বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ৯

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ৯

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে মাঝ বরাবর বসে পড়েছে ইনায়া, ওর ধারণা মতে এই পর্যন্ত প্রায় ৫০ প্লাস বার ও এই সিঁড়ি দিয়ে যাতায়াত করছে, পাঁচতলা থেকে নিচ তলা আর নিচ তলা থেকে পাঁচতলা। পা যেন আর চলছে না,, এই মুহুর্তে ওই পেচামুখি ভিলেনকে মন চাচ্ছে আছাড় মারতে। সকাল ১১ টা থেকে এখন বিকাল চারটা বেজে গেছে আর ও গাধার মতো খেটে যাচ্ছে, কখনো তিনতলা থেকে এটা আনো, নিচ তলা থেকে ওইটা আনো। এই পেপার তাকে দিয়ে এসো। এই চক্করে লাঞ্চও করা হয়নি, এইখানে লিফট থাকলেও তা শুধুমাত্র এমপ্লয়িদের জন্য অন্যরা তা ইউজ করতে পারবে না

“বলি আমি কি গাংঙের জলে ভেসে এসেছি? সকাল কতো বড় কথা, বস হিসেবে এমপ্লয়ির খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব আর এখন দেখো এই যে খেটে মরছি তার কোন খোজ রেখেছে? তারউপর ও যে তার আন্ডারে কাজ করছে এটা কাউকে বলেও যায়নি ”

সেই সকালে রোয়েন ওকে এখানে নিয়ে আসে তারপর ওকে গেটে রেখেই হাটা শুরু করে আর তার কোর্ট ওকে ধরিয়ে দেয়। তারপর একটা সুন্দরি মেয়ের সামনে আসে আর তাকে খুচুরখুচুর করে কি যেন বলে তারপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে

“ও যা বলে সেইমত কাজ করবে, যদি না শুনো তাহলে মুল টাকার সাথে আরো যোগ হবে ”

বলেই হনহন করে বেরিয়ে চলে যায় যেন অফিসের মুখদর্শন করতে এসেছিলেন আর সেটা করেই নিজের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন। আশেপাশের মানুষ এমন ভাবে চেয়ে আছে মনে হচ্ছে আস্ত এলিয়েন তাদের সামনে। এরপর ওই সুন্দরি মেয়ে মানে জেনিফার ওরফে মিস হিটলার ওকে খাটিয়ে মারছে। মনে হচ্ছে ও মেয়েটির কোন জনমের শত্রু।ওইযে আবার ডাক পড়েছে না জানি আবার কি করতে দেয়? ইনায়া দৌড়ে গেলো তার কাছে, এতো দৌড় ও কোনদিন দেয়নি। মনে হচ্ছে অলিম্পিকে নাম লিখালে নির্ঘাত গোল্ড মেডেল পেতো যা প্রেক্টিস হচ্ছে ওর!

ঘড়ির কাটায় প্রায় নয়টা বাজে, হাতের ঘড়িতে সময় দেখে গাড়িতে উঠে বসালো রোয়েন। আজ সারাদিন ব্যস্ত সময় গিয়েছে, নতুন মিশনের সকল প্রস্তুতি আজই শেষ হলো। এই মিশন ড্রাগস নিয়ে যা অবৈধভাবে নিম্ন আয়ের দেশ গুলোতে যাচ্ছে এখান থেকে তাও আবার সমুদ্রপথে, তাই খুব প্লেন করে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে যার পরিকল্পনা সারলো কিছুক্ষণ আগে। এই ড্রাগস এর কারণে নিম্ন আয়ের দেশগুলো রসাতলে যাচ্ছে! সারাদিনের ব্যস্ততায় শর্টির খোজ নেয়া হয়নি তাই ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো

“ওকে ঠিকমতো পৌছে দিয়েছো?”

“কাকে বস”

“শর..ইনায়াকে? যে সকালে আমার সাথে ছিলো ”

“বাট বস আপনিতো বলেন নি আমাকে ”

রোয়েনের মনে পড়লো ব্যস্ততার কারণে বলতে ভুলে গিয়েছে তাই সিদ্ধান্ত নিলো ইনায়াকে ফোন দিবে, যদিও অফিসটাইম ছয়টায় শেষ তবুও আজকে প্রথমদিন ছিলো। প্রায় কয়েকবার ফোন করেও যখন ইনায়া ফোন তুললো না তখন কেমন যেন খটকা লাগলো ওর তাই জেনিফারকে কল দিলো,,

“জেনি, ইনায়ার কি অবস্থা? ও কখন অফিস থেকে বের হয়েছে? ”

রোয়েনের এই উদ্বিগ্ন কন্ঠে কিছুটা ভড়কে গেলো জেনি, আমতাআমতা করে বললো

“স্যার আমিতো ছয়টায় বের হয়ে গিয়েছে, তখন ও ফাইল নিয়ে বিজি ছিলো তারপর তো আর জানিনা ”

“অফিস আওয়ার ছয়টায় শেষ হয় তাহলে ও তখনো কাজ করেছিলো কেন? তাছাড়া আমি তোমাকে ওর খেয়াল রাখতে বলেছিলাম মানে তুমি যখন বের হবে তখন ওরও বের হওয়ার কথা, তাহলে ও তখনো কাজ কেনো করেছিলো? ” চিল্লিয়ে বললো রোয়েন

“প্রে টু গড দ্যাট শি ইজ ওকেই, আদারওয়াইজ ইউ এর ফায়ারড উইথ পেনাল্টি ”

বলেই ড্রাইভারকে অফিসের দিকে যেতে বললো, আর বারবার ইনায়াকে ফোনে ট্রাই করছে, এতোক্ষন ফোন ঢুকলেও এখন ফোন সুইচড অফ বলছে, অজানা ভয় ও গ্রাস করছে, না জানি কি অবস্থায় আছে!

🌸🌸🌸

জড়োশড় হয়ে বসে আছে ইনায়া, চোখ বন্ধ করে রিতীমত কাঁপছে ও, আর চোখ জল ভিজিয়ে দিচ্ছে ওর কপল। চারপাশে অন্ধকার ছাড়া কিছুই নজরে পড়ছে না তবে সমস্যা সেখানে নয়। অন্ধকারে থাকতে ও অভ্যস্ত তবে বদ্ধ স্থানে নয়। যেকোন ছোটখাটো কিংবা আটশাট স্থানে ওর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, মনে হয় দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।

সাইন্সের ভাষায় যাকে বলা হয় ক্লস্টোফোবিয়া, এটি এক ধরনের বিশেষ ফোভিয়া, এই অসুখে যাঁরা ভোগেন তাঁদের সব সময় মনে হয় ছোট কোনো ঘরে তাঁরা আটকে যাবেন বা দম বন্ধ হয়ে যাবে।তাই জানালা খোলা রাখেন। অনেক সময় তাঁরা ঘরের দরজা বন্ধ রাখতেও ভয় পান। অপরিচিত জায়গার কোনো ঘর হলে এ ভয় আরো বেশি হয়। এঁরা লিফটে উঠতেও ভয় পান।

ইনায়া বেশিরভাগ সময় লিফট এভোয়েড করে কিন্তু লিফট নিয়ে ততো সমস্যা ছিলো না ওর। তবে এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। জেনি ওকে প্রায় একগাদা ফাইলের ভুল কারেকশন করতে দিয়েছে যা ছয়টার মধ্যে শেষ করা সম্ভব ছিলো, তাই সবাই চলে গেলেও ওর যাওয়া হয়নি সব কম্পলিট করতে করতে প্রায় আটটা বেজে যায় আর ওর শরীর প্রায় অসাড় হয়ে এসেছে। ব্রেকফাস্ট ছাড়া সারাদিন পেটে কিছু পড়েনি তাই ভাবলো লিফটে করে নিচে নামবে যেহেতু পাঁচতলায় ছিলো। অফিসের ম্যাক্সিমাম লাইটই তখন অফ তবে দুই একজন তখনো ওভারটাইম করছে, লিফটে উঠে তিনতলায় আসতেই লিফট একটা ঝাকি দিয়ে অফ হয়ে যায়, আচমকা হওয়াতে ওর হাত থেকে ফোন পড়ে যায়, তারপর অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেনি, এদিকে শ্বাস যেন ফুরিয়ে আসছে তাই নিচে বসে পড়লো। ভয়ে আটশাট হয়ে আছে কিন্তু ধিরে ধিরে মাথায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। কিছুতেই চোখজোড়া খুলে রাখতে পারেনি লুটিয়ে পড়লো মাটিতে,,

রোয়েন অফিসে ঢুকেই দেখলো সবকিছু অন্ধকার হয়ে আছে তাই ড্রাইভারকে বললো জেনারেটর অন করতে, আর ও ফ্লাশ জালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে, ও এখানে আসতো না কিন্তু এনাকে ফোন করে জানতে পেরেছে ইনায়া বাসায় ফিরে নি তাই অফিসে এসেছে।
আড়াইতলা উঠতেই লাইট জলে উঠলো তাই তিনতলায় উঠে লিফট অন করলো কিন্তু অন হতে দেরি হচ্ছে তাই চলে যেতে নিয়েও ফিরে তাকালো, ফাকা দিয়ে ওড়নাটাইপ কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। পুরোটা খুলতেই চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু ফাইল দেখতে পেলো সাথে ইনায়াকে। দ্রুত ওর কাছে গিয়ে ওকে উঠানোর চেষ্টা করতে গিয়েও যখন উঠলো না তখন ওকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে এলো আর ড্রাইভারকে গাড়ি আনতে বললো

“ইনায়া,, চোখ খূলো… দেখো আম স্যরি তোমাকে এখানে রেখে যাওয়া ঠিক হয়নি। উঠো প্লিজ দেখো আর কখনো এমন হবেনা প্রমিস, গেট আপ ডেমিট! ডু ইউ হেয়ার মি?”

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবেন☺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here