অচেনা শহর পর্ব ১২

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১২]

ফোন হাতে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশাত। ও বুঝতে পারছে না হঠাৎ কথার মাঝে ফোনটা কেটে কেন দিলো স্নেহা‌।কেটে যাওয়ায় অবাক হলেও ভাবলো হয়তো ফোনে টাকা নাই তাই নিজে থেকে ব্যাক করল কিন্তু অদ্ভুত ফোনটা রিসিভ হচ্ছেনা রিসিভ হবে কিভাবে ওপাশ থেকে একটা কথা বারবার বলে যাচ্ছে,, আপনার নাম্বার-টিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এটা কিভাবে সম্ভব কথার মাঝখানে ফোন অফ কিভাবে হয়ে গেল?

নিশাত, স্নেহা মার কোনো খোঁজ পাইলি?

মায়ের আওয়াজ পেয়ে নিশাত ফোন রেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।কারণ মার সামনে যদি এখন এইসব বলি তাহলে আরো চিন্তা করবে এমনিতে ওষুধ খাইনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। ও হাসি মুখ করে পেছন ঘুরে মার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

আম্মু চিন্তা করো না। স্নেহা সাথে আমার কথা হয়েছে। ও ঠিক আছে আজকে নাকি ও বাসায় আসবে না।

বাসায় আসবে না শুনে মা উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, বাসায় আসবে না মানে কি ও কোথায় থাকবে?

কথাটা শোনা মাত্রই নিশাত হকচকিয়ে হয়ে গেল। এখন মাকে কি বলব? কোথায় থাকব সেটা তো স্নেহা আমাকে বলে নাই! ইভেন কথা শেষে করেনি। কিন্তু মাকে তো সেটা বলা যাবে না।
নুসরাত নিজের ছেলের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে। কারন সে স্পষ্ট নিজের ছেলের চোখে-মুখে চিন্তার আভাস দেখতে পাচ্ছে।

তাই ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, তোর চোখ-মুখ এমন লাগছে কেন কি হয়েছে সত্যি করে বল?

মায়ের কথায় চমকে ওঠে নিশাত, তারপর মুখে মেটি হাসি ফুটিয়ে উঠিয়ে বলে,
উফফ আম্মু চিন্তা করছো কেন বললাম তো কথা হয়েছে এইমাত্র কথা হলো ও অন্তরা দের বাসায় গেছে। ওইখান আজকে থাকবে।

বানিয়ে একটা মিথ্যা কথা বলে দিল। না হলে প্রশ্ন করতে করতে মাথা খেয়ে ফেলে। আম্মুকে এত চিন্তা রাখাটা ঠিক হবে না।
নুসরাত নিজের ছেলের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে।

কি হলো আম্মু? তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করো নি?

আচ্ছা তাহলে চল খেয়ে নিবি।

মায়ের কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। মনে মনে স্নেহার জন্য চিন্তা হলোও বাইরে প্রকাশ করল না।
__________

আশা নিজের পড়া কমপ্লিট করে ফোন হাতে বসে আছে। সবাই এতোক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন ও নিজের ভাইকে কল করবে।
ডায়াল লিস্টে গিয়ে আদ্রর নাম্বারে কল করলো,
রিং হয়ে কেটে গেল কিন্তু কেউ রিসিভ করল না। ভ্রু কুঁচকে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে আশা, এমন তো কখনো হয়না সব সময় তো কল দেওয়ার সাথে সাথেই ভাইয়া রিসিভ করে। ভাইয়া বাংলাদেশে এসেছে পাঁচ দিন হয়ে গেছে।
চার দিন আগে কলেজ থেকে বের হয়ে নিজের চোখের সামনে আদ্র ভাইয়াকে দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলাম
স্তব্ধ হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ভাইয়া এখানে কি করছে? ভাইয়া আমার কাছে আসতে আমি শক্ত করে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরি আর জিজ্ঞেস করি,

ভাইয়া তুমি? তুমি তো বিদেশ থেকে চলে এসেছো সেইটা আমি বাড়িতে জানতে পেরেছি কিন্তু এভাবে বাসায় না গিয়ে এখানে?

ভাইয়া আমার কথার উত্তরে শুধু একটা কথাই বলে,
সেইসব পরে জানতে পারবি। তোর সাথে আমার কিছু ইমপর্টেন্ট কথা আছে। সামনে রেস্টুরেন্টে চল।

আমি ভাইয়ার চোখমুখ শক্ত দেখেই বুঝতে পেরে যায় ভাইয়া কি আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে? আর সেটা ভাবিকে নিয়ে হবে আমি নিশ্চিত।আমি ভাইয়ার এক হাত শক্ত করে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সামনে রেস্টুরেন্টে যাই।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে লক্ষ করি আমাদের সাথে আরেকজন ছেলেও আছে।অদ্ভুত বিষয় আমি ভাইয়াকে দেখে এতটা এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম যে পাশে আরেকজন আছে তাকে আমি লক্ষ্য করিনি।
ভাইয়া আর আমি মুখোমুখি বসে আছি আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি।তখন ওই পাশে অসভ্য ছেলেটা বলে ওঠে,,

ব্রো তোমার ভাই বোন এতো ছিত কাঁদুনে বুঝতে পারতেছি না এখানে কি কেউ মারা গেছে এমন মরা কান্না করছে কেন?

ছেলেটার টিটকারি মারা কথা শুনে আমার সমস্ত কান্না অফ হয়ে যায়। নাক ফুলিয়ে কান্না অফ করে ছেলেটার দিকে কটমট করে তাকায়।

আপনি আমাকে ছিত কাঁদুনে বললেন? হু আর ইউ?

ছেলেটা কিছু বলতে যাবে ভাইয়া কি যেন বলল ছেলেটা আর কিছুই বলল না।শুধু মুচকি মুচকি হাসতে লাগল আমার দিকে তাকিয়ে একটু পরপর। তারপর সত্যি স্নেহা ভাবিকে নিয়ে সব কথা জানতে চাইলো কিন্তু আমি তো এত কিছু জানি না কারণ ঐদিন বাসায় আমি ছিলাম না
তাই আমি বলতে পারলাম না।শুধু এটুকুই বললাম পরের দিন বাসায় এসে ভাবিকে পায়নি।আর আমি সেটা নিয়ে খুব একটা প্রশ্নও করিনি বাড়িতে কারন ভাবির সাথে খুব একটা মিশুক ছিলাম না
আমি।
ভাইয়া তারপর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ রাখে। আমাকে বলে রেখেছে বাসার কাউকে যেন তার খোঁজ না দেয়।

তিনবারের মাথায় ফোন রিসিভ হলো কিন্তু এটা ভাইয়ার কন্ঠ না শুনেই বুঝে গেছি।

হ্যালো কে আপনি ভাইয়া কোথায় ভাইয়ের কাছে দিন!

জাইন নিজের রুমে থেকে আদ্রর রুমে ফোনের শব্দ পেয়ে চলে এসেছে অনেকক্ষণ ধরে বেজে যাচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না। তাই বিরক্ত হয়ে এসে ফোন রিসিভ করলো,
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে মেয়েলী আওয়াজ পেল।ও নাম্বার এর নাম দেখে বুঝল এটা আদ্রর বোন।

ওরে ছিত কাঁদুনে নাকি?

ছিত কাঁদুনে শুনেই আশা রাগে ফায়ার হয়ে যায়।

আপনি সেই অসভ্য লোকটা। আমার ভাইয়ের ফোন আপনি কি করছেন? ভাইয়ের কাছে দিন ফোন।

খালি ভাইয়া ভাইয়া করো কেনো আমার সাথে একটু কথা বলো আমিও তো তোমার ভাইয়ার মতোই।

হ্যাঁ ভাইয়ার মতো ভাইয়া তো না।

ভাইয়া না হয়ে ভালো হয়েছে। যদি অন্য কিছু হওয়া যায় আর কি?

মানে কি সব বলছেন ভাইয়ার কাছে দিন ফোন।

তোমার ভাই তো এখন তোমার ভাবির সাথে রোমান্স করছে। তার কি আর ফোনের কথা মাথায় আছে।

মানে ভাবি কোথা থেকে আসলো?
চরম অবাক হয়ে বললাম ভাইয়া ভাবি কি কোথায় পেল। প্রশ্ন করে নিজেই বোকা বনে গেলাম।ভাইয়া তো ভাবির জন্য চলে এসেছে আর সেই কি তাকে না খুঁজে বসে থাকবে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।

অপাশের উত্তর আসার আগে আমার হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠলো,,
আচ্ছা তাহলে আমি রাখি।

জাইন কিছু বলবে তার আগে খট শব্দ করে ফোন কেটে গেল।
হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর কি যেন ভেবে নিজের ফোনের নাম্বারটা সেভ করে নিলো।
আদ্রর ফোন হাতে নিয়ে নিচে নেমে এলো আদ্রকে খুঁজতে খুঁজতে।
__________

আমি চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি। আদ্রর গরম নিঃশ্বাস আমার ঘারে পরছে সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
আদ্রর কোন কথা আমার কানে পৌঁছাচ্ছে না আমি তো ওর কাছে আসাতেই স্তব্ধ হয়ে গেছি। ওরনার কোনার শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই ব্রো ব্রো করে আওয়াজ করতে করতে জাইন রান্নাঘরে এসে উপস্থিত হলো আর আমাদের এই ভাবে দেখেই শকড খেলো।
আদ্র জাইন এর আওয়াজ পেয়ে আমাকে ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
লজ্জায় আমার মাথা কাটা। তাড়াতাড়ি করে পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্রর জন্য আমায় কেমন লজ্জায় পড়তে হলো কথা বলবি দূরে থেকে বল এতো কাছে আসার কি দরকার? লজ্জায় মন চায়ছে এখানেই মাটি ফাক করে তার ভেতরে ঢুকে পড়ি। জাইনের সামনে আমি কিভাবে যাব? লজ্জায় আমার শরীর অসাড় হয়ে আসছে। চোখ বন্ধ করে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

জাইন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগেও আশাকে বানিয়ে বলেছিল রোমান্সের কথা। কিন্তু এখানে এসেছি তাই ঠিক হয়ে গেল। আদ্র জাইনের হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এলো।

জাইন বিশ্ময় ভরা চোখের আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,, ব্রো এটা আমি কি দেখলাম? শেষমেষ তুমি রান্না ঘরেই….

আদ্র রেগে তাকাল জাইনের দিকে আর বলল,
একদম বাজে কথা বলবি না। তেমন কিছুই না আমি জাস্ট একটা কথা বলছিলাম ওকে।

জাইন গালে হাত দিয়ে বলল,
ব্রো কথা বলতে অত কাছে যেতে হয় বুঝি।

আমার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বলবো। তোর ক বউ আমার সো আমার যা ইচ্ছা তাই করবে যেখানে খুশি।
রাগ নিয়ে বলল।

কুল কুল ব্রো আচ্ছা। যা খুশি তাই আমি আর রুম থেকে বের হচ্ছি না।

আদ্র জাইনের কানে শক্ত করে ধরে বললো,,
তোকে কিন্তু আমি,

আচ্ছা আর মজা করছি না। তোর বোন কল করেছিল।

আশা কেন?

জানিনা তুই জেনে নিস। আরেকটা কথা রান্নাঘরে ভাংগা ফোন দেখলাম ওইটা কার?

স্নেহার।

ভাঙলো কে?

যাবি তুই?

ওকে ওকে বুঝতে পেরেছে কারণটা থাক বলতে হবেনা।
কারন আদ্র যেভাবে তাকিয়েছে ও ভয় পেয়ে গেছো।
বলেই উঠে দাঁড়ালো আর খাবার টেবিলে এসে বসলো।

ভাবি খিদের জ্বালায় তো শেষ আমি আজ কি খাবার পাব না।
গলা উঁচিয়ে বলল যাতে স্নেহার কানে যায়।

আমি লজ্জা চোখ বন্ধ করে রান্নাঘরে জাইনের আওয়াজ কানে আসে। জাইন গলা উঁচু করে খাবার চাইছে।

লজ্জা লাগলেও নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। সত্যি সবার হয়তো খিদে পেয়েছে অনেক লেট হয়ে গেছে এমনিতেই। লাজ লজ্জা ভুলে ওরনা দিয়ে মাথা ঢেকে খাবার নিয়ে টেবিলে রাখলাম। আদ্র কারো সাথে কথা বলছে ফোনে।
আমি একটু নজর সে দিকে তাকিয়ে জাইনের প্লেটে খাবার বাড়তে লাগলাম।

আর তো কথা শেষ করে চেয়ার টেনে বসল। আমি খাবার বেড়ে দিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। আদ্র খাবার মুখে দিতে যাবে তখন জাইন বলল,

ভাবী আপনি বসে পড়েন আবার একা খাবেন নাকি।

আমি বললাম, আপনার খান আমি পরে খেয়ে নেব।

পরে খাবেন কেন আমাদের সাথে খান বসে পড়ুন।

কি মুসিবত আমি এখন বসবো কিভাবে আমার তো হাত কাটা খেতে পারব না আমি ভেবে রেখেছি আজকে খাবো না।

ব্রো তুই কিছু বল।

আদ্র খাচ্ছিল আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর জাইনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আমি কি বলবো?

খেতে বল পরে। একা খাবে নাকি পরে।

এখানে সমস্যা কি তুই নিজেরটা শেষ কর। আর আমাকে শেষ করতে দে। যারটা সে করুক।

জাইন হতভম্ব হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের খাওয়া কমপ্লিট করে চলে গেল।
আমিও আদ্রর কথায় অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আদ্র এমন কথা বলবে আমি আশা করিনি।

জাইন চলে যেতেই আদ্র আমার হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিল।
আমি স্তম্ভিত হয়ে আদ্রর দিকে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে আছি।

হা করো।

আদ্র আমার দিকে খাবার তুলে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে কারণ আমি খাবার মুখে না নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।

আপনি নিজের খাওয়া শেষ করেন আমাকে খাইয়ে দিতে হবে না।

কথাটা বলে শেষ করতে পারলাম না আহ করে উঠলাম। আদ্র আমার কাটা হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে রেগে হ্যাঁ যে ওর চোখ ফুলে উঠেছে।

ছারুন ভেঙ্গে ফেলবেন নাকি?

হ্যাঁ তোমাকে আমি হাত-পা ভেঙে বসিয়ে রাখবো।

আদ্রর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। বড় বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকালাম,

তাড়াতাড়ি খাও। তোমার জেদ একটুও কমলো না। এত ভুল করেছ এখন আবার জেদ করছো?

ব্যথায় আমার চোখের কোনা বিয়ের জল পড়লো। যা আদ্রওর হাতের উপর পরলো ছোটা তখনই আদ্র আমার হাত ছেড়ে দিলো,
আর চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সংযুক্ত করার চেষ্টা করতে লাগল।

প্লিজ আমাকে আর রাগিও না তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর।

আমি কি ভুল করেছি আর এখানে জেদের কি করলাম আপনি তো বলেন যারা সে করুক।

কী ভুল করেছ এখন বলতে চাইছে না?আর কি বললে তাহলে কি আমি জাইনের সামনেই তোমাকে খাইয়ে দেবো। ওকে আমার সমস্যা নেই তাহলে ওকে ডাকি আমি তো ভেবেছিলাম তুমি লজ্জা পাবে তাই ওকে সরিয়ে দিলাম তুমি যদি চাও।

না না কি সব বলছেন ওকে কেন ডাকবে?

তুমিতো চাইছ ওর সামনে যেন আমি তোমাকে

না না আমি এমন কিছু চাইছি না। আপনি খালি বেশি বুঝেন সবকিছুতে।

আদ্র আমার কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে চোখের পানি মুছে দিল। তারপর খাবার খেতে ইশারা করলো আমি ছল ছল চোখে খাবারটা মুখে নিয়ে চিবাচ্ছি।
#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:– (এক্সট্রা পার্ট)

খাবার সব গুছিয়ে রেখে আমি গুটিশুটি পায়ে রুমে এলাম। যে রুমে আমি শুয়ে ছিলাম। পুরো রুমে আদ্র কোথাও নেই আমি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে ভাবতে লাগলাম আদ্র কোথায় গেল?
তাহলে কে আদ্র অন্য রুমে শুয়েছে। রুম থেকে বেরিয়ে আসতে যাব তখন বারান্দায় মনে হল কেউ আছে। আমি ধীর পায়ে বেলকনির দরজার গেলাম সেখানে গিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলাম আদ্র বারান্দায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে দুই হাত গ্ৰিলের ওপর রেখে।ওর দৃষ্টির বাইরে। আমি নিষ্পলক ভাবে আদর দিকে তাকিয়ে আছি।আমি কল্পনাতেও ভাবছিলাম না যে দু বছরের আগে আদ্রকে চোখের সামনে দেখতে পাবো।কিন্তু আমার সমস্ত চিন্তাভাবনার ঊর্ধ্বে খিয়ে আজ আদ্র আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আজ আমার পরম সুখের দিন। এই একটা মাস আমি তোমাকে হারিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি নিজের একাকীত্ব নিঃসঙ্গতা। নিজের একাকীত্ব নিঃসঙ্গতা আমাকে কুরে কুরে খেয়েছি। একজন ভরসা ভালোবাসার মানুষ পাশের পাবার জন্য রাতভর নির্ঘুম কাটিয়েছি।

চোখের জলে বালিশ ভিজেছি। তোমাকে মিস করছি তুমি আমাকে বলেছিলে আমি তোমার শূন্যতা অনুভব করব সত্যি করেছি খুব করেছি। মনে মনে তখন চাইতাম হুট করেই আমার সামনে এসে আমাকে চমকে দেবে সেটাই হলো। সত্যি চমকে দেওয়ার জন্য তুমি চলে এলে। কিন্তু অনেক কিছুই আমার না জানা।
কিন্তু আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই না। তুমি আমার কাছে চলে এসেছো এর থেকে সুখের আনন্দে আর কিছু হতে পারে না। তোমার কাছে আমি কোন কিছু জিজ্ঞেস করবো না আর।
আমি ধীর পায়ে একদম আদ্রর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আদ্র এখনো আমার উপস্থিতি টের পাইনি। ও গভীর কিছু চিন্তা করছে দাঁড়িয়ে। আমি থ মেরে আদ্রর পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার হাত-পা কাঁপছে চোখ বন্ধ করে নিজেকে বললাম,
কাপছিস কেন স্নেহা তুই তো পর-পুরুষকে জড়িয়ে ধরবি না। তুই তো তোর বরকে জড়িয়ে ধরার জন্য এসেছিস। তাহলে এত ভয় পাচ্ছিস কেন?
মনে মনে নিজেকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু তবুও আমার কাপাকাপি থামছে না শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। আদ্রর কাছে আসলে আমার এমন অনুভূতি হতে থাকে।
আমি চোখ বন্ধ করে একহাত বুকে রাখলাম বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করছে অস্থির হয়ে উঠছি। ওইভাবে আদ্রকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আদ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি চোখ বন্ধ করে আমার হাত-পা এখনো থরথর করে কাঁপছে।আস্তে আস্তে আমার কাপাকাপি কমে আসছে। আমি মৃদু কণ্ঠে বললাম,

“আমি আপনাকে অনেক মিস করেছি আদ্র। আপনি যে আমাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিবেন সত্যি আমি কল্পনাতেও ভাবি নি। এইভাবে আমার সামনে হাজির হবেন আমার কল্পনার বাইরে ছিল।”

আদ্র শক্ত হয়ে ওইভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমি পাঁচ মিনিটের মতো আদ্র কে জড়িয়ে ওর পিঠে মাথা রেখে আছি।আমার একমাত্র আপন মানুষ তাকে আমি আবার ফিরে পেয়েছি আর হারাতে দেব না কখনো না।
আমার সারা শরীরে সুখ বয়ে যাচ্ছে।

স্নেহা আমাকে ছাড়ো?
আদ্রর গম্ভীর কন্ঠ শুনে আমি থমকে গেলাম সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালাম।

ছার আমাকে।

আমি হতদম্ব হয়ে আদ্রকে ছেড়ে দিলাম। বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আদ্র আমার দিকে ঘুরে তাকালো।আমি ছলছল চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।

তুমি আমার থেকে এতো কথা লুকিয়েছিলেন?

আদ্র চোখ মুখ শক্ত করে গম্ভীর গলায় বলল।আমি বুঝতে পারছি আদ্রকে কেন এমন করছে।
আদ্র আমার দু কাঁধে হাত রেখে বলল,

অ্যানসার মি। এত কিছু ঘটে গেলো আর তুমি আমার থেকে সব কিছু আড়াল করলে কেন? হোয়াই এত সাহস তুমি কোথায় পেলে?

আমি চুপ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি চোখ দিয়ে আমার গল গল করে পানি পড়ছে।

একদম কান্না করবা না। কান্না করে বারবার তুমি আমাকে দুর্বল করে দেবে না। আই হেটস কান্না।

আমি কান্না গলায় বললাম,, আমি তো আপনার কথা ভেবেই কিছু জানায়নি আর আমি কি বলতাম আপনাকে বলুন?আমি কি আপনাকে এইটাই বলতাম যে আপনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার মা আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আর সে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে আমি একটা চরিত্রহীনা লোভী মেয়ে। আমি জানি আপনি আমাকে খুব ভালবাসেন আমার একটু কিছু হলেই পাগলামি শুরু করে দেন। আর এত সব কিছু শোনার পর নিশ্চয়ই আপনি বিদেশে থাকতে পারতেন না।এমনিতেই আপনি এত দূরে একটা জায়গায় আছেন আপনাকে জানিয়ে আমি চিন্তিত রাখতে চাইনি আমি চাইনি আপনার ক্ষতি হোক। আমার কথা ভেবে আপনি সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে চলে আসেন এটা আমি মানতে পারতাম না। তাই ভেবেছিলাম আমি নিজেকে রক্ষা করে কোনভাবে দু বছর কাটিয়ে দেবো আপনি আসলে তখন না হয়….

চুপ আর একটা কথা বলবেনা।
আদ্রর চিৎকার কন্ঠে আমি কেঁপে উঠলাম আর কথা অফ করে দিলাম।

তুমি কি মনে করো নিজেকে তুমি চাইবে আর তুমি সুস্থভাবে এই সমাজে চলতে পারবে একা একা এতই ক্ষমতা তোমার।এক মাসে কি হাল করেছে নিজের আবার তুমি দু বছর থাকার চিন্তা ভাবনা করে ছিলে।কি বুদ্ধি তোমার সত্যি তারিফ করতে হয়।আমার কি মনে হয় জানো তুমি আমার কথা ভাবো নি তুমি ভেবেছিলে আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা। আমাকে না জানিয়ে দু’বছর নিজের ইচ্ছা মত চলতে পারবে।আমার ফ্যামিলি মানুষ তোমার সাথে অন্যায় করেছি সেটা তুমি আমাকে জানাতে পারবে না।আমি দূরে আছি বলে। তোমাকে খুব ভালোবাসি বলে চিন্তা করব বলে। হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার জন্য পাগলামো করি এইসব করি বলেই তো তুমি সবসময় আমাকে ইগনোর কর আমার ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করো। আমাকে তোমার কোনো কিছু জানাতে চাও না। এই যে একটু আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললে তুমি আমাকে মিস করছো। আমার কি মনে হয় তুমি আমাকে একটুও মিস করো নি।বরংচ শান্তিতে ছিলে যে আদ্র নামক একজন পাগল তোমাকে ডিস্টার্ব করে সবসময় তার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছো। তার থেকে মুক্তি পেয়েছো। যেটা তুমি সবসময়ই চেয়ে এসেছ।

আমি এমনটা চাইনি সত্যি আমি সত্যি আপনাকে খুব মিস করেছি।
আমি কান্না করতে করতে বললাম।

একটা মিথ্যে কথা বলবে না। আর কি বললে তুমি নিজেকে রক্ষাকরতে। আচ্ছা তুমি নিজেকে কিভাবে রক্ষা করতে তোমার চারপাশে তো কত শত্রু ছিল তাদের কে তুমি চিনতে পেরেছ? কিভাবে তুমি ওই মুহিতের সাথে ভালো বিহেভ করেছিলে। তুমি ওর খারাপ মতলবটা একটুও বুঝতে পারোনি। ও তোমার যে কোন সময় যে কোন ক্ষতি করে দিত। আর তুমি হয়তো ভুলে গেছো এখন আমি তোমার শুধু পাগলামো প্রেমিক না।‌আমি তোমার হাজব্যান্ড তাই তোমার ওপর সম্পূর্ণ অধিকারী আছৈ। তোমার ওপর সবচেয়ে অধিকার আমার বেশ আমার যেটা তোমার নিজের ও নিজের ওপর নেই। তোমার সম্পর্কে সবকিছু জানার রাইট আমার আছে আর তুমি কিনা আমার কাছ থেকে এত বড় কথাটা লুকিয়ে রেখেছিলে।
তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার কি হতো একবারও ভেবেছো ভাভবে কেন ?তুমি তো চাও আমি কষ্টে থাকি। আমি কষ্ট পেলে তুমি আনন্দে থাকতে পারো। আমি তো তোমার চোখের কাঁটা যত তাড়াতাড়ি উপড়ে ফেলতে পারবে তুমি বেঁচে যাবে। আমাকে একদম ভেতর থেকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলতে পারলে তুমি শান্তি পাবে তাই না।

আদ্র চিৎকার করতে করতে কথাগুলো বলছে। আমি আদ্রর চিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠছি। আমার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।

~~চলবে~~
~~চলবে~~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here