অদ্ভুত সুখানুভূতি পর্ব ৯

#অদ্ভুত_সুখানুভূতি
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_০৯

রোজের রুমের বাইরে ঘেরাও করে দাড়িয়ে আছে মেঘসৈণ্য। আর রুমের ভেতর থেকে লক করে বসে চুইংগাম চিবোচ্ছে রোজ।

নিভি : রোজ দরজা খোল। আমাদের অন্ততো ঢুকতে দে।

মেঘ : রোজ দরজা খোলো নাহলে কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো।

নীলয় : রোজ দরজা খোল না রে।

আলিজা : বোন দরজা খোল।

মেঘ : এভাবে হবে না। দেখি সড়ো। রোজ লাস্টবারের মতো বলছি দরজা খোলো।

কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মেঘ দরজায় জোরে লাথি দিলো। কয়েকটা লাথি দিতেই ভেতর থেকে ছিটকিনি খুলে যায়। সবার ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে রোজ আরামসে বালিশ জরিয়ে ঘুমাচ্ছে। মেঘ রেগে রোজের মুখের ওপর পানি ঢেলে দেয়। রোজ চোখ মেলে একবার তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।

আরাভ : এটা কি হলো..?? ও এতো ঘুমাচ্ছে কেন..?? এতোক্ষন ধরে ডাকাডাকি করলাম তবুও তাকালো না।

আলিজা : স্লিপিং পিল খেয়েছে মনে হয়। সমস্যা নাই ও মাঝে মাঝেই ঘুমানোর জন্য মেডিসিন নেয়। তোমরা যাও আমি আছি ওর কাছে।

মেঘ : আমি থাকছি।

হঠাৎ আলিজার ফোনে টুং করে একটা ম্যাসেজ আসে। ম্যাসেজটা পড়তেই ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
” মেহেক মারা গেছে। ওদের সবাইকে নিয়ে বাড়ি আয় আলিজা ” সম্রাট।

আলিজা : নীলয়

নীলয় : জি আপু। কি বলবা.?

আলিজা : তোমরা তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়ি যাও দাভাই ডাকছে। ( মেহেক আপু আর নেই রে ভাই। এটা তোকে বলা আমার পক্ষে সম্ভব না।)

নীলয় : কিন্তু রোজ..??

আলিজা : আমি আছি তো। ওখানে তোমার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তুমি তাড়াতাড়ি যাও। প্লিজজজ।

বিকালে রোজের ঘুম ভাঙতেই রোজ নিজের পাশে আলিজাকে বসে থাকতে দেখে। রোজ স্বাভাবিক ভাবেই উঠে পানি খেয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো।

রোজ : আপিলা.? উঠে পড়েছো..? এখানে কেন তুমি.?

আলিজা : বোন,,, বোন

রোজ : হ্যা বলো… কি হয়েছে..?

আলিজা : মেহেক আপু মারা গেছে… এক্সিডেন্টে। একটু আগে কবর দেওয়া হয়েঝে।

রোজ : কিহ..?? তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন.? নীলয় কোথায়..? ঠিক আছে ও। আরে বসে আছো কেন.? চলো। যেতে হবে তো।

আলিজা : মেহেক আপু সুমি আপুর জন্য নিজের জীবন দিয়েছে।

রোজ : কিহহ.? ( অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো )

আলিজা সম্রাটের বলা প্রতিটা কথা রোজকে বলে। রোজ সবটা শুনে খাটের ওপর বসে পড়ে।

রোজ : এমন একটা ভুল মেহেক আপি কিভাবে করলো। আর কাউকে না হোক আমাকে তো বলতে পারতো। নীলয়ের কি অবস্থা.? আপিলা তুমি আসো আমি গাড়ি বের করছি।



চৌধুরি মহল
নীলয়ের পাশে দাড়িয়ে আছে নিভি। নীলয় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে। ওদিকে সুমির কি অবস্থা জানার উপায় নেই সম্রাটের। রোজ এসে নীলয়ের পাশে বসতেই নীলয় রোজকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।রোজ নীলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নিভির দিকে তাকালো।

নিভি : তখন থেকে কাঁদছে। কিচ্ছু খায়নি কারোর কথা শুনছে না। তোর কথা বললাম তবুও শুনলো না। ও এভাবে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে। আমার কথাটাও ভাবছে না। এতো কাঁদলে কি আপু ফিরে আসবে.? আমাদের কথা কি একটুও ভাববে না.?

রোজ চোখ বড় করে তাকাতেই নিভি চুপ হয়ে যায়। রোজ নীলয়ের থেকে একটু দুরে বসে সবাইকে বাইরে যেতে বললো।

রোজ : নিভি তোরা মানে.?

নিভি : আমরা মানে আমরা সবাই

রোজ : তোদের চেহারা দেখেই তোদের না বলা কথা বুঝতে পারে এই রোজ। নীলয় সত্যি করে বল তোরা কি কখনো ঘনিষ্ঠ.?

নীলয় রোজের কথা শুনেই মাথা নিচু করে ফেলে। নিভিও ভয়ে দেওয়ালের সাথে সেটে যায়। রোজ নীলয়ের কলার টেনে উপরে উঠিয়ে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চর দেয়। নিভি দৌড়ে এসে রোজের হাত চেপে ধরে।

নিভি : ওকে মারিস না। আমাদের দুজনেরই ভুল ও একা কিছু করেনি। সেদিন ভুলবশত আমরা এক হয়ে গিয়েছিলাম।

রোজ : ব্যাসসসস। আর কোনো কথা না। তোদের ভুলের মাশুল কি তোদের অনাগত বাচ্চা দিবে.? কি করেছিস তোরা.? তোরা কি ভুলে গেছিস তোরা অবিবাহিত.? তোদের কারোর জীবনই এখনো গোছানো হয়নি আর তোরা আরেকজন কে পৃথিবিতে আনতে যাচ্ছিস.?

নিভি : ভুল করে

রোজ : রেডি হ মিলাদের পরের দিনই তোদের বিয়ে। আর নীলয় এখন থেকে শুধু নিজের কথা না ভেবে ওদের কথাও ভাবতে শুরু কর। ওদের সব দায়িত্ব এখন তোর। এটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে।

রোজ কথা গুলো বলে বেড়িয়ে আসতেই বছর তিন- চারেকের একটা বাচ্চা মেয়ে এসে রোজের পা জরিয়ে ধরে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। বাচ্চাটার হাসির শব্দে রোজের সব রাগ গলে জল হয়ে যায়। রোজ মেয়েটাকে কোলে নিয়ে গাল টেনে একটা চুঁমু দিলো।

রোজ : তোমার নাম কি.?

মেয়েটি : রিখিয়া। আম্মুর নাম কুহু আব্বুর নাম রাজ। আর তুমি মিমি। তাইনা.?

রোজ : না আমি রোজ।

রিখিয়া : জানি তো। কিন্তু আম্মু বলেছে তুমি সবার মিমি। আমি মিমি বলে ডাকবো। তুমি কি রাগ করবে.?

রোজ : উহু। রাগ করবো কেন সোনা । তোমার যা মনে চায় তুমি ডেকো।

রিখিয়া : আই লাবিউ মিমি।

রোজ হেসে সামনে তাকাতেই দেখলো মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভ্রু নাচাচ্ছে। রোজ মেঘের কোলে রিখিয়াকে দিয়ে নিচে চলে গেলো।



পাঁচদিন পর আহমেদ ভিলায়,, নীলাদ্রি আর আয়াশ একটা ঘরে বসে ড্রিংকস করছে এমন সময় রোজ ওদের ঘরের সামনে যায়। একটা কাজের জন্যই গিয়েছিলো কিন্তু ওদের কথা শুনে দাড়িয়ে যায় রোজ।

নীলাদ্রি : এই কুহুটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। ইরার মতো ওটাকেও রাস্তা থেকে সড়াতে হবে।

আয়াশ : আমি এবার কিছু করতে পারবো না। তুমি যা পারো করো। গতবার রোজকে সামলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আর এখন রোজ আরো বেশি ডেন্জারাস।

রোজ : কি বলছে ওরা.? এসব ওদেরররর

নিলাদ্রি : বড় কিছু পেতে গেলে রিস্ক নিতে তো হবেই। তুই তোর ভাই এর আনন্দের জন্য এইটুকু করবি না.?

আয়াশ : মজা করবা তুমি আর রিস্ক নিয়ে কাজ করবো আমি.? ওটা হবে না। আমিও মাস্তি করবো। আরেক স্কোচ দে।

রোজ : তোদের তো আমি খাওয়াবো। বেশি করে গিলবি আজ।

রোজের গলা শুনতেই লাফিয়ে ওঠে দুজন। নীলাদ্রি ব্যালকোনি দিয়ে বাগানে লাফ দেয়। রোজ আয়াশকে টেনে ইচ্ছা মতো মারে। তারপর একটা চেয়ারে বসিয়ে হাতে পায়ে ছুরি দিয়ে চেয়ারের সাথে গেঁথে দেয়। রোজ বাগানে লাফ দিতেই দেখে সবাই কাঁদছে। কুহু অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

রোজ : কি হয়েছে.?

মেঘ : আর বলো না নীলাদ্রি শুধু রিখিয়াকে নিয়ে একটু ঘুরতে গেছে আর কুহু চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে। এমন পাগলামি দেখলে হাসি পায় না.? মেয়ের জন্য এতো পাগল আরে ওর মামাই তো নিয়ে গেছে কোনো কিডন্যাপার বা ক্রিমিনাল তো না।

রোজ : ক্রিমিনাল না মার্ডারার। আমার বুবুনের মার্ডারার।

রোজের ফোনে একটা কল আসতেই রোজ রিসিভ করে বলে

রোজ : রিখিয়া কোথায়.?

নীলাদ্রি : গাড়িতে। ড্রাইভার আছে সমস্যা নাই। এই তো ব্রিজের দিকে যাচ্ছে। আর একটা কথা,, কেউ যেন না জানে , যে গাড়িতে বোম আছে। অকে… টাটা।

মেঘ : নীলাদ্রি..??

রোজ : রিখিয়ার কিচ্ছু হবে না। মেঘরোদ্দুর তুমি পিছু পিছু আসো। আমি রিখিয়াকে সেফ করবোই।

রোজ ফুল স্পিডে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। মিনিট দশেকের মধ্যে গাড়িটাকেও দেখতে পেলো ও। রোজ স্পিড আরো বাড়িয়ে ফুটপাত দিয়ে বাইক চালাতে লাগলো। গাড়িটা ব্রিজের কাছাকাছি আসলেই ড্রাইভার গেট খুলে ফুটপাতে লাফ দেয়। রিখিয়া একা গাড়ির ভেতর চিৎকার দিয়ে কাঁদছে। রোজের বাইক ততক্ষনে গাড়ির দরজা ছুঁই ছুঁই। রোজ বাইকের উপর উঠে লাফ দেওয়ার জন্য তৈরি হতেই পেছন থেকে নীলাদ্রি রোজের পায়ে শুট করে। রোজ গেটের দরজা ধরে টান দিয়ে গাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো বাইকটা নদীতে পড়ে গেছে। রিখিয়া রোজকে দেখে রোজের কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। রোজ রিখিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে স্টিয়ারিং সামলাতে লাগলো। পাশ থেকে রোজ নিজের পরিচিত একজন অটোওয়ালা দেখতে পেয়ে তাকে রিকোয়েস্ট করে সে যেন রিখিয়াকে রোজের বাড়ি পৌছে দেয় কিন্তু গাড়ি ব্রেক করছে না। রোজ অটোর গা ঘেষে গাড়িটি নিয়ে রিখিয়াকে সাবধানে অটোওয়ালার কাছে দিয়ে দেয় যা নীলাদ্রি জানতেও পারে না । রোজ এবার গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো কারন ও জানে নীলাদ্রি এখনই বোম ব্লাস্ট করবে কারন ব্রিজে এখন গাড়ির সংখ্যা কম।আর রোজ রিখিয়া একসাথে আছে। রোজ গাড়িটা ফুল স্পীডে ব্রিজের অপর দিকে চালিয়ে দিতেই গাড়িটা নদীতে গিয়ে পড়তে শুরু করে আর তখনই নীলাদ্রি বাটন প্রেস করে।চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিস্ফারণের চিহ্ন গুলো।

♠♠Present ♠♠

রোজ : তারপর..??? রিখিয়া নীলাদ্রি আয়াশ ওরা কোথায়..??

রিখিয়া : মিমি আমি এখানে….. কেমন আছো মিমি.??

রোজ : তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো। কিন্তু আমি তোমার মিমি নই আমি রোজ।

রিখিয়া : জানি। মিমি তো আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মরে গেছে। কিন্তু আমি যদি তোমাকে মিমি বলে ডাকি তুমি রাগ করবে..???

পেছনে বছর তিনেকের একটা ছেলে দু হাত প্রসারিত করে রোজের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

ছেলেটি : মি মি। আ মি কো লে না ও।

রোজ মুচকি হেসে ছেলেটাকে কোলে তুলে গাল ধরে টানলো।

ছেলেটি : না মি মি গাল টা নে না

রোজ : পাঁকা বুড়ো। এ কে..??

নীলয় : আমার ছেলে মৃদুল।

রোজ : তোমার ছেলেও অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক পাঁকা। আচ্ছা নীলাদ্রি আয়াশের কি হয়েছে..??

মেঘ : আয়াশ জেলে। আর নীলাদ্রি কোথায় তার খোজ আমরা কেউ জানি না। সেদিন যারা এট্যাক করেছিলো হয়তো ওরা নীলাদ্রিরই লোক।

রোজ :সম্রাট সুমি তোমরা ? আচ্ছা তোমার পেটটাও মোটা। তোমারও বেবি হবে..??

সুমি : হুম।

রোজ : মেয়ে নাকি ছেলে ?

সম্রাট :মেয়ে। কেন ?

রোজ : ওয়াও।। আমারও মেয়ে বেবি পছন্দ। টুইন মেয়ে বেবি। তোমার কি টুইন বেবি ?

সুমি : নাহ। তবে তোমার হতে পারে। এতোদিনের ইচ্ছা যখন তখন না হয়ে পারে..??

রোজ : তোমরা রোজের খোজ করোনি ? ওর ডেড বডি পেয়েছো ?

মেঘ : হ্যা।

রোজ : তাহলে আমাকে রোজ ভেবেছিলেন কেন।? ওহহ বুঝেছি আপনি গাছেরও খাবেন তলারও কুড়াবেন। ক্যারেক্টারলেস ছেলে কোথাকার। মৃদুল রিখিয়া তোমরা আমার সাথে চলো। এখানে থাকলে তোমাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রোজ ফুসতে ফুসতে ওখান থেকে চলে যায়। আরাভ মেয়েদের মতো টিপ্পনি কেটে বললো

আরাভ : ক্যারেক্টারলেস কোথাকার। গাছেরও খাবি তলারও কুড়াবি..? ছি! ছি! মেঘ এ কেমন স্বভাব তোর।

মেঘ : তোর শালির কাছে আমি আগাগোড়াই লুচ্চা। নতুন কিছু এড করলে সেটা দিয়ে খোচা মারিস।

সম্রাট : আমার একটা কুয়েশ্চন আছে। মনে হয় প্রশ্নের উত্তর জানার কৌতুহল প্লাস আগ্রহ সবারই আছে। এখন প্রশ্নটা হলো আমার এই চন্ডিরূপ থেকে পরিবর্তিত ঠান্ডা বোন টাকে কোথায় পেলে.?

আরাভ : কিছুটা আমি জানি।তোমরা যদি চাও আমি বলতে পারি..

নিভি : শোনার অপেক্ষাতেই তো আছি ভাইয়া।সাড়ে তিন বছর পর রোজকে কিভাবে পেলো তার মেঘরোদ্দুর।

আরাভ : এটা বেশ ইন্টারেস্টিং। আসলে আমরা সেদিন।

চলবে..?

[ গল্পটা অনেক টা জটিল লাগছে আপনাদের কাছে। এটা জানি তবে একটু অপেক্ষা করুন কেন কি কারনে এমন আবছা রাখছি জানতে পারবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here