হৃদয়ের একাংশ তুই পর্ব -১০

#হৃদয়ের_একাংশ_তুই
#Part_10
#Writer_NOVA

দরজা, জানালা বন্ধ করে রুমটাকে ঘোর অন্ধকারে ঢেকে বিছানায় শুয়ে ছিলো বর্ষা। মাথার ওপর সিলিং ফ্যানটা ঘটঘট শব্দে ঘুরছে। সেদিকে তাকিয়ে আগের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করছিলো সে।হঠাৎ দরজার কষাঘাতের শব্দে ধ্যান ভাঙে। বর্ষা তবুও নিশ্চুপ। ভেবেছিলো সাড়াশব্দ না দিলে দরজার অপরপাশের মানুষটা চলে যাবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। আগের থেকে বেশি দ্রিমদ্রিম শব্দে দরজায় বারি পরতে লাগলো। বর্ষা তিরিক্ষি মেজাজে চেচিয়ে উঠলো,

‘কে?’

‘পিপি আমি!’

‘কি হইছে?’

‘দরজা খুলো।’

‘ভালো লাগতাছে না। জ্বালাস না বৃষ্টি।’

‘প্লিজ পিপি দরজা খুলো না।’

বৃষ্টির কন্ঠে আকুলতা। সেই অনুরোধ মাখা কন্ঠের আকুলতা বর্ষা ফেলতে পারলো না। ধীরগতিতে দরজা খুলে রুমের লাইট জ্বলিয়ে দিলো। লাইটের আলোতে কি আর মনের অন্ধকার দূর হয়?

‘পিপি চলো না নুডলস রান্না করবে! প্লিজ পিপি মানা করো না।’

বৃষ্টির কন্ঠে আবারো অনুরোধ। বর্ষা শান্ত চোখে তাকিয়ে বৃষ্টিকে দেখলো। বর্ষা জানে এই নুডলস রান্না করার ধান্দা একমাত্র অনামিকার। সে কিছু সময় আগে ডেকে হয়রান হয়ে গেছে। কিন্তু বর্ষা দরজা খুলেনি। তাই বৃষ্টিকে পাঠিয়েছে। বর্ষা বৃষ্টির আবদার ফেলতে পারবে না।

‘ও পিপি চলো। আমার অনেক নুডলস খেতে ইচ্ছে করছে।’

‘আমার ভালো লাগছে না বৃষ্টি। যা তো! বিরক্ত করিস না।’

বর্ষা বিরক্তি প্রকাশ করলো। বৃষ্টি তাতে দমে গেলো না।এগিয়ে এসে বর্ষার হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,

‘একটু নুডলসই তো খেতে চাইছি! তাও তুমি এমন করছো?’

বৃষ্টির মুখটা ছোট হয়ে গেলো। তার চোখ দুটো পানিতে টইটুম্বুর। তার পিপি কখনও তার সাথে এমন করে কথা বলে না। আজ বলেছে বলে অভিমানে চোখে পানি চলে এসেছে। বর্ষা বেশ কিছু কড়া কথা শোনানোর জন্য মুখ খুলেছিলো।কিন্তু বৃষ্টির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা গিলে ফেললো। কিছু সময় ভেবে বললো,

‘আচ্ছা চল। তবে আমাকে কিন্তু সাহায্য করতে হবে।’

বৃষ্টি হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে খুশিতে নেচে উঠলো। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,

‘আলবাত করবো।’

বৃষ্টি, বর্ষা দুজনে মিলে কাজ করছে। বর্ষা বটি দিয়ে কাটাকুটি করছে। বৃষ্টি টুলের ওপর উঠে মিটসেফ থেকে জালি নামাচ্ছে নুডলস ঢালার জন্য। জালি নামিয়ে বর্ষার কাছে এসে বললো,

‘জানো পিপি কাল কি হয়েছে!’

‘কি?’

‘একটা ছেলে তোমার নাম জিজ্ঞেস করছিলো।’

‘কেন?’

বর্ষা কাজ থেকে চোখ উঠিয়ে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকালো। বৃষ্টি গম্ভীর হয়ে বড়দের মতো করে হাত নাড়িয়ে বললো,

‘কি জানি! আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমাকে সকালে যে দিয়ে গেছে সে কি তোমার আম্মু? আমি বলি না আমার পিপি। বলে তোমার পিপির নাম কি?’

‘তারপর তুই কি বলছিস?’

‘আমি বলছি, আপনাকে বলবো কেন? এরপর কি বলে জানো?’

‘তুই না বললে জানবো কি করে?’

‘তারপর বলে তোমাকে এত্ত বড় একটা চকলেট দিবো। যদি তুমি তোমার পিপির নাম বলো।’

‘তুই রাজী হইছিস?’

‘একটুও না।’

বর্ষা নিঃশব্দে হাসলো বৃষ্টির সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলার ধরণ দেখে। মেয়েটা ওর অনেক কিছু পেয়েছে। এই যে এখনকার কথা ধরা যাক। কিরকম কপাল কুঁচকে কুঁচকে একেকটা কথার উত্তর দিচ্ছে। যা বর্ষার অভ্যাস। বৃষ্টি আবারো সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,

‘জানো তাকে আমি কেনো তোমার নাম বলিনি?’

‘কেনো?’

‘আমাকে বলে বাবু। তুমি বলো তো আমি কি বাবু? ক্লাশ টু তে পড়ি আমি। আর টু এর বাচ্চা কি কখনো বাবু হয়?’

বর্ষা ফিক করে হো হো করে হেসে উঠলো। বৃষ্টি চোখ পাকিয়ে তাকালো। তাতে বর্ষার হাসির শব্দ থামলেও হাসি থামলো না।

আড়াল থেকে ফুপু, ভাতিজীর হাসি হাসি মুখ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো অনামিকা। বৃষ্টিকে সেই পাঠিয়েছিলো বর্ষার কাছে। দিনকে দিন মেয়েটা সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। সবসময় মনমরা হয়ে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না। খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে। তাই ওকে স্বাভাবিক করার মিশনে নেমেছে অনামিকা। পা টিপে টিপে রান্নাঘরের দরজা থেকে সরে গিয়ে শাশুড়ির রুমের দিকে হাটা দিলো।

গেইট পেরিয়ে আসতেই ছেলেকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলেন নজরুল সাহেব। হাসিমুখে সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,

‘কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে?’

‘তোমাকে দেখলাম তাই। ভাবলাম একসাথে বাসায় যাই।’

ছেলের মিলিয়ে ছন্দ আকারে কথা শুনে হাসলেন নজরুল সাহেব। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললো,

‘চল।’

সিঁড়ির গোড়ায় আসতেই তিনতলার ফারুক শেখের সাথে দেখা। ফারুক সাহেবও এই দালানের ভাড়াটিয়া।বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। দুই মেয়ের জনক তিনি। মেয়ে দুটো বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। নজরুল সাহেবকে দেখে সাবলীল ভঙ্গিতে সালাম দিলেন। নজরুল সাহেব সুন্দর করে উত্তর নিলেন। জুনায়েদ সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করলো।ফারুক শেখ নজরুল সাহেব ও জুনায়েদকে থামিয়ে বললেন,

‘ভাই, আপনার সাথে কথা আছে।’

‘কি কথা ফারুক ভাই?’

প্রশ্ন করলেন নজরুল সাহেব। ফারুক শেখ গলা নামিয়ে বললো,

‘আপনার মেয়ের বিষয়ে।’

জুনায়েদ ও তার বাবা একে অপরের দিকে তাকালো। দুজনের কপালে চিন্তার ভাজ। বর্ষাকে নিয়ে কি কথা বলবেন উনি। ফারুক শেখ গলা ঝেড়ে বললো,

‘আজকাল বর্ষা মা-মণিকে একটা ছেলের সাথে দেখা যায়।ওর দিকে একটু নজর রাখবেন। দিনকাল ভালো না। মেয়ে কোথায় যায় না যায় সেদিকে তো লক্ষ্য রাখতে হবে। বিপদ তো আর বলে কয়ে আসে না। কখন কোন অঘটন ঘটে যাবে সেটা তো বলা য়ায় না।’

জুনায়েদ, নজরুল সাহেবের কপালে চিন্তার ভাজ উবে গেলো। মুখের রং পাল্টে গেছে। রাগে মুখটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে।তাদের বুঝতে বাকি নেই ছেলেটা কে হতে পারে। ফারুক শেখ তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘আসি ভাই। আসি জুনায়েদ। বোনের দিকে একটু খেয়াল রেখো। নয়তো পরে কপাল থাপড়ালেও কাজে দিবে না।’

পাশ কাটিয়ে ফারুক শেখ চলে গেলো। জুনায়েদ, নজরুল সাহেবের হাসি মাখা মুখটা এখন ভিন্নরূপ ধারণ করেছে৷ বাকি পথ বাপ ছেলে কেউ কারো সাথে কথা বললো না।

‘লেবুর শরবত করে দিবো?’

অনামিকা স্বামী, শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করলো। জুনায়েদ ভারী গলার স্বরে না বললো। অনামিকা ভ্রু কুঁচকে জুনায়েদের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করলো। জুনায়েদ যখন খুব রেগে থাকে তখন এমন ভারী স্বরে কথা বলে। কাহিনি কি? শ্বশুর, স্বামী দুজনেই চুপচাপ। তার মন বললো নিশ্চয়ই ঘাপলা আছে।

‘বউমা,বর্ষাকে ডেকে দিয়ো তো।’

অনামিকা রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে নজরুল সাহেব আদেশ দিলেন। অনামিকা মাথা নিচু করে নিম্নস্বরে বললো,

‘জ্বি বাবা।’

আদেশ পেয়ে দেরী করলো না। দ্রুত পায়ে বর্ষার রুমে চলে গেলো।

‘তুই কি হৃদয়ের সাথে এখনো চলিস?’

জুনায়েদের কথায় বর্ষা চমকে উঠলো। তার ভাই এই খবর পেলো কোথায়? কে দিলো এমন গরম খবরটা। বর্ষা ভয়ে ঢোক গিললো। বাবার দিকে তাকিয়ে ভয়টা আরো জড়ালো হলো। নজরুল সাহেব চুপ করে মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন। এটা ঝড়ের আগাম আভাস।

‘না মানে ভাইয়া…..’

বর্ষার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে নজরুল সাহেব হুংকার দিয়ে উঠলেন।

‘হ্যাঁ কিংবা না তে উত্তর দে।’

বর্ষার হৃৎপিণ্ড লাফিয়ে উঠলো। বড় বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো। সব কথা যেনো গলায় আটকে গিয়েছে। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। বর্ষাকে চুপ করে থাকতে দেখে জুনায়েদ চিৎকার করে উঠলো,

‘কি বললো শুনতে পাসনি?’

বর্ষা তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। জুনায়েদ রাগী স্বরে বললো,

‘তাহলে উত্তর দিচ্ছিস না কেন?’

বর্ষা হাত দিয়ে জামা খামচে ধরে লঘুস্বরে বললো,
‘হ্যাঁ!’

একটা চড়ের শব্দে পুরো বসার রুমের পরিবেশ ভারী হয়ে গেলো। বর্ষা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গালটা জ্বলে যাচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছেন নজরুলও সাহেব। চড়টা উনি মেরেছেন।

‘কি হয়েছে, কি হয়েছে?’

রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে মিনা বেগম বলতে লাগলেন। তার পিছু পিছু অনামিকা, বৃষ্টি। নজরুল সাহেব স্ত্রীর কথার উত্তর না দিয়ে বর্ষাকে ধমকে বললেন,

‘মানা করেছিলাম না ওর সাথে চলতে? মেয়ে হয়ে ছেলের সাথে কেন চলিস? কোন ভদ্র মেয়ে কি ঐরকম মারামারি করা মা’স্তা’ন ছেলের সাথে চলে?’

জুনায়েদ বাবার সাথে গলা মিলালো,
‘এতবড় সাহস হয়ে গেছে তোর? বাবার কথার অবাধ্য হয়ে গেছিস?’

মিনা বেগম খেঁকিয়ে উঠলো,
‘এই তুই কাকে বলিস?’

জুনায়েদ মায়ের কথার উত্তর দিলো না। নজরুল সাহেব স্ত্রীকে বললেন,

‘একদম চুপ থাকবা। তোমাদের জন্য ওর এতো সাহস বাড়ছে। ইচ্ছে করছে জানে মে’রে ফেলতে। ওর জন্য বাইরের মানুষের কথা শুনতে হয় আমাকে।জুনায়েদের মা, তোমার মেয়েকে বলে দিও আমি ওকে বাইরের মানুষের কথার জন্য মা’রিনি।বরং এর জন্য মে’রেছি যে, সে আমার কথার অবাধ্য হয়েছে।’

‘বাবা, ও বুঝতে পারেনি। ওর ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো মাফ করে দিন।’

অনামিকা অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো। বর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরলো। জুনায়েদ রেগে অনামিকাকে শাসিয়ে বললো,

‘যত নষ্টের গোড়া তুমি। আদর দিয়ে বিগড়িয়ে দিচ্ছো।’

অনামিকা কথাটা গায়ে লাগালো না।কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইলে জুনায়েদ চোখ রাঙিয়ে চাপাস্বরে ধমকে বললো,

‘চুপ থাকো তুমি।’

নজরুল সাহেব রাগে গজগজ করতে করতে স্ত্রী-কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘আমি যদি আরেকদিন শুনি তোমার মেয়ে ঐ গুন্ডা ছেলের সাথে ঘুরছে তাহলে সেদিনই হবে ওর শেষ দিন।মে’রে নদীতে ভাসিয়ে দিবো।’

কথাটা বলে হনহন করে নজরুল সাহেব রুমে চলে গেলেন। পিছন পিছন জুনায়েদও চলে গেলো। বৃষ্টি চেচামেচির কারণে দাদীর পেছনে লুকিয়ে ছিলো। সে এবার বের হলো। তার পিপির দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ঠোঁট কামড়ে ভেতর থেকে আসা কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।

আক্তার তালুকদার, হালিমা বেগমের প্রথম সন্তান হৃদয়। পুরো নাম হৃদয় তালুকদার। হৃদয়রা এক ভাই দুই বোন। হৃদয়ের ছোট দুই বোন বীথী, লাবণী। বিথির বিয়ে হয়ে গেছে। লাবণী এবার ক্লাশ নাইনে পড়াশোনা করছে। হৃদয়ের বংশ স্টাটাস ভালো। তার বাবা ভালো একটা চাকরি করেন। মাস শেষে যা বেতন পান তাতে ওদের বেশ চলে। গ্রামে তালুকদার পরিবারের বেশ নামডাক আছে। হৃদয়ের পরিবার যথেষ্ট সচ্ছল।

হৃদয়ের এই অবস্থার জন্য দায়ী একমাত্র সে নিজে। মারামারি করে টিসি পেযেছিলো। জিদ করে পড়াশোনা ছেড়ে দিলো। হাজার বুঝিয়ে শুনিয়ে ওর বাবা-মা ওকে রাজী করাতে পারেনি। তাদের একরোখা ছেলে একবার যেহেতু বলেছে পড়াশোনা করবে না। এখন মেরে কেটে ফেললেও তাকে আর রাজী করানো যাবে না। বিশ্বত্যাড়া! এখন তাও বর্ষার জোড়াজুড়িতে ক্যাফেতে ওয়েটারের কাজ নিয়েছে। কিন্তু মাস দুই আগে ভবঘুরে থেকে বাপের টাকা উড়াতো। কাজে ঢোকার পর সে উপলব্ধি করতে পেরেছে বাবা কত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে।

‘কি বেপার (ব্যাপার) হৃদয় ভাই? কি হইছে আপনের?’

সাকিব বলে উঠলো। হৃদয় মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বললো,

‘কিছু না রে।’

‘কিছু তো হইছে হৃদয় ভাই।আপনেরে আজকাল অনেক আনমনা, বিষন্ন দেখায়। কন কি হইছে? দেখবেন মনডা অনেকটা হালকা হইছে।’

হৃদয় হাসলো। সাকিবের মাথার চুল নেড়ে দিয়ে বললো,

‘বড় হয়ে গেছিস।’

‘হো ভাই। পরিস্থিতিতে পরলে বড় হওন লাগে না। এমনি বড় বড় ভাব চইলা আসে।’

হৃদয় মুখের মিথ্যা হাসিটা আরেকটু চওড়া করলো। তা দেখে সাকিব বলল,

‘আমি সিউর আপনার কিছু হইছে।’

‘কে বললো তোকে?’

‘আপনার কিছু না হইলে আপনি খালি খালি হাসতেন না। আপনার মন খারাপ থাকলে যতবার হাসেন ভালো থাকলেও আপনি এতবার হাসেন না।’

‘এতো কিছু খেয়াল করিস?’

‘হো ভাই শুধু আপনেরডা করি।’

‘কেন?’

‘আপনারে আমার মেলা (অনেক) ভালা লাগে।আপনি কত সুন্দর কইরা আমার সাথে মিশেন। আমি যে গরীব ঘরের পোলা তাও আপনি কোন দূর্ব্যবহার করেন না। অন্যেরা তো এমন ভাব করে আমি যেন মানুষ না।’

সাকিব হাসিমুখে কথাগুলো বললো। তবুও সেটা হৃদয়ের ভেতরটা নাড়িয়ে দিলো। হৃদয় সাকিবের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

‘পড়াশোনা করিস না?’

সাকিব তাচ্ছিল্যের সুর টেনে বললো,
‘খাইতে পারি না আবার পড়াশোনা।’

‘তোর বাবা-মা কি করেন?’

‘বাপে মইরা গেছে। মায় মাইনসের বাড়ি কাম করে।এহন আমি করতে দেই না। আমিও আগে একটা দোকানে কাম করতাম। এই ক্যাফের এক মালিক আমারে দেইখা পছন্দ করছে। তারপর হেনে (এখানে) কাম দিলো। এই ক্যাফের তো চার মালিক। পাটনারশিপে চালায়।’

‘এত খবর রাখিস?’

‘রাখতে হয় ভাই।’

এক কর্মচারী সাকিবকে ডাকতেই সাকিব হৃদয়কে বললো,

‘আমি আইতাছি ভাই।’

সাকিব দৌড়ালো। হৃদয় ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। পরিস্থিতি মানুষকে কত বড় করে দেয়। সাকিবের বাবা নেই বলে ও পড়াশোনা করতে পারেনি। আর সে নিজের জিদ বজায় রাখতে পড়াশোনা করেনি। আজ ভীষণ আফসোস হচ্ছে হৃদয়ের। কেন পড়ালেখা করলো না?

হৃদয় আরো চিন্তা করলো। সাকিব জন্মের পর বাবাকে দেখেনি। আর সে পড়াশোনা না করেও বন্ধুদের সাথে ঘুরেফিরে কত টাকা নষ্ট করেছে। আদরের ছেলে হওয়ায় বাবাও কিছু বলেনি। একটা মাত্র ছেলে জিদের বশে নিজের ক্ষতি করে বসলে ছেলে পাবে কোথায়? এই ভয় ছিলো তাদের। কিন্তু ছেলেকে যে শাসন না করে আশকারা দিয়ে কতবড় ভুল করেছে তা কিন্তু একসময় হারে হারে টের পাবেন।

মোবাইল বের করে ডাটা ওন করলো হৃদয়। ফ্রী ফায়ার খেলায় আসক্ত সে। গতবার ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে একটা আইডি কিনেছে। বাবা টাকা দিয়েছিলো। এখন টাকা কামাই করতে এসে বুঝেছে টাকার মর্ম কি। গেমস বের করেও ডাটা অফ করে পকেটে মোবাইল রেখে দিলো। কিছু ভালো লাগছে না। বর্ষার কথা মনে পরছে। চারদিন ধরে কোন যোগাযোগ নেই। আচ্ছা, মেয়েটা ভালো আছে তো?

[কিছু কথাঃ
অনেকের আমার ওপর রাগ আমি আয়াজকে কেন আনলাম? কারণটা স্পষ্ট করি। মাঝে মাঝে মানুষ এমন একটা পরিস্থিতিতে পরে যে তার জীবনে একসাথে দুই বা তার অধিক মানুষের আগমন ঘটে। তখন সেখান থেকে একজনকে বাছাই করে নিতে আসলেই খুব কঠিন হয়ে যায়। আপনারা আমরা স্বাভাবিক নিজের পছন্দের মানুষকে বেছে নিবো। কিন্তু সেই পছন্দের মানুষটা যখন আমাদের থেকে সরে যেতে চায় বা আপনাকে না চায় তখন কাকে বেছে নিবেন? এমন একটা বাজে পরিস্থিতিতে বর্ষা পরেছে। একটা মেয়ের জীবনে একের অধিক পুরুষ এলে কি ধরনের পরিস্থিতিতে পরতে পারে সেগুলো গল্পে তুলে ধরছি।আমি এমনও দেখেছি যে একটা মেয়েকে পাঁচটা ছেলের থেকে একজনকে বাছাই করতে বলা হয়েছে।বর্ষার এই অবস্থা, সেই বেচারী কি অবস্থায় পরেছে ভাবুন তো?

গল্পে মূলত বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্বের রক্ষায় ভালোবাসাকে তুচ্ছ করার বিষয়গুলো উঠে আসছে। বাস্তব জীবনে অনেকে এমন সিচুয়েশনে পরে। বন্ধুত্ব নিয়ে গল্পটা লিখতে চাইছি। এখন দেখা যাক নায়ক কে হয় আর বর্ষাকে কে পায়। আমি একটুও বলবো না নায়ক কে। নায়ক জানতে হলে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।এখন আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন,“হৃদয় কি আসলেই বর্ষার ভালোবাসার যোগ্য?” সবাই সবার মতামত জানাবেন। আমি আমার মতামত কালকে জানাবো।]

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here