#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_২৩
#M_Sonali
সকালের মৃদু আলো চোখে এসে লাগতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল চাঁদনীর। ঘুম ঘুম চোখে মিটিমিটি করে তাকাতেই অনুভব করল ওকে কেউ জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। ব্যাপারটা অনুভব হতেই দ্রুত চোখ মেলে তাকাল সে। আর তাকিয়ে যেন 440 ভোল্টের একটা ধাক্কা খেল সে। কারন শ্রাবণ ওকে শক্ত করে বুকের মাঝে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এমন ভাবে ধরে আছে যেনো নড়াচড়া করার শক্তি টুকুও নেই ওর মাঝে। ওকে এভাবে ধরে থাকতে দেখে অসম্ভব অস্বস্তি হতে লাগল চাঁদনীর। কি করবে বুঝতে পারছে না সে। তবে বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে শ্রাবণ বিভোরে ঘুমিয়ে আছে। শেষে কোন উপায় না পেয়ে ধীরে ধীরে শ্রাবণের হাতের ফাক দিয়ে নিচের দিকে সরে গিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর সময় হল আরেক বিপদ। ওর গায়ের জামার অনেকখানি অংশ শ্রাবণের পিঠের নিচে চাপা পড়ে গেছে। যে কারনে সেটা টান দিলে শ্রাবণের ঘুম ভেঙে যাবে। এখন কী করবে সে চিন্তায় মাথা ঘুরতে শুরু করলো চাঁদনীর।
চাঁদনীর অসম্ভব রাগ হতে লাগলো ওর ওপর। ইচ্ছে করছে যেন ওকে ধরে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। এত বড় ফাজিল ছেলে পৃথিবীতে আছে! চাঁদনীর পুরো মনে আছে ও সোফার উপর ঘুমিয়ে ছিল। তাহলে নিশ্চয়ই শ্রাবণ ওকে কোলে করে নিয়ে এসে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়েছে। সারারাত এভাবে শ্রাবণের বুকে শুয়ে ছিল ভেবে যেমন লজ্জা তেমনি রাগ হচ্ছে চাঁদনীর। ইচ্ছে হচ্ছে শ্রাবণকে উরাধুরা পিটাইতে। কিন্তু সেটাও পারছে না। হঠাৎ মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল চাঁদনীর। ও পাশের ড্রেসিংটেবিল এর দিকে তাকিয়ে দেখল ওর সাজগোজের লিপস্টিক আয়লাইনার মেকাপবক্স আরো অনেক কিছুই রয়েছে। চাঁদনী আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সেগুলো একটা একটা করে নিজের কাছে নিল। তারপর দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে শ্রাবণকে সুন্দর করে সেগুলো দিয়ে সাজিয়ে দিতে লাগল। সর্বপ্রথম ঠোঁট দুটোতে একদম লাল টকটকে করে লিপস্টিক দিয়ে দিলো। তারপর কপালে মস্ত বড় একটি টিপ একে দিলো লিপস্টিক দিয়ে। তারপর চোখের উপর এমন মোটা করে আইলানা দিয়ে দিল, যেন মনে হচ্ছে কোন জংলি ভুত। তারপর মেকআপ দিয়ে সারা মুখ ভরিয়ে একদম সাদা করে ফেললো। এমনিতেই শ্রাবণ অনেক ফর্সা, তারওপর মেকাপের কারনে যেন ময়দা মাখা সুন্দরী ভুত দেখাচ্ছে ওকে। সবকিছু দিয়ে দেওয়ার পর ওকে দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে চাঁদনীর। সব রাগ গুলো যেন হাওয়ায় উড়ে গেল। মনে মনে একা একাই হাসতে লাগল। ইচ্ছা করছে দম ফাটানো হাসি হাসতে। তবে সেভাবে হাসলে শ্রাবণের কাছে ধরা পরে যাবে তাই আর এমনটা করলো না।
নিশ্চুপে কিছুক্ষণ হেসে নিল চাঁদনি। তারপর আর কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত এক ঝটকায় নিজের কাপড়টা শ্রাবণের পিঠের নিচ থেকে টান মেরে নিয়ে দৌড়ে সে রুম থেকে পালিয়ে গেল। ও পালিয়ে যেতেই চোখ মেলে তাকালো শ্রাবণ। এতক্ষণ সব কিছুই বুঝতে পারছিল ও। আর সবকিছুই জানছিল। কারণ ভ্যাম্পায়ারেরা কখনো ঘুমায় না। আর শ্রাবণও একজন ভ্যাম্পায়ার হওয়ার কারণে কখনো ঘুমায় না ও। শুধু ঘুমের অভিনয় করছিল এতক্ষণ। আর চাঁদনী কি কি করতে পারে সেগুলো দেখছিল। তবে এই মেয়েটা যে ওকে এভাবে জোকার সাজিয়ে দেবে, সেটা ওর ধারনার বাইরে ছিল। তবে বেশ মজা পাচ্ছিল ও চাঁদনীর এই দুষ্টুমি গুলো দেখে। নতুন করে যেন প্রেমে পড়ছিল ওর।
শ্রাবণ দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর আয়নায় নিজের মুখটা দেখে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর হাসি আটকে রাখতে না পেরে একা একাই দম ফাটানো হাসি হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে যেন মাটিতে মিশে যাচ্ছে ও। ওর হাসির আওয়াজ পাশের রুম থেকে শুনতে পেয়ে কৌতুহল নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুমের মাঝে উকি দিলো চাঁদনী। শ্রাবণকে পাগলের মত এভাবে হাসতে দেখে মনে মনে বললো,
— এই লোকটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি? নিজেকে এই অবস্থায় দেখে কেউ এভাবে হাসতে পারে? এ মনে হয় হান্ড্রেড পার্সেন্ট পাগল হয়ে গেছে। এখন আমার কি হবে? আমার জন্য লোকটা পাগল হয়ে গেল। এখন আমাকে যদি পুলিশে ধরে নিয়ে যায়? ছোটবেলা বাবার কাছে শুনেছিলাম কেউ অন্যায় কাজ করলে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে আটকে রেখে শাস্তি দেয়। তাহলে আমিও তো এটা অন্যায় করে ফেলেছি। আমি ওনাকে এভাবে না সাজালে উনি পাগল হয়ে যেতেন না। তাহলে এখন আমার কি হবে? আমাকে কি পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখবে?
কথাগুলো মনে মনে ভেবে শুকনো ঢোক গিলল চাঁদনী। তারপর গুটি গুটি পায়ে রুমের মাঝে প্রবেশ করল। ওকে আয়নার মাঝে দেখে ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে হাসি থামিয়ে মুখটাকে গম্ভীর বানালো শ্রাবণ। তারপর ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
— এগুলো কি করেছ তুমি আমার সাথে?
শ্রাবণের মুখে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা শুনে যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল চাঁদনী। তার মানে শ্রাবণ পাগল হয়নি। ওকে আর পুলিশে ধরবে না। কথাটা ভেবেই চাঁদনী মুচকি হেসে দিয়ে বললো,
— আপনি পাগল হয়ে যাননি? আপনি ঠিক আছেন!
ওর এমন বোকা বোকা প্রশ্নে ভ্রু কুচকালো শ্রাবণ। তারপর ওর একটু কাছে মুখটা এনে বললো,
— আমি তো এখনো পাগল হইনি। কিন্তু তুমি যেসব শুরু করেছো আমার সাথে! তাতে মনে হয় না বেশিদিন ভালো থাকতে পারবো। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো তুমি আমাকে কোন পাগলা গারদে পাঠিয়ে ছাড়বে। এগুলো কি করেছো তুমি আমার অবস্থা দেখতো? আমি যদি এখন এই অবস্থায় বাইরে যাই, তাহলে সবাই আমাকে কি ভাববে বলো তো?
শ্রাবণের মুখটা এত কাছ থেকে দেখে বড় বড় করে ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো চাঁদনী। তারপর আচমকাই ফিক করে হেসে দিয়ে জোরে জোরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে লাগলো। হাসতে হাসতে গিয়ে বিছানার উপর ঠাস করে বসে পরে তারপর শুয়ে পরলো। তারপর পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
— আপনাকে সত্যিই একদম জোকার লাগছে। যা দারুন লাগছে না কি বলবো। এভাবে যদি বাইরে বেরাতে যান, তাহলে সবাই আপনাকে দেখে অনেক টাকা-পয়সা দিয়ে বড়লোক বানিয়ে দিবে।
ওর কথা শুনে আর ওকে এভাবে হাসতে দেখে এবার ভীষন রাগ হল শ্রাবনের। ওকে জোকারের মতো সাজিয়ে দিয়ে এই মেয়েটা হাসতে হাসতে আবার এত বড় বড় কথা বলছে? কথাটা ভাবতেই দ্রুত গিয়ে চাঁদনীর উপরে আধা শুয়া হয়ে শুয়ে পড়ল শ্রাবণ। সাথে সাথে চাঁদের হাসি বন্ধ হয়ে গেল। ও বড় বড় চোখ করে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। শ্রাবন একদম ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
— হাসো আরো বেশি করে হাসো। এখন হাসি থামলে কেন। হাসো না হাসো। আমাকে কেমন লাগছে বললে! জোকারের মতো তাইনা? এবার দেখাচ্ছি তোমায় জোকার কাকে বলে।
কথাগুলো বলেই নিজের মুখের সাথে লেগে থাকা সবকিছু চাঁদনীর মুখের সাথে নিজের মুখ থেকে ঘষে ঘষে লাগিয়ে দিতে লাগলো শ্রাবণ। আর সব শেষে নিজের ঠোট দিয়ে ওর ঠোট দুটো আকড়ে নিয়ে লিপস্টিকও ভরিয়ে দিলো। তারপর চাঁদনীর উপর থেকে সরে দাঁড়িয়ে চাঁদনীকে হ্যাচকা টান দিয়ে দাড় করিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বললো,
— এবার দেখতো কাকে বেশি জোকার জোকার লাগছে! তোমাকে নাকি আমাকে?
চাঁদনী আয়নার দিকে তাকিয়ে যেন আকাশ থেকে পড়লো। কেননা শ্রাবনকে দেখতে ঠিক যেমন লাগছে, চাঁদনীকে আরো বিচ্ছিরি লাগছে। শ্রাবণের মুখের সবকিছু ওর মুখে ঘষে দেওয়াতে ওর মুখটা ঠিক শ্রাবণের মত জোকারের মতো হয়ে গেছে। এবার ভীষন কান্না পেতে লাগল চাঁদনীর। নিজেকে কখনো এমন চেহারায় দেখেনি সে। এই লোকটা ওকে এভাবে কি করে পারলো এতটা বিচ্ছিরি বানিয়ে দিতে?
চাঁদনী দুই হাত দিয়ে নিজের চোখ কচলাতে কচলাতে ছোট বাচ্চাদের মত কান্না করতে লাগল। ওকে এভাবে কান্না করতে দেখে শ্রাবণ আরো বেশি হাসিতে ফেটে পরলো। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাচ্ছে তার। চাঁদনী আরো বেশি রেগে গিয়ে ওকে জোরে একটা ধাক্কা দিল। এতে শ্রাবণকে এক চুলও নিজের জায়গা থেকে সরাতে পারলো না। তারপর দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়ে ঠাশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। অতঃপর ঝরনা ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে ঘষে ঘষে মুখ পরিষ্কার করতে লাগলো। ও ওয়াশরুমে চলে যেতেই শ্রাবণ ডেবিল হেসে বলল,
— এবার বুঝবে চাঁদ পাখি মজা কাকে বলে। ওয়াশরুমে তো ঠিকই গেলে কিন্তু সেখান থেকে বের হবে কি করে তুমি?
কথাটা ভেবেই ওয়াশ রুমের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শিশ বাজাতে লাগলো। ওর শিশ বাজানো শুনে দাঁত কিড়মিড় করে মনে মনে বকা দিতে লাগল ওকে চাঁদনী। এভাবে বেশ কিছুক্ষন নিজের মুখ ভালো করে ধুয়ে গোসল করে ওঠার পর চাঁদনীর খেয়াল হলো। যে ও ওয়াশরুমে আসার আগে কোন কিছুই সাথে করে নিয়ে আসেনি। আর ওর গায়ে এখন যে জামাটা পড়া আছে, সেটা সাদা ধবধবে রঙের সালোয়ার-কামিজ। যা পানিতে ভিজে যাওয়ায় শরীরের সাথে একদম লেপ্টে গেছে। যার কারণে শরীরের সবকিছুই প্রায় দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
এখন কি থেকে কি করবে এটা ভেবেই অসম্ভব চিন্তায় পড়ে গেল চাঁদনী। নিজের উপর ভিষন রাগ হতে লাগলো ওর। এতটা রাগ করে ওয়াশ রুমে চলে আসার কি দরকার ছিল? ওর দোষেই তো শ্রাবণ ওকে এভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। ও যদি তখন শ্রাবণকে ওভাবে সাজিয়ে না দিতো তাহলে তো নিজেকেও এভাবে সাজতো হতো না। কথাগুলো ভেবে আরো বেশি চিন্তায় পড়ে গেল চাঁদনী। তখনই বাইরে থেকে শ্রাবণ জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
— চাঁদ বেইবি সারাদিন কি এভাবেই ওয়াশরুমে থাকার প্ল্যান করেছো নাকি? তাড়াতাড়ি বের হও তো! আমাকেও তো ওয়াশরুমে যেতে হবে নাকি। আমারও তো ফ্রেশ হতে হবে। আমাকে যেভাবে সাজিয়ে দিয়েছো তুমি। এভাবে থাকলে তো সবাই আমাকে পাগল ছাড়া কিছু ভাববে না। আর তুমি হবে পাগলের বউ। তাই তাড়াতাড়ি বের হও তো চাঁদ বেইবি।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_২৪
#M_Sonali
চাঁদনী না পারছে ওয়াশরুম থেকে বাইরে বের হতে, আর না পারছে ওয়াশ রুমে বসে থাকতে। অসম্ভব বিরক্তি লাগছে ওর। কিন্তু কি করবে এবার, কিছু করার মতো কোনো পরিস্থিতিও নেই। শেষে কোনো উপায়ান্তর না দেখে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দরজাটা হাল্কা খুলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
— এই স্যার শুনছেন, আমাকে একটু তাওয়াল টা দিন না প্লিজ। আর ঐ আলমারি থেকে আমার একটা ড্রেস দিন প্লিজ। আমি ওয়াশরুমে আসার সময় ড্রেস আনতে ভুলে গেছি।
কথাটা বলার সাথে সাথে শ্রাবণ দ্রুতবেগে দরজার সামনে এসে দাড়ালো। ওকে কাছে আসতে দেখেই চাঁদনী দরজাটা ভিড়িয়ে দিলো। ওকে এমন করতে দেখে শ্রাবণ দরজাটা হালকা ধাক্কা দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
— তো কি হয়েছে! ভুলে গেছো এখন বাইরে বের হয়ে নিয়ে যাও। আমাকে কেনো হুকুম করছ। কেন যাওয়ার আগে তো ভালোই ধাক্কা মেরে চলে গেলে। এখন আবার আমার কাছে সাহায্য চাইছো যে? নিজের জিনিস নিজের নিয়ে যাও। আমি পারবোনা।
ওর এমন উত্তর শুনে রাগে যেন দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল চাঁদনী। মনে মনে ইচ্ছামতো গালি দিতে লাগল শ্রাবণকে। তারপর আবারও অসহায় কন্ঠে বলল,
— প্লিজ স্যার একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আমি যদি বাইরে আসতে পারতাম তাহলে আপনার কাছে কখনোই হেল্প চাইতাম না। আসলে আমি বাইরে আসতে পারব না। আপনি একটু আমার জামা কাপড় গুলো দিন না প্লিজ। অনেক বিপদে পড়েছি আমি। এভাবে বেশিক্ষণ ভিজে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে আমার।
ঠান্ডা লেগে যাওয়ার কথা শুনে শ্রাবণ আর কথা বাড়ালো না। সোজা গিয়ে তাওয়ালটা নিয়ে এসে বলল,
— এই নাও তাওয়াল। এটা পড়ে বেরিয়ে এসে নিজের কাপড় নিজে নাও। আমি আর কিছু এনে দিতে পারব না। সরি। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো জলদি বের হও। আমাকে আগে হাতমুখ ধুতে হবে, যে ভাবে সাজিয়ে দিয়েছো আমায়! এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে আমার চেহারাটাই না জানি এমন হয়ে যায়।
ওর কথায় আর কথা না বাড়িয়ে তাওয়ালটা ওর হাত থেকে এক ঝটকায় নিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিল চাঁদনী। রাগে যেন শরীর জ্বলছে ওর। ইচ্ছা করছে শ্রাবণকে গলাটিপে এখনই মেরে ফেলতে।
চাঁদনী দ্রুত নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করে তাওয়াল টা খুব ভালভাবে পেচিয়ে নিল শরীরের সাথে। তারপর টেনশনে পড়ে গেল এভাবে ও বাইরে যাবে কি করে। বাইরে তো শ্রাবণ রয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই আবারও শ্রাবণ চেঁচিয়ে বলে উঠল,
— কি ব্যাপার চাঁদ বেইবি এখন কি তুমি বের হবে। নাকি আমি দরজা টা ভেঙে ভেতরে ঢুকব। তোমারি সাজগোজ তো আমার মুখের সাথে একদম আটকে গেল। আমাকে কে কি জোকার সাজিয়ে রাখার ইচ্ছা আছে তোমার?
ওর কথার উত্তরে চাঁদনী ওয়াশরুম থেকে রাগি গলায় বলল,
— আপনি আগে রুম থেকে বের হয়ে যান। আমি এখান থেকে বেরিয়ে কাপড় চোপড় পড়ার পর তারপর ওয়াশরুমে ঢুকবেন। আর আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন? বাসায় তো আর ওয়াশরুম এর অভাব নেই, যে আপনাকে এই ওয়াশরুমেই আসতে হবে। অন্য ওয়াশরুমে গেলেই তো পারেন।
— না না না চাঁদ বেইবি। সেটা তো হবে না। আমি আমার ওয়াশরুম ছাড়া অন্য কোন ওয়াশরুমে যাব না। এটা যেহেতু আমার রুম, আর এই ওয়াশরুম টাও তো আমার। তাই আমি এটাতেই যাব। তুমি তাড়াতাড়ি বের হও। এত কথা ভালো লাগছে না।
— আপনি কেন বুঝতে পারছেন না বলুন তো! আমি যদি বের হতে পারতাম, তাহলে এতক্ষণ কি আমি ওয়াশ রুমে বসে বসে আপনার সাথে এমন বাজে প্যাচাল পারতাম? প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান। আমি শুধু তাওয়াল পড়ে আছি। আপনার সামনে এভাবে আমি কিভাবে বের হবো বলুনতো?
ওর কথার উত্তরে বাঁকা হেসে শ্রাবণ দুষ্টুমির শুরে বলল,
— তাতে কি আমি তো তোমার হাজব্যান্ড হই তাইনা? আর স্ত্রীর সব কিছু দেখার অধিকার ই তো তার হাজবেন্ডের আছে। তো তুমি আমার সামনে এভাবে আসতেই পারো। শুধু তাওয়াল পরে কেন তাওয়াল ছাড়াও আসতে পারো। আমার কোন আপত্তি নেই।
চাঁদনীর রাগটা যেন এবার মাথায় চড়ে বসলো। এই বেহায়া লোকটি কি পেয়েছে কি কখন থেকে? মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে। লাজ শরমের বালাই নেই। চাঁদনী ওয়াশরুমের দরজাটা হালকা খুলে রাগী গলায় বলল,
— আপনি কি রুম থেকে বের হবেন, নাকি আমি সারাদিন ওয়াশরুমেই থাকবো বলুন তো?
কথাটা বলতে বাকি তার আগেই ওর হাত ধরে একটা টান দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বাইরে বের করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো শ্রাবণ। ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে যায় যে চাঁদনী যেন নিশ্বাস নেওয়ার সময় টুকুও হারিয়ে ফেলেছে।
হঠাৎ করে এইটুকু সময়ের মাঝে কী ঘটে গেল সেটা যেন কিছুতেই মাথায় আসছে না চাঁদনীর। তাই ব্যাপারটা বোঝার জন্য চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো সে। তারপরে হাতে অনেক ব্যথা অনুভব করে ধীরে ধীরে হাতের দিকে চোখ মেলে তাকাল। আর তাকাতেই দেখতে পেল শ্রাবণের হাতে থাকা একটি আংটি ওর হাতে চেপে বসেছে। যে কারণে হাতে ব্যথা পাচ্ছে চাঁদনী। ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে “আহ” শব্দ করে উঠল। সাথে সাথে ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে আস্তে করে শ্রাবণ বললো,
— সরি চাঁদপাখি আমি খেয়াল করিনি।
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বলে উঠলো,
— এবার বল তুমি ওয়াশরুম থেকে বাইরে বের হচ্ছিলে না কেন? তুমি নিজেকে কি মনে করো হ্যাঁ? তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর? যে তোমাকে আমি এ অবস্থায় দেখলে পাগল হয়ে যাব! নাকি তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলব? তুমি কখনো কাকভেজা দেখেছ? মানে কাক যখন ভিজে যায় তাকে কেমন দেখা যায় দেখেছো? তোমাকে এখন ঠিক সেইরকম লাগছে। একদম ভেজা কাকের মতো। তোমাকে দেখে কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার বুঝলে। তাই এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে থাকার কোন মানেই হয়না। এখন এখান থেকে যাও আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি।
কথাগুলো বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেল শ্রাবণ।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কালকের পর্বে ধামাকা হবে ইনশাআল্লাহ।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,