অদ্ভুত মুগ্ধতা -২ পর্ব ৭

অদ্ভুত মুগ্ধতা -২
পর্ব ৭
মিশু মনি
.
মিশু ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখলো মৈত্রী জানালার কাছে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
মিশু এগিয়ে গিয়ে বলল, কি দেখছেন?
– “বাইরের পরিবেশ টা অনেক সতেজ দেখো?”
-” আর আমি?”
মৈত্রী চমকে উঠলো মিশুর প্রশ্নে। পিছন ফিরে মিশুর দিকে তাকালো। মিশুকে শাড়িতে সত্যিই যে বড় বড় লাগছে তা নয়, ওর কথা শুনেও মনেহচ্ছে মিশু আর আগের মিশুটি নেই।
মিশু একটু এগিয়ে এসে বলল, “আচ্ছা আমি দেখতে কি খারাপ?”
– “না তো।খারাপ কে বলল?”
– “কেউ তো কখনো ভালোও বললো না।”
– “মানে!”
– “কখনো কি বলেছো মিশু তুমি খুব মিষ্টি দেখতে, তোমার চোখ দুটো খুব মায়াবী, তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর, এভাবে বলেছ কোনোদিনো?”
মৈত্রীর চোখের পলক পড়ছে না। ও বিস্ময়ে কথাই বলতে পারছে না। মিশু একরাতে হঠাৎ করে এমন বদলে গেলো যা দেখলে অবাক হতেই হচ্ছে। এর মাঝে কোনো রহস্য আছে কি? গত রাতেই মেয়েটা কত অবুঝ ছিলো! আজ এমন চেঞ্জ! কিসের প্রভাব এটা?
মিশু বলল, “শুধু দেখলে হবে? বলতে হবেনা আমি কেমন সুন্দর?”
মৈত্রী বিস্ময় লুকিয়ে বললো, “অনেক সুন্দর”
– “এটা হলো কিছু?”
– “তাহলে?”
– “এমন ভাবে বলো যেন আমার মনোরঞ্জন হয়।”
মৈত্রী এবারে হাসা শুরু করলো। সেই হাসি যেন আর থামতেই চায়না। হাসতে হাসতে মাটিতে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। কিছু বুঝে উঠার আগেই মিশু একটা ধাক্কা দিয়ে ওকে বিছানায় ফেলে দিলো। তারপর এগিয়ে এসে বিছানায় উঠে একদম মৈত্রীর বুকের উপর গিয়ে বসলো। এবারে মৈত্রীর হাসি একদম বন্ধ হয়ে গেছে। বুকটা ঢিপঢিপ শব্দ করছে যে! কি যে করে এই মেয়েটা। এত দ্রুত এত বড় হয়ে যাওয়াটা কিন্তু মোটেও ভালো নয়। কিন্তু মেয়েটাকে কিছু বলাও যায়না।
ও কিছু বলার আগেই মিশু দুহাতে মৈত্রীর মুখটা ধরে ফেললো। মৈত্রীর চোখের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বড় হয়ে গেলো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো হঠাৎ করেই। মিশু একটু নিচু হয়ে মৈত্রীর চোখে চোখ রেখে বলল, “তোমার চোখ গুলো খুব সুন্দর!”
– “চোখ গুলো? কয়টা চোখ আমার?”
– “দুইটা। দারুণ লাগে আমার। আর তোমার ঠোট দুটো ও খুব সুন্দর।”
– “কিহ!”
মৈত্রীর হার্টবিট আরো বেড়ে গেলো। মিশু আরেকটু এগিয়ে এসে ওর নাকের সাথে নাক লাগিয়ে মাথাটা দুদিকে ঝাঁকাল। মৈত্রীর এমন অবস্থা যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। আর এদিকে হার্টবিট বাড়তে বাড়তে মনে হচ্ছে আরেকটু বাড়লেই হার্ট ফেটে যাবে। কি যে পাগলামি করছে মিশুটা! মৈত্রী ভয়েই চোখ বন্ধ করে ফেললো।
এমন সময় ম্যানেজারের গলা শুনতে পাওয়া গেলো। সে বাইরে দাঁড়িয়ে ডাকছে। ভাগ্যিস লোকটা ভদ্রতা বোঝে। নয়ত সোজা রুমে চলে আসলে কি যে ভাবতো কে জানে!
মিশু উঠে দাঁড়াতেই মৈত্রী বাইরে বেড়িয়ে গেলো। তারপর ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে বলতে বারান্দা থেকে নেমে একটু দূরে চলে গেছে। মিশু মুখ বাঁকা করে কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর এসে ফোনটা নিয়ে কি যেন দেখতে লাগলো।
মৈত্রীর কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখল মিশু ফোনে কি যেন করছে। ও বলল, “রেডি? চলো বাইরে একটু বাগান টা ঘুরে দেখি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাস্তা চলে আসবে।”
– “নাস্তা আসা অব্দি আমরা ঘরেই থাকিনা।”
– “বাসায় যেতে হবে তো। বাইরেটা ঘুরে ঘুরে দেখবা না?”
– “না, আমি তোমাকে দেখবো।”
মৈত্রী এক পলক মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে দেখছো ই তো সবসময়।”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



– “না, এভাবে না।”
– “তাহলে?”
– “এতক্ষণ যেভাবে দেখছিলাম,সেভাবে দেখবো। অনেক্ষণ দেখবো”
মৈত্রীর রক্তে তরঙ্গ বেড়ে গেছে বোধহয়। ও আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না। সোজা বাইরে বেড়িয়ে গেলো। যাওয়ার সময় বারান্দা থেকেই বলল,”মিশু বাইরে এসো,ভালো লাগবে।”
মিশু মুখটা বাঁকা করে কি যেন বলল বিড়বিড় করে। তারপর আবারো মোবাইল নিয়ে টিপতে টিপতে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।
মৈত্রীর কাছে গিয়ে বললো, “আপনি একটা খুব খারাপ।”
– “আমি আবার কি খারাপ কাজ করলাম?”
– “বারে, নুহাশে যে বৃক্ষঘর আছে সেটায় উঠতে বলেছিলেন একবার ও? আমিতো ভেবেছিলাম ওই গাছে উঠে ঘরটাতে বসে আপনাকে গান শোনাবো। কিন্তু আপনি একবার ও মনে করিয়ে দিলেন না।”
– “তুমি তো কয়েকবার ওই গাছের নিচে গেছো। না উঠলে আমি কি করবো?”
– “আপনি একবার উঠতে বলবেন না? বললেই উঠতাম।”
– “যাক বাবা। আমি কি জানি তুমি ওখানে উঠবে? ভাবলাম হয়ত ইচ্ছে করেনি তাই ওঠোনি। তুমিতো সারাদিন হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কবরের কাছে গিয়ে বসেছিলে।”
মিশু একটু কি যেন ভাবলো। তারপর বলল, “চলুন আরেকবার যাই?”
– “আজই?”
– “হ্যা, আজই।”
– “আজ আমাকে বিকেলে চেম্বারে বসতে হবে। আট জন পেশেন্ট কে আজ বিকেলে আসতে বলেছি।”
মিশু মুখটা কালো করে বলল,”ধেৎ ভাল্লাগেনা।”
বলেই মিশু মুখটা বাঁকা করে ফেললো। তারপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আবারো ঘরের ভিতর চলে গেলো।মৈত্রী হা করে চেয়ে রইলো দরজার দিকে। মেয়েটার কি হলো হঠাৎ করে? কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা!

মর্ম ও মুগ্ধতা একসাথে নাস্তা করে নিলো। এরপর মর্ম ওর কাজের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলতে লাগলো রিকু ভাইয়ার সাথে। মুগ্ধতা অবাক হয়ে সেগুলো শুনছে!
মর্ম’র যে শর্টফিল্মটা ফেস্টিভ্যালে ফার্স্ট হয়েছে,সেটা নির্মানে ব্যয় হয়েছিলো সর্বমোট ৯০ হাজার টাকা। অথচ এরই মধ্যে দুই লাখ টাকা এসে গেছে! এত বেশি লাভজনক ব্যবসা! কিন্তু মর্ম’র ফিল্মের প্রডিউসার ছিলো ওর বোন তানিন। যে কিনা নিজেই অভিনয় করেছে সেই ফিল্মটাতে। পুরো ব্যাপার টা বেশ বিস্ময়কর লাগছে মুগ্ধতার কাছে! বাবার লেখা গল্পের ফিল্ম বানালো তার ছেলে, তাতে অভিনয় করেছে ওনার মেয়ে, আর প্রডিউসার ও মেয়ে নিজেই। সবকিছু কেমন যেন অদ্ভুত রকমের সুন্দর! ওদের পরিবারের সবাই বোধহয় খুব ভালো। তানিনকে দেখার জন্য ছটফট করতে লাগলো মুগ্ধতা।
সব কথা শেষ হলে রিকু ভাইয়া বাইরে চলে গেলো। মর্ম মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলল,”কি ভাবছেন ম্যাডাম?”
– “আপনার ফ্যামিলির সবাই ক্রিয়েটিভ মানুষ তাইনা?”
– “বলা চলে, একটু আধটু সবাই জিনিয়াস,আমি ছাড়া।”
– “আপনি তো গ্রেট জিনিয়াস। নয়ত অতবড় ফেস্টিভ্যালে কেউ ফার্স্ট হয়?”
মর্ম হেসে বলল, “তানিন অনেক হেল্প করেছে। ও খুব ভালো আর্টিস্ট।”
– “তা তো জানি। আপনার মা কেমন মানুষ?”
মর্ম একটু নড়েচড়ে বসলো। তারপর বলতে আরম্ভ করলো, “আমার আম্মু খুবই ইন্টারেস্টিং একটা মহিলা। আব্বুকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ভালো মানুষ ভাবে আর বেশি ভালো ও বাসে। আম্মুর সাথে আমার বড় ভাবি মিশুর খুবই মিল। মিশুও মনেকরে দুনিয়ায় সবচেয়ে ভালো মানুষ টা হচ্ছে তার বর মৈত্রী আর মৈত্রী ভাইয়াকে ও খুবই ভালবাসে। আমার ছোট ভাই মাত্রার ও সেইম কেস। ওর বউ খুজিন্তাও একটা অদ্ভুত ক্যারেক্টার।”
মুগ্ধতা অবাক হয়ে বলল,”সত্যিই বড্ড অদ্ভুত লাগছে শুনে।অদ্ভুত রকমের মুগ্ধতা! এত ভালো আর সুন্দর ফ্যামিলির সবাই হয় কি করে! আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে সবাইকে।”
– “একদিন আমাদের বাসায় বেড়াতে যাবেন, দাওয়াত রইলো।”
– “নিয়ে যাবেন আমায়?”
– ” আচ্ছা, নিয়ে যাবো।”
মর্ম একটু হাসলো। মর্মকে অবাক করে দিয়ে মুগ্ধতা বলল, “আমি যদি আপনার এসিসট্যান্ট হতে চাই,রাখবেন?”
প্রস্তাবটা অবাক হওয়ার মতই ছিলো। সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষের এসিসট্যান্ট হতে চাইছে! এও সম্ভব!
মর্ম বলল, “এসিসট্যান্ট ডিরেক্টর হওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?”
– “আপনাকে দেখে ইচ্ছে জাগছে। কিন্তু আমিতো ওসব কিছুই বুঝিনা।”
– “বুঝিয়ে দিতে পারি। কিন্তু এই পেশাটা ভালো নয় ম্যাম।”
– “কেন?”
মর্ম বলল, “ফিল্ম মেকারদের পারসোনাল লাইফ বলতে কিছু থাকেনা। এরা নিজের সবটুকু দিয়ে একটা ফিল্ম বানায়। সব আবেগ, সব প্রচেষ্টা সবই ফিল্মের মাঝে ঢেলে দেয়। এদের ব্যক্তিগত লাইফে শুধু অশান্তি হয় বুঝলেন? বউরা সময় পায়না, বাচ্চারা আদর পায়না আরো কত কি। এদের সংসার ও ভাঙে বেশি।বউ ভূল বুঝে ছেড়ে চলে যায়।”
– “আরে আমিতো ডিরেক্টর হবোনা। এমনি ই আপনার সাথে সাথে থাকবো।”
– ” হা হা, আচ্ছা এমনি ই সাথে সাথে থাকুন।খুশি তো?”
– “স্যালারি দেবেন না?”
– “তা দিবো, যেহেতু এসিসট্যান্ট আমার! হা হা হা।”
মুগ্ধতা মুগ্ধ হয়ে মর্ম’র হাসির দিকে চেয়ে আছে। ছেলেটা এত ভালো কেন?
মিশু বাংলোর বাইরে একা একা হাটছে। মৈত্রীর সাথে রাগ করে আছে ভীষণ। রাগের কারণ টা মৈত্রী ধরতে পারছে না। মেয়েটা এমন অদ্ভুত যে কিছুই বোঝা যায়না ওকে দেখে! কিন্তু এর মধ্যে কি এমন ঘটলো যে মিশু একদম পুরোপুরি বদলে গেলো? সেই সকাল থেকেই মেয়েটা ফোন টিপছে। হতে পারে ফোনে কারো সাথে চ্যাটিং করছে আর সেই মানুষ টা এসব ব্যাপার ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটাই হবে, হানড্রেড পারসেন্ট শিওর। কারণ মিশু এতটাই ইনোসেন্ট আর বাচ্চা টাইপের মেয়ে, যে এসব রোমান্টিকতার ধারে কাছেও ঘেষেনা আর সেই মেয়ে কিনা রাতে এসে মৈত্রীর পাশে শুয়ে পড়েছে আবার সকাল থেকেই অদ্ভুত আচরণ করছে!
মৈত্রী এক পা এক পা করে এগোতে লাগলো। মিশু এখনো ফোন টিপে চলেছে। কিন্তু ওপাশের মানুষ টা কে হতে পারে? ওর কোনো বান্ধবী? সেটা হবার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ বান্ধবী রাই এসব কুবুদ্ধি দেয় সবসময়।
এমন সময় হঠাৎ মিশুর দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেলো মৈত্রীর! একি কান্ড! এসব আবার কি?
একইসাথে হাসি আর মুগ্ধতা দুটোই চেপে বসলো মৈত্রীর চোখে মুখে!
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here