাগ হলো,অন্যের প্রেজেন্টেশন আমাকে দিয়ে করিয়ে নিলো।ব্যাটা চিটার।
–নিহু ফুচকা খাবি না?চল
–না খাব না,
–কেন?
–মুড নেই।
পুকুর পাড়ে এসে বসে আছি।কেন জানি না রাগ লাগছে।মীরা বার বার বলছে নিহু চল বাসায় যায়।আমি ওর কোন কথারি উত্তর দিচ্ছি না,চুপ করে বসেই আছি।
–হিজাব বাদে এসে কি বুঝাতে চাইছো তোমার চুল অনেক সুন্দর?মানুষকে রূপ না দেখালেই নয়।
এরকম একটা কথা শুনে উঠে দাড়ালাম।
–ছেলেদের পটানোর জন্য এতো কিছু?রূপ বেশি হয়ে গেছে তো
–কি বলছেন এসব?কথা বলার লিমিট থাকে কিন্তু।
–ভুল কিছু বলেছি কি?আমি তো বলি মানুষকে এতোই আকর্ষন করতে ইচ্ছে করে তাহলে জামা কাপড় খুলে এসো কাল থেকে।তাতেও যদি সাধ না মেটে মুখে রং মেখে রাস্তায় দাড়িয়ে পড়ো।
কথাটা আমার খুব গায়ে লাগলো।আমি ওনার মুখে থাপ্পড় মেরে দিই।তারপর কাঁদতে কাঁদতে চলে আসি।আমার পিছু পিছু মীরাও চলে আসে আমাকে সামলাতে।
রাতে শুয়ে আছি।ভার্সিটি থেকে আসার পর অনেক কেঁদেছি কিন্তু রাগ কুমিনি।আমি আজ কি এমন করেছি যে উনি এতোগুলো বাজে কথা শুনালেন।উনি সত্যিই খুব খারাপ,আমি আর কোনদিন ওনার সাথে কথা বলবো না।ঘুম আসছে না উঠে বেলকনিতে গেলাম।নিচের দিকে তাকাতেই দেখি একটা গাড়ি বাসার সামনে,গাড়ির ভিতরে কোন ছেলে বসে আছে।মুখ বোঝা যাচ্ছে না তবে এটা বুঝতে পারছি সে আমার বেলকনির দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি উকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম গাড়িটি চলে গেলো।এতো রাতে কে বাসার সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারে মাথায় আসলো না।আচ্ছা এটা ওই লোকটা না তো?অচেনা সেই লোক।
সারা রাত আর ঘুম হলো না,লোকটা কে আর কেন দাড়িয়েছিলো তা বুঝার চেষ্টা করলাম।
সকালে ভার্সিটি তে গেছি মীরা হাপাতে হাপাতে আমার কাছে আসে।
–নিহীন ঝামেলা হয়ে গেছে।
–ঝামেলা কি ঝামেলা?
–তুই কাল হিজাব বাদে কেন এসেছিলি?জানিস কাল কিছু ছেলে তোর……
–আমার কি?
–কাল তুই হিজাব বাদে আসায় তোর শরীর থেকে অনেক বার ওড়না সরে যায়,শরীরের আকৃতি বোঝা যাচ্ছিলো।ওই সময় কিছু ছেলে তোর খারাপ খারাপ ছবি তোলে,সেগুলো একটা গ্রুপে পোষ্ট করতে যাচ্ছিলো
–কি?
–হ্যা।
মীরার কথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো যেন।আমার মাথা ঘুরে উঠলো।মীরা আমকে ধরে ফেলে
–নিহু নিহু তুই ঠিক আছিস?
–………….
–নিহু তোর চিন্তা করতে হবে না।সৌভিক ভাল যে তোর ছবি তোলাগুলো দেখে ফেলেছিলো।উনি সঙ্গে সঙ্গে ওগুলো ডিলিট করে দেই আর মারধোরো করে।কাল উনি তোকে ওই জন্যই মেরেছিলো নিহু।
আমি মীরার দিকে তাকিয়ে থাকি।আমি ওনার ওপর রাগ করব না ধন্যবাদ জানাবো।আমার খুব খারাপ লাগা শুরু করলো,আমি ওনাকে থাপ্পড় দিলাম কিন্তু উনি তো আমার ভালো চেয়েই…ছি নিহীন!!তুই কি করলি এটা।ওনার কাছে আমার ক্ষমা চাইতে হবে আর ধন্যবাদ ও জানাতে হবে।আমি দৌড় দিলাম ওনাকে খুজে চলেছি,মীরা ও আমার পিছু পিছু ছুটছে আমি এভাবে দৌড়াচ্ছি কেন জিজ্ঞেস করছে আমি ওর কথাই কান দিচ্ছি না।অনেক খুজে তারপর পেলাম উনি ওনার বন্ধুদের সাথে বসে ছিলো।আমাকে দেখে না দেখার ভান করলো।আমি ওনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম
–সরি এন্ড থ্যাঙ্কস।
উনি একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর উঠে দাড়ালেন।ব্যাগ নিয়ে চলে যেতে গেলেন।
–সরি বললাম তো।
উনি কথাটা শুনে দাড়ালেন ঠিকই কিন্তু পিছনে তাকালেন না।পিছু না তাকিয়েই বললেন,
–শিবলি ওরে বলে দে ওর নাটক দেখার কোন ইচ্ছাই আমার নেই।
–আমি নাটক করছি না।
উনি খুব জোরে জোরেরে হাসলেন,,
–কারোর গায়ে হাত তোলার আগে একবার ভেবে নিয় নিহীন।
উনি চলে গেলেন।আমার চোখে পানি চলে এসেছে।শিবলি ভাইয়া এসে আমার মাথায় হাত দিলেন।
–ও একটু রেগে আছে তাই এমন করলো।তবে তুমি চিন্তা করো না একটু পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।ছেলেগুলো তোমার বাজে ছবি তুলেছিলো এটা ওর সহ্য হয়নি।পরে রাগের মাথায় তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলে,তুমি তখন ওরে থাপ্পড় মারাই ও অনেক কষ্ট পাই।তুমি প্লিজ ওরে ভুল বুঝো না।
শিবলি ভাইয়া চলে যায়।আমার নিজের ওপর হচ্ছে।অপরাধী লাগছে।ওইদিন রাতে শুয়ে আছি মীরা কল দিলো।
–দোস্ত ভার্সিটি তে সব ব্যাচ থেকে ট্যুরে যাচ্ছে।তুই যাবি??
–কিসের ট্যুর?
–আরে ৩ দিনের ট্যুর,সুন্দরবন যাবে নাকি।চল না দোস্ত খুব মজা হবে।
–আচ্ছা ভেবে দেখি।
–ভাবাভাবি না।তুই যাবি তাই জানি।তোর বাসায় ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।
–আচ্ছা দেখি।
পরেরদিন মীরা এসে বাসায় বলে,বাসা থেকে প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়।আমি ট্যুরে যাচ্ছি ঠিকি কিন্তু কারা কারা যাচ্ছি,কোথায় যাচ্ছি কিছুই তেমন জানি না।এই কদিনে মনের ভিতর শুধু খারাপ লাগছে সৌভিক ভাইর সাথে ওমন করার জন্য।তবে মীরা ট্যুর নিয়ে অনেক বেশি এক্সাইটেড।ফাইনালি আজকে সেইদিন আমরা ট্যুরে যাচ্ছি,মীরা তো খুশিতে লাফাচ্ছে।রাত ৯ টাই বাস ছাড়বে।আজ বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জানলাম প্রত্যেক ব্যাচ থেকে ৫ জন করে যাচ্ছে।অনার্স ২য় বর্ষ থেকে মাস্টার্স প্রথম বর্ষ পর্যন্ত।মোট ২০ জন আর আমাদের সাথে একজন ম্যাডাম ও একজন স্যার ও যাবে।আমি আর মীরা পাশাপাশি সিটে বসলাম।কিন্তু একটা ভাইয়া এসে বললো ইচ্ছা মতো বসা যাবে না নাকি।মাস্টার্সের আপু ভাইয়ারা বলেছে লটারি করা হবে,তারপর যার যার নাম্বার মিলে যাবে তাকে তাকে বসা লাগবে,যদি তাদের কথা না শুনা হয় তাহলে নাকি কপালে শনি আছে।সিনিয়র দের পাওয়ার অনেক তাই তাদের কথার অমান্য করা যে নিজের বিপদ ডেকে আনা তা আমাদের ভালোই জানা আছে।আমি আর মীরা একে অপরের দিকে স্যাড লুক দিয়ে বোল থেকে দুইটা চিরকুট তুলে নিই।আমার সিট প্রায় শেষের দিকে আর মীরার একদম সামনে।
আমি মীরাকে হাগ করে সাইড ব্যাগটা নিয়ে আমার সিটের কাছে যায়।
–আপনি?
–তুমিইইইইইইইইইইইইইইইইই???ও মাই গড!!
চলবে……….