অনুতাপ পর্ব -১৩

#অনুতাপ
#ত্রয়োদশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)

একা ঘরে রাতের বেলা কোনো যুবতী মেয়ে যদি একটা পুরুষকে বলে “আজকে আপনাকে ঘুমাতে দিবো না” এতোটুকুই তার রাতের ঘুম শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইরাদ আর রুহির মধ্যে না আছে কোনো সম্পর্ক না আছে প্রেম তারা দু’জন শিক্ষক আর ছাত্রী হয়। তবে হ্যাঁ এসবের বাইরেও ইরাদকে রুহি তো ভালোবাসে,আজকে থেকে না অনেক আগে থেকেই যখন থেকে ও প্রেম ভালোবাসা সবটা বুঝতে শিখেছে। দেখতে গেলে আজকে ইরাদের জন্য কোনো বিশেষ রাত না। উপা অন্তর না পেয়ে সে আজকে অসহায় হয়ে রুহির সাথে হোটেলের একটা রুমে উঠেছে। এমন কিছু ঘটবে এটা যদি ইরাদ জানতো তাহলে ভুলেও এই ট্রিপে আসতো না ও, এভাবে করে ঘুরে দেখতে গিয়ে যে রাত হয়ে যাবে আর ফেরার উপায় থাকবে না তা কোনোভাবেই ইরাদ ভাবে নি । আর তাছাড়া ইরাদের তো এসব জানার ও কথা না কারণ আগে না কারণ অনেক দেশ ঘুরলেও ইরাদ কোনোদিনই সিলেট আসেনি, আর না এসেছিলো রাতারগুল তাই এসব নিয়ে তার কোনো রকম আইডিয়াও ছিলো না। আর ভাগ্যের কি এক পরিহাস আজকে হোটেলে একটা রুম ছাড়া আর কোনো রুমই তারা পেলো। আর এই ব্যপারে আজকে অন্তত ইরাদের করার ও কিছুই নেই। তবে ইরাদ চিন্তিত থাকলেও রুহি বেশ খুশি। এভাবে ইরাদকে নিজের এতোটা কাছে পাওয়া যেনো রুহির কাছে একটা স্বপ্ন যা বাস্তবে পরিনত হয়েছে। সবাই বলে যে স্বপ্ন কোনোদিন ছোয়া যায় না, কোনোদিন হাত দিয়ে ধরা যায় না।কিন্তু কোথায়? কথাটা ভুল , এই স্বপ্ন যেনো ছোয়া যায় । এই স্বপ্ন ধরা যায়। যদিও এই অধিকার রুহির নেই তবুও তার স্বপ্ন চলতে পারে, কথা বলতে পারে। রুহি এসব ভেবেই মিটমিট করে হাসছে। তার খুব ভালো লাগছে ইরাদকে দেখতে। আজকে যখন ইরাদ আর রুহি ডিনার করছিলো তখন সেখানে উপস্থিত যে মেয়েগুলো ছিলো তারা সবাই ইরাদকে দেখছিলো। ব্যাপারটা ইরাদ নিজে লক্ষ্য না করলেও রুহির চোখ এড়ায় নি। ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়, সেই মানুষটা নিজে কি করছে এসব তো খেয়াল আসেই তার পাশাপাশি তাকে কে কীভাবে দেখছে? তাও যেনো চোখে পড়ে। মেয়েটা সেই কলেজ জীবন থেকেই ইরাদের ভিডিও গুলো ফলো করতো, দেখতে দেখতে ইরাদের করা ভিডিও গুলোর ইন্সপিরেশনে রুহি নিজেও একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে গিয়েছে। ইরাদের কথা, কাজ, রূপ সবই তো রুহিকে আস্তে আস্তে নিজের ভালো লাগায় আটকে ফেলে, একটা সময় নিজের অজান্তেই তাকে রুহি নিজের মনটাও দিয়ে বসে। হয়তো দূরে থাকলে রুহি এই অনুভূতি গুলো বুঝতেও পারতো না। আর সবটা হয়তো এভাবে রঙিন হয়ে ওর জীবনে ধরা দিতো ও না। না বুঝা অনুভূতি গুলো হয়তো বা চাপা পড়ে যেতো কোনোভাবে। কিন্তু ভাগ্য ইরাদকে ওরই স্যার করে ওর জীবনে এনে দিয়েছে। এইজন্য রুহি ভাবে যে ওর স্বপ্নটা মিথ্যে না, এই স্বপ্নটা ওর হাতের কাছেই, শুধু ছুয়ে দেখার অনুমতিটা ওর কাছে নেই। তবে অনেক কিছুই তো আজ রুহি পেয়েছে। সারাদিন ইরাদের সাথে ঘুরাঘুরি করার সুযোগ, আজকে নির্জনভাবে ইরাদের সাথে সময় কাটাতে পারা। এগুলো কম কিসের? এইজন্য আলহামদুলিল্লাহ বলে রুহি। রুহি ছোট থেকেই অল্পতে খুশি হয়ে যায় তাই বোধহয় আল্লাহ সুবহানা’তালা রুহিকে একটা সময় ওর চাওয়া সব কিছুই জীবনে এনে দেয়। কোনো সাধই অপূর্ণ রাখে। রুহি জানে প্রতিটি মেয়ের জীবনে তার মা থাকা মানে সব থাকা মেয়েটা ছোট থেকেই তো মাকে পায় নি, বাবাকেও পায় নি তারপরেও সে আলহামদুলিল্লাহ বলতো। তাই বোধহয় তার ছোটো ছোটো পাওয়া গুলোর ও মর্ম সে বোঝে।

বাইরে বাতাস বইছে শো শো আওয়াজ করে, চারিদিক কেমন যেনো সুন্দরতায় মুগ্ধ হয়ে আছে। যেনো পরিবেশ বলছে এমন সময় প্রতিদিন আসে না। এমন সময় শুধুই প্রেমিকদের সময় এটা হাত ছাড়া হতে দিও না, নিজেদের মধ্যাকার দূরত্বটা ঘুচিয়ে ফেলার সময় তো চলে এলো।
ইরাদ- আপনি ঘুমিয়ে পরুন খাটে, আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি।
– রুহি ইরাদের হাত ধরে খাটে নিয়ে বসিয়ে বলে,
-না, আপনি এখানে বসুন। আজকে আপনাকে ঘুমাতে দিবো না।
রুহির কথা শুনে ইরাদের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। তবে রুহির চোখ দুটো এতো মায়াবী যা ইরাদকে ওর চোখে তাকাতে যেনো বাধ্য করে। সে চোখ দুটো দেখে কিছু একটাতে আটকা পরে যায়। আর রুহি আজকে একদম চাইছে না এই রাতটা ঘুমিয়ে নষ্ট করে দিতে। সে চাইছে আজ সারাটা রাত ইরাদের সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিবে যদিও খুব টায়ার্ড হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই, কারণ সারাদিনই তো আজকে জার্নিতে কেটে গেছে ওদের। আর এমনিতেও রুহি কোনোদিনই প্লেন ছাড়া দূরপথ যাতায়াত করে না তবে আজ যাই হোক ইরাদের সাথে তার ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সেই সুবাদে গল্প করাই যায়। আর কবে এমন দিন আসবে রুহির জীবনে তা রুহি নিজেও জানে না।
ইরাদ একটু বিব্রতবোধ করে রুহি এভাবে কথাটা বলায়। আর রুহি নিজেও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় এমন করে কথাটা বলায়, কারণ রুহি তো বুঝাতে চাইছে একরকম কিন্তু এটা শুনতে লাগছে ভিন্ন রকম। নিজের ভুল বুঝে পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য রুহি আবারো বলে উঠে,
– গল্প করি, কতোদিন পর ভ্যাকেশনে এসেছি।
ইরাদ হালকা একটা হাসি দিয়ে বলে,
– হ্যাঁ তাও ঠিক। হুম গল্প করা যায়। বলুন কি বলবেন?
এই বলে ইরাদ খাটের পাশে বসে।
-একটা প্রশ্ন করি?
– করুন
– আপনি সবাইকে আপনি করে কেনো বলেন?
– তুমি বলার মানুষের সংখ্যা খুব কম আমার জীবনে এজন্য।

কথাটা ইরাদ আনমনেই বলে ফেললো সে একদম খেয়ালই করেনি রুহি পাশে আছে। মনের কথাটা আজকে মুখে এসে গেছে তার। সত্যিই তো, মা বাবা কেউ নেই ইরাদের। ভাইয়া ভাবী থাকে আমেরিকা, ছোটো বোনটাও শ্বশুর শ্বাশুড়ি স্বামী সংসার নিয়ে আছে। সবার সাথে খুব কম দেখা হয়। সারাদিন অফিসিয়াল কাজেই মানুষের সাথে ইরাদের সময় কাটাতে হয়। সবাইকে কি তুমি বলে সম্ভোধন করা যায়?

রুহি তাকিয়ে আছে ইরাদের দিকে, কথাটায় হাজারো না বলা বেদনা লুকিয়ে আছে ইরাদের। তা হয়তো রুহির চোখকে ফাকি দিয়ে যেতে পারে নি। রুহির চোখে ঠিকি ধরা দিয়েছে।

ইরাদের ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে রুহি কেনো? বাইরের কেউই জানে না। মেঘার ইরাদের জীবনে এমন একটা অংশ ছিলো যে তার পরম ভালোবাসার ছিলো, যাকে আগলে সে সারাটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলো। হয়তোবা তাদের জীবনের পরিনতিটা সুখময় হয় নি তাই বলে কি ইরাদ মেঘার সম্পর্ক খারাপ বলবে? বা তাকে তুলে কথা বলবে? নাহ ইরাদ এমন ছেলে নয়। মেঘাকে আজ ও সে সম্মানের চোখে দেখে, তাকে তুলে কোনো কথাই কোনোদিন বলে না। এই বিচ্ছেদ ইরাদকে কষ্ট দিয়েছে, বিবাহ বিচ্ছেদের পরে সবাই প্রাক্তনকে নিয়ে বাজে কথা বলে তাকে ছোট করে কিন্তু এসব করা ঠিক না। ইরাদ চায় সেই পুরোনো দিনের কথা গুলো সব নিজের মনেই পুষে রাখতে। কারণ এসব ভাবলে যে তার কষ্ট হয়? কেনো নিজের কষ্ট বাড়াবে ও? এই স্মৃতি গুলো ওকে যে তারা করে বেরায়।

ইরাদ- আসলে আমি সারাক্ষণ অফিসিয়াল কাজেই বিজি থাকি, এখানে সবাইকে তো আপনি বলেই ডাকতে হবে।
রুহি- তাই বলে স্টুডেন্টদের ও?
– আগে তো কোনোদিন ভাবিনি আমি বাচ্চাদের পড়াবো তাই অভ্যাস নেই।
ইরাদের কথা শুনে রুহি ভ্রু কুচকে বললো,
– আপনি স্কুলেও পড়ান?
রুহির কথা শুনে ইরাদ হেসে দেয়,
– স্কুলে পড়াবো কেনো? আপনাদের পড়াই মেডিকেলে
– আমরা বাচ্চা? আমরা কতো বড়।
– আপনারা আমার থেকে অনেক জুনিয়র, সো বাচ্চাই বলা যায়।
– অতো ও না, হবো ৭-৮ বছরের।
– না আরো বেশি ওয়েট হিসেব করি
এই বলে ইরাদ হিসেব টুকে নিচ্ছে আর হাসছে রুহির কথা গুলো শুনে, ইরাদকে এভাবে হাসতে দেখে রুহির খুব ভালো লাগছে।
– পুরো ১৪ ব্যাচের জুনিয়র আপনারা আমার ব্যাচ থেকে।
রুহি গাল ফুলিয়ে বলে, হতে পারে কিন্তু আমরা বড়। আমাদের ক্লাসে কেউ ১৮ বছরের নিচে নেই।
ইরাদ আবারো হেসে দেয়,
– আচ্ছা আচ্ছা।
ইরাদ রুহি কথা বলছিলো, আজকে ইরাদের খুব ভালো লাগছে মনে হচ্ছে অনেক বছর পরে কারো সাথে এতোটা মন খুলে সে গল্প করতে পারছে। আর রুহির কাছে মনে হচ্ছে তার এতো বছরের স্বপ্ন যেনো সত্যি হয়ে তার হাতে একটু একটু করে ধরা দিচ্ছে। আজকের আবহাওয়াটাও যেনো ওদের সুখের সাথে তাল মেলাচ্ছে।
হঠাৎ করেই যেনো বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে,
বাইরের দিকে তাকিয়ে রুহির চোখ চকচক করে উঠলো সে এক দৌড় দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো, তার এভাবে উঠে চলে যাওয়ায় ইরাদ ও পিছু পিছু চলে গেলো। ঝুলন্ত বারান্দা দিয়ে বৃষ্টির ছিটা গুলো একাধারে এসে রুহির চোখেমুখে পরছে। আর রুহি খিলখিল করে হাসছে, আজ রুহি অনেক খুশি তার ওপরে তার প্রিয় বৃষ্টি একাধারে তাল মিলিয়ে আকাশ থেকে ঝুমঝুম করে আসছে তাকে তার প্রিয় মানুষটার পাশে দেখার জন্য। ইরাদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে মেয়েটার বৃষ্টি বিলাস। আজ কেনো যেনো ওর বৃষ্টি বিলাস দেখে ইরাদের ও ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে বৃষ্টিকে। মেয়েটার ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে গেছে উত্তেজনায়, বাতাসের সাথে সাথে কিছু আংশিক বৃষ্টি এসে রুহির চোখেমুখে বারি খাচ্ছে। মেয়েটা চোখ বুঝে এই পরিবেশ এই সময়টাকে স্বাগত জানাচ্ছে। ইরাদের চোখ আটকা পড়ে গেছে এই মায়াবতিকে দেখে, কেনো? তা এই মুহুর্তে ইরাদের মাথায় আসছে না। তবে হ্যাঁ এই মায়াবতীর মায়াটা আস্তে আস্তে ইরাদকে ঘিরে ধরছে। আজ কেমন যেনো একটা টান অনুভূত হচ্ছে এই মায়াবতীর প্রতি। কিছু কিছু মায়ার নাম হয় না, তবে হ্যাঁ কেমন যেনো এক অদৃশ্য ডোরে তা আবদ্ধ করে ফেলে। যেমনটা এই মুহূর্তে ইরাদের অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে সারাটা জীবন দাঁড়িয়ে রুহির বৃষ্টি বিলাস সে দেখতে পারবে। ওর হাসি, ওর টানা চোখ, ওর দুষ্টুমি সবটাই ইরাদের ভালো লাগে তবে আজকে সব যেনো একটু বেশি ভালো লাগছে।

ইরাদকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুহি ইশারা দিয়ে ওকে কাছে ডাকলো, ইরাদ আসতেই রুহি হাত বাড়িয়ে কিছু বৃষ্টির পানি নিয়ে ইরাদের হাতে দিলো,
ইরাদ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
– নিন
ইরাদ আগলে পানিটুকু নিজের হাতে নিলো, রুহি এবার কিছু পানি হাতে জমিয়ে নিয়ে ইরাদের চেহারায় ছিটা দিলো,
ইরাদকে সিরিয়াস চেহায়ার দেখে রুহি মন খারাপ করে ফেললো সাথে সাথে,
মাথা নিচু করে ফেললো,
– সরি
রুহির বাচ্চাদের মন কান্ড দেখে ইরাদ হেসে ফেলে,
ইরাদ হাতের পানিটুকু রুহির মুখে ছিটিয়ে দেয়
– সরি বলছেন কেনো?
– আপনি মাইন্ড করেন নি?
– না বোকা, মাইন্ড কেনো করবো?
রুহি এবার খুশি হয়ে আরো পানি নিয়ে খেলতে লাগলো।
দু’জনই একদম চুপ করে আছে, একজন বৃষ্টি নিয়ে খেলছে তো আরেকজন তার বৃষ্টি বিলাস দেখছে। কারো মুখে কথা নেই কিন্তু দু’জন দুই রকম সুখ অনুভব করছে।
কিছুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে বৃষ্টি থেমে গেছে।
রুহি এসে ব্যালকনিতে রাখা বেঞ্চে বসে,
ইরাদের দিকে হাসি দিয়ে তাকিয়ে বলে,
– বসুন না,
একদম আহ্লাদী সুরে কথাটা বলে রুহি।
ইরাদ – বৃষ্টি পছন্দ করেন খুব?
রুহি বাইরের দিকে চোখ স্থির রেখে বলে
– ভালোবাসি।
রুহির ইচ্ছে করছে ইরাদের হাতটা ধরে বলতে,
– তোমায় ভালোবাসি ডক্টর ইরাদ, খুব খুব ভালোবাসি। কিন্তু এই কথাটা আজ সে বলতে পারবে না। তবে ভালোবাসি কথাটা শুনে ইরাদ একটু চমকে উঠে।
– বৃষ্টি ভালোবাসি খুব। ছোটো বেলা থেকেই। আপনি পছন্দ করেন না?
– কখনো ভেবেই দেখিনি
– সবকিছুর একটা শুরু থাকে। আজ নাহয় শুরু করেন ভাবা।
ইরাদ মুচকি হেসে
রুহির দিকে তাকিয়ে চোখ বুঝে তাকে বুঝায় সে ভেবে দেখবে।

সারাটা রাত রুহি আর ইরাদ আকসাথে বসেই পাড় করে দিলো, অনেক বলার পরেও রুহি কোনোভাবেই ঘুমাবে না। রুহির আবদার হলো সে সকালের সূর্য উঠতে দেখবে। আর ইরাদকেও জাগতে হবে তার সাথে, যেই কথা সেই কাজ। ভোর হয়ে এলো, আজকে প্রথম ইরাদ সূর্যের এই সৌন্দর্যকে প্রথম উপলব্ধি করছে। সূর্যের লাল লালিমা চারদিকে ছড়িয়ে পরছে, কালো আকাশ ধীরে ধীরে সারা হচ্ছে, যেনো কোনো নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।রুহি চোখ বুঝে সবটা অনুভব করছে।
মেয়েটার মনে খুব আবেগ আছে তা ইরাদ বুঝতে পারছে ভালোভাবেই। সে প্রকৃতি প্রেমী, আগের দিন বাচ্চাটার সাথে রুহির সখ্যতা দেখে বুঝা গেছে এই মায়াবতী মেয়েটা সবাইকে ভালোবাসতে ও জানে। রুহির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কাছে আর তার রূপের কাছে যে কোনো পুরুষই হার মানবে, তাকে ভালোবাসতে বাধ্য হবে। রুহি কিছুক্ষণ পরে এভাবে বসেই ঘুমিয়ে পরে। ইরাদ কতশত বার বললো, জামা পাল্টে বসতে কিন্তু কে শুনে কার কথা?
সারারাত জাগার পরে রুহি ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়। ইরাদ কয়েকবার ওকে ডাক দেয়। কিন্তু রুহির কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছে না। উপায়ন্তর না দেখে ইরাদ রুহিকে কোলে তুলে নেয়। এই প্রথম এতো বছর পরে কোনো মেয়ে ইরাদের এতোটা কাছে এলো। রুহির ঘুমন্ত মুখটা খুব নিষ্পাপ লাগছে। এতোটা ইনোসেন্ট মেয়েটা, যা বলার বাইরে। ইরাদ ওকে কোলে তুলার পরে রুহি যেনো আরো আরামে ঘুমিয়ে পরলো। ইরাদ ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো কিন্তু যখনই উঠে যেতে নেয় সে সময় রুহির খোলা চুলের সাথে ইরাদের শার্টের বাটনের সাথে আটকে যায়। রুহি খুব আরামে ঘুমাচ্ছে ওকে ডেকে তুলতে ইচ্ছা করছে না ইরাদের, এইজন্যই তো সে আর রুহিকে না ডেকে কোলে তুলে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে এলো। আলতো করে রুহির চুল গুলো থেকে ইরাদ চেষ্টায় লেগে গেলো শার্টের বাটন ছুটাতে। প্রায় কিছুক্ষণ পর সে সক্ষম হলো।ইরাদের চেহারায় ফুটে উঠে বিজয়ের হাসি। মনে হলো কত বড় একটা অপারেশন যেনো সে করে সাকসেসফুল হলো।
পরক্ষণেই আবার রুহির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে ইরাদের কেমন যেনো একটা অনুভূতি কাজ করছে। পুরোনো দিন গুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কেনো আজ সেই দিন গুলো ভেসে আসছে? মেয়েটা এতোটা কাছে আসায় এমন হচ্ছে ইরাদের?
আসলেই সে বুঝতে পারছে না, এই অস্থিরতা কেনো? কেমন আনচান করছে এই মনটা? সামনে কি অপেক্ষা করছে ইরাদের জীবনে?
এই মায়াবীর মায়াটা কি কাটিয়ে দিতে পারবে ইরাদের জীবনের সব বাধা? সব প্রতিবন্ধকতা?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here