১৬ বছর বয়স পর্ব ১০

গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_১০ : #পিংকড্রেস
লেখিকা : #Lucky

“এত জলদি কিসের! শো ত মাত্র শুরু!” বলেই শাওন হেটে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার সামনের ছেলেটাও রেগে শাওনের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু পরে তার আর খবর পাওয়া গেল না। কারন এক ঘুষিতে ভয়ে সে কাচুমাচু হয়ে ফ্লোরে পরে আছে। আমার পাশের ছেলে গুলো রীতিমতো ভয়ে আমার থেকে কয়েক মিটার দূরে সরে গেল। আমি শাওনের দিকে ঘুরে তাকালাম না, ওভাবেই রইলাম।
শাওন পাশে থাকা টেবিল থেকে সাদা কাপড়টা টেনে পিছন থেকে আমার গায়ে দিয়ে দিল। তারপর পাশ কাটিয়ে বাকি ছেলেগুলোর সামনে গিয়ে দাড়ালো। তখন সুমনা এসে অডিটোরিয়ামের সব লাইট জ্বালিয়ে দিল। আমি হালকা ঘাড় ঘুরে সুমনার দিকে তাকালাম। সুমনা আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠে জোরে বলল, মিলা তুমি?
শাওন আমার নামটা শুনে অবাক হয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকালো। আমাকে এখানে দেখবে সেটা ও আশাই করেনি বুঝতে পারলাম। মুহুর্তের মধ্যে শাওনের মুখে রাগের আভাস চলে এলো। শাওন শক্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল, “তুমি এখানে কেন?”
আমি এদিকওদিক তাকিয়ে কিছুই বলার মত পেলাম না। শাওন এবার অনেক জোরে বলে উঠল, “what the hell are you doing here?!”
আমি ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম কারন উনি সত্যিই অনেক জোরে বললেন কথাটা। ভয় জোর করে সরিয়ে নাক মুখ কুচকে ওনার দিকে তাকালাম। কারন সবার সামনে উনি আমার উপর এমন করে চিল্লাচ্ছেন কেন! যেন আমি কি ইচ্ছা করে এসবের মধ্যে জড়িয়ে গেছি?!
আমিও ফুলে ফেপে বলে উঠলাম,”আমি আসলে সমস্যা কিন্তু আপনি আসলে সমস্যা, না তাইনা? আপনিও ত এগুলো করতেই এসেছেন!”
একটানা কিছু না চিন্তা করে বলে উঠলাম কথাগুলো। সুমনা আমাকে ধমক দিয়ে বলল,”মিলা!মুখ সামলে কথা বলো। কি উলটো পালটা বলছ!”
মাত্র বুঝতে পারলাম যে শাওনের রাগ আরো বাড়িয়ে দিলাম আমি এই কথাগুলোর দ্বারা। তাই শাওন দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো আর রাগে জ্বলতে জ্বলতে আমার দিকে আসতে আসতে বলল, “You need a proper lesson. কারন তোমাকে উচিত শিক্ষা না দেওয়া অব্দি হবেনা।” আমি ভয়ে গায়ে থাকা সাদা চাদর টা চেপে ধরলাম
সুমনা বলল, “শাওন কাম ডাউন। ও এইভাবে বলতে চায়নি হয়ত!”
“Stay out of it, Sumona.” বলেই আমার বাম হাতের বাহু ধরে টানতে টানতে আমাকে বের করে নিয়ে গেলেন।
সেই মুহুর্তে সিকিউরিটি গার্ড এসে অডিটোরিয়ামে ঢুকছিল। শাওনকে দেখে সরি স্যার বলে মাথ নিচু করে সরে দাড়ালো। উনি সবার মধ্যে দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন আর আমিও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।

(কিছুক্ষণ আগের ঘটনা…..)

শাওন ৪র্থ তলা থেকে সুমনার সাথে কথা বলতে বলতে নেমে আসল।
-কোথায় তুই?
-আমি কার পার্ক করলাম। মিটিং কি শুরু হয়ে গেছে নাকি?
-না। ক্লাইন্টদের কেউ আসেনি এখনো। আমি গাড়িতে ফাইল রেখে এসেছি তাই নিতে আসছি।
-আচ্ছা আয়।

“যাও ছেড়ে দিলাম” বলেই অই ছেলেটা মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিল। মেয়েটা ফ্লোরে পরে গেল। আমি নিচু হয়ে মেয়েটাকে তুলতে গেলাম তখন হঠাৎ ওই ছেলে আমার হাত ধরে আমাকে টানতে টানতে ডান দিকের রুম গুলোর দিকে নিয়ে যেতে লাগল।
“ছাড়ুন আমাকে।” বলে আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।

আমাকে ওভাবে নিয়ে যেতে দেখে ফ্লোরে পরে থাকা মেয়েটা কষ্ট করে উঠে দাড়াল। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে কারো সাহায্য খুঁজতে লাগল। জলদি করে নিচের দিকে নেমে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরে পরে গেল। সাথে সাথে হাপাতে হাপাতে জোরে জোরে বলে উঠল, “উপরের ফ্লোরে একটা মেয়েকে অনেক গুলো ছেলে জোর করে….। আপনারা কেউ প্লিজ মেয়েটাকে বাঁচান।” সুমনা আর শাওন সিড়ি দিয়ে উঠছিল। ওরা থেমে দাড়ালো। সুমনা মেয়েটার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, কোন মেয়ে? কি হয়েছে?
মেয়েটা বলল, “উ… উপরে…”
শাওন সুমনাকে বলল, তুই সিকিউরিটি গার্ড কে ইনফর্ম কর আমি দেখছি। বলেই শাওন সুমনার হাতে ফাইলটা ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত উপরে উঠে গেল।
সুমনা মেয়েটাকে বলল, It’s ok, It’s ok. শান্ত হও।

তারপরের ঘটনা ত সব জানা। শাওন নিজেও জানত না যে ও আমাকেই বাঁচাতে এসেছে।

(বর্তমান সময়….)

শাওন আমাকে টানতে টানতে বের করে এনে একটা রুমে ঢুকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিল। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে রেগে ওনার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই আমার চোখ গিয়ে পরল বিছানায় বসে থাকে এক কাপলদের উপর। কিন্তু শাওনের তীক্ষ্ণ রাগ মিশ্রিত দৃষ্টি আমার দিকে।
ওরা রুমের মধ্যে রোমান্স করছিল। আমাদের দুইজনকে হঠাৎ ঢুকতে দেখে হকচকিয়ে গেছে ওরা। ছেলেটা রেগে বলে উঠল, “হেই! এই রুম আমাদের বুক করা।”
শাওন আমার দিকেই দৃষ্টি রেখে তেলেবেগুনে ক্ষেপে ওই ছেলেকে বলল, “গেট আউট।”
ছেলেটা রেগে বলল,”মানে টা কি?”
শাওন ওই ছেলের দিকে তাকিয়ে শার্টের হাতা ভাজ করতে লাগল সেটা দেখে ওরা দুইজনই ভরকে গেল।
ভয়ে মেয়েটা প্রথমে বের হয়ে চলে গেল। তাই পিছন পিছন ছেলেটাও রাগে গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে গেল।
ওরা বের হবার সাথে সাথে শাওন দরজা আটকে দিল।
“দ…দরজা কেন আটকাচ্ছেন আপনি!” আমি ভীত গলায় বললাম।
শাওন রাগী চোখে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলতে লাগল, “কি যেন বললে একটু আগে! আমিও এগুলো করতে এসেছি or something. তুমি জানো ওরা কি করতে এসেছিল তোমার কাছে!”
আমি পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল। শাওন এক টান দিয়ে সাদা চাদর টা আমার গা থেকে ফেলে দিল।
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ওনার রাগ ত আমিই বাড়িয়ে দিয়েছি। এখন!
আমি মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে করুন স্বরে বললাম, “আ… আমি বুঝতে পারিনি যে….”
শাওন রেগে বলতে লাগল, “কি বুঝতে পারনি? তুমি কি গাধা? আমি ত এটা বুঝতে পারছি না যে why did YOU came here in the first place? আমি যদি আজ ওখানে ঠিক সময় না যেতাম তাহলে? তোমার ভাগ্য ভাল যে ওই মেয়েটা এসে নিচে ইনফর্ম করেছিল।”

আমি ফট করে ওনার মুখের দিকে তাকালাম। চোখের জল গড়িয়ে পরতে লাগল। সত্যিই, উনি ত ভুল কিছুই বলেন নি। উনি যদি না আসতেন আমার তাহলে কি হত! চিন্তা করতেই ত কেমন লাগছে। আবার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরতে লাগল। তাই আমি সাত পাঁচ চিন্তা না করেই শাওনকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাদতে লাগলাম।
শাওন অবাক হয়ে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। আমি অনেকক্ষন জোরে জোরে কাদলাম কিন্তু আর একটা কথাও বললাম না। কারন কথা বললে আমি ফালতু পরিস্থিতি তৈরি ছাড়া আর কিছুই করিনা। আমি কেদে ওনার শার্ট অনেকখনি ভিজিয়ে দিলাম। দশ পনেরো মিনিটের মাথায় যখন কান্নার বেগ কমে এলো তখন হুশ হলো যে আমি ওনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি। বলতে গেলে ওনার শার্ট পিছনের দিকে শক্ত করে হাতের মুঠোয় ধরে আছি।

তাই ফট করে ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। শাওন ভ্রুকুচকে নিজের শার্টের দিকে তাকাল। শার্টের উপর দিয়ে বন্যা চলে গেছে ওর। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলল। আমি হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে যেয়েও তাকালাম না। মনে মনে বললাম, মিলা তোর ওনাকেই জড়িয়ে ধরতে হলো! ভেবেই নিজের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে নিলাম। শাওন গিয়ে দরজা খুলে দিল। সুমনা দাঁড়িয়ে ছিল দরজার পাশেই। সুমনার হাতে একটা ড্রেস আর তোয়ালে।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, এগুলো কি!
সুমনা চোখ বাকা করে বলল, কি আবার! দেখছিস না? তুই মিটিং রুমে যা দেখ ওনরা এলো কিনা। আমি আসছি।”
শাওন চলে গেল। সুমনা দরজা ঠেলে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “all ok এখন?”
আমি বিছানায় মাথা নিচু করে বসে ছিলাম। সুমনার কথায় ওর দিকে তাকালাম।
– আহারে কেদে কি সুন্দর অবস্থা তোমার। কিউট কিউট।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
তাই সুমনা হাসতে হাসতে বলল, “তুমিও পারো শাওনকে ক্ষেপিয়ে দিতে। সিরিয়াসলি অনেক সাহস তোমার। আজ যে কথাগুলো বলেছ সেটার বদলে অন্য ছেলে হলে কি করত কে জানে।”
আমি সুমনার দিকে চমকে তাকালাম। তারপর একটু থেমে বললাম, অনেক ধন্যবাদ।
সুমনা বলল, ধন্যবাদ ওই মেয়েকে আর শাওনকে দেও।
শাওনও একটা মেয়ের কথা বলেছিল একটু আগে। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি আর এখনো বুঝতে পারলাম না। তাই প্রশ্ন করলাম, “কোন মেয়ে বুঝলাম না?!”
সুমনা বলল, আরে, যাকে নাকি তুমি বাঁচাতে গিয়ে নিজেই ফেসে গেছো!
এবার বিষয়টা বুঝাতে পারলাম। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, মেয়েটা কোথায়?
সুমনা বলল, চিন্তার কিছু নেই। মেয়েটা ঠিক আছে। এখন তুমি এগুলো নেও আর ফ্রেস হয়ে এসব পরে বের হও।
বলেই আমার হাতে একটা তোয়ালে সহ ড্রেস ধরিয়ে দিল সুমনা।
আমার প্রশ্ন করে উঠলাম, “কেন? আমি যেটা পরে আছি সেটায় কি সমস্যা?”
সুমনা চোখ ছোট ছোট করে বলল, কাধের কাছে শাড়ির সাথে সাথে ব্লাউজও ছিড়ে গেছে, দেখনি?
খেয়াল করে দেখলাম সত্যিই। সেফটি পিনটাও খুলে বেকে গেছে। ভাগ্যিস ঘাড়ে বিধে যায় নি।
-নেও জলদি করো। তোমাকে একা রেখে যেতে চাচ্ছিনা।
বলেই সুমনা বাথরুমে ঢুকতে ইশারা করল। আমি বাথরুমে ঢুকে পরলাম।
একটা জিন্সের সাথে ফ্রকের মত ড্রেসটা পরে প্রচন্ড দ্বিধার সাথে আস্তে আস্তে বের হলাম। জিন্সেটা কালো রঙ এর। জিন্স পরতে আমার কোনো সমস্যা নেই। ড্রেসটাও অনেক সুন্দর। হালকা পিংক। কিন্তু সমস্যা হলো ড্রেস টার হাতা ঘাড় থেকে অনেক নিচে। পুরো কাধ ফাকা ফাকা লাগছে। এই জামার সাথে ওড়নার প্রয়োজন নেই কারন সামনে ঝালর দেওয়া। আমার হাতা টেনে উঠানোর চেষ্টা দেখে সুমনা হেসে দিল। বলল, ওইটা ওমন ই। টানলেও উপরে উঠবে না।

আমি বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম। সুমনা বলল, এর চেয়ে ভাল ধার করে পাওয়া যায় নি। এটাই ভাল। শাড়িটা একটা শপিং ব্যাগে করে নিয়ে যেও। থামো শপিং ব্যাগ জোগাড় করতে হবে।
আমি কিছু বললাম না।
“তবে তোমার চুল গুলো অনেক সুন্দর। নিচের দিকে হালকা কোকড়া। সাধারণত গ্রামের মেয়েদের চুল একদমই স্ট্রেইট হয় আর অনেক বড় চুল হয়।” বলল সুমনা।
আমার চুল আমার নিজেরও অনেক পছন্দ। আমি অত বড় চুল রাখিনা কোমড়ের একটু উপর অব্দিই ঠিক আছে। আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, আপনার টাও ত সুন্দর।
“ওনাদের লেট হবে তাই ডিনার…” বলতে বলতে কালো কোট হাতে শাওন রুমে ঢুকে আমাকে দেখে থমকে গেল।
আমারো ওনাকে দেখে মুখের হাসি উবে গেল ক্ষনিকের মধ্যেই।
“সুন্দর লাগছে না?” সুমনা শাওনকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল।
শাওন সুমনার দিকে তাকিয়ে বলল, “ডিনার করে নিলে ভাল। ওনাদের লেট হবে আরো।”
সুমনা বলল, মেবি আজ মিটিং হবেই না। শোন, তুই এখানে থাম আমি একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আসি।
বলেই সুমনা বের হয়ে চলে গেল। সুমনা ইচ্ছা করেই এই পরিস্থিতিতে আমাকে রেখে গেল। শাওন আমার দিকে কপাল কুচকে গম্ভীর মুখে তাকাল।
আমি ওনার চোখের দিকে দেখে চোখ নামিয়ে নিলাম। হাত দিয়ে এক কাধের কাছের হাতাটা টানার চেষ্টা করে সরু গলায় বললাম, “এ… এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”
শাওন কিছুই বলল না তাই আমি লজ্জায় ওনার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আমি এখনো কাধের কাছে হাতা টানাটানিতে ব্যস্ত।
শাওন আমার পিছনে এসে ওর হাতের কোটটা খুলে আমার মাথায় দিয়ে দিল। খোমটার মত করে। আমি চোখ বড়সড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন পেছন থেকেই বলল, “সেসব ড্রেস পরো কেনো যেগুলোতে তুমি নিজেই কমফোর্টেবল না!”

শাওনের কল বেজে উঠল। শাওন ফোন কানে ধরে বলল, “হ্যা বল।”
শাওনের কথার ফাকে আমি কোটটা নিজের গায়ে এমনি ঝুলিয়ে নিলাম। যাক এখন শান্তি লাগছে। আমি ঘুরে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওনও আড়চোখে আমার দিকে তাকালো। তারপর ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল।
আমি মনে মনে বললাম, “যাক যতটা খারাপ ওনাকে ভেবেছিলাম ততটা খারাপ উনি নন।”

সবাই ডিনারে বসলাম। তারমানে উনি ৪র্থ তলায় ছিলেন মিটিং এর জন্য! আর আমি কিনা উল্টো পাল্টা ভাবছিলাম। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ফোনে বাম হাত দিয়ে কি যেন কাজ করছে আর ডান হাত দিয়ে চামচে করে খাবার মুখে দিচ্ছে। সুমনা শাওনের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর শাওন শুধু হু হ্যা বলছে।
আমি শুধু খাবার ই নাড়িয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ সুমনা বলল, কি হলো ভাল না খাবার?
আমি চমকে উঠে তাকালাম তারপর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম যে খাবার ভাল।

সুমনা ঠিক ই বলেছিল৷ আজ সত্যিই মিটিং টা হল না। তাই ডিনারের পরেই আমরা বেরিয়ে গেলাম। সুমনা আমাদের আগে বেরিয়ে গেল। শাওন গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আমি উঠব কিনা চিন্তায় পরে গেলাম। আমার ৫০০ টা টাকা কোথায় গেছে কে জানে! উনি গাড়ির ভিতর থেকেই আমার দিকে গম্ভীরভাবে তাকালেন। আমি এগিয়ে এসে গাড়ির দরজায় হাত দিলাম। কিন্তু টেনে খুলতে পারলাম না। শাওন একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সিট বেল্ট খুলে ভিতর থেকে দরজাটা হালকা খুলে দিল। তারপর আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। কিন্তু এখন হলো আরেক ঘটনা। দরজা আটকে পারছিনা! আরকি জোরে টেনে বন্ধ করলে বন্ধ হয় আমি জানতাম না। উনি আমার অনেক কাছে এগিয়ে এসে নিজেই দরজা লাগিয়ে দিলেন। উনি এত কাছে আসায় আমি সীটের সাথে চিপকে রইলাম।
দরজা আটকে শাওন নিজের জায়গায় সরে গেল। আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। আড় চোখে শাওনের দিকে তাকাতেই হঠাৎ খেয়াল হল যে শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। আমি মনে মনে বললাম, “এখন আবার কি হলো?”
শাওন আবার কাছে আসতেই আমি ভয়ে ওনার কোটটা যেটা আমার গায়ে ছিল সেটা চেপে ধরে কাচুমাচু হয়ে গেলাম।
শাওন আমার সীট বেল্ট পরিয়ে দিল। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিল।
এসির কারনে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। কোটটার জন্য অত ঠান্ডা লাগছে না অবশ্য। বাহিরের দিকে তাকালাম। ওয়াও! রাতে শহরটা এত সুন্দর লাগে! ইস গাড়ির কাচটা নামানো থাকলে আরো মজা হত। হাত দিয়ে বাতাস ধরা যেত। আড় চোখে শাওনের দিকে তাকালাম। সে গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালাচ্ছে। পুরো মনোযোগ সামনের দিকে। থাক বাবা উনি থাকুক ওনার মত! কিছু বললেই যদি আবার ক্ষেপে যায়!
আমি আবার বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হলাম। সত্যিই বিল্ডিং গুলো অনেক সুন্দর লাগছে। প্রতিটায় আলো জ্বলছে।
অনেকটা পথ এসে জ্যামে পরলাম। জানিনা কত সময় এখন বসে থাকতে হবে! এদিকে ঘুমও পাচ্ছে। সীটে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝলাম ও না।

শাওন গাড়ি পার্ক করে সীট বেল্ট খুলল। তারপর আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “hey, get up.”
আমি গভীর ঘুমে অচেতন। শাওন আমাকে কাধ ঝাকিয়ে বলল, “I will leave you here for sure.” কিন্তু আমি একটু নড়েচড়ে ঘুমাতে লাগলাম। শাওন রেগে গিয়ে আমার হাত ধরে হেচকা টান দিতেই আমি উঠে পরলাম। চোখ ডলতে ডলতে বললাম, আহ লাগছে।
চোখে এখনো ঘুম ঘুম ভাব। আমি কপাল কুচকে বললাম, কি চান?
শাওন কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে এক টানে নামিয়ে দিল। আমি চমকে উঠলাম। হাত দুটোই ব্যথা বানিয়ে দিল এইটুকু সময়েই। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তাই ঝগড়াও করতে ইচ্ছে করছে না। আসলে উনি গরিলা আছেন, গরিলাই থাকিবেন আর ছিলেনও। হুহ। আমি আমার কথা ফেরত নিলাম, উনি মোটেও ভাল না।

ঘরে ঢুকে ঢুলতে ঢুলতে সোজা সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলাম। শাওনের কোটটা আমার সোফার পাশে মেঝেতে পরে রইল। শাওন নিজের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে ডাইনিং এ আসল পানি খাওয়ার জন্য। তখন চোখ পরল পরে থাকা কোটের দিকে। গ্লাস রেখে কোট টার দিকে এগিয়ে এলো। শাওন কোট টা তুলে হাতে নিচ্ছিল তখন আমি ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরালাম। শাওন আমার দিকে তাকালো। নড়াচড়ার কারনে আমার ঘাড় থেকে হাতাটা আরো নিচে সরে গেল। শাওন উঠে দাড়াতে দাড়াতে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কেয়ারলেস।” তারপর হাতের কোটটা আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়ে রুমে চলে গেল।

অনেক রাতে বাজে স্বপ্ন দেখে জোড়ে চিৎকার করে উঠে বসলাম। বাজে স্বপ্ন বলতে ওই ছেলেগুলো আজ যা করেছে সেইসবই আবার স্বপ্নে দেখলাম। হাত পা রীতিমতো ভয়ে কাপছে। চারিদিকে পুরো অন্ধকার। প্রতিদিন সামনের আগাছার পেইনটিং টায় একটা লাইট জ্বলত যেটা আজ বন্ধ। তাই আরোই অন্ধকার লাগছে। আমি হাপাতে হাপাতে দুই হাতের মুঠোয় নিজের ড্রেসটা চেপে ধরে উঠে দাড়ালাম।

শাওন দরজা খুলে বের হলো। হাতে ফোনের লাইটটা জ্বালিয়ে দরজার কাছে দাড়িয়ে বিরক্তির সাথে বলল, “কি সমস্যা কি তোমার?”
আমার জন্য ঘুমের ১২ টা বেজে গেছে ওনার। কিন্তু আমি কোনো উওর দিলাম না। ভয়ে কাচুমাচু নিচু আছি সাথে কাপছি আর হাপাচ্ছি। শাওন ভ্রুকুচকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে হেটে এসে আমার সামনে এসে দাড়ানোর সাথে সাথে আমি ওনাকে আবার ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম। আচমকা এমন করায় শাওন নিজেও অবাক হল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল, “তোমার মাথা গেছে? কি শুরু করেছ?”
আমাকে ওভাবে কাপতে দেখে আর কিছু বলল না শাওন।
আমি আমি কাপা গলায় বলে উঠলাম, “আ…আমি আপনার সাথে ঘুমাব।”

(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here