সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-২০

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-২০
মোর্শেদা হাবিব!
***************
আজ সকালেই ইরার ডিভোর্স সম্পন্ন হয়ে গেলো!
আমজাদ চৌধুরী আর রাজ ইরাকে নিয়ে ব্যারিষ্টার খসরু আহমেদ এর চেম্বারে এসেছেন।সেখানেই এফিডেভিট করে ইরা তালাকে তৌফিজ গ্রহন করলো অর্থাৎ স্বেচ্ছায় নিজ নফসের উপর তালাক নিয়ে নিলো।আর এ ধরনের তালাক নেবার পর স্ত্রী গণ চাইলে স্বেচ্ছায় মোহরানার অংশ ছেড়ে দিতে পারে।কুরআনুল কারিমে সেররকমই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
আমজাদ চৌধুরী এবং ইরা দেনমোহরানার দাবী না করার পক্ষে।যদিও ব্যারিষ্টার সাহেব মোহরানার ও ভরণপোষণের মামলা ঠুকে দিতে চাচ্ছিলেন।কিন্তু ক্লায়েন্টের মত না পেয়ে তাকে নিরাশ হতে হলো।
রাজ পুরোটা সময় নিরব ছিলো।সে কোনো মন্তব্য না করে বোনের কাঁধে হাত রেখে বুঝিয়ে দিতে চাইছিলো যে,সে যে সিদ্ধান্তই নিক, রাজ ওর সাথে আছে।
ইরা মামলা না করার পক্ষে।ঐ বদমাশের সাথে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক নয় সে।
ওর এতটুকু খারাপও লাগছেনা যে ওর ডিভোর্স হয়ে গেলো বরং ওর মনে হচ্ছিলো সে একটা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে।
তবে বাড়ী ফেরার পর দেখলো ওর মায়ের মনটা খুব খারাপ।
ইরা তাকে সান্তনা দিয়ে বললো-“মা,আমি যে ওরকম একটা জঘন্য একটা পরিবেশ থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছি,তাতে তুমি খুশি হওনি?”
-“প্রশ্ন তো আর খুশির নয় রে মা।এটা মন্দের ভালো।দুঃখ লাগছে এই ভেবে যে,লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আধা শহরকে দাওয়াত দিয়ে তোর বিয়ে দিয়েছি কিন্তু তোকে সুখ কিনে দিতে পারিনি রে মা।তোর গায়ে আজ তালাকপ্রাপ্তার সিল পড়েই গেলো!”
ইরা মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো-“ঐ নরক থেকে বেরোতে পেরে আমার কাছে ভালো লাগছে।তুমি জানোনা কতটা যুদ্ধ করে নিজেকে বাঁচিয়ে ফিরেছি।সেসব কথা এখন মনেও করতে চাইনা মা।ভদ্রলোকের বেশে সেখানে অমানুষেরা ঘোরাফেরা করে।”
রানী দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললেন-“তোর সুখটাই আমার কাছে বড় রে মা।টাকা দিয়ে যদি সুখ কেনা যেতো তাহলে সেটা কিনে তোর কোচর ভরে দিতাম! কিন্তু আফসোস।সুখ সম্পূর্ণ ভাগ্যের বিষয়।যা আমরা তোকে দিতে পারবোনা।”
বলে রানী নিজেও কেঁদে ফেললেন।
রানীর মনে এক নতুন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।মেয়েটাকে তিনি কার কাছে দেবেন!অমানুষের ভীড়ে কে আছে সত্যিকারের মানুষ যার কাছে তিনি মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হবেন?
তিনি ইরাকে আবার বিয়ে দেবেন এটা শুনলে হয়ত অনেক পাত্রই এসে জুটবে কিন্তু টাকা আর সম্পত্তির লোভে আসা সেসব পাত্রের কাছে তার মেয়ে কি আদৌ সুখী হতে পারবে? তার ভাঙ্গা হ্রদয়ের মেয়েকে একবার কষ্ট পেতে দেখেছেন।দ্বিতীয়বার এটা সহ্য করতে পারবেন না তিনি! এমন কেউ কি নেই, যে টাকার জন্য নয় শুধু তার মেয়ের জন্যই ওকে বিয়ে করবে???’
ভাবতে গিয়ে রানীর দুই চোখ ভিজে উঠে।দুই মেয়ের ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য মাঝেমধ্যে তার নিজেকেই দায়ী মনে হয়, তিনি সেসব ছেলেদের বাড়ী গাড়ী আর প্রপার্টির খোঁজ ভালোভাবে নিলেও তাদের স্বভাব চরিত্র আর ঈমানদারীতার খোঁজ নেননি!নিলে হয়তো এতটা মুখ থুবড়ে পড়তে হতো না!
তবে…রাজের বেলাতেও একই ভুল করবেন না !যে করেই হোক পৌষীকে খুঁজে বের করতে চান তিনি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আজই রাজের বাবার সাথে কথা বলবেন!
আত্মীয় মহলে ছেলের বউদের নানান কীর্তি শুনে রানীর মনে এমনিতেও ভয় ঢুকে গেছে! তার এক খালাত বোনের ছেলের বউ নাকি গহনা নিয়ে ঝগড়া করে শ্বাশুড়ীর গায়ে হাত তুলেছে!এখন ছেলেকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে!আদরের ছেলেও বউকে শাসন না করে মা’কেই উল্টো দোষারোপ করে বউয়ের পিছু পিছু নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠেছে! সেই ফ্ল্যাট আবার বউয়ের নামে রেজিষ্ট্রি করেছে।এই নিয়ে মহা গ্যঞ্জাম! কি যে বিশ্রী অবস্থা! কে জানে কোনদিন ঐ ছেলেকেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় সেই বৌ !
ভাবতে গিয়ে রানীর হাতপা অবশ হয়ে ওঠে।তার একমাত্র ছেলের বউ এমন হলে তার কষ্টের সীমা থাকবেনা!রাণী এর বেশী আর ভাবতে চাননা!
নাহ্,পৌষীর মতো মেয়ে হয়না।কি অমায়িক ব্যবহার!তার পুরো ঘরটা কি সুন্দর আগলে রেখেছিলো সে! সব দিক খেয়াল করে কাজ করে!যেমন রান্নার হাত তেমনি সব কাজেই চটপট আর করিৎকর্মা।খুব গুছিয়ে কাজ করার অভ্যাস।তার উপর কোনো আলগা বদভ্যাস নেই! সচ্চরিত্রতার মুর্ত প্রতীক। আর ওকেই কিনা নিজের ছেলেকে জড়িয়ে…..ছিঃ! অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গিয়েছে তার দ্বারা!

সকাল নয়টার কিছু বেশী হবে!
রাজ নিজের ঘরেই শুয়েছিলো।আজ অফিস যাবার কথা বলে এলার্ম দিয়েই রেখেছিল তবু ঘুম ভাঙ্গতে দেরীই হয়ে গেলো!আমজাদ মীরাকে বললেন রাজকে ডেকে তুলে অফিসে পাঠিয়ে দিতে!
মীরা গতকাল শ্বশুড়বাড়ীর সাথে এলেও ফিরে যায়নি।নেহালকে বলে দুদিনের জন্যে রয়ে গেছে।এমনিতেও ওর মন টানছিলো না যাবার জন্য।নেহাল ওর চেয়ে ওর ভাবীর সাথে গল্প করতেই বেশী পছন্দ করে।কি হবে ফিরে গিয়ে।ওদের দুজনের তামাশা দেখতে ভালো লাগেনা।বিয়ের পরের জীবন নিয়ে কত রঙীন স্বপ্ন দেখেছিলো। সে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেছে।এখন শুধু অসহ্য দিনগুলো কিভাবে কাটানো যায়, তা’ই ভাবছে সে।মা তো ইরাপুকে নিয়ে এমনিতেই ভীষণ ডিষ্টার্ব।তাকে আরো টেনশনে ফেলতে চায়না মীরা।
মীরা রাজের রুমে এসে ওকে নক করে ডেকে তুলল।রাজ আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে ঘড়ি দেখলো তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো!
মীরা ভাইয়ের এমন সুইফট চলাফেরা লক্ষ্য করে মনে মনে হাসলো।রাজ আগে বেলা বারোটার আগে ঘুম থেকেই উঠতোনা।এখন তো ফজরে উঠে নাকি নামাজ পড়ে তারপর আবার ঘুম দেয়।
তারপর নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে উঠে পড়ে।
মীরা রাজকে তুলে দিয়ে চলে আসতে নিতেই দেখলো রাজের সেলফোন বেজে উঠলো!
মীরা ফিরে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো স্ক্রীণে পৌষীর হাস্যোজ্জ্বল ক্লোজাপ।
চমকে গেলো মীরা।
রাজের সাথে তাহলে পৌষীর যোগাযোগ আছে!
এদিকে মা ওকে মনে মনে খুঁজে অস্থির!
বারবার পৌষীর কথাই বলে আজকাল ।
মীরার নিজেরও পৌষীকে ভালো লাগে!কিন্তু সেদিনের পর থেকে বিশেষ করে রাজের সাথে ওকে ঘনিষ্টাবস্থায় দেখার কথা শুনে ওর প্রতি মনটা বিরুপ হয়ে গিয়েছিলো। কারন মীরা ওকে অন্যরকম জানতে শুরু করেছিলো।অবশ্য পরে যখন ওদের বিয়ের খবরটা জানলো তখন ওর নিজের কাছেই খারাপ লেগেছে।বাপ্পী কি কারনে ওদের বিয়ে করিয়ে দিয়েছেন সেটাও শুনেছে মায়ের মুখে।
যাক্…পৌষীকে যখন ফোনে পাওয়া গেছে
তাহলে সামনাসামনিও পাওয়া যাবে।
মীরা একটু ভেবে ফোনটা রিসিভ করে ফেলল।
ওপাশ থেকে পৌষী সালাম দিলো!
মীরা শান্ত স্বরে বলল-
-“ওয়ালাইকুমুস্সালাম,ভাবী আমি মীরা!”
ওপাশে পৌষী চুপ মেরে গেলো!
সে ভাবতেই পারেনি এই সাতসকালে রাজের ফোনটা মীরা রিসিভ করবে!
মীরাই প্রথম কথা বললো-“কেমন আছো ভাবী?”
মীরার ‘ভাবী’ ডাকটা পৌষীর হ্রদয়ে এক অনীর্বচনীয় অনুভূতির সৃষ্টি করলো!
সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু স্বরে বলল-“আলহামদুলিল্লাহ!তোমরা সবাই ভালো তো আপু ?মামী ভালো আছেন ?”
-“হ্যাঁ..ভালো আছে!ফুপি কেমন আছে?”
-“আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।”
-“ভাবী একটা অনুরোধ করবো রাখবে?”
-“কি বলো?”পৌষী কিছুটা অবাক হলো!
-“তোমার সাথে যে আমার যোগাযোগ হয়েছে এটা ভাইয়াকে বলোনা।প্লিজ পৌষ…মানে ভাবী প্লিজ।ইটস আ রিকোয়েষ্ট।”
কয়েক সেকেন্ড ভেবে পৌষী হাসলো-“আচ্ছা বলবোনা।”
-“রাখি ভাবী,বাই!ভাইয়া তো বাথরুমে,হয়তো এক্ষুনি বেরোবে,রাখি তাহলে!”
-“আল্লাহ হাফেজ!”
পৌষী ফোন রেখে দেবার পর মীরা দ্রুতহাতে পৌষীর ফোন নম্বরটা সেভ করে নিলো নিজের সেল ফোনে!
বাথরুমের দরোজায় খুট শব্দ হতেই মীরা দ্রুত রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো!
★★
মীরা দুদিনের জন্য মায়ের বাড়ী বেড়াতে এসেছিলো আজ বিকেলেই ওর ফিরে যাবার কথা!হয়ত নেহাল ওকে নিতে আসতে পারে!লোক দেখানো সামাজিকতা আর আলগা দরদ দেখানোর মধ্যে সে আবার ওস্তাদ। মীরা ঠিক করে রেখেছে সে যাবেনা।এই সপ্তাহ পুরোটা এখানেই থাকবে।নেহাল রাগ করলে করুক গে।ওর রাগে কিছু যায় আসে না।তাছাড়া ঐ বাড়ী ফিরে গিয়েইবা লাভ কি?নিজের স্বামী আর তার ভাবীর রঙতামাশা দেখতে কার ভালো লাগে!
নেহাল যা’ই বলুক,আজ তো একটুও যাবেনা সে।ওর পক্ষে সম্ভব হলে তো ওকে ডিভোর্সই দিয়ে দিতো কিন্তু ইরার ডিভোর্সের ঘটনার পর তার জন্য বিষয়টা শুধু কঠিনই নয় প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।তাছাড়া লোকেইবা কি বলবে?
দুবোনেরই একই অবস্থা?লোকে তো এটাই বলবে যে, নিশ্চয়ই এদের মেয়েগুলোই ভালোনা!সবাই তো এটাকেই সত্য ধরে নেবে!
বিকেলে যখন নেহাল আসলো মীরা রাগে ওর সামনেই গেলোনা!রাহেলাকে দিয়ে নাস্তা পাঠিয়ে দিলো। রানী অবশ্য মেয়ে জামাইকে খাওয়ানোর জন্য খুব তোড়জোড় করেছিলো কিন্তু নেহাল আর বসতে চাইলোনা।মীরার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল বলে মা মীরাকে ঠেলেঠুলে ড্রইংরূমে পাঠালো।
মীরা গম্ভীর মুখে সামনে এসে বলল-“আমি এ সপ্তাহে এখানেই থাকবো!”
-“হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত? আমাকে জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন মনে করলেনা?”
-“কেন করবো?আপনার কিসের অধিকার?”
-“আমার কিসের অধিকার মানে?আমি কে তুমি জানো না?”
-“আপনি কে তাও জানি,আর সীমু কে তাও জানি!”
-“ওহ্…জেলাসীটা তাহলে এখানে?”(নেহাল বাঁকা হাসলো!)
দেখো,আমরা স্কুল জীবনের বন্ধু!”
-“বাসর রাতে বউ ফেলে কেউ স্কুল জীবনের বন্ধুর সাথে রাতবিরেতে আড্ডা মারতে যায় তা আপনাকে দেখেই প্রথম জানলাম!”
-“আড্ডা মারতে যাইনি ভাবীই আমাকে ডেকেছিলো….সব কথা না জেনে এতো চ্যাটাং চ্যাটাং করছো কেন?”
-“নিজের চোখে দেখেছি আপনাদের রামলীলা!”
-“কি দেখেছো?ভাবীর সাথে শুয়েছিলাম না কিস করছিলাম….কোনটা?”
নেহাল সদর্পে জবাব দিলো!
মীরা লোকটার ঔদ্ধত্ব দেখে মনে মনে রেগে গেলো!সাহস কত বড়! রাত বিরেতে পরনারীর সাথে আড্ডাবাজী করে আবার চোটপাট দেখায়!এটা সত্যি মীরা নেহালকে সেসব কিছুই করতে দেখেনি কিন্তু ওকে দেখামাত্রই সীমু নেহালকে ইঙ্গিতে সতর্ক করার মানে কি?সে কেন নেহালকে মাঝরাতে ডাকবে,তারপরেও এমন সাধারন রাতে না, নেহালের বিয়ের রাতে? সে কি দেখাতে চায় নেহালের উপর তার আধিপত্য কতটুকু? যে মহিলা জেনেশুনে ইচ্ছেকরে তার দেবরকে বাসর ঘর থেকে ডেকে বের করে গপ্প মারে,সে কোন প্রকৃতির মহিলা তা বুঝতে মীরার বাকী নেই!তবু মীরার রাগটা নেহালের ওপরই ,সীমু ডাকলেই সে যাবে কেন ?
তার কোনো কমনসেন্স নেই?”
অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে মীরা যখন এসব ভাবছিলো তখন নেহাল উঠে দাঁড়িয়ে মীরার কাছে আসলো।মীরা হঠাৎ একহাত পিছিয়ে গেলো!
নেহাল অবাক হয়ে বলল-“কি…আমি কি বাঘভালুক নাকি? খেয়ে ফেলবো তোমাকে?”
-“সেসব হলেও তো কিছু একটা তো হতে পারতেন!কিন্তু এখন তো কিছুই না,মানুষও না আপনি!যান,আপনার পেয়ারের ভাবীর কাছে যান্! “বলে মীরা চলে এলো সেখান থেকে।

পৌষী আসরের নামাজের জন্য অযু করে বেরোতেই ওর ফোন বাজলো।
আননোওন নাম্বার দেখে কিছুটা ইতস্তত করে ফোনটা কানে ঠেকিয়ে সালাম দিলো পৌষী!
-“ভাবী,আমি মীরা!”
-“ওহ্,মীরা।এটা তোমার নাম্বার? জানতাম না তো! তা কি খবর মীরা? সব খবর ভালো তো?”
-“খবরাখবর পরে হবে ভাবী।তুমি আগে তোমাদের ঠিকানা দাও।কোথায় উঠেছো তোমরা?”
-“ইয়ে মীরা…মানে..?”
-“ডোন্ট হেজিটেট ভাবী।কোনো সমস্যা নেই।আম্মু তোমাকে গরু খোঁজা খুঁজছে তবে মনে মনে।জানো তো ইরাপুর ডিভোর্সের পর থেকে আম্মু একরকম শয্যাশায়ী।আমি তার মনোভাব জানি বলেই তোমার সাথে ফোনের কথাটা জানালাম।আম্মু ফুপির সাথে দেখা করতে উদগ্রীব।তুমি ঠিকানাটা বলো না ভাবী।কোনোরকম সমস্যার সম্ভাবনা হলে আমি নিজেই তোমার ফোনের কথাটা মা’কে জানাতাম না।তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো!”
পৌষী আর দ্বিরুক্তি না করে বলে ফেললো!
-“আমরা তোমাদের পুরোনো বাসাতে মানে নীড়ে উঠেছি কিছুদিন আগে।”
-“ওয়্যাও…তাই নাকি।ওকে আম্মুকে নিয়ে আসছি,ওখানে।বাট রিমেম্বার, ভাইয়া যেন একদম না জানে যে আমরা তোমার সাথে যোগাযোগ করছি,ওকে?”
পৌষী ফাঁপড়ে পড়লো।কি হতে যাচ্ছে, কে জানে!অযু করা ভেজা মুখ ঘামে পুনরায় সিক্ত হলো।হিজাবের প্রান্ত দিয়ে মুখ মুছে বললো-“আচ্ছা,যেমন তোমার ইচ্ছা।মামী কি আজই আসবেন?”
-“আজ….এক্ষুণি!”

পৌষী আসরের নামাজটা পড়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুললো।মামী আসছে শুনে ওর মনে নানান আশঙ্কা কাজ করছে।তবু আল্লাহর উপর ভরোসা করে আছে।রাজ বা বড়মামাকে জানাতে পারছেনা মীরাকে দেয়া কথার কারনে।আল্লাহ ভরসা! যা হবে আল্লাহ দেখবেন।
গেটে বেল বাজানোর পরে সাহেদা নিজে এসেই গেট খুলে দিলেন!
সামনে ইরা, মীরা আর রানীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ হকচকিয়ে গেলেন!
রানী হাসিমুখে এগিয়ে এসে হাত ধরলেন সাহেদার।
ঠিক তখনি ভেতর থেকে পৌষী বেরিয়ে এসে রানীদের দেখে প্রথমে কিছুটা চমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে সালাম দিলো!
রানী ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন তারপর ওকে সরাসরি বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন-
“আমার সেদিনের কথায় মনে কষ্ট পেয়েছিস,তাই না?”
পৌষী ধাতস্থ হতে সময় লাগছিলো।যদিও জানতো মামী আসবে কিন্তু কেন আসবে তা তো জানতো না!
সে মৃদু হেসে মাথা নাড়লো!
রাণী দুহাতে পৌষীর কোমল মুখখানি ধরে কপালে চুমু খেলেন।
তারপর সাহেদার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“আমি আসলে না জেনে সেদিন অনেক কথা বলে ফেলেছি রে বোন।আমাকে তোরা ক্ষমা করে দিস!আমি মনে মনে অনেকদিন ধরেই তোমাদের খুঁজছি।তোমার ভাইকে ককিছু বলার সাহস পাচ্ছিলাম না,এমনিতেই নানান পারিবারিক অশান্তি। এরিমধ্যে আজ সকালে মীরার কাছে শুনলাম পৌষীর কথা।সিদ্ধান্ত তো আগেই নিয়েছি কেবল নানান ঝামেলায় সুবিধে করে উঠতে পারছিলাম না।
রানী সাহেদার হাত ধরে বললেন-“আমি তোমাদের আজই নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।পরে ভেবে দেখলাম,পৌষী মামনিকে একেবারে বউ করে ঘরে তুলে নেবো সেটাই
বরং ভালো হবে।রাজকে এসবের কিছুই জানাইনি।সেদিনের পর থেকে ছেলে আমার সাথে ভালো করে কথা বলে না।ওকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছে ওর বোনেরা তাই আর আগবাড়িয়ে ওকে কিছু বলবো না।কেবল ইরার বাবাকে জানাবো।
সামনের মাসে মীরার ফ্লাইট।ও চায়, ও থাকতে থাকতেই রাজের ওয়ালিমাটা হয়ে যাক।
কথাবার্তার এ পর্যায়ে পৌষী চায়ের জন্য উঠে গেলে মীরা ওর পিছু নিলো!চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে মীরার হাত ধরলো পৌষী!
-“কেমন আছো তুমি মীরা?কেমন চলছে নতুন জীবন?””
মীরা হঠাৎ পৌষীর হাত ধরে কেঁদে ফেললো!মীরার চোখে পানি দেখে পৌষী বিচলিত হয়ে উঠলো!
-“সে কি…কি হয়েছে তোমার?”
মীরা মৃদুস্বরে নেহালের সাথে ওর মেজজা’র অ্যাফেয়ারের কথাটা বললো-“আমার ভাগ্যটাই খারাপ পৌষী!নইলে এমন কেন হবে!কেবল ইরাপুর জন্য চেপে গেছি !নইলে ওর কাছে ফিরে যাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার!”
পৌষী কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওর সবকথা শুনল।তারপর মীরার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বলল-“যতদুর জানি…ইরার সমস্যাটা ভয়ংকর!কিন্তু তুমি যেহেতু এ মুহূর্তে ডিভোর্সে যেতে পারছোনা সেক্ষেত্রে তুমি একটা চেষ্টা করে দেখতে পারো তাকে তোমার দিকে ফেরাতে পারো কিনা!”
-“কি বলছো পৌষী ?ওই বদমাশটা বাসর রাতে ভাবীর ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বউকে একা রেখে বেরিয়ে যায় তাকে কি করে নিজের দিকে ফেরাবো?আর ফেরাতে আমার বয়েই গেছে..!মরুকগে সীমুর কাছে গিয়ে!”
-“ছিহ্…এভাবে বলোনা মীরা।তুমি তার বিবাহিতা স্ত্রী।তোমার স্বপক্ষে আল্লাহর রহমত আছে।তুমি বলছো সে তার অপরাধ স্বীকার করেনা।তাহলে তাকে চাপ দিয়ে স্বীকার করাতে যেওনা!বরং অন্যভাবে ধীরে ধীরে তাকে সঠিক বুঝটা দাও!তাকে একথাটা বোঝাও যে…..যে মহিলা তার স্বামীর সাথে প্রতারণা করতে পারে সে সবার সাথেই এমন করতে পারে!আমি মনে করি,ডিভোর্স দেবার আগে নেহালকে ফিরে আসার একটা সুযোগ দেয়া উচিত !তাকে আল্লাহর ভয় দেখাও,তুমি নিজেও পরহেজগারীতা অবলম্বন করো!সংসার ভাঙ্গা খুব সহজ কিন্তু গড়া কঠিন।তাছাড়া এই সংসার ভেঙ্গে আরেক ঘরে গেলে যে তুমি খুব সুখী হবে, বা সেই লোকটাই যে নিখাদ ভালো হবে তার গ্যারান্টি কোথায়?তারচে বরং নেহালকে তুমি তোমার প্রতি দুর্বল করে তোলো।তোমার প্রেমটা হালাল,তাই এর শক্তিটাও বেশী।পক্ষান্তরে সীমুর সবটাই ছলনা…নোংরামী।
আর হক বাতিলের সংঘর্ষে হকের জয় সবসময় হয়।তুমি হাল ছেড়োনা!চেষ্টা করো তোমার স্বামী যেন এই হারাম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে।আর তুমিই তাকে এখান থেকে বেরোতে সাহায্য করো! একটা সংসার ভাঙ্গা মুখের কথা না মীরা।প্রয়োজনে একটু কৌশলী হও!”
মীরা মুখ গোমড়া করে বলল-“যদি এভাবে কাজ না হয়?”
পৌষী মিষ্টি করে হাসলো-“সেটা তখন দেখা যাবে।আগে বিসমিল্লাহ বলে শুরু তো করো।”
পৌষীর সাথে বাকিটা সময় এসব নিয়েই আলাপ হলো মীরার।হঠাৎ করেই সে সিদ্ধান্ত নিলো!সত্যিইতো,ওর স্বামীকে বাইরের একটা মেয়ের কাছে দখল ছেড়ে দেবার আগে শেষ চেষ্টা করতে দোষ কি! মীরা সিদ্ধান্ত নিলো সে আজই নেহালের কাছে ফিরে যাবে।এর শেষ সে দেখে ছাড়বে।
রানী ঘন্টাদুয়েক থেকে মেয়েদের নিয়ে চলে এলেন।মীরা বাড়ী ফিরেই ঘোষনা দিল। সে রাতে নিজের বাড়ী ফিরে যাবে।
রানী অবাক হয়ে বললেন-”
-“সে কিরে,তুই না বললি কদিন থাকবি?”
-“এখন না মা,পরে একদিন এসে থেকে যাবো!এমনিতেও আমাদের যাবার ডেট পিছিয়ে গেছে!”
রানী আর বেশী উচ্চবাচ্য করলেন না।মেয়ে যেতে চাচ্ছে যাক্।যদি ওদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং গ্রো করে!এটা তো আরো ভালো!রানী তাই ওকে বাধা দিলেন না!

কিছু বই কেনাকাটা শেষে ইরা বাড়ী ফিরছিলো।ফেরার পথে টায়ার পাংচার হয়ে যাওয়ায় ড্রাইভার জানালো।টায়ার মেরামত করতে বেশ সময় লাগবে।ইরা চাইলে তাকে সিএনজি ডেকে তাতে উঠিয়ে দেবে সে।আর যদি অপেক্ষা করতে চায় তাহলে কিছুক্ষণ বসতে হবে!
ইরা গাড়ী থেকে বেরিয়ে গেলো।
-“আমাকে একটা সি এন জি ডেকে দিন!”
ড্রাইভার খানিকটা এগিয়ে গেরো সি এন জির খোঁজে।
তখনি একটা সাদা গাড়ী এসে থামলো ইরার সামনে!ফিন জানালা দিয়ে মাথা বের করে বললো-“ইরা না?”
ইরা চমকে তাকিয়ে লজ্জায় সংকোচে এতোটুকুন হয়ে গেলো!ফিন ওর সংকোচের কারন জানে বলেই পারতপক্ষে ওর সামনে পড়েনা।কারন ইরা ছিলো ফিনের প্রথম ক্রাশ।ইরা তখন স্কুল গার্ল,কলেজ বয় ফিনের বন্ধুত্বের প্রস্তাব ইরা তখন সদর্পে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।
ফিনও তখন থেকেই ইরার নজর এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিলো কারন রাজ তার বাল্যবন্ধু।নিজেদের অপ্রীতিকর সমস্যার কারনে রাজের সাথে বন্ধুত্বে চিড় ধরুক ফিন তা চায়নি।আজ অনেক বছর পর ইরার মুখোমুখি পড়ে গেলো ফিন।পুরোনো দুর্বলতা থেকেই কিনা ফিন জানেনা,ইরাকে দেখেই ওর গাড়ীর গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছিলো।
-“জ্বী,ফিন ভাই!কেমন আছেন?”ইরা বললো।
-“ভালো! কোনো সমস্যা?”
-“না…মানে…!”এরই মধ্যে ড্রাইভার ফিরে এসে বললো-
-“আপা এদিকটায় কোনো সি এন জি নেই!”
ফিন চট করে সমস্যাটা ধরতে পেরে বললো-
-“তুমি চাইলে আমি তোমাকে বাড়ী পৌঁছে দিতে পারি!”
ইরা কিছুটা ইতস্তত করে বললো-
“আপনার কষ্ট হবে!”
ফিন হেসে গাড়ী থেকে বের হয়ে অপর গেটটা খুলে দিয়ে বললো-“এ পর্যন্ত কত কষ্টই তো করলাম।আরেকটু কষ্ট নাহয় করি।কে জানে,কষ্ট গুলো জোড়া দিয়ে যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়!”
ইরার মুখ লালচে হলো।
সসংকোচে গাড়ীতে উঠে বসলে ফিন দরোজা বন্ধ করে নিজে ড্রাইভিং সিটে ফিরে গেলো।
নিঃশব্দে গাড়ী চলছে।দুজনেই চুপচাপ।ইরা বুঝতে পারলো ভদ্রতা করে হলেও কিছু বলা দরকার।কিন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।এমন সময় ফিন প্রশ্ন করলো!
-“তোমার নতুন জীবন কেমন চলছে?'”
ইরা সংকুচিত হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।
ফিন মৃদু হেসে বললো-“নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো?”
ইরা এবারও কোনো জবাব দিলোনা।ফিন আর কোনো প্রশ্ন না করে চুপ মেরে গেলো।দ্বিধা কাটিয়ে ইরা বললো-
-“আমার কথা ছাড়ুন,আপনার কথা বলুন।বিয়ে করছেন না কেন?”
ফিন ম্লান হেসে গিয়ার চেঞ্জ করে বললো-
-“কনফিডেন্ট নষ্ট হয়ে গেছে…তাই !”
-“মানে?”
-“একবার এক কিশোরী বলেছিলো,আমি তার প্রেমের যোগ্য নই।সেই থেকে নিজেকে অযোগ্যদের দলেই দেখি!”
ইরা ঠোঁট কামড়ে বললো-“কোনো বাচ্চা মেয়ের কথায় নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করা উচিত না।সে হয়তো না বুঝেই বলেছে!”
-“অভয় দিলে একটা কথা বলি?”
ইরার বুক ধুকধুক করতে লাগলো।কোনোমতে উচ্চারন করলো-“জ্বী,বলুন!”
..
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here