অতিরিক্ত চাওয়া পর্ব ১২

অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
১২

~ হ..হ্যালো মামা! ভাই…ভাইকে থামানো যাচ্ছে না!
~ কি হয়েছে?
~ ইলিয়াসকে মারছে! মেরে ফেললে পুলিশ ক্যাস হয়ে যাবে!
আবিরের চিন্তিত প্রশ্ন,
~ খুলে বল!
~ ফ্ল্যাটে ছিলাম! হঠাৎ ভাইয়ের কল এলো, আগুনের গোলা হয়ে বলল, কৃষ্ণপুর ফিরবে! এমন অবস্থা দেখে আমি, অভি, আয়ুশ ও এসেছি তাঁর পিঁছু পিঁছু ! এখানে এসে রাকিব থেকে শুনলাম, ইলিয়াস নাকি ভাবিকে খারাপ কথা বলছে, আর সেই ইনফরমেশন রাকিব ভাইকে কল করে বলে দিয়েছে! আর এখন ভাই ক্যাম্পের সামনে পেটাচ্ছ ইলিয়াসকে! গ্রামের মানুষ গোল হয়ে আছে! আম সিয়র, মেরে ফেলবে! ক্যাস এটা চাঁপা দেওয়া যাবে না সহজে! কারণ সকলের সামনে ঘটছে!
~ থামানোর চেষ্টা করে যা! আসছি আমি!
~ দ্রুত!

আবিদ কল কেঁটে দৌড়ে এগিয়ে গেলো! তৃষ্ণার হাতের স্টিক, মাটিতে পড়ে থাকা ইলিয়াসের শরীরে আবার ছোঁয়ার আগেই, আবিদ দ্রুত তৃষ্ণার হাতের কব্জি টেনে ধরে,
~ ভা..ভাই পুলিশ ক্যাস হয়ে যাবে! সবাই দেখছে!
অভি ইলিয়াসকে সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, তৃষ্ণা রক্ত চক্ষু নিয়ে আবিদের দিক ঘুরে তাকাল,
~ ডু ইউ থিংক আই ফাকিং কেয়ার? আবিদ সিরিয়াসলি ডু ইউ থিংক আই ফাকিং কেয়ার এবাউট দেম ? আই ডু নোট কেয়ার, অ্যান্ড ডু নোট গিভ আ ড্যাম এবাউট এনিওয়ান, [ ইলিয়াসের দিক ফিরে, আবারও মারতে চাইলে, ] দি’স মাদার**দ হাউ ডেয়ার হি? সাহস কি করে হয় আমার জিনিসে হাত বাড়ানোর?
~ [ তৃষ্ণার হাত টেনে ধরে ] ভাই, ভাই পারসোনালি হ্যান্ডেল করা যাবে!
~ ফাক ইউর পারসোনাল, কি বলেছিল ও বেলিকে, ডিড ইউ হিয়ার? ডিড ইউ? আমি ওকে ওয়ার্নিং দিয়েছি! আই ফাকিং গেভ হিম মাই ওয়ার্নিং’স ! স্টিল মাদার**দ ঠিক হয় নি! হি ওয়ান্ট টু স্লিপ উইথ মাই ওমেন! মাই ওমেন, [ তৃষ্ণা স্টিক ফেলে দিয়ে, পা দিয়ে ইলিয়াসের মেইন প্লেসে লাত্থি দেয়, ঘুষি মারতে গেলে আবিদ পিছন থেকে টেনে ধরে ! ]

আবির পৌঁছিয়ে দ্রুত ইলিয়াসকে হাসপাতাল পাঠানোর ব্যাবস্থা করে! আয়ুশ আর অভিকেও সাথে পাঠিয়ে দেয়! আবিদ হাতের ইশারায় ভিড় কমিয়ে ফেলে! ধীরে-ধীরে কানাকানি করতে করতে বয়স্ক লোকজন গুলো চলে যাচ্ছে ! গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, সিগারেট টেনে যাচ্ছে তৃষ্ণা! আবির তৃষ্ণার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়,
~ শান্ত হ ! এ-তো রাগলে চলবে হু? রাগ-ক্ষোভকে কন্ট্রোল করা শিখতে হবে তো!
~ র..রাকিব না থাকলে, ও-ই মাদারির বা** বেলিকে টাচ করতো! ভাবতেই আমার শরীর কাঁপছে রাগে!
আবির হালকা হেসে তৃষ্ণাকে জড়িয়ে নেয়,
~ বাড়ি চল! আমি আয়েশাকে রুমে লক করে এসেছি! যেই শুনেছে তুই ফাইট করছিস, এক্সাইটেড হয়ে বলছে, আমি দেখবো, আমি যাবো! অল্প রাস্তা অতিক্রম করতেই, আবারও কল করে বলছে, কি হয়েছে? তৃষ্ণা ঠিক আছে তো? আমার সাথে কথা বলিয়ে দিবেন পোঁছাতেই!
তৃষ্ণা মাথা দুলালো,
~ কল দাও মামীকে,
আবিদ খুকখুক করে হেসে আবিরের দিক তাকিয়ে বলল,
~ মামা তুমি ভাইয়ের মিডেলের কথাগুলো মিস করে গেলা! ভাইয়ের আসল রূপ বেরিয়ে আসে যখন সে রেগে! ” মাই ওমেন ” বলে যাচ্ছিলো!
তৃষ্ণা চোখ উল্টিয়ে ফেলে, আবির হেসে দেয়!
~ চল বাড়ি,
~ না কাজ আছে!
আবিদ দ্রুত মাথা দুলালো,
~ ভাই অনেক রাত হয়েছে! এনি হাউ, তুমি কি বেলিকে…?

ততক্ষনে তৃষ্ণা গাড়ি স্টার্ট করে দিয়েছে!

________________________

পড়ার টেবিলে বসে গনিত করছে বেলি! ইংলিশ কবিতা পড়ছে বাবলু! আনন্দ দুজ’নকে বুঝিয়ে দিচ্ছে! খুশি এশারের নামাজ পড়ে উঠলো মাত্র,
~ হয়েছে, হয়েছে এখন খেতে আয়!
বাবলু এক লাফে উঠে মায়ের পিছনে! আনন্দ চোখ ঘুড়িয়ে উঠে পরলো!

রাত্রি ন’টা বাজছে! উঠানের বিছানায় ঘুমিয়ে বেলি আর বিমান! জানালা দিয়ে অন্ধকারে তাকিয়ে বেলি! চিনচিন আওয়াজ আসছে সেদিক থেকে!
ফোন বাজতেই বিমানের ঘুম ভেঙে গেলো! শীলার নাম্বার দেখে সে রিসিভ করলো,
~ এতো রাত্রে কি শীলা?
বিমানের ঘুম জড়ানো কন্ঠ! ওপাশ থেকে শীলার আওয়াজ,
~ একটু বেলিকে ফোনটা দাও না আপু! আসলে আমি গনিতের হোমওয়ার্ক ভুলে গেছি!
বিমান বেলির দিক ফোন দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো! বেলি ভয়ে কাঁপছে! সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে, ফোন কানে নিয়ে,
~ হ্যাঁ শীলা?
~ তৃষ্ণা ভাই বলল তোকে তোদের বাড়ির পিছনের রাস্তায় যেতে!
বেলি প্রায় কেঁদে দিবে,
~ কিভাবে যাবো? য..যদি কেউ দেখে ফেলে?
~ ধীরে-ধীরে চলে যা! ঘুমাচ্ছে সবাই এখন টের পাবে না!
~ আ..আমাকে মারবে শীলা! আমি যেতাম না!
~ ভাই আমাকে বলতে বলেছে বলেছি! এখন তুই জানিস কি করবি! যাবি নাকি যাবি না ! তুই শুধু কাল স্কুলে আমাকে সব খুলে বলবি মিস্টার হ্যান্ডসাম আর তোর মাঝে কি চলছে! এখন রাখ রিয়াজ ওয়েটিং এ আছে!

শীলা কল কেঁটে দিলো, বেলি হাতে ফোন নিয়ে বসে রইলো! তাঁর শরীর কাঁপছে! এমন দিনও তাঁর দেখার ছিলো?
আধঘন্টা যাবত বেলি ভেবেই চলেছে! এখনও সাহস জোগাতে পারেনি! একবার ভাবলো কাঁথা মুরি দিয়ে ঘুমিয়ে যাবে, যা হবার কাল হবে! আবার মনে পড়লো তৃষ্ণার কথা, এ-ই লোক আবার মারামারি করে নি তো? চিন্তিত বেলি বাড়ির পিছনের গেইট ধীরে খুলে, আবার ভালোভাবে লাগিয়ে দিলো!
ভয়ে হাত-পা ঝিমিয়ে যাচ্ছে! রাত্রির অন্ধকারে চোখ বুঝে আল্লাহর নাম নিয়ে এগিয়ে গেলো !

__________________

গাড়ির সামনে পৌঁছাতেই বেলি থেমে যায়! তৃষ্ণা সিগারেটে লাষ্ট টান দিয়ে ফেলে দেয়! বেলির দিক এগিয়ে যেতে নিলে, বেলি দৌড়ে গাড়ির অন্য সাইডে চলে যায়,
~ আ..আমার কথা শুনুন না আগে!
~ সামনে এসে দাঁড়া!
~ না আপনি মারবেন!
~ না মারব না! চুমু খাব!
~ প্লি..প্লিজ! আগে শুনুন! ও-ই যে শীলা আছে না? ও…ওঁর..
~ কি বলেছি আমি বেলি?
তৃষ্ণার রাগী আওয়াজ শুনে বেলি কেঁদে দেয়,
~ আ..আমি আব্বুকে বলে গিয়েছিলাম তো! স..সত্যি বলছি!
তৃষ্ণা হাত দিয়ে ইশারা করে তাঁর দিক যেতে! বেলি চোখের কোণার পানি মুছে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়! তৃষ্ণার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়াতেই, তৃষ্ণা ডান হাত দিয়ে বেলির গাল চেপে উঁচু করে ধরে,
~ চোখ খুল!
বেলি একটু একটু করে চোখ খুলে,
~ লিসে’ন বেলি! জ্যালাসি ঠেলার মতো মানুষ আমি নই, অন্যথা আমার জ্যালাসিতে তুই পুড়বি!
তোর চাচাতো, মামাতো, কাকাতো যেতো ভাই আছে কারো সাথে ঘুরতে বেরোবে না! আহ্লাদী আলোচনা তো আরো আগে না! বুঝেছিস কি বলেছি? স্কুল, প্রাইভেট আর বাড়ি বাদে আর কোথাও তোর যাওয়া চলবে না! আরেকবার যদি আমি শুনি যে তুই ঘুরতে বেরিয়েছিস, [ বেলি গাল আরেকটু চেপে ধরে, ] তোর মুখ কামড়ে লাল করে ফেলবো! যাতে বেরোতে না পারিস! কানে ঢুকেছে কি বলেছি?
বেলি মাথা দুলালো,
~ ইউস ইওর ওয়ার্ডস !
~ বু..বুঝেছি!

তৃষ্ণার চোখ বেলির মুখে, হাত বেলির গালে স্লাইড করতে লাগলো,
~ ব..বাসায় যেতে হ..হবে! আম..আমি যাই!
~ চুমু খাওয়া বাকি আমার!
বেলি শুকনো ঢোক গিলল,
~ বল কোথায় খাব চুমু? [ তৃষ্ণার ডান হাতের আঙুল বেলির কপাল স্লাইড করে, ] কপালে? [ কপাল থেকে নাকে স্লাইড করে, ] নাকে? [ গালে স্লাইড করে ] গালে? [ ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চেপে দিয়ে ] নাকি ঠোঁটে? বা অন্যকোথাও?
~ ক..কোথাও না?
তৃষ্ণা বাঁকা হাসলো! আঙুল বেলির ঘাড়ে ছুঁয়ে দিয়ে,
~ আচ্ছা, তাহলে আমাকে দে চুমু!
বেলি চোখ বড়সড় করে ফেলে! আড়চোখে তৃষ্ণার দিক তাকাতেই, তৃষ্ণা টুপ করে বেলির গালে চুমু খেয়ে নেয়!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here