গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_১১ : #বৃষ্টি
লেখিকা : #Lucky
পুরো রুমে এই রাত ২ টার সময় আলো জ্বলছে। আমি শাওনের বিছানায় বিরক্তির সাথে বসে আছি। শুধুমাত্র বলেছিলাম, “আমি আপনার সাথে ঘুমাব!” উনি মনে করেছে আমরা একসাথে ঘুমাব। তাই বলে দিলেন, “impossible.” হুহ আমি যেন বসে আছি ওনার সাথে ঘুমানোর জন্য।
আপাতত ভয় এর মা কে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য পুরো রুমে আলো জ্বালিয়ে আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বেলকোনিতে চলে গেছে। আমি এত তীব্র আলোতে ঘুমাতে পারিনা। কি অসহ্য। আমার ওই সোফাই ঠিক ছিল যদি ওই ছোটো লাইটটা যেটা পেইন্টিং এর উপর জ্বলত সেটা ফিউজ না হত। যাক বিছানা পাওয়া গেছে এই সুবাদে। এটাই ভাল। পায়ের কাছের চাদর টা টেনে নিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি ঢেকে শুয়ে পরলাম। অনেক দিন পর শান্তির ঘুম দিলাম।
অনেক দেরি করে উঠলাম ঘুম থেকে। চাদর সরিয়ে উঠে বসে হাত দুটো মেলে আড়মোড়া ভাঙলাম। তারপর সোফায় তাকিয়ে দেখলাম শাওন লেপটপ টেপাটেপি করছে সাথে মনে হয় চা বা কফি খাচ্ছে। কারন পাশেই একটা মগ রাখা। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। ব্যাপার কি! আজ ৯ টার বেশি বাজে উনি এখনো যাননি কেন? প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ঠিক তখন ই আমার দিকে তাকালেন। আমি সাথে সাথে একটু অন্য দিকে তাকালাম। শাওন লেপটপ বন্ধ করে উঠে দাড়ালো আর আমার দিকে আসতে লাগল। টের পেয়েও আমি তাকালাম না। উনি এসে এক টানে আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিলেন।
আমি চমকে উঠে বললাম,”কি করছেন আপনি!”
“গেট আউট” বলে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি মুখটা একটু ব্যঙ্গ করে বললাম,”হ্যা হ্যা এটা বাদে আর কি ই বা বলবেন।”
তারপর বিড়বিড় করে বললাম, “সারাদিন গেট আউট, গেট আউট করতেই থাকে।”
শাওন রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে গিয়ে ওনার চোখের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, “যাচ্ছি, যাচ্ছি। এভাবে তাকানোর কি আছে।”
হঠাৎ মাথায় এলো যা পরে আছি সেটার হাতার কথা। সাথে সাথে দুই হাত দুই কাধে রেখে অপ্রস্তুত হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলেন।
আমি জলদি করে ল্যাগেজ খুললাম। এই ছাতার ড্রেস আর পরে থাকা যাচ্ছেনা।
আজও নাস্তায় রুটি আর সবজি। খেতে বসলাম। এমনিই অনেক দেরি হয়েছে। শাওন সোফায় বসে সেই কি যেন আঁকছে একটা ফাইলে। মনে হয় নতুন বাসার ডিজাইন। কিন্তু আজ অফিস যাবে না কেনো?
উনি আছে বলে আমি শান্তিতে নড়াচড়াও করতে পারছিনা। ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো আজ শুক্রবার। অহ তারমানে এই গরিলাটা প্রতি শুক্রবার বাসায় থাকবে? কি বিরক্তিকর বিষয়।
আজ মনে হয় ডাইনিং টা তেই বসে কাটাতে হবে। ডাইনিং এ বসেই আজ ওনার কাহিনী দেখতে লাগলাম। আজ উনি পুরো ঘর গুছানো, ধোঁয়া মোছা, নিজের জামা কাপড় লন্ড্রি, সব কাজ করলেন। তারপর এখন শুধু রান্না করাই বাকি। আমি ডাইনিং থেকে উঠে এসে রান্নাঘরের সামনে দাড়ালাম।
উনি আমাকে দেখেও না দেখার মত ভান করে ছুড়ি দিয়ে পেয়াজ কুচি করতে লাগলেন। তাই আমিই একটু বিব্রত মুখ করে বললাম, আপনি চাইলে আমি রান্না করে দিতে পারি।
শাওন কোনো কথা বলল না। আমার দিকে তাকালোও না। আমিও ওনাকে পাত্তা না দিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম যে উনি আজ রান্না টা কি করবেন। মাছ আছে, এদিকে কুমড়ো আছে, আর ডাল। আমি ফট করে ডালের বাটি টা নিয়ে শাওনের উলটো পাশে থাকা ট্যাপে ধুতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। উনি এসে খপ করে আমার হাত ধরলেন। আর বললেন, “get out.”
আমি হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে কপাল কুচকে বললাম, “সারাদিন এত গেট আউট গেট আউট করেন কিসের জন্য!”
“কারন….”
শাওনকে থামিয়ে দিয়ে আমি বলে উঠলাম, এটা আমার বাসা। এটাই বলবেন ত? জানি এটা আপনার বাসা। তো? পিশামনি বলেছে এখন থেকে এটা আমারো বাসা।
শাওন চোখ পাকিয়ে বলল, “You really talk to much. আর একটা এক্সট্রা কথা বললে ছুড়ে বাইরে ফেলে দিয়ে আসব।”
আমি রেগে হাতের পাঁচ আঙুল নাচিয়ে বলে উঠলাম, “এত সস্তা না।”
শাওন রেগে এক পা এগুতেই আমি পিছিয়ে যেতেই নজর গিয়ে পরল গ্যাসের উপরের ফ্রাই প্যানে। তেল অনেক বেশিই গরম হয়ে গেছে। শাওনও তাকালো। তারপর সরে গিয়ে চুলার কাছে আসল। আমি ওনার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম, “আপনি কি সারাবছরই এমন? গোমড়ামুখো?”
শাওন একবার রেগে আমার দিকে তাকিয়ে সব গুলো মাছ একসাথে ফ্রাই প্যানে ঢেলে দিল। আর সাথে সাথে গরম তেল ছিটকে আমার ডান হাতের উপরিভাগে এসে পরল।
আমি ব্যথার “আহ” বলে চোখ মুখ কুচকে ওনার দিকে তাকালাম।
শাওন রেগে বলল, “বলেছিলাম না এখান থেকে যেতে!” তারপর আমার হাত টেনে নিয়ে ট্যাপের পানির নিচে ধরল আর রেগে বলল, “শখ মিটলে এখান থেকে যাও।”
আমিও রেগে বলে উঠলাম, আর শখ না মিটলে?
শাওন রেগে আমার হাতটা চেপে ধরল।
“আহ! একে ত হাত টা ঝলসে দিয়েছেন তার উপর আবার হাতটা ভেঙেও ফেলতে চাচ্ছেন। কোথায় মানুষ ভুল করলে সরি বলে আর এখানে দেখো!”
শাওন এক ঝটকায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে হাত টা ছেড়ে দিল। সেজন্য আমি খানিকটা পিছিয়ে এলাম।
রেগে ফুলে আশেপাশ তাকাতেই ময়দার ডিব্বা দেখলাম। সাথে সাথে এক বাটি ময়দা নিয়ে ওনার দিকে মেরে দিলাম। ওনার গলা থেকে শুরু করে ময়দা পুরো শার্ট পর্যন্ত লেগে গেছে। উনি রেগে এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। তারপর ওই এক ডিব্বা ময়দা পুরো আমার মাথায় উলটো করে ঢেলে দিলেন।
আমি ওনার এই কান্ডে পুরো হা হয়ে গেলাম। প্রচন্ড রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। উনি আমার কাছ থেকে সরে নিজের শার্ট ঝারতে ঝারতে ট্যাপের কাছে গেলেন।
আমি রেগে এসে ওনার সামনে দাড়িয়ে বললাম, কি করেছেন এটা আপনি?
“যেমন কুকুর তেমন মুগুর” উনি শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন।
-কি? আমি কুকুর?
-ত আর কি? কখন থেকে পিছেই পরে আছো!
শাওন কপাল কুচকে বলল।
আমি ক্ষেপে হাত মুঠ করে গ্যাসের চুলার পাশ তাকাতেই একটা জগ দেখতে পেলাম। সেটার অর্ধেক পানি ভরা ছিল। জগটা হাতে নিয়ে সেটার ঢকনা খুলে ওনার মুখে পানি গুলা মারলাম। উনি চোখ বন্ধ করে বা হাত দিয়ে নিজের নাকমুখের পানি গুলো সরালের। আমি জগটা রেখে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আর মুখ মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসছিলাম। পিছন থেকে উনি আমার হাত খপ করে ধরে টানতে টানতে আমি রুমে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি বলতে লাগলাম, কি করছেন আপনি! হাত ছাড়ুন আমার। লাগছে আমার।
বলতে বলতেই উনি আমাকে বাথরুমের মধ্যে এনে শাওয়ার নিচে জোর করে দাড় করিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলেন। আমি সরে আসতে চাওয়ার সাথে সাথে আমাকে আবার টেনে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিলেন।
“কি করছেন আপনি! ছাড়ুন আমার হাত।”
ভিজে বিড়ালের মত অবস্থা হওয়া অব্দি আমাকে সরতেই দিলেন না। ৩মিনিট ওভাবে রেখে আমার হাত ছেড়ে দিলেন। তারপর উনি বের হবার জন্য আমার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার মুহূর্তে আমি ওনার শার্টের কলার ধরে টেনে আমার সাথে দাড় করিয়ে দিলাম।
কারন এভাবে কীভাবে ওনাকে এত সহজে ছেড়ে দিব আমি? আমাকে ডবল গোসল না হয় করতেই হত কিন্তু ওনাকেও করিয়ে ছাড়ব।
উনি ভ্রুকুচকে আমার হাতের দিকে তাকালেন। আমি মুখে চাপা রাগ এনে আরো শক্ত করে কলারটা ধরলাম আর মনে মনে বললাম, “আমিও গুনে গুনে তিন মিনিটের আগে ছাড়ব না।”
আমার এই কাজের জন্য ওনার চোখেমুখে রাগ ছেপে উঠছে। তাতে কি! আমি ভয় পাইনা।
উনি আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে আসতেই আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম ওনার দিকে।
“তোমার আমার সাথে গোসল করার খুব শখ না! আসো পূরন করে দিচ্ছি আমি।”
এই কথা শুনে আমি সাথে সাথে ওনার কলার ছেড়ে পিছিয়ে গেলাম।
উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালেন। আমিও নিজের দিকে তাকালাম আর সাথে সাথে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম। শাড়ির মধ্যে দিয়ে সব বুঝা যাচ্ছে কারন শাড়ি পুরো গায়ে লেপ্টে আছে। যেমন শাশুড়ী তেমন শাড়ি।
আমি কি করব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। শাওন শাওয়ার টা বন্ধ করে ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। কি একটা পরিস্থিতি! কই যাব এখন আমি।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমি ভয়ে পিছাতে পিছাতে বললাম, “আ…আমার সাথে উল্টো পালটা কিছু করলে.. আমি কিন্তু…”
কথা শেষ হবার আগেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল।
শাওন স্বাভাবিক ভাবেই আমার কাছে এসে আমার পাশে ঝুলে থাকা তোয়ালে টা নিলো। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম।
শাওন তোয়ালে টা নিয়ে আমার মাথার উপর দিয়ে দিল।
“তোমার জন্য আমার সবকিছুতেই দেরি হবে আজ। জলদি করবা” বিরক্তির সাথে কথা গুলো বলে শাওন চলে গেল।
আমি তোয়ালেটা মাথা থেকে নামালাম আর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লাম।
এখন সমস্যা হলো আমি পরবো কি? বাহিরে ল্যাগেজ থেকে কাপড় আনতে হবে ত। তাই বাথরুমের দরজা হালকা খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিলাম। উনি মনে হয় বেলকনিতে।
আমি বের হয়ে আসার সাথে সাথে শাওন বলে উঠল, “এখনো কি করছ তুমি!” শাওন বেলকোনির দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল।
আমি হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম,”জামাকাপড় নিতে।”
শাওন বিরক্তির সাথে বেলকোনির ভিতরে চলে গেল।
আমি জলদি করে করতে চেয়েও অনেক দেরি করে ফেললাম। বের হবার আগে আগে উনি দরজায় টোকা দিয়ে বিরক্তির সাথে বললেন, “তোমার জন্য কত সময় এভাবে থাকব আমি!”
আমি ভিতর থেকে বললাম,”হয়ে গেছে।”
তারপর বের হতে যাবার আগের মুহুর্তে মনে হলো ওনাকে একটু জব্দ করলে কেমন হয়!
চিন্তা করেই একটা নিঃশব্দ ভিলেনী হাসি দিলাম।
আমাকে বিনা কারনে এত জ্বালাতন করা।
আমি বাথরুমের মধ্যে ইচ্ছা করে দাড়িয়ে রইলাম। শাওন আবার নক দিল। আমি ভনিতা করে বললাম, “আর একটুখানি সময় লাগবে।”
উনি যে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছেন বুঝতে পারছি। শুধু যদি মুখখানা দেখতে পেতাম। কারন আজ অনেক মেজাজ দেখিয়েছেন আমার উপর। আমিও কম যাই না হুহ!
“তুমি ইচ্ছে করে এগুলা করছ, Right?”
ওনার এই কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম,” বটে, আপনার বুদ্ধি আছে ঘটে।”
আমি মুখ চেপে হাসতে লাগলাম। শাওন তাও হয়ত শব্দ পেল।
রেগে জ্বলে বলে উঠল,”You are getting on my nerves right now.”
আমি কিছুই বললাম না। অনেক শান্তি লাগছে।
শাওনের রাগ ওদিকে বাড়ছে। ও রাগে কটমট করে বলল, “তোমার সাথে সত্যিই ভালোভাবে কিছুই করা সম্ভব না। Now I will let you know how dangerous I can be. So just wait and see.”
আমি চিন্তায় পরে গেলাম। কি করবেন উনি? দরজায় কান পেতে বুঝতে চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।
তাই অল্প করে দরজা খুলে বের হয়ে এসে আমার চোখ কপালে উঠে গেল আর মুখ হা হয়ে গেল।
উনি এক জগ পানি আমার ল্যাগেজে খুলে ঢেলে দিয়েছেন! আমি রেগে হাত মুঠ করে ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, “আপনি কি করেছেন এটা!”
“এখনো ত কিছুই করিনি।” বলেই শাওন আমাকে আবার বাথরুমে টেনে নিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিল।
এতে আমার মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। আমি এক ধাক্কা দিয়ে ওনাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,”আপনার মাথা ঠিক আছে? কি করেছেন এটা? এখন আমি কি পরব!”
“That’s none of my business.” বলে আমাকে টেনে নিয়ে একদম বাসা থেকেই বের করে দিলেন।
এই পরিস্থিতিতে আমার কেমন লাগা উচিত নিজেও জানিনা। খুব অসহ্য আর বিরক্ত লাগছে। তাই আমি ছাদের দিকে রওনা হলাম।
ছাদে অনেক রোদ। চিন্তা করলাম এখানেই বসে থেকে গা শুকিয়ে নিব। কিন্তু অনেক অতিরিক্ত রোদ। যদিও করার কিছুই নেই।
দুপুর গরিয়ে বিকাল হয়ে গেল আমি দুই হাটুর মধ্যে মাথা গুজে বসে আছি। এখন অনেক খারাপ লাগছে। একটা মানুষ এতটা খারাপ কি করে হতে পারে!
সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘ করলো। বুঝলাম আজ বৃষ্টি হবে। কিন্তু জেদ হচ্ছে প্রচুর। একদমই যাব না আমি।
ঘন্টাখানেক পরে সত্যিই অনেক জোরে বৃষ্টি শুরু হলো। ভিজতে আমার ভাল লাগে কিন্তু আজ অনেক ঠান্ডা লাগছে। কড়া রোদে ওভাবে বসে থাকা ঠিক হয় নি।
এখনো এভাবে ভেজা ঠিক হচ্ছে না। তাও নড়তে ইচ্ছে করছে না।
শাওন সন্ধ্যা থেকেই লেপটপে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। বৃষ্টি শুরুর খানিক পরেই ওর খেয়াল হলো আমি বাহিরে।
লেপটপ বন্ধ করে গিয়ে দরজা খুলল। কিন্তু সেখানে আমি নেই।
“oh shit” বলে শাওন বের হয়ে নিচে গেল। রিসিভশনে জিজ্ঞাসা করে কিছু জানা গেল না। তাই বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়ে দারোয়ান এর কাছে গেল শাওন। দারোয়ান একটা বড় ছাতার মত জিনিসের নিচে দাড়িয়ে ছিল। শাওন ভিজতে ভিজতে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল,”একটা মেয়েকে দেখেছ? শাড়ি পড়া। পিংক।”
দারোয়ান বৃষ্টির প্রবল শব্দের কারনে জোরে জোরে বলতে লাগল,”না স্যার। আমি ত দুপুর থেকেই গেটে আছি। এমন কেউ যায়নি। আপনি এভাবে ভিজলে ত অসুখ চলে আসবে।”
শাওন দারোয়ানের কথা পাত্তা না দিয়ে বলল, “Are you sure?”
“হ্যা স্যার।”
শাওন এদিক ওদিক তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল কি করবে।তারপর ছাদের কথা মাথায় এল। সাথে সাথে ছাদে এলো। ছাদে ঢুকে সামনের দিকে তাকিয়ে তারপর বাম দিকে মুখ ফেরাতেই আমাকে দেখতে পেলে। আমি হাটুর মধ্যে মাথা গুজে বসে আছি। শাওন আমার কাছে এসে আমার কাধে হাত রাখল।
আমি মাথা তুলে ওনার দিকে তাকালাম। আমার সারা গা কাপছে।
শাওন ভ্রুকুচকে বলতে লাগলেন, “তুমি কি ষ্টুপিড? এখানে বসে আছো!”
আমি কোনো উওর দিলাম না। প্রচুর ঠান্ডা লাগছে। জ্বর আসবে হয়ত।
“রুমে চলো।” শাওন বলল। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতেও পারছি না। আমি ওনার হাত ঠেলে আমার কাধ থেকে সরিয়ে দিলাম। উনি কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালেন।
উনি নিজেও রীতিমতো অনেক ভিজে গেছেন। উচিত ভেজা। উনি আমার সাথে আজ যা করেছেন তার জন্য আমি কোনোদিনো ওনাকে ক্ষমা করব না। আর আমি যাবও না ওনার সাথে।
উনি আমার দিকে আবার হাত বাড়াতেই আমি সরে বসলাম। তাই উনি রেগে বললেন,”Enough of your drama.” আর বলেই জোর করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
ওনার রুমে নিয়ে এসে আমাকে সোফার সামনের টি-টেবিলে বসালেন। তারপর নিচু হয়ে আমার গলায় হাত দিলেন। পুরো গা ঠান্ডা হয়ে আছে।
শাওন উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল,”Damn you. কত সময় ছিলে অইভাবে তুমি! গা বরফ হয়ে গেছে। সব এখনি চেঞ্জ করতে হবে। সব খোলো।”
আমি কোনো উওর না দিয়ে চুপ করে রইলাম। মাথা ঝিম মেরে যাচ্ছে।
যখন চোখ খুললাম তখন সকাল। অনেকটা রোদ উঠেছে। গায়ে একটা মোটা কম্বল আমার। তাও এখনো ঠান্ডা লাগছে। হয়ত অল্প জ্বর আছে। বেলকোনি দিয়ে রোদ এসে রুমের ভিতরে পরেছে। আমি সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটু পাশে তাকালাম। আমার শাড়ি ব্লাউজসহ সবকিছু ওখানে পরে আছে। আর তার একটু পাশেই শাওনের ব্লু শার্ট টাও নিচে পরে আছে।
আমি চোখ বড়সড় করে চিন্তা করলাম তাহলে আমি এখন কি পরে আছি? সাথে সাথে কম্বলের নিচে ডুব দিতেই দেখলাম আমি শুধু একটা সাদা শার্ট পরে আছি। এটা অবশ্যই শাওনের কিন্তু আমি এটা কখন পড়লাম। ফট করে গায়ে কম্বলটা টেনে নিয়ে উঠে বসলাম।
উনি কাল রাতে আমার… আমার শাড়ি… না না।
তখনি দরজার টোকা পরল। আমার কানে যেন কিছুই যাচ্ছে না। স্তম্ভের মত বসে রইলাম। শাওন দরজা খুলে ঢুকলো।
গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_১২ : #ডে_অফ
লেখিকা : #Lucky
শাওন আমার পাশে এসে দাড়িয়ে আমার কপালে হাত দিল। সাথে সাথে আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম আর গায়ে চাদর টেনে নিয়ে বললাম,”টাচ করবেন না একদম আমাকে।”
শাওনকে দেখে মনে হলো না যে ও আমার কথায় পাত্তা দিল। চোখমুখে কোনো রিএকশন নেই।
“তোমার জ্বর এখনো আছে তাই প্রলাপ বকছ। ব্রেকফাস্ট রেডি। তারপর ঔষুধ আছে তোমার।”
আমি চাদরের এক কোনা হাতের মুঠোয় চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,”কি করেছেন আপনি আমার সাথে?”
“কি করেছি?” শাওন স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করল। আমার গা জ্বলে যাচ্ছে ওনার প্রশ্ন শুনে।
আমি রেগে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার কাছে ঝুকে এসে আমার হাত ধরলেন। সাথে সাথে আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,”ছাড়ুন আমাকে৷ বলেছি না আমাকে ছোবেন না।”
শাওন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,”যদি বেশি বাচ্চামি করো তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”
বলেই অন্য হাত দিয়ে আমার ঘাড়ের উপর থেকে চাদর সরাতে গেলেন আর আমিও সাথে সাথে ওনার সেই হাত চেপে ধরলাম। আমার চোখমুখে দ্বিধা দেখেই উনি বুঝলেন যে আমি চাদর টা রাখতে চাচ্ছি।
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,”আমি খাবার এখানে নিয়ে আসছি।”
আমার চোখ আবার ফ্লোরে পরে থাকা কাপড় গুলোর উপর পরল। অনেক অসহ্য লাগছে। আমি দুই হাটুর মধ্যে মাথা গুজে রইলাম। চোখ দিয়ে পানি পরে গায়ের চাদরটা ভিজে যাচ্ছে।
কাল রাতের কিচ্ছু মনে পরছে না। কোলে করে এনে আমাকে ওই টি-টেবিলে বসালেন। তারপর! তারপর কি হলো?
শাওন ফিরে এসে একটা বাটি বিছানার পাশে থাকা ছোট ড্রয়ার গুলোর উপরে, টেবিল লাম্পের পাশে রাখল।
“Have it quickly.” শাওন স্বাভাবিক ভাবে বলল।
আমি মাথা তুললাম না।
শাওনের ফোন বেজে উঠল। সোফা থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে বলল,”হ্যা সুমনা।”
“তুই ডে অফ নিয়েছিস?”
“yeah”
“কেন? কিছু হয়েছে?”
“না সব ঠিক আছে।”
“তাহলে?”
“কাজ আছে আমার তাই নিয়েছি। তুই তোর কাজ কর।”
বলেই শাওন ফোন কেটে দিল। আমি মাথা তুললাম ই না।
শাওন বলল,”কি সমস্যা তোমার? খেয়ে ঔষধ খেতে বললাম না?”
উনি আবার রাগ দেখাচ্ছেন আমার উপর! আমারো এখন রাগ লাগছে। তাই জেদ করে আমি মাথা তুললাম না।
শাওন রেগে বলল,”যতসময় আমার patience আছে আমার কথা শোনো। নাহলে…”
আমি মাথা তুলে ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, নাহলে কি করবেন? আবার বের করে দিবেন? কি করতে চান টা কি আপনি আমার সাথে? আপনার ইচ্ছে হলো তাই আমি আর এই রুমের বিছানায় থাকতে পারব না। আপনার ইচ্ছে হলো ত আমি এই রুমের সোফায়ও থাকতে পারব না। আবার আপনার অন্য কোনো রুমে যেতে পারব না। আপনার রান্নাঘরেও যেতে পারব না। আর আপনার যখন ইচ্ছা আমার সাথে যা খুশি করবেন। আপনার ইচ্ছা হলো আমাকে বের করে দিলেন, আপনার ইচ্ছা হলো আমাকে জোর করে আবার নিয়ে আসলেন, এখন আপনার ইচ্ছা হলো আমাকে জোর করে খাওয়াবেন, এর পরে কবে আমার গায়েও হাত তুলবেন!”
আমার চোখ দিয়ে এখন পানি গড়িয়ে পরছে। উনি শক্ত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
“একই কথা কতবার বলবা আর?” শাওন বলল।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে। একই কথা মানে কতবার বলব মানে! কতবার বলেছি?
আমার চাহনি দেখে শাওন বলল, “কাল রাতেও ত এগুলোই বকছিলে।”
কাল রাতেও এগুলো বলেছি মানে! কখন বলেছি? ভাবতে লাগলাম।
শাওন আরো বলল, ঠিক ই বলেছ। আমি যেটা চাইব সেটাই হবে। এখন আমি চাই তুমি খাবে। মানে খেতেই হবে। তাতে যদি আমার তোমাকে জোর করতে হয়, করব।
আমি চোখ বড়বড় করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।
আমি আমার জেদে অটল। মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। শাওন আমার কাছে এসে দাড়ালো। আমি আড়চোখে তাকালাম। এখনো চোখ থেকে পানি পরছে।
“I am sorry.”
আমি চমকে উঠে ওনার দিকে তাকালাম। আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে! না, আজ আসলেও সূর্যই উঠেছে কিনা? নাকি কানে ভুল শুনছি? কিন্তু সরির সাথে মুখের ভঙ্গী দেখো কেউ একটু! আর পাঁচটা কথার মত এটাও গোমড়া মুখ করে বলল।
কিন্তু এক মিনিট। গত রাতেও কি উনি আমাকে সরি বলেছিল? ভ্রুকুচকে চাদরের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। কেন বলেছিলেন?! মনেই পরছে না। আবছা স্মৃতি সবচেয়ে বিরক্তিকর।
“কি হলো?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল। আমি ওনার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললাম, “কাল রাতে কি করেছেন আমার সাথে সেগুলো আগে বর্ননা করেন।
“মানে?”
মেজাজ টা বিগড়ে যাচ্ছে! না বুঝার কি আছে! কতবার প্রশ্ন করলাম। শাওন ঝুকে এসে আমার দুই হাতের বাহু ধরে আমাকে ওনার দিকে ঘুরিয়ে বলল,”অনেক হয়েছে। তুমি কি চাও আমি তোমার গা থেকে চাদর সরিয়ে দিই?
আমি চমকে উঠে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, “একদমই না!”
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে খেতে ইশারা করে বলল,”আমি ৫ মিনিটের মধ্যে এই বাটি খালি না পেলে বুঝবে।”
শাওন রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি আশেপাশে তাকিয়ে আমার ল্যাগেজ টা কোথাও দেখলাম না। গেল কই!
ওহ হ্যা সব ত এমনিও ভিজিয়ে দিয়েছে গরিলাটা লাভও নেই ওটা খুজে। আমি পাশে রাখা বাটির দিকে তাকালাম। স্যুপ? তাও আবার সবজির। জীবনের সাথে সাথে খাবারও নিরামিষ হয়ে গেছে আমার।
খেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু ৫ মিনিট পর এসে আবারও এসে চিল্লাবে। উফ। হাতে নিলাম বাটিটা।ঠান্ডা হয়ে গেছে পুরো। নাক মুখ বন্ধ করে গিলে নিলাম। বিরক্তিকর।
তারপর মনে হলো শাড়ি পরে নিলে ভাল হত। এভাবে আর কত সময় বসে থাকব। শাওন আবার রুমে এসে ঢুকলো। পানির গ্লাস আর ঔষধ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,”নেও।”
আমি রাগী চোখে তাকিয়ে গ্লাস আর ঔষধ হাতে নিলাম আর গিলে ফেললাম। তারপর বললাম, আমার ল্যাগেজ কি করেছেন?
“সব ছাদে। কারণ সবই ভেজা।”
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,”ভেজা না বলুন সব ই ভিজিয়ে দিয়েছি।”
তারপর বিরক্তির সাথে বললাম, এখন আমি পরব টা কি!
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কিছু পরা লাগবে না চুপচাপ এভাবেই থাকো। বিছানায় আছো তাই শান্তিতে আছি। উঠলে না জানি আবার কি পাকামী শুরু করো!”
“আমি পাকামী করি? আর আপনি কি করেন তাইলে?”
“shut up.” বলে শাওন বেরিয়ে যেতে লাগল।
আমি দ্বিধায় পরে বলে উঠলাম, “আমাকে শাড়ি এনে দিন। আমি এভাবে… যাই হোক আমাকে এনে দিন।”
শাওন আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল। কয়েক মিনিট পর একটা শাড়ি নিয়ে এসে আমার পায়ের কাছে ফেললেন। হয়ত ছাদের থেকে এনেছেন।
আমি কপাল কুচকে বললাম, শুধু শাড়ি এনেছেন কেন!
শাওন বিরক্তি নিয়ে বলল, “সবই আছে। চোখ দিয়ে দেখে কথা বলো। এক্সট্রা কথা বলো সবসময়।”
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম, “হ্যা হ্যা সব ত আমিই এক্সট্রা করি। আপনি যে সুপার এক্সট্রা করেন তার ত কিছুই না। এখন দয়া করে যান আর ভুলেও এখন আসবেন না আমি না বলা পর্যন্ত।”
শাওন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে চলে গেল। আর যাবার আগে রুমের দরজা পুরো এগিয়ে দিয়ে গেল। আমি সব নিয়ে ফট করে গোসলে চলে গেলাম।
শাওন একটু পরে এসেই বাথরুমের দরজায় নক দিতে দিতে বলল, “তোমাকে গোসল করতে বলেছি আমি? এখনি বের হও!”
আমি ব্যঙ্গ করে বললাম, এখনি বের হও! হুহ। আমার হয়নি৷ আপনি চুপ করেন।
শাওন রাগে কটমট করে বলল, “তোমার হেয়ালির কারনে যদি আবার কিছু বাধাও তাইলে সত্যিই তোমাকে আবার বাহিরে ফেলে দিব আমি।”
আমি বাথরুম থেকে বলতে লাগলাম,”এবার ফেলে দেখুন আমি কি করি।”
শাওন দরজা জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,”ভালই ভালই বের হও এক মিনিটে।”
কি আর করার, এমনিও বেশি গোসল করা ঠিক হবেনা। আমার মাথা ঘুরছে আবার। জ্বর আবার আসবে হয়ত। তাই জলদি মাথায় তোয়ালে বেধে বের হলাম। শাওন সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ধোয়া শার্টটা ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, “আপনার শার্ট।”
“লাগবে না আমার!” গোমড়া মুখ করে বলল শাওন। তারপর বেরিয়ে গেল।
আমি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে শার্টটা নিয়ে বেলকনিতে টাঙিয়ে দিলাম। বেলকোনির রোদে দাড়িয়ে থাকতে অনেক ভাল লাগছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে উঠল। আমি বেলকোনির রেলিং ধরে আস্তে আস্তে মেঝেতে বসে পরলাম। বসতে না বসতেই মনে হলো কেউ আমাকে শূন্যে তুলে নিল। আমি চমকে গেলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”বলেছিলাম না নড়াচড়া না করে এক জায়গায় থাকতে!”
শাওন আমাকে নিয়ে এসে বিছানায় আবার বসিয়ে দিল। মাথা ঘুরছে তাই চুপ করে বসে রইলাম।
শাওনের ফোন বেজে উঠল। আবার সুমনা কল দিয়েছে।
– হ্যা বল
– তোকে অফিস আসা লাগবে।
– কেনো?
– ফাইল তোর কাছে। জলদি আয়। তাছাড়া যে মিটিং কালকের জন্য ছিল সেটা আজ হবে।
শাওন আমার দিকে তাকালো। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
– ওকে আসছি।
শাওন কথা শেষ করে এসে আমার মাথা থেকে তোয়ালেটা টান দিয়ে খুলে দিল।
আমি অবাক হয় মাথায় হাত দিয়ে বললাম, কি করছেন আপনি?
শাওন বলল, আমার সাথে চল।
আমি আকাশ থেকে পরে বললাম, কোথায়?
“সেটা তোমার না জানলেও চলবে।”
বলেই শাওন হাত ধরে টেনে আমাকে দাড় করিয়ে দিল।
“তোমাকে রেডি হবার জন্য ৫ মিনিট দিলাম।”
বলে শাওন নিজের জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
আমার রেডি হওয়া বলতে শুধু চুল ঠিক করা।
গাড়িতে বসতে বসতে আমি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললাম,”আপনি আমাকে কোথাও ফেলে আসার মতলব করছেন না ত?”
শাওন বিরক্তির সাথে বলল,”যেমন তোমার মাথা তেমন তোমার চিন্তাভাবনা।”
“আর আপনার? গোমড়া মুখ আর ফাপা মাথা।” আমার কথা শুনে শাওন রেগে আমার দিকে তাকাতেই আমি সীট বেল্ট বাধতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
গাড়ি অফিসের কার পার্কিং এ পার্ক করে শাওন বের হতে হতে বলল, “এখানেই চুপচাপ বসে থাকবা।” শাওনের ফোন বেজে উঠল। শাওন হাতে কোট আর ফাইল নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে ফোন তুলে বলল, হ্যা আমি এসেছি। কথা বলতে বলতে শাওন লিফটের দিকে যেতে লাগল।
আমি সীট বেল্ট খুলে নামলাম। কারন বসিয়েই যদি রাখতে হয় তাহলে ঘরে রেখে আসলেই ত পারত।
ওনার পিছে পিছে হেটে লিফটে ঢুকে পরলাম। উনি চোখ পাকিয়ে বললেন, “তোমাকে না বসে থাকতে বলেছি?”
আমি উওর না দিয়ে সামনে তাকিয়ে রইলাম। শাওন যে রেগে তাকিয়ে আছে আমার দিকে সেটা লিফটের দরজার তাকিয়ে বুঝলাম।
শাওনের পিছনে পিছনে লিফট থেকে বের হয়ে আসলাম। অনেক সুন্দর অফিস টা। শাওন ঢোকার সাথে সাথে একে একে সব রাস্তা থেকে সরে সরে গুড মর্নিং বলে যাচ্ছে। আমি শুধু চারিদিকে দেখছি। সবার সামনে একটা করে লেপটপ। শাওন কারো গুড মর্নিং এর উওর না দিয়ে নিজের কেবিনে ঢুকে গেল। আমি এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে দেখতে দেখতে সামনে শাওনের কেবিনের দরজার টাক খেলাম।
মাথা ডলতে ডলতে দরজা খুলে ঢুকলাম। শাওনের চেয়ার সোজা সামনে দুইটা চেয়ারের একটায় শাওন নিজের কোটটা রেখে কাকে যেন ফোন করল।
আমি ওনার কেবিনটা দেখতে লাগলাম। এসি আছে একটা। সামনে কাচের জালানা। জালানা বললে ভুল হবে কাচের দেওয়াল। যা দিয়ে বাহিরের গাড়ি চলাচল দেখা যাবে। ঢুকেই ডান সাইডে তাকালে একটা হিজিবিজি আকা পেইনটিং ঝুলছে। তার পরে একটা বড় বুক সেল্ফ। আর বাম দিকে সোফা আছে তারপাশে ওয়াসরুম। সোফা সোজা পিছনে একটা দরজা। হয়ত ওদিকে আরেকটা রুম আছে।
সুমনা শাওনের কেবিনে ঢুকে আমাকে দেখে বলে উঠল, “আরে মিলা তুমি!”
আমি সুমনার দিকে দেখে শুধু হাসলাম। শাওন সুমনাকে বলল, চল।
বলেই কোট টা গায়ে দিয়ে ফাইল হাতে বেরিয়ে গেল শাওন। আমাকে টাটা ইশারা করে সুমনাও বেরিয়ে গেল।
আমি ঘুরে ঘুরে কেবিনটা দেখতে দেখতে শাওনের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। অহো কি নরম চেয়ার। এদিক ওদিক ঘুরাও যায় যেমন সিনেমায় দেখেছিলাম।
খানিক বাদেই খুব জ্বর চলে এলো। মাথা আবার ব্যাথা করছে। চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে। এসির কারনে আরোই ঠান্ডা লাগছে। চোখ বন্ধ করে ডান দিকে মাথাটা সামান্য কাত করে শুয়ে রইলাম।
কত সময় পর জানিনা, চোখ খুলে দেখলাম আমি একটা রুমের বিছানায় শুয়ে আছি। গায়ে একটা চাদর দেওয়া। পাশে বসে একজন বয়স্ক ডাক্তার আমার পালস চেক করছেন। আমি ফট করে উঠে বসলাম। শাওন আমার সোজা একটা সিংগেল সোফায় বসে বসে একটা ফাইল চেক করছিল। আমার ওভাবে উঠে বসার কারনে শাওন আমার দিকে তাকালো।
পাশের লোকটা মনে হয় ডাক্তার। মাথায় চুল নেই।উনি হাসিমুখে বললেন,”ভয় নেই।”
তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে বললেন,”একটু weak. খাওয়া দাওয়া বাড়াতে হবে। পেসার লো। পালস ও র্যাপিড কিন্তু উইক। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বা নাপা দিলেই হবে। আর এখন একটা স্যালাইন দিতে চাচ্ছি।”
শাওন ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,”yeah sure.”
ডাক্তারটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”হাতে ক্যানুলা করব ভয় নেই ব্যাথা পাবে না।”
আমি বড়সড় চোখ করে শাওনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, কিসের ‘ইয়া সিওর?’ আর ডাক্তারটাও ত আর একজন। সুই ফুটালে নাকি ব্যথা পাব না!
শাওন বলল,”আমি একটা স্যালাইন আনার ব্যাবস্থা করছি।”
আমি ফট করে বলে উঠলাম,”জীবনেও না। আমি কোন ক্যানুলা করব না। স্যালাইন ও দিব না। আমার গায়ে যথেষ্ট শক্তি আছে।”
শাওন চোখে রাগ নিয়ে আমার দিকে তাকালো। তাতে আমি ভয় পাইনা। তাই বললাম,”এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আমার হাত। আমি করব না ক্যানুলা।” বলেই দুই হাত নিজের কাছে গুটিয়ে নিলাম।
ডাক্তারটা হেসে দিয়ে শাওনের দিকে তাকিয়ে বললেন,”শাওন এটা তোমার বউ? ভারি মিষ্টি মেয়েকে বিয়ে করেছ ত! তোমাদের বিয়েতে যেতে পারলাম না। হুট করে কবে বিয়ে করে নিলে!”
আমি বলে উঠলাম,”আমি ওনার কোনো বউ টউ না।জোর করে বিয়ে করেছে আমাকে। নাহলে আমি জীবনেও…”
শাওনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলাম। আমাকে গিলে খাবে এমন অবস্থা!
আমি চোখ নিচে নামিয়ে নিলাম। ডাক্তারটা অট্টোহাসিতে ফেটে পরল। আমার মন চাচ্ছে ব্যাটার টাক ফাটিয়ে দিই৷ হাসির কিছু বলেছি আমি?
আর একটা বিষয় হচ্ছে সব ডাক্তাররাই কি টাকলা হয় নাকি? আজ অব্দি চুল আছে এমন ডাক্তার আমি ত দেখিনি। তার সাথে সাথে চশমা ছাড়া ডাক্তারও দেখিনি। এরা এত পড়ে যে চোখের পাওয়ার আর মাথার চুলই দুটোই উড়ে যায়?!
শাওন আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে ডাক্তারটাকে বলল,”আপনি স্যালাইন দিন সমস্যা নাই।”
আমি চমকে বলে উঠলাম, “সমস্যা নাই মানে। আমার আছে সমস্যা।”
তারপর ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম,”ওনাকে করে দিন ক্যানুলা। হাতে একটা করবেন আর মুখে একটা।”
বলেই মুখ ভেংচি দিলাম। শাওনের রাগ আরো দুইগুন বেড়ে গেল মনে হচ্ছে। কিন্তু ডাক্তারটা অট্টোহাসিতে পুরো রুম ভরিয়ে দিয়েছে। আর হাসতে হাসতে বলছে, “শাওন ইয়োর ওয়াইফ ইজ অল রাইট নাও। আর ক্যানুলার দরকার নেই। পারলে হানিমুনে কোথাও ঘুড়িয়ে আনো। হোমসিকনেস ঠিক হবে।”
আমি ভ্রুকুচকে ডাক্তারটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন ডাক্তারটাকে বিদায় করতে গেছে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে রুম থেকে বের হলাম। অহ তারমানে এটা শাওনের কেবিনের পাশের রুমটা। বাবা! কেবিনের সাথে রুমও ফ্রি!
শাওন কেবিনের দরজা খুলে ঢুকলো তারপর আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে এগিয়ে এসে বলল,”তুমি কি ছোটো বাচ্চা? কোথায় কিভাবে বিহেভ করতে হয় জানোনা?”
আমি রেগে বলে উঠলাম,হ্যা, জানিনা।
শাওন রেগে এক পা এগুতেই আমি ঘাবড়ে গেলাম। তখনি সুমনা দরজা খুলে ঢুকে বলল, বাসায় যাবি না?
সুমনা সত্যিই আমার এ্যাঞ্জেল। প্রতি বার ঠিক সময় আসে।
শাওন সুমনার দিকে তাকিয়ে হ্যা বলে নিজের টেবিল থেকে কোট টা নিল।
“ওকে আমি আগে বের হচ্ছি। মিলা নিজের খেয়াল রাখো। আমরা ভয় পেয়ে গেছিলাম আজ।” বলেই সুমনা বের হয়ে চলে গেল।
শাওনের ফোনটা বেজে উঠল। শাওন ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে লাগল। হয়ত কোনো ক্লাইন্ট হবে।
আমার হঠাৎ গত রাতের কিছু মুহূর্তে মনে পরে গেল। শাওন কথা বলতে বলতে কেবিন থেকে বের হতে লাগল। আমিও পিছন পিছন বের হলাম।
আমি অন্যমনস্ক হয়ে ওনার পিছনে হাটতে লাগলাম।
যে অংশটুকু মনে পরছে তা হলো গত রাতে উনি আমাকে টি-টেবিলে বসিয়ে সব খোলার জন্য বললেন। আমি মাথা ঝিম ঝিম করার কারনে চুপ করে বসে ছিলাম। তখন উনি আমার শাড়ির আঁচলে হাত দিলেন। তারপর…!
আমার মুখ হা হয়ে গেল। এরপর কি? নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে। মনে পরছে না কেনো?
উনি আমার সামনেই হেটে হেটে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রেগে জোরেই বলে উঠলাম,”কাল রাতে আপনি আমার সাথে কি করেছেন?”
উনি থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন। ওনার কানের কাছে ফোনে কেউ হ্যালো হ্যালো করছে।
আমি স্থিরভাবে ওনার দিকেই তাকিয়ে আছি। কারন আমার উওর চাই। একটু দূরে যে কয়েকজন লোক ছিল তা আমি খেয়াল করিনি। শাওনের চোখেমুখ রাগে ভরে গেছে। শাওন ফোনটা কান থেকে নামিয়ে আমার দিকে কটকট চোখে তাকিয়ে আছে। আমিও প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকিয়ে আছি।
(চলবে…)
(চলবে……)