সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১৫

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১৫
মোর্শেদা হাবিব!
***************
রানী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন স্বামীর দিকে।
ধীরে ধীরে বললেন-“কি বললে তুমি?”
আমজাদ চৌধুরী সদর্পে উত্তর দিলেন-
-“যা শুনেছো,তাই বলেছি।পৌষী রাজের বিয়ে করা বৌ।শরীয়ত সম্মত ভাবে বিয়ে হয়েছে ওদের। সাহেদার অপারেশনের ঠিক আগের দিন আমি নিজে ওদের বিয়ে দিয়েছি যেন সাহেদা মনের ওপর চাপ না রাখে !কারন সাহেদার ইসিজি ভালো আসছিলো না।প্রেসার তুঙ্গে।তবে এটা ছিলো একটা দিক।আমি নিজেই চাইছিলাম রাজের জন্য এমন একটি মেয়ে যার মাধ্যমে আমার ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হবে নির্মল ভালো মানুষ,কোনো বেহায়া উড়নচন্ডী না।”
বিস্ফোরিত চোখে রানী তাকিয়ে ছিলেন আমজাদের দিকে!
এবার বলে উঠলেন-
-“আমার ছেলেকে তুমি বিয়ে করিয়েছো?সে ও আমাকে না জানিয়ে?তুমি এটা করতে পারলে?তুমি ওর ভবিষ্যতটা নষ্ট করে দিতে পারলে?”
-“চুপ করো!”(ছোটখাটো হুঙ্কার দিলেন যেন আমজাদ চৌধুরী!)তোমার ছেলের ভবিষ্যত!হাহ্….শোকর করো পৌষীর মত মেয়ে যে তোমার ছেলেকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে!বেচারী মায়ের শারিরীক অসুস্থতায় আর আমার চাপে কিছু বলতে পারেনি তাই আমার সিদ্ধান্ত বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নিয়েছে!আর তোমার ছেলে? তাকে প্রেসার করে বিয়ে করাইনি বরং সে স্বতস্ফুর্তভাবে বিয়ে করেছে।পরে বুঝলাম সে নিজেও পৌষীর মতো মেয়েই পছন্দ করে।তোমার ছেলের আচরণ এরই মধ্যে কত বদলে গেছে টের পাও না? যে রগচটা ছেলে হৈ হুল্লোড় গান বাজনা নিয়ে থাকতো সে কেমন শান্ত আর ভদ্র হয়ে গেছে?পৌষীর কারনেই এটা হয়েছে!”
-“ওকে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিলো।তুমি আমার অধিকার নষ্ট করেছো!”রানী ক্ষোভের সাথে বললেন।
-“মোটেই না।তোমার নিজের ছেলে যে তোমার কাছে ক্রেডিট কার্ডের চেয়ে বেশী কিছুনা তা আমার চেয়ে বেশী আর কে জানে? তুমি ওকে ভাঙ্গিয়ে বড়বাপের বিলাসী বেটিকে আমার বাড়ীর বউ বানাবে আর আমার ছেলে সারাজীবন নরকের আগুনে জ্বলবে!আমার সম্পত্তি নয়ছয় করবে, এটা তো আমি হতে দেবোনা।আমি জেনে বুঝেই পৌষীর হাত ওর হাতে বেঁধে দিয়েছি,জানতাম যে পৌষীর সরলতা,পবিত্রতা ওকেও সংসারী করে তুলবে,ভালোমানুষ বানাবে!তাই আমাকে এই হঠকারী একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে!এখন দেখছি আমি পৌষীর ক্ষতিই করে ফেলেছি!”
রানী কিছুক্ষণ নিরব বসে রইলেন।মনে পড়লো পৌষীকে তিনি কিসব কটু কথাগুলো শুনিয়েছেন।মেয়েটা দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদছিলো।একটা প্রতিবাদ করেনি।
রানী হঠাৎ সুর নরম করে বললেন-
-“কথাটা কি তুমি আমাকে ফোনে জানাতে পারতেনা ?”
রানীর চেহারা থেকে মেজাজি ভাবটা অনেকটা কমে এসেছে!কেন যেন তার একটু খারাপই লাগছে।বিয়ে মানা না মানা পরের বিষয়।মেয়েটাকে তো যাচ্ছেতাই বলেছেন তিনি!এতোটা বলা বোধহয় উচিত হয়নি!সব দোষ রাজের বাবার!সে একটু জানিয়ে দিলে এসব ঘটতো না।রানী তো আর উড়ে এসে বিয়ে বন্ধ করে দিতেন না!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আমজাদ ধমকের সুরে বললেন-
“জানাইনি তোমার এই চন্ডাল স্বভাবের কারনে।আমি তো জানি তোমার মুখের ভাষা কতটা মধুর।তাই আমি না থাকাবস্থায় তুমি যে ওদের কি কি বলতে পারো সেটা আমার জানা আছে!কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা,তোমার কুনজরে ওরা পড়েই গেলো!তুমি কি পৌষীর কাছে জানতে একবারও চেয়েছিলে, কেন সে রাজের সাথে একান্তে আলাপ করেছিলো?”
রানী চুপ করে রইলেন!আমজাদ ফুঁসে উঠে বললেন-
-“চাওনি এবং এখন আমি বুঝতে পারছি,নিশ্চয়ই তুমি তাদের এমন কিছু বলেছো যা তারা সহ্য করতে পারেনি,রাতারাতি ঘর ছেড়েছে!শোনো,এই জিহ্বাটাকে সামলাও। মানুষকে জাহান্নামে নেবার জন্য এই জিহ্বাই যথেষ্ট। আল্লাহই জানে,মেয়েটাকে নিয়ে ওর অসুস্থ মা’টা কোথায় আছে,কেমন আছে!ঢাকায় তো তেমন ঘনিষ্ট আত্মীয় কেউ নেই! ”
-“আমি তো আর ওদের চলে যেতে বলিনি…..!”
রানী মুখ ভার করে বললেন।
-“তোমার বলা লাগেনা,তোমার মুখের ভাষাই যথেষ্ট।সাহেদা কোনো ভিখিরীর মেয়ে কিংবা বউ নয়।বেচারীর স্বামী মারা যাওয়ায় একাকী মেয়েটাকে নিয়ে বিপদে পড়েছে নইলে ওর মতো আতামসম্মান বোধ অলা মানুষ তোমার বাড়ীতে এসে উঠতো না!বরং তুমি নিজের অতীত ভুলে গেছো।কোথা থেকে উঠে এসেছো ঘেঁটে দেখো।মানুষ হাতে দুটো পয়সা পেলে সে অতীত ভুলে যায়।তুমি তোমার অবস্থানের পরিচয় দিয়েছো আর সাহেদা তার অবস্থানের।ওদের সাথে তোমার ব্যবহারও আন্তরিক ছিলোনা,সব দেখেছি কিন্তু শান্তি নষ্ট হবার আশঙ্কায় কখনো কিছু বলিনি!
যাও….সরো আমার সামনে থেকে!পুতুলের মতো দাড়িয়ে আছে কেন?”
রানী নিরবে নিজের রুমে চলে গেলেন!
আমজাদ চৌধুরী মোবাইল টিপে রাজকে কল দিলেন।
খেঁকিয়ে উঠলেন-“কোথায় তুই,এদিকে আয়!” বলেই ফোন কেটে দিলেন।
দশ মিনিট পর রাজ ঢুকে তাকে সালাম দিলে আমজাদ ওর দিকে তাকিয়ে বিস্সয়ে বোবা হয়ে গেলেন! তার ছেলে তাকে শেষ কবে সালাম দিয়েছে তা তিনি মনে করতে পারছেন না।দ্বিতীয়ত:ছেলের মুখে কয়েকদিনের না কামানো দাঁড়ী আর চোখের কোলে কালিই বলে দিচ্ছে সে একটুও ভালো নেই !পরনের শার্টটাও একজায়গায় কুঁচকানো।রাজের চেহারায় সেই রাজকীয় ভাবটাই উধাও!
পিতৃমন আবেগে নরম হয়ে গেলো!
-“তোর এ অবস্থা কেন?
রাজ কোনো জবাব দিলোনা!
আমজাদ শান্ত স্বরে বললেন-
-“তোর ফুপিরা কেন গেলো,কিছু জানিস তুই?কোথায় গেছে তা জানিস?”
রাজ মাথা নাড়লো!আমজাদ আবার বললেন-“খোঁজ নিয়েছিস?”
-“কোথায় খোঁজ নেবো বাবা?ঢাকায় ওদের কোথায় কে আছে কিছুই তো জানিনা!”
-“ভেবেছিলাম তুই পৌষীকে ভালোবাসিস,আর ভালোবাসার মানুষকে তো মানুষ পাতাল ফুঁড়ে হলেও খুঁজে বের করে…এখন দেখছি তোকে শিখিয়ে দিতে হবে কোথায় খুঁজবি!”
রাজ মুখ নিচু করে আছে।
আমজাদ লক্ষ্য করলেন রাজের চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে!
তিনি উঠে গিয়ে রাজের কাঁধে হাত রাখলেন!
বাবার স্নেহ-উত্তাপে রাজের চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মৃদুস্বরে বললো-
-“আমি এখনো বুঝতে পারছিনা।কোনো কারন ছাড়াই আমাদের কাউকে কিছু না বলে ফুপিরা চলে গেলো কেন?”
আমজাদ ওর কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললেন-“ব্যপারটা আসলে অন্যরকম হয়েছে এখানে!তোর মা তোদের দুজনকে একসাথে গতরাতে কথা বলতে দেখেছে আর তারপর পরই তোর মা পৌষীকে আর তোর ফুপিকে যা তা বলেছে।যার কারনে ওরা চলে গেছে!”
-“তুমি এসব কিভাবে জানলে?”রাজ বিস্মিত।কারন পৌষী ওকে সামান্যতম আভাস দেয়নি যে মা জেনে গেছে বা ওদেরকে কথা শুনিয়েছে তাহলে রাজ মা’কে বোঝাতে পারতো।পৌষীরও বাড়ী ছাড়া লাগতো না।
আমজাদ চৌধুরীর কথায় রাজের চিন্তাজাল বিচ্ছিন্ন হলো-
-“তোর মা’র সাথে কথা হলো একটু আগে।যাক্,যা হবার হয়েছে।এখন ওদের খুঁজে বের করতে হবে আগে,কি করবো কোথায় খুঁজবো মাথায় আসছেনা!”
রাজ হঠাৎ বললো-“এক কাজ করি বাবা,আমি সোজা এ্যাপোলোতে যাই…যে ডাক্তার ফুপির চিকিৎসা করছিলেন।এক মাস পরেই তাকে দেখানোর কথা ছিলো,ফুপি যেখানেই থাকুক না কেন,তাকে তো ঐ ডাক্তারকে একবার দেখাতেই হবে।যদি ওনাকে রিকোয়েস্ট করে আসি, শুনেছি উনি তোমার বন্ধু মানুষ।উনি নাহয় ফুপিকে আটকে রেখে তোমাকে ফোন দিলেন,তাহলে কেমন হয়?”
-“হমম…বুদ্ধিটা মন্দ না! আর ব্যাংকেও একবার যেতে হবে,এটা আমি যাবো কারন ম্যানেজারের সাথেও আমার ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে।তোর ফুপা মারা যাবার পর তোর ফুপির ফ্ল্যাট বেচে লোন শোধ করে বাকী টাকা আমিই সেখানে ফিক্সপড ডিপোজিট করিয়ে দিয়েছিলাম।সেখানেও পৌষী যোগাযোগ করতে পারে।দেখি কোনো সুরাহা হয় কিনা,নইলে অন্য পথ ধরতে হবে!”
রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“কিন্তু পৌষী কি ফিরে আসবে? যে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মেয়ে!”
আমজাদ বললেন-“আত্মমর্যাদাবোধ তো আমাদের সবারই থাকা উচিত।তোর মায়ের কথাগুলো তোর ফুপির বা পৌষীর আত্মসম্মানে লেগেছে বলেই ওরা নিরবে সরে গেছে।”
-“ও অন্তত আমাকে জানাতে পারতো!রাজ হতাশ গলায় বললো!
-“পৌষী এমনটা করবে না আমি জানতাম তাতে মায়ের নামে ছেলের কাছে নালিশ করা হতো যেটা কোনো ভালো মেয়ে করবেনা।পৌষীর জায়গায় ও ঠিকআছে।”
বাবার কথায় পৌষীর মায়াভরা মুখটা চকিতে চোখের সামনে ভেসে উঠলো।রাজের মনটা হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠলো ওকে দেখার জন্য।
সে ব্যস্ত হয়ে বললো –
-“বাপ্পী,আমি এখনি একবার এপোলো যেতে চাই!”
-“এখনি যাবি…?তাহলে এক কাজ কর্।গাড়ীটা নিয়ে সোজা বারিধারা চলে যা!”
-“গাড়ী থাক্,আমি আমার বাইকটা নিয়ে বেরোচ্ছি!”
আধাঘন্টার মধ্যেই রাজ তার বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।প্রবল বাতাসকে ছাপিয়ে রাজের হোন্ডা যেন উড়ে যাচ্ছে!বুকের ভেতর কেবল একটিই শব্দ-“ভালোবাসি.
…ভালোবাসি !”
সানগ্লাস পড়েও রাজ চোখ খানিকটা কুঁচকে রেখেছে!বুকের ভেতরে এক অন্যরকম অস্থিরতা।পৌষীকে কাছে না পাওয়া পর্যন্ত এই অস্থিরতা কমবে বলে মনে হয়না।
একে একে পৌষীকে প্রথম দেখার ক্ষণটির কথা মনে পড়ে গেলো রাজের।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো ওর।মনে মনে ভাবতে লাগলো,’এবার পেলে আর তোমাকে আমার জীবন থেকে হারাতে দেবোনা!”
নানান ভাবনায় রাজ কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলো।ফলে এপোলোতে ঢোকার মুখে রাজের হোন্ডা সামনের আরেকটি হোন্ডার অবস্থান সে লক্ষ্যইই করেনি।সেই বাইকটাও রাজের দিকেই এগিয়ে আসছিলো!মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধার শেষ মুহূর্তে রাজ হার্ড ব্রেক করার চেষ্টা করলো!
ফলে হোন্ডা তীব্র স্কীড করে পাশ কাটাতে গিয়ে সামনের পিলারে বাড়ী খেলো।
রাজ বাইক থেকে দুই তিন ফুট দুরে প্রায় ডিগবাজী খেয়ে ছিটকে পড়লো !
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here