#হিংস্রতায়_ভালবাসা
#পর্ব_০৪
#রীমা_শারমিন
আহিল ঠিক আমার পেছনে এসে দাড়ালো। আহিলের উপস্থিতিতে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল ভয়ে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম যেন আমাকে বাঁচিয়ে দেয়। এর মধ্যেই আহিল আমার কাঁধে হাত রাখল।
— প্রানো,এতো সকালে তুমি এখানে কি করছো?
হাত দুটো পেছনে রেখে ওনার দিকে ঘুরে তাকালাম মুখে একটা শুকনো হাসি নিয়ে।
— আ আমি মানে, ইয়ে মানে!
— এমন তোতলাচ্ছো কেন? এখানে কি করছো তুমি? ওওও তুমি রান্না করছিলে বুঝি? চুলার দিকে তাকিয়ে বলল।
— হ্যাঁ ও হ্যাঁ, আমি রা রান্না করছিলাম আপনার জন্য।
— তুমি রান্না করছিলে কিন্তু এই কর্নারে কেন দাঁড়িয়ে আছো?
— এ এমনি,এক্ষুনি যাচ্ছি।
— ওওও আচ্ছা। আমি ভাবলাম কিছু করছিলে বোধহয়। যাইহোক, আমার জন্য একটা কফি বানাও তো। মাথা ব্যাথা করছে!
— আচ্ছা।
— তো দাঁড়িয়ে কেন আছো, যাও!
— যাচ্ছি।
আহিল আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। উনি সরে না গেলে আমি যাব কিভাবে?
— আচ্ছা, আপনি রুমে যান আমি নিয়ে আসছি।
— উহু,তুমি কফি বানাও আমি তোমাকে দেখবো এখান থেকে।
— কিন্তু?
— কিন্তু কি প্রানো? আর তোমার হাতটা এভাবে পিছনে রেখেছো কেন?
— এ এমনি কিছু নেই।
— হা হা হা হা
আহিল হঠাৎ করেই উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করল। ওর হাসির শব্দ আমার কাছে ভয়ংকর লাগছে, কিন্তু আমি এমন কি বললাম যে এভাবে হাসছেন উনি?
— আ আপনি এভাবে হাসছেন যে?
— প্রানো প্রানো প্রানো! মাই সুইটহার্ট,, আমি তোমাকে শুধু জিজ্ঞেস করেছি তুমি হাত কেন পেছনে রেখেছো, কিন্তু তুমি কি বললে? কিছু নেই! হা হা হা হা হা!! আমি কি একবারও জিজ্ঞেস করেছি তোমার হাতে কি আছে?
নিজের বোকামিতে ইচ্ছে করছে নিজের গালে দশটা চড় মারি!চড়ের কষ্টতো কিছুই না, কিন্তু এখন কি উনি আবার আমাকে শাস্তি দিবেন!উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে শান্ত গলায় ওনার হাতটা বাড়িয়ে দাঁড়ালেন।নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে জিজ্ঞেস করলাম,,
— কি কি দেব?
— আমি ভনিতা পছন্দ করি না প্রানো। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কি চাইছি!
— ম ম মানে?
— আহিল খানকে তোমার কি মনে হয় প্রানো? আমি বোকা নাকি নিজেকে খুব চালাক ভাবা শুরু করেছ?
ওনার কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে মনে হয়। আমি খুব বাজে ভাবেই ধরা পড়ে গেছি বুঝতে পারছি। আমার জন্য আজ কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে ।যেটা হয়তো আগের গুলোর থেকে ভয়ংকরও হতে পারে!কোন কিছু না ভেবেই দুইহাতে আহিলের পা জড়িয়ে ধরলাম।
— আমাকে মাফ করে দিন আহিল, আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি শুধু একবার, একবার মা-বাবার সাথে কথা বলতে চাই আহিল।আর কিচ্ছু চাই না, প্লিজ আহিল,একবার।
আমি ওখানেই ওনার পায়ের কাছে বসে কাঁদতে থাকলাম
কিছুক্ষন পরে উনি আমাকে বাহু ধরে টেনে উঠিয়ে সামনে দাড় করালেন।
— ফোনটা দাও
আমি শাড়ির আঁচলের ভিতর থেকে ফোনটা বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে আহিলের হাতে তুলে দিলাম। আহিল ফোনটা হাতে নিয়ে খানিকক্ষণ পরে আবার ফোনটা আমার হাতে দিলেন।হ্যাঁ,ফোনটা আনলক করে নাম্বার ডায়াল করে আমাকে দিল।হয়তো পাষাণ মনে দয়া হয়েছে! ফোন দিয়ে আহিল নিজেই কফি বানানোর জন্য চুলায় পানি বসিয়ে দিল।দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ হলো আর ভেসে এলো মায়ের সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর।যেন, বহুকালের দগ্ধ মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টির আগমন। আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না শুধু অঝোর ধারায় চোখ দিয়ে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছিল গাল বেয়ে।মা ওপাশ থেকে আহিলের নাম ধরা ডাকছিল আর হ্যালো হ্যালো করছিল।
— মা?
— প্রানো! মা তুই কেমন আছিস?
— আ আমি ভালো আছি মা,তুমি কেমন আছো? বাবা,প্রিয়ু,দাদি ভালো আছোতো তোমরা?
— আমরা সবাই ভালো আছি রে মা। আর যার এমন একটা মেয়ের জামাই আছে তারা কি খারাপ থাকতে পারে বল? আচ্ছা আহিল কোথায়?
— আহিল রুমে আছে।
আমি মাকে সবকিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই প্রিয়ু ফোনটা নিয়ে নেয় মায়ের হাত থেকে।
— আপু তুই কেমন আছিস রে?
— প্রিয়ু,আমি ভালো আছি তুই?
— আমিও অনেক ভাল আছি।
— তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?
— খুব ভালো, এতো ভালো স্কুলে পড়াশোনা তো ভালোই হবে, তাই না?
— মানে?
— মানে আবার কি আপু,তুই জানিস না মনে হচ্ছে এমন করছিস ? নতুন স্কুলটা অনেক ভালো আপু।
— আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না প্রিয়ু।
— কেন আহিল ভাইয়া তোকে বলেনি? আমাকে নতুন স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে।
— নাতো!
— নিশ্চয়ই তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে। আচ্ছা এই নে,মায়ের সাথে কথা বল।
— হ্যাঁ মা, আমি তোমাকে যেটা বলতে চাইছিলাম।
— বল না মা?
— এতদিন কেন আমার সাথে তোমরা একবার কথা বললে না মা ?
— বোকা মেয়ের কথা শোনো। আহিল এতো ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া তোর কাছে ফোন নেই। কিন্তু আহিলের থেকে তো প্রতিদিন তোর খবর নিতাম মা।
— মা আহিল আসলে, আসলে
— আহিল খুব ভালো একটা ছেলে প্রানো। প্রিয়ুকে বড় স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে।সবসময় আমাদের খোঁজ নেয় জানিস।
ফোনটা রাখতেই আহিল সামনে এসে দাড়ালো। আমি শুধু ওনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি, উনি আমার পরিবারের সবার সাথে যোগাযোগ রেখেছেন কিন্তু আমার অগোচরে। কিন্তু কেন? কি চায় আহিল?
— থ্যাংক ইউ আহিল!
— তুমি নেহাৎ অসুস্থ নয়তো তোমার এই ভুলের জন্য কি শাস্তি তুমি পেতে কল্পনাও করতে পারতেনা।
আহিল হনহন করে রুমের দিকে চলে গেল। আমি আল্লাহর কাছে হাজার কোটি শুকরিয়া জানাই।প্রথমত মায়ের সাথে কথা বলতে পেরেছি আর আহিলের হিংস্রতার হাত থেকেও বাচিঁয়ে দিয়েছেন।।
আমি টেবিলে খাবার দিয়ে আহিলকে ডাকতে গেলাম। গিয়েছে দেখলাম উনি ল্যাপটপে কাজ করছেন। আমি হাল্কা কাশি দিলাম কিন্তু উনি ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়েই বলল,,
— কিছু বলবে প্রানো?
— আপনার নাস্তা রেডি, খাবেন না?
— পরে খাব।
— আপনার লেইট হয়ে যাবে না?
— আমি কোথাও গেলে তো লেইট হবে।
— আপনি অফিসে যাবেন না?
এবার উনি কোন উত্তর দিলেন না।ল্যাপটপ বেডের ওপর রেখে আমার কাছে এসে দাড়ালেন।তারপর দুইহাত কাধের ওপর রেখে কপালের সাথে কপাল ঠেকালেন। তারপর বললেন,,
— তোমাকে একা এভাবে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না। তাই ভাবছি যাব না। অফিসের কাজ ঘরে বসেই করবো বাকিটা ম্যানেজার আংকেল সামলে নেবে।
উনি আবার বসে কাজ করতে লাগলেন। আর আমি হাবলার মতো ওনার কর্মকান্ড দেখছিলাম। নিজে অসুস্থ বানিয়ে এখন নিজেই এত কেয়ার দেখাচ্ছেন।
প্রায় একসপ্তাহ পরে আজ আহিল অফিসে গেছে।। এই কয়দিনে আহিল আমাকে কোন কাজ করতে দেয়নি বরং সব কাজ নিজের হাতে করেছেন।। আহিলের এমন আচরণ ওনার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয় না আমার। এ! যেন একটা মুখোশ, ভয়ংকর আর হিংস্রতায় ভরা মুখোশ।। কখন জানি আবার সেটা খুলে ফেলে!! এসব কথা ভাবছিলাম আনমনে তখনই কলিং বেল বাজলো। পায়ের ব্যাথা এখন অনেকটাই সেরে গেছে।। দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেলাম সামনে দাড়ানো মানুষটা কে দেখে।
চলবে……
আচ্ছা,কে এসেছে যাকে দেখে প্রানো অবাক হলো??
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প নিয়ে যেকোনো মতামত, গঠনমূলক মন্তব্য জানাতে পারেন,,ধন্যবাদ।