অদ্ভুত সুখানুভুতি পর্ব ১

একপ্রকার জোর করেই রোজকে বিয়ে করেছে মেঘ। আশ্রম থেকে তুলে এনে ঘুমের মেডিসিন খাইয়ে টলতে টলতে সামনের মানুষটিকে ভয় পেয়ে কবুল বলাটা নিশ্চই মনের বিয়ে না.? বিয়ে বলতে সবাই বুঝি দুটি মনের মিলন দুটি পরিবারের মিলন। কিন্তু এখানে না আছে রোজের পরিবার না আছে বিয়েতে রোজের মত।

বাসর ঘরে রোজকে বসিয়ে দিয়ে চলে যায় কুহু। কিন্তু স্লিপিং পিলের ডোজের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে রোজ।

ঘুমের মধ্যে ঠিক ঠোট বরাবর কারোর গরম নিঃশ্বাসের ছোঁয়া অনুভব করে তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে তাকালো রোজ। চাঁদের আবছা আলোয় সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে কেঁপে উঠলো ও। ততক্ষনে মেঘের হাত রোজের শাড়ির আচলে চলে গেছে। মেঘ রোজের কাধ থেকে আঁচল টেনে সড়িয়ে ফেললো। ভয়ে রোজের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মুখ থেকে একটা কথাও বের হচ্ছে না। মেঘ রোজের ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে লিপস্টিক মুছে ফেললো। রোজের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আর মেঘ ক্রমশ রোজের ঠোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

মেঘ : একদম কাঁদবে না। তাহলে তোমার সাথে কি হবে তা আমিও বলতে পারছি না।

রোজ : কেন করছেন এমন.? আমি কি করেছি আপনার। কেন জোর করে বিয়ে করলেন আমায়। আমাকে যেতে দিন। আমি অনাথআশ্রমে ফিরে যেতে চাই।

মেঘ : চুপপপপপ। কোনো কথা না। তোমার কান্না দেখার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করিনি।

রোজ : আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না। আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করি নি। কেন আমার পেছনে পড়ে আছেন

মেঘ : আমার জীবনের সব থেকে বড় ক্ষতিটা তুই করেছিস। আর আজ থেকে সে ক্ষতির হিসাব মেটানোর জন্য তৈরি হ। ( কেন রোজ কেন এমন করলে,, প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলে তাইনা.? তাহলে প্রতিশোধের বিনিময়ে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিলে কেন.? )

রোজ : দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এখান থেকে যেতে চাই।

কথাটা শুনতেই মেঘ মাথায় রাগ উঠে যায়। মেঘ এক হাতে রোজের গাল চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে রোজের শাড়ির কুচি খুলতে লাগলো। কাঁদার জন্য রোজের নাকমুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে সেদিকে মেঘের হুশ নেই। মেঘ রোজের ঠোট নিজের ঠোটের সাথে মিলিয়ে দিলো,, রোজ বারবার মাথা নাড়াতে লাগলো,, মেঘ রেগে রোজের চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে রোজের ঠোটের ওপর নিজের সমস্ত রাগ ঝারতে লাগলো। ব্যাথায় রোজের ঠোটের অবস্থা বেহাল হয়ে গেছে। রোজ না পেরে কান্না থামিয়ে চোখমুখ শক্ত করে একদৃষ্টে মেঘের দিকে চেয়ে রইলো। মেঘের প্রতিটা স্পর্শে তিক্ততা আর তীব্র রাগ অনুভূত হচ্ছে রোজের। রোজ চুপ করে শুয়ে আছে আর মেঘের অত্যাচার সহ্য করছে।

রোজের চোখ এখনো মেঘের চোখের দিকে। এতো রাগ এতো কষ্টের মাঝেও কোথাও একটা কিছু আছে যা রোজ বুঝতে পারছে না। কি হতে পারে সেটা..? জানার অপেক্ষাতে আছে রোজ।

রোজ : এবার রেহাই দেন। আর কতো কামড়াবেন.? আমাকে কি আপনার বার্গার মনে হচ্ছে.?

আগের রোজের মতো ঠোট উল্টিয়ে কথা বলা শুনে মেঘ ছলছল চোখে রোজের দিকে তাকালো। রোজ আগের মতোই ঠোট উল্টে কাঁদছে। মেঘের নিজেকে আজ একটা পশুর সমতুল্য মনে হচ্ছে । যে রোজের গায়ে কখনো কোনো ফুলের টোকা অবধি লাগতে দেয় নি তাকে আজ তাকেই এতো কষ্ট দিলো ও। মেঘ উঠে দেওয়ালে জোরে একটা ঘুসি দিলো। রোজ আবারও ভয়ে কেঁপে উঠলো। মেঘ রোজের শাড়ি সোফায় উঠিয়ে রেখে একটা থ্রিপিচ বের করে রোজের পাশে রেখে ব্যালকনিতে চলে গেলো ।

রোজ অনেক কষ্টে উঠে বসে থ্রিপিচটা হাতে নিলো। তারপর খাট থেকে নিচে পা রাখলো। উঠে দুকদম হাটতেই ব্যাথায় ধপ করে নিচে পড়ে গেলো। শব্দ পেয়ে মেঘ ছুটে আসলো রুমে । আর রোজকে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে অন্যদিকে তাকালো ।

মেঘ : তোমার পা কাটা। বিছানার ওপর থেকেই চেঞ্জ করো। আমি ব্যালকোনিতে যাচ্ছি। আর ভয় পাওয়ার দরকার নাই,, তোমাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না আমি।

কথা শেষ হতেই ব্যালকোনিতে চলে গেলো মেঘ। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোয়া উড়াতে লাগলো আপনমনে। রোজ চেঞ্জ করে ব্যালকোনির দিকে একবার উকি দিয়ে দেখলো মেঘ কি করছে তারপর ব্লাংকেট গলা অবধি উঠিয়ে শুয়ে পড়লো।

রাতে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে রোজের। মেঘ তখনো ব্যালকোনিতে। রোজের গোঙ্গানির হালকা আওয়াজ কানে যেতেই ধরফরিয়ে ওঠে মেঘ। রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে,, রোজের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে,, রোজের মুখের দিকে তাকালো। কাঁপা কাঁপা ঠোট জোড়া নীলচে রং ধারন করেছে। মেঘ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে রোজের পাশে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত রাখলো।

মেঘ : জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে। আলিজাকে ডাকবো.? রোজকে এভাবে দেখলে ও কষ্ট পাবে না তো.? ওর সারা শরীরে ভেজা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করা প্রয়োজন,, কি করবো.? জ্বরের মেডিসিন খাওয়াবো.? ওর তো এন্টিকায়োটিক লাগে সবসময়। খালি পেটে তো কিছু করাও যাবে না।

মেঘ উঠে নিচে চলে গেলো।
মেঘ : মামনি,, মামনি দরজা খোলো।

মোহনা : কি হয়েছে মেঘ রোজ ঠিক আছে.?
মেঘ : আসলে ওর জ্বর। একটু কিছু বানিয়ে দাও ওকে খাওয়াতে হবে।

মোহনা : তুই আবার ওর সাথে বাজে কিছু করেছিস.? সকালে ওকে মেরেও তোর শান্তি হয়নি.? মেয়েটাকে কি শেষ করে ফেলবি.? ও মরলে তুই খুশি হবি তো.?

মেঘ : মামনি,,,
মোহনা : তুই তো এমন ছিলি না মেঘ। কেন এমন হয়ে গেলি। সকালে লাঠি দিয়ে কিভাবে মেয়েটার পায়ে বারি দিলি কেটে রক্ত বেরিয়ে গেছে। এবার ওকে রেহাই দে। একটু দয়া কর আমাদের ওপর।

মেঘ : মামনি সুপ বানিয়ে দাও। নাহলে কিন্তু ও আরো শাস্তি পাবে।

মোহনা আর কথা না বাড়িয়ে সুপ বানিয়ে দিলো। মেঘ সুপ নিয়ে সোজা উপরে চলে আসে। মোহনা শুধু চেয়ে চেয়ে ছেলের এমন পাগলামি দেখতে থাকে। সহ্য করতে থাকে এতোদিনের কষ্ট। মেঘ উপরে এসে রোজকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর একটু একটু করে রোজের মুখে সুপ দিতে লাগলো। কিন্তু রোজ কিছুই গিলছে না।

মেঘ : রোজ খেয়ে নাও।
রোজ : আমি বাড়ি যাবো। থাকবো না এখানে। আমাকে যেতে দাও তোমরা। এখানে ভালো লাগে না আমার। ( বিরবির করে বলছে রোজ। )

মেঘ : বুঝেছি এভাবে কাজ হবে। তুমি আমাকে বাধ্য করলে অন্য উপায় ব্যাবহার করার জন্য।

মেঘ সুপ নিজের মুখে পুরে নিলো। তারপর রোজের গাল চেপে ধরে রোজের মুখের সাথে নিজের মুখ মিশিয়ে সবটা ওর মুখে দিয়ে দিলো। রোজও উপায় না দেখে গিলে ফেললো।

রোজ : খাবো না আমি। তোমরা খারাপ,, অনেক খারাপ।
মেঘ : দেখো রোজ আমার মাথা গরম করো না। শুধু শুধু কষ্ট পাবে। আমি কিন্তু

রোজ : এভাবে কষ্ট না দিয়ে একেবারে মেরে ফেলো আমাকে। আমার পা কেটে দিসো গায়ে কামড় দিসো এতেও শান্তি পাওনি.? ঠিক আছে মরার মতো কোনো জিনিস এনে দাও আমি একাই নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি।

মেঘ রেগে রোজের গালে ঠাসস করে চর মারলো। রোজ ঘুমের ঘোরে চিল্লিয়ে কেঁদে উঠলো।

রোজ : আমাকে আবার মারছো কেন.? আমি তো কিছু করিনি। আমাকে মেরো না। আমি মরে গেলে আমার বুবুনের খুনিদের মারবো কিভাবে,,

কথাটা শুনতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো মেঘ। রোজের কি সব মনে পড়ে গেলো.? মেঘ রোজের কাছে গিয়ে ওর মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলো।

মেঘ : রোজ তোমার সব মনে পড়ে গেছে.? তুমি মনে করতে পারছো আমাকে.? আমি মেঘ তোমার মেঘরোদ্দুর। মনে পড়ছে,?

আবার সেন্সলেস হয়ে গেলো রোজ। মেঘ অস্থির হয়ে ঘরের ভেতর পাইচারি করতে লাগলো। মেঘের রুমের আলোতে আলিজার ঘুম ভেঙে যায়। আলিজা উঠে মেঘের রুমে আসে।

আলিজা : ভাইয়া ? এভাবে হাটছো কেন.? কি হয়েছে.? রোজ ঠিক আছে তো.?

মেঘ : তুমি আবার এ অবস্থায় আসতে গেলে কেন.? তুমি ঘুমাতে যাও আলিজা।

আলিজা : আবার মেরেছো রোজকে.?

মেঘ : নাহহ। আচ্ছা আলিজা আমি হিংস্র পশু হয়ে গেছি তাইনা.? রোজকে মারি, কাটি, রাগারাগি করি। আগে তো এমন ছিলাম না । ভালোবাসতেও জানতাম না রোজ কেন এসেছিলো আমার জীবনে.? কেন বদলে দিলো আমার পৃথিবি। আমি তো ওকে ভালোবাসতে চাই,, ওকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই তাহলে ও বারবার আমার থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে কেন.? কেন ছেড়ে যেতে চায় আমাকে। আমি কি অনেক খারাপ.? ও এসব বলে দেখেই তো আমি ওকে শাস্তি দেই।। ওর তো সবাইকে মনে পড়ছে আমাকে কেন মনে পড়ছে না.? কেন চিনতে পারছে না ওর মেঘরোদ্দুরকে ।

আলিজা : বুঝলি আদ্র তোর চাচ্চু তোর মিমির প্রেমে একেবারেই পাগল হয়ে গেছে। তাই বিলাপ বকছে,, কি বললি,,

মেঘ : কি বলছে আমাদের চ্যাম্প.?
আলিজা : তোমাদের চ্যাম্প বলছে তার মিমি খুব তাড়াতাড়ি তার চাচ্চুকে চিনতে পারবে আর অনেক অনেক ভালোবাসবে। পেটের ভেতর থাকতেই এতো দুষ্টু বাইরে আসলে না জানি কি হয়।

মেঘ : ও ওর চাচ্চুর মতো হবে
আলিজা : মোটেই না। ও আরাভের মতোই হবে । তোমার মতো হলে মানুষ আমাকে সন্দেহ করবে না.?

মেঘ : আচ্ছা ঠিক আছে। তবে এখন তুমি যাও, গিয়ে ঘুমাও। লাস্ট স্টেইজে এভাবে ঘোরাঘুরি করা ঠিক না। আর আরাভ তোমাকে দেখতে না পেলে টেনশন করবে,, জানোই তো পৃথিবির সর্বশ্রেষ্ঠ বাবা হতে চায় ও। তবে প্রতিবারের মতো এবারেও ও আমার কাছে হারবে।

আলিজা : তাই বলে আমার পিচ্চি বোনটার সাথে এখন কিছু করো না। সুস্থ হোক আগে। সারাটাজীবন তো পড়েই আছে। অনেক রোম্যান্স করার সুযোগ পাবে।

মেঘ : আগে চিনতে পারুক আমাকে,, তারপর অন্যকিছু আশা করবো। তোমার বোন তো আমাকে কখনো শান্তিতে থাকতে দেখতে পারে না। সুখি হতে দিতে চায়না।

আলিজা : সাবধানে রেখো ওকে। ওর খিঁচুনি ওঠা স্বভাব ছিলো । যদিও এখন নেই তবুও দেখে রেখো।

আলিজা চলে যেতেই মেঘ দরজা বন্ধ করে দিলো। রোজের পাশে শুয়ে রোজের ক্ষত স্থানে অবিরত ঠোটের স্পর্শ দিতে লাগলো। রোজের পায়ের ব্যান্ডেজ চেন্জ করে দিলো। পেটে মলম লাগিয়ে দিলো। কিন্তু ঠোটে কি এই মলম দেওয়া যাবে.? মেঘ রোজের ঠোটে আঙ্গুল বুলাতে লাগলো ।

রোজ : আস্তে দাও।ভালো লাগছে,, আর শীত করছে তো ব্লাংকেট দাও।

মেঘ রোজকে বুকে টেনে নিয়ে ব্লাংকেট দিয়ে মুড়িয়ে দিলো,, রোজের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে। বাচ্চারা যেমন ঘুমের ঘোরে হাসে রোজও তেমন হাসছে।

রোজ : থোতে দাও।
মুচকি হেসে রোজের ঠোটে নিজের ঠোট বুলাতে লাগলো,, রোজ মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবার পাড়ি জমালো ঘুমের রাজ্যে।

চলবে.?

#অদ্ভুত_সুখানুভূতি
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here