অতিরিক্ত চাওয়া পর্ব ৩১

অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৩১|

বাড়িতে ফিরে বেলীর মন ছোট হয়ে রইল। বারবার ভাবতে লাগল আদৌ কি সে তৃষ্ণার পাশে থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে? তৃষ্ণা যেমন হাই স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে চলে, তারও তো তেমন ভাবে চলা উচিৎ। নিজেকে কি একটু গুঁছিয়ে নিবে বেলী? চলার পথে যদি শুনতে না হয়, আকাশ পাতাল তফাৎ। ব্যস, বেলী সিদ্ধান্ত নিলো পরিবর্তন হবার। নিজেকে কিছুটা গুঁছিয়ে নিবে। আরেকটু ম্যাচুরিটি আনবে নিজের মাঝে। এমন বাচ্চামি ভাব তার এখন মানায় না। কারণ সে তো নিজের বয়সী কারও প্রেমে পড়েনি। প্রেমে পড়েছে এমন একজনের যার বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে। এবং সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বেলীর। বেলী সিদ্ধান্ত নিলো আগে নিজেকে কন্ট্রোলে আনবে। স্ট্রং করবে। ইংলিশে কথা বলার প্রেকটিস করবে। ড্রেসিং এ পরিবর্তন আনবে। পড়ালেখায় আরও মনোযোগী হবে।
দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন চলে গেলো। মধ্যেই বাড়িতে রিলেটিভ’স দিয়ে ভরপুর। বিমানের বিয়ের সেই আয়োজন। গ্রামের নানান চাচা-চাচি এসে মাগনার পান খেয়ে চলে যাচ্ছে। বাবাও বেশ বড় ধরনের পানের আলি এনে রেখেছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা আর মানুষ পান খাবে না তা তো হচ্ছে না। এর মধ্যে বেলীর মাথায় পরিবর্তন হবার ভুত এখনও যায় নি। সে ইউটিউব দেখে দেখে বেশ কিছু টিউটোরিয়াল ব্যাবহার করা শুরু করেছে। খুশি মেয়ের এইরূপ দেখে কিছুটা হাসলেন। ভাবলেন হয়তো সামনে বিমানের বিয়ে তাই নিজেকে সুন্দর করার প্রচেষ্টায়। দেখা গেলো বেলী তার লম্বা চুলগুলো সামনে দিয়ে এবং পেছনে থ্রি-স্টেপ করে ফেলল। আগে কোমর পর্যন্ত পড়তো এখন একটু উপরে। কিন্তু বেশি ছোট করেনি। বেলীর সাথে শিলাও চুল কাটলো। কাজিনদের চক্করে পড়ে বেলী বেশ ধুম মার্কেট ও করলো। তার মধ্যে সে বাবার আদেশে ক্লাস টেন এর পুরনো বইগুলো কভার করতে লেগে পড়লো।
সেদিন সন্ধ্যায় বিমান আসলো পেছনের রুমে। হাতে সেলফোন,
— এই নে। তৃষ্ণা।
বেলীর চাচাতো বোন গুলো ফোনটা কেঁড়ে নিলো। এবং দুলাভাই আরও হাবিজাবি আলাপে বিভোর হয়ে পড়লো। এগুলো শুনতে শুনতে বেলী ঘুমিয়েই পড়লো।
গায়ে হলুদের দু’দিন আগে হাওলাদার বাড়ি আসলো অভি আর আবিদ। অভি এসেছে তার শালীদের নিয়ে ঘুরতে যাবে। এবং তাদের কেনাকাটা বা খাওয়ানোর ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করবে। আবিদের এনাউন্সমেন্ট শুনে বেলীর চাচাতো বোনদের তৈরি হওয়ার বেগ যেনো ঝড়ের গতি অবলম্বন করলো। কিন্তু অভির অতি রিকোয়েস্ট ও বিমানকে সাথে দিলেন না আনন্দ। তার কথা হলো আজ বাদে কাল বিয়ে। এখন মেলামেশা বন্ধ থাকুক। অগ্যত শালা -শালিদের নিয়ে চলল অভি আর সাথে আবিদ তো আছেই। আবিদ সে বেশ সবাইকে এন্টারটেইন করছে। বেলীকে অন্যমনস্ক দেখে আবিদ বেলীর মাথায় পেছন থেকে টোকা মারল,
— সুন্দর হলে কেমনে এতো?
— কোথায় সুন্দর হলাম?
— এইযে চেহরা আগের থেকে বেশ লাইট হয়েছে। হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়েছ? কামিজ ও তো নতুন স্টাইলের পড়তেছ। আবার হাই-হিলস। মানে ভাইকে বাদে নতুন কাউকে পটাতে চাচ্ছ নাকি?
— আপনার ভাই আগে ভালোভাবে পটুক। তারপর না অন্যদের ভাববো।
আবিদ রহস্যময় হাসি দিয়ে সামনে চলল। কামারখালির রেস্টুরেন্টে বসলো সবাই। অভি বলে দিল,
— যার যা ইচ্ছে অর্ডার করো।
ব্যস, অভির বলতে দেরি, অথচ ওদের অর্ডার করতে দেরি হয়নি। কিন্তু পড়ে দেখা গেলো তারা মেইনটেইন করে খেয়েছে। না অতিরিক্ত না কম। খাবারের শেষে সবাই আইসক্রিম ও নিলো নিজেদের পছন্দের। তারপর চলল কামারখালি মার্কেটের দিক। বেলী পছন্দের কয়েক জোড়া চুরি কিনে ফেলল। অভির দিক অসহায় হয়ে তাকিয়ে বলল,
— দুলাভাই আমার। আপনার কাছে টাকা আছে তো?
অভি বেলীর কপালে দু’আঙুলের সাহায্যে টোকা মারল।
— তা তোমাকে কে ভাবতে বলছে?
— আমার দায়িত্ব যে। আফটারওল, আমরা রিলেটিভ’স হতে যাচ্ছি।
— থাক, এতো দায়িত্ববান হতে হবেনা। তুমি শুধু আমার ভাইর দায়িত্ব নিভাও, তাহলেই আমি ধন্য।
বেলী চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিক চলল। প্রায় পনেরো মিনিট পর দেখা গেলো তৃষ্ণা গাড়ি নিয়ে হাজির। সে এসেছে বেলীকে একটা থাপ্পড় মারবে সব শক্তি দিয়ে। কিন্তু বেলীর আশপাশ যাওয়ার পূর্বেই চাচাতো বোনদের খপ্পরে পড়তে হলো। সকলের সাথে হাসি বিনিময়ে করতে গিয়ে দেখা গেলো বেলী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দোকানের সামনে। কিছু একটার দরদাম করছে। বেলীর পাশেই এক ছেলে। বেলীর আঁড়চোখে চেক-আউট করছে। এক পর্যায়ে তৃষ্ণা চলল বেলীর দিক। বেলীর পাশে দাঁড়াতেই ছেলেটি দৌঁড়। বেলী তখনও দরদামে লেগে,
— চাচা, এই ওড়না তো ওই দোকানে দুইশো ত্রিশ টাকা মাত্র।
দোকানী বেশ উচ্চকণ্ঠে বলল,
— না গো আফা। একদাম একদম। তিনশো পঞ্চাশ। অন্য দোকানে পাইলে পুরাই নকল। আসল মাল এই দামে কেউই দিবার পারবো না।
বেলী হাতের ওড়না রেখে দিলো। তৃষ্ণা মানিব্যাগ বের করার চেষ্টা করছিল। তার আগেই বেলী তৃষ্ণার হাত টেনে যেতে যেতে বলল,
— ইশ, দুইশো টাকার ওড়না তিনশো টাকা দিয়ে কে কিনবে।
দেখা গেলো কিছুটা যেতেই দোকানী ডাক দিলো।
— আফা আর বিশ টাকা বাড়াইতে পারবেন?
বেলী উচ্চস্বরে বলল,
— একদম দুইশো ত্রিশ।
— আচ্ছা নিয়া যান।
বেলী দ্রুত পায়ে ওড়না নিতে চলল। এদিকে তৃষ্ণা চোখ পিটপিট করে বেলীকেই দেখে যাচ্ছিলো।
ওড়না নিয়ে বেলী যখন ফিরবে তৃষ্ণা সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বেলীর উঁচু জুতার ফলে আজকে তাদের হাইট বেমানান লাগছে। বরং বেলীর তৃষ্ণার বুক পর্যন্ত আয়েশে চলে আসছে। তৃষ্ণা বেলীকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলল,
— হয়েছে কি?
— প্রেমে পড়েছি। তাই নিজেকে পরিবর্তন করছি।
কথাটা বলেই বেলী চলল তার বোনদের দিক৷ তৃষ্ণা কিছুক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। তৃষ্ণার যে বেলীর পরিবর্তন খারাপ লাগছে তা না। কিন্তু সে সাধারণ বেলীটাকে একটু বেশিই পছন্দ করে। কিন্তু সেই সাধারণ বেলী শুধু তার জন্য। চলার পথে তো মানুষকে পরিবর্তন হতেই হয়। এভাবেও আরেকটু ম্যাচুরিটি বাড়লে বেলীর আচরণে আরও পরিবর্তন চলে আসবে। কিন্তু আপাতত সে বেলীর ” প্রেমে পড়েছি ” তাই পরিবর্তন হচ্ছি লাইনের মানে খুঁজছে।
সেখান থেকে সকলকে চৌধুরী বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ডিসিশন নেওয়া হলো। বেলী বেশ শান্ত ভাবে আবিদের গাড়িতে বসেছিলো। কিন্তু তৃষ্ণার বেলীর ডিসিশন তেমন পছন্দ হলো না। সে আবিদের গাড়ি ড্রাইভ করার ডিসিশন নিয়ে ফেলল। অগ্যত, পেছনে বেলীর দুই বোন-ও ছিলো। তারা তৃষ্ণাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে,
— জিজ, রিলেশনশিপ কয়টা করেছেন মোট?
— চার-পাঁচটা হবে।
— মাত্র?
— হ্যাঁ, আমি আবার চুজি ছিলাম।
— ফার্স্টটার নাম কি ছিলো?
— মেবি, স্রাদ্ধা। আর্বিদার ক্লাসমেইট ছিলো। হিন্দু।
বেলী কটমট গলায় বলল,
— আর্বিদার ক্লাসমেইট কেন? আর্বিদার সাথেই রিলেশনটা করতেন। সুন্দর আছে।
গাড়ির ভিতর একদম শান্ত হয়ে গেলো। তৃষ্ণার রাগী কন্ঠ,
— কীসব অদ্ভুত কথা-বার্তা। আমার বোন ওটা। পুরো পরিবারে তখন ওই একটি বোন ছিলো। পড়ে না তৃষা হলো।
বেলী নিজেকে শান্ত করলো। তৃষ্ণা জানলে খবর আছে একদম। তাই সে চুপ মেরে গেলো। কিন্তু তৃষ্ণা থামলো না সে প্রশ্ন করলো,
— এমন অদ্ভুত কথা তুই এভাবে বলবি না। রিজন কি?
বেলী মুখ ভেঙিয়ে বলল,
— হয়েছে। এখন বলুন তারপর কোনটার সাথে গিয়েছিলেন।
পেছনে বেলীর বোনরাও তাল মিলালো। অথচ সেখানে তৃষ্ণার ডাউট থেকে গেলো।

চৌধুরী বাড়িতে তাদের এতো সুন্দর স্বাগতম দেখে বেলীর বোনদের চোখ প্রায় জল চিকচিক করছে। সোফায় বসে বেলী নিজ মনে জুস খেয়ে যাচ্ছে। এদিক-ওদিক কোথাও খেয়াল নেই। বাহির থেকে তৃষা দৌঁড়ে হাজির,
— আপু, আমার রুমে আসো তোমায় ড্রেস দেখাব।
বেলীও চলল। যাওয়ার সময় বেলী আর্বিদা নামের মেয়েটিকে আবার দেখল। কিন্তু এইবার বেলীর মন ছোট হয়নি। সে বেশ শান্ত ভাবে গেলো। দেখা গেলো ড্রেস দেখার এক পর্যায়ে আর্বিদা তৃষার রুমে হাজির হলো। তৃষা বলল,
— আর্বিদা আপু, এই ড্রেস ভাবীকে মানাবেনা বলো?
— ভাবী কে?
— আররে তুমি তো দেখছি কিছুই জানো না। এই যে বেলী আপু। আমার ছোট ভাবী।
বেলী মিষ্টি হেসে তৃষার গাল টেনে দিলো। আর্বিদা কঠিন স্বরে বলল,
— এখনও হয়নি বিয়ে।
বেলী মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো,
— আজ হোক বা কাল। একসময় তো হবেই। আগে থেকে প্রেকটিস করে রাখা ভালো। রিলেশনশিপ স্ট্রোং থাকে।
— ওভারকনফিড্যান্ট ইজ ন’ট দ্যাট গুড।
— বাট, আউ লাভ ইট।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here