প্রেম পাগলামি পর্ব ১০+১১

প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১০

আমার সিট প্রায় শেষের দিকে আর মীরার একদম সামনে।
আমি মীরাকে হাগ করে সাইড ব্যাগটা নিয়ে আমার সিটের কাছে যায়।

–আপনি?
–তুমিইইইইইইইইইইইইইইইইই???ও মাই গড!!
–আপনি এখানে কি করছেন?
–কেন বাস কি তোমার বাবার সম্পত্তি যে তুমি ছাড়া আর কেউ উঠতে পারবে না?
–আমি কি একবারো বলেছি সেটা?আমি তো জাস্ট শুনলাম,আগে তো জানতাম না আপনি যাবেন সেটা।যায় হোক সরেন,আমি বসবো।
–তুমি বসবা মানে?
–আমি বসবো মানে এখানে আমার সিট তাই আমি বসবো।
–এটা তোমার সিট কিভাবে হলো?নাম টাম লেখা আছি নাকি?

উনি উঠে দাড়িয়ে সিট চেক করতে লাগলেন তারপর আবার বসে পড়লেন।
–কই তোমার নাম তো লেখা নেই।ইভেন কারোর নামই নেই।বড়লোকের বেটি বলে এইভাবে নিজের দখল করে নিবা?

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।

–ওরকম গরুর মতো তাকিয়ে আছো কেন?
–………………..
–এই শিবলি এই বড়লোকের বেটিরে সিট দে একটা?(উনি মুখটা উচু করে বলে)
–এটাই আমার সিট,লটারিতে এখানেই সিট পড়েছে আমার।
–ওহহহহহহহহহহহহ আগে বলবা তো।আচ্ছা বসো।
–না,বসবো না।
–কেন?
–আপনি এতোক্ষন যেটা করলেন তারপর আপনার পাশে বসে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
–ওকে দেন দাড়ায় থাকো।
–হ্যা সেটাই থাকবো দরকার হলে।

আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কিন্তু কোথাও সিট ফাকা নেই।তাই বাধ্য হয়ে দাড়িয়ে থাকা লাগলো।গাড়ি স্টার্ট দিলো।১০মিনিট মতো পর বাসের লাইট অফ হয়ে গেলো।অন্ধকারের মধ্যে ভালোই বুঝতে পারছি শয়তানটা আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হাসছে।ইচ্ছা করছে দাতে এক ঘুষি মেরে দিই।আরো ১ ঘন্টা মতো দাড়িয়ে থাকলাম।কিন্তু এবার যা হলো তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।ড্রাইভার এমন জোরে ব্রেক কষেছে যে আমি তাল সামলাতে না পেরে ওনার কোলের ওপর বসে পড়েছি।

অন্ধকারের মধ্যেই দুইজন যেন ফ্রিজড হয়ে গেছি।কিছুক্ষন থ মেরে বসে থাকলাম,,
–তুমি তো খুব চালাক।সুযোগ বুঝে আমার কোলে বসে পড়েছো।সুন্দর ছেলে বলে বুঝি কান্ট্রোল হচ্ছিলো না তাই সবার আড়ালে সোজা কোলে বসে পড়লে।হিহিহিহিহিহিহহ…..

উনার দাত কেলানি দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেলো।আমি উঠে দাড়ালাম।সামনে থেকে ম্যাম আসলো,,
–কি ব্যাপার নিহীন দাড়িয়ে আছো কেন?
–ম্যাম ওরে সেই কখন থেকে বলছি কিন্তু বসতেছে না।বলে এমন সস্তা বাসে আমি বসবো না

ম্যামকে আমার নামে মিথ্যা কথা বলে দিলো।কি খারাপ লোক রে বাবা।আমি ম্যামকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ম্যাম বললো,
–একটু কষ্ট করে বসে পড়ো নিহীন।

ম্যাম আমার মাথায় হাত বুলিয়েই চলে গেলো।উনি উঠে দাড়িয়ে আমাকে জানালার সাইডে বসার জায়গা করে দিলেন।আমি রাগে গজ গজ করতে করতে বসে পড়লাম।উনিও বসলেন।

–হাআআআআ,আমি বাপু গরীব মানুষ সব সবরকম গাড়িতে ট্রাভেল করতে পারি।

রাগী চোখে ওনার দিকে তাকালা।অন্ধকারে কতোটা বুঝতে পারলেন উনি জানি না।পাশে বসে বকবক করেই যাচ্ছে।
–উফফফ!!থামবেন আপনি?
–আমি আবার কি করলাম??
–চুপ থাকেন আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।
–আমি তো চুপই আছি।
–চুপ একদম চুপ।(আমি ওনার হাতটা শক্ত করে ধরে কথাটা বলি)
–হাই হাই,তুমি তো দেখছি সেই চালু।সুযোগ বুঝে অন্ধকারে আমার মতো নিরীহ ছেলেটার এডভান্টেজ নিচ্ছ।
–কি?আমি এডভান্টেজ নিচ্ছি।
তাই তো নিচ্ছো।তখন কোলে বসে পড়লে এখন আবার হাত ধরে বসে আছো।এটাকে তো…..

ওনার কথা শেষ করার আগেই আমি হাত ছেড়ে দিই।উনি মুখ চেপে হাসে আর আমি রাগে গজ গজ করতে থাকি।উনি ফোন বের করে কারোর সাথে চ্যাট করতে থাকে,ছোট্ট প্রোফাইল পিকটা দেখে মনে হলো কোন মেয়ে।জিএফ টিএফ হবে হয়তো।আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।যদিও জানালা দেয়া আছে।একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাংলো আযানের শব্দে।আস্তে আস্তে চোখ আধা খুললাম মনে হচ্ছে কিছুএক্টার ওপর খুব আরাম করে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি কিন্তু বাসের মধ্যে কিসে মাথা রাখলাম।চোখ মিটমিট করতে

করতে কিসের ওপর মাথা রেখেছি তা দেখার জন্য ঘাড়া ঘুরিয়েই শকড খেলাম,আমি ওই অসভ্যটার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম।কিন্তু কেন জানি না মাথা উঠাতে ইচ্ছা হলো না,মন চাচ্ছে ওনার কাধেই শুয়ে থাকি এভাবে।আমি আবার শুলাম।কিছুক্ষন পর আবার ওনার মুখের দিকে তাকালাম,উনি ঘুমিয়ে আছি।ওনার মুখের ওপর হালকা আলো এসে পড়েছে,খুব নিষ্পাপ লাগছে ওনাকে,আমি তো ক্রাশ খেয়ে যাবো একদম।ওনার মুখের থেকে চোখ সরাতে পারলাম না।মনে মনে ভাবছি এতো নিষ্পাপ চেহারার একটা মানুষ আমার সাথে এরকম করে কেন?আমি অনেক্ষন তার দিকে তাকিয়ে আছি।

–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?জীবনে হ্যান্ডসাম ছেলে দেখোনি বুঝি?

চোখ বন্ধ করেই কথাটা বললেন।আমি তো থতমত খেয়ে গেলাম।এ তো ঘুমিয়ে ছিলো তাহলে বুঝলো কি করে আমি ওনাকে দেখছিলাম।

–এখনো তাকিয়ে আছো?আগেই বলে দিচ্ছি আমার প্রেমে পড়েও লাভ নেই,আমি কিন্তু রিজেক্ট করে দেবো তোমায়।
উনি চোখ খুলেই শয়তানি একটা হাসি দিলেন।আমি হুড়মুড় করে উঠে বসলাম।

–শুনুন আমার কোন ইচ্ছা নেই আপনার প্রেমে পড়ার।
–আরে হয়েছে হয়েছে।আমি বুঝি তো।সারারাত আমার কাধটা বালিশ বানিয়েছো এমনকি আমার চাদর টাও কেড়ে নিয়েছো।

–চাদর?

উনি চোখ দিয়ে আমার গায়ের দিকে ইশারা করলেন।ওনার চাদর আমার গায়ে শুধু তাই না একি চাদরের মধ্য শুয়ে আছি দুজন।আমি তাড়াতাড়ি চাদর সরাতে লাগলাম।

–আরে থাক থাক এখন আর নাটক করা লাগবে না।আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে নিজেকে সামলাতে পারোনি তাই ইচ্ছা করেই হয়তো…….
–দেখুন আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি আর আপনি তো পারতেন আমাকে সরিয়ে দিতে তা দেননি কেন?
–তুমি আর দিতে দিলে কই?যেভাবে আমার হাত জড়িয়ে ছিলে,,বাবা রে বাবা।আচ্ছা একটা কথা বলো তো তুমি কি ছেলে দেখলেই এমন করো।মানে গায়ে পড়ে থাকো,আজ এটা তো কাল ওটা।এসব মেয়েদের কি বলে জানো তো?সাবধান কিন্তু লোকে যদি জানে এসব তোমার বিয়ে দিতে পারবে না তো বাবা মা লজ্জাই।

উনি খুব বিশ্রী হাসি দিলেন।আমার খুব খারাপ লাগলো,একটা মানুষ কিভাবে এতো খারাপ হতে পারে?মাঝে মাঝে ওনাকে খুব ভালো মনে হয়,সেদিন উনি আমার হেল্প করেছিলেন কিন্তু আমি ভুল বুঝে ওনাকে মেরেছিলাম তার জন্য আমি অনুতপ্ত কিন্তু আমি ওনাকে সেদিন অনেক ভালো মানুষ ও মনে করা শুরু করেছিলাম।কিন্তু না উনি খুব জঘন্য একজন মানুষ।আমার চোখে পানি চলে এসেছে কোনমতে নিজেকে সামলালাম।সূর্য উঠে গেছে।স্যার এসে বললো কারোর যদি নেমে চা-নাস্তা খাওয়া লাগে তাহলে নামতে পারে।উনি আগে নেমে গেলেন,আমি সিটে বসেই রইলাম।কিছুক্ষন পর মীরা আসলো।

–নিহু নিচে যাবি না?
–না
–কেন?
–ইচ্ছা নেই।
–চল না।চা খেয়ে আসি,এই শীতে চা খাওয়াটা খুব দরকার।যে শীত বাবা রে বাবা।
–আমার লাগবে না।
–উফফ!!বেশি কথা বলিস না তো,চল।

মীরা হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো।আমি আর মীরা চায়ের দোকানে চা অর্ডার দিয়ে বেঞ্চের ওপর বসি।তখনি ওই অসভ্যটা আমাকে ডাক দেয়,উনি আর শিবলি ভাই দোকান থেকে একটুটু দুরে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে।আমি শুনেও না শুনার ভান করলাম।উনি আবার ডাক দেয়।

–কথা কানে যাচ্ছে না??এদিকে এসো

আমি গেলাম না।বসেই আছি।
–কি হয়েছে বলেন।

–এদিকে আসো।

–পারবো না।

আমার পারবো না কথা শুনে উনি নিজেই চলে এসেছেন আমার কাছে।ওনার চোখ লাল হয়ে গেছে,মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।আমি ভয় গেলাম,মীরাও কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।

–একবার আমার কথাই না করেছো মেনে নিলাম,নেক্সট টাইম যদি কিছুতে না বল খবর আছে।আমাদের দুজনের জন্য দুটো চা নিয়ে আসবে।চিনি কম হবে আমারটাই,আমি বেশি মিষ্টি খেতে পারিনা।

আমি আবারো পারব না বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই উনি বললেন,,
–ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু সে পারবা না।ইফ ইউ সে দ্যাড়,দ্যাটস নট গুড ফর ইউ..আন্ডারসস্টান্ড?

উনি গটগট করে চলে গেলেন।ওনার তখনকার ব্যবহারে আমি অনেক রেগে ছিলাম সাথে কষ্ট ও পেয়েছি কিন্তু ওনার সাথে পাঙ্গা নেয়ার ইচ্ছা আমার নেই তাই বাধ্য হয়ে চা অর্ডার দিতে গেলাম।মন তো চাচ্ছে চায়ে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলি।কিন্তু আমি তো সেটাও পারবনা।

–মামা দুইটা চা দিয়েন।
–আইচ্ছা খালা।

আমি চায়ের অর্ডার দিয়ে ওনাদের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি কোন একটা কথা বলছেন আর খুব হাসছেন।শিবলি ভাই ও হাসছে।ওনার হাসি দেখে আরো রাগ বেড়ে গেলো আর মাথায় খেলে গেলো এক দুষ্টু বুদ্ধি………………..

চলবে……..প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১১

–এই নেন আপনার চা।

উনি হাত বাড়িয়ে চা নিলেন।শিবলি ভাইর সাথে আবার কথা বলা শুরু করলেন।আমি তখন এক পা দু পা পিছাচ্ছি আর হাসি আটকানোর চেষ্টা।শুধু ভাবছি একবার মুখে দে ব্যাটা তারপর বুঝবি।উনি এক চুমুক চা নিলেন,,
–ইয়াক থু…কি এনেছো এটা?
–কেন ভাইয়া চাআআআআআআআআআ….
–এটা চা না গুড়ের সরবত?আল্লাহ গো আল্লাহ…

(ওনার মুখের অবস্থা দেখে খুব হাসি পেলো।সবাই ভাবছেন তো উনি চিনি কম চা বলার পরও এতো চিনি কিভাবে আসলো?দুষ্টুমিটাতো এখানেই করেছি।
ফ্লাশব্যাক:

–মা দুইটা চা দিয়েন।
–আইচ্ছা খালা
–একটাই চিনি কম হবে আর একটাই স্বাভাবিক।

আমি চায়ের অর্ডার দিয়ে ওনাদের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি কোন একটা কথা বলছেন আর খুব হাসছেন।শিবলি ভাই ও হাসছে।ওনার হাসি দেখে আরো রাগ বেড়ে গেলো আর মাথায় খেলে গেলো এক দুষ্টু বুদ্ধি|

–মামা শুনেন,আমার একটু ভুল হয়েছে।চিনি কম না বেশি হবে।
–আইচ্ছা।

আজ ব্যাটারে চিনি বেশি খাইয়ে মারবো।)

বর্তমান,,
–কি হয়েছে ভাইয়া আপনি এমন করছেন কেন??
–এতো মিষ্টি কেন চা?তোমাকে না বললাম চিনি কম আনবা।
–আমি তো চিনি কমই বলেছিলাম।দোকানদার কি শুনেছে কি জানি।

উনি চায়ের কাপ নিয়ে পেঁচার মতো তাকালেন আমার দিকে তারপর দোকানে গেলেন
–মামা কি দিছ এটা?এতো চিনি কেন?
–কেন মামা কি হয়েছে?
–চিনি কম দিতে বলা হয়েছিলো তো।
–কই মামা কেউ তো বলে যায়নি চিনি কম দিতে।
–কেন একটা ২০/২১ বছর বয়সী মেয়ে তো বলে গেলো।
–ওহ হ্যা হ্যা,,একখান আপা আইছিলো তো কিন্তু উনি তো কইয়া গেলেন মামা অনেক মিষ্টি হবে চা।

উনি আমার দিকে রেগে তাকালেন,আমি শুকনো ঢোক গিললাম।তারপর ৩২ দাতকপাটি বের করে হেসে দিলাম।আমার হাসিতে উনি হয়তো আরো খেপে গেলেন।আমি মনে মনে বেশ আনন্দ পেলাম।উনি রেগে আমার দিকে তেড়ে আসছিলেন কিন্তু ভাগ্য ভালো ম্যাডাম ডাক দিলেন,এখনি বাস ছাড়বে নাকি।আমি আর এক মিনিট ও অপেক্ষা না করে বাসে উঠে গেলাম।আমি সিটে বসেছি উনি ও বসলেন।উনি রাগে ফুসতেছে আর আমি মুখ টিপে হাসছি।

আধা ঘন্টা মতো পরে আমরা পৌছে গেলাম।বাস থেকে নেমেই আমরা তাবু বানিয়ে নিয়েছি থাকব বলে।প্রথমে গেস্ট হাউজ ভাড়া করা হলেও ওই অসভ্যটা নাকি বলেছে তাবু করে থাকতে হবে।ক্যাম্পাসের সবার পছন্দের ছাত্র বলে স্যার ম্যাডাম ও না বলতে পারিনি।গেস্ট হাউজের বাইরেই তাবু আমাদের কিন্তু খাওয়া দাওয়া গোসল সব গেস্ট হাউজেই।আমার একটু রাগ হলো।প্রথমত আমি আগে কোনদিন তাবুতে থাকিনি।আর দ্বিতীয়ত সবই যখন গেস্ট হাউজে তাহলে রাতটাও তো ওখানে থাকা যায়।একেক তাবুতে দুই জন করে থাকবে।আমি আর মীরা একটা তাবু নিয়ে নিয়েছি।ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়েই দেখি পাশের তাবু থেকে শিবলি ভাই বের হচ্ছে।আমাদের দেখে দাড়িয়ে পড়লো উনি।

–আরে ফুলকলি তোমরা বুঝি এই তাবুতে?
–জ্বি
–যাক ভালোই,আমি আর সৌভিক তোমাদের পাশের টাতেই থাকবো।

কথাটা বলে উনি মুচকি হাসলেন,আমার তো মাথায় হাত,এখানেও পিছু ছাড়লো না এই পোলা।আমি আর মীরা থাকা অবস্থায় উনি তাবু থেকে বের হলেন।নেভি ব্লু টি-শার্ট,শর্ট জিন্স,আর ভেজা চুল কপালে এসে পড়েছে দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেই গোসল করেছে।হাতে বেল্টের ঘড়ি পরতে পরতে বের হলো।ওনার এমন লুক দেখে আমি আর মীরা হা করে তাকিয়ে থাকলাম।উনি আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলেন আমরা তাও তাকিয়ে থাকলাম।
–দোস্ত…
–হুউউম
–সৌভিক ভাই অনেক কিউট তাই না?ঠিক যেন চকলেট বয়।
–হুম,ক্রাশ খাওয়ার মতো।

আমার মুখে ক্রাশ কথাটা শুনে মীরা চোখ বড়বড় করে তাকাই।
–এই তুই কি বললি?
–কি বললাম?
–সৌভিক ভাই ক্রাশ খাওয়ার মতো?কিন্তু আমি জানতাম তুই ওনাকে সহ্য করতে পারিশ না।

আমি থতমত খেয়ে গেলাম।
–আ আমি কখন বললাম ওটা?তুই ভুল শুনেছিস
–না না নাআআআআআ..আমি ঠিক শুনেছি।তুই বলেছিস।
–না বলিনি।

আমি আর দাড়ালাম না ওখানে চলে গেলাম মীরাও আমার পিছু পিছু আমি বলেছি সেটা বলতে বলতে আসছে।সকালের নাস্তা করার পর এবার ঘুরতে যাওয়ার পালা।আমরা সবাই রেডি হয়ে দাড়িয়ে আছি।আমার চোখ বারবার ওনার দিকে যাচ্ছে।উনি হোয়াইট টি-শার্ট,থ্রী কোয়াটার প্যান্ট,চোখে ব্লাক সানগ্লাস হাতে ডায়ালের ঘড়ি।উফফ!!আমি তো ফিদা হয়ে যাচ্ছি।অনেক চেষ্টা করছি তাকাবো না কিন্তু তাও চোখ চলে যাচ্ছে।বাতাসে যখন ওনার চুলগুলো উড়ছে উনি ডান হাত দিয়ে চুলগুলো সরাতে ব্যস্ত এই মুহুর্তে ওনাকে আরো সুন্দর লাগছে।আমি নিজের চোখকে কন্ট্রোল করার জন্য চোখ সরালাম তারপর দেখি এখানে উপস্থিত সব মেয়েই ওনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।অবশ্য ওনার দুই মেয়ে বন্ধু তাকিয়ে নেই।মেয়ে গুলোর ওপর খুব রাগ হলো।

–আমার ক্রাশের দিকেই তাকানো লাগে সবার?(আনমনেই বলে ফেললাম)

কথাটা বলার সাথে সাথে জ্বিহবায় কামড় দিলাম।কি বললাম এটা আমি?ছি ছি।ওই অসভ্যটা কি করে আমার ক্রাশ হতে পারে?ইমপসিবল…নিহীন কি উল্টা পাল্টা ভাবছিস এ?ছি ছি ছি….

স্যার ম্যাডাম চলে এলেন।
স্যার:গুড মর্নিং গার্লস এন্ড বয়েজ।

–গুড মর্নিং স্যার।

–আই হোপ তোমরা সবাই ফ্রেস হয়ে নিয়েছো,নাস্তা ও হয়েছে এবার আমরা ঘুরতে বের হবো।

–ইয়েএএএএএএএ…….

–কুল গায়েজ কুল।

–স্যার আজ কোথায় কোথায় যাবো?

–আজ সারাদিন আমরা পাশের জঙ্গল টা ঘুরবো।

–হুরররররেএএএএএএএএ…(সবাই আনন্দে চিল্লিয়ে উঠলো)

–কিন্তু সবাই একসাথে থাকবে না।তোমরা ২০ জন ২ টা গ্রুপ করে নাও।

–ওকে স্যার।

–বাবা সৌভিক তুমি ডিসাইড করো দুইটা টিমে কে কে থাকবে।তুমি একটা টিমের গ্রুপ লিডার হও আরকেটা শিবলি হোক।

–ওকে স্যার।

–স্যার আমি আর সৌভিক এক টিমে থাকলে হয় না?আমি আর ও তো সবসময় এক সাথে থাকি,ওরে ছাড়া আমার ভালো লাগে না।(শিবলি ভাই মুখ শুকনো করে বলেন)

–আহ!শিবলি তুমি এমন কথা বললে হবে?তুমু যদি এমন কথা বলো জুনিয়াররা তো তাহলে আরো বাহানা করবে(স্যারের বকুনিতে ওনার মুখ আরো শুকিয়ে গেলো)বাবা সৌভিক এবার তাহলে দল ভাগ করো।

উনি স্যারের কথা মতো দুইটা ছেলে বেছে নিলেন তারপর শিবলি ভাই দুটো ছেলে বেছে নিলেন সৌভিক ভাই আবার দুটো ছেলে বেছে নিলেন বাকি দুটো ছেলে শিবলি ভাইর টিমে গেলো।এবার মেয়েদের চুজ করার পালা।সৌভিক ভাই খুব এটিটিউড নিয়ে সামনে আসলেন।কলারটা ঠিক করে,,

–সো গার্লস কে কে আমার গ্রুপে আসতে চাও হাত তোলো।

আমি বাদে সবাই হাত তুললো,মীরাও হাত তুলেছে।আমার যে ইচ্ছা করেনি তা না কিন্তু আমি হাত তুললাম না।উনি মুচকি হাসলেন।মেয়েরা তো হা হয়ে গেলো।ওনার মুচকি হাসিটাই কি আছে বুঝি না।সবাই ফিদা হয়ে যায়।উনি রুম্পা আপুকে ওনার গ্রুপে নিলেন আর টিনা আপু গেলো শিবলি ভাইর গ্রুপে।বাকি থাকলো আরো ৮ টা মেয়ে।সবাই চাচ্ছে ওনার গ্রুপে যেতে,সবাই মনে মনে হয়তো এটাই প্রে করছে উনি যেন তাকে চুজ করে।উনি এর মাঝেই বলে উঠলেন,

–হে ইউ,,মিস ব্লাক কুর্তি তুমি আমার গ্রুপে থাকবে।

সবাই আশেপাশে তাকালো কে ব্লাক ড্রেসে আছে দেখার জন্য।আমিও তাকালাম কিন্ত কাউকেই তো ব্লাক ড্রেসে পেলাম না।উনি এবার হাত দিয়ে ইশারা করলেন।

–হে ইউ কথা কানে যায় না?

ওনার হাতটা তো আমার দিকে।সবাই আমার দিকে তাকালো।আমি আশে পাশে তাকিয়ে নিজের ড্রেসের দিকে তাকিয়ে শকড,আমিই তো ব্লাক কুর্তি পরে আছি।উনি আমাকে চুজ করলেন।আমি কিভাবে রিয়াক্ট করবো বুঝতেছি না।

–তাড়াতাড়ি আসো।

–জ্বি

উনি আমাকে সিলেক্ট করাই অনেকে রাগি চোখে আমার দিকে তাকালেন।আমার খুব হাসি পেল।এক এক করে গ্রুপ ভাগ হয়ে গেলো।মীরা আছে শিবলিলি ভাইর গ্রুপে।স্যার ম্যাডাম আমাদের সাথে এলো না।আমরা দুই গ্রুপ আলাদা আলদা ঘুরতে বের হয়ে গেলাম।আমি আর রুম্পা আপু বাদে গ্রুপের বাকি তিনটা মেয়ে তো ওনার গায়ের সাথে চিপকে আছে একদম।ওনার ডি.এস.এল.আর এ সবার ছবি তুলে দিচ্ছে আশে পাশের প্রকৃতির ছবি ও তুলছে উনি।আমি আছি নীরব দর্শকের মতো।মীরাকে মিস করছি ও থাকলে বোর লাগতো না।আবার শাওন থাকলেও হয়তো ভালো হতো।আমরা অনেকক্ষন ঘুরে একটা নদীর কাছে এলাম।উনি আমাদের সবাইকে এখানে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিতে বললো,যে যার মতো বসল।এরি মাঝে উর্মি নামের থার্ড ইয়ারের মেয়েটা ওনার কাছে গিয়ে হাত জড়িয়ে ধরলো,

–ভাইয়া ভাইয়া ওইখানে দাড়িয়ে আমার একটা ছবি তুলে দেন না প্লিজ…

মেয়েটা এভাবে হাত ধরায় উনি হয়তো আনকমফোর্টেবল ফিল করলেন।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন।কিন্তু মেয়েটা কথা শুনার বান্দি না ওনাকে রিতীমতো জোর করছে।উনি বিরক্ত হচ্ছে তাও মেয়েটা হাত ছাড়ে না।ব্যাপারটা আমার একটু ভালো লাগলো না।কেউ যখন চাইছে না তখন তাকে এতোটা জোর করার কোন মানেই হয় না।মেয়েটার দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছি।উনি হটাত আমার দিকে তাকালেন।আমার রাগি লুকটা ওনাকেউ দিলাম।উনি মিচকি হেসে চোখ সরিয়ে নিলেন।তারপর,,

–আচ্ছা চল তোমার ছবি তুলে দিই।

উনি মেয়েটার হাত ধরে নদীর পাড়ে গিয়ে ছবু তুলে দিচ্ছে।হাত দিয়ে এংগেল ঠিক করে দিচ্ছে,পোজ নিতে বলছে।মেয়েটা তো খুশিতে গদগদ।উনি মেয়েটার চুল ঠিক করে দিচ্ছে,ঘাড়ে হাত দিয়ে এভাবে ওভাবে দাড়াতে বলছে।আর এদিকে আমার রাগ ততো বাড়ছে,কেন রাগ হচ্ছে আমার জানা নেই।উনি একবার আড়চোখে আমার দিকে তাকালেন আমার মুখ দেখার পর উনি আরো বেশি চিপকে থাকলেন মেয়েটার সাথে।সারাদিন ঘুরলাম আমরা মেয়েটা ওনার সাথে আঠার মতো লেগে ছিলো উনিও খুব হেসে হেসে কথা বলেছে।আমি বার বার ওনাদের দেখেছি আর কোন অজানা কারনেই মন খারাপ আর রাগ করেছি।সন্ধ্যা বেলা আমরা তাবুতে ফিরি।রাতে ডিনার শেষ বাইরে হৈচৈ শুনতে পাই।আমি আর মীরা শুয়ে ছিলাম তাবুর ভিতর,রুম্পা আপু এসে আমাদের ডেকে যায় বাইরে নাকি গানের আসর বসেছে আর তার সাথে কাঠ দিয়ে আগুন জালানো তো আছেই।মীরা খুব এক্সাইটেড হয়ে বেরিয়ে আসলো,আমার মনটা এখোনো খারাপ তাও সিনিয়র এসে ডেকে গেছে তাই বাধ্য হয়ে গেলাম।
আমি মীরা পাশাপাশি বসলাম।আশেপাশে চোখ ঘুরালাম কিন্তু ওই অসভ্যটাকে দেখলাম।রুম্পা আপু শিবলি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

–এই শিবলিলি সৌভিক কই ওরে ডাক দে।ও না আসলে তো প্রোগ্রাম শুরু করা যাবে না।

শিবলি ভাই ডাকার আগেই উনি তাবু থেকে বের হয়ে এলেন।

–হে গাইস তোমরা চলে এসেছো..
–হ্যা ভাই অনেক আগেই(রুম্পা আপু উত্তর দিলো)
–তাহলে বসে আছিস কেন প্রোগ্রাম শুরু না করে?
–আপনার জন্যই স্যার,যতোই হোক আপনি হলেন ক্যাম্পাসে ফেমাস বয় লাইক সেলিব্রেটি।আপনাকে বাদ দিয়ে কি শুরু করা যায়?
–শিবলি ফাও বকিস না তোর জন্যই ভালো হবে সেটা।

রুম্পা আপু এবার উঠে দাড়ালেন।
–উফফ।।তোরা থাম তো অনেক হয়েছে এবার শুরু করা যাক।আমাকে এনাউন্স করতে দে।
–তুই করবি?(শিবলি ভাই ভ্রু কচুকে বলেন)
–হুম আমি করবো।কেন তোর সমস্যা?
–না না আমার কি সমস্যা?কর যা করবি।

রুম্পা আপু খুব সুন্দর করে এনাউন্স করে যে আমাদের এই ট্যুরে এখন গানের আসর বসবে সবাইকে গান গাওয়া লাগবে কেউ চাইলে কবিতাও বলতে পারে।সবাই হাত তালি দেই।রুম্পা আপু ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়ে।

শিবলি এবার বলে ওঠে,
–আচ্ছা গাইজ তাহলে আমিই গান শুরু করি।

রুম্পা আপু,টিনা আপু আর সাদাফ ভাইয়া এক সাথে বলে ওঠে,
–নাআআআআআআআয়আ….
–কেন?
–তোর গান শুনলে এখানে কেউ আর ভালো থাকতে পারবে না।হয় অজ্ঞান হয়ে যাবে তা না হলে আশপাশ থেকে যে কুকুর ছুটে আসবে তার তাড়া খাবে।(টিনা আপু কথাগুলো বলে হেসে দেয়)
–এই এই তুই এভাবে বললি কেন?আমি কি খারাপ গাই?
–যে সুন্দর গাও তুমি,আমার মনে আছে ফার্স্ট ইয়ারে তোর গানের ঠেলায় একবার কুত্তা তাড়া করেছিলো আমাদের(রুম্পা আপু কথাটা বলেই বুকে হাত দেয়)

সবাই হেসে দেয়।উনি রাগ করে বলে,
–ঠিক আছে গাইবো না যা।জুনিয়র দের সামনে এতো অপমান আর নেয়া যায় না।টিনা তুই গা বরং তোর গানের গলা তো ভালো।

টিনা আপুকে আমরা সবাই জোর করি।টিনা আপুর গলা সত্যিই অনেক সুন্দর এর আগেও ওনার গান শুনেছি।

টিনা আপু আমারো পরানো যাহা গানটা শুরু করলেন আর সাদাফ ভাই গিটার বাজাচ্ছিলেন খুবই চমতকার লাগছিলো ওনার গান শুনতে।ওনার গান শেষে আরো কয়েকজন গান গাইলেন কবিতাওও বললেন কয়েকজন।রুম্পা আপু এবার আমার দিকে তাকালেন,

–নিহীন তুমি এবার একটা গান গাও।
–আমি?
–হ্যা তুমি।
–না না আপু আমি পারবো না।
–পারবো না বললে হবে না তোমাকে গাইতেই হবে।
–আমি পারিনা আপু।
–এই নিহু মিথ্যা বলছিস কেন তুই তো গান পারিস স্কুলে,কলেজে তো কতো গান গেয়েছিস,প্রাইজ ও পেয়েছিস।

আমি মীরার হাতে চিমটি কাটলাম।এবার রুম্পা আপু আরো চেপে ধরলো আমায় সাথে টিনা আপু,শিবলি ভাইয়াসহ সবাই কিন্তু ওই অসভ্য টা চুপ থাললো।বাধ্য হয়ে আমাকে ওকে বলতে হলো।শিবলি ভাইয়া সাদাফ ভাইয়ার থেকে গিটার নিয়ে নিলেন।
–ফুলকলি তুমি গাও আমি গিটার বাজাচ্ছি

আমি চোখ বন্ধ করে গাওয়া শুরু করলাম,

আজ ঠোটের কোলাজ থামালো কাজ মন তোমাকে ছুয়ে দিলাম,
না বুকের বোতাম হারানো খাম আজ কেন যে খুজে পেলাম………
দিন এখনো রঙিন,এ দিন এখনো রঙিন তাকে আদরে তুলে রাখলাম..
ওও আজ ঠোটের কোলাজ থামালো কাজ মন তোমাকে ছুয়ে দিলাম,
না বুকের বোতাম হারানো খাম আজ কেন যে উহুমউউউ….

মন রাখা আছে কোন ইশান কোনের বিষন্নতাই,চোখ কাটাকুটি হোক,সহজ খেলার সময় কোথায়????
এই নরম অসুখ হাওয়া হাওয়ায় সেরে যাক,ফের সন্ধ্যে নামুক,ব্যাথা তোমায় ছেড়ে যাক..
চুপ মুহুর্ত চুপ ঠোটের তুরুপ এই তোমাকে ছুয়ে দিলাম,না বুকের বোতাম হারানো খাম আজ কেন যে খুজে পেলাম……..

___________________________

___________________________

___________________________

গান শেষ করার সাথে সাথে হাততালি শব্দ পেলাম চোখ খুললাম সবাই হাত তালি দিচ্ছে।অনেক ভালো গেয়েছি জানাচ্ছে শুধু মাত্র একটা ব্যাক্তিই চুপচাপ বসে আছে।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here