১৬ বছর বয়স পর্ব ১৩+১৪

গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_১৩ : #কেয়ার
লেখিকা : #Lucky

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রেগে জোরেই বলে উঠলাম,”কাল রাতে আপনি আমার সাথে কি করেছেন?”
উনি থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন।
আমি আরো বললাম, “আপনি সত্যিই অনেক খারাপ৷ আপনি অসভ্য আর অমানুষ।”
একটু থেমে বললাম,”কি হলো এখন চুপ করে আছেন কেন?”

ওনার কানের কাছে ফোনে কেউ হ্যালো হ্যালো করছে।
আমি চোখেমুখে রাগ নিয়ে ওনার দিকেই তাকিয়ে আছি। সামনেই লিফট। আর একটু দূরে যে কয়েকজন লোক ছিল যারা চমকে এদিকে তাকালো। তবে আমার জোরে কথা বলার কারনে অনেকে অফিসের ভিতর থেকে এদিকে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল। শাওনের চোখেমুখ রাগে ভরে গেছে। শাওন ফোনটা কান থেকে নামিয়ে আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে।

দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন ফিসফিসিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। শাওন আশেপাশে সবার দিকে রেগে তাকাতেই সবাই যে যার জায়গায় কেটে পরল।
শাওন আমার কাছে এসে আমার বাম হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
“আহ কি করছেন আপনি! লাগছে আমার।”
শাওন আমাকে টানতে টানতে লিফটের মধ্যে নিয়ে দাড় করালো। আমি লিফটে বসেও হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কিন্তু শাওন আমার হাত শক্ত করে ধরে রাগী চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।
“আমি কিন্তু আবার কামড়ে দিব।” আমি রেগে কাদতে কাদতে বলে উঠলাম।
একটু পরেই লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে থামলো। সাথে সাথে শাওন আমাকে হেচকা টান দিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে গেল।
“কি করছেন আপনি! লাগছে আমার। ছাড়ুন আমার হাত।”
শাওন গাড়ির দরজা খুলে জোর করে আমাকে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা আটকে দিলো। আমি গাড়ি দরজা খুলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম।
শাওন গাড়িতে উঠে আমার কাছে এসে সীট বেল্ট জোর করে বেধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আমি সাথে সাথে সীটবেল্ট খুলে ফেললাম। শাওন রেগে গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। তারপর আবার সীটবেল্ট জোর করে বেধে দিয়ে আমার ডান হাতের কব্জি চেপে ধরল।
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,”ছাড়ুন আমাকে।”
শাওন আমার হাত ছিটকে ছেড়ে দিয়ে অনেক জোরে গাড়ি চালাতে লাগল। রীতিমতো মাথা ঘুরছে। এদিকে হাতগুলোও ব্যথা করছে। অনেকটা পথ এসে শাওন কষে গাড়ি থামিয়ে দিল। আমি অনেকটা সামনে ঝুকে পরলাম। এই জায়গায় আশেপাশে কোনো মানুষ জন নেই। শাওন নেমে আমার হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামালো। তারপর গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে টেনে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে! ছাড়ুন আমাকে।”
শাওন ফট করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আমি তাল সামলাতে না পেরে পিছন দিকে একটা কাটাওয়ালা গাছে দিয়ে পরলাম। পিঠে সাথে সাথে কাটা বিধে গেল। পিঠে বলতে ঘাড় সোজা একটু নিচের দিকে। আশে পাশে আবছা চাঁদের আলো। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল।
শাওন আমার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু উনি আমার বাম হাতের বাহু ধরে টেনে আমাকে ওনার সামনে নিয়ে এলেন। ওনার কাজের দ্বারাই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন উনি।
আমি কাদতে কাদতে বললাম,”আমাকে এখানে কেন এনেছেন?”
শাওন আমার আমার কাছে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই আমি ভয়ে পিছাতে গিয়ে পরে গেলাম। উনি এক হাটু ভাজ করে আমার দিকে ঝুকলেন।

“তোমার অনেক বেশিই সাহস, তাইনা! You even dared to insulte me. কে অমানুষ?”

বুঝাই যাচ্ছে যে উনি প্রচন্ড রেগে গেছেন। আমি অনেক ভয়ে ভয়ে বললাম,”কি ক..করতে চান আ… আপনি?”
“সেটাই করতে চাই যেটা কেউ অমানুষ হলে করে।”

মানে! উনি কি করবেন আমার সাথে!
শাওন আমার আরো কাছে আসতেই আমি পিছনে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। শাওন ওর হাত দিয়ে একটানে আমার ব্লাউজের পিছনের ফিতাটা ছিড়ে দিল। সাথে কয়েকটা চুলেও টান লাগল। আমি সাথে সাথে কেপে উঠলাম আর ছলছল করা চোখে তাকিয়ে রইলাম।
“আরো নমুনা দেখতে চাচ্ছ?” শাওন দাতে দাত চেপে বলে উঠল।
আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে। শাওন উঠে দাড়াল। আর হাতে থাকা ফিতাটা আমার পাশে ফেলে দিল। তারপর হেটে চলে গেল। আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর চোখ মুছলাম। কিন্তু চোখ মুছেও বা কি হবে চোখ দিয়ে পানি পরছে ত পরছেই।

শাওন গাড়িতে বসে সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। বিগড়ে যাওয়া মেজাজ টা ঠান্ডা করার চেষ্টা করতে লাগল। কতসময় ওভাবে বসে থাকার পর মাথা তুলল। তখন নিজের ডান হাতে কিছু লেগে আছে মনে হতেই নিজের হাতের দিকে তাকলো।
হাতে রক্ত লেগে। কিন্তু ওর নিজের না। শাওন বিরক্তির সাথে গাড়ি থেকে নামল। তারপর জলদি করে সেখানে এলো যেখানে আমাকে ফেলে গেছিল। কিন্তু সেখানে আমি নেই।
“Shit” বলে শাওন আশেপাশে খুঁজতে লাগল। কিন্তু আমি আশেপাশে কোথাও নেই। চারিপাশের আবছা অন্ধকারটা আরো বেড়েছে। হঠাৎ শাওনের মনে হলো গাড়ির মধ্যে থেকে ফোন টা আনলে টর্চ জ্বালানো যেত। শাওন তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলতে যাবে এমন সময় থমকে দাড়ালো। তারপর গাড়ির পিছনের দিকে আসলো। আমি গাড়ির পিছনে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে দুই পায়ের মধ্যে মাথা গুজে মাটিতে বসে ছিলাম।

শাওন এসে আমার সামনে দাড়িয়ে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”ওঠো।”
আমি ওভাবেই বসে রইলাম। তাই শাওন আমার এক হাতের বাহু ধরে টেনে তুলল।

আমি ব্যথায় বলে উঠলাম,”লাগছে আমার।”
এতক্ষনে চোখের জল সব শুকিয়ে গেছে আমার। কিন্তু চোখেমুখে কান্নার আভাস রয়েই গেছে।অন্ধকারের মধ্যে এই চাঁদের আলোতে কিছুই এখন আর আবছা লাগছে না। শাওন গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। শাওন গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে নিজের ফোন নিয়ে আসল। তারপর বলল,”পিছনে ঘুরো।”
আমি মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়েই রইলাম। তাই শাওন আমার এক হাত ধরে আমাকে পিছনে ঘুরালো। ফোনের লাইটটা জ্বালিয়ে বাম হাতে ফোনটা ধরল। তারপর এগিয়ে এসে আমার ঘাড়ের কাছ থেকে চুল গুলো সরাতে লাগল। আমি চমকে উঠে ওনার দিকে ঘুরলাম আর বললাম,”কি করছেন আপনি!”
“চুপচাপ দাড়াও।” চোখ গরম দিয়ে শাওন বলল।
তারপর এক টানে আবার আমাকে উল্টো ঘুরিয়ে দিল আর আমার ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিল। আমি শিউরে উঠলাম। শাওন আমার দিকে ওর ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা ধরো।
আমার রাগ মোটেও কমেনি তাই ওনার কথা শুনেও না শুনার ভান করলাম।
শাওন বুঝতে পেরে বলল,”সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে ঘি এর ডিব্বাই উল্টা করতে জানি আমি। সো ভালয় ভালয় আমার কথা শোনো।”
বলেই আমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে আমার শাড়ির আঁচল ধরলেন। আমি সাথে সাথে হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে বলে উঠলাম,”কি করছেন আপনি!” কথা শেষ হবার আগেই এক টানে আমার শাড়ির আঁচলের প্রান্ত থেকে খানিকটা ছিড়ে নিয়ে পরিষ্কার অংশটুকু বেছে নিয়ে, সেটা থেকে কিছু অংশ ছিড়ে বাকিটা ফেলে দিল।
“চুপচাপ সামনে ঘুরে থাকো” বলেই শাওন সেটা গোল করে আমার পিঠে চেপে ধরলেন। আমি ব্যথা পেলেও কিছু বলতে পারলাম না। চোখ বন্ধ করে সহ্য করতে লাগলাম।
শাওন মুখে বিরক্তির শব্দ করে বলল, ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে বলেছি? এদিকে মারো।
যেহেতু আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি তাই শাওন আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজেই ধরল। কিছুসময় কাপড়টা চেপে ধরার পর কাপড়টা ফেলে দিল। তারপর গাড়ি থেকে একটা এন্টিসেপটিক ক্রিম নিয়ে আসলেন। সেটা শাওন নিজের আঙুলে লাগিয়ে নিয়ে আমার পিঠে ছোঁয়াতেই আমি আবার শিউরে উঠলাম। শাওন নিজেও বুঝতে পেরে জলদি লাগিয়ে হাত সরিয়ে নিলো।

তারপর গাড়ির ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,”যদি আজ রাতে এখানে থাকতে ইচ্ছে না হয় তাহলে চল।” আমি ঘুড়ে তাকালাম। ততসময়ে উনি গাড়ির ভিতরে ঢুকে গেছেন। আবার ঠান্ডা লাগছে। জ্বর কি আবার আসবে নাকি।
শাওন দুইবার হর্ন বাজালো। আমি এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে ঢুকলাম। ব্যথার জন্য হেলান দিয়ে বসা যাচ্ছে না তাই পাশের জালানার দিকে একটু কাত হয়ে রইলাম। আমি ওনাকে একদমই বুঝতে পারিনা। প্রথমে আমাকে ব্যথা দেন তারপর আবার নিজেই এসে ঠিক করে দেন।
গা ত আবার কাপছে। গাড়ির এসির জন্য আরোই শীত করছে। আমি এক হাত দিয়ে অন্য হাতের বাহু ধরলাম। শাওন আমাকে এভাবে কাচুমাচু হয়ে বসে থাকতে দেখে এসি অফ করে দিল আর নিজের কোটটা পিছনের সীট থেকে নিয়ে আমার কোলে ফেলল। আমি একবার শাওনের দিকে তাকিয়ে তারপর আবার জালানা দিয়ে বাহিরে তাকালাম। লাগবে না আমার ওনার কোট। গাড়ি পার্ক করার পর আমরা নেমে পরলাম। শাওন আমার আগে আগেই চলে যেতে লাগল। আমি ওনার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম। রিসিপশনের কাছে আসতেই একটা মেয়ে শাওনকে গুড ইভিনিং বলল। তারপর আমার দিকে তাকাতেই মেয়েটা বলে উঠল, “ম্যাম এখন কেমন আছেন!”
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
“কাল ত অনেক অসুস্থ ছিলেন।”
শাওন গিয়ে লিফটে উঠে পরল। আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে ভ্রুকুচকে বললাম,”আপনি কিভাবে জানেন?”
“আপনার ড্রেস চেঞ্জের জন্য গিয়েছিলাম তখন আপনার অনেক জ্বর ছিল। কিন্তু তাও আপনি আমাকে বললেন একাই পারব। আপনার মনে নেই?”
আমি হা হয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
“অনেক জ্বর ছিল তাই হয়তো” মেয়েটা হাসিমুখে বলল।
আমি কপাল কুচকে চিন্তা করতে লাগলাম, “আমি তাহলে ভুল জানি? কিন্তু আমার যে অংশটুকু মনে পরছে তাতে ত উনি… নাকি ভুল!
আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে লিফটে উঠলাম।
বাসার দরজা খোলা পেয়ে আমি ঢুকলাম। এখন একটু গোসল দিতে পারলে সবথেকে ভাল হত। শাওনের রুমে এসে ঢুকে পরলাম। শাওন নেই। বাথরুমে? হতে পারে। আমি ছাদে গিয়ে শাড়িসহ সব কিছু ল্যাগেজে ভরে নিয়ে আসলাম। একটা শাড়ি বের করে রাখলাম। তারপর সোফার কোনায় মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে কাত হয়ে রইলাম। চোখে ঘুম চলে আসল। কিছুক্ষন পরেই শাওন আমাকে বাম হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিতে দিতে বলল,”ফ্রেস হয়ে খাবার খাও। ঔষধ আছে।” তারপর শাওন কিচেনে চলে গেল। আমি ঘুম ঘুম ঘোরে শাড়ি ব্লাউজ আর তোয়ালে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। শাওন ফট করে রুমে এসে আমার হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে নিল।
আমি কপাল কুচকে বললাম,”কি করছেন।”
শাওন বলল,”গোসল না। শুধু ফ্রেস হতে বলেছি।”
আমি বললাম,”সেটা আমার ইচ্ছা।”
শাওন রেগে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে গেলাম।
“Shut up. আমি যা বলেছি তুমি সেটাই করবে ।” বলেই শাওন বাথরুমে ঢুকতে ইশারা করল।
আমি রাগে কটমট করতে করতে ফ্রেস হয়ে হতে গেলাম। বের হয়ে বিছানার উপরে তোয়ালে টা পেলাম।

হাতমুখ মুছে ডাইনিং এ এসে বসলাম। দুইটা প্লেটে খাবার রেডি করা। শাওন বসে পরল। আমিও ধীরে ধীরে গিয়ে শাওনের সোজা অপর পাশে বসলাম। এই দ্বিতীয় বার আমরা একসাথে খেতে বসেছি। পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা। কেমন কেমন যেন লাগছে।
এভাবেই খাওয়া শুরু করলাম। পুরো সময়টায় উনি আমার দিকে একবারো তাকালেন না। উনি ওনার ফোন নিয়ে ব্যস্ত। যদিও আমি কয়েকবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিয়েছিলাম।
উনি খেয়ে আমার আগে আগেই উঠে গেলেন। আমি খানিক পরেই খাওয়া শেষ করে সোফাতে এসে বসলাম। শাওন এসে এক গ্লাস পানি আর ওষুধ এগিয়ে দিল। আমি ওনার মুখের দিকে তাকালাম। শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে ওগুলো নেওয়ার জন্য ইশারা করল। আমি ওনার হাত থেকে নিয়ে ঔষধ টা পানি দিয়ে গিলে ফেললাম। শাওন তখন রুমে গিয়ে একটা সেভলন ক্রিম সহ কিছু তুলা ও একটা মাঝারি সাইজের ব্যান্ডেজ এনে আমার পাশে ফেলল আর গ্লাসটা আমার হাত থেকে নিয়ে কিচেনে চলে গেল।

আমি পিঠ থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম যে কোথায় কেটেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিলে হয়তো ভাল হত। শাওন কিচেনে ছিল। তাই আমি সব নিয়ে শাওনের রুমে চলে এলাম। ব্লাউজের ফিতা খুলে আয়নায় দেখে নিয়ে সেভলন ক্রিম ত লাগালাম। কিন্তু ব্যান্ডেজ লাগাবো কিভাবে!
শাওন রুমে এসে ঢুকলো। আমি ব্যান্ডেজ এর উপরের স্টিকার টা সরাতে সরাতে শাওনের দিকে তাকালাম। তারপর আবার সামনের দিকে তাকিয়ে থমকে দাড়িয়ে মনে মনে বললাম, উনি এখনি চলে এসেছেন কেনো!
উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। আমি টের পেয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে রইলাম। শাওন এসে পিছনে দাড়িয়ে আমার হাত থেকে ব্যান্ডেজ টা নিল। আমি মাথা তুলে আয়নার দিকে তাকালাম। শাওন আমার পিঠে ব্যান্ডেজ টা লাগিয়ে দিল। তারপর সরে নিজের ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।
আমি জলদি করে ব্লাউজের ফিতা বেধে নিয়ে নিজের সোফায় চলে গেলাম। আর চিন্তা করতে লাগলাম তাহলে গতরাতে আসলে হয়েছিল টা কি! ওনাকে জিজ্ঞেস করব? কিন্তু প্রশ্ন করলেই ত মানে মানে করে! তখনি ত যায় মেজাজ বিগড়ে। থাক আর কিছু জানার দরকার নেই। ওই রিসিপশনের মেয়ে মনে হয় সত্যিই বলেছে। কিন্তু সেদিন রাতে উনি আমাকে সরি কেন বলেছিলেন! নাকি এটাও আমার মনের ভুল! সোফার কুশনে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম।

ঘুম আসছে না। রাত ত অনেক হলো। টিভি দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই এত বড় টিভিটা চালায় কি করে! আশেপাশে রিমোট ও ত নেই। টিভির কাছে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। পিছনে কয়েকটা বাটন আছে। সবচেয়ে নিচের টা চাপ দিতেই টিভি অন হয়ে গেল। যাক এত দিন পর আজ টিভি দেখতে বসলাম। খবরের চ্যানেল দেওয়া। এখন রিমোট কই পাব। আবার টিভির পিছনের বাটন গুলো চেপে চ্যানেল বদলাতে লাগলাম। খুজে খুজে কার্টুন চ্যানেল বের করলাম। অনেক দিন পর ওগি আর ককরোচদের দেখা মিলল। অনেক মজা লাগছে। আমি দুই পায়ের হাটু দুই হাত দিয়ে ধরে তার উপর থুতনি রেখে হাসিমুখে দেখতে লাগলাম। মাত্র ১০ মিনিটও হতে না হতেই শাওন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,”বন্ধ করো”

আমি ভ্রুকুচকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললাম, “আপনার কি সমস্যা! আপনাকে দেখতে বলেছি?”
শাওন রেগে আমার দিকে তাকিয়ে টিভির কাছে গিয়ে টিভি অফ করে দিল।
আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম।
“তোমার জন্য কাল থেকে আমার মাথা হ্যাং হয়ে আছে। তাই আমাকে ইরিটেড করো না।” আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল শাওন।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,”আমার এখন ঘুম আসছে না। আপনি প্লিজ যান না।”
শাওন রেগে দুইপা এগুতেই আমি ভয়ে বলে উঠলাম,”না না, ঘুম এসে গেছে। কাছে আসবেন না। এমনিই একটা ব্লাউজ ছিড়ে দিয়েছেন। এবার না জানি আবার কি করে দিবেন।” বলেই আমি কাচুমাচু হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন আমার দিকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে চলে যেতে লাগল। তখনি আমি বলে উঠলাম,”আপনি কাল রাতে….”
শাওন থেমে দাঁড়ালো।
“কাল রাতে আমাকে সরি বলেছিলেন?”
শাওন ঘুরে আমার দিকে তাকালো। আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি চুপচাপ আছে দেখে বিরক্ত লাগছে। বুঝিনা কি সমস্যা!
আমি চোখ নামিয়ে বললাম,”এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন!”
শাওন এবার আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।আমি চোখ বড়সড় করে বললাম,”এ..এগুচ্ছেন কেন?”
শাওন আমার কাছে আসতে আসতে বলল,”মনে করানোর জন্য।”
আমি সোফার পিছন দিকে হালকা সরে যেতে যেতে বললাম,”মা.. মানে? আ..আমার সব মনে পরে গেছে। আপনি এখন যেতে পারেন।”
কিন্তু শাওন এক পায়ের হাটু ভাজ করে আমার ডান পাশে রাখল আর ঝুকে আমার কাছে এসে আমার বাম দিকে ওর ডান হাত রাখল।
আমার ত ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি নিচু হয়ে প্রায় আধশোয়া অবস্থায় আছি এখন। শাওন অন্য হাত আমার চুলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করিয়ে আমার ঘাড় স্পর্শ করতেই আমি এক হাত দিয়ে ওনার বাহুর কাছের শার্ট চেপে ধরে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,”কি করছেন আপনি!”

“সব মনে থেকে থাকলে অফিসে সিন ক্রিয়েট করলা কেন?!” শাওন বলল।

আমি ওনার চোখের দিকে তাকালাম। ভয়ে ভয়ে বললাম,”আ…আমি ত…।”

“তুমি ত?” শাওন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল।
আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম,”আ…মি মনে করেছিলাম…”
শাওন আরো কাছে আসতেই আমি চোখ বন্ধ করে শাওনের বাহু খামছে ধরে এক শ্বাসে বলে ফেললাম,”কারন আমি মনে করেছিলাম আপনি আমার শাড়ি খুলেছেন।”
গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_১৪ : #50_Shades_of_grey
লেখিকা : #Lucky

শাওন আরো কাছে আসতেই আমি চোখ বন্ধ করে শাওনের বাহু খামছে ধরে এক শ্বাসে বলে ফেললাম,”কারন আমি মনে করেছিলাম আপনি আমার শাড়ি খুলেছেন।”
“What?” বলেই শাওন আমার ঘাড়ের নিচ থেকে হাত টা সরিয়ে নিল। আর আমি সাথে সাথে সোফার হেন্ডেলে বারি খেলাম।
শাওন উঠে দাড়িয়ে আমার এক হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল। আমি এক হাত দিয়ে মাথা ডলতে ডলতে বললাম,”কি করলেন এটা আপনি! আপনার কারনে টাক গুতো খেতে খেতে জীবন টা শেষ হয়ে গেল আমার!”
কথা গুলো বলতে বলতে শাওনের দিকে তাকালাম।
“তাও তুমি গাধা আছ আর গাধাই থাকবে।” শাওন বলে উঠল।
আমি মুখ হা করে বিড়বিড় করে বললাম,”গরিলাটা নিজেকে অনেক চালাক মনে করে।”
“কি?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকালো।
আমি বললাম,”যাই হোক। আপনি সেরকমটা কিছুই করেন নি যেমনটা আমি ভেবেছিলাম তাই আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম।”
শাওন এক পা এগিয়ে আসতেই আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বললাম,”আবার কি!”
শাওন দাতে দাত চেপে বলল,”কে ক্ষমা চেয়েছে তোমার কাছে?”
“আপনি না ‘সরি’ বলেছিলেন সকালে?!”
শাওন কিছু বলল না।
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,”এখন সত্যিই ঘুম এসেছে। আপনি আর কিছু বলবেন?”
শাওন গোমড়া মুখ করে তাকিয়ে রইল। তাই আমি শুয়ে পরতে পরতে বললাম,”তাহলে যাবার আগে কিচেনের লাইটটা অফ করে দিয়েন।”
শাওন লাইট অফ না করেই নিজের রুমে চলে গেল। তাই আমি নিজেই কষ্ট করে গিয়ে লাইটটা অফ করে এসে শুয়ে পরলাম।

খুব সকালে শাওন আমাকে এক হেচকা টান দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে বসিয়ে দিল। আমি বিরক্তির সাথে চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই বলতে লাগলাম,”এত রাতে আবার কি জন্য টানাটানি করছেন!”
“রাত না, সকাল এখন। আমি থাকতে থাকতে খাবার খেয়ে ঔষধ খাও। আমি কোনো রকম বাড়তি ঝামেলা চাচ্ছিনা তোমার জন্য।”
আমি চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই আছি এখনো। কোনো কথা কানে লাগছে না আমার।
শাওন রেগে আমার এক বাহু চেপে ধরতেই আমি চোখ খুলে বললাম,”উফফ…নেন সকাল সকাল ঘুমের সাথে সাথে আমার হাতটাও খেয়ে ফেলুন।”
শাওনের দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম। তারপর বললাম, “ছাড়ুন, উঠছি।”

ফ্রেস হয়ে একবারে গোসল সেরে টেবিলে এসে বসলাম। আবার সেই বিশ্ব বিখ্যাত সবজি। অর্থাৎ আবার কুমড়ো ভাজি। বাহ! আমি ত জানতাম যে কুমড়ো খেলে মানুষের চোখের জ্যোতি বাড়ে, এনার ত এত জ্যোতি বেড়েছে যে উনি কুমড়ো ছাড়া মনে হয় আর কোনো সবজিই চোখে দেখেন না!
একটা নিঃশ্বাস ফেলে খেতে আরম্ভ করলাম। শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। কারন আমি পানি দিয়ে গিলে গিলে খাচ্ছি। এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই কারন আমি যে গিলে হলেও খাচ্ছি এটাই ওনার জন্য সৌভাগ্য।
শেষ করে ঔষধ টাও পানি দিয়ে গিলে নিলাম। ওই ছাতার ডাক্তারটা মনে হয় বলেছিল ঔষধ খাওয়াতেই থাকবেন যতদিন না মেয়েটা গলায় ঔষধ আটকে মরে।
শাওন খাওয়া শেষ করে নিজের কোট পরছিল এমন সময় সুমনা ফোন দিল।
-হ্যালো বল।
-শোন আজও মিলাকে নিয়ে আসিস ত।
শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,ওকে কিসের জন্য আনব?
আমি বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম।
“আনতে বলেছি তাই! অনেক দরকার আছে। তাই যা বলছি কর।”
শাওন ফোন কান থেকে নামিয়ে আমার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলল,”চলো আমার সাথে।”

অফিসে পৌছাতেই শাওনের কেবিনে সুমনাকে পাওয়া গেল। আমাকে দেখেই হাসিমুখে বলল,”যাক নিয়ে এসেছে তাহলে। আজ আমার তেমন কোনো কাজ নেই তাই আজ আমরা গল্প করব।” আমি এক গাল হেসে সুমনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন নিজের কোটটা ওর চেয়ারের পিছনে রেখে চেয়ারে বসতে বসতে বলল,”যত যা করার এই কেবিনের বাহিরে গিয়ে কর।”
সুমনা শাওনের দিকে তাকিয়ে হালকা মুখ বাকিয়ে বলল,”হ্যা যাচ্ছি। তোর সামনে গল্প করলে গল্প আর গল্প থাকেনা। সেটা মিশরের মমি হয়ে যায়। চলো মিলা।”

আমরা বেরিয়ে এলাম। প্রথমেই শাওনের এই ফ্লোরের সবার সাথে সুমনা আমার পরিচয় করিয়ে দিল। তার মধ্যে অনেক জন টাসকি খেল যে শাওন বিয়ে করেছে।
সবার কাজ ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কত সুন্দর করে এরা ঘর বানিয়ে ফেলে। সুমনা এই ফ্লোরের নিচে কাজ করে। ওর ফ্লোর থেকেও ঘুরে আসলাম। অনেক দিন পর আজ অনেক ভাল লাগছে। এত দিন পোলট্রি মুরগীর মত লাগছিল।

দুপুরে ৩ জন একসাথে শাওনের কেবিনে খেতে বসলাম।
সুমনা বলল,”বাসায় বোরিং লাগে না?”
আমি বললাম,”ত লাগে না আবার!”

সুমনা একটু দুঃখ প্রকাশ করে বলল,”লাগার ই কথা। কি করো তাইলে সারাদিন! টিভি?”
আমি শাওনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বললাম,”তা আর দেখব কিভাবে।”
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের প্লেটে মনোযোগ দিল।
সুমনা বলল,”তাহলে গ্রামে কি করতা সারাদিন তাই বলো!”
আমি খুশিতে বলে উঠলাম,”সকালে উঠে সব রান্না শেষ করে স্কুল যাওয়া,এসে ফ্রেস হয়ে বকুলের সাথে ঘুরতে বের হওয়া, খেলা করা, গাছে উঠে বসে থাকা, মাঝে মাঝে গাছ থেকে ফল চুরি করা, পুকুরে গোসল করা, বিকালে মাঠে ক্রিকেট খেলা দেখতে যাওয়া আরো কত কি!”
আমি উৎসুকভাব নিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে সুমনার দিকে তাকালাম। দেখলাম যে ও বাংলার পাঁচের মত মুখ করে আছে।
আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,”কি হলো?”
সুমনা বলল,”এগুলাই?”
শাওন সুমনার দিকে একবার আর আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
সুমনা আমার দিকে ছোটো ছোটো চোখ করে তাকিয়ে বলল,”তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিল না?”
শাওন খাওয়া থামিয়ে সুমনার দিকে তাকালো।
আমি কপাল কুচকে বললাম,”ছেলে বন্ধু? না ছিল না।”
শাওন নিজের খাবার চামচে উঠতে উঠাতে বলল, “গাধা।”
আমি ভ্রুকুচকে শাওনের দিকে তাকালাম।
সুমনার বাংলার দশের মত মুখ করে আমার দিকে বলল,”বয় ফ্রেন্ড মানে লাভার। কিসের কি ছেলে বন্ধু?”
আমি বললাম,”ওওওও… না।”
“এজন্যই এই অবস্থা” বলে ম্লান হাসল সুমনা।
শাওনের খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় ও নিজের ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমি না বুঝতে পেরে বললাম,”এই অবস্থা মানে!”
সুমনা কিছু বলার আগেই শাওন সুমনাকে বলল,”চুপচাপ খা তারপর যা। এখানে আমাকে বিরক্ত করিস না।”
সুমনা শাওনের দিকে তাকিয়ে একটু দুঃখপ্রকাশ করে বলল,”আহারে সত্যিই তোর জন্য কষ্ট হচ্ছে এখন।”
শাওন ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে সুমনার দিকে তাকালো আর বলল,”মানে!”
সুমনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ক্লান্ত ভাবে বলল,”সত্যিই, কি আর বলব!”
পরোক্ষনেই আবার আমার দিকে তাকিয়ে জ্বলজ্বল চোখে বলে উঠল,”সমস্যা নেই আমি তোমাকে শিখাব।”
আমি প্রশ্নসূচক চোখে সুমনার দিকে তাকালাম।
শাওনও সুমনার দিকে তাকালো আর বলল,”তুই শিখাবি মানে!”
শাওনের কথায় কান না দিয়ে সুমনা বলল,”তুমি মুভি টুভি দেখো না?”
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। শাওন সুমনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। কারন সুমনার কথাবার্তা সুবিধার লাগছে না।
সুমনা একটা উজ্জ্বল হাসি দিয়ে আমাকে বলল,”সমস্যা নেই এখন থেকে দেখবা। অনেক জোস জোস মুভি আছে।”
শাওন আবার নিজের ফাইলের দিকে মনোযোগ দিল।
সুমনা বলে যেতে লাগল,”সবগুলো মুভিই আমি তোমাকে দেখাব। তার মধ্যে আজ আমি আর তুমি যেটা দেখব সেটা হলো ‘ফিফটি শেডস অব গ্রে’।”
শাওন থমকে গিয়ে সুমনার দিকে তাকালো।
আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে বললাম, “আচ্ছা।”
শাওন আমাকে এক ধমক দিয়ে বলল,”Shut up গাধা।”
আমি চমকে উঠলাম। শাওন সুমনার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল,”এসব কিছু দেখবে না ও। আর তুইও এখন চুপচাপ থাকবি। আর একটা সাউন্ড করবি না।”
আমি আর সুমনা দুইজনই শাওনের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম। আমি এজন্যই ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছি কারন শুধু শুধু ধমকটা কেন দিল বুঝলাম না। আর সুমনা কেন তাকিয়ে আছে জানিনা।
সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”মিলা, অনেক ভাল একটা মুভি ত তাই দেখতে দিবেনা শাওন।”
শাওন ফাইল বন্ধ করে রেগে সুমনার দিকে তাকিয়ে বলল,”এগুলো বলে ওকে উসকে লাভ হবেনা। ও এসব মুভি দেখবে না।”
সুমনা চোখ পাকিয়ে বলল,”কেন? দেখবে না কেন শুনি? ওর জানা লাগবে না? অফিসে সবার মুখে gossip চলছে যে গত রাতে কি হয়েছে?”
বলেই সুমনা ফিক করে হেসে দিয়ে আবার বলল,”এখন ত সত্যি সত্যিই কিছু হওয়া উচিত, তাইনা?”
সুমনা মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আমি আগা মাথা না বুঝে তাকিয়ে রইলাম সুমনার দিকে।
শাওন আরো একগুন রেগে বলল,”সেটা আমি বুঝে নিব।”
সুমনা বলল,”তোর বুঝতে হবে না। আমি আছি কি করতে!”
শাওন যতই রেগে আগুন হচ্ছে সুমনাও ততই ঘি ঢেলে যাচ্ছে।

“তোকে বললাম না আমি চুপ থাকতে।” শাওন বলল।

সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”চলো মিলা যাই এখানে থেকে আর লাভ নাই।”
“ও কোথাও যাবেনা।” শাওন সুমনার দিকে তাকিয়ে বলল।
“কেন যাবেনা?” সুমনা বলল। তাই আমিও বলে উঠলাম, “কেন যাব না?
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,”কারন আমি বলেছি তাই। তুমি যেতে পারবে না।”
আমিও রেগে বলে উঠলাম,”আমি যাবও আর মুভিটাও দেখব।”
সুমনা আমার এই কথা শুনে হাসিসহ জ্বলজ্বল চোখে আমার দিকে তাকালো। কিন্তু শাওন রাগে জ্বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি মনে মনে বললাম,”ওনার এত সমস্যা কেন! কি আছে এই 50 Shades of Grey মুভিতে!”

খাওয়া শেষ করে সুমনা একাই চলে গেল। আমাকে শাওন যেতেই দিল না। তাই মুখ গোমড়া করে আমি শাওনের সামনের চেয়ারে বসে রইলাম। শাওনের তাতে কিছু যায় আসে না। সে তার কাজে ব্যস্ত। আমি উঠে দাঁড়াতেই শাওন আমার দিকে না তাকিয়েই বলল,”এক পা ও বাহিরে গেলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে কাচের বড় দেয়ালের সামনে গিয়ে বসলাম। হালকা রোদ এসে পরছে নাক মুখে অনেক ভাল লাগছে। শাওন আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজ করতে লাগল।
আমার চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে এলো। তাই চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে পরলাম।
অনেকক্ষন ঘুমিয়ে তারপর চোখ খুললাম। তারপর মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালাম। ওয়াও! সন্ধ্যাকালীন শহরের দৃশ্য কতই না অসম্ভব সুন্দর। অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম। এক পর্যায়ে দেখা শেষ করে মুখ ঘুরিয়ে শাওনের টেবিলের দিকে তাকালাম। উনি নেই? গেলেন কোথায়? যেখানে যাক আমার কি? আমি চেয়ারটা টেনে জায়গা মত রাখলাম। তখন আমার চোখ গিয়ে পরল শাওনের টেবিলের উপর। ছোট ছোট ছবির মত আঁকা। এগুলা আবার কি? আমি হাতে নিলাম ফাইলটা
ইংলিশ এ হেয়ারস্টাইল লেখা আর সেটার অনেক গুলো ডিজাইন। তবে একটা ছবি দেখে আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম। এটাতেও ইংলিশে হেয়ারস্টাইল লিখা আর সেটার প্রথম অক্ষর অর্থাৎ বড় হাতের এইচ(H) এর মধ্যেখানের দাগে খোলা চুলে একটা মেয়ে বসে আছে। আর তার গা টা সে সেই এইচ এর উপরের অংশে হেলিয়ে রেখেছে।
এছাড়াও আরো কতগুলো আঁকা আছে। কিন্তু কি এগুলো!
সুমনা দরজা ঠেলে ঢুকল। আমি তাকালাম। সুমনা বলল,”কি দেখছ ওটাতে?”
আমি বললাম,”জানিনা, কি এগুলো?”
সুমনা এগিয়ে এসে দেখে বলল,”ও এগুলো! এগুলোকে লগো বলে। বিভিন্ন কোম্পানির অফিসিয়াল কার্ড আর সাইনবোর্ডে যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। আমাদের কাজের মধ্যে লগো ডিজাইনও আছে। এটা হয়ত কোনো পার্লারের জন্য।”
আমি ফাইলের দিকে তাকিয়ে বললাম,”ওওওও….”
সুমনা সুন্দর একটা হাসি দিল। তারপর বলল,”শাওন কই! ওকে ত দেখছি না!”
“আমি ত জানি না। আমি ঘুমাচ্ছিলাম।” আমি বললাম।
সুমনা বলল,”যেখানেই হোক আছে। এখনি আসবে কারন একটু পরেই বাসা যেতে হবে।”
বলতে বলতেই শাওন দরজা ঠেলে ঢুকল।
“কই ছিলি!” সুমনা বলল।
শাওন বলল,”ছাদে, তোরা আবার কি পাকাচ্ছিস?”
সুমনা চোখ ছোট ছোট করে বলল,”আপাতত কিছুই না।”
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”মিলা আজ আমার বাসায় চল! যাবে?”
আমি খুশিতে মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলাম,”হ্যা যাব।”
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”ইন ইউওর ড্রিমস।”
সুমনাকে ভ্রুকুচকে বলল,”বাস্তবেই যাবে। কাহিনী করিস না।”
তারপর মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”আজ আমরা অনেক মজা করব আর মুভিটাও দেখব!”
আমি হাসিমুখে তাকিয়ে রইলাম সুমনার দিকে। শাওন বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”সুমনা ওর অর্ধেক মাথা এমনিই নষ্ট বাকি অর্ধেকও নষ্ট করিস না।”
আমি বলে উঠলাম,”আপনার মাথা নষ্ট আর আমি যেতে চাই।” শাওন নিজের কোট গায়ে দিতে দিতে বলল,”সেটা আমি বুঝব।”
আমি আর সুমনা গোমড়া মুখ করে রইলাম।
শাওন আমাদের পাত্তা না দিয়ে কেবিন থেকে বের হতে হতে বলল,”কুইকলি নিচে আসো।”

সুমনা আমাদের বিদায় জানিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসল। আমি শাওনের পাশে মেজাজ খারাপ করে বসে রইলাম। আবার সেই মুরগীর খামারে যেতে হবে। সুমনার সাথে যেতে পারলে ভাল হত। আর একটা বিষয় হচ্ছে ওই 50 shades of grey মুভি টা দেখে জানতে ইচ্ছা করছে যে মুভিটাতে এমন কি আছে!
আসলে মানুষ ঠিকই বলে। যেটা করতে মানা করা হয় সেটাই করার সুযোগ তারা খুঁজে। মানা করা কাজ করতে কেন যে এত মজা লাগে জানিনা। আমি শাওনের দিকে আড়চোখে তাকালাম। প্রতিবারের মত সে আজও মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
আমাকে শুধু শুধু যেতে দিল না। আমি বন্ধ জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।

ফিরে এসে শাওন ফ্রেস হতে বাথরুমে ঢুকে গেল। আমি সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ করে সেই পাখি দুইটার কথা মাথায় এলো। শাওন আমার ল্যাগেজের সব নিজে রোদে দেওয়ার সময় ওই দুইটা পেয়ে নিয়ে নেয় নি ত? আমিও ত ভালো মত খেয়াল করি নি। আমি জলদি গিয়ে নিজের ল্যাগেজ খুললাম। সত্যিই নেই কোথাও। এখন! মেজাজ টা বিগড়ে যাচ্ছে। কি সমস্যা ওনার! আমার ওই দুইটা অনেক পছন্দ ছিল। আমি মুখ কালো করে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়। তারপর ফট করে নিজের ল্যাগেজ বন্ধ করে ওনার কাবাড খুললাম। ওনার জামা কাপড় এদিক সেদিন করে খুজতে লাগলাম। কোথাও ত নেই। তারপর ড্রায়ার গুলো খুলতে লাগলাম।
“কি করছ তুমি?”
শাওনের গলা শুনে আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। এখন কি করব!
শাওন আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে যে ড্রায়ারটা মাত্র খুলেছিলাম সেটা বন্ধ করতে করতে রেগে বলল,”তোমাকে আমি আমার জিনিসে হাত দিতে মানা করেছিলাম না।”
আমি ওনার দিকে না ঘুরে ওভাবেই হালকা মাথা নিচু করে ঢোক গিললাম। শাওন আমার এক বাহু চেপে ধরে আমাকে নিজের দিকে ঘুরালো।
আমি ওনার চোখের দিকে তাকালাম আর বললাম, “কি করছেন আপনি লাগছে আমার।”
শাওন আরো জোরে চেপে ধরে বলল,”লাগুক।”
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,”আপনি সত্যিই অনেক খারাপ। সবসময় আমাকে ব্যথা দেন।”
শাওন আমাকে ধাক্কা দিয়ে কাবাডের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে কাবাড বন্ধ করল।
আমি মুখটা গোমড়া করে হাতটা ডলতে লাগলাম। শাওন আমার দিকে রেগে তাকাতেই আমি বললাম, “আমার ব্যাগ থেকে আপনি পাখি দুইটা নিয়েছেন কেন!”
শাওন কপাল কুচকে বলল,”what?”
আমি একটু এগিয়ে এসে হাত দিয়ে ইশারা করে বললাম,”এইযে এত টুকু টুকু পাখি দুইটা।”
“ফেলে দিয়েছি।” বলেই শাওন আমার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি ফট করে ওনার দিকে ঘুরে ওনার হাত ধরলাম৷ শাওন অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ধরে থাকা হাতের দিকে তাকালো। তারপর ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলাম। তারপর ছোট ছোট চোখ করে বললাম,”কোথায় ফেলেছেন?”
শাওন উত্তর না দিয়ে চলে গেল। আমি পিছন থেকে রেগে একটা ঘুষি দেখালাম আর মনে মনে বললাম, ‘গরিলা একটা।’

ফ্রেস হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। নাক মুখ কুচকে খাবার মুখে দিতে লাগলাম। আর চিন্তা করতে লাগলাম উনি ওই দুইটা কোথায় ফেলতে পারেন! আমার যতদূর মনে হয় অই রুমটার ডাস্টবিনেই আবার ফেলেছে পাখি দুইটা। ওনার নিজের রুমের ডাস্টবিন ত ফাকা।
কিন্তু ওই রুমে যেতে গেলে ত সমস্যা। আগে উনি ঘুমাতে যাক তারপর যাওয়া যাবে।

সোফায় বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। রাত ১১ টার দিকে শাওন নিজের রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরল। তার একটু পরেই আমি উঠে চুপি চুপি ওই রুমের কাছে গেলাম। কিন্তু রুমের দরজা খুলছে না! কি ব্যাপার। চাবি দিয়ে দরজা লক করা? তাই ই হবে হয়ত। গরিলাটা চালাক আছে। কিন্তু আমিও কম চালাক না।
শাওনের রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে আমার পার্লার ক্লিপ আছে কয়েকটা। কিন্তু উনি কি ঘুমিয়েছেন? মনে ত হয়।
আমি গুটি গুটি পায়ে শাওনের রুমে গিয়ে ঢুকলাম। বাহিরের হালকা আলো বেলকোনি দিয়ে ঢুকে রুমে এসে পরেছে। আমি পা টিপে টিপে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গেলাম। এক কোনা থেকে কয়েকটা পার্লার ক্লিপ নিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। বালিশ দুইহাত রেখে তার উপর মাথা দিয়ে উবুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।
আমার শাওনের পাশের ড্রয়ারের দিকে চোখ পরল। যেটার উপর টেবিল ল্যাম্প থাকে। চাবিটা এটার মধ্যে নেই ত?
উনি ঘুমাচ্ছেই যখন, তখন চাবিটা একটু খুঁজেই দেখি কারন ড্রয়ারে থাকতেও পারে! না জানি এই ক্লিপ গুলো কাজ করবে কিনা!
আমি শাওনের পাশের ড্রয়ারের কাছে এগিয়ে গেলাম। হাটু ভাজ করে বসে একে একে ৩টা ড্রয়ার খুলতে লাগলাম। একদম উপরের টায় চাবি আছে এক জোড়া। আমি হাসি মুখে চাবিটা নিয়ে মনে মনে বললাম,”যাক আমার ধারনা ঠিক ছিল।” আমি ড্রয়ারটা আস্তে করে বন্ধ করে উঠে দাঁড়াতেই শাওন আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে বিছানায় নিয়ে এলো। আর আমার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বললাম আ… আপনি… ঘু…ঘু…ঘুমান নি!”

(চলবে)
….)

🚩🚩🚩🚩
এবার গত পর্ব নিয়ে কিছু কথা বলি। অনেকেই গত পর্ব নিয়ে আপসেট যে ১৬ বছরের মেয়ের মাথায় কিভাবে কিছুই না থেকে পারে। তাছাড়া আসেপাশে খেয়াল না করে মিলা কথা বলে কেন। এমন অনেক কিছু। তাই হয়ত খেয়াল করেছেন যে আমি গল্প Edit করেছি। অনেকে বলেছেন গ্রামের মেয়েদের ১৬ বছরেও বিয়ে হয়, এত অবুঝ হয় না তারা। এখন আমি আপনাদের সাথে একটা বিষয় শেয়ার করি।
আমার এক কাজিন সাইকোলজিস্ট। তার কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মানুষ আসে।
একদিন তিনি আমাকে বললেন, “জানিস শহরেরও এমন ছেলে মেয়ে পেয়েছি যারা এখনো জানেই না যে শারীরিক সম্পর্ক কি! এই সমস্যার জন্য এক স্বামী স্ত্রী আজও এসেছিল। শুধু এমন না এর আগেও অনেকে এসেছে তবে গ্রামের দিক থেকে।”

এখন বলেন!

আরেকটা বিষয় হচ্ছে অনেক মেয়ে আছে বাচ্চাদের মত করে। আমার নিজের ফ্রেন্ড ই আছে এমন। বাচ্চামি করতে বয়স লাগেনা। পার্থক্য হলো কেউ কেউ ইচ্ছা করে করেনা কারন এমনিই বাচ্চা বাচ্চা। আর কেউ কেউ ঢং করে করে।

যাতে সবাই বুঝতে পারেন যে আমি একদমি না বুঝে লিখিনি💗🥰। আশা করি আমার প্রেক্ষাপট টা বুঝবেন। দুঃখিত যদি গত পর্বে ভুল থাকে। তবে এটাই ফাইনাল Edit. আশা করি এখন ঠিক আছে💗।

আর মিলার বুঝে শুনে কথা বলা উচিত সেই বিষয় টার জন্য আমি কথাগুলা চেঞ্জ করে দিছি।

আর আমি কারো উপর রাগ করিনি। আমার প্রথম গল্প এটা তাই যথেষ্ট শেখার চেষ্টা করছি আপনাদের থেকে শুনে🤗💗। আপনাদের সবার মন্তব্যই মুল্যবান🥰। গতকাল অনেক ঝামেলার কারনে দিতে পারিনি গল্প। প্রতিদিন দিতে পারলে ত না দিয়ে থাকিনা। আর আমি ছোট করে পর্ব লিখে নিজেই শান্তি পাইনা🤣 তাই বড় লিখে তারপর দিই।

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here