চান্স পেয়ে বিদ্যুৎ গতিতে মিতুর ঠোঁটের পাশের তিল বরাবর কিস তো করলাম, কিন্তু মিতু যে লেডি পুলিশ ইন্সপেক্টর সে কথা কে জানতো!
মানে আমাদের নিচের ফ্ল্যাটে মিতুরা এসেছে মাস দুই হলো। সিড়ি বেয়ে উঠতে নামতে প্রায়ই চোখাচোখি হয়, মিতুকে যদি পরী বলি তাতেও ভুল হবেনা, লোকমুখে পরীর সৌন্দর্যের যেরকম বর্ননা শুনি, সেই হিসেবে মিতু কোনো অংশে কম নয়।
বেকার থেকে বাসায় রোজ সবার কথা শুনতে হয়,– এবার তো কিছু একটা কর।
কিছু একটা করার সময় এসে গেছে সেদিন বুঝলাম, যেদিন মিতুকে প্রথম দেখলাম। ভাবলাম মুরব্বিরা কিছু একটা করার এতই যখন প্রেশার দিচ্ছে, তাহলে প্রেম করি। শুরু হলো মিশন প্রেম।
মাঝেমধ্যে মিতুকে দেখে চোখ মারি, মিতু চোখ গরম দিয়ে ওভারটেক করে চলে যায়, কেমন যেন পাত্তাই দিতে চায়না। আর দিবেই বা কি, পাত্তা নিজেই মনে হয় ওর মতো সুন্দরীর কাছে পাত্তা না পেয়ে অলরেডি কোমায় গিয়ে হ্যাভ এ্যা রিলাক্সে আছে।
মাঝেমধ্যে মিতুর নাকে নথ দেখা যায়, নথ এমনিতেই মেয়েদের সৌন্দর্য অনেকখানি বৃদ্ধি করে। আর মিতুর নাকে নথ থাকা অবস্থায় মিতুকে দেখে মনে বাসনা জাগে ভাত পানি বন্ধ করে সারাদিন ঐ নাকে চুমু খাই। মানুষের শরীরের পার্টসগুলো যদি আলাদা আলাদা খোলার সিস্টেম থাকতো তাহলে নির্ঘাত নথ সহ মিতুর নাকটা চুরি করে চব্বিশঘণ্টা বুক পকেটে নিয়ে ঘুরতাম।
মিতুর ঠোঁট দুটো পাকা ডালিমের দানার মতোই লাল টলমল, মনে হয় টোকা দিলেই টলমল করে রস বেরিয়ে আসবে, সেই রস পান করতে পারলেই বুঝি জীবনের সকল হতাশার শ্রাদ্ধ হইয়া জীবন হইবে সুখী সমৃদ্ধ ও আনন্দময়।
মিতুর গোলাপি গালে কানের পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া ছোটছোট লোমগুলো দেখে মনে হয় গালের সাথে গালটা একবার ঘষে হতাশার গালে কষে এক থাপ্পড় লাগাইয়া পিছু ছাড়াই। মিতুর মতো মেয়ে যার চোখের সামনে দিয়ে আসে যায় তার জীবনে হতাশার কোনো স্থান থাকার কথা নয়।
মানে মিতুকে নিয়ে যে কতশত কল্পনা পরিকল্পনা তার কোনো হিসাব নাই, মিতুকে যদি ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যাইতো তবে কবেই খাইতাম, অন্য কারো নজর পড়তো না আমার মিতুর ওপর।
যা-ই হোক, এবার আসি চুমুর প্রসঙ্গে–
সকালে আমি চড়চড় করে সিড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় খেয়াল করলাম মিতু ওর বাবার পেছন পেছন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে।
আমি স্পিড কমিয়ে ধিরে ধিরে নামছি। মিতুর বাবা পাস কাটিয়ে যাবার সময় তাকে সালাম দিলাম, কারণ উনি বাবার বয়সী।
আর মিতু পাস কাটিয়ে যাবার সময় বিদ্যুৎ বেগে কিসটা দিলাম, কারণ মিতু প্রেমিকার বয়সী, ইয়ে মানে মিতুর এখন প্রেম করার বয়স, লাইনে আনতে পারলে প্রেমিকাই তো হবে।
এতই ফার্স্ট মোশনে কিসটা করলাম যে মিতুর কাছে পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো। মিতুর মেজাজের মিটার ফুল হয়ে ফেটে যাবার উপক্রম। থমকে দাড়িয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। পরিস্থিতির আবহাওয়া খারাপ দেখে ধীর পায়ে নিচের দিকে নামতে লাগলাম।
মিতুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর বাবা বললো,– কিরে মা, দাড়িয়ে রইলি কেন, জলদি আয় সকালের নাস্তা খাওয়া বাকি, খুব খিদে পেয়েছে।
আমি ঘুরে দাড়িয়ে বললাম,– আঙ্কেল মিতুর খিদে নেই, ওর নাস্তা খেয়ে নিয়েছে গরম গরম।
মিতুর বাবা অবাক হয়ে বললো,– মানে! কখন খেয়েছে! আর তুমিই বা জানলে কিভাবে?
আমি বললাম,– আপনারা তো মর্নিং ওয়াক করে ফিরেছেন তাইনা?
মিতুর বাবা বললো,– হ্যাঁ তাই তো।
আমি বললাম,– তো হাটতে হাটতে মিতু পেট ভরে সকালের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে হাওয়া খেয়ে নাস্তার কাজ সেরে নিয়েছে।
মিতুর বাবা হো হো করে হেসে ফেলে বললো,– মজার লোক তো তুমি।
আমি মনে মনে বললাম,– আপনি বুঝলেন কিন্তু আপনার মেয়ে বুঝলো না, সে বুঝলে বিষয়টা আরও বেশী ভাল্লাগতো।
মিতু ও মিতুর বাবা চলে গেল।
রাতে ফসবুকে ঘুরঘুর করছি, কাছাকাছি বসবাস করার সুবাদে ফেসবুক ফ্রেন্ড সাজেস্টে মিতুর আইডি দেখে খুশিতে ভিরমি খাবার অবস্থা, যাহার পর নাই খুশিতে গদগদ হইয়া আনন্দে মনে মনে মার্ক জাকারবার্গ এর গালে চুমু খেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মিতুর আইডিতে ক্লিক করলাম।
মুহূর্তেই মনের কালারফুল আনন্দ ফ্যাকাসে বেদনায় পরিবর্তন হইলো। কোটি টাকার চেক হাতে পাবার পরে ব্যাঙ্ক বন্ধ শোনার মতোই হৃদয়বিদারক ঘটনা এটা।
যা-ই হোক মেসেজ করার অপশন তো আছে।
মেসেজ লিখলাম,– তুমি আমার মোবাইলের স্ক্রিন মিতু, তাই চেয়েথাকি রাতদিন।
তারপর দিলাম পাঠিয়ে।
কিছুক্ষণ পরে রিপ্লাইতে দুইটা রাগের ইমোজি পেয়ে বুঝলাম মিতুর সকালের চুমু খাবার পর সেই রাগ এখনো বহাল তবিয়তে মিতুর মস্তিষ্কে চেপে বসে আছে। থাকে থাকুক, আমার মিশন বিরতিহীন চলবে।
আবার লিখলাম,– তুমি আমার সেভিং মেসিন মিতু, গালে স্পর্শ করালেই তোমার ঠোটের স্পর্শ পাই।
রিপ্লাইতে রাগের ইমোজি।
আবার লিখলাম,– তুমি আমার লিপজেল মিতু, ঠোঁটে স্পর্শ করালেই তোমার ঠোটের স্পর্শ অনুভব করি।
আবারও রিপ্লাইতে রাগের ইমোজি।
আবার লিখলাম,– তুমি আমার খাট মিতু, শুলেই মনে হয় তোমার বুকে ঘুমিয়ে আছি।
এবার রিপ্লাইতে ইমোজির সংখ্যা একটা বেড়ে তিনটা রাগের ইমোজি।
আবার লিখলাম,– তুমি আমার ফেসবুক মিতু, তাই তোমার বুকে এত এত গল্প লিখি।
এবার রিপ্লাইতে মিতু লিখলো,– আপনার মেসেজ দেখে মনে চায় মঙ্গল গ্রহে চলে যাই, দুনিয়ায় থাকার আর ইচ্ছে নাই।
আমি লিখলাম,– তুমি আমার দুনিয়া তাই মঙ্গল গ্রহে তুমি পাশে থাকলেই দুনিয়ার ফিল পাবো, আমিও নাহয় মঙ্গলে চলে যাবো।
রিপ্লাইতে মিতু লিখলো,– দাড়ান সকালে আপনার ব্যবস্থা করবো।
তারপর আমি যাহা ভাবতেও পারিনি মিতু ফার্স্ট মোশনে তাহা ভেবে আমাকে ব্লক করে দিলো।
আসলে এপর্যন্ত কত মেয়ে চোখের সামনে দিয়ে এলো গেল, এভাবে কাউকে এতটা ভালো লাগেনি। কিন্তু মিতুকে প্রথম দেখায় মন সায় দিয়েছিল, প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাই, উদ্দেশ্য একটাই, মিতুকে আপন করে পেতে চাই।
সকালে কলিং বেল বেজে উঠলো, আম্মা বললো গিয়ে দেখ তো কে এলো!
আমি গিয়ে দরজা খুলেই চমকে গেলাম, মিতু দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে…
চলবে…
গল্পঃ সবার উপরে প্রেম (প্রথম পর্ব)
ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।