প্রেম পাগলামি পর্ব ১২+১৩

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১২

গান শেষ করার সাথে সাথে হাততালি শব্দ পেলাম চোখ খুললাম সবাই হাত তালি দিচ্ছে।অনেক ভালো গেয়েছি জানাচ্ছে শুধু মাত্র একটা ব্যাক্তিই চুপচাপ বসে আছে।

–ফ্যান্টাসটিক নিহীন অনেক সুন্দর।
–হ্যা নিহীন যাস্ট ওয়াও।
–নিহু ফাটাফাটি।

–থ্যাঙ্ক ইউ গায়েজ।

আমি ওনার দিকে তাকালাম কিন্তু কোন রিয়াকশন দেখলাম না,রুম্পা আপু তখন ওনাকে জিজ্ঞেস করলেন,
–সৌভিক গানটা নিহীন বেশ ভালোই গেয়েছে বল?
–……………..
–কি রে চুপ আছিস কেন?
–আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি উঠলাম।

উনি গটগট করে চলে গেলেন।কারোর কোন কথাই শুনলেন না।উনি যাওয়ার পর বাকিরাও উঠে পড়লো।আমি আর মীরা তাবুর ভিতরে এসে শুয়ে পড়লাম।অনেক রাত হয়ে গেছে কিন্তু ঘুম আসছে না ভালো লাগছে না।মীরা ঘুমিয়ে গেছে তাই ওর সাথে গল্প ও করতে পারছি না।ফোন হাতে নিয়ে ডাটা অন করলাম কিন্তু নেটওয়ার্ক E।ধুর কিচ্ছু ভালো লাগছে না।না পেরে ফোনে গেইম খেলতে লাগলাম।আমি খুব মনযোগ দিয়ে গেইম খেলছি হটাত একটা গান কানে আসলো।গানটা কাছাকাছিই কেউ গাচ্ছে

~এখন আমার ভালো থাকা আমার ওপর নেই,

এখন আমার আমি বাচে ঘিরে তোমাকেই,,

আমি পুড়ে যায় মরে যায় তোমার হাসি শুন্যতাই,

আমি হেসে যাই ভেসে যাই তোমার স্বপ্নের পূর্ন্যতাই…..

গলাটা আমার চেনা।হ্যা এটা তো সেই গলা।তাহলে কি উনি এখানেই আছে??আমি ছুটে বাইরে গেলাম।গানটা এখনো হচ্ছে।কিন্তু হটাত করেই গানটা বন্ধ হয়ে গেলো।আমি আশেপাশে খুজলাম কাউকে পেলাম না।খুব খুজলাম কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই বাধ্য হয়ে ফিরে আসছিলাম তখনি কারোর চিতকার শুনলাম।আমি পিছু ঘুরতেই দেখি সৌভিক ভাই নিচে পড়ে আছে।উনি এমন আওয়াজ করছেন যে কোন কিছুতে হয়তো ব্যাথা পেয়েছে।আমি দৌড়ে গেলাম আমাকে দেখে উনি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন তারপর কোন কারন ছাড়ায় রাগ করে উঠলেন,,

–এখানে কি তোমার এতো রাতে?যাও ভিতরে যাও…
–কি হয়েছে আপনার?
–কিছু হয়নি।তুমি যাও তো।
–না যাবো না।দেখি কি হয়েছে…

আমিও নিচে বসলাম,উনি পা ধরে বসে ছিলেন।আমি ওনার পায়ে হাত দিতে গেলাম উনি দিতে দিলেন না।আমি জোর করে দেখলাম।

–একি আপনার তো পায়ে কেটে গেছে,ব্লিডিং হচ্ছে তো।
–ও কিছু না তুমি যাও।
–আপনার পা কেটে গেছে আর আপনি আমাকে বলছেন চলে যেতে?
–ঝামেলা করো না তো যাও,এটা তো সামান্য কাটা।
–ঝামেলা আমি না আপনি করছেন,আর হোক সামান্য কেটে তো গেছে।চুপচাপ এখানে বসে থাকুন আমি ফার্স্ট এইড বক্স আনছি।
–তার কোন দরকার নেই
–দরকার আছে কি নেই সেটা আমি বুঝবো।

আমি ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ওনার কাছে গেলাম ওনার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।উনি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠছেন।
–নিন হয়ে গেছে।
।।

আমি হাসি মুখে ওনার দিকে তাকালাম কিন্তু উনি খুব শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে।ওনার চোখের পলক পড়ছে না।কিচ্ছুক্ষন পর ওনার চোখের কোনে পানি চলে আসে।
–আপনি কি কাদছেন?অনেক ব্যাথা লেগেছে বুঝি?
–……………..
–ব্যান্ডেজ করার সময় কি আমি আরো ব্যাথা দিয়েছি?সরি যদি আমি ব্যাথা দিয়ে থা….

আমার কথা শেষ হতে পারলো না উনি ওনার দুই হাত দিয়ে আমার হাত দুটো খুব শক্ত করে ধরে ফেললেন।এতোটাই শক্ত করে ধরেছেন যেন ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাবো।
–তুমি কি কিছুই বুঝতে পারোনি??
–মানে কি বুঝবো?
–আমার অনেক কষ্ট হয় জানো।আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না।আই এম সরি,সরি ফর এভরিথিং।আই ডিডিন্ট ওয়ান্ট টু হার্ট ইউ,সরি….

উনি কেদে দিলেন।আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
–আপনি কি বলছেন এসব?আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।
–নিহীন আমি তোমাকে………
–আপনি আমাকে?

উনি সামনের দিকে তাকিয়ে আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন।
–কি হলো বলুন,আপনি আমাকে কি?

উনি চোখ মুছে ফেললেন।তারপর আবার সামনের দিকে তাকালেন।আমিও ওনার চোখ ফলো করে তাকাই,,মীরা দাড়িয়ে।

–মীরা তুই এখানে?
–তোকে পেলাম না ভিতরে তাই…কি হয়েছে সৌভিক ভাইয়ার উনি কাদছেন কেন?
–আমার কিছু হয়নি মীরা,জাস্ট একটু পা কেটে গেছে।

উনি পকেট থেকে ফোন বের করে শিবলি ভাইয়াকে কল দেন শিবলি ভাইয়া এসে ওনাকে দাড়াতে সাহায্য করে।উনি শিবলি ভাইয়ার কাধে হাত রেখে হাটা শুরু করেন।
–কথাটা কিন্তু শেষ করলেন না।

উনি কিছু বললেন না চলে গেলেন।রাতে আমার আর ঘুম হলো না।কি বলতে চাইছিলেন উনি?উনি আমাকে কি?উনি কি আমাকে ভালোবাসেন??ধুর!আমি তোমাকে বলা মানেই যে পরেরটুকু ভালোবাসি হবে তার কোন মানে নেই।

সারারাত ঘুম না হওয়ায় সকাল সকাল তাবু থেকে বের হয়ে গেলাম,ঠিক সকালও না ভোর বলাই ভালো।বাইরে কেউ নেই,অবশ্য এতো সকালে কেউ উঠার কথাও না।আমাদের তাবু থেকে একটু দূরে গেলেই নদী আছে,নদীর দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।গায়ে একটা পাতলা চাদর গায়ে দিয়ে হাটছি,কুয়াশা প্রচুর তাই ঠিকঠাক রাস্তা ও বুঝতে পারছি না।হটাত করেই কিছু একটাই পা স্লিপ করে পড়ে যেতে যায়,চোখ বন্ধ করে ফেলেছি।কিন্তু না কিছু একটার সাথে বেধে গেছি আমি সেটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

–মা গো,আজ বুঝি মরেই যাবো।
আল্লাহ এবারের মতো আমাকে বাচিয়ে দাও।আমি জিনিসটা আরো শক্ত করে ধরলাম।অনুভব হলো আমকেও কিছু একটা জড়িয়ে ধরছে নাকি?আমি চোখ না খুলেই চিল্লাতে লাগলাম,,
–মাগো ভুত ভুত।কে আছো বাচাও আমায়।ভুত এসেছে ভুত।
–হাহাহাহাহাহাহহাহাহাহাহহহাহাহহহহহহ….

কারোর হাসির শব্দে এক চোখ মিটমিট করে তাকালাম।একি সৌভিক ভাই কেন??উনি এখনো হাসছেন।
–হাসছেন কেন আপনি?
–তোমাকে দেখে।
–আমাকে দেখে??আমি কি জোকার যে আমাকে দেখে হাসি লাগছে?
–জোকার না কিন্তু কম ও না।হাহাহাহাহাহহহহ…
–কি?
–আচ্ছা তুমি এতো ভীতু কেন?আমাকে কি ভুত মনে হয় তোমার হাহাহাহাহহাহহাহাহহহহহ…
–আমার কি দোষ আমি কি দেখেছি এটা আপনি তা।আর এমনিতেই পড়ে যাচ্ছিলাম আমি গাছ ভেবে জড়িয়ে ধরি তাই বলে আপনিও জড়িয়ে ধরবেন??
–ওহ…তুমি জড়িয়ে ধরলে দোষ নেই আমি জড়িয়ে ধরলেই দোষ?
–হ্যা দোষ…
–যাও ছেড়ে দিলাম।

উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন আর আমি সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে পড়লাম এক গর্তে।
–ও মা গো।আমার কোমর টা গেলো গো।অসভ্য ব্যাটা আমার মাজাটাই ভেঙ্গে দিলো।
–কি হলো গো তোমার?ওভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?(উনি ঢং করে বলেন)
–আমাকে ফেলে দিয়ে এখন আবার জিজ্ঞেস করছেন আমি চিল্লাচ্ছি কেন??
–যাক বাবা!তুমিই তো বললে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরলে দোষ তাই তো আমি…….যাই হোক ব্যাথা পেয়েছো বুঝিইইইইইইইইই???

উনার মশকরা সহ্য হলো না আমার,মনে মনে ওনাকে শিক্ষা দেয়ার ধান্দা খুজে বের করলাম।উনি এখনও মুখ টিপে হেসেই চলেছে।
-দাড়া শালার অসভ্য তোর মজা বুঝাচ্ছি(মনে মনে বললাম)

–কেমন মানুষ আপনি একটা অবলা অসহায় মেয়ে গর্তে পড়ে গেছে আর আপনি সাহায্য না করে দাড়িয়ে আছেন?আপনি নাকি অনেক ভদ্র ছেলে আপনার নিয়ে তো সবাই মাতামাতি করে তাহলে এখন একটা মেয়ে বিপদে পড়েছে আর আপনি সাজায্য না করে দাড়িয়ে আছেন?আসলে আপনি ওতোটাও ভালো না,ভালো হলে ঠিকি আমাকে সাহায্য করতেন এভাবে….

–থাক অনেক হয়েছে এবার থামো।

উনি হাত বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে।
–কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?হাতটা ধরো আর উপরে আসো।

আমি ওনার হাতটা ধরি কিন্তু উনি আমাকে উপরের দিকে টান দিলে আমি ওনাকে নিজের দিকে টান দিই।
–একি কি করছো নিজের দিকে টানছো কেন আমায়?ওরকম করো না তা না হলে তো আমিও পড়ে যাবো।

আমি আর জোরে টান দিই।
–এই এই পড়ে যাবো হাত ছাড়ো আমার।আরে কি করছো এসব?
–বড্ড হাসা তাই না??এবার যদি আপনাকে না ফেলেছি তাহলে আমার নাম নিহীন না।
–এই না প্লিজ ওমন করো না।

আমি ওনাকে নিজের দিকে টানছি আর উনি ওমন করো না করো না করছে।আমার খুব হাসি পাচ্ছে ওনার এমন ভয় দেখে।একটা সময় উনিও স্লিপ করেন আর গর্তে এসে পড়েন।

–ইয়েএএএএএএ,,আই ডু ডিস।হুরররেএএএএএএ।

আমি তো লাফাচ্ছি।এমন একটা ভাব রে রাজ্য জয় করে ফেলেছি।কিন্তু হটাত উনি আহ করে উঠলেন।

–আহ নিহীন।কি করলে এটা?তুমি জানো না আমার পা কেটে গেছে?

উনি মাটিতে পা ধরে বসে আছেন।আমি তাকালাম ওনার পা থেকে হালকা হালকা ব্লিডিং হচ্ছে,ক্ষতটা খুব গভীর না হলেও বেশি পুরনো তো না।আমি ওনার খুব কাছে গিয়ে বসে পড়লাম।
–সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি।আমার একদমি খেয়াল ছিল না আমি তো শুধু আপনাকে একটু শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম।

–শিক্ষা?

–হুম শিক্ষা।আপনি আমকে দেখে হাসছিলেন তার শিক্ষা।

–আল্লাহ গো!!এ মেয়েরে নিয়ে কি করবো(উনি কপালে হাত দিয়ে বলেন)

আমি ওনার পায়ের দিকে তাকালাম রক্তে ব্যান্ডেজ লাল হয়ে যাচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি ওনার পায়ে হাত দিলাম।
–এই কি করছো এখন আবার পায়ে হাত দিচ্ছো কেন?
–চুপ থাকেন।

আমি ওনার পায়েরর ব্যান্ডেজ খুলছি আর উনি এ করছি কেন ও করছি কেন তাই বকেই যাচ্ছে।আমার খুব রাগ হয়ে গেলো।আমি হাত দিয়ে ওনার মুখ চেপে ধরলাম।
–চুপ আর একটা কথা বলেছেন তো এক থাপ্পড় দেবো।মনে আছে তো আমার থাপ্পড়?যদিও আপনিই আমাকে বেশি মেরেছেন কিন্তু ভুলবেন না আমিও কিন্তু কারোর পরোয়া করি না।সেই প্রথম দিনের কথা আছে মনে??কি হলো বলুন মনে আছে??

উনি উউউ শব্দ করতে লাগলেন।
–কি ওমন করছেন কেন?

উনি চোখ দিয়ে ওনার মুখের ওপর থাকা আমার হাত ইশারা করেন।আমি সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিই।
–তুমিই তো মুখের ওপর হাত দিয়ে ছিলে তাহলে কিভাবে বলবো??(উনি একদম বাচ্চাদের মতো করে কথাটা বলেন,আমার খুব হাসি পেয়ে যায় কিন্তু হাসি না)
–আচ্ছা আচ্ছা।এবার বলেন।
–মনে আছে।
–তাহলে চুপ করে বসে থাকেন।

উনি আর কথা বলে না।বাচ্চাদের মতো বসে থাকে।আমি আমার ওড়নার এক কোনা ছিড়ে ওনার পায়ে বেধে দিই।ওড়নাটা বাধার সময় আড়চোখে ওনার দিকে কয়েকবার তাকাই।উনি বাচ্চাদের মতো মুখ গোমড়া করে বসে আছে,এমন ভাব যে আমি ওনার চকলেট কেড়ে নিয়েছি আর বলেছি চুপ করে বসো তা না হলে চকলেট দেবো না।খুব হাসি পাচ্ছে,এই মানুষটার এই রূপটা আজ প্রথমবার দেখলাম এর আগে প্রতিবারি তার বিশ্রী একটা রূপ দেখেছি আমি।
#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১৩

আমি আমার ওড়নার এক কোনা ছিড়ে ওনার পায়ে বেধে দিই।ওড়নাটা বাধার সময় আড়চোখে ওনার দিকে কয়েকবার তাকাই।উনি বাচ্চাদের মতো মুখ গোমড়া করে বসে আছে,এমন ভাব যে আমি ওনার চকলেট কেড়ে নিয়েছি আর বলেছি চুপ করে বসো তা না হলে চকলেট দেবো না।খুব হাসি পাচ্ছে,এই মানুষটার এই রূপটা আজ প্রথমবার দেখলাম এর আগে প্রতিবারি তার বিশ্রী একটা রূপ দেখেছি আমি।

–নিন হয়ে গেছে।

উনি এখন বাচ্চাদের মতো করেই তাকিয়ে আছে কিন্তু এখন বেশিই গাল ফুলিয়ে আছে।ওনার নাক টা লাল হয়ে আছে ঠিক যেম পাকা টমেটো,,আমার খুব হাসি পেয়ে গেলো।

–হাহাহাহাহাহাহাহাহাহহহহ….
–হাসছো কেন?
–আপনার নাকটা টমেটো হয়ে গেছে একদম।হাহাহাহহহহহহহ…
–কিহ?
–জ্বিইইই।
–ফালতু ইয়ারকি মারবা না এখান থেকে উঠবা ক্যামনে তাই ভাবো।
–কি ভাবে আর উঠবো?লাফ দিয়ে উঠবো
–ও মা!তাই নাকি?ভালো তো।যাও ওঠো…
–হ্যা ওয়েট…

আমি উঠে দাড়ালাম,ওনার দিকে এটিটিউড মার্কা হাসি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমার হাত পৌছালো না।লাফঝাপ মারার পরও উপরের মাটির টিকিটুকু ও আমার হাতের নাগাল পেল না।

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলাম।
–কি হলো ম্যাডাম আপনি নাকি লাফ দিয়ে উঠে যাবেন তা ওঠেন।
–…………….
–হাহাহাহহাহাহহাহহহহ……
–হাসবেন না একদম।আমাকে সাহায্য করেন।
–আমি কি সাহায্য করবো?
–কি সাহায্য করবেন মানে?উপরে উঠতেতে সাহায্য করবেন।
–কিন্তু আমার পায়ে তো অনেক ব্যাথা আমি তো উঠতেই পারবো না।
–মানে টা কি??তাহলে কি এখানে পড়ে থাকবো নাকি?
–আমার কোন অসুবিধা নেই,সকাল না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকাই যায়।কি সুন্দর একটা পরিবেশ।আহ!!মন চাই সারাজীবন এখানেই থেকে যায়।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে ৩২ টা দাত বেরিয়ে কেলানি দিলেন যা দেখে আমার রাগ উঠে গেলো।মন চাচ্ছে ওনার দাতে ঘুষি মেরে দাতগুলো ভেঙে দিই।
–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?তোমার কি রাগ হচ্ছে নাকি??

ওনার এই কথাটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।
–নাহ।রাগ হবে কেন?আমার তো ডান্স করতে ইচ্ছা করছে..
–রিয়েলি?ওয়াও।নাচো নাচো আমিও দেখি,এখানে বসে বসে টাইমটা আরো ভালো কাটবে।হিহিহিহিহিহহহ।।

আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না।সোজা ওনার কোলের ওপর উঠে জ্যাকেটের কলার চেপে ধরলাম।
–আমি মরছি আমার জ্বালায় আর আপনি মজা নিচ্ছেন?
–আমি তো…..
–চুপ একদম চুপ আর একটা কথা বলেছেন তো গলা টিপে দেবো বলে দিলাম।অসভ্য ব্যাটা,কোথায় এখান থেকে কিভাবে উঠবো সেই কথা ভাববে তা না ফালতু কথা বলেই যাচ্ছে।”আমার কোন অসুবিধা নেই,সকাল না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকাই যায়।কি সুন্দর একটা পরিবেশ।আহ!!মন চাই সারাজীবন এখানেই থেকে যায়।”মানে সবকিছুর একটা লিমিট থাকে কিন্তু আপনি লিমিটলেস প্রানী।
–আমি অসভ্য ব্যাটা?
–তা কি বেটি????(চিল্লিয়ে)
–এই না না।ছি ছি!তা হবো কেন?না মানে এখানে তো আমরা দুজনি আছি আমি তো কোন অসভ্যতামি করিনি কিন্তু তুমি সুযোগ বুঝে আমার কোলে উঠে পড়েছো।তাহলে অসভ্যতামি টা…….মানে বুঝোই তো….হিহিহিহিহহহহহ।

ওনার কথাই আমার হুশ ফিরলো।সত্যিই তো,আমি ওনার কোলের ওপরে উঠে গেছি।ছি ছি!লোকটা কি ভাবলো আল্লাহই জানে।আমি তাড়াতাড়ি কলার ছেড়ে দিয়ে কোল থেকে নেমে গেলাম।উনি এখনো মুচকি মুচকি হাসছেন।
–কি সমস্যা এভাবে হাসছেন কেন?
–না মানে ভাবছি যে আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে তোমার মতো ঝাসি কি রানীও নিজেকে সামলাতে পারে না।
–কি?দেখুন আমি মোটেও ইচ্ছা করে
–আরে বুঝি বুঝি,এখন তো ওমন কথা বলবাই যে রাগের মাথায় বুঝতে পারোনি।সবাই এমনটাই বলে।আমার মতো হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং,চার্মিং মাসকিউলার বডি ওয়ালা ছেলে দেখে যেকোনো মেয়েরই মনে ইচ্ছা জাগবে আমার কাছে আসার।

কথাগুলো বলে উনি বেশ ভাব নিয়ে কলার নাচালেন।
–হাহাহাহাহাহহাহাহহাহহাহাহাহহহহ….
–কি হলো হাসছো যে?
–আপনি আর হ্যান্ডসাম?আবার ড্যাশিং!হাহাহাহহাহহাহাহহাহহহহ।।নাইস জোক।আই থিঙ্ক ইট উইল বি দা জোক অফ দা ইয়ার।
–হুয়াট??জোক মানে টা কি?
–হায় আল্লাহ আপনি জোক মানে জানেন না?আপনি না ক্যাম্পাসের বেস্ট স্টুডেন্ট,সবার চোখের মণি তা সাধারণ একটা ইংলিশ এর বাংলা জানেন না।ছি ছি ছি,,,লজ্জা লজ্জা।
–হুয়াট দা হেল ইজ দিস!!জোক মানে জানবো না কেন আমি?আমি জানি জোক মানে কি।
–তাহলে আবার শুনছেন কেন জোক মানে কি?
–উফফ!এই মেয়ে তো খুব বেশি দুষ্টু।
–এই আমি একদম শান্ত,নম্র,ভদ্র একটা মেয়ে(আমিও এবার দাত বের করে ক্লোজ আপের এড দিই)
–থাক,তুমি যে কি তা আমার জানা আছে।দুষ্টু মেয়ে কোথাকার।এইবার সোজা কথায় হাসো।আমি হ্যান্ডসাম একথায় ওমন রিয়াক্ট করার কারন কি?
–কারন তো অনেক আছে।কোনটা শুনবেন তাই বলেন?
–সব শুনবো।
–না,আমার ওতো বলার সময় নেই।
–কেন সময় নেই কেন?বাড়িতে কি ৫/১০ ছেলেমেয়ে রেখে এসেছো যে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে তাদের খেতে দিতে হবে তাই কথা বলার টাইম নেই।
–একটু ভুল বললেন ওটা ৫/১০ না ১৫/১৬ হবে।

আমার কথায় উনি বিষম খেলেন আমি যে এমন একটা কথা বলবো উনি আশা করেননি হয়তো।
–কি ফাজিল মেয়ে রে বাবা।
–হিহিহিহিহহহহহহ..আমি অনেক ভালো মেয়ে।

উনি মুখটটা পেঁচার মতো করে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে রইলেন।১০ মিনিট মতো পর,,
–আচ্ছা আমরা কি এখানেই থাকবো?উপরে উঠবো না?
–…………………….
–কি হলো কথা বলছেন না কেন?
–সকাল হোক কেউ না কেউ আমাদের খুজতে ঠিকি আসবে তখন উঠবো তার আগে হবে না।পায়ের মধ্যে কেমন যেন চিনচিন করছে।
–কি??তাহলে তো আরো অনেক টাইম লাগবে।
–হুম।
–ধুর ভালো লাগে না।
–কেন?এখন এমন করছো কেন?নিজেই তো ইচ্ছা করে বিপদটা ডেকে আনলে।আমি তো তোমাকে ভালো মতোই উপরে তুলতে যাচ্ছিলাম নিজেই তো দুষ্টুমি করে আমাকে নিচে নিয়ে আসলে।
–……………..
–এখন তো চুপ থাকবাই।ফাজিল মেয়ে।
–আমি ফাজিল না।
–চুপ।আর একটা কথাও বলবা না।মন চাচ্ছে তোমাকে…
–আমাকে? কি?

উনি আর কিছু বললেন না।আবার অন্যদিকে তাকিয়ে বসলেন।কেটে আরো বেশ খানিকটা সময়,সকাল হয়ে গেছে।হটাত শিবলি ভাইর গলার আওয়াজ পেলাম,সৌভিক সৌভিক করে ডাকছে।ওনার গলা পেয়ে আমরা দুজনেই অনেক খুশি।খুশি হয়ে একে অপরের দিকে মুখ ঘুরাতেই ঘটে গেলো এক লজ্জার ঘটনা।শিবলি ভাইয়ার গলা শুনে আমি আর সৌভিক ভাই একি সাথে শিবলি বলে একে অপরের দিকে মুখ ঘুরাতেই ওনার ঠোট এসে আমার নাক স্পর্শ করে।দুজন পুরো স্ট্যাচু হয়ে যায়।উনি লজ্জাই মুখ ঘুরিয়ে ফেলেছে আর আমি তো পাথর হয়ে গেছি।এই প্রথম কোন ছেলের কাছে এভাবে..ছি ছি!ব্যাপারটা বেশ লজ্জা জনক।আমরা দুজন দুদিক ঘুরে বসে থাকি।হুশ ফেরে আবার শিবলি ভাইয়ার ডাকে।এবার সৌভিক ভাই ও আওয়াজ দেয় সাথে আমিও।শিবলি ভাইয়া খুজতে খুজতে গর্তের কাছে চলে আসে।

–সৌভিক তোরা এখানে কি করছিস?
–সেসব কথা পরে হবে আগে তোল আমাদের।
–হ্যা ভাইয়া প্লিজ আগে তোলেন।
–হ্যা হ্যা।হাত দাও তোমার

শিলবি ভাইয়া নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় আমি ওনার হাত ধরে উঠে পড়ি।এবার উনি সৌভিক ভাইর দিকে হাত বাড়ায় কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার উনি শিবলি ভাইয়ার হাত না ধরেই উঠে পড়ে।আমি তো অবাক।লোকটা নিজে নিজেই উঠে পড়লো যখন তাহলে এতোক্ষন ওখানে বসে ছিলো কেন?

–এই আপনি নিজে নিজেই তো এখন উঠে পড়লেন তাহলে এতোক্ষন বসে ছিলেন কেন?উঠে পড়ে আমাকে উঠাতে পারতেন তো।

উনি আবার বিষম খাই।
–এতোক্ষন ওখানে বসে থাকার মানে কি হ্যা?
–না মানে তখন আমার পায়ে খুব ব্যাথা করছিলো সেই জন্যই তো বসে ছিলাম।এখন আর পায়ে তেমন ব্যাথা নেই
–এইটুকু টাইমের মধ্যে ব্যাথা কমে গেলো।
–হুম গেলোই তো।
–কিভাবে শুনি?আমাকেও একটু বলেন কি এমন হলো এইটুকুর মধ্যে যে ব্যাথা এত তাড়াতাড়ি কুমে গেলো?
–আসলে কারনটা হল শিবলি।আমার ভাই,আমার বন্ধু,আমার জান।ওর মুখটা দেখলেই আমার সব ব্যাথা,কষ্ট চলে যায়।

ওনার কথায় শিবলি ভাই ও বিষম খেলেন আর উনু কেলানি হাসি দিলেন।ওনার কথার আগে মাথা কিছুই যুক্তিগত মনে হলো না।

শিবলি ভাইয়া এবারর জানতে চাইলেন আমরা এখানে কি করছিলাম উনি সব ঘটনা বললেন।শিবলি শুনে হাসতে লাগলো সাথে উনিও।আমি মুখ শুকনো করে দাড়িয়ে রইলাম।ওনারা এখনো হাসছেন আমার রাগ হয়ে গেলো।

–উফফ!!হাসি থামান।এখানে কি কমেডি মুভি চলছে যে এতো হাসছেন?
–সৌভিক থেমে যা ফুলকলি রেগে গেছে।

ওনারা হাসি থামায় কিন্তু মুখ টিপে হাসছে বুঝতে পারছি।আমি ওনাদের দিকে রাগী লুক দিলাম।
–এখানেই কি দাড়িয়ে থাকবেন নাকি যাবেন?সবাই এতোক্ষনে কি না কি ভেবেছে কি জানি!
–কেউ কিছু ভাবিনি।কেউই তেমন উঠিনি।

শিবলি ভাই একটা সুন্দর হাসি দিয়ে কথাটা বলেন।আমরা তিনজন তাবুতে ফিরে আসি।এসে দেখি সত্যিই ওতো মানুষ ওঠেনি এখনো।আমি আমার তাবুর ভিতর যায়,মীরাও এখনো ঘুমিয়ে আছে।আমি ওর পাশে বসি আর ঘটনা গুল ভাবতে থাকি।হটাত চুমুর কথাটা মনে পড়ে যায়।লজ্জা পেয়ে যায় আমি।

আজকেও অনেক ঘুরি আমরা,কিন্তু সবাই একসাথে।কারনটা হল সৌভিক ভাইয়ার পা কেটে গেছে তাই সবাই অনেকবার জিজ্ঞেস করে কিভাবে পা কাটলো কিন্তু উনি বলেছেন পড়ে গিছিলাম।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই আজকেও আগুন জ্বালিয়ে আড্ডা দিচ্ছি,ঠিক সবাই না ৪/৫জন ঘুমিয়ে গেছে।এমন সময় একটা আপু বলে ওঠে আজ নাকি ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবে।আমরা সবাই তো অনেক এক্সসাইটেড।কিন্তু সৌভিক ভাইর ওতোটাও রিয়াকশন নেই।এই লোকটার মাঝে মাঝে একদম নিরামিষ মনে হয়।ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলার জন্য আমরা সবাই গোল হয়ে বসি।সাদাফ ভাইয়া একটা কাচের বোতল আনে,রুম্পা আপু সেটা ঘুরিয়ে দেয় প্রথমেই বোতলের মুখ গিয়ে পড়ে টিনা আপুর দিকে।টিনা আপু ডেয়ার নেই,বেচারি ডেয়ার নিয়ে ফেসে গেছে,শিবলি ভাইয়া ওনাকে দিয়ে নিজের নামেই নিজেকে গালাগাল দিতে বলে।বেচারি টিনা আপু নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে আর শিবলি ভাইয়ার দিকে রাগি চোখে তাকাচ্ছে।আমরা মুখ টিপে হাসছি।ডেয়ার শেষে টিনা আপু বলে

–তোর পালা আসুক দেখ কি করি আমি।শালা শিবলির বাচ্চা।
–হিহিহিহিহহহহহ।।দেখবানে তুই কি করিস।।হাহাহহাহহাহাহহহহহহহ….

এবার আরো তিন জন একে একে ট্রুথ ডেয়ার নেই।এরপর আসে মীরার পালা।মীরার সাহস অনেক কম তাই ও ডেয়ার নেই।কারন বড় আপু ভাইয়ারা যেকোন কিছু জানতে চাইতে পারে।অবশ্য ডেয়ার নিলেও যে বিপদ কম তা কিন্তু না।মীরা ডেয়ার নিলে শিবলি ভাইয়া বলে ওনাকে প্রোপজ করার কথা।এ কথা শুনে আমার মীরু তো হা হয়ে গেছে।

–আমি এসব পারবো না ভাইয়া।
–পারবো না বললে তো হবে না মীরা তোমাকে আমায় প্রোপজ করাই লাগবে আর যদি না করো তাহলে কিন্তু পানিশমেন্ট আছে।

মীরা বেশ কয়েকবার না বলে,অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকাই কিন্তু আমার ও তো কিছু করার নেই।বাধ্য হয়ে ওর ডেয়ার কমপ্লিট করা লাগে।এক প্রোপজ যেয়ে ৫০০ বার ও তুতলিয়েছে,ভয়ে প্রায় কাদো কাদো হয়ে গেছে কিন্তু প্রোপজটা করেছে।

আবার বোতল ঘুরানো হলো এবার বোতলের মুখটা গিয়ে পড়লো সৌভিক ভাইর দিকে।

চলবে………

(কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর নেক্সট নেক্সট না করে গল্পটা কেমন লাগছে সেটা জানালে বেশি খুশি হবো।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here