#শুধু_তোমাকে_প্রয়োজন
#পর্ব_০২
#অধির_রায়
নিয়তি আসতেই অধির খাবার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়৷ নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে ” বসে বসে তোকে খাওয়ানোর জন্য বিয়ে করেছি৷ ফকির হাত পেতে ভিক্ষা না চাইলো ভিক্ষা পাইনা৷ আর তুই নবাবজাদির মতো বসে বসে খাবি৷
— নিয়তি মাথা নিচু করে ” আমাকে কি করতে হবে?” আমি আপনার সব কাজ করে দিচ্ছি৷
— তোকে কিছুই করতে হবে না৷ পায়ের উপর পা তুলে শুধু অন্ন ধ্বংস করলেই হবে৷
— আপনি বলতে চাইছেন আমি কোন কাজ করি না৷
— অবিয়াসলি! তুই যদি কাজ করতি তাহলে টেবিলে এমন খাবার থাকত না৷
— কেন? আপনি এসব খাবার খান না৷
— আমি আজ থেকে এসব খাবার খাবো না৷ আমার জন্য বয়েল জাতীয় কিছু খাবার তৈরি করে নিয়ে আয়৷ ১০ মিনিটের মাঝে! ফাস্ট!
— কিন্তু আমি তো রান্না করতে,,
–নিয়তিকে কিছু বলতে না দিয়ে “তোর জন্য কি আমি না খেয়ে অফিসে যাব?
— নিয়তি মাথা নিচু করে “আপনি বসেন আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”
–তারাতাড়ি করবি৷ আর হ্যাঁ কচ্ছপের মতো হাঁটা বন্ধ কর৷
— ওঁকে যাচ্ছি৷
নিয়তি দ্রুত পায়ে রান্না করে চলে যায়৷ নিয়তি তো কিছুই রান্না করতে পারেনা৷ কিভাবে রান্না করবে? ফোনটাও নিয়ে আসেনি যে ইউটিউবে দেখে রান্না করবে৷
নিয়তি লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের ফোন নিয়ে আসার সময় সামনে পড়ে অধির৷ আচমকা অধিরকে দেখতে পেয়ে নিয়তি শুঁকনো একটা ঠুক গিলে নেয়৷
ফোনটা পিছনে লুকিয়ে ” কিছু বলবেন?”
–পিছনে কি লুকিয়ে রাখলি? জানতাম তুই লোভ সামলিয়ে উঠতে পারবি না৷ নিশ্চিয় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিস৷
চুরের অপবাদ শুনে টুপ করে নিয়তির চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কিনা চুরের অপবাদ শুনতে হলো।
নিয়তি হাত দুটো সামনে নিয়ে এনে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে ” আমি চোর না৷ আমি আমার ফোন নিয়ে আসার জন্য উপরে গিয়েছিলাম ”
— ওকে যেতে পারিস৷
নিয়তি দুই তিন কদম পা ফেলে এগিয়ে যেতেই পিছন থেকে অধির বলে উঠে ” কাঁকন জোড়া কোথায় পেলি।”
— মা কাঁকন জোড়া আমাকে গিফট করেছেন ৷ আমি নিতে চায়নি মা জোর করে পড়িয়ে দিয়েছেন। আপনি যদি চান এখনই খোলে ফেলছি৷
— আমরা ফকিরকে দান করার পর তা ফিরিয়ে নেয় না৷ আর হ্যাঁ ভুলেও যদি মা সামনে এসব কথা তুলিস তাহলে তোর মা বাবাকে পথে বসিয়ে দিব৷ বর্তমানে তোদের সমস্ত প্রপার্টি আমার নামে৷
— নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় সে কাউকে বলবে না৷ নিয়তি সেখানে এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে চলে আসে রান্না ঘরে৷ মনে মনে বলতে “থাকে আজ ফকির হয়ে গেলাম৷ ”
নিয়তি চোখের জল মুছে,, না আমি হার মানবো না৷ যারা চোখের জল ফেলে তারা পৃথিবীর সব থেকে ভিতু লোক। ভিতুরা কোন কিছু জয় করতে পারে না৷ আমিও দেখিয়ে দিব “অধির রায়”
নিয়তি সিদ্ধান্ত নেয় রুচি আর আলুর দম বানাবে৷ নিয়তি ইউটিউব অন করে আলু গুলো ঠিক ইউটিউব ইউজারদের মতো করে কাটে৷ তাদের মতো করে পরিমাণ মতো করে রান্না বসিয়ে দেয়৷
এখন বিপদ ঘটে আর টিসি আশীর্বাদ আটা মেলানোর ক্ষেত্রে। নিয়তি জলের পরিমাণ বেশি দিয়ে ফেলে। যার ফলে আটার কাই কিছুটা তেলতেলে হয়ে যায়৷ পরে ধীরে ধীরে আটা যুক্ত করতে থাকে এক সময় সফল হয়৷ পরিশ্রম করলেই সব কিছু করা যায়৷
[আর টিসি আশীর্বাদ আটা ভিটামিন এ,ডি, ই সমৃদ্ধ। যা আমাদের দেহের মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে ]
নিয়তি রুটি বেলতে পারে না৷ প্রতিটি রুটি এক এক ভারত বর্ষের মানচিত্রের মতো৷ কিছুতেই গোল গোল করে বেলতে পারছে না৷ অবশেষে নিয়তির মাথায় একটা বুদ্ধি উদয় হয়৷ নিয়তি আশীর্বাদ রাখা লবণ বক্সের ছিপি দিয়ে গোল গোল করে কেটে নেয়৷
কিন্তু রুটি গুলো ফোলে না৷ অনেক চেষ্টা করেছে রুচি ফোলানোর জন্য। নিয়তি যেভাবে পারে ঠিক সেভাবেই রান্না করে তারাতাড়ি করে টেবিলে নিয়ে আনে৷
টেবিলে খাবার পরিবেশনের সময় অধিরের মা-বাবা, ভাই খেতে আসে৷ তারাও খেতে বসে পড়ে৷ মিয়তি চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করে যাচ্ছে যেন তার খাবার গুলো ডাস্টবিনের খাবার না হয়৷
নিয়তি কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায়৷ চোখ মেলে দেখে নিয়তির শ্বাশুড়ি মা নিয়তির কাঁধে হাত রেখেছে৷
— নিয়তি তুমি বসছো না কেন?তুমি খাবে না৷ (অধিরের মা)
— না মা৷ আপনারা খান। আমি পরে খাচ্ছি৷
— তোমার কোন কথা শুনবো না৷ তুমি আমাদের সাথে বসে খাবে মানে খাবে৷
নিয়তির দৃষ্টি শুধু অধিরের দিকে। অধির এখনো কিছু বলছে না কেন? সে না বললে কিভাবে নিয়তি বসবে?
— আসলে মা নিয়তি একটু লাজুক স্বভাবের মেয়ে৷ সে তোমাদের সাথে বসতে লজ্জা পাচ্ছে৷ নিয়তি তুমি আমার সাথে আমার পাশের চেয়ারে বসো৷
চোখ পাকিয়ে তারাতাড়ি বসতে বলছে যা নিয়তি অধিরের দৃষ্টি দেখেই বুঝতে পারে৷ নিয়তি সেজন্য তারাতাড়ি করে অধিরের পাশে রাখা চেয়ার টেনে বসে পড়ে৷
— নিয়তি বসতেই অধির নিয়তির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠে ” ভাবদেখিয়ে কি পাস? এর পর যদি কখনো আমার বাবার মার কথা অবাধ্য হস তাহলে,,
— একি রুচি তরকারি কে করল? (অধিরের মা)
— নিয়তি মাথা নিচু করে ফেলে, অধির নিয়তির হাতের উপর হাত রেখে ” এসব রান্না নিয়তি করেছে ” আমি মানা করেছিলাম। কিন্তু সে আমার কোন কথা শুনেনি৷ আমাকে আরও বলে উঠে ” এটা আমার নিজের সংসার আমি রান্না না করলে কে করবে৷
— আমি যেমন একটা বউমা চেয়েছিলাম তেমনটাই মিলিয়ে দিয়েছে সৃষ্টি কর্তা। (অধিরের মা)
নিয়তি অধিরের দৃষ্টি তাকিয়ে মুচকি হেঁসে ” হ্যাঁ এখন থেকে আমিই রান্না করব৷ মনে মনে ” সালা অধির তোকে যদি আমি বিপদে না ফেলছি তাহলে আমিও নিয়তি নয়৷ ”
সিগ্ধ নিয়তির কানের কাছাকাছি এসে বউদি আলুর দমটা অনেক ভালো হয়েছে৷ রুচিও ভালো হয়েছে কিন্তু চুপসে গেছে৷
সিগ্ধের কথা শুনে নিয়তি কিছুটা মনের মাঝে সাহস পায়৷ তার রান্না ভালো হয়েছে এক জনের কাছে হলেও৷ ভালো না হলেও একজন তো ভালো কেমন্ট করেছে৷
সকলেই নিয়তির রান্নার প্রশংসা করল৷ রান্নায় সব কিছু ঠিক আছে৷ নিয়তি খুশি দেখে কে? প্রথমেই সে সবার মন জয় করে ফেলেছে৷ কিন্তু অধির কিছু বলল না। যার জন্য মনটা একদম খারাপ হয়ে যায়৷
রাতে..
এত খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই৷ আচমকা অধিরের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় নিয়তি৷
— “আপনি কখন আসলেন?” আমতা আমতা করে।
— স্বামী অফিস থেকে ফিরতে তার তার কোর্ট, শার্ট, টাই খোলে দিতে হয় জানা নেই৷
নিয়তি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে ” ওকে আমি খোলে দিচ্ছি।
নিয়তি অধিরের কোর্ট খোলে টাই খোলতে নিলেই অধির নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ এতটায় কাছে নিয়ে আসে প্রতিটি নিঃশ্বাস নিয়তি মুখের উপর পড়ছে৷ নিয়তি যেন অধিরের নেশায় হারিয়ে যাচ্ছে৷ পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় সেদিনের ঘটনা৷ নিয়তি নিজেকে সংযত করে সরে আসতে নিলেই অধির নিয়তির কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে আরও মিশিয়ে মেয়৷
— কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে ” কি করছেন টা কি? প্লিজ আমাকে ছাড়েন৷ দূরে সরে যান এখান থেকে৷
— অধির নিয়তির নাকে নাক ঘঁষে ” কাল তো বলেছিলে তুই খুব স্বামী ভক্তি। কিন্তু আজ স্বামীর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছিস৷
— আপনি যদি ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেন তাহলে আপনার কাছে আসা যায়৷ আপনি কি গতকাল রাতে আমার সাথে যা করেছেন। সেসব বাদ দিলাম৷ আমি ঝড়ের রাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু আপনি কোন খোঁজ নিয়ে ছিলেন।
অধির নিয়তির কাঁপা ঠোঁট জোড়া হুট করেই দখল করে নেয়৷ নিয়তির চোখ রসে গোল্লায় মতো হয়ে যায়৷ নিয়তি মনে মনে ডাকতে শুরু করে হ্যাঁ সৃষ্টি কর্তা তুমি আপনি আমাকে কার কাছে ফেলে রেখে গেছেন যার তৃপ্তি মেটানোর পর ছুঁড়ে ফেলে দেয়৷
অধির নিয়তির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে নিয়তির চোখে জল ঠোঁট দিয়ে চুষে নেয়৷ অধিরের এমন স্পর্শ পেয়ে নিয়তি অধিরের ঘাড় চেপে ধরে। যার ফলে অধিরের ঘাড়ে নিয়তির নক একটি গেথে যায়৷ তবুও অধির কিছু বলে নি৷
— নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে,, আমি তোর সাথে যা করেছি বেশ করেছি। তুই আমার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিস৷
— ব্রু কুঁচকিয়ে ” কিসের পরীক্ষা? ”
— আমি যাকে নিজের বউ হিসেবে গ্রহণ করব সে কতটা ধৈর্যশীল সেটা আমাকেই তো পরীক্ষা করে নিতে হবে৷ আমি যেমন কোন কাজে আফসেট হয় না তেমনি তুই কোন কাজে আফসেট হবি না৷ সব সময় নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবি৷
— নিয়তি অধিরের ভালোবাসা জয় করতে পেরেছে বলে নিয়তি পরম আবেশে অধিরকে জড়িয়ে ধরে।নিয়তির চোখে জল অধিরের বুকে পড়ছে৷
— অধির চোখের জল মুছে দিয়ে ” আবার কিসের জন্য চোখে জল? ”
— এটা ভালোবাসার জল। আসলে আমি এমন একটা স্বামী সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করতাম৷ তিনি এভাবে আমার ইচ্ছা পূরণ করতে কোনদিন ভেবে দেখিনি৷
হয়েছে আর কাঁদতে হবে না৷ আজ তুই আর আমি এক সাথে একি প্লেটে খাবো৷ তুই আমাকে খাইয়ে দিবি৷ আমি তোর ফেবু রাইট খাবার বিরিয়ানি এনেছি৷
অধির আর নিয়তি একে অপরকে খাইয়ে দেয়৷ তাদের মাঝে কোন দূরত্ব নেই৷
।
।
।
।
সকাল বেলা…
চলবে
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি কোনদিন বলিনি গঠনমূলক কমেন্ট করবেন৷ প্লিজ আজ একটু গঠনমূলক কমেন্ট করবেন৷ গঠনমূলক কমেন্ট পেলে রোমান্টিক হবে,, না হলে নিরামিষই থাকবে।