হিংস্রতায় ভালোবাসা পর্ব ৩

#হিংস্রতায়_ভালবাসা
#পর্ব_০৩
#রীমা_শারমিন

আহিলকে এমন করে রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলাম। এখন তো আমি কিছু করিনি তাহলে…
আহিল ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ওকে আগাতে দেখে আমি আস্তে আস্তে এক পা এক পা করে পেছাতে লাগলাম। পেছাতে পেছাতে একসময় হঠাৎ করে দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলাম, পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আর পেছানোর জায়গা নেই।আহিলও আমার একদম সামনে এসে গেছে। ওর নিশ্বাস আমার মুখে এসে পড়ছে এতোটা কাছে।আহিলের প্রত্যেকটা নিশ্বাসের শব্দ আর ওর হার্টবিট ও মনে হয় স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম আমি।। আহিলকে এতটা সামনে দেখে আর ওর গভীর চাহনি দেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে আহিল ওর জায়গা থেকে সরে গিয়ে আচমকা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। ওর এমন হাসির কোন যথাযথ কারণ খুঁজে পেলাম না আমি। তাই ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,,

— আ আপনি এভাবে হাসছেন কেন আহিল?

আহিল আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে এগিয়ে এসেই কোমড়ে হাত দিয়ে ওর দিকে টেনে নিল। একহাতে কোমড় জড়িয়ে অন্যহাতে সামনে থাকা আমার চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে বলল,,

— আমি তোমার চোখে আমার জন্য এই ভয় টাই দেখতে চাই প্রানো।
— মানে,কি বলতে চাও তুমি ?
— নাহ,একদম না। তোমাকে কতবার বলেছি প্রানো আমাকে আপনি ছাড়া তুমি করে বলবে না।
— সরি!
— চলো আজকের জন্য মাফ করে দিলাম জান।

একথা বলেই হঠাৎ করে কোলে তুলে নিল আমাকে। তারপর বেডে বসিয়ে দিয়ে রুম থেকে কোথাও একটা বেরিয়ে গেলেন। এই লোকটাকে এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আমি। কেন যে এই রাগ আবার এই ভালবাসা? আমি যেন কোন গোলোক ধাধায় হারিয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। মানসিক রোগী হয়ে না যাই আবার, অবশ্য সেটার কিছু বাকি আছে কি না বলা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরেই আহিল খাবারের একটা প্লেট হাতে রুমে আসল।

— একি আপনি এখানে খাবার নিয়ে এলেন যে?
— নিয়ে এলাম আমার বউয়ের জন্য,জানিতো আমার প্রানো এখনো না খেয়ে আছে।

হঠাৎ এই ভালবাসা দেখে মনের মধ্যে অজানা ভয় উঁকি দিয়ে গেল। স্বামী ভালবাসার কথা বললে সেটা নিঃসন্দেহে প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য সুখের অনুভূতি কিন্তু আমার ক্ষেত্রে পুরোটাই উল্টো।আমাকে এভাবে ভাবতে দেখে আহিল চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে এক ধমক দিলেন। ওনার ধমকে চমকে কেপে উঠলো আমার অন্তরাত্মা।

— প্রানো!!!
— হহ্যা ব বলুন?
— তোমাকে কতবার বলেছি জান,আমাকে ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে তোমার ভাবার কোন প্রয়োজন নেই। কথা কেন শোনো না তুমি। নাকি কোন শাস্তি ছাড়া মাফ করে দিয়েছি বলে?শাস্তিগুলো খুব এনজয় করো তুমি, তাইনা জান?
— না মানে ইয়ে আমি আসলে…..
— আচ্ছা বাদ দাও, হা করো!
— হ্যাঁ?
— হা করতে বলেছি, আমি আজ নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দেব জান। ঠিক আগের মতো।

আল্লাহ জানে খাবারের সাথে কিছু মিশিয়ে নিয়ে এসেছে কি না।মেশালেও কিছু করার নেই এটাই খেতে হবে।

— প্রানো,একটু পর পর তুমি কোথায় হারিয়ে যাও?চুপচাপ খাবার খেয়ে নাও, নয়তো?
— না না না,, আমি খাচ্ছি এক্ষুনি খাচ্ছি, দিন এই যে হা..
— দ্যাটস এ গুড গার্ল,আই লাইক ইট!!

ভয়ে ভয়ে খাবার টা খেয়ে নিলাম। আহিল আর অফিসে যায়নি। সারাক্ষণ আমার পাশেই বসে ছিল।। এতকিছুর পরেও আহিলকে আমার ভালবাসতে ইচ্ছে হয়। মেয়েরা অনেক বেশি আবেগপ্রবন হয় ছেলেদের তুলনায়। তাইতো,যার কাছ থেকে অবহেলা, অপমান বেশি পায় তাকেই আকঁড়ে ধরে বাঁচতে চায়।

রাতে ঘুমের মধ্যেই কেন জানি পায়ে কিছু একটা বিধতে লাগল।জ্বালা করছে প্রচন্ড কিন্তু সাথে শীতল কিছুরও স্পর্শ পাচ্ছিলাম। ঘুম ছেড়ে উঠে বসলাম।পাশে তাকিয়ে দেখলাম আহিল নেই তাই টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালালাম। আবছা আলোয় পায়ের কাছে কাউকে বসে থাকতে দেখলাম। মানুষটাকে চিনতে মোটেও কষ্ট হয়নি,কিন্তু আহিল ওখানে এই মাঝরাতে কি করছে?

— আহিল আপনি ও ওখানে কি করছেন?
— জান,তুমি আবার কষ্ট করে উঠলে কেন? আমি তোমার পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিলাম।
— কিন্তু সেটাতো দিনেই করতে পারতেন?
— হা হা, বোকা জান তুমি। দিনে দিলে তুমি টের পেয়ে যেতে না? তাইতো এখন দিয়ে দিলাম আর তুমি টেরও পেলে না দেখলে তো!

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে হচ্ছে কোন স্বপ্ন দেখছি। যেখানে আমার স্বপ্নের পুরুষটা আমার কাছে এসে ধরা দিয়েছে। যাকে নিয়ে মনের মধ্যে কত জল্পনা-কল্পনা করেছি। একটা স্বপ্নপুরী,আমার সকল স্বপ্ন পুরনের স্বপ্নপুরী।

— কি ব্যাপার এভাবে বসে আছ কেন তুমি?

আহিলের ডাকে সম্বিত ফিরল। কখন যে পাশে এসে বসেছে টেরই পাইনি নিজের খেয়ালে।

— হ্যাঁ, হ্যাঁ?
— পায়ের ব্যাথা সেরে যাবে চিন্তা করো না।

আহিল আমার কপালে একটা গাঢ় চুমু একে দিয়ে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু আমার চোখে যে এখন আর ঘুম আসবে না। আহিল আসলে কি চায়? আমার জানামতে আহিলের অন্যকোন মেয়ের সাথেও কোন সম্পর্ক নেই যার কারণে এমন ব্যবহার করছে আমার সাথে। সামান্য বিষয় নিয়েও আমাকে শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার অন্য এক মানুষে রুপান্তরিত হয়ে যায় মুহুর্তের মধ্যে।তখন মনে হয়, ওর মতো স্বামী পাওয়া হয়তো অনেক ভাগ্যের বিষয়!! আমি বুঝি না কোনটা ওর আসল রুপ আর কোনটা মুখোশ? কোনটা আসল আহিল আর কোনটা ওর নাটক? এমন ব্যবহার করার কারণ কি?? সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে,,উফফফ!!অসহ্য মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে!! মাথা চেপেই শুয়ে রইলাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই।

ভোরের সোনালী আলো চোখে পড়তেই হকচকিয়ে উঠলাম। না জানি কত বেলা অবধি ঘুমিয়েছি? আহিলের নাস্তার সময় পার হয়ে গেলে আবার কঠিন কোন শাস্তি পেতে হবে!
জলদি করে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালাম, আহহ! ভুলেই গেছিলাম পায়ের ব্যাথার কথা। তবে আগের থেকে পায়ের ব্যাথাটা একটু কম মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই আহিলের মলমের কারণে। আহিলের জন্য নাস্তা রেডি করে রুমে আসলাম আহিলকে ডাকতে। বালিশের পাশে রাখা ফোনটা দেখেই ইচ্ছে হলো মায়ের সাথে একটু কথা বলি। ফোন টা হাতে নেব কি নেব না, দোটানায় পড়ে গেলাম। একমনে ইচ্ছে হলো নেই আবার পরক্ষণেই মনে পড়ল সেই ভয়ংকর শাস্তির কথা। দোনোমোনো করতে করতেই ফোনটা তুলে নিলাম উদ্দেশ্য মায়ের সাথে কথা বলা। ফোনটা হাতে নিয়েই ছুটে রান্নাঘরের এককোনে চলে গেলাম।কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনের সুইচ অন করলাম কিন্তু আহিলের ফোনের লকের পাসওয়ার্ড যে আমি জানিনা! কি হবে এবার? কি হতে পারে আহিলের ফোনের পাসওয়ার্ড??

এসব ভাবতে ভাবতেই মনে হলো কোন একটা ছাঁয়ামুর্তি পেছন থেকে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে!!

চলবে………
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here