শ্যামারঙা,পর্ব:১

শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
সূচনা পর্ব

প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ও আমাদের কলেজে বড় করে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হবে আজ…

কলেজের সামনে রাস্তার মোড়ে প্রায় আধঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি.।কিন্তু যার জন্য দাঁড়িয়ে আছি তার কোন পাত্তা নেই…আর পাত্তা থাকবেই বা কি করে আমার বেস্টু বলে কথা।

আমি মেঘলা বসু…
আমি আর আমার বেস্টু এই কলেজেই অনার্স ২য় বর্ষে বাংলা বিভাগে পড়ি….

যদিও আমরা বেস্টু তবুও আমাদের মধ্যে তেমন মিল নেই…..

সে আমার পুরাই উল্টো..
যেখানে আমি পান্চুয়াল সেখানে তিনি সব সময় লেট পার্টির সদস্য…

আর যেখানে তাকে বিশেষ কোন দরকার পড়ে না সেখানেই সে এক্টিভ….

শুধু এই দিক দিয়ে নয় সব দিক দিয়েই সে আমার উল্টো দিকে চলে….

যেমন…. আমাকে এলাকার ছোট বড় সবাই একটু অন্য নজরে দেখে মানে আমি খুব ঘাড় ত্যাড়া বা অন্যভাবে বলা যায় ছোটখাটো লেডি মাস্তান..
আর সেখানেই আমার বেস্টু এক অনন্য নারী…
ভদ্র আর অন্যের হাজার বাজে কথাও তার রা নেই….

মনে মনে যখন আমার বেস্টু কে গালি দিচ্ছি
তখনই আমার সামনে দিয়ে একদল যুবকদের যেতে দেখলাম…..আর এই যুবকদের দলকে আমি খুব ভালো করেই চিনি…

আর এই দলের যিনি হেড তিনি হলেন নীলাদ্রি সেন….
যদিও তার অনেক গুলো পরিচয় আছে তবে বর্তমানে যে পরিচয়টি না দিলেই নয় সেটি হচ্ছে তিনি আমার গুনধর বেস্টুর একমাত্র ভেদ্র,হ্যান্ডসাম দাদা……

এইরে ওরা তো আমাকে রেখে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে….

আমি দৌড়ে ওদের সামনে গিয়ে দাড়ালাম…

আমাকে ওদের সামনে গিয়ে দাড়াতে দেখেই বেশ অবাক হলো।।

তবে সবাই অবাক হলেও নীলাদ্রি দা যে বিন্দুমাত্র অবাক হনন বরং বিরক্ত হয়েছেন সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে…..

তবে আমি তার রাগকে তোয়াক্কা না করে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম….

—– নবনীতা কোথায় জানেন???

—– কেন…আমার বোন কে কি দরকার???

——- নবু ( নবনীতা কে আমি ছোট করে নবু বলে ডাকি তবে রেগে গেলে নবনীতা) আপনার বোন হলেও সে কিন্তু আমার বেস্টু…

তাই সে কারণেই জিজ্ঞেস করলাম…

—– ও বাড়িতে আছে…

— কি বাড়িতে আছে…
তাহলে আমাকে কেন বললেও পিসি মনির বাড়িতে যাচ্ছে….
সালা মিথ্যুক…

বলেই আমি ওনাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একা একা বক বক করতে করতে উল্টো পথা হাটা শুরু করলাম…

আর মনে মনে আবার নবু কে খুব কড়া ভাবে গালাগাল করে ধুয়ে দিচ্ছি….
তবে বাই এনি চান্স নবু যদি এই গালি গুলো শুনতে পেত তাহলে ঠাস করে মরে যেত…..

ওর কথা ভাবছি আর নিজেই নিজেকে বকছি….কেন যে আজ শাড়ি পড়তে গেলাম…..এখন তো ঠিক মতো হাটতেও পারছি না…..

হঠাৎই কানে এলো কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে…..
খুব বিরক্তি নিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি একজন শাড়ি পড়া সুশ্রী মেয়ে রিক্সায় বসে আছে…

আর আমার দিকে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…
আর ইনিই হলেন আমার বেস্টু নবু…..

আমি রাগি ভাবে ওর দিকে তাকাতেই সে কাদো কাদো চেহারা করে কানে হাত দিয়ে বলে উঠলো….
“”” সরি””””””‘

ব্যাস ওর মুখে “””” সরি””” শুনে আমার রাগ গলে জল…..

আমরা এখন কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছি যেখানে অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ করা হয়েছে…

নবু কে দেরি হবার কথা বলতেই ও বললো….

——পিসিমনির বাড়ি থেকে বের হতে দেরি হয়েছিল আর শেষ মেষ রাস্তায় লম্বা যানজটের কারণে আরও দেরি হয়ে গেছে…
রাগ করিস না প্লিজ…

— আরে না না…
রাগ করি নাই…

তবে একটা কথা মাথায় আসলো নীলাদ্রি দা তাহলে আমাকে মিথ্যা বললো কেন….

সারাদিন অনেক মজা,হাসি- তামাসা আর হৈ- হুল্লোড়ে কেটে গেছে…

সন্ধ্যার কিছু সময় আগে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়েছি মাত্র….

ওমনি মা এসে বললেন..

— তাড়াতাড়ি ওঠ

— কেন…..কি হইছে….

— তোকে পড়াতে আসছে…

ধুর ভালো লাসে না এই অনার্স ২য় বর্ষে এসে কারা বাসায় মাষ্টার রেখে পড়ে….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here