অনুতাপ পর্ব -১৪

#অনুতাপ
#চতুর্দশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#FATHA)

আমি আমার স্যারকে ভালোবাসি, যে কি না হাতে গুনে পুরো ১৪ বছরের বড় আমার থেকে। এখন আমি আসলেই বুঝতে পারছি না কি করা উচিত?
আর সবচেয়ে বড় কথা এই জিনিসটা তাকে বললে সে কি আমাকে বুঝবে? এই চিন্তাই তো আমার মাথাটা একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে আজকে এসব ভেবে সময়টা নষ্ট না করাই ভালো। সে আমার পাশে আছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা ২৪ ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে সে আর আমি একসাথে আছি, একসাথে একটা রুমে, সারাটা রাত উপভোগ করেছি বৃষ্টি বিলাস আর তার কম্পানি। আর ভোরের আলোটাও তার পাশে বসেই দেখেছি।
রাতের স্মৃতি চারণ করে রুহি চোখ বুঝে হাসছে। কিন্তু রুহি চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো, কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়ে গেলো, ওর এতো টুকু মনে আছে সকাল হওয়া দেখছিলো ও ব্যালকনিতে বসে ইরাদের পাশে বসে, কিন্তু এখন ও বিছানায় আছে। এর মাঝে কিছু মনে নেই, ও নিশ্চিত বসেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু এমন হলো কি করে? ব্যালকনি থেকে বিছানায় কি করে এলো ও? এটাই মাথায় আসছে না, আচ্ছা ইরাদ কি আমায় কোলে করে নিয়ে এসেছে বিছানায়? রুহি লজ্জা পাচ্ছে, কথাটা ভেবেই। হ্যাঁ হয়তো তাই হয়েছিলো, নাহয় আমি কি করে আর বিছানায় আসবো? ইশশ কেনো যে তখন আমি জেগে ছিলাম না। তখনই মনে পড়লো ইরাদ তাহলে কোথায় ঘুমিয়েছে? রুহি উঠে বসতে নিবে ঠিক তখনই মাথা যেনো ঘুরছে, সে ঠিকভাবে উঠে বসতে পারছেনা। সারা শরীর একদম দূর্বল লাগছে, কোনো মতে রুহি উঠে বসে, চারিদিকে চোখ মেলে দেখে ইরাদ কোনোদিকে নেই। ঘড়িতে দেখে ১ঃ৩০টা বাজে। এই সময় ইরাদ কোথায় গেছে। বেড সাইডে ব্রেকফাস্ট রাখা। এবং একটা ছোট চিরকুট লিখা
“উঠে খেয়ে নিবেন, আমি একটু বের হচ্ছি, হোটেলে কল দিবেন আপনার জন্য কফি চলে আসবে। কফি অবশ্যই খাবেন নাহয় শরীর খারাপ করবে”
রুহি লজ্জা পাচ্ছে, শরীরটা খুব খারাপ হয়ে আছে তারপরেও এই সুখটা বলে বোঝানোর মতো না। আজকে শরীরটা খারাপ হওয়া স্বত্তেও রুহির মনটা স্থির হয়ে আছে, ইরাদ ওর কতো খেয়াল রাখে। এই ছেলেটা কি ওর জীবনের পার্ফেক্ট কেউ? হ্যাঁ রুহি তো এমন একজন রাজকুমারের আশায় ছিলো সবসময় আজ কি সে এভাবে এসে ধরা দিয়েছে জীবনে?
শরীরটা এতো খারাপ লাগছে রুহি এসব ভাবতে ভাবতে আবারো ঘুমিয়ে গেলো। দূর্বলতা থেকেই এমনটা হচ্ছে ওর।

.

প্রায় ৩টার দিকে ইরাদ ফিরে এসেছে, এরই মাঝে রুহির জন্য রুম সার্ভিস থেকে ২ বার এসে ওরা কফির জন্য নক করে গেছে কিন্তু কোনো রেস্পন্স পায়নি। লাঞ্চের জন্যে ও এসেছিলো কারণ ইরাদ বলে গিয়েছিলো ওদের। রুহির খেয়াল রাখতে।
ইরাদ হোটেলে ফিরে আসার পরে ম্যানেজারকে দেখে একটা স্বাভাবিক স্মাইল দিলো, তখন উনিই সামনে এসে বললেন,
– ম্যাম কোনো রেস্পন্স করছেন না স্যার সকাল থেকেই।
– ঠিক বুঝি নি
– উনার রুমে আমাদের স্টাফ কয়েকবার নক করেছিলো কিন্তু উনি ডোর ওপেন করেন নি এমন কি কফি বা লাঞ্চ এগুলো ও নেন নি।
ইরাদ চিন্তায় পড়ে যায়। সাথে সাথে রুমের দিকে পা বাড়ায়। খুব তাড়াতাড়ি করস্র চেষ্টা করছে ও, মনে হচ্ছে রুহির কিছু হলো না তো? যাকেই ও আপন করে নেয় সেই তো জীবন থেকে এলোমেলো হয়ে চলে যায়। রুহির প্রতি ইরাদের একটা টান আছে ইরাদ তা বুঝে না, তবুও তার খেয়াল রাখা যেন ইরাদের একটা দায়িত্ব। কোনোভাবেই রুহির কিছু হোক সে চায় না। আর নতুন জায়গা রুহিকে একা রেখে গিয়েছিলো বাচ্চা একটা মেয়ে। কি হলো ওর?
লিফট আসতে দেরি করছিলো বলে ইরাদ হেটেই, না হেটে না আসলে এক প্রকার দৌড়ে রুমে চলে এলো।
রুমে এসে ইরাদ দেখে রুহি, ঘুমিয়ে আছে। ওকে দেখে যেন ইরাদ স্বস্তি পেলো।
ইরাদের হাতে কিছু শপিং ব্যাগ ছিলো, ও রুহির জন্য কিছু শপিং করে এবং নিজের জন্যেও। আর বিকেলে ফ্লাইট দিয়ে ব্যাক করবে সেটাও এরেঞ্জ করার জন্যেই বের হয়েছিলো মূলত। সাইড টেবিলে ইরাদ তাকিয়ে দেখলো রুহি খাবার খায় নি এখনো, এতো ঘুম মেয়েটার ইরাদ মুচকি হাসলো।
হাতের ব্যাগ গুলো রেখে ইরাদ রুহিকে ডাক দিলো আস্তে আস্তে করে,
– রুহি, উঠুন। রুহি…
ইরাদ কয়েকবার ডাক দেওয়ার পরে রুহি চোখ মেলে তাকালো ওর দিকে, তাকিয়েই একটা সুন্দর হাসি দিলো, চোখ গুলো কিছুটা লাল হয়ে আছে, গাল গুলো একদম গোলাপি হয়ে গেছে, রুহির চেহারাটা একদম মলিন লাগছে।
ইরাদ বেডের সাইডে থেকে ওর দিকে ভালো মতো তাকায় নি,
– এখনো খান নি কেনো?
– খুদা পায় নি
– উঠে ফ্রেশ হয়ে নেন আমরা লাঞ্চ করে বের হয়ে যাবো
– আচ্ছা
বলে রুহি উঠে যেতে নেয়, বহু কষ্টে বেড থেকে নামতে নেয় ও। ইরাদ পেছন দিকেই ঘুরে ছিলো আর রুহি ওর পেছনে বিছানায় ছিলো। রুহির মাথা একদম শূন্য শূন্য লাগছিলো, শরীরে কোনো প্রকার শক্তি পাচ্ছে না ও। বেড থেকে নেমে সামনের দিকে যেই এক কদম পা বাড়িয়ে হাটতে যাবে তখন মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয় মাটিতে।
ইরাদ তখনই পেছনে তাকায় এবং সাথে সাথে রুহিকে ধরে ফেলে। রুহি ভয়ে ইরাদের শার্টটা খামচে ধরে। মেয়েটা ভয়ে চোখ বুঝে আছে। ইরাদ একদম ভয় পেয়ে গিয়েছিলো রুহির শরীর একদম গরম হয়ে আছে চেহারা লাল হয়ে আছে চোখ দুটো খোলার পরে ইরাদ দেখলো একদম লাল হয়ে গেছে। রুহির শরীরে প্রচন্ড জ্বর। ইরাদ ওকে কোলে তুলে নেয়, রুহি স্থির হয়ে আছে, ইরাদের দিকে তাকিয়ে। ইরাদ এর আগে ওকে দু’বার কোলে তুলেছে। কিন্তু একবার সে অজ্ঞান ছিলো আর একবার ঘুমে। আজ প্রথম সে স্ব জ্ঞানে আছে। হার্টবিট একদম ফাস্ট হয়ে গেছে। ইরাদ ওকে কোলে করে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। ছেলেটার ফর্সা চেহারা এই প্রথম রুহি এতো কাছ থেকে দেখছে। এই স্পর্শটাই অন্য রকম। কিছু ছোয়া শুধু শরীরে পরে না। একদম মনের গহীনে গিয়ে লাগে। আজ রুহির এমনই লাগছে। ইরাদ ওকে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দেয় এবং কপালে হাত দিয়ে বলে,
-কাল মানা করেছিলাম এতোক্ষন জাগতে, আবার বৃষ্টি নিয়ে খেলা করতেও। কিন্তু কে শুনে কার কথা?
-কিছু হয় নি তো। শুরু একটু উইক লাগছে।
ইরসদ ভ্রু কুচকে বলে,
– অনেক জ্বর এসেছে আপনার। আমাকে বলা উচিত ছিলো। আমি বললাম আর আপনি উঠে পড়লেন। না বললে কি করে বুঝবো এতো শরীর খারাপ?
রুহি ইরাদের দিকে তাকিয়ে আছে, এতো মায়া ভরা একটা মুখ, এই মায়াবতীকে ইরাদ প্রথম দিকে বকা দিলেও এখন কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। মায়া লাগে মুখটা দেখলেই।
– ঠিক হয়ে যাবো।
– হ্যাঁ এভাবে না খেয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবেন
-আচ্ছা
বলেই রুহি হাসে।
ইরাদের চেহারায় চিন্তার ছাপ কিন্তু এই অবস্থায় ও মেয়েটাকে হাসতে দেখে ইরাদ অবাক হয়।
ইরাদ রুমেই খাবার আনায় সাথে মেডিসিন ও
রুহিকে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয় ও
খেতে চাচ্ছে না ও কিছুই তবুও ইরাদ জোর করে নিজ হাতেই খাইয়ে দেয়।
ইরাদ খেতে চাইছিলো না রুহির কথায় খেতে হলো ওর ও,
এবং মেডিসিন ও খাওয়ায় এদিকে ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে,
রুহির শরীর এতো গরম, জ্বর অনেক এসেছে তা ইরাদ বুঝতে পারছে।
রুহি ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
– যেতে হবে না এখন?
– হ্যাঁ কিন্তু আপনি এখন?
পারবো বলেই উঠতে যায় তখনই মাথা ঘুরতে থাকে ওর। পারে না উঠতে।
-উঠতে হবে না রেস্টে থাকেন রুহি
– যাবো কি করে?
– আপনি সুস্থ হলে আমরা বের হলো ইটস ওকে। প্রাইভেট জেট দিয়ে যাওয়া যাবে সমস্যা নেই।

রুহিকে ইরাদ ব্ল্যাংকেট উড়িয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। মেয়েটাকে অসুস্থ দেখে কলিজাটা একদম ধুক করে উঠেছিলো। রুহি কি ইরাদের জীবনের একটা ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট? ইরাদ জানে না তবুও ওর এই অবস্থা ইরাদের ভালো লাগছে না। সবই তো ঠিক ছিলো আজকে হঠাৎ করে এমন হবার তো কথা ছিলো না।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, রুহির জন্য কিছু ফ্রুটস আর জুস আনতে হবে। স্টাফকে দিয়েই ইরাদ সব আনাচ্ছে কিন্তু সে যে ফ্রুটস এনেছে তা দেখে ইরাদের পছন্দ হয় নি। আর রুহির জ্বর বেশ ভালো আছে। অন্য মেডিসিন আনতে হবে তাই ও নিজেই বের হয়। যত দ্রুত সম্ভব হয় তত দ্রুত ও এসব নিয়ে ফিরে আসে। রেসর্টে ঢোকার সময় ইরাদের সাথে দেখা হয় নাদিমের সাথে। নাদিম ইরাদের ব্যাচমেট ছিলো। এতো বছর পরে দেখা হলো, ইরাদ নাদিম দুজনেই খুব খুশি হলো।
– আরে ইরাদ না?
– হ্যা, ও মাই গড নাদিম। তুই এখানে?
– হ্যাঁ তোর ভাবী আর ছেলেকে নিয়ে বেরাতে এলাম।
ছেলে কান্না করতেসিলো বাইরে যাবে কোথাও নিয়ে যেও আর তোফ ভাবী ও সব মিলে ঘুরতে এলাম এখানে।
– ভালো করেছিস আমাদের ডাক্তারদের জীবন থাকে প্রচুর ব্যাস্ত এর মঝে একটু পরিবারের জন্য সময় বের করা উচিত।
– হুম দোস্ত। ইরাদ তুই কেমন আছিস? কত বছর পর দেখা রে। এখনো সেই ১০ বছর আগের মতোই হ্যান্ডসাম আছিস।
একটা মেয়ে আর একটা ৫-৬ বছরের বাচ্চা নাদিমের পাশে এসে দাড়ালো,
– এই যে তোর ভাবী আর পিচ্চি
ইরাদ সবার সাথে পরিচিত হলো।
নাদিম- তো দোস্ত এখানে এলি যে?
ইরাদ কিছু বলতে যাবে তখনই সেদিক দিয়ে ম্যানেজার যাচ্ছিলো সে বললেন,
– স্যার হানিমুনে এসেছেন
নাদিম খুব খুশি হলো শুনে যে ফাইনালি ইরাদের বিয়ে হয়েছে। মেঘা যাওয়ার পরে তাহলে ইরাদ মুভ অন করলো, হোক দেরিতে তাও তো আগে বাড়লো। নাদিম সহ ওদের সব বন্ধুরাই বিবাহিত, সবার বাচ্চা ও আছে ৩-৫ বছরের মধ্যে। আর ইরাদ শুধুই একা ছিলো, আজ সেও বিয়ে করেছে। এখন সবার সামনে ইরাদ পড়ে গেলো বিপাকে।
নাদিমের বউ- ওয়াও ভাইয়া। ভাবী কোথায়?
– ও রুমে আছে। একটু অসুস্থ।
নাদিম- আমাদের তাহলে দেখা করা উচিত
জোর করেই ওরা ইরাদের রুমে এলো
ইরাদ না করতেও নাদিম বললো,
-ভাবীর কিছু লাগলে আফিয়া হেল্প করতে পারবে চল।
ওরা এসে দেখে রুহি বিছানায় গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
আফিয়া- মাশাল্লাহ, ভাবী এতো সুন্দরী।
আফিয়ার আওয়াজে রুহি চোখ খুলে তাকায়।
ওদের দেখে রুহি উঠে বসার চেষ্টা করে। আফিয়া এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করে ওকে বসাতে।
রুহি তাদের দেখে সালাম দেয়।
ইরাদ – ও নাদিম আমার ফ্রেন্ড, উনি ভাবী আর ও আনিক।
রুহি – ভালো আছেন?
নাদিম- আমরা ভালো ভাবী। আপনি অসুস্থ দেখে খুব খারাপ লাগলো। কি হয়েছে?
ভাবী কথাটা শুনেই রুহি ইরাদের দিকে তাকায়,
ইরাদ করুণ চোখে রুহির দিকে তাকায়।
– জ্বর এসেছে।
আস্তে করে রুহির কাছে এসেআফিয়া বলে
– এমন হয় বিয়ের প্রথম দিকে নিজের খেয়াল রাখবেন ভাবী আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবেন।
রুহি একদম লজ্জায় পড়ে যায়।
আফিয়া মেয়েটা অনেক ভালো ও রুহিকে যাওয়ার আগে ড্রেস চেঞ্জ করতে হেল্প করে। ইরাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ওরা চলে যায়।
যাওয়ার সময় নাদিম ইরাদকে বলে,
– নতুন বিয়ে করেছিস বউ কে একটু রেস্ট দিস, বেচারি তোর কারণে জ্বরে ভুগছে।
নাদিমের কথায় ইরাদ একদম অবাক হয়ে যায় আসলেই তো রুহির জ্বরের মানে ওরা অন্য রকম বুঝেছে তাই এভাবে হাসছিলো। একবারে হোটেল ছেড়ে ওরা বেরিয়ে গেলো ওরা একটু পড়েই সিলেট শহরে যাওয়া লাগবে ওদের। কারণ সেখানেই আফিয়ার বাসা। দু’দিন আরো ঘুরে তারপর ঢাকা ব্যাক করবে ওরা।

.

রুহির কিন্তু ব্যাপারটা খুব ভালো লাগছে যে ইরাদের স্ত্রী ভেবেছে ওকে তারা। লজ্জায় যদিও মাথাকাটা যাচ্ছিলো তবুও ব্যাপারটা বেশ ইঞ্জয় করেছে ও।

ইরাদ নিজেও চেঞ্জ করে আসে, একটা সাদা পাঞ্জাবি পরেছে। হাতা কনুই পর্যন্ত তুলে রেখেছে বেশ দেখাচ্ছে। ইরাদকে রুহি ডাক দিয়ে বলছে
– শুনুন
– হুম বলুন
– আমাকে একটু বারান্দায় নিয়ে যাবেন?
– এখন আপনার রেস্ট দরকার।
– সারাদিন শুয়ে ছিলাম, প্লিজ?
– ঠিক আছে আগে ডিনার করতে হবে এরপর নিয়ে যাবো।
– না খেলে হবেনা? প্লিজ?
– না এখন কোনো প্লিজ শুনবো না, খেতে হবেই।
-ওকে
রুহি গাল ফুলিয়ে বলে
খাওয়া শেষে রুহিকে নিয়ে ইরাদ ব্যালকনিতে নিয়ে যায়।
ইরাদ এক মগ কফি আনায়, আর রুহির জন্য জুস দেয়।
রুহি এবার হেটেই যেতে চেষ্টা করছিলো কিন্তু দুর্বলতার জন্য হাটতে পারছিলো না তাই ইরাদ ওকে কোলে করেই নিয়ে যায় বারান্দায়।
রুহির কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো জ্বরটা এসে ভালোই হয়েছে। এই মানুষটার সাথে এতোটা সময় এভাবে কাটাতে পারছি।

-জুসটা খেতে হবে
– আর না প্লিজ অনেক খেয়েছি
– নাহ এখন খান নাহয় আবার বেডে শুইয়ে দিবো নিয়ে
-উফফ, আপনি অনেক খারাপ
– হ্যাঁ জানি।
এই বলেই ইরাদ হাসে।
রুহির জন্য ওর চিন্তা আছে কিন্তু মেয়েটাকে অসুস্থ ট্রিট করলে ওর আরো খারাপ লাগবে তাই ইরাদ কিছু বলছে না।
– রুহি আপনার বাসায় সবাই চিন্তা করবে না?
– নাহ, পাপা তো চিটাগং থাকে আর আমার ফ্রেন্ড আছে না দিপা?
– হুম
– ওকে কল করলেই ও বলে দিবে, কোনো সমস্যা হবে না। আপনার বাসায় টেনশন করবে না?
– না, আমার বাসায় কেউ নেই। বাবা বা তো মারা গেছেন ভাইয়া ভাবী, বোন সবাই আলাদা থাকে।
-ঠিক আছে।
রুহি জানে ইরাদের বউ নেই, সেটা ও লাইভ দেখেই জানতে পেরেছিলো। তাও রুহির আগ বাড়িয়ে একটু জানতে ইচ্ছে করলো ইরাদের জীবনে কেউ আছে কি না তাই সে অন্যভাবে ইরাদকে জিজ্ঞেস করলো,
– অন্য কেউ নেই টেনশন করার?
রুহির কথায় ইরাদ বললো,
– অন্য কেউ?
– মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড
ইরাদ হেসে দেয়।
– আমার বয়স কতো জানেন রুহি?
– না জানিনা।
– ৩৫ চলছে।
– আমি তো বয়স জিজ্ঞেস করিনি
অবাক হয়ে ইরাদকে দেখে বলে
– এই বয়সে কারো গার্লফ্রেন্ড থাকে? আমার কেউ নেই।
– ওহ এবার বুঝেছি।
– আপনি সিংগেল তাইনা?
রুহির প্রশ্নে ইরাদ একটু চমকে যায়। ও তো সিংগেল না ও তো ডিভোর্সড। অন্য কেউ হলে হয়তো এভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা থাকতো না। কিন্তু রুহি এখন ইরাদের ভালো বন্ধু। ওকে তো বলাই যায়।
– আপাতত এখন সিংগেল।
– আগে গার্লফ্রেন্ড ছিলো?
– না, বউ ছিলো।
কথাটা রুহিকে একটু চমকে দিলো।
-এখন?
– আমার বিয়ের ৬ মাসের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যায়।
– কেনো?
– আমাদের মধ্যে আন্ডারস্টান্ডিং ভালো ছিলো না। আরো ১২ বছর আগেই আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
-ওহ।
ইরাদের আগে বিয়ে হয়েছিলো শুনে রুহির খারাপ লাগলেও এখন তার জীবনে কেউ নেই এতেই রুহি খুশি। তবে ইরাদ এতো গুলো বছর এভাবে একা কাটিয়েছে এই ভেবে রুহির কষ্ট লাগছে। ইরাদের জীবনে যদি ও একটু ঠাই পায় তাহলে এই জীবনটা ও সুখ দিয়ে ভাসিয়ে দিবে।
নিজেকে উজাড় করে ও ইরাদকে ভালোবাসা দিবে এই চাওয়াটাই আছে রুহির আজকে এই মুহুর্ত থেকে।

.

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here