শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ২
সন্ধ্যার কিছু সময় আগে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়েছি মাত্র….
ওমনি মা এসে বললেন..
— তাড়াতাড়ি ওঠ
— কেন…..কি হইছে….
— তোকে পড়াতে আসছে…
ধুর ভালো লাসে না এই অনার্স ২য় বর্ষে এসে কারা বাসায় মাষ্টার রেখে পড়ে….
এমনিতেই সারাদিন লাফালাফি করে শরীর ক্লান্ত তার ওপর আবার এখন পড়তে বসতে হবে??
এ কি কারো সহ্য হয়? তাও আবার এই ছুটির দিনে…
আমার এমন কথা শুনে মায়ের ভাষন শুরু হয়ে গেছে..
— ছেলেটা কি ভালো ছুটিরদিনেও সকল কাজ ফেলে এসেছে পড়াতে আর মহারানি সারাদিন পর পরতে বসবে না…
কি আর করা যাবে..
তাই অনেক রাগ, ক্লান্তি আর মন খারাপ নিয়ে পড়ার টেবিলে বসলাম…
তখনই আমার রুমের দরোজায় টোকা পড়ার শব্দ হলো..
শিব্দ শুন্র আমি কোন মতে বললাম
— আসুন ।।।
আমার মাষ্টার মশাই এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলেন…
আরেহ আমার মাষ্টার মশাইয়ের পরিচয় তো দেয়াই হয়নি..
তিনি হলেন স্বয়ং নীলাদ্রি সেন…
আমি তো আগেই বলেছিলাম, তার অনেক গুলো পরিচয় আছে তার মধ্যে এটিও একটি…
তাছাড়া তার আরও পরিচয় হচ্ছে তিনি আমার দাদুর ছোট বেলার সখার একমাত্র সুদর্শন নাতি।।।
আমাদের এলাকার সবচেয়ে ভদ্র,সুশীল আর মেধাবী যুবক….
আবার আমি যেখানে লেডি মাস্তান সেখানে তিনি ভেদ্র মাস্তান…
মানে আমি মেয়ে বলে আমি খারাপ…
আর এই মাস্তানির জন্য তিনি আমাকে একদম সহ্য করতে পারেন না..
কিন্তু তারপরও তাকে আমার মতো একটি ফাকিবাজ মেয়েকে সহ্য করতে হচ্ছে…
আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো নীলাদ্রি দার ডাকে….
উনি আমাকে পড়া ধরতেই….
——আমি প্রতিদিনকার মতো বলে উঠলাম আজ আমি পড়া করিনি….
আর তাছাড়া আজ তো ছুটির দিন কেউ কি আজ পড়ালেখা করে নাকি পড়াতে আসে….
আমার কথা শুনে তিনি রীতিমতো রেগে গিয়ে বলে উঠলেন…
—কোনদিন তুই পড়া কমপ্লিট করে রাখিস??
প্রতিদিনই তো কোন না কোন অজুহাত তৈরি করে রাখিস….
— আমি না আজ পরবো না..
— তা পড়বেন কেন আপনার তো খালি সং সেজে রাস্তায় খুরে বেড়াতে ভালো লাগে আর পাড়ার বদ পোলাগো লীগের মিশতে ভালো লাগে….
—- একদম ওদের বদ বলবেন না…
আজ ওরা আছে বলেই জানেন এলাকার কত মেয়ে আজ সেইফ…..
আর হ্যা আজ সকালে আপনি আমাকে মিথ্যা বলেছিলেন কেন….
— আমি মিথ্যা বলি না….
— তবে সকালে যে বললেন…
” নবু বাড়িতে আছে” কিন্তু ও তো পিসি মনির বাড়িতে ছিলো..
— হ্যা..
এখানে মিথ্যে টা কোথায়..
ও তো বাড়িতেই ছিলো হোক সেটা আমাদের বা পিসি মনির….
— তাই তো..
আপনি একটু বুঝিয়ে বললেই পারতেন….
— হয়েছে এবার থাম…
পড়াশোনা না করে খালি ফাকি বাজি….
আচ্ছা শোন আমি আজ যাচ্ছি কাল পড়া করে রাখিস…..
—- আচ্ছা….
একটু আগ্র কলেজ থেকে এসেছি একন প্রায় বিকেল
শরীরটা এখন ক্লান্ত লাগছে তাই ভাবছি ঘুমাবো নাকি নীলাদ্রি দার দেওয়া পড়া গুলো করবো…..
কিন্তু তখনই কলিংবেল বেজে উঠল…
দরোজা খুলে দেখি আমার সৈন্য সামন্তদের তিন জন কবির, শান্ত আর ছুটু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে….
ওদের এই সময়ে দেখে বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম..
— কি রে তোরা এখানে কেন আর বাকি গুলো কই…
— বস বাকি গুলান নিচে দাড়ায় আছে গেটের কাছে…
— তা ওরা এলো না কিন্তু তোরা তিনটে এলি কেন…
— শান্ত বললো…
বস তুমি তো কইছিলা বাড়িতে একবারে সবাই না আসলে..তাই ওরা আসে নাই…
আর বেশি দরকার না হলে আমরাও আসতাম না….
— ভালো হইছে…..
এইবার থামেন…এখন বলেন কি কাজে আপনারা এসেছেন….
— কাজ বা দরকার তো আমাদের না ছটুর…..
আমি অবাক হয়ে ছটুর দিকে তাকালাম..
যে ছেলেটা আমার সাথে কাজ করেও কখনো আমার সাথে ভয়ে কথা বলেনি সে নাকি কাজে আমার কাছে এসেছে…
— কি হয়েছে রে ছটু
—- আসলে বসদিদি আমার আপুর বিয়ে…
— তাই নাকি কবে রে বিয়ে..
কত দিন বিয়ে খাইনি থুক্কু বিয়ের দাওয়াত খাইনি….
—- এইতো এই শুক্রবারের পরের শুক্রবার আর মাত্র দুই সপ্তাহ আছে…..
আপু বলেছে আমার বন্ধুদের দাওয়াত দিতে তাই আমি…….
—- এই বোকা আমি কি তোর বন্ধু….
— বন্ধু না হন..
আপনি আমার গার্জিয়ান তো তাই আর আপ্নারা ছাড়া তো আমার আর কেউ নেই……
—– আচ্ছা এবার থাম..
আর ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না…..
এখন থকে তো বিয়ের ঠ্যালায় পড়াশোনা করবা না…
কিন্তু আমার এখন পড়তে বসতে হবে……
আমার কথায় ওরা অবাক হলেও কিছু না বলে ওরা চলে গেল……
ওরা যাবার পর আমি পড়ার টেবিলে বসেছি আর এখন সন্ধ্যা প্রায় কিন্তু আমার বই রেখে ওঠার নাম নেই…. আমার এমন কান্ড দেখে আমার মা বেশ চকিত…
তাই তিনি একটু পর পর আসছেন আর নিজের চোখকে এই দৃশ্য দেখিয়ে মুগ্ধ করছেন…..
তবে মা তো জানেন না কেন আমি এমনটা করছি…এটা হচ্ছে টোপ যার মাধ্যমে আমি ছটুর বোনের বিয়েতে যাবার পথ পরিষ্কার করছি…
আপাতত ওই কয়দিন এই পদ্ধতি আমাকে চালু রাখতে হবে।।।।।
চলবে…..