হৃদয়ের একাংশ তুই পর্ব -০৯

#হৃদয়ের_একাংশ_তুই
#Part_09
#Writer_NOVA

❝হৃদয়ে লিখেছি তোমারি নাম
হাওয়া হাওয়া ছড়িয়ে দিলাম
তুমি আমার অনন্ত আশা
তোমায় নিয়ে নীল স্বপ্নে ভাসা
এক পৃথিবী প্রেম তুমি আমার
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা।❞

বর্ষা আনমনে জানালার কাছে বসে ছিলো। কানে গানের সুর ভেসে আসছে। পাশের দালানের ফ্ল্যাটে টিভিতে গানটা বাজছে। পাশাপাশি দালান হওয়ায় অপর দালানের কথাবার্তা আওয়াজও বর্ষার রুমে আসে। দুই দালানের ফারাক শুধু এক হাতের। পশ্চিমের জানালা খুললে সামনের দালান ছাড়া অন্য কিছু দেখা যায় না। তাই বর্ষা ঐদিকের জানালা খুলে না।

‘তোমায় এমন মনমরা ভালো লাগে না বর্ষা।’

অনামিকা বর্ষার পাশে বসতে বসতে বললো। বর্ষা ভাবীর দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো। চোখ দুটো বিষন্নতায় ঘেরা। অনামিকা এক হাত বর্ষার কাঁধে দিয়ে ফের বললো,

‘যখন কোন ডিসিশন নিতে পারবে না। তখন সবকিছু আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিবে। আল্লাহ তাই করবেন যা তোমার জন্য মঙ্গলজনক।’

‘আল্লাহ, মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতিতে কেন ফেলে আমাদের? দমবন্ধ, রুদ্ধশ্বাস অনুভূতি। না যায় গিলে ফেলা, না যায় বের করে ফেলা। আবেগের বয়স ফেলে বাস্তবতা বোঝার বয়সে আমি নিজের মনের সাথে লড়ছি। বিষয়টা হাস্যকর না ভাবী?’

বর্ষা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। অনামিকা দীর্ঘ শ্বাস চেপে বললো,

‘আল্লাহ সর্ব জান্তা। আল্লাহ আমাদের এরকম পরিস্থিতিতে ফেলে পরীক্ষা করেন। হেরে যেয়ো না। শক্ত হয়ে পরিস্থিতির প্রতিঘাত করো। দিন শেষে তুমি জিতবে।’

‘ভালো লাগে না কিছু। মনে হয় আমি আমার আসল সত্তাটাকে হারিয়ে ফেলছি।’

‘নিজেকে হারাতে দিও না ননদী। তাহলে তুমি সুস্থ থাকতে পারবে না। একটা কথা বলি?’

অনামিকা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে চাতক পাখির মতো উন্মুখ হয়ে রইলো সম্মতির জন্য। বর্ষা সামনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অনামিকার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘হুম বলো।’

অনামিকা দম টেনে বললো,
‘তোমার মনের বিরুদ্ধে কিছু করো না। তোমার মন যা চায় তাতে সায় দিও। নয়তো তুমি মানসিক, শারীরিক দুইভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে।’

বর্ষা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে অনামিকার দিকে তাকালো। চমৎকার একটা কথা বলেছে অনামিকা। কথাটা বেশ মনে ধরেছে। মনে মনে অটল সিদ্ধান্ত নিলো বর্ষা। হ্যাঁ, তার মন যা চাইবে তাই করবে সে। কারো কথা শুনবে না।

‘এদিকে এসে বসো তো। চুলের কি হাল করেছো? কতদিন ধরে তেল পরে না বলো তো? আমি তেল দিয়ে দেই। এসো দেখি বাপু।’

ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে তেলের বোতল নিয়ে বর্ষার পেছনে বসে পরলো অনামিকা। বর্ষা বাঁধা দিলো না। তেল দিলে যদি মাথাটা একটু হলেও ঠান্ডা হয় সেই আশায়।

‘অনামিকা তোর ফোন বাজে মা।’

দরজায় দাঁড়িয়ে মিনা বেগম বললেন। অনামিকা বর্ষার মাথার তালুতে সবেমাত্র তেলের ছোঁয়া লাগিয়েছিলো। শাশুড়ী কথা শুনে বললো,

‘এই অসময়ে কে কল দিলো?

‘বলতে পারি না। তুই গিয়ে দেখ কে।’

‘বর্ষার মাথায় তেল দিতে বসেছিলাম মা।’

‘তুই যা আমি দিয়ে দিচ্ছি।’

‘আচ্ছা।’

অনামিকা উঠে চলে গেলো। মিনা বেগম মেয়ের শিউরে বসে তেলের বোতল খুলে হাতে তেল নিয়ে নিলেন। যত্ন সহকারে চুলে তেল লাগাতে লাগাতে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘কি হয়েছে তোর মা?’

মায়ের নরম গলা পেয়ে বর্ষা মাথা ঘুরিয়ে মায়ের দিকে তাকালো। চোখ দুটো ওমনি তার ছলছল করে উঠলো। মিনা বেগম বুঝতে বাকি রইলো না মেয়ে তার কোন বিষয় নিয়ে ভীষণ আপসেট। নয়তো ১৫ দিনের ব্যবধানে সারা বাসা মাতিয়ে রাখা হাসিখুশি মেয়েটা মিইয়ে যেতো না। পরম মমতা মাখা চোখে তাকিয়ে মিনা বেগম বললেন,

‘মা কে বলবি না? এখুনি পর করে দিচ্ছিস?’

ব্যাস এতটুকু যথেষ্ট ছিলো। স্নেহের পরশ পেয়ে মা কে জড়িয়ে ধরে বর্ষা হু হু করে কেঁদে উঠলো। মায়ের মন মোচড় দিয়ে উঠলো। কিন্তু কোন কথা বললেন না। স্তব্ধ হয়ে মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। কাঁদুক মেয়েটা, মন ভরে কাঁদুক। কাঁদলে মন হালকা হয়। এতে করে একটু হলেও বর্ষার মনের ভার হালকা হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বর্ষাকে দেখে আয়াজের বুকটা ধুকপুক করে উঠলো। মেয়েটা কি তাকে জাদু করেছে নাকি? হুটহাট দেখলে হার্টবিট বেড়ে যায় কেন? বর্ষার উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। দেখতে গুলুমুলু। গাল দুটো টেনে দিতে ইচ্ছে করে। মুখে গুটি বসন্তের দাগ আর কতগুলো ছোট গর্ত আছে। দূর থেকে যা বোঝা যায় না। নাকটা হালকা বোচা। পিঠ অব্দি কালো ঘন চুল। চোখ দুটো ডাগর ডাগর। আয়াজ হার্ট বরাবর হাত রেখে বিরবির করে বললো,

‘আমি ঘায়েল হয়ে গেছি।’

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বর্ষাকে দেখতে দেখতে কখন যে বর্ষা রিকশায় উঠে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই আয়াজের। যখন খেয়াল হলো তখন দৌড়েও রিকশা ধরতে পেলো না। মধ্যে থেকে সে হয়রান হলো।

আয়াজের হঠাৎ খেয়াল হলো বর্ষার সাথে ৭/৮ বছরের একটা পিচ্চি মেয়ে ছিলো। যাকে দিতে সে স্কুলে এসেছে। এদিক সেদিক তাকিয়ে হতাশ হলো। ঐ মেয়েটাকেও দেখছে না। এখন স্কুল ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাতে যদি পিচ্চির দেখা পায়।

স্কুল ছুটি হলো ঠিক বারোটায়। আয়াজ এই অব্দি পাশের টং দোকানে বসে ৫ কাপ রং চা পান করে ফেলেছে। অস্থিরতায় তাকে আঁটসাঁট করে ঘিরে ধরেছে। যদি পিচ্চিটাকে না পায় সেই ভয়ে। চায়ের বিল মিটিয়ে দ্রুত স্কুল গেইটে এসে দাঁড়ালো। জহুরির চোখে প্রতিটা বাচ্চাকে লক্ষ্য করছে সে। একসময় সেই পিচ্চিকে পেয়েও গেলো। দ্রুত পায়ে বাচ্চাটার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘তোমার নাম কি বাবু?’

বৃষ্টি চোখ সরু করে রাগী ভঙ্গিতে আয়াজের দিকে তাকালো। তারপর কন্ঠে ঝংকার তুলে বললো,

‘আমি বাবু নই।আমার নাম বৃষ্টি ইমরোজ।’

আয়াজ মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘সরি, সরি ভুল হয়ে গেছে। তুমি কার জন্য অপেক্ষা করছো?’

‘আপনাকে কেন বলবো?’

আয়াজ থতমত খেয়ে গেলো। একেবারে বর্ষার আট্টিগাট্টি। গলা ঝেড়ে বললো,

‘বলো না প্লিজ।’

আয়াজের করুন সুরের কথা শুনে বৃষ্টি ফিক করে হেসে দিলো। খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো,

‘আম্মুর জন্য।’

‘সকালে যে দিয়ে গেছে সে কি তোমার আম্মু?’

‘না, আমার পিপি।’

‘কি নাম তার?’

‘এই আপনি এতো কথা জিজ্ঞেস করেন কেন? আমার পিপির নাম দিয়ে আপনি কি করবেন?’

বৃষ্টি দুই হাত কোমড়ে রেখে কপাল কুঁচকে ধমকিয়ে উঠলো। আয়াজ ঢোক গিলে মিনমিনে বললো,

‘যেমন ফুপু তেমন ভাতিজী। অস্থির কম্বিনেশন। (থেমে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো)এই পিচ্চির কাছে হেরে গেলে চলবে না আয়াজ। চেষ্টা কর।’

মুখের কাছে হাত এনে কেশে উঠলো আয়াজ। নিজেকে শান্ত করে বৃষ্টিকে বললো,

‘তোমার পিপির নাম বললে তোমাকে ইয়া বড় একটা চকলেট কিনে দিবো।’

বৃষ্টি ভেংচি কেটে বললো,
‘লাগবে না আপনার চকলেট।’

‘কেনো?’

‘মা, বলেছে অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু নিতে না। এরা ছেলে ধরা হয়।’

আয়াজ পরাজয়ী ভঙ্গিতে তাকালো। পিচ্চি মেয়েটাকে কিছুতেই পটানো যাচ্ছে না। এখন উপায় কি? সে কি তাহলে হেরে যাবে? তার ভাবনার মধ্যে এক বালতি পানি ঢেলে বৃষ্টি কড়া মেজাজে বলে উঠলো,

‘উফ সরুন তো আপনি। বেশি কথা বলেন।’

কথাটা বলে দেরী করলো না। দৌড়ে ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেলো বৃষ্টি। আয়াজ হতভম্ব হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে তা দেখলো। ফুপুর থেকে ভাতিজী এগিয়ে। কিভাবে তাকে এড়িয়ে চলে গেলো।

পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদ উপচে পরছে। এক টেবিলের মুখোমুখি চেয়ারে রাফি, বর্ষা, হৃদয় বসে আছে। রাফির দৃষ্টি বর্ষার দিকে। বর্ষা আড়চোখে তা দেখে মুখ ঝামটা মেরে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। রাফির তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই। এক নজরে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে সে। হৃদয় একবার রাফির দিকে তাকিয়ে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেললো৷

‘কিছু বলার হলে তাড়াতাড়ি বল হৃদ। আমার এখানে অযথা বসে থাকার সময় নেই।’

বর্ষা মেজাজি গলায় বললো। হৃদয় রাফির দিকে তাকিয়ে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘হ্যাঁ, ব্যস্ত মানুষ। আমাদের জন্য তো সময় নেই তোর।’

‘ফালতু কথা শুনতে আসেনি।’

বর্ষা প্রতিবাদ করে উঠলো। হৃদয় কথা ঘুরাতে বললো,
‘কি খাবি? কফি, চা, কোল্ড ড্রিংকস?’

বর্ষা গোমড়া মুখে উত্তর দিলো,
‘কিছু না।’

রাফি মুচকি হেসে বললো,
‘কোল্ড কফি নিয়ে আয় হৃদয়। এতে যদি বর্ষার মাথাটা ঠান্ডা হয়।’

বর্ষা রাফির দিকে খাইয়া ফালামু লুক দিলো। তাতে রিয়াদ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। হৃদয় পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক।

‘তোরা বসে কথা বল। আমি কফি নিয়ে আসছি।’

হৃদয় চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো। আসলে সে ইচ্ছে করে উঠে যাচ্ছে। রাফি আর বর্ষাকে একা থাকতে দেওয়ার জন্য। বর্ষা ধমকে উঠলো,

‘এখান থেকে এক পাও নড়বি না তুই।’

হৃদয় বর্ষার কথা শুনলো না। দ্রুত সেখান থেকে সরে গেলো। মাথাটা কেমন জানি ঝিমঝিম করছে। মুখ, চোখ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে রাতে না ঘুমানোর ফল।চোখে, মুখে পানি দিতে হবে। এতে যদি একটু কমে।

বেসিন থেকে মুখে পানির ঝাপ্টা মেরে বের হতেই এক জোড়া হাত এসে ওকে দেয়ালের আড়ালে টেনে নিয়ে গেলো। আকস্মিক আক্রমণে হৃদয় হকচকিয়ে গেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে তাকাতে বর্ষাকে দেখলো। কেমন করুন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয় নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলো।

‘কেউ দেখলে তোকে খারাপ ভাববে বর্ষা। হাত ছাড়।’

বর্ষা জোর গলায় বললো,
‘ছাড়বো না। তুই আমাকে ইগনোর করছিস কেন?’

‘পাগলামি করিস না। রাফি ভুল বুঝবে।’

বর্ষা চেচিয়ে উঠলো,
‘কথায় কথায় রাফিকে টানবি না হৃদ।’

হৃদয় নিজের হাত ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
‘আমি রাফির সাথে বেইমানি করতে পারবো না রে।’

‘আমার সাথে যে অন্যায় করছিস তার কি হবে?’

হৃদয় বর্ষার কথা এড়িয়ে বললো,
‘রাফি তোকে অনেক ভালোবাসে। বোঝার চেষ্টা কর। বন্ধুর জন্য এতটুকু করতে না পারলে কিসের বন্ধু হলাম আমি। সবার আগে বন্ধুত্ব তারপর ভালোবাসা।পাগলামি করিস না। ওকে মেনে নে।’

বর্ষা হৃদয়ের শার্টের কলার ধরে নিজের কাছে টেনে বললো,

‘কেনো পাগলামি করি বুঝিস না? আর কতভাবে বুঝাবো আমি? তোকে আমি ভালোবাসি হৃদ।’

বর্ষা ভেবেছিলো হৃদয় চমকাবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। হৃদয় স্বভাবিক স্বরে উত্তর দিলো।

‘জানি।’

বর্ষা তেজী স্বরে গর্জন করে উঠলো,
‘তাহলে জেনেও কেন না জানার ভান করিস? আর কত পোড়াবি আমায়? শুধুমাত্র তোর সাথে জিদ করে আমি অনিকের সাথে সম্পর্কে গেছি। নয়তো ওর মতো ছেলে আমার মতো মেয়েকে পটাতে পারতো? তবে এটা সত্যি আমি অনিকের সাথে অভিনয় করিনি। সব ভুলে মায়ায় পরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারছি ওর প্রতি শুধু আমি দূর্বল ছিলাম। ভালোবাসতে পারিনি। তাইতো আমার সাথে বেইমানি করাতে আমি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ছিলাম।ওকে ভালোবাসলে আমি ওর ক্ষতি করার চিন্তা করতে পারতাম না। সব ভুলে স্বাভাবিক থাকতে পারতাম না। আমি বুঝে গেছি আমি তোকেই ভালোবাসি।অনিক মোহ ছিলো। যদি অনিক আমার ভালোবাসা হতো তাহলে আজ আমি তোর মুখোমুখি থাকতে পারতাম না। তুই সব বুঝেও কেন দূরে যাওয়ার চেষ্টা করছিস?’

বর্ষা হৃদয়ের চোখে চোখ মিলিয়ে এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথাগুলো বলে গেলো। হৃদয় চোখ নামিয়ে ফেললো। বর্ষার টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস তার নেই। হৃদয়ের হৃদয়টা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। সেদিকে কি বর্ষার খেয়াল আছে? বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার যাতা কলে হৃদয় যে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বিধার দেয়ালে বারবার পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। আচ্ছা, বর্ষাকে মেনে নিলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে? না তো! বন্ধুর সামনে মুখ দেখাবে কি করে? কোন মুখে বলবে সে বর্ষাকে ভালোবাসে? রাফিরও নিশ্চয়ই তার মতো অসহনীয় কষ্ট হবে। কাউকে বলাও যাবে না। সহ্য করা যাবে না। বন্ধু হয়ে বন্ধুর এমন কষ্ট সে সহ্য করতে পারবে না। বন্ধু বললে জীবন দিতে পারবে। ভালোবাসার মানুষের থেকে নিজেকে সরাতে পারবে না?

হৃদয় সন্তপর্ণে বর্ষাকে বললো,
‘আমি তোকে ভালোবাসি না।’

‘মিথ্যে কথা। আমি বিশ্বাস করি না হৃদ।’

‘এটাই সত্যি কথা। আমায় মাফ করে দিস। বন্ধুত্বে আমি বেইমানি করতে পারবো না।’

বর্ষার হাত হৃদয়ের শার্ট থেকে আলগা হয়ে গেলো। গাল বেয়ে পানির ফোঁটা টুপটাপ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরছে। ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন? অসহায়ত্ব ঘিরে ধরছে বর্ষাকে। ঝাটকা মেরে সরে গিয়ে বর্ষা বললো,

‘মনে রাখিস হৃদ! তুই যদি আমাকে না পাস, তাহলে তোর বন্ধু রাফিও আমাকে পাবে না। এটা তোদের শাস্তি।’

দমকা হাওয়ার মতো ঝাপটা দিয়ে গেলো বর্ষা। কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো হৃদয়ের। মিনিট পাঁচেক পর রাফি হন্তদন্ত হয়ে হৃদয়ের কাছে এসে বললো,

‘কি হয়েছে হৃদয়? বর্ষা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো কেন?’

হৃদয় উত্তর দিলো না। নির্বাক চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে রইলো। হৃদয় কিছু বললো না। তার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। ঝাপসা চোখে হৃদয় দেখলো রাফি ওর মুখ থেকে উত্তর শোনার জন্য এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here