সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-২১

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-২১
মোর্শেদা হাবিব!
***************
মীরা ধীরে সুস্থে ব্যাগ গোছাল।তারপর নেহালকে ফোন দিলো।ফোনটা ধরলো সীমু।
মীরা মনে মনে অবাক হলেও স্বাভাবিক সুরে সালাম দিলো!
-“ভাবী আসসালামুআলাইকুম!”
-“অলাইকুমসালাম!”
-“অলাইকুম না ভাবী ওয়ালাইকুমুমুস্সালাম।মানে….এবং তোমার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।ওয়া মানে এবং! এবার আপনার ছোট ভাইজানকে ফোনটা দিন!”
-“আমার ছোট ভাইজান আবার কে?”
-“ওমা…নেহাল! দেবর তো ছোটভাইই।আর ছোটভাই সন্তানসম।”
-“তুমি আজকে এভাবে কথা বলছো কেন?”
-“কিভাবে কথা বলছি ভাবী?”
-“তোমার বর তার নিজের ঘরে!”
-“ওহ্,তা ওর ফোনটা আপনার ঘরে কেন?”
-“সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করো!আমি ফোন নেহালকে দিচ্ছি!”
বলে কট করে ফোনটা রেখে দিলো সীমু।মীরা ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি হাসলো।দশ মিনিট বাদে নেহালের ফোন আসলো!
-“ভাবীকে কি বলেছো?”
-“কই,কিছু বলিনি তো! হ্যাঁ,শুধু বলেছি,আপনার ছোট ভাইজানকে ফোনটা দিন।”
-“জানিনা,ভাবী একটু আপসেট।তুমি নাকি এভাবে তার সাথে আগে কথা বলো নি।”
মীরা কোনো জবাব দিলোনা।নেহাল বললো-
-“আচ্ছা,ফোন কেন করেছো বলো!”
-“আমি বাসায় ফিরতে চাই,এটা বলার জন্য।কিন্তু আপনার ফোন তো আপনার কাছে থাকেনা।ফোনের হাত পা গজিয়েছে,সেটা এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়ায়।তাই আমার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে।”
-“তাহলে কি তুমি আসতে চাও না?”
-“না আসলে তো ঐ শাকচুন্নি আপনার মাথা চিবিয়ে খাবে!”
-“আহ্,মীরা।মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ।এসব কি ভাষা তোমার?”
-“বাংলা ভাষা আবার কি ভাষা।রাখি!”
-“তাহলে তুমি আসছো না?”
-“না…!”
বলে ফোনটা রেখে দিয়ে কেঁদে ফেললো মীরা।কাঁদতে কাঁদতেই পৌষীকে ফোন দিলো।একটু আগের করা ফোনালাপের সবই বললো!
পৌষী হতাশ সুরে বললো-
-“মীরা,তুমি এভাবে টেম্পার লুজ করলে নেহালের শ্রদ্ধা হারাবে।এভাবে কি তাকে ভুল ধরিয়ে দিতে পারবে?বোকা মেয়ে।তুমি ওনাকে ফোন দিয়ে স্যরি বলো আর তোমাকে নিয়ে যেতে বলো।বাকিটা পরে বলছি।আপাতত এতটুকু করো!”
মীরা চোখ মুছে নাক টেনে আবার ফোন দিলো!এবার নেহালই ধরলো।
-“এবার কি?”
-“আ’ম স্যরি…!”
-“হমম…”
-“আসলে মনটা বিক্ষিপ্ত ছিলো তো, তাই!এসে আমাকে নিয়ে যান না, প্লিজ।বাড়ী গিয়ে আমি ভাবিকে স্যরি বলবো, তিনি আপনার মায়ের মতো।তার সাথে বেয়াদবী করা একদম উচিত হয় নি!”
-“আচ্ছা,আমি সন্ধ্যার পর আসবো!”
-“এ্যাই,শুনুন?”
-“বলো!
-“এখানে রাতে খেয়ে যাবেন।আমি নিজের হাত রাঁধবো!”
-“আচ্ছা।আর কিছু?”
-“আপনি আসছেন তো?”
-“পাগল হলে নাকি?আসবো না কেন?”
-“রাখি তাহলে? ”
-‘রাখো!”
★★“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



দীর্ঘশ্বাস ফেলে মীরা মায়ের কাছে গেলো।রানী ইরার চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছিলেন।মীরা জানালো আজকের রান্না সে করবে।
রানী হাসলেন-“হঠাৎ,এমন শখ হলো।এতোদিন তো বলেও রান্নাঘরে ঢোকাতে পারিনি!”
-“রাতে নেহাল আমাকে নিতে আসবে।ওকে খেয়ে যেতে বলেছি!”
-“এতো খুবই ভালো কথা।তাই বলে তোকে রান্না করতে হবে কেন?”
-“ওর একটা প্রিয় রেসিপি ট্রাই করি।বাকিটা বাইরে থেকে আনিয়ে দাও।এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতোকিছু করতে পারবোনা।আমি তোমার বউমা পৌষী না।”
রানী হেসে ফেলে বললেন-
“ঠিকই বলেছিস।পৌষী ঘরকন্নার কাজে খুব এক্সপার্ট।এতো দ্রুত যে কিভাবে রাঁধে আল্লাহই জানে!”
মীরাকে হাতে হাতে সাহায্য করছিলো রানী!রাহেলার দুদিন ধরে জ্বর তাছাড়া আজকের রান্নাটা রানী বাবুর্চির হাতে ছাড়তে চাননি কারন নেহাল বিয়ের পর এই প্রথম ও বাসায় একাকী আমন্ত্রিত।
রানীর খুশিমনেই মেয়ের জামাইয়ের জন্য হরেক পদের খাবার রান্না করলেন!বাইরের খাবারটা জামাই এর সামনে দেয়াটা ভালো দেখায় না।তাই তিনি প্রেসার কুকার আর ওভেন মিলিয়ে রান্নাটা সারলেন।
মিরাকে ঠেলে পাঠালেন ফ্রেশ হবার জন্য।মীরা দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে বেছে বেছে মনের মতো একটা শাড়ী পড়লো।
পৌষী এ ব্যপারটার উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছে।শাড়ী পরে হালকা সেজে নিলো।
সন্ধ্যের কিছু পরপরই নেহাল চলে এলো!ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও মীরাকে ড্রইংরুমে আসতে হলো!নেহাল আপনমনে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিলো।
মীরাকে দেখে নেহাল মুখ তুলে তাকালো!মীরাই প্রশ্ন করলো-“বাসার সবাই কেমন আছে?”
-“ভালো!তুমি কেমন আছো!’নেহাল হাত থেকে পত্রিকাটা রেখে দিলো!
-“জ্বী,ভালো!ভাবীকে সাথে করে আনতেন!”
নেহাল অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে তাকালো!
বোঝার চেষ্টা করলো মীরা ঠাট্টা করছে কিনা।মীরা দ্রুত অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলো।
-“আমাদের টিকিট কবে কনফার্ম করেছেন?”
-“এখনো কনফার্ম করিনি।”
-“সেক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে সেটা যেন একটু দেরীতে হয়!এই ধরুন সামনের মাসের শেষের দিকে!”
-“হঠাৎ এই কথা?কোনো প্রোগ্রাম আছে?”
-“ভাইয়ার ওয়ালিমাটা সামনের মাসের ফার্ষ্ট উইকে পড়বে সম্ভবত।’
-“ওয়ালিমা কি?”
-“যেটাকে আমরা বৌভাত বলি সেটা মুলতো ওয়ালিমা।পাত্রপক্ষ বউ তুলে এনে এই অনুষ্ঠানটা করে।এটা সুন্নত।”
-“বাহ্,তুমি দেখছি।ধর্মীয় অনেক বিষয়ে খবর রাখো!আমি এটা জানতাম না!”
-“জানি না বলেই আমাদের দ্বারা কত গুনাহ প্রতিনিয়ত হয়ে যাচ্ছে!”
-“যেমন?”
-“যেমন…ধরুন।আপনি আমার সাথে এই যে বসে গল্প করছেন এতে আপনার সওয়াব হচ্ছে।”
-“বলো কি?তোমার সাথে আড্ডা দিচ্ছি এটাও সওয়াব?”
-“জ্বী,রাসুল সাঃ কে তাঁর সাহাবীরা ঠিক একই প্রশ্ন করেছিলেন।স্ত্রীর সাথে সময় কাটাবো তাতেও নেকী? তখন তাঁর উত্তর হয়েছিলো- এর বিপরীতটা করলে তো জেনা হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী সংসর্গে নেকী হবেনা কেন?”
নেহাল হাসলো।
মীরাও হেসে বললো-“আমাদের ধর্মের মতো এমন চমৎকার আর যৌক্তিক ধর্ম নেই!”
-“হমম….তা তো অবশ্যই।তুমি যে ধর্ম বিষয়ে এতো জ্ঞান রাখো তোমাকে দেখে কিন্তু মনে হয়না!”
-“আমি এতটা জানিনা,আমার হবু ভাবী মানে আমার ফুপাতো বোন পৌষী এসব আমাকে বলেছে।ও সবদিকে দারুন….ওহ্ স্যরি!”
-“কি হলো?”
-“পৌষী অপর কোনো পর্দানশীন মহিলার রুপের বর্ণনা নিজের স্বামীকে দিতে বারন করেছে।এতেও নাকি পর্দা নষ্ট হয়।ও নিজে যথেষ্ট পর্দা মেইনটেন করে চলে।আবার কলেজেও পড়ে!”
-“বেশ গুণী মেয়ে।তোমার ভাবীকে বলো,স্বামীর আনুগত্যটাও যেন তোমাকে শিখিয়ে দেয়!”
-“হুঁহ্….দিয়েছে বলেই তো আমি এখন আপনার সামনে বসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছি নইলে এতক্ষণে ঝগড়া বাধিয়ে দিতাম!”
-“যাক্,বাধাওনি বলে ধন্যবাদ।তাহলে চলো আরেকটু সাওয়াব কামাই!”
-“মানে?”
নেহাল উঠে এসে মীরার পাশে বসতেই মীরা সচকিত হলো।
-“এ্যাই,আম্মু চলে আসবে কিন্তু!”
-“তাহলে তোমার রুমে চলো!”জড়ানো কন্ঠে বললো নেহাল।
-“এতো খাতিরের দরকার নাই!আমি কিন্তু আপনার উপর রেগে আছি!”
-“এক্ষুণি রাগ মাটি হয়ে যাবে! ”
কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো মীরা।ততক্ষণে নেহাল ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।

খাবার টেবিলে মীরার আচরণ সম্পূর্ণ অন্যরকম ঠেকলো নেহালের কছে!
মীরা নিজে পাশে বসে যত্ন করে খাওয়ালো নেহালকে।এটা ওটা পাতে তুলে দিলো।নেহাল মীরার পরিবর্তিত আচরণে মনে মনে বেশ হকচকিয়ে গেল নেহাল।ও এতটা বদলে যাবে ভাবেনি।
মীরার আন্তরিক ব্যবহার খুব ভালো লাগছে নেহালের !হয়ত সে তার আগের ব্যবহারের জন্য সে লজ্জিত!
রানী নিজেও মেয়ের সাথে তার জামাইয়ের ঘনিষ্টতা দেখে মনে মনে খুশি হলেন।রাতে খেয়েদেয়ে নেহাল মীরাকে নিয়ে চলে গেলো।
গাড়ীতে মীরা স্বাভাবিক ভাবেই বসেছিল।নেহাল সন্ধ্যের মতো ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বসেছে।মীরা নেহালের কাঁধে মাথাটা রেখে চোখ বন্ধ করে বসেছিলো।নেহাল কানে কানে কিছু একটা বলতেই মীরা লজ্জিত হেসে সায় দিলো!
গাড়ী থামতে মীরা আর নেহাল নামলো!সীমু হাসিমুখে এগিয়ে এসে মীরাকে ওয়েলকাম করলো!
-“যাক্,তুমি এসেছো তাহলে!আমার দেবর তো তোমায় না পেয়ে আমায় জ্বালিয়ে মেরেছে”
মিরার হাসিমুখটা দপ করে যেন নিভে গেল!
সীমু বলেই চলেছে!
-“হাজার হোক দেবর,না তো করতে পারিনা!দেবর মানে জানো তো…,দ্বিতীয় বর!তাই বেচারার আবদার মেটাতে হয়েছে!হিহিহিহি…বলে সীমু খিলখিল করে হেসে উঠলো!
নেহাল নার্ভাস ভঙ্গিতে হেসে মীরার দিকে তাকালো।তারপর সোজা ভেতরে চলে গেলো!মীরা স্বাভাবিক রইল,যদিও অন্তরটা জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে তবু পৌষীর কথামতো মাথা গরম করলোনা!মৃদু হেসে সীমুর হাত ধরে বলল -“সত্যিই,আপনার অনেক কষ্ট হলো ভাবী।হাজার হোক আপনি ওর ভাবী,ওর বড় বোনের মতো।ছোটভাইকে দেখেশুনে রেখেছেন,আমি কৃতজ্ঞ।আমাকেও আপনার ছোটবোনই মনে করবেন!”
সীমু বলার মতো আর কিছু পেলোনা।ভেবেছিলো মীরাকে এই সুযোগে ক্ষেপিয়ে তুলবে আর ফোনে বলা কাটা কাটা কথাগুলোর প্রতিশোধ নেবে কিন্তু মীরার পরিবর্তিত রূপ তাকে দোটানায় ফেলে দিলো!
রাতে নেহাল একটু ভয়ে ভয়ে ছিলো যে মীরা হয়তো এ নিয়ে তোলপাড় করবে!কিন্তু মীরাকে শান্তমুখে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুড়ি খুলতে দেখে নেহাল কিছুটা অবাক হলো!
আরো অবাক হলো মীরা যখন নিজে এসে ওর গায়ের কোটটা খুলে নিয়ে হ্যাঙ্গারে রাখলো।
পনির গ্লাসটা এগিয়ে দিলো!
নেহাল পায়ের মোজা খুলে ফেলে রেখেছে সেগুলো তুলে সোজা করে এককোণে গুছিয়ে রাখলো।মীরা ব্যাগ থেকে বের করে সব যখন গুছিয়ে রাখছিলো!
তখন নেহাল ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল-“তুমি মাইন্ড করেছো?”
-“কেন?”
-“মানে…ভাবী যে বললো…আমি কিন্তু…!”
মীরা হেসে বললো-
-“আসলে আমারই বোঝা উচিত ছিলো,উনি আপনাকে ছোটভাইয়ের চোখে দেখেন,তবে ওনার পরিমিতি জ্ঞানটা একটু কম বলেই ওভাবে কথা বলে!আচ্ছা,আপনি কি চা টা কিছু খাবেন?”
-“নাহ্…!বারান্দায় বসবো দুমিনিট!”
-“জানি তো সিগারেট খাবেন!”বলে মীরা নিজের কাজ করতে লাগলো!
নেহাল বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালো!
মীরা দু কাপ চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো।তারপর নেহালের হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিলো!
নেহাল চমকে উঠলো-“আরো,ফেলছো কেন?”
-“আজ থেকে সিগারেট বন্ধ।”
-“হঠাৎ এই সমন জারী?”
-“সমন কেন মনে হচ্ছে।আপনার ভালোর জন্যেই তো বলছি।কাল সকাল থেকে আপনি নামাজও পড়বেন!”
-“উরিব্বাবা….আমার মা বেঁচে থাকতে এই কথা বলতেন।উনি মারা যাবার পর আর কেউ কখনো বলেনি!”
-“আমি বলছি কারন আমি আপনার স্ত্রী।আপনার ভালো মন্দে আমার অনেক কিছু যায় আসে।আমি বাইরের মেয়ে না যে সাময়িক হাসিতামাশা করে আপনাকে ভুলিয়ে রাখবো তারপর নিজের ধান্ধা ফিকিরে মেতে থাকবো।আপনি আমার ভবিষ্যত।তাই চোখের সামনে সব দেখে নিজের ভবিষ্যত নষ্ট হতে দিতে পারিনা!”
-“জানি তুমি কি মীন করছো।দেখো,সীমু আর আমি দুজন ক্লাস মেট।সেই সূত্রে ও আমার সাথে ফ্রিলি মেশে।!
-“এভাবে ফ্রিলি মেশা হারাম।কারন দেবর মৃত্যতূল্য।মানুষ মৃত্যুকে যত ভয় পায় দেবরকেও ততটা পাওয়া উচিত।ধরুন,আমার যদি কোনো দুলাভাই বা দেবর থাকতো আর তার সাথে এমন ফ্রি লি মিশতাম আপনাকে ফেলে তাহলে আপনার খারাপ লাগতো না?”
নেহাল চুপ মেরে গেলো!
মীরা নেহালের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে বললো-“রাগ করেছেন?”
-“উঁহুঁ….ভাবছি।বাধনহারা হয়ে মানুষ হয়েছি।টাকার অভাব ছিলো না কোনোদিন কিন্তু স্নেহমাখা শাসনের অভাব সবসময়ই বোধ করেছি।আজ অনেক দিন পর তোমার বলা কথাগুলো সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে!”
মীরা নেহালের পাশে এসে বসে ওকে নিজের আঁচল দিয়ে ঢেকে নিলো!নেহাল মিরার ঘাড়ে মুখ গুঁজে বললো-“আমাকে এইভাবে সবসময় ঢেকে রেখো!”
দুজনে দুজনকে পাবার আনন্দে বুঁদ হয়ে রইলো!

ইরা নিজের রুমের ড্রয়ার আঁতিপাতি করে খুজেও আংটিটা পেলোনা।ওর গতবছরের জন্মদিনে বাবা ওকে গিফট করেছিলো।কোথায় খুলে রাখলো সেটা !
ইরার আবার যেখানে সেখানে আংটি খুলে রাখার একটা বদভ্যাস আছে!
হঠাৎ মনে পড়ল আংটিটা ফিনের গাড়ীতে খুলে রাখেনি তো?
ফিনের ফোন নম্বর ইরার কাছে নেই!সেটা পেতে হলে রাজের শরনাপন্ন হতে হবে।ইরার মনে অজানা সংকোচ কাজ করলো।তাই ব্যপারটা চেপে গেলো!
আংটিটা ফিনের চোখে পড়বে কিনা কে জানে!
এদিকে ফিন গাড়ী বন্ধ করে গাড়ীতে কিছু রয়ে গেলো কিনা দেখার সময়ই গাড়ীর ড্যাশবোর্ডের উপর চোখে পড়লো ছোট্ট রুবি পাথরের আংটিটা।সে হাতে নিয়ে দেখলো তাতে লাল রুবির উপর ‘Ira’ খোদাই করা আছে!
ফিন আংটিটা বুক পকেটে নিয়ে ঘরে ফিরে এলো।
ইরার ফোন নম্বর নেই ফিনের কাছে,
কিভাবে ওকে জানাবে যে ওর আংটি ফিনের কাছে রয়ে গেছে?
একমাত্র পথ রাজ কিন্তু রাজ তো স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাইবে কি জন্যে চাইছে!কি বলবে ফিন?

পৌষী এই কদিন ঘর থেকে বেরোয়নি।আজ তৃণা এসে জোরাজুরি করায় ওর সাথে বেরুলো।ওর কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে হবে!সেগুলো সেরে পৌষীকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটির টপ ফ্লোরে খেতে বসলো দুজনে!পৌষীর জন্যই একটা কর্ণার বেছে নিলো তৃণা।পৌষী নেকাব সামান্য সরিয়ে বার্গারে কামড় দিতেই দেখল একটু দুরেই একজোড়া কৌতুহলি চোখ ওকে দেখছে।পৌষী চট করে নিকাব ফেলে দিলো!মুখ নামিয়ে ফেললো!
তৃণা পেছন ফিরে তাকালো-“কে?কাকে দেখে চুপসে গেলি?”
-“,মনে নেই!লোকটাকে আগে কোথায় যেন দেখেছি!খুব চেনা।সেও কেমন করে তাকিয়ে আছে,চল্ উঠি!”
-“দাঁড়া,আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করি!”
পৌষী দ্রুত তৃণার হাত ধরলো-“না না কোনো দরকার নেই!চল্ তো উঠি!”
হঠাৎ লোকটি নিজেই এগিয়ে এসে বলল-“বসতে পারি?”
পৌষী নিকাব ফেলে আড়ষ্ট হয়ে চুপ করে বসে রইলো!
তৃণা শক্ত গলায় বলল-“কে আপনি?এখানে কেন বসবেন?আমরা তো আপনাকে চিনি না!”
-“আপনি চেনেন না,তবে উনি চেনেন!”পৌষীকে দেখিয়ে বলল ছেলেটা।
পৌষী মুখ নামিয়ে বসে রইলো।সে অনেক ভেবেও ছেলেটার কথা মনে করতে পারছেনা।ছেলেটা হঠাৎ বললো-“থাক্,আপনাকে আর কষ্ট করে মনে করতে হবেনা।আমি রাজের বন্ধু মারুফ।একবার রাজের বাড়ীতে আপনার হাত ধরেছিলাম বলে রাজ আমাকে ধাক্কা মেরেছিলো!
ধাঁ করে মনে পড়ে গেলো পৌষীর।তবু সে নিরব রইলো।মারুফ হা হা করে হেসে বললো-“কতই না রূপ আপনাদের।শুনলাম,রাজ কে বিয়ে করতে যাচ্ছেন।আরে এসব খবর চাপা থাকেনা।কিভাবে আকদ হয়েছে সে খবরও রাখি।হাহ্….কোটিপতি বাপের একমাত্র ছেলে বলে ওর গলায় মালা চড়াতে দেরী করেন নি।রাজের মা আসার আগেই কেল্লা ফতে করেছেন! বুদ্ধি তো মন্দ না।আমাদের মতো গরীবদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাবেনা জানি।তো আপনার রাজ কি ধোয়া তুলসী পাতা?নাকি ওর সম্পত্তিটার দিকেই আপনার চোখ পড়েছে? আপনারা পারেন ও বটে!”
মারুফের কথার মাঝখানেই পৌষী হঠাত উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো।তৃণাও দ্রুত ওর পিছু নিলো।
মারুফ পেছন থেকে ডেকে উঠলো-“আরে আরে যাচ্ছেন কোথায়?আপনার সাথে তো আসল কথাই বলা হলো না!
পৌষীদের চলে যেতে মারুফ আঙ্গুলের ইশারায় তার সাথের ছেলেটাকে ডাকলো!-“ছবি তুলেছিস?”
-“হ, তুলছি!”
-“দেখি…!”
ছেলেটার হাত থেকে ডিজিটাল ক্যামেরাটা নিয়ে দেখলো পৌষী তার দিকে তাকিয়ে আছে আর মারুফ হাত নেড়ে কথা বলছে।
মারুফ খুশি হয়ে বললো–“দারুন এসেছে।শালা রাজেরে এইবার দেখাবো আসল খেলা ।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here