ভ্যাম্পায়ার_বর পর্ব ২৫+২৬

#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_২৫
#M_Sonali

বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে শ্রাবণ। এভাবে বেশ কিছুক্ষন চলার পর মনে মনে বলতে লাগল,

–এই মেয়েটা আরেকটু হলে আমাকে মেরেই ফেলছিল। কি দরকার ছিল এভাবে আমার সামনে আসার? ও কি বুঝতে পারেনা, ও এভাবে দেখলে আমার নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক মুশকিল হয়ে পড়ে! কি করতে কি করে ফেলতাম তখন তো ওরি বিপদ হয়ে যেত। এই মেয়েটা আমাকে পাগল করেই ছাড়বে।

কথাগুলো ভেবে হাতটা বুক থেকে সরালো শ্রাবণ। তারপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

— আই লাভ ইউ মাই চাঁদ পাখি।

কথাটা বলে পানি ছেড়ে দিয়ে যখনই নিজের মুখে পানি দিয়ে ধুতে যাবে শ্রাবণ! তখনই অনুভব করল চাঁদনী ওকে ডাকছে। হ্যা ওকে বলতে, ভ্যাম্পায়ার শ্রাবণ কে ডাকছে লকেটের সাহায্যে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই প্রায় চমকে উঠলো ও। কারণ এখন চাঁদনী কেনো ডাকছে ওকে? ভাবতেই কেন জানি না ভীষণ ভয় লাগতে লাগল ওর। কেননা এতোটুকু সময়ের মাঝে চাঁদনী নিজের পোষাক এখনো চেঞ্জ করেনি। আগের মতোই শুধু তাওয়াল পড়ে আছে। এটা শ্রাবণের বুঝতে বাকি রইল না। কিন্তু ঐ অবস্থায় থেকে ও কেন ডাকছে ভ্যাম্পায়ার রুপি শ্রাবণকে? এটা ভাবতেই কেন জানি না মনটা খারাপ হয়ে গেল ওর। যতই হোক শ্রাবন তো মানুষরূপেই ওকে বিয়ে করেছে। তাই ও চায় চাঁদনী ওকে মানুষ রুপেই ভালবাসুক। নিজের স্বামীকে ভালবাসুক। কিন্তু এমনটা কেন করছে চাঁদনী? আচ্ছা ও কোনো বিপদে পরলো না তো?
কথাটা ভাবতেই বুকের মাঝে যেন কেঁপে উঠল ওর। ও আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ওয়াশ রুমের দরজার কাছে চলে এলো বাইরে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু যখনই দরজা খুলে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করল, দেখতে পারলো বাইরে থেকে দরজা টা লাগানো। কোনোভাবেই দরজা খুলে বাইরে বের হতে পারছে না। এটা দেখে যেন আরো বেশি চমকে উঠলো। চাঁদনীর কথা ভাবতে ভাবতে যেন মাথা ধরে যাচ্ছে তার। শেষে কোনো উপায়ান্তর না দেখে দরজায় জোরে জোরে বারি দিতে লাগল। চাঁদনীকে নাম ধরে ডাকতে লাগল। এভাবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পরেও যখন দরজা খুললো না! তখন ও দরজা ভেঙে ফেলার জন্য সিদ্ধান্ত নিল। আর তখনই দরজাটা বাইরে থেকে খুলে গেল। শ্রাবণ দরজাটা একটানে খুলে বাইরে বের হতেই যেন চমকে উঠলো।

কারণ চাঁদনী আগের মতই সেই একইভাবে শরীরে শুধু তাওয়াল পেচিয়ে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওর মাঝে কোনো রকম ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না। শ্রাবণ ওর সামনে দাঁড়িয়ে বেশ ঝাঝানো গলায় বললো,

— তুমি বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে ছিলে কেন? আমি কখন থেকে ডাকছি? আর পোশাক কেনো চেঞ্জ করোনি এখনো? এভাবে কেন দাঁড়িয়ে আছো চাঁদ? এসবের মানে কি?

শ্রাবণের প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে চাঁদনী ভাবলেশহীনভাবে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলল,

— আমার ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে। আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন। যতক্ষণ আমি কাপড়-চোপড় চেঞ্জ করব ততক্ষণে আমি আমার খাবার এখানে রেডি দেখতে চাই শ্রাবণ।

কথাটা বলে আলমারির কাছে চলে গেল ও। ওর মুখে এভাবে নিজের নাম নেওয়া শুনে বেশ অবাক হলো শ্রাবণ। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ কী হলো চাঁদনীর যে ও এমন আচরণ করছে? কোনো কিছুই যেন বোধগম্য নয় শ্রাবনের। সে কিছুক্ষন অবাক হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে রইল। চাঁদনী ওকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার আলমারির দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় বলল,

— কি ব্যাপার আপনি এখনও ওখানেই চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন কেন? আমি বললাম না, আমার ক্ষুদা লেগেছে। যান আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেন। আর হ্যাঁ যাওয়ার আগে নিজের মুখটা ভালো করে ধুয়ে আসুন। আপনাকে তো পুরাই জোকারের মত লাগছে।

ওর এমন আচরণে যেন শ্রাবণ অবাক এর ওপর অবাক হচ্ছে। এইটুকু সময়ের মাঝে হঠাৎ কি এমন হয়ে গেল যে চাঁদনী এমন আচরণ করছে ওর সাথে? তাও আবার এই অবস্থায় ওর সামনে দাঁড়িয়ে থেকে! সবকিছুই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ওর। চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার ওয়াশরুমে ফিরে গেল শ্রাবণ। তারপর দ্রুত নিজের মুখ ধুয়ে গোসল করে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। তারপর জামা কাপড় চেঞ্জ করে সোজা চলে গেল চাঁদনীর জন্য খাবার আনতে।

বেশ কিছুক্ষণের মাঝেই চাঁদনীর জন্য খাবার নিয়ে ফিরে এলো শ্রাবণ। ততক্ষণে চাঁদনী তাওয়াল খুলে কালো রঙের একটি সালোয়ার-কামিজ পড়ে নিয়েছে। যেটাতে ওর চেহারাটা যেন আরো বেশি ফুটে উঠেছে। এমনিতেই ধবধবে ফর্সা হওয়ার কারণে কালো রংটা বেশ ভালো মানায় ওর সাথে। চুলগুলো এলোমেলো ভাবে ছেড়ে দিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ও। খাবার নিয়ে ফিরে দূর থেকে ওকে এক নজর দেখতেই বুকটা যেন ধক করে উঠল শ্রাবণের। অসম্ভব ভালোবাসা কাজ করতে লাগল চাঁদনীর প্রতি ওর। চাঁদনীর প্রতিটা লুকেই যেন পাগল হয়ে যায় ও। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারেনা। নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে ওর সামনে এগিয়ে এসে খাবারের প্যাকেটটা টেবিলে রেখে বলল,

— এই নাও খাবার। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।

ওর কথার উত্তরে ভাবলেশহীনভাবে ওর দিকে ফিরে তাকাল চাঁদনী। তারপর চুপচাপ এসে সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়ল। তারপরে খাবারের প্যাকেট টা সামনে নিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলল,

— শ্রাবণ আপনি আমার পাশে এসে বসুন।

ওর এমন কথা শুনে কেন জানি না বারবার অবাক হচ্ছে শ্রাবণ। বুকের ভেতরটা যেন অজানা এক ভয়ে বারেবারে আতঙ্কিত হচ্ছে তার। চাঁদনীর কথা মত চুপচাপ গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ল শ্রাবণ। সাথে সাথে চাঁদনী খাবারের প্যাকেট টা খুলে শ্রাবণের সামনে ধরে বলল,

— এবার এই খাবারটা খান। এটা আমি আমার জন্য না, আপনার জন্য আনিয়েছি। এখানে এসেছি থেকে আপনাকে একদিন ও কিছু খেতে দেখি নি। তাই ভাবলাম স্বামীকে না খাইয়ে স্ত্রীর খাওয়া ঠিক হবে না। তাই খাবারটা সর্বপ্রথম আপনি খাবেন তারপর আমি খাবো।

ওর এমন কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লো শ্রাবণ। এখন ও কি বলবে বা কি করবে কোন কিছু যেন মাথায় আসছে না। কিছুক্ষণ অবাক চোখে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

— আমি তোমার জন্য খাবার আনার সময় নিজেও খেয়ে এসেছি। এটা তোমার জন্য এনেছি তুমি খাও চাঁদ।

— দেখুন আমার খাওয়ার হলে আমি অনেক আগেই খাওয়া শুরু করে দিতাম। আমি তো বলছি যে আজকে আপনাকে না খাইয়ে আমি খাব না। যেহেতু আপনি আমার স্বামী তাই আপনার খাওয়ার আগে আমার খাওয়া সাজে না। এটা এতদিন না বুঝলেও আজকে বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি। আপনি খাবারটা খাবেন তারপরেই আমি এটা মুখে তুলব। তার আগে এটা আমি চেখেও দেখব না।

শ্রাবণ বুঝতে পারছে না চাঁদনীর হঠাৎ করে কি হয়েছে। ও কেন এমন আজব ব্যবহার শুরু করেছে। আর ওকে স্যার বলে না ডেকে বারবার নাম ধরেই বা ডাকছে কেন। কিন্তু যেভাবেই হোক খাবারটা থেকে এড়িয়ে যেতে হবে শ্রাবণের। ওত এসব খাবার মুখে তুলতে পারবে না। তাহলে দেখা যাবে বড় কোনো সমস্যা হয়ে যাবে। তাই ও গম্ভীর গলায় রাগি ভাবে বলল,

— দেখো চাঁদনী বেশি কথা আমি একদম পছন্দ করি না। ভালোভাবে বলছি খাবারটা খেয়ে নাও। আমি আমার পার্সোনাল ব্যাপারে জড়াজড়ি একদমই পছন্দ করি না।

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী মুচকি হেসে খাবারের প্যাকেট টা আগের মতো প্যাকেটিং করে সামনের টেবিলের উপর রেখে মৃদু গলায় বললো,

— ও বুঝতে পেরেছি এই খাবারটা আপনার পছন্দ হয়নি তাই না? এটার প্রতি হয়তো আপনার রুচি আসছেনা। আচ্ছা দাঁড়ান আপনার পছন্দের খাবারের এখনই আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

কথাটা বলেই পাশের টেবিলের উপরে ফলের বাটির মধ্যে থাকা ছুরিটা হাতে নিল চাঁদনী। তারপর একটানে নিজের হাতের অনেকটা জায়গা কেটে ফেলল। সাথে সাথে সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। রক্তমাখা হাতটা শ্রাবণের সামনে ধরে বলল,

— এই খাবারটা নিশ্চয়ই আপনার পছন্দ হবে। এটা তো আপনার প্রিয় খাবার তাই না শ্রাবণ? এই নিন এবার ইচ্ছেমত খেয়ে নিন!

চাঁদনীর এমন কথা এবং এমন কান্ডে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো শ্রাবণের। ও না চাইতেও রক্তের গন্ধ নাকে পৌঁছাতেই মুখে লম্বা সরু দুটা দাঁত বেরিয়ে আসলো। চোখদুটো গাঢ় নীল রং ধারণ করলো। চাঁদনীর রক্ত ভীষণভাবে আকর্ষিত করতে লাগলো ওকে। কিন্তু ও চাইছে না চাঁদনীর রক্ত খেতে। ধিরে ধিরে পুরোপুরি ভ্যাম্পায়ার রুপে চলে গেল ও। চাঁদনী তখন মুচকি হেসে বলল,

— আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনিই সেই ভ্যাম্পায়ার টা। যে কিনা সব বিপদ আপদ থেকে বাঁচাতেন আমায়! তাহলে কেনো এত নাটক করলেন আমার সাথে। কেনো নিজের পরিচয় গোপন করে রেখেছেন আমি আপনাকে ভালবাসি এটা জানা সত্যেও?

ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে শ্রাবণ দ্রুত পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তারপর গম্ভির গলায় বললো,

— চাঁদনী তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের হাত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে ফেলো। তুমি জানোনা তুমি কত বড় বিপদ ডেকে আনছো নিজের। আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু বেশিক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবোনা। তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পাবে শুধু একটু অপেক্ষা করতে হবে তোমায়। তার আগে নিজের রক্ত টা বন্ধ করো প্লিজ।

কথাগুলো বলেই কোথায় যেনো উড়ে চলে গেল শ্রাবণ। ওর এমন কথা শুনে চাঁদনী বুঝতে পারছে না হঠাৎ কেন ও এমন করল। আর কেনই বা রক্ত টা বন্ধ করতে বললো। চাঁদনী বেশ ভালো করেই বুঝে গেছে শ্রাবণ ওকে পাগলের মত ভালবাসে। যা কিছু হয়ে যাক না কেনো কখনোই ওর কোন ক্ষতি করবে না। কারণ ওকে অনেক বেশি ভালোবাসে শ্রাবণ। কিন্তু ওর রক্ত দেখে এতটা মরিয়া হয়ে গেল কেনো শ্রাবণ? কেন নিজের আসল রুপে আসতে বাধ্য হলো? তবে কি চাঁদনীর রক্ত ওকে আকর্ষিত করছিল? ও কি চাঁদনীর ক্ষতি করে ফেলবে? ভাবতেই শরীর শিউরে উঠলো চাঁদনীর। নিজের ক্ষতস্থান শক্ত করে চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করলো। তারপর আলমারির কাছে গিয়ে সেখান থেকে ফাস্ট এইড বক্স টা বের করে নিজের কাটা স্থান পরিষ্কার করে সেখানে ব্যান্ডেজ করে ফেলল। তারপর ভাবতে লাগল শ্রাবণের কথাগুলো নিয়ে।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন 2)
#পার্ট_২৬
#M_Sonali

সোফার উপর বসে অনেকক্ষণ ধরে নিজের কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে চাঁদনী। আর মনে মনে ভেবে চলেছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। শ্রাবণ যখন ওয়াশরুম থেকে ওকে হ্যাচকাটানে বের করে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেছিল, তখন ওর হাতের একটি আংটি চাঁদনীর হাতের মাঝে ঢুলে গিয়েছিল। যেটার কারনে বেশ ব্যথা পেয়েছিল চাঁদনী। আর তখনই ও খেয়াল করে শ্রাবণের হাতের আংটির মাঝে থাকা পাথর টা অবিকল ওর গলায় থাকা লকেটের পাথরের মত। আর এই আংটিটা ও এর আগেও কোথাও দেখেছে। আর সেটা হলো ঐ বাদুড় রুপি ভ্যাম্পায়ার টার হাতে। এটা যখনই ওর মনের মাঝে উদয় হয়। তখনই শ্রাবন ওকে হঠাৎ করে চাঁদ পাখি বলে ডেকে ওঠে। ওর মুখে চাঁদ পাখি ডাকটা শুনে অবাক হয়েছিল চাঁদনী। কারণ ওকে এই নামে একমাত্র ঐ ভ্যাম্পায়ারটা ডাকে। শ্রাবণ কখনই ওকে চাঁদপাখি ডাকে নি। শুধুমাত্র চাঁদ বলে ডেকেছে। তখনই ওর মনে সন্দেহ হয় শ্রাবণের ওপর। আর সেই সন্দেহটাকে বাস্তবে জানার জন্য, শ্রাবণ ওয়াশরুমে যাওয়ার পর মনে মনে একটা বুদ্ধি আটে চাঁদনী। আর সেটা হলো ওয়াশ রুমের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। তারপর নিজের গলার লকেটটা ধরে ঐ ভ্যাম্পায়ারটাকে স্মরণ করতে থাকে। আর তখনই ও খেয়াল করে শ্রাবণ ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার জন্য পাগলপারা হয়ে গেছে। তখনই চাঁদনীর সন্দেহটা বাস্তবে রূপ নেয়। ও শিওর হয়ে যায় যে এই শ্রাবণ’ই সেই ভ্যাম্পায়ার। যাকে ও মনে মনে ভালবাসতে শুরু করেছে। আর যে ওকে বারবার সব বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।

কিন্তু চাঁদনী একটা কথা বুঝতে পারছে না। শ্রাবণ যদি ওর ভালো’ই চায়বে! ওকে যদি সব বিপদ আপদ থেকে বাচানোর জন্যই ওকে বিয়ে করে থাকবে! তাহলে ওর রক্ত দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না কেন? আর কেনইবা যাবার আগে বলে গেল যে এটার কারনে অনেক বেশি বিপদ ডেকে আনল চাঁদনী। চাঁদনী সত্যি বড় কোন ভুল করে ফেলল নাতো? নিজের হাত কেটে শ্রাবণের আসল রূপটা ধরিয়ে দিয়ে?

এমন হাজারটা প্রশ্ন এসে উঁকি দিতে লাগল চাঁদনীর মনে। ও কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না কি করা উচিত এখন ওর। তবে বেশ ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে যে সত্যিই বড় কোন ভুল করে ফেলেছে। হয়তো এই ভুলটার শাস্তি পেতে হবে ওকে। কিন্তু সেই ভুলটা আসলে কি, এটাই জানতে চায় সে। আর শ্রাবণ যদি সত্যিই ভ্যাম্পায়ার হয় তাহলে এতদিন কেন মানুষ রূপে ছিল ওর সাথে?চাইলে অনেক আগেই নিজের আসল পরিচয় দিতে পারত। চাঁদনী তো তবুও ওকে মেনে নিতো, তাহলে কেন এত নাটক করলো ওর সাথে?

এসব কথা ভেবে গালে হাত দিয়ে বসে রইল চাঁদনী। এভাবে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ ওর মনের মাঝে একটি প্রশ্নের উদয় হলো। আর সেটা হল শ্রাবনীর ব্যাপারে। আচ্ছা শ্রাবণ যদি ভ্যাম্পায়ার হয়ে থাকে, তাহলে কি শ্রাবণীও একজন ভ্যাম্পায়ার ছিলো? শ্রাবণীও তো কখনও চাঁদনী সাথে কোন কিছু খায়নি। আর সেদিন যখন কফির মগে করে কিছু খাচ্ছিল সেটাও তো অবিকল রক্তই মনে হয়েছিল চাঁদনীর। তাহলে কি শ্রাবণীও শ্রাবণের মত একজন ভ্যাম্পায়ার ছিল? কিন্তু ও যদি ভ্যাম্পায়ার’ই হবে তাহলে এতদিন একসাথে থেকেও কেন বুঝতে পারল না চাঁদনী! ওর আসল রূপ এর ব্যাপারে?

হঠাৎ কিছু একটার শব্দ শুনে ধ্যান ভাঙলো চাঁদনীর। ও এদিক ওদিক তাকাতে লাগল শব্দটির উৎস খোঁজার জন্য। তখন ওর চোখ আটকে গেল বিছানার ওপর বালিশ এর কাছে পরে থাকা ফোনের দিকে। চাঁদনী এর আগে কখনো ফোন চালায় নি। তবে শ্রাবনী আর শ্রাবণকে অনেকবার দেখেছে কি করে ফোন আসলে রিসিভ করতে হয়। তাই দেরি না করে দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো ও। তখনি ফোনের ঐ পাশ থেকে উত্তেজিত কণ্ঠে শ্রাবণ বলে উঠলো,

— চাঁদ পাখি এখন কেমন আছো তুমি? হাতটা কি ব্যান্ডেজ করেছো?

ওর প্রশ্নের উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছোট করে উত্তর দিল চাঁদনি,

–হুমম করেছি!

ওর কাছ থেকে উত্তর পেয়ে শ্রাবণ আবারও প্রশ্ন করে উঠল,

— এখন কি করছো তুমি? তোমার শরীর ঠিক আছে তো? শোনো চাঁদ ভুল করেও বাসা থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করবে না। সবসময় বাসার মধ্যে থাকবে। আর ভুল করেও ছাদের উপর উঠবে না। যত দিন না আমি ওখানে আসছি।

ওর কথায় ভ্রু কুঁচকালো চাঁদনী। তারপর গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে বলল,

— যত দিন আসবেন না মানে? আপনি আজকে আসবেন না এখানে?

ওর প্রশ্নের উত্তরে ওই পাশ থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্রাবণ মৃদু গলায় বললো,

— আগামী তিন মাস তোমাকে ওই বাসায় একাই থাকতে হবে চাঁদপাখি। এই তিন মাসের মাঝে আমি বা অন্য কেউ তোমার কাছে যাবে না। তাই তোমার নিরাপত্তা সম্পূর্ণ তোমার উপর নির্ভর করছে। যদি নিজের ভাল চাও তাহলে অবশ্যই আমার সকল কথাবার্তা মেনে চলবে। আমি শুধুমাত্র ফোনেই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারব। তোমার সামনে যাওয়া আমার পক্ষে তিন মাসের মাঝে কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। আর সেটাও শুধুমাত্র তোমার ভালোর জন্যই।

এতোটুকু একনাগাড়ে বলে থামল শ্রাবণ। ওর কথা শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো চাঁদনীর। এ ছেলে বলে কি, আগামী তিন মাস একা এই এত বড় একটা বাসায় থাকতে হবে ওকে! ভাবতেই যেন মাথা ঘুরতে শুরু করেছে চাঁদনীর। ও উত্তেজিত গলায় বলে উঠল,

— আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? এসব কি বলছেন আবোলতাবোল। এই এত বড় একটা বাড়িতে আমি একা একা তিন মাস থাকব কি করে? আর তাছাড়া এখানে আমার কোন বিপদ হলে আমাকে দেখবে কে?

— তুমি যতক্ষণ ওই বাসার মধ্যে আছো ততক্ষণ তোমার কোন প্রকার বিপদ হবে না চাঁদপাখি। তুমি ওখানে সবচাইতে সেভ আছো। তবে তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে তোমার বিপদ বারবে। সাথে তোমার বিপদের প্রধান কারণ হয়তো আমি নিজেই হয়ে উঠব। যেটা আমি কখনোই চাইনা। এখন যদি আমি তোমার সামনে যাই তাহলে আমি তোমার বিপদ হয়ে দাঁড়াবো। এমনকি তোমার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারি, তোমাকে মেরেও ফেলতে পারি। কারণ তখন আমি নিজের মাঝে থাকবো না। তাই আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো। তুমি ওখানেই থাকবে এবং একদমই একা। তবে তুমি চিন্তা করো না তোমার যাতে একা একা না লাগে, তার ব্যবস্থা আমি করে দেব। তবে সেটা তুমি ঘুমিয়ে পড়লে। কারণ তোমার সাথে দেখা করাটা এই তিন মাস আর সম্ভব হবে না আমার।

— কিন্তু কেন শ্রাবণ? হঠাৎ এমন কি হয়ে গেল যে এই তিনমাস এমন একটা বাসায় একা থাকতে হবে আমায়? আমার ভীষণ ভয় লাগছে এখানে। প্লিজ আপনি এখানে আসুন নয়তো আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। আমি ভুল স্বীকার করছি আমি ভুল করে ফেলেছি নিজের হাত কেটে আপনাকে এভাবে ভ্যাম্পায়ার রূপে নিয়ে এসে। কিন্তু বিশ্বাস করুন শ্রাবণ আমার এখানে থাকতে ভীষণ ভয় লাগছে। ভীষণ একা লাগছে। আমি এখানে থাকতে পারবোনা শ্রাবণ। আমি দম বন্ধ হয়ে মরে যাব। প্লিজ আপনি আমাকে নিয়ে যান। নয়তো আপনি এখানে এসে আমার কাছে থাকুন। আমি এখানে একা থাকতে পারবো না। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।

এতোটুকু বলতেই হঠাৎ ফোন কেটে যাওয়ার শব্দ পেল চাঁদনী। ফোনটা কান থেকে সরিয়ে সামনে এনে ও বুঝতে পারল শ্রাবণ ফোনটা কেটে দিয়েছে। বুঝতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ল চাঁদনী। ভীষণ ভয় লাগছে ওর। এই বাসাটা কেমন যেন ভৌতিক লাগছে। এর আগে কখনো এতটা ভয় পায় নি ও। যতটা ভয় এখন একা থাকতে লাগছে। বারবার মনে হচ্ছে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে ও। কেন যে শ্রাবণের সামনে নিজের হাত কেটে ওকে ভ্যাম্পায়ার রুপে আসতে বাদ্ধ করলো। এটা ভেবেই যেন নিজের প্রতি অসম্ভব রাগ হচ্ছে চাঁদনীর। এই বাসায় কেনই বা তিনমাস একা থাকতে হবে। সেটাও বুঝতে পারছে না ও। আর শ্রাবণ’ই বা ওর সাথে দেখা করতে পারবে না কেনো? সবকিছু কেন এমন হচ্ছে কোনো কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না ওর।

———————-

একটা ঘুটঘুটে অন্ধকার ফাকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ। আর ওর ঠিক দুই হাত পিছনে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণী। দুজনই একদম পিওর ভাম্পায়ার রুপে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অসম্ভব রেগে আছে সে। অনেকক্ষণ হলো রাগে কসমস করছে। যেন এখনই কিছু একটা করে বসবে। ওকে এত রাগান্বিত হতে দেখে শ্রাবণী বলে উঠলো,

— কি হয়েছে ভাইয়া, তুমি এত রেগে আছো কেন? আর হঠাৎ আমায় এখানেই বা ডাকলে কেনো? তুমি’ই বা চাঁদনীকে একা রেখে এখানে এসেছো কেনো?

ওর প্রশ্নের উত্তরে রাগান্বিত কন্ঠে পেছনদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শ্রাবণ বলল,

— চাঁদনী সবকিছু জেনে গিয়েছে। এখন আর কোন কিছু আমাদের হাতে নেই। এই তিনমাস কিভাবে রক্ষা করব আমি ওকে সেটা নিয়ে ভীষন টেনশন এ আছি। ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার নিজের উপর। আমি বুঝতে পারছিনা কি করে ও ধরে ফেলল আমায়।

শ্রাবণের কথায় যেন চমকে উঠলো শ্রাবণী। ও বিস্ফোরিত চোখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

— কি বলছো ভাইয়া, এটা কিভাবে সম্ভব। চাঁদনী কিভাবে সবকিছু বুঝে ফেলল? আর তাছাড়া ও বুঝলো কিভাবে যে তুমি একজন ভ্যাম্পায়ার? এখন কি হবে? তুমি তো চাইলেও আর ওর সামনে যেতে পারবে না। তাহলে ওকে রক্ষা করবে কিভাবে? তুমিতো জানো চারিপাশে কত বিপদ লুকিয়ে আছে। এমনকি আমার থেকেও ওর বিপদ রয়েছে!

— শুধু তোমার থেকে নয় শ্রাবণী। এখন ওর আমার থেকেও বড় বিপদ রয়েছে। কারণ ও আমার আসল পরিচয় জেনে গেছে। আর যে পর্যন্ত ওর 25 বছর পূর্ণ না হচ্ছে, সে পর্যন্ত আমি ওর সামনে যেতে পারবো না। তুমি তো জানোই এখন যদি আমি ওর কাছে যাই। তাহলে ওর কত বড় ক্ষতি হবে। যা চাইলেও আমি আটকাতে পাড়বো না!

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

এত সাসপেন্স বলে কেউ আবার বকা দিয়েন না। গল্পটা শেষের দিকে। এখন ধিরে ধিরে সব সাসপেন্স শেষ হবে। শুধু একটু অপেক্ষা মাত্র।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

এবার সব রহস্য খুলবে,,,,!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here