#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ৮
রোয়েন গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে প্রায় পনেরো মিনিট হবে,তবে বিরক্ত লাগছেনা ওর। এইতো কিছুদিন আগের কথা যখন ” উইমেন ট্রাফিকিং” এর একটা মিশন নিয়ে ও কাজ করেছিলো যার প্রায় চারশত মেয়ের লাইফ জড়িত ছিলো।
শুরু থেকে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে সময়মত সেখানে পৌছে সেফলি মেয়েদের বাচাতে পারলেও ওরই দলের একজন তাদের সাথে জড়িত ছিলো যে কিনা ওর লোকেশন বলে দিয়েছিলো। তখনি গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে সামনে থাকা বিল্ডিং দেয়াল টপকে তাতে ঢুকলেও ও বুঝতে পারছিলো যে ওর পিছনে মানুষ আছে।
পকেটে থাকা নাইফ দিয়ে অনেক এপার্টমেন্টের দরজা খুলার ট্রাই করেও যখন পারেনি তখন লিফট দিয়ে ঠিক কত তলায় উঠেছে মনে নেই তবে ওই ফ্লোর সম্পুর্ণ অন্ধকার ছিলো, ফ্ল্যাশ অন করে সামনে চোখে পড়েছিল “এনা এন্ড ইনা’স কিংডম” তখন মনে হলো এইখানে মাত্র দুটো মেয়ে আছে তাই হেন্ডেল করা সহজ হবে তাই নাইফ দিয়ে ট্রাই করতেই লক খুলে গেলো। ভেতরে ঢুকেই দরজা অফ করে সোজা সামনের বেডরুমে ঢুকে লাইট অন করতে গিয়েও করলো না।
ফ্লাশের আলোতে সামনে একটা মেয়েকে শুয়ে থাকতে দেখেই পকেট থেকে গান বের করে তার গলায় চেপে ধরেছিলো আর চিল্লাতে বলেছিলো। যখন বাইরে পায়ের আওয়াজ আর শুনা যাচ্ছিলো না তখন আস্তে ছেড়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়েছে সেখান আর বাইরে থেকে দরজা লক করে চলে গেছে।
না তাড়াহুড়ায় মেয়েটার ফেসে নোটিস করেছে আর না জানতো যে মেয়েটি এনা না ইনা। তবে একটা জিনিস যেটা মনে ছিলো তা হচ্ছে ঘুমজড়ানো মেয়েটার কন্ঠ, কারো ঘুমজড়ানো কন্ঠ এতো আবেদনীয় হতে পারে ওর জানা ছিলো। সেই ঘটনার কয়েকদিন পর আবার আসতে চেয়েছিলো মেয়েটিকে দেখার জন্য কিন্তু পেইন্টিং শো নিয়ে ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেনি। আজকে এখানে আসার পর যখন এনা দরজা খুলেছে তখন এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো এনা ওই মেয়েটি নাতো!
কিন্তু রুমে যাওয়ার পর ইনায়ার ঘুম জড়ানো কন্ঠ শুনে ও শিউর হয়ে গিয়েছে এই ডাম্বো ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারেনা। নিশ্চত ভেবেছে ও সপ্ন দেখেছে, কিন্তু স্বপ্ন কি কখনো এতোটা রিয়েল হতে পারে?
ভাবতে ভাবতেই ঘড়ির দিকে তাকালো অলরেডি আধাঘণ্টা হয়ে গিয়েছে অথচ এই মেয়ে এখনো আসেনি আর ও ওয়েট করছে ওর জন্য! কিন্তু জীবনের প্রথম কোন মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছে ভেবে নিজেই অবাক হলো,,
“গড রুহান, আর ইউ চেঞ্জিং নাও?ফর আ গার্ল?”
বিড়বিড় করে বলে যেই গাড়ি থেকে বের হবে তখন দেখে ইনায়া ধীরে সুস্থে বের এদিকেই আসছে মনে হচ্ছে তার অঢেল সময়! ইনায়ার আউটফিট দেখে কিছুটা ভ্রু কুচকে গেলো ওর, জিন্সপেন্টের সাথে শর্ট একটা টপ্স পড়েছে যাতে নেভ রিভিল হয়ে আছে। সাথে আবার কালারড স্কার্ফ পরেছে নেকে ফ্যাশনের জন্য। এতো রিভিলিং ক্লোথ পরেছে! ভ্রু কুচকে গেলো ওর, নিজেদের সৌন্দর্য অন্য ছেলেদের দেখিয়ে কি মজা পায়? এরা কি বোঝেনা যে তাদের বয়ফ্রেন্ড বা হাজবেন্ড জেলাস ফিল করতে পারে?
ওয়েট আমি কি জেলাস ফিল করছি? নো ওয়ে শি ইজ নট ইভেন মাই গার্লফ্রেন্ড! প্রতিদিন এর থেকেও রিভিলিং ড্রেস পরা মেয়ে ওর আশেপাশে ঘুরে অথচ আজই প্রথম মনে হলো যে রিভিলিং ড্রেস পড়া ঠিক না!
নিজেকে কিছুটা শাশিয়ে ঠিক করে বসলো গাড়িতে, তবুও বারবার রিভিলিং প্লেসেই ওর নজর যাচ্ছে আর রিতীমত মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর। ইনায়া পেসেঞ্জার সিটে বসলো রোয়েনের পাশে যা দেখে রোয়েন একবার ওর দিকে তাকালো,তা দেখে ইনায়া বললো
“জানি জানি ভাবছেন কেন আপনার পাশে বসলাম! আমি পেছনে বসবো তারপর আপনি বলবেন আমি তোমার ড্রাইভার? সামনে এসে বসো কিন্তু আমি প্রথমে জেদ দেখাবো এরপর আপনি ভয় দেখাবেন তারপর আমি রাগ করে এসে সামনে বসবো আর আপনি তা দেখে হাসবেন। তাই ভাবলাম এতো কাহিনীর থেকে নিজেই এসে সামনে বসি, এতে এটলিস্ট সময় বেচে যাবে ”
“তুমি কি সবসময় এতো বেশি কথা বলো নাকি আজকে আমাকে পেয়ে আমার ভাগেরটাও নিজে বলে দিচ্ছো?”
“দেখুন একদম বাচাল বলবেন না আমাকে, আমি একটু বেশি কথা বলতে পছন্দ করি তাই বলে তাতো খারাপ কিছু না। তাছাড়া বেশি কথা বলতে পারাটাও একটা টেলেন্ট সবাই পারেনি ” কিছুটা গর্ব করে বললো ইনায়া যেন মহান কোন কাজ করে ফেলেছে, রোয়েন তা দেখে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো। কিছু কিছু মানুষের সাথে তর্ক করার চেয়ে চুপ করে থাকা শ্রেয়।
“বাই দ্যা রাস্তা আপনি খাবার ফিনিশ করলেন না কেন? যদি না খাওয়ারই ছিলো তাহলে বানাতে বললেন কেন?”
খাবারের কথা শুনে রোয়েনের চেহারার নকশা বদলে গিয়েছে। এমন জঘন্য খাবার ও জীবনেও খায়নি। মানে মানুষ লবণ আর চিনির পার্থক্য বুঝে না? শি ইজ আ বিগ ডাম্বো এন্ড শর্টি অলসো,,
🌸🌸🌸
“সো দেটস দ্যা ইন্ড অফ দিস প্রেসেন্টেশন ”
এতোক্ষন প্রেসেন্টেশন দিচ্ছিলো ইনান আর সায়ান ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো, বাইশ বছর পুর্বে লরেন লিউস শুধু ওর ছেলেকেই কেড়ে নেইনি বরং সাথে হিউজ এমাউন্টের টাকাও ব্যাংক থেকে নিয়েছিলো সায়ানের নাম করে যা চুকাতে গিয়ে প্রায় সবকিছুই হারিয়ে বসে ছিলো ও তখন ইনান ওর পাশে দাঁড়ায়। তারা ক্যালিফোর্নিয়া শিফট হয়ে যায় আর নিজেরা নতুন করে বিজনেস শুরু করে। এখনকার বিজনেস অনেক প্রোগ্রেস করেছে তবে আগের পজিশনে যেতে পারেনি আর। ক্যালিফোর্নিয়ার টপ টেন কোম্পানির একটি হলেও তাদের অন্যদের সামনে প্রেজেন্টেশন দিতে হয় যেমন আজকে দিতে হচ্ছে ফরেইন কান্ট্রি এর ক্লাইন্ট এর সামনে। লন্ডনের টপ বিজনেস ম্যান জেইন শেখ হচ্ছে আজকের ক্লাইন্ট,শেষ পর্যন্ত কন্ট্রাক্ট টা ওরাই পেয়েছে,,
“থ্যাংকস মিস্টার শেখ,আশা করছি আমাদের এই কন্ট্রাক্ট সফল হবে। এই হচ্ছে আমার পার্টনার এবং কোম্পানির আরেকজন মালিক ” ইনান সায়ানকে দেখিয়ে বললো,
“ওহ নাইস টু মিট ইউ মিস্টার খান ”
সায়ান কিছুটা চমকালো শুনে যে ওর নাম তো বলেনি তাহলে কি করে জানলো?
“অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি এখানে আসার পুর্বে কোম্পানির সবকিছুর খোজ নিয়েই এসেছি, ইউ নো আম আ বিজনেসম্যান ”
“ইয়াহ, নো ওন্ডার এত কম বয়সেই তুমি সাকসেস”
বলেই হ্যান্ডশেক করলো সায়ান, এতো সহজে কন্ট্রাক্ট পেয়ে যাওয়াতে ওর ভালো লাগলেও কিছুটা খটকাও লাগছে। এখানে শুধুমাত্র ওদের প্রেজেন্টেশন দেখেই সিলেক্ট করে নিলো, বাকিদের টা দেখেনি পর্যন্ত। বিষয়টি যত সহজ মনে হচ্ছে আসলেই কি তা ততই সহজ নাকি ঘোলাটে কিছু যা চোখে পড়ছে না?
#চলবে
(কে কে আমার মত বেশি কথা বলতে ভালোবাসো?)